বীজ কৃষির প্রথম ও প্রধান উপকরণ। মানসম্মত বীজ কাঙ্ক্ষিত ফলনে সহায়ক। এ বীজ উৎপাদনে মেধা, শ্রম, সময় ও অর্থের প্রয়োজন হয়। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে প্রতিটি ভালো বীজের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বোরো মৌসুমে বীজসহ কৃষির সকল উপকরণের যুক্তিসঙ্গত ব্যবহারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। গত ২ ডিসেম্বর বরিশালস্থ ব্রি’র কনফারেন্স রুমে ‘বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলে নির্বিঘ্নে বোরো আবাদঃ সতর্কতা ও করণীয়’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ্ এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, যেখানেই ভূ-উপরিস্থ পানির সহজলভ্যতা আছে, সেখানেই বোরো আবাদ। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিলে বোরো আবাদে এ অঞ্চল হবে বিশাল সম্ভাবনাময়। তবে সেচসহ অন্যান্য যে সকল অসুবিধা রয়েছে তা নিরসনে কৃষি মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া ব্লাস্ট রোগ নিয়ে আগে থেকেই সতর্কতার সাথে ভাবতে হবে। অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে বোরো আবাদ বাড়াতে হবে। এটি করতে পারলে কৃষক ও দেশ উপকৃত হবে। তিনি বলেন, তথ্যমতে এ অঞ্চলে খরিফ-১ মৌসুমে শতকরা ৭১ ভাগ জমি পতিত থাকে। একে চাষের আওতায় আনতে হবে। অন্যদিকে আমনের পরে আউশই হচ্ছে এ অঞ্চলের অন্যতম ফসল। এর উৎপাদন ও চাষের জমি বাড়াতে হবে। গবেষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, জাত উদ্ভাবনে সময় কমিয়ে আনতে হবে। সঠিক জাতটি নির্বাচন করতে পারলে উৎপাদন অনেকাংশে বাড়ানো সম্ভব। ব্রি আয়োজিত এ কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পিপিসি অনুবিভাগ) মোহাম্মদ নজমুল ইসলাম, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মো. নাসিরুজামান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আব্দুল আজিজ। এতে সভাপতিত্ব করেন ব্রি’র মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত সচিব (পিপিসি) বলেন, কৃষকের চাহিদামাফিক যন্ত্র সরবরাহে বর্তমান সরকারের যথেষ্ঠ আন্তরিক। যুগোপযোগী যন্ত্র উদ্ভাবন, আমদানী ও সরবরাহে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। বোরো উৎপাদন কার্যক্রমে কৃষকের পাশে থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানের জন্য উপস্থিত সকলকে তিনি আহ্বান জানান।
বিএডিসি’র চেয়ারম্যান বলেন, এ অঞ্চলে আমন সংগ্রহ দেরি হওয়াতে বোরোর জন্য কাক্সিক্ষত জমি পাওয়া যায় না। ফলে বোরো আবাদ বাধাগ্রস্থ হয়। এক্ষেত্রে ব্রি ধান৪৮ অথবা ব্রি ধান৫৮’র মতো স্বল্পমেয়াদি জাতগুলো চাষ করা যেতে পারে। । তিনি বলেন, যথাযথ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এ অঞ্চলের খাল খনন করে সেচের পানির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা হবে।
ডিএই’র মহাপরিচালক বলেন, ব্রি ধান৬৭, ব্রি ধান৬৮, ব্রি ধান৭৪, বিনা ধান১০ ভালো জাত । এগুলো নির্বাচন করা যেতে পারে। বোরো ধান চাষের আওতা বাড়ানোর পাশাপাশি দু’টি করে চারা ও ২.৫ কেজি হারে বীজ ব্যবহারের পরামর্শ দেন। তিনি সেচকাজে সোলার প্যানেল ব্যবহার বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে ব্রি’র ডিজি বলেন, ব্রি উদ্ভাবিত জাত সমূহের মধ্যে এ অঞ্চলের উপযোগী বেশ কয়েকটি জাত রয়েছে। বোরো মৌসুমে এ সকল জাত কাক্সিক্ষত ফলন এনে দিতে পারে। এছাড়া ব্রি উদ্ভাবিত হাইব্রিড জাতসমূহ সম্প্রসারণের ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্রি’র মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আলমগীর হোসেন। এতে ডিএই’র উপস্থাপনা করেন বরিশাল অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. ওমর আলী শেখ এবং বিএডিসি’র উপস্থাপনা করেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শিবেন্দ্র নারায়ণ গোপ। কর্মশালায় কৃষকসহ কৃষি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শতাধিক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে গত ১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় একই স্থানে তিনি বরিশালস্থ কৃষি মন্ত্রণালাধীন বিভিন্ন দপ্তর প্রধানদের সাথে মতবিনিময় করেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সভাপতিত্বে এতে সম্মানিত অতিথি ছিলেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. হারুনর রশীদ। এ সময় অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. নূরুল আলম, বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আল মামুন উপস্থিত ছিলেন।