স্বাধীনতা পরবর্তী কৃষির উন্নয়ন
মোঃ মেসবাহুল ইসলাম
মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির সবচেয়ে গৌরবময় ঘটনা। এই যুদ্ধের মধ্য দিয়েই আমরা লাভ করেছি স্বাধীন দেশ, নিজস্ব পতাকা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান করে নেয়। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলার ছাত্র-যুবক, কৃষক-শ্রমিকসহ সর্বস্তরের জনগণ বর্বর হানাদার পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। তারই পরিণতিতে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। বিশ্বের মানচিত্রে খোদিত হয় একটা নাম- ‘স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ’।
আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূরণ হবে এ মাসেই। ২০২১ সালে বাঙালির সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার মাস মার্চ এবার এসেছে ভিন্ন বার্তা নিয়ে। বাংলাদেশ অর্জন করেছে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের বছরে এই সুপারিশ জাতিকে উচ্ছ¡সিত করেছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এই প্রাপ্তি বিরাট অর্জন। এর সঙ্গে আমরা উদ্যাপন করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, যা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এক ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন অন্তপ্রাণ কৃষি ও কৃষকবান্ধব। তিনি স্বপ্ন দেখতেন সমৃদ্ধ, স্বনির্ভর ও উন্নত বাংলাদেশের। এ দেশের সংস্কৃতি, সামাজিক রীতিনীতি এবং সার্বিক জীবনপ্রবাহ কৃষিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। কৃষি বাংলাদেশের প্রায় ১৭ কোটি মানুষের শুধু খাদ্য ও পুষ্টির নিশ্চয়তা বিধান করে না, বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামালের জোগানও দেয়। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষি অদূর ভবিষ্যতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আর এ চিরসত্যটি অনুধাবন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই আমরা দেখি বঙ্গবন্ধু তাঁর সমগ্র রাজনৈতিক জীবনে কৃষক ও কৃষির উন্নয়ন ও কল্যাণ ভাবনায় নিবিড়ভাবে কাজ করেছেন। পঞ্চাশের দশকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের পার্লামেন্টে কৃষক ও কৃষি উন্নয়নের কথা বলতেন অত্যন্ত জোরালোভাবে। পাকিস্তানের ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের ২১ দফায় কৃষি উন্নয়ন, পাটের মূল্য, বন্যা নিয়ন্ত্রণ এসব বিষয় সবিশেষ গুরুত্ব পায়। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে রেডিও ও টেলিভিশনে দেয়া ভাষণেও তিনি কৃষির আধুনিকায়নসহ অর্থকরী ফসলের ওপর গুরুত্ব দেন। সেসাথে ভূমি-রাজস্বের চাপে নিষ্পিষ্ট কৃষককুলের ঋণভার লাগবের জন্য ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা বিলোপ এবং বকেয়া খাজনা মওকুফ করার প্রস্তাব রাখেন।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশের মাটিতে ফিরে আসেন। সদ্যস্বাধীন রক্তঝরা, মুক্তিযুদ্ধে বিধ্বস্ত একটি দেশে সব প্রতিহিংসা, প্রতিক‚লতাকে উপেক্ষা করে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২-৭৩ আর্থিক বছর প্রথম বাংলাদেশের বাজেট পেশ করেন। বাজেটে ৫০০ কোটি টাকা উন্নয়ন খাতের মধ্যে ১০১ কোটি টাকা রাখেন কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে। অতঃপর কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু সবুজ বিপ্লবের ডাক দেন। তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার কৃষি উন্নত দেশ থেকে বাংলার মাটি, জলবায়ু ও কৃষকের উপযোগী বিজ্ঞানসম্মত উন্নত প্রযুক্তি সংগ্রহে নেমে পড়েন। দশ লাখ কৃষকের সার্টিফিকেট মামলা প্রত্যাহার করে নেন। কৃষকদের খাজনার হয়রানি ও ব্যতিব্যস্ত জীবন থেকে রেহাই দিতে পঁচিশ বিঘা পর্যন্ত ভূমির খাজনা মওকুফ করে দেন। ভূমি মালিকানা সর্বোচ্চ সিলিং ১০০ বিঘা পর্যন্ত ধার্য করেন। বাড়তি বা খাসজমি ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে সুষ্ঠুভাবে বিতরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। কৃষি কাজে জনগণকে অধিকতর সমৃদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে জাতীয় কৃষি পুরস্কার প্রবর্তন করেছিলেন। তিনি উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ, উন্নতবীজ, সার, সেচ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ সরবরাহ করে কৃষি ক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা ও উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্যে স্বনির্ভরতা অর্জনের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান স্থাপনা, পুনঃসংস্কার, গবেষণা উন্নয়ন এবং ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করে কৃষিবিষয়ক প্রযুক্তি চর্চার মেধা আকর্ষণের যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। আর তারই ফলশ্রæতিতে আজ কৃষি গবেষণা, কৃষি সম্প্রসারণ ও কৃষি শিক্ষায় এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। বঙ্গবন্ধুর যুগান্তকারী পদক্ষেপে দেশের মেধাবী সন্তানগণ আগ্রহী হয়ে উঠেছেন কৃষি পেশায়।
উন্নত, সুখী ও সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলা গড়ার বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্নকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার জনবান্ধব সরকার কৃষিবান্ধবনীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৃষি ক্ষেত্রে সময়োপযোগী পদক্ষেপ এবং দিকনির্দেশনায় খোরপোশের কৃষি আজ বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত হয়েছে। খাদ্যশস্য উৎপাদন, টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, কর্মসংস্থান ও রপ্তানি বাণিজ্যে কৃষি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, কৃষিজমি কমতে থাকাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ। ক্ষুধার বিরুদ্ধে আন্দোলনের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মানজনক ‘সেরেস’ (CERES) মেডেল প্রদান করে।
প্রতি বছর দেশে কৃষি জমির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাচ্ছে। সে সাথে মাটির অবক্ষয়, উর্বরতা হ্রাস এবং লবণাক্ততা বাড়ার কারণে মাটির গুণাগুণ হ্রাস পাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন, বন্যা, খরা, ঝড়, রোগবালাইয়ের আক্রমণ এবং নদীভাঙন ইত্যাদি বিষয়াদি কৃষির অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে প্রতিনিয়ত। গত ১২ বছরে বর্তমান সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময়কালে গৃহীত পরিকল্পনা ও কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে কৃষি উন্নয়নে নানা ধরনের কৃষিবান্ধব নীতি ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কৃষির সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সার, বীজসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণের মূল্য হ্রাস করা হয়েছে। শতকরা ৫০ থেকে ৭০ ভাগ ভর্তুকি প্রদানের মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ বিস্তৃত করার পাশাপাশি কৃষকদের ঋণ সুবিধা প্রদান, নগদ আর্থিক ও উপকরণ সহযোগিতা প্রদান, নিত্যনতুন উপযুক্ত জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং সম্প্রসারণ করা হয়েছে। স্বল্প জমি থেকে অধিক উৎপাদনের জন্য কৃষকদের মাঝে ভর্তুকি ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিনামূল্যে উচ্চফলনশীল বীজ সরবরাহ করা হচ্ছে। আলুসহ বিভিন্ন সবজি, ফল ও ফুল রপ্তানি সম্প্রসারণের নিমিত্ত উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থা উন্নয়নসহ কার্যকর ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। যশোরের গদখালির পলিহাউজে রপ্তানিযোগ্য ফুল এবং নিরাপদ সবজি উৎপাদনের উদ্যোগ দেশি-বিদেশি মহলে প্রশংসিত হয়েছে। কৃষকের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি ও নিরাপদ সবজি/ফল সহজলভ্য করার নিমিত্ত ঢাকায় শেরেবাংলানগরে কৃষকের বাজার চালু করা হয়েছে যেখানে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি বাজারজাত করছে। ক্রমান্বয়ে এই ব্যবস্থা জেলা-উপজেলা শহরে সম্প্রসারিত হবে।
ডাল, তেলবীজ, মসলা ও ভুট্টা চাষ বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন সহায়তা অব্যাহত আছে। এ ছাড়াও কাজুবাদাম, কফি ইত্যাদি অর্থকরি ফসল চাষ ও বাজারব্যবস্থা উন্নয়নে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। ফসলের উৎপাদন খরচ হ্রাস করার লক্ষ্যে ২০০৯ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত সারের মূল্য ৪ দফা কমিয়ে প্রতি কেজি টিএসপি ৮০ টাকা থেকে কমিয়ে ২২ টাকা, এমওপি ৭০ টাকা থেকে ১৫ টাকা, ডিএপি ৯০ টাকা থেকে ২৫ টাকায় নির্ধারণ করেছিল। ২০১৯-২০ অর্থবছরে কৃষকপর্যায়ে ডিএপি সারের খুচরা মূল্য ২৫ টাকা থেকে কমিয়ে ১৬ টাকা করা হয়েছে।
এ ছাড়া ফসলের উৎপাদন খরচ কমিয়ে সঠিক সময়ে ফলন নিশ্চিত করতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে একটি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। কৃষি বিপণন ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন ও কৃষকের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি বাজারজাতকরণ নিশ্চিত করা হচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রমের সফল ধারাবাহিকতায় বিশ্বে বাংলাদেশ এখন ধান উৎপাদনে তৃতীয়, শাকসবজি উৎপাদনে তৃতীয়, পাট উৎপাদনে দ্বিতীয় ও কাঁচা পাট রপ্তানিতে প্রথম, আম ও আলু উৎপাদনে সপ্তম, পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম।
ডিজিটাল কৃষি তথ্য ‘ই-কৃষি’ প্রবর্তনের ধারা জোরদার করা হয়েছে। দেশে মোট ৪৯৯টি কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র (এআইসিসি), কৃষি কল সেন্টার, এআইএসটিউব/ইউটিউব, কৃষি তথ্য বাতায়ন, কৃষক বন্ধু ফোন, ই-বুক, অনলাইন সার সুপারিশ, ই-সেচ সেবা, কৃষকের জানালা, কৃষকের ডিজিটাল ঠিকানা, কমিউনিটি রেডিওসহ বিভিন্ন মোবাইল এবং ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ও সফটওয়্যার ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বীজতুলা বিক্রয়ে ই-সেবা, পোকা দমনে পরিবেশবান্ধব ইয়েলো স্টিকি ট্র্যাপ ব্যবহার, নগর কৃষি, ডিজিটাল কৃষি ক্যালেন্ডার বাছাই করে দেশব্যাপী ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সময়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কৃষিনীতি আধুনিকীকরণ করে জাতীয় কৃষিনীতি ২০১৮ ও জাতীয় কৃষি সম্প্রসারণ নীতি ২০২০ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্ষুদ্রসেচ নীতিমালা, জৈব কৃষিনীতি প্রণয়নসহ কৃষি উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যকরি ও সময়োপযোগী আইন প্রণয়ন করেছে। কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নীতিমালা ২০১৯ প্রণীত হয়েছে, যার মাধ্যমে কৃষিতে অবদানের জন্য ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে স্বীকৃতিদানের বিষয়টি সংহত/সম্প্রসারিত হবে। নিরাপদ ও মানসম্মত ফসল উৎপাদন এবং রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ উত্তম কৃষি চর্চা নীতিমালা ২০২০ প্রণীত হয়েছে।
ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে খাদ্য উৎপাদনই শেষ কথা নয়। বরং পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাদ্যের যোগানও খুব গুরুত্বপূর্ণ। সে লক্ষ্যে পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন, সহজলভ্যতা ও প্রাপ্যতার বিষয়ে আরো বেশি মনোযোগ প্রয়োজন। সুস্থ ও মেধাবী জাতি গঠনে নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ জরুরি। পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিতকরণে বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নেই। সে লক্ষ্যে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়ন দরকার। সরকারের সঠিক নীতি সহায়তা, প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং সামাজিক নিরাপত্তাভিত্তিক কর্মসূচির মাধ্যমে পুষ্টিকর খাবার প্রাপ্তি অনেকাংশেই সহজতর হয়েছে।
নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮, এসডিজি ২০৩০, রূপকল্প ২০২১ এবং রূপকল্প ২০৪১ এর আলোকে জাতীয় কৃষিনীতি, ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট, ডেল্টাপ্লান : ২১০০ এবং অন্যান্য পরিকল্পনা দলিলের আলোকে সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলেই কৃষিসহ সকল ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তব রূপ পাবে।
কৃষির সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের কৃষকের প্রাণ। কৃষির উন্নতি না হলে কৃষকের উন্নতি হবে না। কৃষির উন্নতি যদি বাধাগ্রস্ত হয় তবে বাংলাদেশের অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই কৃষির উন্নতি সাধিত হলে কৃষকেরও দুর্দশা লাঘব হবে। এ ব্যাপারে কৃষকদের মধ্যে চেতনাবোধ জাগিয়ে তুলতে হবে। পুরনো আমলের চাষাবাদ প্রণালি পরিবর্তন করে আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত চাষাবাদে মনোযোগী হতে হবে। আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা সম্পর্কে কৃষকদের কৃষি বিশেষজ্ঞ ও কৃষি কর্মকর্তাদের সক্রিয় সহযোগিতা তাদের এ সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে।
সিনিয়র সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়, www.moa.gov.bd
দাবায়া রাখতে পারবা না
মেঃ হাসানুজ্জামান কল্লোল
এক শিশুর জন্ম হয়েছিল, একজন মানুষের জন্ম হয়েছিল, এক অতিমানবের জন্ম হয়েছিল,
এক মহাকবির জন্ম হয়েছিল যিনি নির্মাণ করলেন দীর্ঘ রক্তস্নাত কবিতা : বাংলাদেশ।
সেই মহামতি বাঙালির তর্জনীতে ছিল
বঙ্গোপসাগরের দোলায়িত ঝড়,
যা জাগায় সুন্দরবনের মত অরণ্যের স্বাধীনতা।।
তাঁর চোখে নতুন দেশের জলফড়িং নেচেছিল পাটের পাতায়, বোনের লালপেড়ে শাড়ির সবুজ মায়া ছিল প্রিয় ব্যালকনি জুড়ে আর
সাফল্যের গন্ধ ভাসতো তাঁর প্রিয়
কালো পাইপের ঘ্রাণে।
তিনি যখন নিরন্ন বাঙালির কাঁধে হাত রাখতেন
তখন গোলাভরা স্বপ্ন নেমে এসে নির্মাণ করতো
নদীর দেহে ঋজু মেরুদÐ...
জল তার ছলছল গেয়ে যেতো ভরা জোয়ারের নৌকায় দেশ স্বাধীনের গান।।
দেবদূতের মত সেই শিশু ক্রমশ:
বিকশিত হয়েছিলেন টুঙ্গিপাড়ায়!
টুঙ্গিপাড়া থেকে ঢাকায় সারা বাংলায়!
আলোকিত মানবের জেলখানার
গরাদের অন্ধকার চিরে
আলোর ঝর্ণামালা ছড়িয়ে যেতো শুরু করলো নীরব গ্রামের কুপির শিখায় আর ঐ মৃত
শহরের ম্রিয়মাণ রাতের জানালায়!
এই অমিত তেজী শ্রেষ্ঠ বাঙালি মানব-
মার্চে যার আবির্ভাব, তিনিই মার্চে জন্ম দিলেন
তাঁর স্বপনের সমান বড় একটি দেশ।
মার্চে জন্ম দিলেন অশ্রতপূর্ব বিশ্বকাঁপানো ঘোষণা- এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম!
আর বললেন : রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব...
