কাঁচাগোল্লা, রানীভবানী এবং চলনবিল এই শব্দ গুলির কথা মনে পড়লে নাটোর জেলার কথা আসে। আর এই জেলার কৃষকদের মাঝে দিন দিন ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কীটনাশক ছাড়াই ক্ষতিকারক পোকা দমনের সহজ উপায় পার্চিং ও আলোক ফাঁদ পদ্ধতিতে পোকা দমন। বোরো ধান সহ প্রায় সকল মৌসুমের ধান ক্ষেতেই বাদামী ঘাসফড়িং বা কারেন্ট পোকা বা গুনগুনি পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা ও চুঙ্গি পোকা সহ নানা ধরনের ক্ষতিকারক পোকার আক্রমণ দেখা দিতে পারে। এসব পোকার আক্রমণ থেকে ফসল বাঁচাতে কৃষকরা সাধারনতঃ রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করেন। কিন্তু পার্চিং ও আলোক ফাঁদ ব্যবহারে এই পোকা গুলি সহজে সনাক্ত ও দমন করা যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ নাটোর থেকে জানা যায়, ইতোমধ্যে এলাকার অধিকাংশ বোরো জমিতে মরা ডাল পোতা বা ডেড পার্চিং ও জীবন্ত পার্চিং কার্যক্রম সনেন্তষজনকভাবে চলছে। সেই সাথে চলছে আলোক ফাঁদ ব্যবহার কার্যক্রম। নাটোর জেলায় চলতি বোরো মৌসুমে মোট লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৫৫ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে পার্চিং এবং ১৬৪০ টি আলোক ফাঁদ স্থাপন করা হবে। ইতিমধ্যে পার্চিং এর আওতায় প্রায় ১০০% জমি চলে এসেছে।
নাটোর জেলার নলডাঙ্গা উপজেলার উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ আমিরুল ইসলাম এ সম্পর্কে জানান, আলোক ফাঁদ ব্যবহারে পরিবেশ ভাল থাকে, উৎপাদন খরচ কম হয়, কীটনাশক কম লাগে এবং বাদামী গাছ ফড়িং বা বিপিএইচের উপস্থিতি সহজে বোঝা যায়। কারন হিসেবে তিনি বলেন, আলো দেখলে বাদামী গাছ ফড়িং বা বিপিএইচ পোকা ছুটে এসে এক জায়গায় মিলিত হয়, ফলে সহজে এ পোকা ধ্বংস করা যায়। তিনি আরো বলেন, এলাকার কৃষকেরা যে কোন পোকা দেখলেই কিটনাশক দিতে হবে এই ধারনা যে ভুল তা সহজেই বুঝতে পারছে। তিনি আরোও বলেন, পারচিং পদ্ধতির সুবিধা হলো মাজরা পোকা ধানের পাতার ওপরে ডিম দেয় সেহেতু পাখি বসে তা খেয়ে ফেলে । ধান রোপনের পরপরই এ কাজ সম্পূর্ন করতে হয়। সাধারনত ৫-৭ মিটার দুরে দূরে পারচিং করতে হয় এ হিসেবে বিঘায় ৮-১০ টি পারচিং প্রয়োজন হয়। পারচিং এমন ভাবে স্থাপন করতে হবে যাতে পাখি তার ওপর বসে ধান গাছ হতে সহজে পোকা দেখতে পারে। আর দেখে খেয়ে তা ধ্বংস করতে পারে।