পাবনার সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের রাজস্ব খাতের অর্থায়নে স্থাপিত “স্বল্প মেয়াদী ও অধিক ফলনশীল বারি সরিষা-১৫ উৎপাদন” শীর্ষক এক মাঠ দিবস জেলার নলদহ গ্রামের মাঠে আজ ০৫ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত হয়।
ভোজ্য তেলের আমদানী নির্ভরতা কমানো, স্বল্প মেয়াদী, অধিক উৎপাদনশীল ও তেলের শতকরা হার বেশী বারি সরিষা-১৫ এর বহুল প্রচার ও চাষীদের মাঝে এর আবাদ কৌশল জনপ্রিয় করাই ছিল এই মাঠ দিবসের মূল উদ্দেশ্য।
আশপাশের গ্রামের সমস্ত চাষীদের মাঠ দিবসের মাধ্যমে জড়ো করে প্রর্দশনী প্লটে এই সরিষার চাষাবাদ কৌশল,আন্তঃ পরিচর্যা, ফসলের বাস্তব অবস্থা ইত্যাদি সরেজমিনে দেখানোর মাধ্যমে তাদেরকে এই সরিষার সমস্ত লাভজনক দিক প্রত্যক্ষ করানো হয়।
মাঠ দিবসে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পাবনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স। বিশাল এই মাঠ দিবসের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত চাষী সমাবেশে বক্তৃতায় গোলাম ফারুক প্রিন্স বলেন, ভোজ্য তেলের আমদানী নির্ভরতা কমানোর জন্য কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক উদ্ভাবিত বারি সরিষা-১৪ এবং বারি সরিষা-১৫ চাষীদের মধ্যে আবাদের জন্য সরকার ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহন করেছেন। এই জেলার প্রত্যেক উপজেলায় এই সরিষার জাত সমূহ আবাদের জন্য চাষীদের মধ্যে প্রর্দশনী প্লটের মাধ্যমে এর বিস্তার ঘটানোর প্রচেষ্টা চলছে। প্রচলিত দেশী জাতের চেয়ে এই জাতগুলি স্বল্প মেয়াদী, অধিক ফলনশীল এবং এই জাতে তেলের হারও বেশী। এই জাতগুলি বিনা চাষেও আমন ধান কাটার পরে আবাদ করা যায়। মোটেও কীটনাশক দরকার হয় না। সরকারের সুদক্ষ নেতৃত্বে, যথাযথ পদক্ষেপে, কৃষি বিভাগের নিরন্তর পরামর্শে এবং আপনাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন। সরকারী ভাবে চেষ্টা চালানো হচ্ছে তেল, ডাল এবং মসলা জাতীয় ফসলে স্বয়ংসম্পন্নতা অর্জন করা । তিনি আরো বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শ গ্রহণ করে অধিক উৎপাদনশীল জাত সমূহ যথাসময়ে যথাযথভাবে আবাদের মাধ্যমে আমাদের ভাগ্য আমাদেরকেই পরিবর্তন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে পাবনাস্থ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ বিভূতি ভূষণ সরকারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন পাবনা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ মোশারফ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান শাওয়াল বিশ্বাস, মহিলা ভাইচ চেয়ারম্যান শামসুন নাহার রেখা এবং ভাড়ারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবু সাইদ খান।
মাঠ দিবসে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের আয়োজক এবং পাবনার সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আব্দুল লতিফ।
সভাপতির বক্তব্যে কৃষিবিদ বিভূতি ভূষণ সরকার বলেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনষ্টিটিউট নিত্য নতুন ফসলের বিভিন্ন জাত এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে চলেছে যা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ তৃণমূল পর্যায়ে কৃষকদের কাছে পৌঁছানোর জন্য সর্ববিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করে চলেছে। দেশের তেলের চাহিদা পূরণ এবং তেলের আমদানী কমিয়ে আনার লক্ষ্যে স্বল্প মেয়াদী এবং অধিক ফলনশীল সরিষার জাত বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৫ চাষীদের জন্য খুবই লাভজনক। এই জাতের সরিষাতে তেলের পরিমাণ ৪২-৪৩% এবং আবাদের খরচ কম হওয়ায় চাষীরা সহজেই এটি আবাদে এগিয়ে আসছে। তিনি উপস্থিত সকল চাষীদেরকে এই জাতের আবাদের জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান। তিনি বলেন জেলায় দুইশ’ প্রর্দশনী প্লটের মাধ্যমে এই জাতসমূহের আবাদ সম্প্রসারণের চেষ্টা চলছে।
এর আগে অতিথিবৃন্দ সকল চাষীদের নিয়ে চাষী আব্দুল আলীমের বিশ শতকে আবাদকৃত বারি সরিষা-১৫ জাতের প্রদর্শনী প্লট পরিদর্শন করেন এবং সকলকে এর আবাদের সহজ কারিগরী দিক অবহিত করা হয়।
অন্যদের মধ্যে মাঠ দিবসে উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ যথাক্রমে মো. বেলায়েত আলী বিল্লু, আব্দুল বারী বাকি, সরদার মিঠু আহমেদ, বিজয় ভূষণ রায়, মাজহারুল ইসলাম মুন্নু, মো. বেলাল হোসেন, মুন্সি মো. শাহাদত হোসেন, শেখ সাইফুল ইসলাম, শেখ রাসেল আলী মাসুদ, হিরক হোসেন, কামরুজ্জামান রকি, ফিরোজ খান ও আজাহার আলী মন্ডল প্রমূখ।