এবং সব বিচলিত, রিক্ত বক্ষে প্রথিত করলেন অসম্ভব তেজ জাগানিয়া আকাশ ভাঙা সাহসী
উচ্চারণ:
দাবায়া রাখতে পারবা না।।
আজ শতবর্ষী সেই শিশুর টুঙ্গিপাড়ায়
ঘুমিয়ে থাকা অমর কণ্ঠের অনুরণন শোনে
তাঁর জীবনের বিনিময়ে রেখে যাওয়া
নতুন প্রজন্মের শিশু!
মহান পিতার নিজের সুকন্যার হাতেই গড়ে ওঠা বিপুল পদ্মাসেতু পার হতে গিয়ে একে একে
সব তরুণ কণ্ঠ আজ বিজয়ী চিহ্ন দেখায় এবং ফোর-জি মোবাইলে সুর তুলে কণ্ঠ ছেড়ে গায়:
শুনছো তোমরা-একাত্তরের কীট!
আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না নিশ্চিত!!
অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ), কৃষি মন্ত্রণালয়, www.moa.gov.bd
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ : নিরাপদ ফসল উৎপাদনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর
মোঃ আসাদুল্লাহ
বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। কৃষি এ দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৪৫ ভাগ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থাকা সত্তে¡ও বাংলাদেশ বিগত ৫০ বছরে খাদ্য নিরাপত্তায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করছে। মোট দেশজ উৎপাদন তথা জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১৩.৬০%।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়া। তাঁরই স্বপ্ন পূরণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রত্যয়ে বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে উন্নত জাতি গঠন করতে হবে। জনগণের পুষ্টির স্তর উন্নয়নের মাধ্যমেই সমৃদ্ধশালী, সুস্থ জাতি গঠন করা সম্ভব। সে প্রেক্ষিতে নির্বাচনী প্রতিশ্রæতি-২০১৮ ও টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি)-তে নিরাপদ, পুষ্টিমানসম্পন্ন খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর জোর দেয়। কৃষি মন্ত্রণালয় সবার জন্য নিরাপদ, পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পুষ্টিসমৃদ্ধ, নিরাপদ ও চাহিদাভিত্তিক খাদ্য উৎপাদন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা জাতীয় কৃষি নীতি-২০১৮ এর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।
পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধি, মেধা বিকাশ ও শারীরিক গঠনে কৃষি মন্ত্রণালয় ভ‚মিকা রাখছে। কৃষি খাতে উত্তম কৃষি চর্চা (Good Agricultural Practices-GAP) যথাযথ অনুসরণপূর্বক নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফসল উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বাজারজাতকরণ ব্যবস্থায় বালাইনাশক ও অন্যান্য রাসায়নিক এর বিজ্ঞানসম্মত ব্যবহার এবং সম্প্রসারণ কর্মকাÐের অন্যতম অনুসঙ্গ হিসেবে কাজ করছে।
বাংলাদেশের মাটি ও জলবায়ু সবজি চাষের জন্য সহায়ক। শাকসবজিতে সাধারণত বিভিন্ন খনিজ লবণ এবং ভিটামিন প্রচুর পরিমাণে থাকে। এ জন্য শাকসবজিকে রোগ প্রতিরোধক খাদ্য বলা হয়। এতে ক্যালরির ও আমিষের পরিমাণ খুব কম। গাঢ় হলুদ ও সবুজ শাকসবজিতে বেশি পরিমাণে ক্যারোটিন বা প্রাক ভিটামিন ‘এ’ থাকে যা খাওয়ার পর ক্ষুদ্রান্তে ভিটামিন এ তে রূপান্তরিত হয়। সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতিদিন আহারে সবজির ব্যবহার জনপ্রিয় করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের চাষকৃত অপচলিত সবজির সংখ্যা প্রায় ৯০টি যার মধ্যে ৩০-৩৫টিকে প্রধান সবজি ধরা যায়। দেশের শতকরা ৯.৩৮ ভাগ জমি সবজি চাষের জন্য ব্যবহার হচ্ছে যার মাধ্যমে মাথা পিছু ১২৫ গ্রাম সবজি সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়। একজন সুস্থ সবল মানুষের জন্য প্রতিদিন ২২০ গ্রাম (সূত্র: এফএও, ডিএই) সবজি গ্রহণ করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের অপুষ্টি সমস্যা সমাধানে সুষম খাবারের নিশ্চয়তা দিতে বিভিন্ন প্রকারের শাকসবজি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাই বছরব্যাপী নিরাপদ সবজি উৎপাদন করার মাধ্যমে সারা বছরের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি চাহিদা মেটানো সম্ভব।
সবজি উৎপাদনের ক্ষেত্রে সবজি চাষে রাসায়নিক সার প্রয়োগ ও পোকামাকড় দমনে কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়। তাছাড়া কৃষক অতি লাভের আশায় মাঠে কীটনাশক প্রয়োগ করে অল্প সময়ের মধ্যে সবজি সংগ্রহ করে বিক্রি করে থাকে। সঠিক সময় না মেনে কীটনাশক প্রয়োগ ও প্রয়োগমাত্রা সম্পর্কে ধারণা না থাকার দরুন নিরাপদ সবজি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতিকারক উপাদান মানুষের দেহে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টির কারণ। জৈব প্রযুক্তির ব্যবহার, পরিমিত মাত্রায় রাসায়নিক সার প্রয়োগ, উপযুক্ত সময় ও নির্ধারিত মাত্রায় কীটনাশকের ব্যবহার এবং সঠিক সময়ে সবজি সংগ্রহের মাধ্যমে নিরাপদ সবজি উৎপাদনের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে।
উন্নত ও সুস্থ সবল বীজ, সঠিক পরিচর্যা ও জৈব প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে প্রায় সব ধরনের মাটিতেই নিরাপদ উৎপাদন করা যেতে পারে। এ দেশে মোট আবাদি জমির পরিমাণ ৮.৫ মিলিয়ন হেক্টর। আমরা সবজি চাষের জন্য মাত্র ৯.৩৮ ভাগ জমি ব্যবহার করছি আর এতে মাথাপিছু সবজি সরবরাহ করা যাচ্ছে মাত্র ১২৫ গ্রাম। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার তথ্য মতে বাংলাদেশ সবজি উৎপাদন এখন বিশ্বে তৃতীয়। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশে ১৩০৬৮৭৯ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ করা হয়। যেখান থেকে ২৮৯০২২৩১ টন সবজি উৎপাদিত হয়। পাশাপাশি ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে সবজি রপ্তানির পরিমাণ ১৭৩০৬.৩৩৩ মেট্রিক টন (উৎস: উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং)।
নিরাপদ সবজি উৎপাদনে সচেতনতা
নিরাপদ সবজি উৎপাদনে রাসায়নিক ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে কতিপয় বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি। যেমন: ১) রাসায়নিক দ্রব্যের সঠিক ব্যবহার অনুসরণ। ২) সবজি আবাদি জমির পরিবেশকে রাসায়নিক সংক্রমণ হতে সুরক্ষা করা। ৩) সঠিক রাসায়নিক সার/কীটনাশক গ্রহণযোগ্য মাত্রায় ব্যবহার। ৪) সেচ ব্যবস্থাপনায় পানির ঝুঁকি মূল্যায়ন ও নিয়ন্ত্রণ।
নিরাপদ সবজি উৎপাদনে ডিএইর কার্যক্রম
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিরাপদ সবজি উৎপাদনে বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচি অনুমোদন করেছেন। যেমন: পরিবেশবান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্প, ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ গবেষণা, সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ প্রকল্প, বাংলাদেশের শাকসবজি, ফল ও পান ফসলের পোকামাকড় ও রোগবালাই ব্যবস্থাপনায় জৈব বালাইনাশকভিত্তিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ প্রভৃতি। যা কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সারাদেশে বছরব্যাপী নিরাপদ সবজি উৎপাদনের জন্য যা কাজ করে যাচ্ছে সেগুলো হলো- ১) নিরাপদ সবজি উৎপাদনে চাষিদের প্রশিক্ষণ প্রদান। ২) নিরাপদ সবজি উৎপাদনের কলাকৌশল হাতে-কলমে দেখানো। ৩) নিরাপদ সবজি উৎপাদনের প্রদর্শনী স্থাপনের মাধ্যমে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ। ৪) জৈব কৃষি তথা ফেরোমন ফাঁদ, আইপিএম, আইসিএম, উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কৌশলের মাধ্যমে যথাসম্ভব জৈব বালাইনাশকের ব্যবহার নিশ্চিতকরণ। ৫) সঠিক সময় ও গ্রহণযোগ্য মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগে কৃষককে উদ্বুদ্ধ করা। ৬) বছরব্যাপী সবজি উৎপাদন সম্পর্কে কৃষককে পরামর্শ প্রদান।
নিরাপদ সবজি উৎপাদনে করণীয়
অনিরাপদ সবজি পুষ্টির পরিবর্তে মানুষের শরীরে বিভিন্ন রোগ ছড়াচ্ছে এবং দেশের বাইরে রপ্তানি করার ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি করছে। নিরাপদ সবজি উৎপাদনের ক্ষেত্রে রাসায়নিক ব্যবহার পরিহার করতে হবে যেন মাটি, পানি ও বায়ু দূষণ না হয় এবং কৃষক ভাইদের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সুরক্ষা হয়। তাই আইপিএম, আইসিএম, উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির স¤প্রসারণে জোর দিতে হবে। মাটির উর্বরতা বাড়ানোর জন্য জমিতে জৈবসার প্রয়োগ করতে হবে। তাছাড়া কম্পোস্ট সার, কেঁচো সার ইত্যাদি প্রয়োগ করলে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। বালাইনাশকের ক্ষেত্রে নিম, নিশিন্দা, বিষকাটালী ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে কৃষকের স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে না।
পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে কাক্সিক্ষত নিরাপদ ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষির আধুনিকায়নে ডিজিটাল সেবাসমূহ (লক্ষণ দেখে রোগবালাই নির্ণয়, নিরাপদ বালাইনাশক ব্যবহার, অনলাইন বা অফলাইন সার সুপারিশ, কৃষি কল সেন্টার) কৃষককে প্রদান করা হয়েছে। সেসাথে মাঠপর্যায়ে আইপিএম কার্যক্রমের মাধ্যমে কৃষকদের কীটনাশক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি রাসায়নিক বালাইনাশকের ব্যবহার ক্রমাগত কমার ফলশ্রæতিতে ২০১৮ সালে কীটনাশকের ব্যবহার ছিল ৩৯২৩৭.০০ মে. টন/কিলোলিটার। ২০১৯ সালে ব্যবহার হয়েছে ৩৮৩৬৯.০০ মে.টন/কিলোলিটার। যা পূর্বের বছরের তুলনায় ৯১৪.২২ মে. টন/ কিলোলিটার কম। তাছাড়া সম্প্রতি ৪৪টি জৈব বালাইনাশকের লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে এবং ১১টির রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ক্যাবি এর সহায়তায় ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত মোট ২০টি উপজেলায় সর্বমোট ৩০টি প্লান্ট ডক্টরস ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রায় ৭,০০০ জন এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রায় ৪,৬৮২ জন কৃষককে উদ্ভিদ সংরক্ষণ সম্পর্কিত সেবা প্রদান করা হয়েছে। বালাই ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের মাধ্যমে ধান, গম, ভুট্টা, শাকসবজি প্রভৃতি ফসলে প্রচলিত ও নতুন নতুন পোকা/রোগ যেমন: গমে বøাস্ট, ভুট্টায় ফল আর্মিওয়ার্ম প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে ফেঁরোমন ফাঁদ ব্যবহার, ফ্যাক্টসিট সরবরাহ, আইপিএম পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে।
নিরাপদ সবজি উৎপাদনকারী কৃষকের বাজার অনুপ্রবেশ
কৃষকের বাজার অনুপ্রবেশ মূলত বাধাগ্রস্ত হয় পরিবহণ, অবকাঠামো এবং গুণগত স্ট্যান্ডার্ড দ্বারা। উন্নয়নশীল দেশের অধিকাংশ কৃষকেরই নিজস্ব পরিবহণ না থাকায় স্থানীয় বাজারের বাইরে পণ্য নিয়ে যেতে পারেন না। অধিকন্তু কৃষকের নেই ফসল সংগ্রহোত্তর প্রযুক্তি এবং অবকাঠামো, যেমন-হিমায়িত বা শীতক সুবিধাবলি, যার ফলে পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায় এবং ফসল সংগ্রহোত্তর অপচয় হয়। এসব বাধাসমূহের জন্য কৃষক বড় ব্যবসায়ী বা রপ্তানিকারকের সঙ্গে সরাসরি অংশীদারিত্বে যেতে পারেন না, কারণ ব্যবসায়ী বা রপ্তানিকারকের প্রয়োজন পণ্যের ভৌতিক গুণাবলি এবং পরিমাণ। ফলে কৃষক তাদের এলাকার বাইরের বাজার অংশীদারদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন না এবং কৃষক তার এলাকার বাইরের বাজারের পণ্য মূল্য ও চাহিদা সম্পর্কে সজাগ থাকেন না। এভাবেই কমে যায় কৃষকের মুনাফা। কৃষকদেরকে বাজারে সংযুক্ত করার উদ্দেশ্য দুটি। ১) কৃষকদেরকে ভোক্তার চাহিদা সম্পর্কে তথ্য দেয়া, কি ধরনের পণ্য তারা পছন্দ করে এবং কোনপর্যায়ের গুণাবলি তারা পছন্দ করে। ২) তাদেরকে ক্রেতাদের পছন্দের পণ্য সরবরাহ করার সামর্থ্য বৃদ্ধি করে অধিক মুনাফা অর্জনে সহায়তা করা।
পরিশেষে মুজিববর্ষে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী সাফল্য কামনা করে দেশের জনগণের দীর্ঘমেয়াদি পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার টেকসই রূপ দিতে নিরাপদ সবজি উৎপাদনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা ব্যক্ত করছি।
মহাপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫, ফোন : ৯১৪০৮৫০, ই-মেইল : dg@dae.gov.bd
মুজিববর্ষে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও কৃষির অগ্রযাত্রা
ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার১ ড. সুস্মিতা দাস২
বাঙালি জাতি আজ স্বাধীনতার মহান রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীর অভূতপূর্ব সন্ধিক্ষণে। এই অতুলনীয় মহেন্দ্র ক্ষণ আমাদের বাংলাদেশ নির্মাণ মুহূর্ত এবং সেই নির্মাণে বঙ্গবন্ধুর অসামান্য ভূমিকার কথা আরেকবার মনে করিয়ে দিচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দূরদৃষ্টি এবং বলিষ্ঠ নেতৃত্বে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সবুজের বুকে লাল সূর্য খচিত পতাকার রাষ্ট্র হিসেবে যে ভূখÐটির আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল তার নাম বাংলাদেশ। একাত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যে স্বতন্ত্র দেশটি পেয়েছিলাম আজ তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর নেতৃত্বে দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন কৃষি সমৃদ্ধ বাংলাদেশকে।
