কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও মার্কেট ফর চর এর যৌথ বাস্তবায়নে রংপুর বিভাগীয় শহরের ব্রাক লার্নিং সেন্টারে চরের উপযোগি বাদামের চাষ সম্প্রসারণ শক্তিশালীকরণ শীর্ষক এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়া অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. হযরত আলীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ক্রপস (ফসল) উইংয়ের পরিচালক মো. গোলাম মোস্তফা এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. শাহ আলম, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মোবারক আলী প্রমুখ। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন চরাঞ্চলে বাদাম চাষ সম্প্রসারণে কিভাবে সহায়তা দেয়া যায় তা গবেষণা ও সম্প্রসারণ বিভাগকে যৌথ উদ্যোগ নিয়ে কাজ করে যেতে হবে। ধানের পরিবর্তে বাদাম চাষ করলে অনেক বেশি লাভবান হওয়া যায়। চরের সাহসী ও সংগ্রামী মানুষের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে কাজ করে যেতে তিনি আহ্বান জানান।
কর্মশালার শুরুতে প্রকল্প কার্যক্রম উপস্থাপন করেন সুইসকন্ট্যাক্ট-মার্কেট ফর চর এর বাজার উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ সাবাহ শীশ আহমেদ। তিনি বলেন চরাঞ্চলে বাদামের উন্নত জাত, সুষম সারের ব্যবহার ও আধুনিক কলাকৌশল রপ্তকরণের ফলে কৃষকরা আগের চেয়ে অনেক বেশি ফলন পেয়েছে। তিনি আরও বলেন চাষিদের বাদাম বাজারজাতকরণের জন্য প্রাণ কোম্পানীর সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। রংপুর কাউনিয়া উপজেলার তিস্তার চর থেকে আগত কৃষক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন তাদের চরে বছরে দুটি ফসল হয়, আলু আর চিনাবাদাম। তিনি আগে স্থানীয় জাতের ঢাকা-১ জাতের বাদাম চাষ করতেন। ২০ শতক জমিতে চাষ করে গড়ে ২.৫ থেকে ৩.০ মণ ফলন পেতেন আর ফলন ভাল হলে সর্বোচ্চ ৩ মণ পর্যন্ত ফলন পেতেন। বর্তমানে বারি চিনাবাদাম-৮ আবাদে গড়ে ৬ মণ করে ফলন পাচ্ছেন। আগে ২০ শতক জমি চাষে খরচ বাদে ২-৩ হাজার টাকা লাভ হতো। সেখানে এখন প্রায় ৯ হাজার টাকা লাভ হচ্ছে। পীরগাছার ছাওলা ইউনিয়নের চর থেকে আগত কৃষক মো. আব্দুস সালামও বলেন তিনি বারি চিনাবাদাম-৮ বীজ হিসেবে আবাদ করে বেশ লাভবান হয়েছেন। পরীক্ষামূলকভাবে তিনি স্থানীয় পাওটানা হাটে তার সংরক্ষিত বাদামের বীজ বিক্রয় করেন। বাজারে এ জাতের বীজের যথেষ্ঠ চাহিদা রয়েছে। উন্মুক্ত আলোচনায় কাউনিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার মো. শামীমুর রহমান বলেন, তার উপজেলায় প্রায় ৫৪০ হেক্টর জমিতে বাদামের আবাদ হয়েছে। ধান চাষ করা যায় না পরিত্যক্ত জমিতে এ ফসল চাষ করা হয় বলে এতে লাভও অনেক বেশি। তিনি একটি পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন এক হেক্টর জমিতে ৬০-৭০ হাজার টাখা খরচ করে ২.৭-৩.০ মে. টন বাদাম পাওয়া যায় আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা প্রায়। সেখানে এক হেক্টর জমিতে ধান আবাদ করে ৪০-৫০ হাজার টাকা খরচ করে ৫.৫-৬.০ টন ফলন পাওয়া যায়। যার বাজার মূল্য আনুমানিক ৭২-৭৫ হাজার টাকা।
বিশেষ অতিথি ড. মো. মোবারক আলী বলেন বীজ বাদামের সংরক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বীজ বাদামের আর্দ্রতা ৮-১০ ভাগে কমিয়ে আনতে পারলে প্রায় ১ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। বীজ বাদাম সংগ্রহের সময়ই অপুষ্ট বীজ সরিয়ে ফেলতে হবে। রোগের আক্রমণ কমাতে বীজ শোষন করে নিতে হবে। সুষম মাত্রায় সার দিতে হবে বিশেষ করে ইউরিয়া প্রয়োগে সতর্ক হতে হবে। ইউরিয়া প্রয়োগ বেশি হলে অঙ্গজ বৃদ্ধি বেশি বেশি হবে ফলে ফল-ফুল উৎপাদন কমে যাবে। বাদামে বিছা পোকার আক্রমণ দেখা দিলে সমন্বিত বা সকলে মিলে দমন করতে হবে। আর স্পোডোপটেরা পোকার আক্রমণ দেখা দিলে সেক্স ফেরোমোন ট্রাপ ব্যবহার করার পরামর্শ প্রদান করেন। কর্মশালায় প্রকল্পভূক্ত পাঁচ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক, উপজেলা কৃষি অফিসার, কৃষক প্রতিনিধি, মার্কেট ফর চর প্রকল্পের কর্মকর্তাগণ, বীজ ব্যবসায়ী, বীজ উৎপাদনকারীগণ ও কৃষি তথ্য সার্ভিসের আঞ্চলিক বেতার কৃষি অফিসার উপস্থিত ছিলেন।