পুষ্টি মূল্য: কুল পুষ্টি সমৃদ্ধ ফল।
ভেষজ গুণ: এটি রক্ত শোধন, রক্ত পরিস্কার এবং হজমিকারক হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া পেটে বায়ু, অরুচি ও প্রদর রোগ ফুল থেকে তৈরি ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
উপযুক্ত জমি ও মাটি : যে কোন ধরনের মাটিতেই বিশেষ করে দোআঁশ মাটিতে কুলের চাষ ভাল হয়। কুলগাছ লবাণাক্ততা ও জলাবদ্ধতা উভয়ই সহ্য করতে পারে।
জাত পরিচিতি:
বারি কুল-১: এটি নারিকেলী জাত নামে পরিচিত। দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে, বিশেষত রাজশাহী ও খুলনা এলাকায় চাষাবাদের জন্য এটি একটি উপযুক্ত জাত। ফল আকারে বড়, ওজন গড়ে ২৩ গ্রাম ও লম্বা।
বারি কুল-২: জাতটি উত্তারাঞ্চলে চাষাবাদের জন্য ভাল হলেও দেশের অন্যত্রও চাষ করা যায়। ফল আকারে বড় ও ডিম্বাকৃতি।
আপেল কুল: আপেল কুল বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. মোফাজ্জল হোসেন কর্তৃক উদ্ভাবিত এবং জাতীয় বীজ বোর্ড থেকে অনুমোদিত। আপেল এর মতো রঙ হওয়ার জন্যে কুলটির নাম দেওয়া হয়েছে আপেল কুল। মিষ্টি স্বাদের জন্য অন্য কুলের চেয়ে এটি অনেক ভালো।
বাউকুল-১: ফল আকারে অনেক বড় হয় (গড়ে ৯০ গ্রাম)। মিষ্টতার পরিমানও অনেক বেশি। আগাম পরিপক্ক হয়। সারা দেশেই চাষ করা যায়।
চারা তৈরি: দু’ভাবে বংশ বিস্তার করা যায়। বীজ থাকে এবং কলম তৈরি করে। কলমের চারা উত্তম কারণ এতে বংশগত গুণাগুণ অক্ষুন্ন থাকে। বলয়, তালি অথবা টি-বাডিং এর মাধ্যমে কলমের চারা তৈরি করা যায়।
চারা রোপণ: মধ্য মাঘ থেকে মধ্য চৈত্র এবং মধ্য শ্রাবণ থেকে মধ্য ভাদ্র চারা তৈরির উপযুক্ত সময়। চারা রোপণের মাসখানেক আগে চারিদিকে ১ মিটার করে গর্ত তৈরি করে নিতে হয়। লাইন থেকে লাইন এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ১ মিটার করে রাখা দরকার।
সার ব্যবস্থাপনা: প্রতি গর্তে চারা রোপণের ১০-১২ দিন আগে পচা গোবর ২৫ কেজি, টিএসপি সার ২৫০ গ্রাম, এমওপি সার ২৫৫ গ্রাম এবং ইউরিয়া সার ২৫০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয়।
১-২ বছর বয়সের গাছের গাছ প্রতি পচা গোবর ১২ কেজি, টিএসপি সার ২৫০ গ্রাম, এমওপি সার ২৫০ গ্রাম এবং ইউরিয়া সার ৩০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয়। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে সারের পরিমানও বাড়াতে হবে। এ সারগুলো সারা বছরে ২/৩ কিসি-তে প্রয়োগ করতে হয়। ফল ধরার পর, ফল সংগ্রহের পর ও বর্ষার পর উপরোক্ত সার প্রয়োগ করা ভাল।
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা: শুকনা মৌসুমে বিশেষ করে ফুল ও ফল ধরার সময়ে মাসে ১ বার সেচ দিরে ভাললন পাওয়া যায়। ফল ধরার পর ১৫ দিন পরপর সেচ দিলে আশানুরুপ ফলন পাওয়া যাবে। তাছাড়া গাছের গোড়া ও নালার আগাছা সব সময় পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন। চারা গাছের কাঠামো মজবুত রাখার জন্য প্রথম বছরে গাচের গোড়া থেকে ৭৫ সে.মি উঁচু পর্যন্ত কোন ডালপালা রাখা যাবেনা।
ছাঁটাই: কুল গাছের বৃদ্ধি ও পরিমিত ফল ধরনের জন্য ডাল ছাঁটাই একটি জরুরি কাজ। ঠিকমতো ছাঁটাই না হলে বাগান নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কলম মাটিতে লাগানোর পর একটি সতেজ ও বাড়ন্ত ডালকে উপরের দিকে বেড়ে উঠতে সাহায্য করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনমতো সতেজ ডাল রেখে বাকিগুলো কেটে দিতে হবে। এ কাজে কাচি ব্যবহার করতে হবে ও কাঠি দিয়ে মূল গাছকে খাড়া রাখতে হবে। গাছ কাটতে হবে সমান করে, যাতে মূল গাছের কোন বাকল বা ছাল না উঠে এবং মূল গাছের যাতে কোন ক্ষতি না হয় সেদিকে খুব সতর্কভাবে খেয়াল রাখতে হবে। কাটা অংশটি কাঁচা গোবর দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। এরপর কাণ্ডটিতে প্রচুর নতুন কুশি জন্ম নিবে। ফলে উপরের ২ ফুট অংশের নতুন গজানো শাখা প্রশাখায় গাছটি ছাতার মতো আকার নিবে এবং এক পর্যায়ে একটি ঝাকড়া গাছ হবে। প্রতি বছর মার্চে গাছ ছাঁটাই করতে হবে। বড় ডাল সাবধানে করাত দিয়ে কাটতে হবে। কুল গাছে সব সময় নতুন গজানো শাখায় মুকুল আসে। এজন্য নিয়মিত ছাঁটাইয়ের ফলে গাছে বেশি পরিমাণ নতুন শাখা-প্রশাখা গজাবে ও সেই সাথে বেশি পরিমাণ ফল ধরবে।
রোগ ব্যবস্থাপনা:
রোগের নাম: কুল গাছের পাউডারি মিলডিউ
ভূমিকা: এটি ছত্রাকজনিত একটি রোগ। এর আক্রমনে পলন অনেক কমে যায়।
ক্ষতির নমুনা: আক্রান্ত ফুল ও ফল গাছ থেকে ঝরে পরে।
অনুকূল পরিবেশ: গাছের পরিত্যক্ত অংশে এবং অন্যান্য পেষক উদ্ভিদে এ রোগের জীবাণু বেঁচে থাকে। এটি বাতাসের মাধ্যমে সহজেই ছড়িয়ে পড়ে।
বিস্তার: উষ্ণ ও ভিজা আবহাওয়ায় বিশেষকরে মেঘাচ্ছন্ন অবস্থায় এ রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে।
ব্যবস্থাপনা: গাছে ফুল দেখা দেযার পর থিওভিচ ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম বা টিল্ট ২৫০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মি.লি মিশিয়ে সেপ্র করতে হবে। পরবর্তী ১৫ দিন পর পর দুইবার সেপ্র করতে হবে।
ফসল তোলা: মধ্য পৌষ থেকে মধ্য চৈত্র মাসের মধ্যে ফল পাওয়া যায়। ফলের রঙ হাল্কা সবুজ বা হলদে হলে সংগ্রহ করতে হয়।