বাঙালি জাতির মহান কিংবদন্তি নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মৃজিবুর রহমান নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ১৯৪৮ সালে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ, ’৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ‘৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৫৮ এর সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ’৬৬ এর ৬-দফা, ’৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থান, ’৭০ এর নির্বাচনসহ বাঙালির মুক্তি ও অধিকার আদায়ে পরিচালিত প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলন এবং সর্বশেষ ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ। এভাবে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অতর্কিত নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ চালালে ২৬ মার্চ ১৯৭১ জাতির পিতা ঘোষণা করেন বাঙালি জাতির বহুকাক্সিক্ষত স্বাধীনতা। একটা জাতিকে এতগুলো বাঁধা অতিক্রমে মাধ্যমে জাতিকে স্বাধীনতা উপহার দেন। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ বাঙালি জাতিকে অনুপেরণা যুগিয়েছিল। এ ভাষণের কারণে বিশ^খ্যাত নিউজ উইক সাময়িকীর ১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল সংখ্যায় রিপোর্টার রবাট জেন্কিন্স বঙ্গবন্ধুকে রাজনীতির কবি (Poet of Politics) বলেছেন। যুদ্ধ বিধ্বস্ত অর্থনীতির পুনর্গঠনে তিনি সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। মিত্র বাহিনীর সদস্যদের দেশে প্রত্যাবর্তন, স্বল্প সময়ের মধ্যে দেশের সংবিধান রচনা, জনগণের মৌলিক অধিকার পূরণ, সকল স্তরে দুর্নীতি নির্মূল, কৃষি বিপ্লব, কল-কারখানাকে রাষ্ট্রীয়করণসহ দেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেন।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আমাদের অবকাঠামো ধ্বংস করেছিল। সদ্যমুক্ত স্বাধীন দেশের চাহিদা ছিল বিপুল কিন্তু সম্পদ অপ্রতুল। এ কারণে বঙ্গবন্ধুকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত দেশটিকে পুনরুদ্ধারের যজ্ঞে নামতে হয়। স্বধীনতা উত্তর বাংলাদেশে প্রধান সমস্যা ছিল খাদ্য সমস্যা। সেজন্য ক্ষুধামুক্ত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে কৃষিবিপ্লবের রূপকার খ্যাত বঙ্গবন্ধু তাঁর জাতীয় কর্মকাণ্ডকে কৃষিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তাছাড়া মহান নেতার চেতনা ও দর্শন ছিল এ দেশের কৃষক, শ্রমিক, মজুর ও সাধারণ মানুষের জীবন ও ভাগ্যের মান উন্নয়ন করা। এভাবে তিনি দেশ গড়ার প্রারম্ভেই কৃষির উন্নয়ন কাজে হাত দেন।
কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশে কৃষি উন্নয়নের জন্য ভৌত অবকাঠামো তৈরি থেকে পরিকল্পনা প্রণয়নসহ নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু এ দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করেছিলেন। সবুজ বিপ্লব সার্থক করার জন্য কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ এবং সেচ সুবিধা বৃদ্ধি, উন্নত জাতের ফসলের আবাদ বৃদ্ধিসহ কৃষি পেশার জন্য একটি সম্মানজনক অবস্থান তৈরি করেছিলেন। কৃষকদের মাঝে কৃষি খাতে প্রতিযোগিতার মনোভাব সৃষ্টির লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু সরকার ১৯৭৪ সন থেকে কৃষি উন্নয়নে জাতীয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় পুরস্কার প্রদান চালু করেন। এটি রাষ্ট্রপতি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার ও জাতীয় কৃষি পুরস্কার নামে অদ্যাবধি চলে আসছে। বঙ্গবন্ধুর সময় এদেশের প্রথম কৃষি ঋণ ব্যবস্থার প্রচলন করা হয়। কৃষকরা যাতে সহজ ভাবে ঋণ পেতে পারে এ লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে কৃষি ব্যাংক স্থাপন করা হয়। তিনি ভূমিহীন কৃষকদের মাঝে খাসজমি বিতরণ এবং সহজ শর্তে কৃষি ঋণের ব্যবস্থা করেছিলেন।
স্বাধীনতা পরবর্তীকালে গবেষণার জন্য কৃষিবিদ তথা কৃষি গবেষকদের বঙ্গবন্ধু সরকারই প্রথম সংগঠিত করে কৃষি গবেষণার কাজে হাত দেন। ফলে এদের মধ্য থেকে আজ অনেক স্বনামধন্য কৃষি বিজ্ঞানী সৃষ্টি হয়েছে যারা কৃষির বহুমুখী উন্নয়নে অবদান রাখছে। স্বাধীনতা উত্তরকালে কৃষি সেক্টরে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠা। বিএআরসি জাতীয় কৃষি গবেষণা সিস্টেম (এনএআরএস) এর এ্যপেক্স বডি হিসেবে এনএআরএস-ভুক্ত ১২টি প্রতিষ্ঠান ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর (কৃষি সম্প্রসারণ ও কৃষি উন্নয়ন বিষয়ক প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় এবং কৃষি পণ্য- বীজ, সার, কীটনাশক ও কৃষি যন্ত্র ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান), সমন্বয়ে জাতীয় নীতিমালার ভিত্তিতে গবেষণা পরিকল্পনা প্রণয়ন, গবেষণা অগ্রাধিকার নির্ধারণ, গবেষণা কর্মসূচি সমন্বয়, পরিবীক্ষণ, পুনরীক্ষণ ও মূল্যায়ন এবং মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যম কৃষি গবেষণার মান উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও দিকনির্দেশনা প্রদান করে থাকে। এক কথায় বিএআরসি’র অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো সঠিক ও সুষ্ঠু গবেষণা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এনএআরএস-ভুক্ত ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানসমূহকে উন্নত কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবনের সহায়তা করা তথা দেশে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা।
বঙ্গবন্ধুর সময় প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (জুলাই ১৯৭৩- জুন ১৯৭৮ সন) প্রণয়ন করা হয়। এতে কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করায় এদেশের সার্বিক কৃষি ব্যবস্থাসহ কৃষি গবেষণায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর বাস্তব ও গতিশীল পদক্ষেপের ফলে মাত্র দু’বছরের মধ্যে অর্থাৎ ১৯৭৪ সালে কৃষিতে বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছিল ৭ শতাংশ যা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাÐের পর পরবর্তী বছরগুলিতে দ্রুত হ্রাস পেয়েছিল।
বঙ্গবন্ধুর গৃহীত যুগান্তকারী কৃষির এসব কার্যক্রমের বাস্তবায়ন করে চলেছে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কৃষিতে অভাবনীয় সফলতা এেেসছে। কৃষি উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্ব দরবারে রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কৃষিতে প্রবৃদ্ধির এই দৃশ্যমান প্রভাবটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনের সকল সূচকে প্রতিফলিত হয়েছে। এর ফলে দারিদ্র্য উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে । ফসলের পাশাপাশি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদেও বাংলাদেশ উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে চলেছে। বিশেষভাবে মাংস এবং মাছের উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষি সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ এ বছর চাল উৎপাদনে তৃতীয় এবং মিঠা পানির মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির হারে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে। তাছাড়া বাংলাদেশ অন্যান্য ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে যেমন পাটে দ্বিতীয়, চা-এ চতুর্থ, আম ও আলুতে সপ্তম, পেয়ারা অষ্টম অবস্থানে আছে। খোরপোশ কৃষি থেকে বাণিজ্যিক কৃষির এই অগ্রযাত্রায় উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে আসছে শিক্ষিত যুবকেরা।
বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতিতে অন্যান্য উন্নয়ন খাতের তুলনায় পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিতকরণে কৃষির ভূমিকা ছিল অগ্রণী। ফলে বাংলাদেশ শুধু খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতাই অর্জন করেনি, বিদেশে দানাজাতীয় খাদ্যশস্য রফতানিও করেছে। বঙ্গোপসাগরের সাম্প্রতিক ঝড় এবং দেশব্যাপী বন্যার কারণে সারাদেশে বিশেষভাবে উপক‚লীয় অঞ্চলের পরিস্থিতি অনেক খারাপ হয়। মহামারি চলাকালে উৎপাদিত পণ্য সরবরাহের চেইন ব্যাহত হওয়ার কারণে এবং প্রয়োজনীয় পরিবহণের অভাবে ভোক্তা পর্যায়ে কৃষিপণ্য বিপণন ব্যাহত হয়। ফলে অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহ সারা দেশে বিপণন কৌশল এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া পুনরুদ্ধারে সময়োচিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ফলে গ্রামীণ অর্থনীতি তথা সমগ্র কৃষিখাতে তেমন কোন ক্ষতিকর প্রভাব পড়েনি এবং দেশে খাদ্য সংকট সৃষ্টির আশঙ্কাও দূর হয়েছে। কৃষি খাত সম্প্রতি ১.৩৭ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে এবং আশা করা হচ্ছে যে জাতীয় অর্থনীতিতে এর অবদান আরো বৃদ্ধি পাবে। সুষম সার প্রয়োগের লক্ষ্যে পটাশ ও ফসফেট সারের দাম কমানো হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে সারা বিশ্বের খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহ পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে আমাদের গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। সরকার কৃষকদের ফসল চাষের জন্য ভর্তুকি/সফট লোন হিসেবে প্রণোদনা দিসেবে সহায়তা করছে। কৃষি মন্ত্রণালয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহকে বিভিন্ন অগ্রাধিকারভিত্তিক অঞ্চল নিয়েছে গবেষণা পরিচালনার জন্য প্রশাসনিক ও নীতি সহায়তা প্রদান করছে। পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েছে ডিজিটাল মিডিয়া এবং ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে গবেষণা ফলাফল বিনিময়ের কাজ করা হচ্ছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, দারিদ্র্য দূরীকরণ, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-২০৩০ এবং ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সামগ্রিক কৃষি উন্নয়ন পরিকল্পনার সাথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপক‚লীয় লবণাক্ত প্রবণ, উত্তরাঞ্চলের খরাপ্রবণ, পাহাড়ি দূর্গম অঞ্চলের জন্য উপযোগী ফসলের লাগসই উন্নত জাত, নতুন শস্যবিন্যাস ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন অব্যাহত রাখা হচ্ছে। এতে করে যেমন ঐ অঞ্চলের শস্যের নিবিড়তা বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে অন্যদিকে পুষ্টি, কর্মসংস্থানের পাশাপাশি মাটির স্বাস্থ্যেরও সুরক্ষা হবে। উদ্ভাবিত জাত, উন্নত বীজ, মানসম্পন্ন কৃষি উপকরণ যেমন: সার, সেচ, বীজ, যন্ত্রপাতি, প্রযুক্তিসমূহ যাতে কৃষকের হাতে দ্রæত পৌঁছায় সে বিষয়ে গবেষণা ও সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের তৎপরতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল প্রকাশিত ১০০ কৃষি প্রযুক্তি এটলাসের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানি বাড়াতে অঞ্চলভিত্তিক কৃষি সম্ভাবনা ধরে গবেষণায় জোর দিতে হবে।
বঙ্গবন্ধু একটি নতুন মানচিত্র চেয়েছিলেন, নতুন ভূখণ্ড চেয়েছিলেন, নতুন জাতিসত্তা চেয়েছিলেন, চেয়েছিলেন একটি স্বনির্ভর-সুখী মানুষের সোনার দেশ। মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছরের প্রাক্কালের কৃষি আর বর্তমান সময়ের কৃষির অসামান্য অর্জন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাস্তবায়ন ছাড়া আর কিছু না। বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতাকে পেয়েছিলাম বলেই আমরা এ অর্জন সম্ভব করতে পেরেছি যা আমাদেরকে গর্বে মাথা উঁচু করে দেয়। বাংলাদেশে কৃষির সাফল্যের যে বিস্ময় সৃষ্টি করছে তার বীজ নিহিত ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নে। তাই মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বাঙালির শুধু গৌরবময় অতীত নয়, বরং দেশের সার্বিক উন্নয়নের প্রাণশক্তি। পরিশেষে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ার প্রত্যয়ই হোক মুজিববর্ষে ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর অঙ্গীকার।য়
১নির্বাহী চেয়ারম্যান,বিএআরসি, ২প্রিন্সিপাল ডকুমেন্টেশন অফিসার, কৃষি তথ্য কেন্দ্র, বিএআরসি, ফার্মগেট, ঢাকা, মোবাইল : ০১৭১১১০২১৯৮, ই-মেইল : susmitabarc@gmail.com
মুজিব শতবর্ষের উপহার উচ্চমাত্রার জিংকসমৃদ্ধ জাত ব্রি ধান১০০
ড. মো. শাহজাহান কবীর১ ড. মো. আবদুল কাদের২ কৃষিবিদ এম আব্দুল মোমিন৩
ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য। সৃষ্টির আদিকাল থেকেই ধানের আবাদ ও উৎপাদন প্রক্রিয়া এ দেশের জনগণের জীবনযাত্রা ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ১৯৭০ সালের ১ অক্টোবর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হলেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে আইন পাসের (Act. N x of 1973) মাধ্যমে ব্রিকে জাতীয়করণ ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন। শুরু হয় ধানের উপর নিয়মতান্ত্রিক গবেষণা। পাশাপাশি তিনি দেশের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সবুজ বিপ্লবের ডাক দেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে ব্রির বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেন বিআর৩ বা বিপ্লব, যা দেশের খাদ্য উৎপাদনে একটি সত্যিকারের বিপ্লব নিয়ে আসে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথ ধরেই গত পাঁচ দশকে এদেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখে চলছে ব্রি। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, ক্রমহ্রাসমান কৃষিজমি ও প্রাকৃতিক সম্পদ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের ফলে সৃষ্ট নানাবিধ বৈরী পরিবেশ মোকাবিলা করেও ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। ফলশ্রæতিতে, অতীতের খাদ্য ঘাটতির দেশটি আজ খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত হয়েছে। যা নিঃসন্দেহে আমাদের জাতীয় জীবনের এক অসামান্য অর্জন।
