উত্তরের জনপদে মরা কার্তিক এখন ভরা কার্তিকে পরিণত। চিরাচরিতভাবে এ দেশে পৌষে নবান্ন উৎসব পালন হয়ে আসছে। কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানের উৎকর্ষতায় আমনে স্বল্পমেয়াদী জাতের উদ্ভাবন ও দ্রুত সম্প্রসারণের ফলে কার্তিক মাসেই কৃষকের ঘরে উঠছে সোনালী ধান। সবুজ ধান ক্ষেতের মাঝে সোনালী ধানের সমারহে কৃষকের ঘরে কার্তিক মাসেই শুরু হয়ে গেছে নবান্ন উৎসব। স্বল্প মেয়াদী ধান চাষের ফলে সঠিক সময়ে গম, আলু বা সরিষা আবাদ করতে পারছে কৃষকেরা। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যৌথ আয়োজনে রংপুর মিঠাপুকুর উপজেলার শ্যামপুর গ্রামে স্বল্পজীবনকাল সম্পন্ন বিনাধান-১৭ এর ওপর এক মাঠ দিবসে কৃষি বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন।
মাঠ দিবসের আলোচনা সভায় আদর্শ কৃষক মো. আব্দুল হালিমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর জেলার উপপরিচালক কৃষিবিদ স.ম. আশরাফ আলী এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর জেলার অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) কৃষিবিদ মো. জিয়াউল হক, উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. খোরশেদ আলম, কৃষি তথ্য সার্ভিসের আঞ্চলিক বেতার কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. আবু সায়েম প্রমুখ। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষিক্ষেত্রে নিত্য নতুন সমস্যার সম্মুখিন হতে হচ্ছে। এজন্য তিনি জলবায়ুর প্রতিঘাট সহনশীল জাতগুলো চাষের প্রতি বেশি জোর দেয়ার আহবান জানান। উচ্চ ফলনশীল ও খরা সহিষ্ণু বিনাধান-১৭ স্বল্পজীবন মেয়াদী হওয়ার এ ধান কেটে এ অঞ্চলের কৃষক ভাইয়েরা সহজেই গম-সরিষা বা আলু আবাদে যেতে পারবেন তিনি উল্লেখ করেন।
স্বাগত বক্তব্যে বিনা’র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইনচার্জ কৃষিবিদ কৃষিবিদ মো. তানজিলুর রহমান মন্ডল বলেন বিনাধান-১৭ উচ্চ ফলনশীল এবং জীবনকাল কম হওয়ায় শস্যেও নিবিড়তা বাড়ানোর জন্য খুবই কার্যকর। অন্য জাতের তুলনায় এ জাত চাষে প্রায় শতকরা ৩০ ভাগ কম সার ও সেচ লাগে। আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রদর্শনী কৃষক মো. মকবুল হোসেন বলেন, বিনাধান-১৭ স্বল্প জীবনকালের হওয়ার বাজারে আগে আসে ধান-খড় উভয়েরই দাম বেশি পাওয়া যায়। আমনে আগে যেসব স্বল্পমেয়াদী জাতের চাষ করতেন তার চেয়ে এর ফলন বেশি বলে তিনি উল্লেখ করেন। মাঠ দিবসে প্রায় শতাধিক কৃষক-কিষাণী উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সভার আগে অতিথিবর্গ প্রদর্শনী প্লটের ধান কর্তন করেন। এতে ১২০ দিনে বিঘা প্রতি ফলন ধানে ১৮ মণ পাওয়া যায়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ মমতা সাহা।