উৎপাদন বাড়িয়ে লেবু জাতীয় ফসলের আমদানি নির্ভরতা কমানোর আহবান জানিয়ে মাননীয় কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সিলেটের আগের সেই স্মৃতিময় সুস্বাদু কমলা পিরিয়ে আনতে হবে। এ কমলা পিরিয়ে আনার জন্য বাগান তৈরির উদ্যোগ নিলে সরকার প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯) রাজধানীর খামারবাড়ির আ.কা.মু গিয়াস উদ্দীন মিলকী অডিটরিয়ামে ‘লেবু জাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পে’র অবহিতকরণ কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।
মাননীয় কৃষিমন্ত্রী বলেন, লেবু জাতীয়সহ অনেক প্রজাতির ফলে দেশ এখনো আমদানি নির্ভর। ইদানীং দেশের বাজারে সাদা আপেল দেখা যাচ্ছে। দিল্লী বা কলকাতার বাজার ও হোটেলে এসব ফল দেখা যায় না। তারা আমদানিও করে না। আমরা ভুটানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে নিম্নমানের কমলা আমদানি করে থাকি। যা ৪-৫ মাস ধরে খাই। অথচ এ কমলার স্বাদ পানসে, খেলে মিষ্টি লাগে না। আমাদেরকে দেশীয় ফল চাষ সম্প্রসারণ ও দেশি ফল খাওয়ার মানসিকতাকে আরও সমৃদ্ধ করতে হবে।
কৃষির সাফল্যে কৃষকের অবদানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশে ফসলের বিপ্লবের পিছনে মুলত: কৃষকদেরই অবদান বেশি। তবে এক্ষেত্রে সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীদের অবদানও কম নয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় এ সাফল্যের কথা প্রচার করা হয় না। কৃষি বিজ্ঞানীরা ১৫-২০ বছর ধরে কাজ করেও পদোন্নতি পায় না। আমরা সরকারের উর্ধ্বতন পর্যায়ে ইনসিটু পদোন্নতির বিষয়ে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। আশা করছি এটি হবে।
তিনি বলেন, দেশের ২০-২১ ভাগ লোক দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে। ক্রয় ক্ষমতা না থাকায় তারা নিরাপদ ও পুষ্টিমানের খাবার কিনতে পারে না। দুধ, ডিম উৎপাদন করে অন্যের হাতে তুলে দেয়। নিজের ছেলে মেয়েদের মুখে দিতে পারে না। সরকার এ অবস্থা পরিবর্তনে কার্যকর উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে।
দেশে বিনিয়োগ সুবিধা প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ১০০টি ইপিজেড করা হচ্ছে। এখানে গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎসহ সব ধরনের সুযোগ সুবিধা রয়েছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এক্ষেত্রে কিছু করতে হবে না। দেশে শিল্প গড়ে তোলার উপযোগি পোর্ট, রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামো যথেষ্ট উন্নয়ন হচ্ছে। দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে সম্পৃক্ত। একারণে দেশে রপ্তানি ও বিনিয়োগ বাড়ছে।
মাননীয় মন্ত্রী বলেন, কৃষির অবদান আগের চেয়ে কমে বর্তমানে ১৪-১৫ ভাগে দাড়িয়েছে। ম্যানুফ্যাচারিং সেক্টরের সম্প্রসারণ হলে কৃষির অবদান বাড়বে। আমাদের মাথা পিছু আয় বেড়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে মাথা পিছু আয় ৫ হাজার ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সরকার। দানাজাতীয় ফসলে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। চালে উদ্বৃত্ত। নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী আমরা এখন নিরাপদ পুষ্টিমানের খাবার দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
ঢাকা মহানগরের ক্যাসিনোতে অভিযানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আগে জানতাম না, ঢাকায় এতগুলো ক্যাসিনো রয়েছে। এর বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। সমাজের অস্থিরতা কমাতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ঢাকাসহ সারা দেশে অপকর্ম ও অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এদেরকে আইনের আওতায় এনে নির্মূল করা হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. আব্দুল মুঈদের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ছিলেন কৃষি সচিব জনাব মো. নাসিরুজ্জামান ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) পুলের সদস্য কৃষিবিদ মো. হামিদুর রহমান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ ফারুক আহমদ।
কৃষিবিদ মোহাম্মদ গোলাম মাওলা, কৃতসা, ঢাকা