ভাত আমাদের প্রধান খাদ্য। দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুষ্টির অধিকাংশ ক্যালরি, প্রোটিন ও মিনারেল আসে ভাত থেকে। অন্য পুষ্টিকর খাবার জোগাড় করতে না পারলেও দুই বা তিন বেলা ভাতের সংস্থান এখন প্রায় সবারই সামর্থ্যরে মধ্যে। তাই ভাতের মাধ্যমে কিভাবে পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করা যায় সেই লক্ষ্যে কাজ করছেন বাংলাদেশের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। বাংলাদেশে মাথাপিছু চালের গ্রহণ হার হিসেবে দৈনিক যে পরিমাণে পুষ্টি আমরা চাল বা ভাত থেকে পাই যা কোনোভাবেই আমাদের চাহিদার সমান নয়। সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, প্রতি ১০০ গ্রাম চাল থেকে আমরা মোটামুটি ১২৯ কিলোক্যালরি শক্তি, ৭৮.০৯ গ্রাম শর্করা, ৭.১২ গ্রাম প্রোটিন, ০.২৮ গ্রাম চর্বি, ১.৩০ গ্রাম আঁশ ০.০৭ মি.গ্রাম থায়ামিন, ০.০১৫ মি. গ্রাম রিভোপ্লাবিন, ১.০৯ মি. গ্রাম জিংক, ২৮ মি. গ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.৮০ মি. গ্রাম আয়রন, ২৫ মি. গ্রাম ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যোপাদান থাকে (ইউএসএআইডি পুষ্টি ডেটাবেজ)। এ কারণে খাদ্যের চাহিদা মিটলেও পুষ্টির চাহিদা পূরণে আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে। বাংলাদেশে ৫ বছরের কমবয়সী শিশুর প্রায় দু-তৃতীয়াংশই কোনো না কোনো মাত্রার অপুষ্টিতে ভুগছে, এর মধ্যে শতকরা ১৪ ভাগ শিশু ভুগছে মারাত্মক অপুষ্টিতে। এর কারণ পুষ্টি সচেতনতার অভাব অথবা পুষ্টিকর খাবার ক্রয় করার অসামর্থ্যতা।
অথচ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে রচিত ১৯৭২ সালের সংবিধানে নাগরিকের পুষ্টি উন্নয়নকে রাষ্ট্রের প্রাথমিক কর্তব্য হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। ১৯৭২ এর সংবিধানে উল্লেখ করা হয় “জনগণের পুষ্টিস্তর উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনকে রাষ্ট্রের প্রাথমিক কর্তব্য বলিয়া গণ্য করিবে”। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা এবং এসডিজির ২নং অভীষ্ট অর্জনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান যেমন- জিংক, আয়রন, প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেলসসহ শরীরের অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যোপাদানগুলো দেহের প্রয়োজন অনুসারে চালে সংযোজন, সরবরাহ বা পরিমাণে বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে কাজ করছে। পুষ্টিসমৃদ্ধ জাত উদ্ভাবনে বিশ্বের সর্বাধুনিক বায়োফর্টিফিকেশন ও জিএম প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ব্রি প্রথম সফলতা পায় ২০১৩ সালে বিশে^র সর্বপ্রথম জিংকসমৃদ্ধ জাত ব্রি ধান৬২ উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে। পরবর্তীতে ব্রি জিংক সমৃদ্ধ আরো চারটি জাত যেমন- ব্রি ধান৬৪, ব্রি ধান৭২, ব্রি ধান৭৪ এবং ব্রি ধান৮৪ অবমুক্ত করে। সর্বশেষ গত ৯ ফেব্রæয়ারি মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষের উপহার হিসেবে ব্রি হাইজিংক সমৃদ্ধ জাত ব্রি ধান১০০ অবমুক্ত করেছে। যেটি কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ সংক্রান্ত কারিগরি কমিটি কর্তৃক সুপারিশের পর জাতীয় বীজ বোর্ডের ১০৪তম সভায় চ‚ড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এটি নিয়ে ব্রি উদ্ভাবিত জিংক সমৃদ্ধ জাতের সংখ্যা এখন ৬টি। এছাড়াও জনগণের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্রি প্রিমিয়াম গুণসম্পন্ন ও রপ্তানিযোগ্য ১১টি, এন্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ধান, ডায়াবেটিক ধান এবং প্রো-ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ গোল্ডেন রাইসের জাত উদ্ভাবন ও উন্নয়ন করা হয়েছে।
মানব শরীরের জন্য জিংক খুব প্রয়োজনীয় একটি খনিজ উপাদান। মানবদেহে ২০০ এরও বেশি এনজাইমের নিঃসরণে অংশগ্রহণ করে যেগুলো দেহের অনেক বিপাকীয় কাজে এটি অংশ নেয়। এ ছাড়া দেহে এন্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, শর্করার ভাঙনে দেহ কোষের বৃদ্ধিতে এবং পলিপেটাইড গঠন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, চুল পড়া রোধ এবং গ্যাসটিন নিঃসরণের মাধ্যমেই স্বাদের অনুভ‚তি বা রুচি বাড়াতে ভ‚মিকা রাখে। হাড়ের বৃদ্ধির জন্য কেরোটিন তৈরি ও তার পরিপক্বতা, ত্বকের ক্ষত সারানো, আবরণী কোষের রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি কাজে মানব শরীরে জিংকের প্রয়োজন হয়। উঠতি বয়সের কিশোর-কিশোরীদের জিংকের অভাব হলে বেটে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। জিংকের অভাবে ডায়রিয়া ও এলার্জির মতো রোগ দেখা যেতে পারে। কিন্তু জিংকসমৃদ্ধ জাতের ভাত খেলে শরীরে জিংকের প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটে যাবে। বাংলাদেশের প্রায় ৪৪.৬ ভাগ শিশু এবং ৫৭.৩ ভাগ প্রাপ্ত বয়স্ক নারী জিংকের অভাবজনিত রোগে ভুগছে। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের শরীরে জিংকের দৈনিক চাহিদা প্রায় ৮-১২ মিলিগ্রাম এবং শিশুদের দৈনিক চাহিদা ৩-৫ মিলিগ্রাম। নতুন অনুমোদনকৃত ব্রি ধান১০০ তে জিংক এর পরিমাণ ২৫.৭ মি.গ্রাম/কেজি। এটি মানুষের শরীরে জিংকের যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে তার ৩০-৬০% মিটাতে পারে।
ব্রি ধান১০০ একটি উচ্চমাত্রার জিংকসমৃদ্ধ ধান। ব্রি ধান১০০ এর কৌলিক সারি BR8631-12-3-5-p2। উক্ত কৌলিক সারিটি বাংলাদেশের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে BR7166-5B ও BG305 এর সাথে ২০০৬ সালে সংকরায়ণ করা হয় এবং প্রাপ্ত F1 লাইনটি ২০০৭ সালে ব্রি ধান২৯ এর সাথে আবারও সংকরায়ণ করা হয় ও পরবর্তীতে ব্রিতে বংশানুক্রম সিলেকশনের মাধ্যমে উদ্ভাবিত হয়। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা মাঠে হোমোজাইগাস কৌলিক সারি নির্বাচন করা হয় এবং ৫ বছর ফলন পরীক্ষার পর কৌলিক সারিটি ২০১৭ সালে ব্রির আঞ্চলিক কার্যালয়সমূহের গবেষণা মাঠে ও ২০১৯ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের মাঠে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। অতঃপর ২০২০ সালে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি কর্তৃক স্থাপিত প্রস্তাবিত জাতের ফলন পরীক্ষায় (পিভিটি) সন্তোষজনক হওয়ায় জাতীয় বীজ বোর্ডের মাঠ মূল্যায়ন দল কর্তৃক সুপারিশের পর জাত হিসাবে ছাড়করণের জন্য আবেদন করা হয়।
শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য
ব্রি ধান১০০ এ আধুনিক উফশী ধানের সকল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এছাড়া অঙ্গজ অবস্থায় গাছের আকার ও আকৃতি ব্রি ধান৭৪ এর মতো। এ জাতের ডিগপাতা খাড়া, প্রশস্ত ও লম্বা, পতার রং সবুজ। পূর্ণ বয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ১০১ সেমি.। জাতটির গড় জীবনকাল ১৪৮ দিন। ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ১৬.৭ গ্রাম। চালের আকার আকৃতি মাঝারি চিকন এবং রং সাদা। জিংকের পরিমাণ ২৫.৭ মি.গ্রাম/কেজি এবং দানায় অ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৬.৮ ভাগ। এছাড়া প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৭.৮ ভাগ এবং ভাত ঝরঝরে।
প্রচলিত জাতের তুলনায় এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য
ব্রি ধান১০০ এর জীবনকাল ব্রি ধান৭৪ এর প্রায় সমান। এ জাতের ফলন ব্রি ধান৭৪ এর চেয়ে সামান্য বেশি হলেও (৪.৫%) ধানের গুণগত মান ভালো অর্থাৎ চালের আকৃতি মাঝারি চিকন এবং ব্রি ধান৮৪ এর চেয়ে ফলন প্রায় ১৯% বেশি। তাছাড়া এই জাতের জিংকের পরিমাণ (২৫.৭ মি.গ্রাম/কেজি) ব্রি ধান৭৪ এর চেয়ে বেশি (২৪.২ মি.গ্রাম/কেজি)। এ জাতটি হেক্টরে ৬.৯-৮.৮ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম।
চাষাবাদ পদ্ধতি
এ ধানের চাষাবাদ পদ্ধতি ও সারের মাত্রা অন্যান্য উফশী ধানের মতোই। ১৫ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর অর্থাৎ অগ্রহায়ণের ০১ তারিখ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে বীজ বপন করে ৩৫-৪০ দিনের চারা গাছাপ্রতি ২-৩ টি করে ২০ সেমি. - ১৫ সেমি. দূরত্ব দিয়ে রোপণ করতে হবে। মাঝারি উঁচু থেকে উঁচু জমি এ ধান চাষের জন্য উপযুক্ত। সারের মাত্রা ২৬০ঃ১০০ঃ১২০ঃ১১০ঃ১১ কেজি ইউরিয়াঃ টিএসপি ঃ এমওপিঃ জিপসামঃ জিংক সালফেট/হেক্টর। সর্বশেষ জমি চাষের সময় সবটুকু টিএসপি, অর্ধেক এমওপি, জিপসাম এবং জিংক সালফেলট একসাথে প্রয়োগ করা উচিত। ইউরিয়া সার সমান তিন কিস্তিতে যথা রোপণের ১০-১৫ দিন পর ১ম কিস্তি, ২৫-৩০ দিন পর ২য় কিস্তি এবং ৪০-৪৫ দিন পর ৩য় কিন্তি প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক এমওপি ২য় কিস্তি ইউরিয়ার সাথে প্রয়োগ করতে হবে। জিংকের অভাব পরিলক্ষিত হলে জিংক সালফেট এবং সালফারের অভাব পরিলক্ষিত হলে জিপসাম ইউরিয়ার মতো উপরিপ্রয়োগ করতে হবে।
রোগবালাই ও পোকামাকড়
ব্রি ধান১০০ এ রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রচলিত জাতের চেয়ে অনেক কম হয়। তবে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা দিলে বালাইনাশক প্রয়োগ করা উচিত।
ফলন
ব্রি ধান১০০ এর গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ৭.৭ টন। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে অনুক‚ল পরিবেশে হেক্টর প্রতি ৮.৮ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। অনুমোদিত নতুন এই জাতের বীজ উৎপাদন করবে ব্রির কৌলিসম্পদ ও বীজ বিভাগ, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর এবং ব্রির আঞ্চলিক কার্যালয়সমূহ এবং বিদ্যমান সিড নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে বীজ বিতরণ করা হবে।
পরিশেষে বলতে চাই, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য খাদ্য গ্রহণে আমাদের অবশ্যই সচেতন হতে হবে। এ জন্য আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকতে হবে। জিংকসহ অন্যান্য পুষ্টিকর চালের ভাত গ্রহণে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। কৃষকের মাঝে জিংকসমৃদ্ধ জাতগুলোর দ্রæত সম্প্রসারণ নিশ্চিত করতে হবে। এ কাজে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি আমাদের শিক্ষিত ও সুশীলসমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দেশের প্রচার মাধ্যমগুলোকে এ বিষয়ে জনমত তৈরিতে সচেষ্ট থাকতে হবে। তাহলেই কেবল বঙ্গবন্ধুর কাক্সিক্ষত জনগণের পুষ্টিস্তর উন্নয়নের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
১মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ২প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ৩উর্ধ্বতন যোগাযোগ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, মোবাইল : ০১৭১৬৫৪০৩৮০, ইমেইল-smmomin80@gmail.com
বঙ্গবন্ধুর কৃষি ভাবনা ও সমলয়ে চাষাবাদ
কৃষিবিদ কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী
একটি নতুন সূর্য একটি নতুন দিনের আগমনকে নিশ্চিত করে। পরাধীনতার শেকলে বন্দী হয়ে অত্যাচারী শাসকের নির্মম কশাঘাতে বাংলার মাটি যখন নিষ্পেষিত তখনই বাংলার আকাশে অংশুমান হয়ে উদীত হন বাংলার অবিসংবাদিত নেতা ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির আবেগ ও আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে বজ্রকণ্ঠে স্বাধীনতার ডাক দেন। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অভ্যুদয় হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। স্বাধীনতা বিপ্লবের ডাক দেওয়া মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা পরবর্তী স্বপ্ন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়া।
হাজার বছরের অবহেলিত ও শোষিত ছিল এ বাংলার গ্রামীণ জনগোষ্ঠী ও সাধারণ মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনুধাবন করেছিলেন কৃষির উন্নতিই হচ্ছে কৃষকের অর্থনৈতিক মুক্তি। সে কারণেই স্বাধীনতার পরই তিনি সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। জাতির পিতা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে বলেছিলেন, “খাদ্যের জন্য অন্যের উপর নির্ভর করলে চলবে না। আমাদের নিজেদের প্রয়োজনীয় খাদ্য আমাদেরই উৎপাদন করতে হবে। আমরা কেন অন্যের কাছে খাদ্য ভিক্ষা চাইব। আমাদের উর্বর জমি, অবারিত প্রাকৃতিক সম্পদ, আমাদের পরিশ্রমী মানুষ, আমাদের গবেষণা সম্প্রসারণ কাজে সমন্বয় করে আমরা খাদ্যে স্বয়ম্ভরতা অর্জন করব। এটা শুধু সময়ের ব্যাপার”। (সূত্র কৃষি ও কৃষকের বঙ্গবন্ধু, ড. সামসুল আলম, পৃষ্ঠা-৪৩) সময়ের ব্যবধানে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে ৩য়, সবজি উৎপাদনে ৩য়, আম উৎপাদনে ৭ম, আলু ও পেয়ারা উৎপাদনে ৮ম অবস্থানে রয়েছে। আবাদি জমি কমেছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণ কিন্তু খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৪ গুণ। সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধু খাদ্য নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নের জন্য তিনি বিভিন্ন উদ্যোগ ও কর্মসূচি গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন পরিকল্পনা ও তার পরিপ্রেক্ষিতগুলো ছিল- বঙ্গবন্ধু কৃষকদের ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করেন। ভূমিস্বত্ব আইন জারি করার মাধ্যমে পরিবার প্রতি ভূমি মালিকানা ৩৭৫ একর থেকে কমিয়ে সর্বোচ্চ ১০০ বিঘা সিলিং আরোপ করেন। গরিব কৃষকদের সহায়তার উদ্দেশ্যে সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সরকারের প্রথম বার্ষিক বাজেটে ১৯৭২-৭৩ সালে ৫০০ কোটি টাকা উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ ছিল এর মধ্যে ১০১ কোটি টাকা শুধু কৃষি উন্নয়নের জন্য রাখা হয়েছিল। কৃষি ও কৃষকদের উন্নয়নে তিনি প্রথম বাজেটে কৃষিখাতে ভর্তুকির ব্যবস্থা করেন। বাজেটে ভর্তুকি দিয়ে বিনামূল্যে কীটনাশক ও সার সরবরাহ করেন। এ ছাড়াও ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষিকর্মী নিয়োগ করেছিলেন তিনি। কৃষি পণ্য বিশেষ করে ধান, পাট, আখের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে ন্যূনতম ন্যায্যমূল্য বেঁধে দিয়েছিলেন। গরিব কৃষকদের রেশনের ব্যবস্থা করেছিলেন। সবুজ বিপ্লব কর্মসূচির আওতায় খাদ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন তিনি। সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশের ৩০ লাখ টন খাদ্যঘাটতি পূরণে বঙ্গবন্ধু তাৎক্ষণিক আমদানির মাধ্যমে ও স্বল্পমেয়াদে উন্নত চাষাবাদের প্রেক্ষিতে উন্নতবীজ, সেচ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ সরবারহ করেন। এ ছাড়াও কৃষি ঋণ মওকুফ, সার্টিফিকেট মামলা প্রত্যাহার ও খাসজমির বিতরণের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। প্রাতিষ্ঠানিক কৃষি উন্নয়নের লক্ষ্যে তিনি বিভিন্ন কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান যেমন কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, উদ্যান উন্নয়ন বোর্ড, তুলা উন্নয়ন বোর্ড, বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি, ইক্ষু গবেষণা প্রতিষ্ঠান মৎস উন্নয়ন কর্পোরেশনসহ অনেক নতুন প্রতিষ্ঠান গঠন করেন। ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রæয়ারি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহে কৃষি গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে এক দিকনির্দেশনামূলক ভাষণে কৃষি গ্র্যাজুয়েটদেরকে প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা প্রদান করেন।
কৃষি ক্ষেত্রে সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কৃষি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে নতুন নতুন জ্ঞান অর্জন, কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালনে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে ‘বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার’ প্রবর্তন করা হয় ১৯৭৩ সালে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু দেশ ও কৃষি উন্নয়নে বলেছিলেন ‘আমাদের আর্থসামাজিক কারণে দেশে দিনদিন জমির বিভাজন বেড়ে চলেছে। যদি সমন্বিত কৃষি খামার গড়ে তোলা না যায় তাহলে আমাদের কৃষি উন্নয়ন ব্যাহত হবে, আমরা আমাদের কাক্সিক্ষত উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব না।’ সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে তিনি গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন গ্রামভিত্তিক বহুমুখী সমবায়। ১৯৭২ সালের ৫ এপ্রিল বাংলাদেশ বেতারে ‘দেশ আমার মাটি আমার’ অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় তিনি গ্রামে বহুমুখী কো-অপারেটিভ করার রূপরেখা তুলে ধরেন।
১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত জনসভায় বঙ্গবন্ধু সমবায় সংক্রান্ত তাঁর প্রস্তাবটি জনসমক্ষে তুলে ধরেন। এই বক্তৃতায় তিনি বলেন “আমি ঘোষণা করছি যে, পাঁচ বছরের প্লান (পরিকল্পনায়) প্রত্যেকটি গ্রামে কম্পলসারি (বাধ্যতামূলক) কো-অপারেটিভ হবে। বাংলাদেশে ৬৫ হাজার গ্রাম কো-অপারেটিভ হবে। প্রত্যেকটি মানুষ যে কাজ করতে পারে তাকে এই কো-অপারেটিভের সদস্য হতে হবে। গ্রামে গ্রামে বহুমুখী কো-অপারেটিভ করা হবে”। পাশাপাশি কৃষি উৎপাদনে প্রয়োজনীয় আধুনিক যন্ত্রপাতির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতেন। উন্নত, সুখী ও সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলা গড়ার বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্নকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার জনবান্ধব সরকার কৃষিবান্ধবনীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করছেন। তিনি করোনা ভাইরাসজনিত বিশ্ব মহামারিতে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের নানা প্রতিক‚লতার মধ্যেও বাংলাদেশে আধুনিক কৃষি অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রেখেছেন এবং কৃষি ক্ষেত্রে এক অসাধারণ বিস্ময়কর সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
মুজিববর্ষে উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি সমলয়ে চাষাবাদ (Syn-chronize Cultivation)
সমলয়ে চাষাবাদ নামে কৃষি মন্ত্রণালয় বোরো ধানের উৎপাদন বৃদ্ধিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। কৃষি পুনর্বাসন সহায়তা খাতের অর্থ থেকে সমলয়ের চাষাবাদ নামের এ কর্মসূচিটি মাঠ পর্যায়ে প্রথমবারের মতো বাস্তবায়ন করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। সারা দেশে ৬১টি জেলায় ৫০-৬০ একরের ৬১টি বøক প্রদর্শনী হিসেবে বাস্তবায়িত হবে। পাশাপাশি জমি আছে এমন কৃষক-কৃষানির গ্রæপ নির্বাচন করতে হবে এবং গ্রæপে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী কৃষক অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
চলমান বোরো মৌসুমে বোরো ধানের হাইব্রিড জাত যার ফলন হেক্টরপ্রতি ৪-৫ টনের বেশি এমন জাতের বীজ সংগ্রহ করতে হবে। সমলয়ে চাষাবাদের মাধ্যমে উৎপাদিত বীজ পরবর্তী মৌসুমে উপযুক্ত মূল্যে (বিএডিসি’র বীজের মূল্যের বেশি নয়) ক্রয় করে কৃষকদের মাঝে বিতরণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে এবং বীজের গুণগত মান সম্পর্কে ব্রি, ডিএই ও এসসিএ’র কর্মকর্তা সমন্বয়ে গঠিত কমিটি প্রত্যয়ন প্রদান করবে। সমলয়ে চাষাবাদের প্রতিটি কার্যক্রমে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
জমি তৈরি, ট্রেতে চারা উৎপাদন, রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের সাহায্যে চারারোপণ, সার, বীজ, বালাইনাশক, কম্বাইন্ড হারভেস্টারের সাহায্যে ফসল কর্তন, মাড়াই ইত্যাদি সকল কাজে আধুনিক কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং সরকার এসব কাজে সহায়তা প্রদান করবে। পরবর্তী বছরে সরকার Adapation এর জন্য বীজ সহায়তা প্রদান করবে। সমলয়ে চাষাবাদ কর্মসূচিতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারের গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। অর্থাৎ কৃষি উৎপাদনে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার, উচ্চফলনশীল আধুনিক জাতের সম্প্রসারণ, কৃষি কাজে নারীর অংশগ্রহণ, সুষম সার ব্যবহার, সঠিক সময়ে সঠিকভাবে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার, আধুনিক সেচ ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ সুরক্ষায় পরিবেশবান্ধব উৎপাদন কৌশল প্রয়োগ এবং বাজার ব্যবস্থায় কৃষক গ্রুপের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সমলয়ে চাষাবাদের কর্মসূচিটি প্রাথমিকভাবে বোরো ধানের উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করা হলেও বাংলাদেশের টেকসই কৃষি উন্নয়নের জন্য এটিকে আরও সম্প্রসারিত করার প্রয়োজন রয়েছে।
আমাদের দেশের অধিকাংশ কৃষক ক্ষুদ্র, মাঝারি এবং প্রান্তিক কৃষক। চাষের জমিগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত। ক্রমবর্ধমান জনঘনত্বের দেশে ক্রমহ্রাসমান কৃষি জমি। এ রকম বাস্তবতায় সমলয়ে চাষাবাদ কর্মসূচি টেকসই কৃষি উন্নয়ন, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (SDG) বাস্তবায়ন, উত্তম কৃষি চর্চা, জাতীয় কৃষিনীতি-২০১৮সহ কৃষিবিষয়ক নীতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য একটি সময়োপযোগী কর্মসূচি।
পরিচালক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, ফোন : ৫৫০২৮২৬০, ই-মেইল : dirais@ais.gov.bd
মুজিববর্ষের অঙ্গীকার কৃষি হবে দুর্বার : সবার সম্মিলিত প্রয়াস
কৃষিবিদ ড. আখতারুজ্জামান
স্মরণকালের মধ্য ভয়াবহ করোনা সংকটের মুখোমুখি গোটা বিশ্ব। করোনার ভয়াল রাহুগ্রাসে বিশ্বের ধনী দরিদ্র সকল দেশের মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত প্রায়। লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ সংহার করে দোর্দÐ প্রতাপে এখন অব্দি বিশ্বব্যাপী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস। এটার প্রতিকার প্রতিবিধানের কার্যকর উপায় হিসেবে ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশে দেশে কোভিড ১৯ এর প্রতিরোধী টিকা দেয়া শুরু হয়েছে।
করোনার প্রকোপে ইতোমধ্যে বিশ্ব অর্থনীতিতে এটার সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে সচেতন মানুষ মাত্রেই উৎকণ্ঠিত। সংকটের মুখোমুখি রয়েছে আমাদের মতো উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশের মানুষ। তবে করোনা নিয়ে শুরুতে আমাদের দেশে জনগণের মধ্যে যতটা আতঙ্ক ও আশঙ্কা ছিল সেদিক দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক শীর্ষে রয়েছে। করোনা মহামারির মধ্যে পৃথিবীর প্রায় সকল দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বে বিশে^র ধনাত্মক প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী ২২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান নিশ্চিত করেছে। একইসাথে আমেরিকার বøুমসবার্গ এর প্রতিবেদন অনুসারে করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশের অবস্থান উপমহাদেশের মধ্যে প্রথম এবং সমগ্র বিশে^র মধ্যে ২০তম স্থানে।
“যারা যোগায় ক্ষুধার অন্ন, কৃষি হলো তাদের জন্য”। আদিকালের সেই খরপোশ কৃষি এখন বাণিজ্যিক কৃষিতে সুইচ করেছে। কৃষির আধুনিকায়ন হয়েছে, ফলে ফল, ফসল, ফুল, সবজি, খাদ্যশস্য, প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য সম্পদের বিজ্ঞানসম্মত উৎপাদন কৌশল এখন আধুনিক কৃষির মূল অনুষঙ্গ হয়ে কৃষির উৎপাদন বেড়েছে বহুগুণ। দেশ স্বাধীনের পরে সাড়ে ৭ কোটি জনসংখ্যার দেশে আবাদযোগ্য জমি ছিল ১ কোটি ৮৫ লাখ হেক্টর এবং মোট খাদ্যশস্যের উৎপাদন ছিল ৯৫ লক্ষ মে.টন। দেশের জনসংখ্যা এখন প্রায় ১৭ কোটির ঘরে। আবাদযোগ্য জমি কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৮৫ লক্ষ হেক্টরে অথচ খাদ্যশস্যের উৎপাদন বেড়েছে চারগুণের কাছাকাছি; কোন কোন বছর সেটা চারগুণের বেশি অতিক্রম করেছে। তাই আমরা ধান, পাট, সবজি, পেয়ারা, আলু, আম চাষ মোট খাদ্য উৎপাদনে আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিং অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। নিত্যনতুন ফল ফসলের জাত উদ্ভাবনে রয়েছি বিশ^সেরা অবস্থানে।
বোধবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ এখন বেশ করে বুঝতে পারেন, স্বাধীন বাংলাদেশে কৃষির অভাবনীয় উন্নয়ন না হলে এ দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীকে আজ অনাহারে অর্ধাহারে কাটাতে হতো! বিশ্ববরেণ্য নোবেল বিজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর জীবদ্দশায় বলেছিলেন কৃষিই কৃষ্টি। বিখ্যাত ফরাসি দার্শনিক রুশে বলে গিয়েছেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও গৌরবমÐিত শিল্প হচ্ছে কৃষি। ঠিক একই ধরনের কৃষিবান্ধব ভাবধারা পোষণ করতেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর কৃষিভিত্তিক চিন্তা ছিল ব্যাপক। তাই তিনি তার জীবদ্দশায় এ দেশের কৃষি ও কৃষকের উন্নতির জন্য অনেক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সেই কৃষিবান্ধব নীতির স্পষ্ট প্রতিফলন রেখেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার তার সব সরকারের শাসনামলেই। ফলে দেশের কৃষি সংশ্লিষ্ট সকল সেক্টর আজ সমৃদ্ধশালী। যে সার সরবরাহ জটিলতার জন্য বিএনপি জামাত জোট সরকারের শাসনামলে ১৮ জন নিরীহ কৃষককে প্রাণ দিতে হয়েছিল, বর্তমান সরকার দফায় দফায় সারের মূল্য কমিয়ে কৃষকের দোরগোড়ায় সার সরবরাহ নিশ্চিত ও সহজলভ্য করেছেন। কৃষি সেক্টরে এখন প্রণোদনা প্যাকেজসহ অসংখ্য উন্নয়ন প্রকল্পের ছড়াছড়ি। তাই তো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বর্তমান সরকার স্বীকৃতি পেয়েছে কৃষিবান্ধব সরকার হিসেবে।
বিজ্ঞানের অভাবনীয় উল্লম্ফনের এই ক্ষণে মানুষ আজতক বহুকিছু আবিষ্কার করে বিশ্ব মাতিয়ে ফেলেছে । সেসাথে মানুষ তার নিজের পুষ্টিকর খাবার নিজে আবিষ্কার করার চেষ্টা করছে। তাই পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের জন্য মানুষকে প্রতিনিয়ত কৃষির উপরেই নির্ভর করতে হয়। করোনা সংকট সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার কৃষির উৎপাদনের ধারা সচল রাখার কথা বলেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, করোনা সংকটকালে যেন এক ইঞ্চি জমিও পড়ে না থাকে । তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছেন, করোনা পরিস্থিতির পর কৃষিই হবে একমাত্র হাতিয়ার। শুধু এটাই বলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী থেমে থাকেননি। কৃষি উৎপাদনের ধারা সচল রাখতে ৯ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণাসহ ৫ হাজার কোটি টাকার ৪% সুদে কৃষি ঋণ বিতরণ কার্যক্রম, দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে এক শতাংশের ১০০টি সবজি ও পুষ্টি বাগান স্থাপন করাসহ বহুমুখী কৃষি উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করার জন্যে ইতোমধ্যে ৫০-৭০% ভর্তুকি মূল্যে কৃষকদের মাঝে কৃষিযন্ত্র সরবরাহের ৩০২০ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প চালু হয়েছে। করোনা অতিমারির মধ্যে কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করার জন্যে রাজস্ব খাতে ২০০ কোটি টাকার অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল এবং বিগত ২০২০-২১ সালের পেশকৃত বাজেটে কৃষি সেক্টরকে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
সর্বাবস্থায় কৃষি উৎপাদনের ধারা সচল রাখার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া নির্দেশনা মোতাবেক কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে নানান ধরনের নির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে। মাননীয় কৃষিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা কৃষিবিদ ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনার প্রথম ওয়েভের সংকটকালে বোরো ধান সংগ্রহ তদারক করতে একাধিকবার নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ হাওড় এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন; কৃষকের সাথে কৃষকের পাশে থেকে ধান কাটা উদ্বোধন করেন। করোনাকালে খাদ্য উৎপাদনের নীরব কারিগর কৃষকের সাথে ও পাশে থেকে সব সময় নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন, কৃষি মন্ত্রণালয় ও তাদের সংশ্লিষ্ট সকল সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মীবাহিনী।
ঘোর অমানিশার মাঝেও আশা জাগানিয়া খবর হলো সদ্য সমাপ্ত বোরো মৌসুমে দেশব্যাপী ধানের বাম্পার ফলন জাতীয় লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে বিশ্ব দরবারে ধান উৎপাদনের দেশ হিসেবে চতুর্থ স্থান থেকে তৃতীয় স্থানে অবস্থান করতে সক্ষম হয়েছে। বোরো উৎপাদনের ধারায় আউশের ফলনও লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে। তবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উপর্যুপরি বন্যার কারণে আমন নবান্ন খ্যাত আমন ধান উৎপাদনে কিছুটা ফলন কম হলেও চলমান বোরো মৌসুমে সেটা পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছেন কৃষি মন্ত্রণালয় ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠিান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট। তদুপরি এখনো বাংলাদেশে ধানের যে মজুদ রয়েছে তাতে করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি না করলে ধান চালের মূল্য বৃদ্ধি হওয়ার কথা নয়। এ বিষয়টিরও দেখভালের জন্য সদাশয় সরকারের কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয় বেশ সোচ্চার রয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেশ করে জানেন, আমাদের উর্বর মাটি, কৃষি উপযোগী প্রাকৃতিক আবহাওয়া ও জলবায়ু তথা আমাদের সমৃদ্ধ কৃষিই পারে, বৈশ্বিক করোনা সংকটে ও মুক্তবাজার অর্থনীতির এইক্ষণে মাথা উঁচু করে সগৌরবে দাঁড়িয়ে থাকতে। জিডিপিতে কৃষির অবদান ১৪ শতাংশের কাছাকাছি হলেও মানুষকে ক্ষুধার অন্ন জোগান দেয়াসহ শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহে কৃষির গুরুত্ব অপার অপরিসীম। কৃষিতে আমাদের দেশের মতো সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এ সময়ে বিশ্বের খুব কম দেশেই আছে। কৃষি উন্নয়নে বাংলাদেশে সরকারি অর্থায়ন ও পৃষ্ঠপোষকতা এখন সন্দেহাতীতভাবে বিশ্বের রোল মডেল! কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তিতেও ডিজিটাল মার্কেটিং এর জন্যও সরকার কাজ করে যাচ্ছে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের (এসডিজি) ১৭টি অভীষ্টের মধ্যে ১০টি অভীষ্ট এবং ১৬৯ লক্ষ্যমাত্রার অন্তর্গত ৩৩টি সূচকের সাথে আমাদের কৃষির সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে কৃষি উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণ করার কাজে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে চলেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
সকল ক্রান্তিকাল ও পাথর সময়ের মুখোমুখি হয়েও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাশা, বীরের জাতি বাঙালি সকল সংকট মোকাবেলা করে আবার ঘুরে দাঁড়াবে এবং সেভাবেই আমাদের কৃষি দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। মুজিব জন্মশতবার্ষিকীকে সামনে রেখে কৃষি মন্ত্রণালয়ের দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়,“মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, কৃষি হবে দুর্বার”। আমাদের কৃষি সেভাবেই এগিয়ে চলেছে।
জন্মগতভাবে আমাদের প্রত্যেকের মাঝে রয়েছে একটা স্বকীয় কৃষি সত্তা। আমরা সবাই কোনো না কোনোভাবে কৃষির সাথে জড়িত। পেশাগত কৃষি কাজের বাইরেও কেউ বসতবাড়িতে সবজি চাষ করেন, কেউ বাড়ির ছাদে বাগান করেন, বাড়িতে দুটো চারটে ফুলের টবের ব্যবস্থা রাখেন; সুতরাং কোন মানুষই কৃষি সত্তার বাইরে নন। এতদ্ব্যতীত জীবন ধারণের জন্য প্রতিদিনের যে খাবারের দরকার হয় সেটা তো সেই কৃষির হাত ধরেই। সুতরাং মানুষ মাত্রেই কৃষির সাথে নিবিড় মন মিতালী। তাঁদের যদি আমরা একটু বোঝাতে সক্ষম হই, তাহলে কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রতি ইঞ্চি জমির সদ্ব্যবহার সহজতর হবে। আমাদের প্রত্যেকের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মীদের সাথে কৃষকসহ প্রতিটি জনমানুষের নিবিড় মেলবন্ধন সরকারি কৃষি পরিষেবাকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো।
সবার সম্মিলিত সহযোগিতায় আমরা আসন্ন এই অনাকাক্সিক্ষত সংকটকে ঠিক কাটিয়ে উঠতে পারব। যুগে যুগে এই গ্রহে এমনসব সংকট মোকাবেলা করে শেষতক সৃষ্টির সেরাজীব মানুষই জয়ী হয়েছেন। এবারেও করুণাময়ের অশেষ রহমতে নিশ্চয় আমরাও সহসা জাতীয় ও বৈশ্বিক করোনা সংকটকে কাটিয়ে উঠতে পারব। তাই, আসুন অহেতুক সমালোচনা নয়, হাতে হাত রেখে সম্মিলিতভাবে আমরা এই সংকট থেকে উত্তরণে ব্রতী হই।
মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত), জাতীয় কৃষি প্রশিক্ষণ একাডেমি (নাটা), গাজীপুর। মোবাইল: ০১৭১১৮৮৪১৯১, ই-মেইল : akhtar62bd@gmail.com
বঙ্গবন্ধুর সেচ ভাবনা
মো: জিয়াউল হক
যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান...। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নে কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে ক্ষুধা, অপুষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচন করে দেশের অর্থনীতি সুদৃঢ় করাই হোক অঙ্গীকার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন তারপর পাকিস্তান থেকে ফিরে এসে একটি যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশকে কিভাবে পুনর্গঠন করা যায়, সে বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। তখন যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশে চলছিল ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষ। তিনি স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে দেশের কৃষি ও কৃষকের সর্বাঙ্গীণ উন্নয়ন এবং স্বনির্ভরতার ওপর বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেন। বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উচ্চ ফলনশীল বীজ, সার ও সেচের পানি ব্যবহারের মাধ্যমে গম, ভুট্টা, ধান প্রভৃতির উৎপাদন অতিদ্রুত যে সাফল্য অর্জিত হয়েছে তাকে ‘সবুজ বিপ্লব’ (Green Revolution) হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এখানে ‘বিপ্লব’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে দ্রুত পরিবর্তনের অর্থে। এ পরিবর্তনটি এসেছে প্রচলিত (Conventional) পদ্ধতির চাষাবাদ থেকে অধিক উৎপাদনক্ষম প্রযুক্তির চাষাবাদে রূপান্তরের মাধ্যমে। আর ‘সবুজ’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে উৎপাদিত শস্যে ও কাঁচা রঙ হিসেবে। বাস্তবে দেখা যায়, শস্য যৌবন প্রাপ্ত হলে এর নান্দনিক সবুজ রং প্রকাশ পায়। তিনি এ ক্ষুধা, দুর্ভিক্ষ ও দারিদ্র্য হতে মুক্তির জন্য বাংলার কৃষক ভাইদের নিকট ‘সবুজ বিপ্লব’ এর ডাক দেন। তাঁর এ ডাকে ক্ষুধা, দুর্ভিক্ষ ও দারিদ্র্য থেকে মুক্তির নিমিত্ত অধিক খাদ্যশস্য উৎপাদনের লক্ষ্যে সেচ কার্যক্রমের ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব প্রদান করা হয়। বাংলাদেশের সেচ ব্যবস্থা ধান উৎপাদন ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। ধান ব্যতিরেকে অন্যান্য ফসল উৎপাদনেও সীমিত আকারে সেচ ব্যবহৃত হচ্ছে। এককভাবে ধান চাষে সেচ সুবিধার আওতায় জমির পরিমাণ ৯০-৯৫% এবং অন্যান্য ফসলে অবশিষ্ট ৫-১০% রয়েছে। সেচ ব্যবস্থাপনা ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও উৎপাদন খরচ কমানোর মুখ্য ভ‚মিকা পালন এবং যা মোট উৎপাদন খরচের প্রায় ৩০-৩৫% সেচ ব্যবস্থাপনায় ব্যয় হয়ে থাকে। তাই সেচের আধুনিক কলাকৌশল মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ। সেচ ব্যবস্থাপনা একটি সমন্বিত কার্যক্রম যথা-১. প্রকৌশল ও কারিগরি কার্যক্রম, ২. সেচ সম্পৃক্ত কৃষিতাত্তি¡ক কার্যক্রম ও ৩. প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো উন্নয়ন।
কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে খাদ্যে স্বয়ম্ভরতা অর্জনে যান্ত্রিক চাষ ও সেচের অবদান অপরিসীম। পাক-ভারত স্বাধীনতার পর তৎকালীন সরকার দেশের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর ক্ষুধা, দুর্ভিক্ষ হতে জনগণকে মুক্তির লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কৃষি অধিদপ্তর ১৯৫১-৫২ অর্থবছরে মাত্র ৩টি শক্তিচালিত পাম্পের (এলএলপি) সাহায্যে সেচ কর পদ্ধতিতে সেচ কার্যক্রম শুরু করে। শক্তিচালিত পাম্পের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সংগ্রহ, সংরক্ষণ, বিতরণ, পরিচালনা, মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণের নিমিত্ত ১৯৬১ সালের ১৬ অক্টোবর ৩৭ নম্বর অধ্যাদেশ বলে ‘ইস্ট পাকিস্তান এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন’ (ইপিএডিসি) প্রতিষ্ঠা এবং দেশ স্বাধীনের পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু কর্র্তৃৃক পূনর্গঠিত বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। বিএডিসির স্লোগান-‘যারা যোগায় ক্ষুধার অন্ন, আমরা আছি তাঁদের জন্য।’ ওই স্লোগান এবং কার্যক্রমের দায়িত্ব গ্রহণের পর বিএডিসি এরইমধ্যে (পাকিস্তান) বাস্তবায়িত ‘যান্ত্রিক চাষ এবং শক্তিচালিত পাম্প সেচ’ প্রকল্প (Mechanized Cultivation and Power Pump Irrigation Project-MC&PPI) শিরোনামে ১৯৭০-৭৫ মেয়াদকালে ৯৭১৮.২০ লাখ টাকা ব্যয়ে বর্ণিত প্রকল্পটি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে। ওই প্রকল্পটির কার্যক্রম দুইভাগে বিভক্ত ছিল-এক অংশে যান্ত্রিক চাষাবাদ অপর অংশে শক্তিচালিত পাম্পের (এলএলপি) সাহায্যে ভ‚পরিস্থ পানির সেচ সম্প্রসারণ। তৎকালে কৃষকের চাহিদার প্রেক্ষিতে বিএডিসির মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পে জমিকর্ষণের ক্ষেত্রে পাওয়ার টিলার ও ট্রাক্টর প্রচলন শুরু হয়। যা কৃষক পর্যায়ে ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করে।
বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘দুনিয়া ভরে চেষ্টা করেও আমি চাউল কিনতে পারছি না। চাউল পাওয়া যায় না। যদি চাউল খেতে হয় আপনাদের চাউল পয়দা করে খেতে হবে। তিনি ফসলে সেচ ব্যবস্থাপনার কথা উল্লেখ করে বলেন ‘পাম্প যদি পাওয়া যায়, ভালো। যদি না পাওয়া যায় তবে স্বনির্ভর হোন। বাঁধ বেঁধে পানি আটকান, সেই পানি দিয়ে ফসল ফলান।’
খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, ত্বরান্বিত ও সহজলভ্য করার নিমিত্ত জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ৩১ মে বিকেল ৪.০০ টায় আকস্মিকভাবে বিএডিসিতে পরিদর্শনে আসেন ও দীর্ঘ ৪৫ মিনিট অবস্থান করে বিভিন্ন দপ্তর ঘুরে ঘুরে দেখেন এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণের সাথে সভা করেন। জাতির পিতা কৃষিভবনে পদার্পণে যেমন বিএডিসিকে ধন্য করেছে তেমনি কৃষির সেচ ব্যবস্থাকে করেছে সমৃদ্ধ। ১লা জুন ১৯৭২ পূর্বদেশ পত্রিকার প্রতিবেদনে জানা যায় বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘বিশেষজ্ঞদের মতে, চাষযোগ্য জমিগুলোকে যেখানে সম্ভব দুই ফসলি জমিতে পরিণত করা যেতে পারে। এতে তিন বছরের মধ্যে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন সম্ভব হতে পারে। সরকার কৃষকদের জন্য অগভীর নলকূপ এবং পাওয়ার পাম্প সরবরাহের ওপর বিশেষভাবে জোর দিচ্ছিল। কৃষকদের সেচ সুবিধাদিতে কমপক্ষে ১০ হাজার অগভীর নলক‚পের প্রয়োজন। বিলম্বে এ পাম্প সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে। সারাদেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর ব্যাপারে কৃষকদের কেউ উদ্বুদ্ধ করার জন্য সহজশর্তে ঋণ সরবরাহ করতে হবে। যদি প্রয়োজন হয়, কৃষকদেরকে ধারে অগভীর নলকূপের জল ব্যবহারের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। সে সময়ের নিয়ম অনুযায়ী কৃষকদের অগভীর নলক‚পের জল ব্যবহার করতে হলে মোট খরচের অর্ধেক বহন করতে হবে।’ ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালের মধ্যে ধ্বংসপ্রাপ্ত কৃষি অবকাঠামো পুনর্নিমাণ ও কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহের জন্য ভর্তুকি/হ্রাসকৃত মূল্যে সেচযন্ত্র সরবরাহের নির্দেশনা এবং অগভীর নলক‚প স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব বিএডিসিতে অর্পন করেন। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশকে ক্ষুধা, দুর্ভিক্ষ ও দ্রুত দারিদ্র্যমুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধু সরকার দেশকে খাদ্যে স্বয়ংম্ভরতা আনয়নের লক্ষ্যে ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে বিএডিসিতে ‘অগভীর নলক‚পের মাধ্যমে সেচ কর্মসূচি’ শিরোনামে ১৯৭২-৮০ মেয়াদে ৫১৮০.