‘দিন বদলের বাংলাদেশ, ফল বৃক্ষে ভরবো দেশ’ এ প্রতিপাদ্য নিয়ে প্রতি বছরের মতো এবারও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ফলদ বৃক্ষ রোপণ পক্ষ ও জাতীয় ফল প্রদর্শনী ২০১৫-এর শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে। ঢাকার ফার্মগেটে অবস্থিত আ.কা.মু. গিয়াস উদ্দীন মিলকী অডিটোরিয়াম চত্বরে ১৫-১৭ জুন তিন দিনব্যাপী জাতীয় ফল প্রদর্শনী-এর আয়োজন করা হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এম.পি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এম.পি এবং এডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি এম.পি, মাননীয় সদস্য, কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. আবুল কালাম আযাদ, নির্বাহী চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জনাব শ্যামল কান্তি ঘোষ, সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়।
ফলদ বৃক্ষ রোপণ পক্ষ উপলক্ষে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ এর অডিটরিয়ামে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ ফল প্রাচুর্যে ভরা একটি দেশ। আমাদের সব জায়গা ফল উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত। দেশের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পুরণ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, মেধার বিকাশ ও দারিদ্র্য বিমোচনে ফলদ বৃক্ষের গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের দেশীয় ফলের যে সমাহার রয়েছে সেগুলো বেশি পরিমানে গ্রহণের জন্য তিনি আহ্বান জানান। আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় ফলকে অন্তর্ভূক্ত করার পাশাপাশি শিশুদের টিফিনে ফাস্ট ফুডের পরিবর্তে ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার পরামর্শ প্রদান করেন। আমাদের মৌসুমী ফলের ভান্ডারকে আরো সমৃদ্ধ করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে তিনি উদাত্ত আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি মাননীয় কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ফলের চাষ বৃদ্ধি করে পুষ্টি চাহিদা পূরণ ও বিদেশি ফলের ওপর নির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি বিশ্ব বাজারে আমাদের সুস্বাদু বৈচিত্র্যময় ফল রফতানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করা সম্ভব। দেশের দক্ষিণ অঞ্চলে আবাদি জমির পরিমান বাড়ানোর ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। মাননীয় কৃষি মন্ত্রী বলেন, খাটো জাতের নারিকেল গাছ সম্প্রসারণের মাধ্যমে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলাসহ বাড়তি আয় করা সম্ভব। ভারত থেকে আমদানি করা ডোয়ার্ফ হাইব্রিড নারিকেলের অনেক সম্ভবনা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। বিভিন্ন দেশীয় ফলের জার্মপ্লাজমের উন্নয়ন ঘটানোর মাধ্যমে অল্প সময়ে অধিক ফলনশীল এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কার্যকর জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান। ফল চাষাবাদে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা এবং ফল চাষের আধুনিক প্রযুক্তি ও কলাকৌশল জনগণের মাঝে সম্প্রসারণে ফলদ বৃক্ষ রোপণ পক্ষ ২০১৫ বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে মাননীয় কৃষিমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সেমিনারে ‘খাদ্য নিরাপত্তা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় নারিকেলসহ ফলদ বৃক্ষের অবদান’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, ড. শাহাবুদ্দিন আহমদ, পরিচালক, উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই, গাজীপুর। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, এ জেড এম মমতাজুল করিম, মহাপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশের ফল’ বিষয়ক প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে সকাল ৮:৩০টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা থেকে আ. কা. মু. গিয়াস উদ্দীন মিলকী অডিটোরিয়াম চত্বর পর্যন্ত এক বর্ণাঢ্য র্যালির আয়োজন করা হয়। র্যালি শেষে মাননীয় অতিথিবৃন্দ ফলদ বৃক্ষ রোপণ পক্ষ ও জাতীয় ফল প্রদর্শনী ২০১৫ এর শুভ উদ্বোধন করেন এবং বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন।
ফলদ বৃক্ষ রোপণ পক্ষ বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে পোস্টার, লিফলেট ও বুকলেট বিতরণ করা হয়েছে এবং স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্ধুদ্ধ করতে রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে কৃষি তথ্য সার্ভিস কর্তৃক ‘কৃষিকথা"’ পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ, জাতীয় দৈনিকে ক্রোড়পত্র প্রকাশসহ বেতার ও টেলিভিশনে প্রচার প্রচারণার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ের পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে বিনামূল্যে ফলের চারা/কলম বিতরণ, সেমিনার, কর্মশালা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি।