বান্দরবান জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে রাঙ্গামাটি অঞ্চলের কৃষি মন্ত্রনালয়াধীন বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার কর্মকর্তাদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সার্বিক কৃষির উন্নয়নে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় কৃষিমন্ত্রী ডঃ মোঃ আব্দুর রাজ্জাক এমপি মহোদয় বিভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। কৃষি মন্ত্রনালয়ের মাননীয় সচিব জনাব মোঃ নাসিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রনালয়ের মাননীয় কৃষিমন্ত্রী ডঃ মোঃ আব্দুর রাজ্জাক এমপি। সভায় বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস প্রফেসর ড: ছাত্তার মন্ডল, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মীর নূরুল আলম, বান্দারবান পার্বত্য জেলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দাউদুল ইসলাম, বান্দারবান পৌরসভার মেয়র ইসলাম বেবী, বান্দারবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ক্যাসাপ্রু। এছাড়া কৃষি মন্ত্রনালয়াধীন বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার মহাপরিচালক ও পরিচালকগণ উপস্থিত ছিলেন।
রোয়াংছড়ি উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ হাবিবুন নেছার উপস্থাপনায় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বান্দরবান পার্বত্য জেলার উপপরিচালক কৃষিবিদ আলতাফ হোসেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন ফসল আবাদের বর্তমান অবস্থা, মাঠে বাস্তবায়নাধীন চলমান কার্যক্রমসমূহ, পার্বত্য কৃষির চ্যালেঞ্জ এবং চ্যালেঞ্জ উত্তরনে করনীয় বিষয়ে সভায় পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙ্গামাটি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ প্রনব ভট্টাচার্য্য। তিনি বলেন পার্বত্য অঞ্চলে পর্যাপ্ত সমতল জমি না থাকায় মাঠ ফসল চাষের পরিধি বাড়ানোয় বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এক্ষেত্রে পাহাড়ী ভূমিতে বিভিন্ন উদ্যানতাত্ত্বিক ফসল ও উচ্চমূল্যের ফসলের আবাদ বৃদ্ধির প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। ঝুকি কম ও অধিক লাভজনক বিধায় এলাকার জুম চাষীরা জুমের পরিবর্তে উদ্যানতাত্ত্বিক ও উচ্চমূল্যের ফসল চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে। সভায় বিএডিসি, ব্রি, বারি, বিএসআরআই সহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিগন স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমসমূহ উপস্থাপন করেন। মতবিনিময় পর্বে প্রফেসর ড: ছাত্তার মন্ডল বলেন পাহাড়ের কৃষকরা জুমের পরিবর্তে লাভজনক উদ্যানতাত্ত্বিক ফসল আবাদের দিকে ঝুকছে এটা অত্যন্ত আশার বিষয়। এ এলাকার কৃষির প্রতিবন্ধকতা যেমন সেচ সংকট এবং পন্য বাজারজাতকরণ সমস্যা উত্তোরনে সরকারি সংস্থার পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থার অংশগ্রহনে উন্নত সেচ ব্যবস্থা যেমন ড্রিপ ইরিগেশন প্রবর্তণ এবং উদ্যোক্তা সৃষ্টির ব্যপারে তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় কৃষিমন্ত্রী ডঃ মোঃ আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেন, দেশের সমতল এলাকার তুলনায় পার্বত্য এলাকা কৃষিতে এখনও পিছিয়ে আছে। তবে এ এলাকায় বেশ কিছু উচ্চমূল্যের ফসল যেমন কফি, কাজুবাদাম, গোলমরিচ, ড্রাগনফ্রুট ইত্যাদির আবাদ বৃদ্ধির এবং তা প্রক্রিয়াজাত করে প্রচুর বৈদেশিক মূদ্রা অর্জণের সুযোগ রয়েছে। এসব ফসলের আধুনিক জাত ও চাষ প্রযুত্তি উদ্ভাবন এবং উৎপাদিত ফসল প্রক্রিয়াজাতকরনে শিল্প কারখানা স্থাপনে স্বল্প বা বিনা সুদে ঋণ প্রদান করে উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য পাইলট প্রকল্প গ্রহনের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি বলেন পার্বত্য এলাকায় চাষযোগ্য জমি কম হলেও সঠিক পরিকল্পনা গ্রহন করে এর সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এ এলাকার উপযোগী যেসব কৃষি প্রযুক্তি ইতিমধ্যে উদ্ভাবিত হয়েছে সেগুলো আরো কার্যকরভাবে সঠিক কৃষকের কাছে সফলভাবে পৌছে দেয়ার জন্য গবেষণা এবং সম্প্রসারণ প্রতিষ্ঠান সমূহের মধ্যে সমন্বয় ও সংযোগ আরো নিবিঢ় করার ব্যাপারে কৃষিমন্ত্রী মহোদয় সংশ্লিষ্ট সকলকে আহব্বান জানান। সভাপতির বক্তব্যে কৃষি মন্ত্রনালয়ের সচিব মোঃ নাসিরুজ্জামান গবেষণা সংস্থা সমূহের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন শুধু ফসলের জাতের উপর গবেষণা সীমাবদ্ধ না রেখে পাহাড়ের মাটির বৈশিষ্ট, ভৌগলিক বৈশিষ্ট ও অবস্থান বিবেচনা করে এলাকার উপযোগী লাগসই কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবনের দিকে নজর দিতে হবে, কোন এলাকায় কোন জাতের ধান উপযোগী তা চিহ্নিত করে তা সম্প্রসারণে উদ্যোগী হতে হবে। পাহাড়ে তুলা, আখ ছাড়াও অন্যান্য সম্ভাবনাময় ফসল চাষের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে গবেষণা এবং সম্প্রসারণকর্মীদের একত্রে আরো নিবিড়ভাবে কাজ করার ব্যাপারে তিনি নির্দেশনা প্রদান করেন। সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের কৃষি মন্ত্রনালয়াধীন বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার উপজেলা, জেলা ও অঞ্চল পর্যায়ের কর্মকর্তাগন, জনপ্রতিনিধি, প্রিন্ট ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, গবেষক ও উন্নয়নকর্মীগণ বিভিন্ন বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করেন।