মাননীয় কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, এমপি ২৭ আগস্ট ২০১৬ শনিবার সকালে কুড়িগ্রাম নাগেশ্বরী ও সদর উপজেলা পরিষদ চত্বর হতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে পুনর্বাসন ও প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ধানের চারা, সবজি-মাশকলাই বীজ ও সার বিতরণ করেন। সাম্প্রতিক বন্যায় গত ২৪ তারিখে কৃষি মন্ত্রণালয় হতে কৃষি পুনর্বাসন ও প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় কুড়িগ্রাম জেলায় ১৬শ ৬৫ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে চারা, সার ও বীজ দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। কৃষি মন্ত্রী নাগেশ্বরী ও সদর উপজেলার ২শ জন কৃষকের মাঝে কৃষি উপকরণ বিতরণের মাধ্যমে পুনর্বাসন ও প্রণোদনা কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এসময় মাননীয় কৃষিমন্ত্রীর সাথে সফরসঙ্গী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ্, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মো. নাসিরুজ্জামান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট-এর মহাপরিচালক ড. ভাগ্য রাণী বণিক প্রমুখ।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় উপকরণ বিতরণ আলোচনা অনুষ্ঠানে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন এর সভাপতিত্বে মাননীয় কৃষিমন্ত্রী বলেন বর্তমান জনবান্ধব সরকার সব সময়ই কৃষকের পাশে থেকেই কাজ করে যাচ্ছে। বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য এ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে কৃষি উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে হলে তিনি সরকারি সাহায্যের জন্য অপেক্ষা না করে নিজেদের চেষ্ঠা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। ইতিমধ্যে পরিশ্রমি ও আত্মপ্রত্যয়ী কৃষকেরা তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়ায় জন্য কৃষকদের সাধুবাদ জানান। তিনি জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার রিপোর্ট উল্লেখ করে বলেন আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৯ সালে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছিল। স্বীকৃতি স্বরূপ সে সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেরেস পুরষ্কার দেয়া হয়। মাঝে পট পরিবর্তন এবং আবারও দেশ খাদ্য ঘাটতির দেশে পরিণত হয়। বর্তমানে আবারও দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। শ্রীলঙ্কায় চাল রপ্তানি ও ভুমিকম্পের পর সাহায্য হিসেবে চাল পাঠানো বাংলাদেশের চাল উৎপাদনের সামর্থ্যরই বহি:প্রকাশ।
কৃষি সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ্ বলেন বাংলাদেশ চাল, সবজি, ফল, আলু, পাট উৎপাদনে সফলতা দেখিয়েছে। তবে আমরা বিশ্বে শীর্ষে যেতে চাই। সফলতার নেপথ্য কারিগর বর্তমান সফল কৃষি মন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্ব। তিনি বলেন আমরা খুব শীঘ্রই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছি। এ দেশের কৃষকদের বন্যা মোকাবেলা করার সাহস, মেধা ও যোগ্যতা আছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আজকের এ উদ্যোগ। তিনি তার বক্তব্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বন্যা পুনর্বাসন ও প্রণোদনা প্যাকেজ বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মো. হামিদুর রহমান বলেন গত কয়েক বছর ধরে ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে রংপুর অঞ্চলে আকস্মিক বন্যা হচ্ছে। এবারের বন্যা জুলাইয়ের শেষে হওয়ায় আমন রোপণ বাধাগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তিনি বলেন এ অঞ্চলের কৃষকেরা উঁচুস্থানে ও ভাসমান বীজতলা করে বন্যাকে জয়লাভ করার চেষ্ঠা করছে।
এর আগে মাননীয় কৃষিমন্ত্রী শুক্রবার রাত ৮টায় কুড়িগ্রাম সার্কিট হাউজে রংপুর অঞ্চলের কৃষি মন্ত্রণালয় অধীন সকল সংস্থার প্রধানদের সাথে আলোচনা ও মত বিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন। মত বিনিময় সভায় রংপুর অঞ্চলের সার্বিক কৃষি এবং সাম্প্রতিক বন্যা ও বন্যা পরবর্তী গৃহীত কার্যক্রমের ওপর উপস্থাপন করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. শাহ আলম। মাননীয় কৃষিমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতে কৃষিতে সমৃদ্ধ রংপুর অঞ্চলে কৃষি উন্নয়নের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তাদের সাধুবাদ জানান। তিনি উত্তরাঞ্চলে ধান-ধান-ধান ফসল ধারা পরিবর্তে গম, ভুট্টা, ডাল, তেল ফসল আবাদের দিকে যেতে আহ্বান জানান। তিনি বোরোর আবাদ কমিয়ে আউশের আবাদ বাড়ানো এবং অর্থকরী ফসল হিসেবে সুগন্ধী ধানের আবাদ বাড়ানোর আহ্বান জানান। তিনি উপস্থিত কর্মকর্তাদের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের সার্বক্ষণিক পাশে থেকে কাজ করে যাওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। মত বিনিময় সভায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংরাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, বীজ প্রত্যয়ন এজন্সী, কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, হর্টিকালচার সেন্টার ও কৃষি তথ্য সার্ভিস এর দপ্তর প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।