৫৩ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প অনুমোদন প্রদান করেন। সারাদেশে সেচ কার্যক্রম বিস্তৃতিকরণের লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে বিএডিসি বিনামূল্যে অগভীর নলক‚প স্থাপন করে কৃষকদের মাঝে সেচ প্রদান করে। ভ‚গর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ অনুযায়ী প্রতিটি নলক‚পের মধ্যে পারস্পরিক দূরত্ব, কমান্ড এরিয়া এবং ভ‚গর্ভস্থ পানির প্রাপ্যতার ওপর নির্ভর করে সেচযন্ত্র স্থাপন ও সরবরাহের করা হয়। এ ছাড়া জাতির পিতা সেচযন্ত্র এবং কৃষি যান্ত্রিকীকরণ কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সঠিকমাত্রায় পরিচালনার নিমিত্ত কৃষি সমবায়ের ওপর গুরুত্বারোপ এবং সমবায়ের আন্দোলনকে কৃষি বিপ্লব বাস্তবায়নের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। তিনি প্রতিটি সেচযন্ত্র ও কৃষি যন্ত্রপাতি কৃষক সমবায় সমিতির কাছে হস্তান্তরের নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি ১৯৭৩-৭৪ অর্থবছর হতে সারাদেশে সেচ কার্যক্রম বিস্তৃতিকরণে শক্তিচালিত পাম্প ও গভীর নলকূপের পাশপাশি অগভীর নলকূপ স্থাপনের মাধ্যমে সেচকার্যক্রমের ব্যাপ্তি বৃদ্ধি করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর শাসন আমল অর্থাৎ ১৯৭১-৭২ থেকে ১৯৭৪-৭৫ পর্যন্ত গভীর নলকূপ ৯০৬ থেকে ২,৬৯৯টি অর্থাৎ ১৯৮%, স্বাধীনতা পূর্ব কৃষি মন্ত্রণালয় তাকাবি ঋণের (Taccavi Loan) আওতায় ভর্তুকি মূল্যে অগভীর নলক‚প ৭৯৩ থেকে ২৮২০টি অর্থাৎ ২৫৬%, শক্তিচালিত পাম্প ২৪,২৪৩ থেকে ৩৫,৫৩৪টি অর্থাৎ ৪৭% এবং সেচ এলাকা ৩,৮১,৬১৯ থেকে ৬,২৭,৪০৫ হেক্টর অর্থাৎ ৬৪.৪০% বৃদ্ধি পায়। ওই সেচযন্ত্রগুলো মাঠপর্যায়ে ক্ষেত্রায়নের মাধ্যমে বোরো আবাদের ব্যাপ্তি বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। তাঁরই ডাকে সাড়া দিয়ে আশুগঞ্জের স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, জনপ্রতিনিধি এবং কৃষকদের উদ্যোগে আশুগঞ্জ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রেও কুলিং কাজে ব্যবহৃত গরম পানিকে ঠাÐাকরণের মাধ্যমে আশুগঞ্জ সবুজ প্রকল্প নামে সেচকার্যক্রম শুরু করে এবং সরকারিভাবে ১৯৭৮-৭৯ সালে আশুগঞ্জ সবুজ প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে আশুগঞ্জের সাথে পলাশ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের কুলিং কাজে ব্যবহৃত পানিকে একীভ‚ত করে ‘আশুগঞ্জ-পলাশ এগ্রো-ইরিগেশন প্রকল্প’ গ্রহণ করে। কৃষক জনতা জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে কৃষিতে বিপ্লব ঘটায়, যা অদ্যবধি চলমান রয়েছে। যা কৃষি উৎপাদন ও ভ‚পরিস্থ পানির ব্যবহার বৃদ্ধিতে এক অন্যন্য ভ‚মিকা পালন করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় শুধুমাত্র সেচযন্ত্র মাঠ পর্যায়ে স্থাপন ও সরবরাহের ওপর নির্ভর না করে সেচযন্ত্রের বিভিন্ন খুচরা যন্ত্রাংশ ও নলক‚পের মালামাল তৈরি, মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ ও সংরক্ষণ কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (International Labor Organization-ILO) সহায়তায় জেলা পর্যায়ে জোনাল/রিজিয়নাল ওয়ার্কশপ স্থাপন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করা হয়। ওই ওয়ার্কশপে সেচযন্ত্রের বিভিন্ন খুচরা যন্ত্রাংশ ও নলক‚পের মালামাল তৈরি এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বিএডিসির মেকানিক ও গ্রামীণ বেকার যুবকদের প্রশিক্ষিত করা হয়। ফলে দেশে সেচযন্ত্র পরিচালনা, মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ ও সংরক্ষণে কৃষকগণের ভোগান্তির পরিসমাপ্তি ঘটে।
ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর খাদ্য চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে ক্রমহ্রাসমান আবাদি জমির ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে নদ-নদী ড্রেজিং ও খাল-নালা পুনঃখননের কোনো বিকল্প নেই। এ ছাড়াও সেচ কাজে আধুনিক প্রযুক্তির রাবার/হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম ও বিভিন্ন প্রকার সেচ অবকাঠামো নির্মাণ, বারিড পাইপ ও পানি সাশ্রয়ী ড্রিপ/স্প্রিংকলার সেচ পদ্ধতি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তির ব্যবহার, পলিশেডে নিরাপদ ও রপ্তানিযোগ্য উচ্চমূল্যের ফসল উৎপাদন সময়ের দাবি। বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার-২০১৮, সুখীসমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে রূপকল্প (Vision)-২০২১ সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি (SDG) বাস্তবায়ন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদা অর্জন এবং শতবর্ষী ব-দ্বীপ পরিকল্পনা (Delta Plan-2100) এর আলোকে সারাদেশে সেচ কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকারের সকল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করা যায়।
প্রধান প্রকৌশলী (ক্ষুদ্রসেচ), বিএডিসি, ঢাকা। মোবাইল : ০১৭১৮৭৮১৯৭৯; ই- মেইল : aeirigation2badc@gmail.com
নতুন রপ্তানি সম্ভাবনার ফসল কাজুবাদাম
কৃষিবিদ ড. শামীম আহমেদ
সনাতন কৃষি থেকে বের হয়ে আধুনিক কৃষির সাম্রাজ্যে প্রবেশের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেমন সদা সচেষ্ট বর্তমান কৃষিকে ধরে রেখে আগামীর কৃষি যেন খোরপোশের কৃষি থেকে বাণিজ্যিক কৃষিতে পরিণত হয় সেই লক্ষ্যে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা প্রদান করছেন। পাশাপাশি কৃষি মন্ত্রণালয়ের সুযোগ্য কৃষিমন্ত্রী দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে কৃষককে নিয়ে ভাবছেন বাণিজ্যিকীকরণের ক্ষেত্রে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে। বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের যুগোপযোগী নীতির কারণে বাংলাদেশের কৃষি আজ বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য একটি রোল মডেল হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। কৃষির সকল সেক্টরেই আমাদের সফলতা অভাবনীয়। মাঠ ফসল বিশেষ করে দানা জাতীয় শস্য উৎপাদনে আমরা বিগত কয়েক বছর ধারাবাহিকভাবে সাফল্য অর্জন করে আসছি। এ অর্জন ধরে রাখার পাশাপাশি আমাদের এখন নজর দিতে হবে উদ্যান ফসল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে। বর্তমানে সরকার তথা কৃষি মন্ত্রণালয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও মাঠপর্যায়ে চাষিদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে তাও অর্জন হবে।
বাংলাদেশে কাজুবাদামের চাষ সম্ভাবনা
বাণিজ্যিক কৃষির যে সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশে সেই বাণিজ্যিকীকরণের বাহক হিসেবে কাজুবাদাম এর সম্ভাবনা ব্যাপক। প্রাথমিক অবস্থায় কাজুবাদাম গাছ পাহাড়ি অঞ্চলে কৃষি পুনর্বাসন কার্যক্রমের সাথে ভূমিক্ষয়, ভূমিধস ইত্যাদির জন্য লাগানো হলেও বর্তমানে এই গাছটি দ্রুত বর্ধনশীল, পরিবেশবান্ধব এবং লাভজনক হওয়ায় পাহাড়ি/সমতল জমির পতিত জায়গায় রোপণের কার্যক্রম নেয়া হয়েছে। কাজুবাদাম একটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফল। বাংলাদেশের সর্বত্র এর চাষ সম্ভব। কাজুবাদামকে বলা হয় প্রাকৃতিক পুষ্টিকর ফল। এর ২টি অংশ খাওয়ার উপযোগী। কাজু অর্থাৎ আপেল অত্যন্ত রসালো এবং বাদাম পুষ্টিকর খাবার। পাকা কাজু আপেল সাধারণ আপেলের মতো খাওয়া যায়। কিন্তু বাদাম কাঁচা অবস্থায় খাওয়ার উপযোগী নয়। প্রক্রিয়াজাত করার পর বাদাম খাওয়া হয়। ইহার বীজ থেকে পাওয়া বাদাম সুস্বাদু, মুখরোচক ও পুষ্টিকর এবং অর্থনৈতিক দিক দিয়েও মূল্যবান। বাদামের খোলসের তেল শিল্প কাজে ব্যবহৃত মূল্যবান দ্রব্য। তাছাড়া বাদামের উপরের অংশে ফল থেকে জুস, ভিনিগার এবং অ্যালকোহল তৈরি করা যায়। আমাদের দেশের জলবায়ু কাজুবাদাম চাষের বেশ সহায়ক।
আন্তর্জাতিক বাজারে কাজুবাদামের চাহিদা
আন্তর্জাতিক বাজারে কাজুবাদামের চাহিদা প্রচুর রয়েছে এবং এই চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলেছে। বৈশ্বিক ৩৫ লাখ টন উৎপাদিত কাজুবাদামের মধ্যে যেখানে আফ্রিকার দেশগুলোতে প্রায় ১২ লাখ টন, ভারতে ৭ লাখ ৪৬ হাজার টন, ভিয়েতমানে ৪ লাখ টনের মতো কাজুবাদাম উৎপাদিত হয়, সেখানে বাংলাদেশে উৎপাদন মাত্র ১ হাজার টন। পক্ষান্তরে বাংলাদেশে কাজুবাদামের আমদানি ২০১৪-১৫ সালে ছিল ১৮, ০০০ কেজি যা ২০১৮-১৯ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫,৮০,০০০ কেজি (সূত্র:এনবিআর)। অভ্যন্তরীণ এই ব্যাপক চাহিদা মিটিয়েও কাজুবাদাম রপ্তানি করে ব্যাপক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশে কাজুবাদামের চাষাবাদ এলাকা
পার্বত্য এলাকায় আবাদযোগ্য মাঠ ফসলি জমি আছে মাত্র মোট জমির ৫ শতাংশ। সমতল জমির অভাবে এখানে মাঠ ফসলের আবাদ সম্প্রসারণের সুযোগ খুবই সীমিত। অন্যদিকে, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে কৃষকগণ তাদের খাদ্যের চাহিদা মিটাতে পাহাড়ের ঢালে অপরিকল্পিতভাবে চাষাবাদ করে থাকেন। এর ফলে একদিকে যেমন ভূমি ক্ষয় এবং ভূমির উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায় অন্যদিকে পরিবেশের ভারসাম্যও নষ্ট হয়। আজ থেকে প্রায় ৩০-৩৫ বছর আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এবং উদ্যান উন্নয়ন বিভাগ (কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ) সমন্বয়ে পার্বত্য এলাকায় কৃষি উন্নয়নের জন্য প্রচুর পরিমাণে অন্যান্য ফলের চারা/কলমের সাথে কাজুবাদামের চারা সরবরাহ করে থাকে। কালের চক্রে কাজুবাদাম গাছ বড় হয়ে ফল দিতে থাকে। কিন্তু কাজু বাদামের বিক্রি, বাজারজাত করা বা প্রক্রিয়াজাত করার কোন প্রকার ব্যবস্থা তেমন ছিল না। শুধু রাঙ্গামাটিতে দেশীয় পদ্ধতিতে স্বল্প কিছু কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাত করা হতো। তবে বিপুল পরিমাণ কাজুবাদাম অবিক্রীত থেকেই যেত। লোকসান বিধায় কাজু বাদামের প্রতি কৃষকগণ অনীহা প্রকাশ করে এবং অনেকে প্রতিষ্ঠিত বাগানের গাছ কেটে ফেলে। পরবর্তীতে কিছু রপ্তানিকারক ভারত, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে স্বল্প পরিমাণে কাজু বাদাম রপ্তানি করতে থাকে। বর্তমানে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এবং নীলফামারীতে ব্যক্তি উদ্যোগে দুটি কাজুবাদামের প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
কাজুবাদামের অর্থনৈতিক গুরুত্ব
বৃক্ষজাতীয় ফলের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কাজু বাদামের স্থান তৃতীয়। আর বাদামজাতীয় ফসলে কাজুবাদাম, প্রথম স্থানে। আমাদের দেশে এক কেজি প্রক্রিয়াজাত করা প্যাকেটকৃত বাদামের মূল্য প্রায় ১০০০/- ১২০০/- টাকা। সাধারণ কৃষকগণ প্রক্রিয়াজাত করতে না পারলেও শুধু বাদাম বিক্রি করে টন প্রতি প্রায় ৬০,০০০/- থেকে ১,০০০০০/- টাকা পেয়ে থাকেন। তবে এর বাজার বেশ পরিবর্তনশীল। বিশ্বে শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ ভিয়েতনাম ২০১৯ সালে ৩.৬ বিলিয়ন ডলারের মতো কাজুবাদাম রপ্তানি করেছে। বাংলাদেশ ২০১৯-২০ সালে ভিয়েতনামে ও ভারতে কাঁচা কাজুবাদাম যেখানে রপ্তানি করেছে মাত্র ৩.৫৭ লাখ ডলারের, সেখানে প্রস্তুত বাদাম আমদানিই করেছে ভিয়েতমান থেকে ৮৫৭ টন। ২০২০ সালের উৎপাদন হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে কাজু বাদামের ফলন প্রতি হেক্টরে ১.৩২৩ টন (সূত্র: প্রথম আলো, ১৫ আগষ্ট,২০২০)।
পাহাড়ি অঞ্চলে কাজু বাদামের উন্নয়ন সম্ভাবনা
কাজুবাদাম চাষের উপযুক্ত আবহাওয়া ২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থেকে ২৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা, ১০০০মিমি থেকে ২০০০ মিমি বার্ষিক বৃষ্টিপাত, ৫০০মিটার থেকে-১০০০ মিটার সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা এবং বন্যা মুক্ত অম্লীয় বালি বা বালি দোআঁশ মাটি। এসব বিষয়গুলো বিবেচনা করলে কাজুবাদাম চাষের উপযুক্ত জমি পাহাড়ি অঞ্চলের প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় নভেম্বর থেকে প্রায় এপ্রিল/মে মাস পর্যন্ত সাধারণত কোন বৃষ্টিপাত হয় না। অর্থ্যাৎ ৫/৬ মাস পাহাড়ি ভূমি বৃষ্টি বিহীন অবস্থায় থাকে। আবার সেখানে সেচ দেওয়ার তেমন কোন সুযোগ সুবিধা নেই। মার্চ এপ্রিল মাসে প্রচণ্ড খরা এবং গরম হাওয়া বিদ্যমান থাকে। সে অবস্থায়ও কাজুবাদাম বেশ ভাল ফলন দিয়ে থাকে। আবার স্বল্প মূল্যের জমি এবং কর্মঠ শ্রমিক প্রাপ্যতা এখানে রয়েছে। জমি হল কৃষির মূল উপাদান, ইহা ছাড়া কৃষি অচল ও অসম্ভব। সমতল এলাকায় কাজুবাদাম করার মতো স্বল্পমূল্যের ভ‚মি পাওয়াটা দুষ্কর। বান্দরবনে ১,৭৯৭ হেক্টর জমিতে ৮.৬৯ লাখ কাজুবাদামের গাছ রয়েছে। বান্দরবনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফলন থানচি উপজেলায়, মোট আবাদের ৫০ শতাংশই হয় এই উপজেলায়। এরপর রুমা, রোয়াংছড়ি এবং সদরে কাজুবাদামের চাষ হয়।
কর্মসংস্থানের সুযোগ
কাজুবাদাম উৎপাদন সংগ্রহ, শুকানো ও সংরক্ষণ কাজে প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে কাজুবাদামের ফল থেকে কাজুবাদাম সংগ্রহের সময় অবশ্যই শ্রমিকের মাধ্যমে সমাধান করতে হয়। তাছাড়া আধুনিক মেশিনে প্রক্রিয়া জাত করা হলেও সেখানে পিলিং ও গ্রেডিং ইত্যাদি কাজে শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, কাজুবাদামের উৎপাদন শিল্পের সাথে জড়িত প্রায় ৯০ ভাগ শ্রমিকই নারী। তাই এই শিল্পকে নারীবান্ধব বিশেষ করে অবহেলিত নারীর কর্মসংস্থানের বিরাট সুযোগ রয়েছে। দৈনিক ৪ (চার) টন কাজুবাদাম প্রক্রিয়া জাত হয় এমন ফ্যাক্টরিতে দৈনিক প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ জন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। ২০১৬ সালে কাজুবাদামের কারখানা যেখানে ছিলো মাত্র একটি, এখন সেখানে কারখানার সংখ্যা বেড়ে ২টি হয়েছে। পাশাপাশি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা তো রয়েছেনই। গত বছর হতে ফলন ও কারখানা গড়ে তুলতে কাজ শুরু করেছেন দেশের ইস্পাত খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম গ্রুপ।
