গত ২১/৫/২০১৭ তারিখে খাগড়াছড়ি’র মহালছড়ি উপজেলাধীন মুবাছড়ি ইউনিয়নের মহামুণী পাড়ায় বিনাধান-১৪ এর প্রচার ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে মাঠ দিবস পালিত হয়েছে। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) এর জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড প্রকল্পের অর্থায়নে আয়োজিত এ মাঠ দিবসে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহালছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাবু বিমল কান্তি চাকমা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ তরুণ ভট্রাচার্য্য, প্রকল্প পরিচালক ড. মো. শহীদুল ইসলাম, বিনা খাগড়াছড়ি উপকেন্দ্র এর এসও এবং ইনচার্জ সুশান চৌহান। মাঠ দিবসে সভাপতিত্ব করেন মহালছড়ি উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাদিম সারওয়ার। বিনা’র এসও, রিগ্যান গুপ্তের উপস্থাপনায় প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, কৃষি কাজে পারদর্শী হতে হলে আমাদের শিক্ষিত হতে হবে; না হলে গতানুগতিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দিয়ে আমরা নতুন প্রযুক্তি কাজে লাগাতে পারবো না। মুবাছড়ির কৃষকদের মধ্যে বিনাধান-১৪ ভালো সাড়া জাগিয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। উপপরিচালক তরুণ ভট্রাচার্য তার অভিব্যক্তিতে বলেন, কৃষকেরা কোন প্রকার সার প্রয়োগ করেননি তাতেই শস্য কর্তণে বিনাধান-১৪ এর গড় ফলন ৪.০ টন/হেক্টর পাওয়া গিয়েছে। তাছাড়া জীবন কাল ১২০-১২৫ দিন হওয়াতে দেরীতে চারা রোপণ করলেও অনান্য ধানের সাথে এক সাথে কর্তণ করা যায়। তিনি কৃষকদের বীজ সংরক্ষণ করে পরবর্তীতে ভালো ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জাতটি চাষাবাদের পরামর্শ দেন। তাছাড়া মুবাছড়িতে বিনাধান-১৪ এর বীজ সরবরাহের জন্য তিনি বিনা কতৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। সিসিটিএফ এর পিডি ড. মোঃ শহীদুল ইসলাম বলেন, বিজ্ঞানীরা বহু সাধনা ও শ্রমের বিনিময়ে দেশের কৃষি ও কৃষকের সমস্যা ও বর্ধায়মান জনগোষ্ঠীর খাদ্যের চাহিদা বিবেচনায় রেখে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে চলছেন। এসব আধুনিক প্রযুক্তির যথোপুযক্ত ফলাফল পেতে হলে গবেষকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশণা মোতাবেক চাষাবাদ করা উচিত। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিনাধান-১৪ একান্ত উপযোগী একটি জাত বলে তিনি মন্তব্য করেন; তাছাড়া অনেক কম জীবনকাল সম্পন্ন ও উচ্চ ফলনশীল হওয়ায় শস্য নিবিড়তা বৃদ্ধির জন্য জাতটি আবাদ করা যেতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সভাপতি তার বক্তব্যে বলেন, কৃষকেরা নতুন প্রযুক্তির সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান এর অভাবে চাষাবাদের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এ ব্যাপারে তিনি কৃষকদের সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তা ও প্রয়োজনে বিজ্ঞানীদের সহিত আলোচনার পরামর্শ দেন। তাছাড়া নতুন প্রযুক্তি সম্প্রসারণের পূর্বে প্রশিক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি আলোকপাত করেন। বিনা উপকেন্দ্র, খাগড়াছড়ি’র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সুশান চৌহান জানান, মুবাছড়ি প্রকৃত পক্ষে বছরের অর্ধেক সময় কাপ্তাই হ্রদের জলে জলমগ্ন অবস্থায় থাকে। শীতে শুষ্ক মৌসুমে হ্রদভুক্ত জমি সমূহ ভেসে ওঠে। যে সকল জমি বোরো মৌসুমের প্রারম্ভে ভেসে ওঠে তাতে কৃষকেরা হাইব্রিড ও ব্রি’র জাত সমূহ আবাদ করতে পারে; কিন্তু যে এলাকায় পানি ধীরে নামে ও জমিসমূহ অপেক্ষাকৃত দেরী করে ভেসে ওঠে সেসব জমিতে তারা কোন ধান লাগাতে পারেন না। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে, খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন, ডিএই ও বিনা’র সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ৫০০ কেজি বিনাধান-১৪ এর বীজ ১০০ জন কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হয়। কৃষকেরা নিজেরাই জাতটি আবাদ করে বুঝতে পেরেছেন যে, দেরীতে ভেসে ওঠা জমি সমূহের জন্য জাতটি উপযুক্ত। তাছাড়া অন্য ধান যে সময় পাকে বিনাধান-১৪ একই সময় পাকার কারণে একসাথে কর্তণ করা যায়। পরবর্তীতেও মুবাছড়ির কৃষকেরা জাতটির আবাদ অব্যাহত রাখবে বলে তিনি আশা করেন। এই কৃষক মাঠ দিবসে মুবাছড়ির প্রায় ১২০ জন কৃষাণ-কৃষাণী, সংশ্লিষ্ট ব্লকের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা, উপসহকারি উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা ও এলাকার গণ্য মান্য ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।