বাদামী গাছ ফড়িং বা স্থানীয়ভাবে পরিচিত কারেন্ট পোকা ও কৃষকের শত্রু ইঁদুরের হাত হতে আমন ফসল রক্ষায় রংপুর কাউনিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কাউনিয়া ও কৃষি তথ্য সার্ভিস রংপুরের যৌথ উদ্যোগে বালাপাড়া, টেপামধুপুর, হারাগাছ ইউনিয়ন পরিষদ ও হারাগাছ পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে ৯ ও ১০ অক্টোবর কৃষক সমাবেশে বাদামী গাছ ফড়িং ও ইঁদুরের হাত হতে ফসল রক্ষার কলা-কৌশলের ওপর ডকুমেন্টারি সিনেমা, লিফলেট বিতরণ ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
কৃষক সমাবেশে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি তথ্য সার্ভিস রংপুরের আঞ্চলিক বেতার কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. আবু সায়েম, কাউনিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. শামীমুর রহমান, কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কৃষিবিদ মো. শামীমুল ইসলাম প্রমুখ। বক্তারা বলেন, আমন মৌসুমে অক্টোবর মাসে বাদামী গাছ ফড়িং পোকার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। উপজেলায় স্থাপিত অতন্ত্র জড়িপ ব্লকের তথ্য এবং প্রতিদিন সন্ধ্যায় স্থাপিত আলোক ফাঁদে এ পোকার উপস্থিতি টের পাওয়া যাচ্ছে। এ পোকার ব্যাপক আক্রমণে হঠাৎ ক্ষেতের কোন এক জায়গায় খড়ের মত শুকিয়ে ঢেবে যায় বা হপার বার্ণ লক্ষণ প্রকাশ করে ফলে ফলন শূন্যের কোঠায় নেমে আসতে পারে। তাই আক্রমণপ্রবণ এলাকায় কৃষকদের আগাম জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য এ ধরনের সমাবেশ আয়োজন করা হয়েছে বলে বক্তারা উল্লেখ করেন। এ পোকার আক্রমণরোধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে উত্তর দক্ষিণে দুই হাত পরপর বাঁশ দিয়ে ফাঁক করে দেয়া এবং ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ বন্ধ রাখার কথা বলেন। নিয়মিত গাছের গোড়া পর্যবেক্ষণ করে ক্ষতির মাত্রায় পৌঁছানোর আগেই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ দিয়ে অনুমোদিত কীটনাশক সঠিক মাত্রায় নজল ঢুকিয়ে গাছের গোড়ায় স্প্রে করার পরামর্শ দেয়া হয়। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলেন এ সময় আমন ক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমণ হতে পারে। এজন্য স্থানীয় পদ্ধতিতে তৈরি বাঁশের ফাঁদ জমির আইলে স্থাপন করার পরামর্শ দেন। এছাড়া জমিতে কয়েক জায়গায় কাঠি পুতে দিয়ে তার মাথায় পলেথিন ঝুলিয়ে দিলে বাতাসের পত পত শব্দে ইঁদুর দূরে সরে যাবে বলে উল্লেখ করেন। সমাবেশগুলোতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ডকুমেন্টারি সিনেমার শো’র মাধ্যমে বিস্তারিত তথ্য-পরামর্শ প্রদান করা হয়। তাছাড়া কৃষি বিষয়ক যেকোন পরামর্শের জন্য কৃষি কল সেন্টারের ১৬১২৩ নম্বরে শুক্রবারবাদে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত যেকোন মোবাইল থেকে ভ্যাটবাদে প্রতি মিনিট ২৫ পয়সা মূল্যে ফোন করে পরামর্শ গ্রহণ করার জন্য আঞ্চলিক বেতার কৃষি অফিসার উপস্থিত সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রতিটি সমাবেশে কৃষক, কৃষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সুধী সমাজ, সংশ্লিষ্ট ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। উপজেলা কৃষি অফিসার বলেন ইতিমধ্যে প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে উদ্ভিদ সংরক্ষণ স্কোয়াড গঠন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন প্রতিটি ব্লকে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে সভা-সমাবেশ-লিফলেট বিতরণ করে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে।