কৃষি সচিব শ্যামল কান্তি ঘোষ বলেন, দেশ আজ ধান উৎপাদনে উদ্বৃত্ত হলেও আত্মতুষ্টিতে ভুগলে চলবে না। যেকোন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে খাদ্য উৎপাদন পরিস্থিতি পালটে যেতে পারে। এজন্য উৎপাদন বাড়ানোর বিকল্প নেই। তিনি বলেন, বোরো মৌসুমে ধান না করে কম সেচ লাগে এমন রবি ফসল যেমন-আলু, সরিষা বা ডাল ফসলের জন্য ছেড়ে দিতে হবে। এছাড়া তিনি বৃষ্টি নির্ভর আউশের এলাকা বৃদ্ধি ও আমনের ফলন বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। ২৪ ও ২৫ জুলাই দু’দিনব্যাপী মাঠ সফরে তিনি রংপুর বিভাগের কৃষি মন্ত্রণালয়াধীন বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন।
রংপুর বিভাগে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি)-এর কার্যক্রম পরিদর্শনের অংশ হিসেবে দিনাজপুর ও রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। দিনাজপুর গম গবেষণা কেন্দ্রের সম্মেলন কক্ষে ও রংপুর সরেজমিন গবেষণা বিভাগের সম্মেলন কক্ষে পৃথক দুই মত বিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাঠ পর্যায়ের গবেষণা ও সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে মত বিনিময় সভায় তিনি বর্তমান সরকারের মাননীয় কৃষি মন্ত্রীর বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা মাঠ পর্যায়ে যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্যে উপস্থিত সকলকে আহবান জানান। চলতি আমন মৌসুমে বন্যা মোকাবেলার প্রস্তুতি গ্রহণ এবং আগাম রবি ফসল করে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার পূর্ব প্রস্তুতি রাখার আহ্বান জানান। আমনে উৎপাদন বাড়াতে সংশ্লিষ্ট সকলকে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান। তিনি কৃষি মন্ত্রণালয়াধীন বিভিন্ন বিভাগের সমস্যা ও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়া তিনি কৃষকের দোড়গোড়ায় কৃষি সেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য উপস্থিত সকলের প্রতি প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন।
মাঠ সফরের প্রথম দিনে তিনি দিনাজপুর গম গবেষণা কেন্দ্রের গবেষণা কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। এরপর তিনি দিনাজপুর সদর উপজেলার রাণীগঞ্জে ও ঘোড়াঘাাটের কাশিয়াতলাতে বছরে চার ফসল বিন্যাসে (সরিষা-বোরো-আউশ-আমন) উৎপাদনের লক্ষে বাস্তবায়িত আউশের প্রদর্শনী প্লট পরিদর্শন করেন। কাশিয়াতলাতে মাঠ দিবসের আলোচনা সভায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি)-এর মহাপরিচালক ড. মো. রফিকুল ইসলাম মন্ডলের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক মিজানুর রহমান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দিনাজপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক সৌমেন সাহা ও বারি বোর্ড অব ম্যানেজমেন্টের সদস্য কৃষক প্রতিনিধি আলহাজ্ব খলিলুর রহমান মন্ডল। মাঠ দিবসের স্বাগত বক্তব্যে গাজীপুর সরেজমিন গবেষণা বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মাহবুবার রহমান খান বলেন চার ফসল বিন্যাসে বছরে এক বিঘা জমিতে সরিষা-ধান-ধান-ধান আবাদে প্রায় ৮৭ মণ ফসল পাওয়া যাবে যাতে উৎপাদন খরচ বাদে ২৩,১৪১ টাকা লাভ হবে। সেখানে দুই ফসল করলে বিঘা প্রতি ১১,৪৯৬ টাকা লাভ হবে। চার ফসলে জাত হিসেবে সরিষাতে-বারি সরিষা-১৪/১৫, আউশে-ব্রি ধান৪৮/পারিজা, আমনে-বিনাধান-৭/ব্রি ধান৫৬/৫৭/৬২ এবং বোরোতে-ব্রি ধান২৮ ব্যবহার করা হয়েছে। দেশের ১৫টি জেলায় এ প্রযুক্তি উপযোগিতা যাচাইয়ের জন্য প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হয়েছে। আউশে ব্রি ধান৪৮ এর ফলন সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে। আলোচনার শুরুতে কৃষক আফজাল হোসেন জানান ঘোড়াঘাটের কৃষকরা বছরে দুটি ফসল-বোরো ও আমন আবাদ করে থাকে। এ প্রযুক্তি ব্যবহারের এ এলাকায় কৃষিতে ব্যপক পরিবর্তন আসবে এবং ধান উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। বিশেষ অতিথি কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক বলেন, চার ফসলে আউশ যুক্ত করা একটি যুগোপযোগি সিদ্ধান্ত। সেচ নির্ভর বোরো কমিয়ে বৃষ্টি নির্ভর আউশের আবাদ বৃদ্ধির জন্য তিনি উপস্থিত কৃষকদের আহ্বান জানান।
সফরের দ্বিতীয় দিনের শুরুতে রংপুর সরেজমিন গবেষণা বিভাগের সম্মেলন কক্ষে মত বিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন। এতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সী, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, কৃষি বিপণন অদিদপ্তর, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পদক্ষেপ ও কৃষি তথ্য সার্ভিসের কর্মকর্তাগণ উপস্তিত ছিলেন। এরপর তিনি নব্য গঠিত রংপুর বুড়িরহাটের আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের গবেষণা কার্যক্রম অবহিতকরণ সভায় অংশগ্রহণ ও গবেষণা মাঠ পরিদর্শন করেন।