গত ১৯-০১-২০২০ ইং তারিখে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং পরিবেশ অথিদপ্তরের উদ্যোগে গ্লোবাল এনভাইরনমেন্টাল ফ্যাসিলিটি (এঊঋ) এর অর্থায়নে রাঙ্গামাটি সদরের পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সে বাংলাদেশের জলবায়ু ঝুকিপূর্ণ এলাকার জীবিকা স্থিতিস্থাপককরণ প্রকল্পের আওতায় দিনব্যাপি ‘স্টেকহোল্ডার কনসালটেশন’ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
রাঙ্গামাটি জেলার জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব(উন্নয়ন) ড. এস. এম মনজুরুল হান্নান খান। কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক(পরিকল্পনা) মোহাম্মদ সোলায়মান হায়দার, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান শাহিনুল ইসলাম এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রাঙ্গামাটি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. ফজলুর রহমান। কর্মশালার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এফএও এর সিনিয়র এনভাইরনমেন্টাল এডভাইজর মো. সাহেদুজ্জামান। এরপর প্রকল্পের উদ্দেশ্য, সম্ভাব্য কার্যক্রম এবং প্রভাব নিয়ে পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন এফএও এর প্রজেক্ট ফরমুলেশন স্পেশালিস্ট মো. আরফানুজ্জামান। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কৃষিবিদ মো. ফজলুর রহমান বলেন বর্তমান কৃষি বান্ধব সরকারের বিভিন্ন বাস্তবমূখী কার্যক্রমের ফলে সারা দেশের মত পার্বত্য এলাকার কৃষিতেও ইতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিগত দিনের বসতবাড়ি পর্যায়ের কৃষি এখন বানিজ্যিক কৃষিতে রুপান্তরিত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পাহাড়ি এলাকার কৃষিতে বিভিন্ন ঝুকি বিশেষ করে ভূমি ধ্বসের প্রবনতা দিন দিন বাড়ছে। এ জন্য এ অঞ্চলে পাহাড়ের ঢালে চাষের জন্য ফসল নির্বাচনে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বিভিন্ন উদ্যান ফসল বিশেষ করে আম, মাল্টা, কাজুবাদাম, ড্রাগন ফল আবদের বিষয়ে এবং উৎপাদিত ফসলের সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত সচিব ড. এস. এম মনজুরুল হান্নান খান বলেন জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষিসহ সকল ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিরুপ প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। বাংলার চিরায়ত ঋতুর বৈশিষ্ট আর আগের মত নেই। বৃষ্টিপাতের পরিমান ও বিতরণে পরিবর্তন আসায় তার বিরুপ প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক কৃষিতে। এই চ্যালেঞ্জ সমূহ মোকাবেলায় এলাকার উপযোগি পরিবেশ বান্ধব সঠিক কার্যক্রম চিহ্নিত করে তা তৃণমূল পর্যায় থেকে বাস্তবায়ন করতে হবে। এফএও এর এই প্রকল্পের বিভিন্ন কার্যক্রম এ এলাকার ঝুকিগ্রস্থ মানুষদের জীবন জীবিকা উন্নয়নে ইতিবাচক পদক্ষেপ রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সভাপতির বক্তব্যে এ কে এম মামুনুর রশিদ বলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার আয়তন সমগ্র দেশের প্রায় ১০ ভাগের ১ ভাগ। অনেক সম্ভাবনা থাকালেও বিভিন্ন জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুকির কারনে এ এলাকার অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। ভূমি ক্ষয়, ভূমি ধ্বস, খরা এ এলাকার জীবনযাত্রাকে বাধাগ্রস্থ করছে। অপরিকল্পিত চাষাবাদ বিশেষ করে জুমচাষের ফলে ২০১৭ সালের পর থেকে ভূমি ধ্বস নিয়মিত আকার ধারন করেছে। এ প্রকল্পের আওতায় নতুন নতুন সম্ভাবনা চিহ্নিত করে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন বরার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
কর্মশালার টেকনিক্যাল পর্বে অংশগ্রহনকারীরা দলগত আলোচনার মাধ্যমে পার্বত্য এলাকার উপযোগী ফসল যেমন মাল্টা, কাজুবাদাম, বাঁশ, আমলকি, মাশরুম, কলা ইত্যাদি চাষে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষদের বিভিন্ন সহায়তার বিষয়ে সুপারিশ করেন। কর্মশালায় রাঙ্গামাটি অঞ্চলের কৃষি মন্ত্রনালয়াধীন বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার উপজেলা, জেলা ও অঞ্চল পর্যায়ের কর্মকর্তাগন, জনপ্রতিনিধি, প্রিন্ট ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, গবেষক ও উন্নয়নকর্মীগন, কৃষিপন্য ব্যবসায়ী, এনজিও, কৃষক/কৃষানীসহ অন্যান্যরা বিভিন্ন বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করেন।