কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রাঙ্গামাটি অঞ্চলের আয়োজনে গত ২৫ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে রাজস্ব খাতের অর্থায়নে বাস্তবায়িত কার্যক্রমের বিষয়ে দিনব্যাপী আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কর্মশালা হর্টিকালচার সেন্টার, বালাঘাটা বান্দরবানের সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রাঙ্গামাটি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. ফজলুর রহমানের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব(সম্প্রসারণ অনুবিভাগ) সনৎ কুমার সাহা।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি ঢাকার সরেজমিন উইং এর পরিচালক কৃষিবিদ চন্ডী দাস কুন্ড, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ আলতাফ হোসেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙ্গামাটি,খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলার উপ পরিচালক যথাক্রমে কৃষিবিদ পবন কুমার চাকমা, কৃষিবিদ মোঃ মর্ত্তুজ আলী এবং কৃষিবিদ ড. এ কে এম নাজমুল হক এবং পাহাড়ী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, খাগড়াছড়ির মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. মুন্সী রাশীদ আহমদ।
উদ্বোধনী পর্বে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বান্দরবান পার্বত্য জেলার উপ পরিচালক ড. এ কে এম নাজমুল হক। কারিগরী পর্বে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলার চলতি ২০১৯-২০ অর্থ বছরে রাজস্ব খাতের আওতায় বাস্তবায়নাধীন প্রদর্শণীর কার্যক্রম এবং ২০২০-২১ অর্থ বছরে বাস্তবায়নযোগ্য কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিগণ পাওয়ার পয়েন্টে উপস্থাপনা করেন। এ সময় কর্মশালায় উপস্থিত অংশগ্রহনকারীগণ রাজস্ব খাতের আওতায় চলমান কার্যক্রম এবং আগামীতে বাস্তবায়নাধীন কার্যক্রমের উপর উন্মুক্ত আলোচনা ও মতবিনিময় করেন এবং আগামী ২০২০-২১ অর্থ বছরে বাস্তবায়নযোগ্য কার্যক্রমের রুপরেখা তৈরি করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কৃষিবিদ চন্ডী দাস কুন্ড, বলেন পার্বত্য অঞ্চরের কৃষকেরা খুবই পরিশ্রমী অথচ সামগ্রিক বিবেচনায় তারা আর্থসামাজিক দিক দিয়ে দেশের অন্য এলাকার কৃষকের তুলনায় পিছিয়ে আছে। এখানে প্রাকৃতিক অনেক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও পরিকল্পনা মোতাবেক সঠিক ফসলের সঠিক জাত ও উৎপাদন প্রযুক্তি যদি সঠিক কৃষকের কাছে পৌছে দেওয়া যায় তাহলে এ এলাকার কৃষিতে ব্যপক পরিবর্তন ঘটবে। এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে পারস্পারিক সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করার আহবান জানান।
প্রধান অতিথি সনৎ কুমার সাহা (অতিরিক্ত সচিব) বলেন দেশের সমতল এলাকার চেয়ে পহাড়ী অঞ্চলের কৃষির অনেক পার্থক্য ও প্রতিকূলতা রয়েছে। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে প্রদর্শণী বাস্তবায়নে এ এলাকার উপযোগী এবং লাভজনক ফসল ও জাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। পাশাপাশি কৃষকরা যাতে সকল উপকরন সহায়তা একসাথে এবং বিশেষ করে বীজ সময়মত পায় সে বিষয়টি সর্বোচ্চ বিবেচনায় রাখতে হবে। তিনি বলেন মাঠ ফসল চাষে বিভিন্ন সমস্যা এবং ঝুকি থাকায় সম্ভাবনাময় উদ্যান ফসল, মশলা ফসল, আখ ইত্যাদির আবাদ বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। সম্ভাবনাময় নতুন ফসলের পাশাপাশি সোলার লাইট ট্রাপ, ফলের ব্যাগিং, ফেরোমন ফাঁদ, ট্রাইকো কম্পোস্ট, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি কৃষি প্রযুক্তি তৃণমূল পর্যায়ের প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে সম্প্রসারণ করতে হবে। তিনি কৃষকদের উৎপাদিত পন্যের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ এবং কৃষকদের সংগঠিত করার ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করেন।
কর্মশালার সভাপতি কৃষিবিদ মো. ফজলুর রহমান বলেন রাজস্ব খাতের অর্থায়নে বাস্তবায়িত কার্যক্রমের মাধ্যমে পার্বত্য এলাকায় কৃষকদের মাঝে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রচেষ্টা সফল করার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাঠ পর্যায়ের সকল প্রতিষ্ঠান আন্তরিকতার সাথে কাজ করছে। তিনি কৃষকদের উৎপাদিত পন্য যাতে সহজে বাজারজাত করা যায় সেজন্য উপযুক্ত বাজার ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টিআকর্ষণ ও সহযোগিতা কামনা করেন। কর্মশালায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রাঙ্গামাটি অঞ্চলের বিভিন্ন দপ্তরের এবং নার্সভূক্ত দপ্তর সমূহের কর্মকর্তাগণ, সম্প্রসারণকর্মীগণ, কৃষক, জনপ্রতিনিধি এবং মিডিয়াকর্মীগণ উপস্থিত ছিলেন।