মাথাপিছু ভোজ্য তেলের ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশীয় ভোজ্য তেলের উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন মাননীয় কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেছেন, আমাদের মাটি ও আবহাওয়া উপযোগী নতুন নতুন তৈল বীজের জাত উদ্ভাবন করে, ব্যাপক হারে আবাদ করতে হবে। ভোজ্য তেলের উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানি কমাতে হবে। ১৯ মার্চ ২০১৯ তরিখে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সরিষা/তৈলবীজ চাষ সম্প্রসারণ ও ভোজ্যতেলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণের বিষয়ে এক সভায় মাননীয় কৃষিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, এক সময় ভোজ্য তেল হিসেবে সরিষাই প্রধান ছিল। সরিষা শুধু তেলই নয়, এর থেকে পুষ্টি সমৃদ্ধ খৈল পাওয়া যায়। যা আমাদের মৎস্য ও পশু খাদ্য হিসেবে বেশ চাহিদা রয়েছে। মাননীয় মন্ত্রী বলেন, তৈল বীজ আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশে তৈলবীজ চাষের এলাকা বৃদ্ধি ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে সব ধরনের সহায়তা করবে সরকার।
সভায় জানানো হয়, দেশে মোট ভোজ্য তেলের চাহিদা ৫১ দশমিক ২৭ লাখ মেট্রিক টন, যার মধ্যে ৪৬ দশমিক ২১ লাখ মেট্রিক টন আমদানি করতে হয়। এর মূল্য ৩ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। আমাদের দেশে তেল ফসলের মধ্যে সরিষা, চীনাবাদাম, তিল, তিসি, সয়াবিন ও সূর্যমুখী প্রভৃতি চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে সরিষা, তিল এবং সূর্যমুখী থেকেই সাধারণত তেল বানানো হয়। বর্তমানে দেশে আবাদি জমির মাত্র ৪ ভাগে তৈল ফসলের আবাদ হয়। দেশে সামান্য পরিমান সয়াবিন উৎপন্ন হয়, এ থেকে তৈরি খৈল হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আমদানি করা সয়াবিন থেকেও বাই প্রোডাক্ট হিসেবে তৈল তৈরি হয়।
মাননীয় মন্ত্রী আরও জানান, দেশের মানুষ গড়ে প্রতিদিন ২০ থেকে ২২ গ্রাম করে তেল খায়। বিগত মৌসুমে প্রায় ৭ দশমিক ২৪ লাখ হেক্টর জমিতে তৈলবীজ ফসলের চাষ করে ৯ দশমিক ৭০ লাখ মেট্রিক টন ফসল উৎপন্ন হয়, যা প্রয়োজনের তুলনায় মাত্র ৯ থেকে ১০ শতাংশ। দেশে মোট ৪ দশমিক ৪৪ লাখ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়, যা থেকে ৬ দশমিক ৫ লাখ মেট্রিক টন সরিষা এবং সরিষা থেকে ২ দশমিক ৫০ লাখ টন তেল উৎপন্ন হয়।
মাননীয় কৃষিমন্ত্রী বলেন, তৈলবীজ উৎপাদন বৃদ্ধিতে মাঠ পর্যায়ে সরিষার আবাদি জমির পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিতে হবে। এছাড়া কৃষকদের উন্নত বীজ সরবরাহ করা, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা ও কৃষি উপকরণের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। তৈলবীজ তথা সরিষা উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষকদের প্রয়োজনীয় সকল উপকরণ সহায়তা প্রদান করা হবে বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা) কে প্রধান করে ডিএই, বারি, ব্রি, বিনা ও এসআরডিআইর প্রতিনিধি নিয়ে ৬ সদস্যের একটি কমিটি করে দেয়া হয়েছে। কমিটিকে আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন মন্ত্রী।
এসময় মাননীয় কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামানসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সংস্থার প্রধানগণ, কৃষি বিজ্ঞানী, গবেষক ও কৃষিবিদসহ বিভিন্ন প্রকল্পের পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।