রংপুর অঞ্চলে চলতি মৌসুমে আমন আবাদ কার্যক্রম পরিদর্শন এবং অঞ্চলের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাগণের সাথে ১০ আগস্ট ২০১৮ তারিখে খামারবাড়ি, রংপুরের সম্মেলন কক্ষে প্রধান অতিথি হিসেবে এক মত বিনিময় সভায় উপস্থিত থেকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহা পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ মহসীন বলেন, এ অঞ্চলে পানি সাশ্রয়ি ফসল হিসেবে আউশের আবাদ বৃদ্ধিতে যুগোপযোগী কৃষি প্রযুক্তিসমূহ এবং কৃষি বান্ধব বর্তমান সরকারের আউশ আবাদে প্রণোদনা প্রদান উত্তরাঞ্চলের কৃষিতে সুফল বয়ে এনেছে। আমন আবাদেও যার প্রভাব পড়ছে। তিনি বলেন, এবছর সারা দেশে প্রায় আটাশ হাজার হেক্টর জমিতে আউশের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে, এর প্রায় পনেরো হাজারই রংপুর অঞ্চলের। উত্তরাঞ্চলে আউশের আবাদ বৃদ্ধির আরো সুযোগ রয়েছে। এজন্য স্থানীয়ভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ করে কৃষকদের মাঝে উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য তিনি উপস্থিত সকল কর্মকর্তাগণের প্রতি আহবান জানান। তিনি নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর, রংপুর জেলার তারাগঞ্জ ও রংপুর সদর উপজেলা এবং রংপুর মেট্রোপলিটন কৃষি এলাকার মাঠ পরিদর্শনে লোগোভো পদ্ধতি অনুসরণে প্রতি দশ সারি পর পর এক সারি ফাঁকা রেখে সারিতে রোপা আমনের চারা রোপন এবং পার্চিং কার্যক্রম দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন। এতে বালাইয়ের উপদ্রব কমবে এবং বালাই জরিপে সুবিধা হবে।
মত বিনিময় সভায় উপস্থিত সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাগণের পক্ষ থেকে এটিআই, তাজহাট, রংপুরের উপাধ্যক্ষ কৃষিবিদ মোঃ গোলাম মোস্তফা তাঁর বক্তব্যে এটিআইয়ের বর্তমান সিলেবাসের সাথে মাঠ পর্যায়ে ব্যবহৃত কৃষি প্রযুক্তিসমূহের বিস্তর পাথ্যর্কের বিষয়টি তুলে ধরেন এবং এই পার্থক্য দূর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার উপর গুরুত্বারোপ করেন। হর্টিকালচার সেন্টার, বুড়িরহাট, রংপুরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ কে. এম. মাউদুদুল ইসলাম তার বক্তব্যে জানান যে, প্রতি জেলায় একটি করে হর্টিকালচার সেন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা অনুযায়ী লালমনিরহাট-কুড়িগ্রাম সীমান্তে ডিএইর নিজস্ব ৬৫ শতক জমিতে একটি হর্টিকালচার সেন্টার স্থাপনের প্রস্তাবনা ইতোপূর্বে দাখিল করা হয়েছে। ৫০ জনের আবাসিক সুবিধা সম্বলিত বুড়িরহাট হর্টিকালচার সেন্টারের ডরমিটরিটি বর্তমানে বিভিন্ন প্রকল্পের প্রশিক্ষণ ভ্যেনু হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ সেন্টারে উৎপাদিত চারা/কলম ডিএইর বিভিন্ন প্রদর্শনীতে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ডিএই, রংপুর জেলার উপ পচিালক কৃষিবিদ ড. মোঃ সরওয়ারুল হক এবং রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ খোরশেদ আলম মাঠের বিভিন্ন চলমান কার্যক্রম, সমস্যা ও কার্যক্রমভিত্তিক চাহিদার সমাধানে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করার বিষয়গুলো তুলে ধরেন। গত কয়েকদিন যাবত বৃষ্টি না হলেও সম্পূরক সেচের মাধ্যমে আমন রোপন অব্যাহত রাখতে কৃষক পর্যায়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলেও তাঁরা জানান। এ উদ্দেশ্যে বিএডিসি ও বিএমডিএ-এর সাড়ে আট শত গভীর নলকূপ থেকে প্রয়োজনীয় সম্পূরক সেচ প্রদানের জন্য তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে বলে উপ পরিচালক জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ মহসীন বলেন, সরকারের বন্যা ঝুঁকি মোকাবেলার উদ্যোগের অংশ হিসেবে গত বছরের মতো এবছরও উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে ভাসমান বীজতলা ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের উঁচু জমিতে আপদকালীন বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। উত্তরাঞ্চলে স্বর্ণা জাতের ধানের বিকল্প হিসেবে ব্রিধান ৫১ ও ব্রিধান ৫২ আবাদ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য অঞ্চল, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সকল কর্মকর্তাগণকে কৃষক উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম গ্রহণের পরামর্শ দেন। কৃষক প্রশিক্ষণ, প্রদির্শনী স্থাপন ও মাঠ দিবসসহ সকল ধরণের কার্যক্রমের তথ্য সংশ্লিষ্ট রেজিস্টারে সংরক্ষণ পূর্বক মাঠ কার্যক্রম বৃদ্ধির জন্য মনিটরিং জোরদার করার বিষয়েও কৃষি কর্মকর্তাগণকে তাগিদ দেন। বিশেষ করে রাজস্ব খাতে স্থাপিত প্রদর্শনীসমূহে গবেষণা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সর্বশেষ উদ্ভাবিত জাত ও কৃষি প্রযুক্তিসমূহ ব্যবহার এবং কৃষি যান্ত্রিকীকরণের উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়া তিনি দেশি ফলের চারা উৎপাদন ও রোপন, কৃষি বাতায়নে কৃষক তালিকা হালনাগাদকরণ, মাসিক কৃষিকথা পত্রিকায় প্রকাশিত লেখার উপর উপজেলা পর্যায়ে এসএএগণের পাক্ষিক সভায় আলোচনা এবং বরাদ্দকৃত অর্থ যথাসময়ে যথানিয়মে ব্যয় পূর্বক সময়মতো সমন্বয় সদর দপ্তরে প্রেরণ বিষয়ে উপস্থিত কর্মকর্তাগণকে নিদের্শনা প্রদান করেন।
উক্ত মত বিনিময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এটিআই, তাজহাট, রংপুর ও গাইবান্ধার উপাধ্যক্ষবৃন্দ, হর্টিকালচার সেন্টার, বুড়িরহাট, রংপুরের উপ পরিচালক, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার সকল উপ পরিচালক, জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা, অতিরিক্ত উপ পরিচালক, উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের অতিরিক্ত উপ পরিচালক এবং অঞ্চল অফিসের উপ পরিচালক ও উদ্যান বিশেষজ্ঞ। মত বিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ শাহ আলম এবং অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন রংপুর কৃষি তথ্য সার্ভিসের আঞ্চলিক বেতার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ আবু সায়েম।