কাজুবাদামের জাত পরিচিতি
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রাচীণ জাতের কাজুবাদাম চাষ হয়ে থাকে। এই জাতের কাজুবাদামের ফলন কম এবং দেরিতে ফলন পাওয়া যায়। ইদানীং ভারত ভিয়েতনাম ও শ্রীলঙ্কায় কিছু কিছু উন্নত জাত আবিষ্কার হয়েছে, যেগুলোতে ফলন ৪/৫ গুণ বেশি এবং ছোট ছোট গাছে প্রচুর ফলন দেয়। বছরব্যাপী ফল উৎপাদন ও পুষ্টি প্রকল্পের মাধ্যমে ভারত ও ভিয়েতনাম হতে উন্নত নতুন জাতের VLA--৪, ভাস্করা, OP-০৯ চারা কলম এনে দেশের বিভিন্ন হর্টিকালচার সেন্টারে মাতৃগাছ তৈরি করার কাজ চলমান আছে।
অর্গানিক কাজুবাদাম চাষের গুরুত্ব
ইদানীং দেখা যায়, আগের তুলনায় মারাত্মক রোগ যেমন- ক্যানন্সার, ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ, ব্লাড প্রেসার, কিডনি, লিভারসহ শারীরিক সমস্যা অনেক বেশি দেখা যায়। বিশেষজ্ঞের মতে এগুলোর অনেক কারণ থাকলেও বিভিন্ন ধরনের রাসায়নি দ্রব্যসহ বালাইনাশকের অপব্যবহার একটি প্রধান কারণ। আমরা কৃষি পণ্য উৎপাদন করতে কৃত্রিম রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার যত কমাতে পারব ততই মানব স্বাস্থ্য রক্ষায় উপকার হবে। বিগত কয়েকদিন আগে মন্ত্রী পরিষদ সভায় বাংলাদেশে জৈব কৃষিনীতি অনুমোদন করেছে। আমরা অন্যান্য ফল ফসলের মতো কাজুবাদাম উৎপাদনে জৈব কৃষি নীতি পালন করে , এদেশে এবং আন্তর্জাতিক বাজারেও ভালো দামে বিক্রির সুযোগ পাবো। আর আন্তর্জাতিক বাজারে অর্গানিক ফসলের চাহিদাতো দিন দিন বাড়ছেই।
উদ্যান ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবেলা, পুষ্টি চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিসহ বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য গুণগতমান সম্পন্ন ও নিরাপদ খাদ্য চাহিদা পূরণ, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ ও টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রূপান্তরিত করতে কৃষি ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারসহ কৃষিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণের ফলে কাক্সিক্ষত কৃষি প্রবৃদ্ধি অর্জন ত্বরান্বিত হবে, মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ বাড়বে তথা দেশের সামগ্রিক ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
অতিরিক্ত উপপরিচালক, হর্টিকালচার উইং, ডিএই, মোবাইল : ০১৭১১১৭৪৩৪৫, ই-মেইল : addtvs@dae.gov.bd
সোনালী আঁশের সোনার দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ
কৃষিবিদ মো: মুকুল মিয়া
“পাটের গবেষণার উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ এবং পাট উৎপাদনের হার বৃদ্ধি করা হলে জাতীয় অর্থনীতিতে পাট সম্পদ সঠিক ভ‚মিকা পালন করতে পারে”- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
সোনালী আঁশের সোনার দেশ, পাট পণ্যের বাংলাদেশ। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ পাট থেকে উৎপাদিত সোনালী আঁশের দেশ হিসেবে পরিচিত। পাট বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল। সারা বিশ্বে আঁশ উৎপাদনকারী ফসল হিসেবে তুলার পরেই পাট ও পাট জাতীয় আঁশ ফসল দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। বর্তমানে দেশের প্রায় ৪৫ লক্ষ কৃষক পাট চাষাবাদ করছে। এ দেশে আশির দশকে প্রায় ৮-১০ লক্ষ হেক্টর জমিতে প্রায় ৬০-৬৫ লক্ষ বেল পাট উৎপাদিত হতো। এরপর নব্বই এর দশকে তা হ্রাস পেয়ে প্রায় ৪৫ লক্ষ বেলে নেমে যায়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে পরবর্তিতে ২০১০ সাল হতে ৭-৮ লক্ষ হেক্টর জমিতে প্রায় ৮০-৯০ লক্ষ বেল পাট উৎপাদিত হচ্ছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে, দেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৪ শতাংশ অর্থাৎ ১ (এক) বিলিয়ন ডলার আসে পাট ও পাটজাতীয় পণ্য থেকে। ঢাকায় ১৯০৪ সালে পাটের উপর প্রথম গবেষণা শুরু করেন স্যার এস. ফিনলো নামের একজন ভদ্রলোক। এরপর ১৯৩৬ সালে সমগ্র ভারতীয় কেন্দ্রীয় পাট পরিষদের আওতায় রাজধানী ঢাকার শেরই বাংলানগরে অর্থাৎ বর্তমান মহান জাতীয় সংসদের দক্ষিণ পার্শ্বে স্থাপিত হয় পাটের কৃষি গবেষণা ল্যাবরেটরি এবং এর পর থেকেই শুরু হয় পাটের কৃষি গবেষণা কার্যক্রম। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তের পর গঠিত হয় পাকিস্তান কেন্দ্রীয় পাট পরিষদ। এরপর ১৯৫১ সালে পাটের কৃষি গবেষণা ল্যাবরেটরির নাম পরিবর্তিত হয়ে বর্তমান স্থানে পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সে সময় পাটের শুধুমাত্র কৃষি গবেষণা কার্যক্রম চালু ছিল এবং পরবর্তীতে ১৯৬৩ সালে পাটের শিল্প গবেষণা কার্যক্রম চালু হয় যা বর্তমানে পাটের কারিগরি গবেষণা হিসেবে চলমান আছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তারিখে বাঙালি জাতির অহংকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহান জাতীয় সংসদে পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট আইন’ ১৯৭৪ পাস করেন এবং এই আইন পাসের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করেন আজকের এই কৃষি গবেষণার সবচেয়ে পুরাতন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই)। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৬ সালে বিজেআরআই এ স্থাপিত হয় পাট বীজ উইং। এরপর পাটের ভিত্তিবীজ, মানঘোষিত বীজ উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে কৃষকের নিকট উন্নতমানের বীজ সরবরাহের গবেষণা কার্যক্রম ব্যাপকভাবে চালু হয়। সফলতার সাথে বিজেআরআই সারাদেশে কৃষকদের নিকট মৌসুমের শুরুতেই ভালো মানের পাটবীজ সরবরাহ করতে পারত। ১৯৭৫ সালে বিশ্বাসঘাতক হায়েনাদের হাতে জাতির পিতার শাহাদাৎবরণের পর পাট গবেষণায় নেমে আসে অনাকাক্সিক্ষত পরিবর্তন। ফলশ্রুতিতে, অন্যান্য ফসলের ন্যায় পাটের বীজ উৎপাদন ও কৃষকপর্যায়ে দেওয়ার জন্য ১৯৮৮ সালে বিজ্ঞানসম্মত বিচার বিবেচনা না করেই বিজেআরআই থেকে জনবল, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদসহ পাটবীজ উইংটি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের নিকট হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু পাট এমন একটি উদ্ভিদ যার আঁশ বা কাঠি কোনটিই খাদ্যোপযোগী নয়। এ ছাড়া পাটের বীজ বিশেষ ব্যবস্থাপনায় প্রক্রিয়াজাতপূর্বক সংরক্ষণ করা না হলে পরবর্তী বছরেই তার জীবনীশক্তি বা অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে বিএডিসি কর্তৃক অন্যান্য খাদ্য ফসলের ন্যায় পাটের বীজ সংরক্ষণ না করায় বিদেশ থেকে বীজ আমদানির উপর কৃষক নির্ভরশীল হয়ে পড়ে যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
পাট এমন একটি উদ্ভিদ যার পুরো অংশটাই ব্যবহার্য। এদেশে রয়েছে দেশী ও তোষা পাট এবং পাটজাতীয় আঁশ ফসল কেনাফ ও মেস্তা। এদের মধ্যে গুণসমৃদ্ধ আঁশ উৎপাদনে শতকরা ৮০ ভাগ তোষা পাট, ১০ ভাগ দেশি পাট এবং ১০ ভাগ কেনা-মেস্তার চাষ হয়ে থাকে। আঁশের এসব গাছ বীজ বপনের পর ১০০-১২০ দিন বয়সে আঁশ সংগ্রহের জন্য হার্ভেস্ট বা কর্তন করার উপযোগী হয়। এক হেক্টর জমিতে চাষকৃত পাট ফসল জীবজগতের জন্য অপরিহার্য প্রায় ১৪.০-১৪.৫ মে.টন অক্সিজেন (O2) বাতাসে অবমুক্ত করে এবং সমপরিমাণ গ্রিনহাউজ গ্যাস কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) পরিবেশ থেকে শোষণ করে বাতাসকে পরিশুদ্ধ করে এবং জীবজগতকে নির্মল রাখতে সহায়তা করে। একই সাথে পাট গাছের সবুজ পাতা এবং পাট কর্তনের পর জমিতে থেকে যাওয়া পাটের মূলসমূহ পচে হেক্টরপ্রতি প্রায় ৮ মে.টন জৈব পদার্থ মাটিতে যোগ করে মাটির চাষাবাদ উপযোগী স্বাস্থ্য সংরক্ষণ করাসহ উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে । পাট গাছের প্রধান মূল হচ্ছে প্রাইমারি ধরনের যা মাটির গভীরে প্রবেশ করে খাদ্য উপাদান সংগ্রহ করে, এর ফলে মাটির উপরিভাগ বা চাষাবাদ উপযোগী স্তরের বিভিন্ন উপাদানের তেমন একটা ঘাটতি হয় না। বরং মাটির নিচ থেকে কিছু উপাদান উপরের স্তরে নিয়ে আসে যা ছোট মূল বা সেকেন্ডারি মূল বিশিষ্ট অন্যান্য ফসলের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। মাটির অভ্যন্তরে সৃষ্ট প্লাউপ্যান ভেঙ্গে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে থাকে। পাট একটি পরিবেশবান্ধব আঁশ ফসল যা মাটির ক্ষয়রোধ করে, পরিবেশকে সমৃদ্ধ রাখে এবং মাটির স্বাস্থ্য সমৃদ্ধ ও সংরক্ষণ করে।
সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কৃষি দর্শনের সাফল্য যা সমগ্র বিশ্বের জন্য আজ অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রতীয়মান এবং ব্যাপকহারে সমাদৃত। কৃষি পরিসংখ্যানের তথ্যানুসারে গত ৫ দশকে পাটের ফলন ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে এবং মূল্যের দিক থেকে বর্তমানে কাঁচা পাটের ভালো সময় যাচ্ছে। চাষাবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ক্রমে কমে যাচ্ছে তবে, সে তুলনায় পাটের চাষ ও উৎপাদন বাড়ছে। কৃষি তথ্য সার্ভিসের তথ্যানুসারে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে পাটের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা বিশ্লেষণে ছিল দেশি, তোষা ও কেনাফ-মেস্তার জন্য জমি ০.৩২, ৬.২০, ০.৪৭ লাখ হেক্টর, যথাক্রমে; উৎপাদন ২.৮৪, ৭৩.৩৫, ৩.৮৯ লাখ মেট্রিক টন, যথাক্রমে; ফলন ৮.৮৮, ১১.৮৩, ৮.২৮ মেট্রিক টন/হেক্টর, যথাক্রমে; এবং অর্জিত মাত্রা বিশ্লেষণে পাওয়া গেছে জমি ০.৩২, ৫.৮৬, ০.৪৭ লাখ হেক্টর যথাক্রমে; উৎপাদন ২.৪৪, ৬২.৪৮, ৩.২৫ লাখ মেট্রিক টন, যথাক্রমে; ফলন ৭.৬৪, ১০.৬৬, ৬.৯২ মেট্রিক টন/হেক্টর, যথাক্রমে। পাট ও পাটজাতীয় আঁশ ফসলের জন্য মোট লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে বিশ্লেষণে ছিল জমি ৬.৯৯ লাখ হেক্টর, উৎপাদন: ৮০.০৮ লাখ মেট্রিক টন এবং ফলন ১১.৪৬মেট্রিক টন/হেক্টর; আর অর্জিত হিসেবে পাওয়া গেছে জমি ৬.৬৫ লাখ হেক্টর, উৎপাদন: ৬৮.১৮ লাখ মেট্রিক টন এবং ফলন ১০.২৫ মেট্রিক টন/হেক্টর। এটা কেবলমাত্র সম্ভব হয়েছে দেশের বুদ্ধিসম্পন্ন ও কর্মঠ কৃষক, মেধাবী কৃষি বিজ্ঞানী এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নিরলস প্রচেষ্টার কারণেই।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় উচ্চফলনশীল পাটের জাত উদ্ভাবন এবং দেশের পতিত জমিসহ প্রতিটি জায়গায় পাটসহ কৃষি চাষাবাদের লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ভুক্ত বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট এর মেধাবী ও কর্মঠ বিজ্ঞানীগণ নিরলসভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে এবং ইতোমধ্যে ভারত থেকে আমাদানিকৃত তোষা পাটের একটি বহিরাগত জাত জেআরও-৫২৪ এবং বিজেআরআই কর্তৃক উদ্ভাবিত তোষা পাটের অন্যান্য জাতের চেয়ে অধিক ফলনশীল একটি তোষা পাটের জাত বিজেআরআই তোষা পাট ৮ (রবি-১) গত ২০১৮ সালে উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে যা গত বছর (২০১৯) কৃষক মাঠে বেশ ভালো সাড়া পেয়েছে। মাননীয় কৃষি মন্ত্রী মহোদয়ের নেতৃত্বে ও বিচক্ষণ ব্যস্থাপনায় সম্প্রতি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয় যৌথভাবে পাট বীজ উৎপাদন ও স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে একটি সমন্বিত প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছেন যা দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হবে বলে আশা করি। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুসারে, বর্তমানে বাংলাদেশ পাট উৎপাদন ও রপ্তানীতে বিশ্বের বুকে প্রথম স্থান দখল করেছে। এছাড়া, কাঁচা পাট রপ্তানিতে দীর্ঘদিন থেকেই বাংলাদেশ শীর্ষ স্থানে রয়েছে। তারপরেও বিশ্ব বাজারে অতি দ্রæত বর্ধনশীল পরিবেশবান্ধব পাটপণ্যের চাহিদার পাশাপাশি রপ্তানিতেও যাতে শীর্ষ স্থান দখল করতে পারে সে জন্য মূল্য সংযোজিত প্রক্রিয়াজাতকৃত পাটপণ্য তৈরিসহ রপ্তানিতে আমাদের আরও সক্ষমতা বাড়াতে হবে। যা আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দীর্ঘ লালিত স্বপ্ন ছিল এবং পাটের কথা তিনি তার প্রণীত তৎকালীন স্বৈরাচারী পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে পরিচালিত আন্দোলনের (৬ ও ১১ দফা) ইশতেহারে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে আলোকপাত করেছিলেন। তাই আজ সময় এসেছে পাট ও পাটপণ্যের বহুমুখী ব্যবহার বাড়িয়ে তার এই লালিত স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দান করার; পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনতে বিজেআরআই নিরলসভাবে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। পাটের কৃষি বিষয়ক গবেষণা ও উন্নয়নে উৎকর্ষতা অর্জনই হলো বিজেআরআই এর ভিশন। আর পাট ও পাটজাতীয় আঁশ ফসলের উচ্চফলনশীল জাত এবং টেকসই চাষাবাদ পদ্ধতি উদ্ভাবন, উন্নয়ন, হস্তান্তরের মাধ্যমে কৃষক ও সংশ্লিষ্ট উপকারভোগীদের উপার্জন বৃদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচন, আত্মসামাজিক উন্নয়ন এবং পরিবেশের উন্নয়ন করা হচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান লক্ষ্য।
এ পর্যন্ত বিজেআরআই কর্তৃক সকল বিভাগের সহযোগিতায় প্রজনন বিভাগের মাধ্যমে দেশি, তোষা পাট, কেনাফ ও মেস্তা ফসলের মোট ৫২টি জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। দেশি পাটের ৩টি শাকের জাত রয়েছে যা অনেক পুষ্টিসমৃদ্ধ এবং বহুল ব্যবহৃত। এছাড়া, দেশি পাটের একটি জাত জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক ছাড়করণের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে যা প্রায় ১২.০ ডিএস/মি. মাত্রার লবণ সহ্য করতে পারবে, খুব শীঘ্রই তা দক্ষিণাঞ্চলে চাষের জন্য অবমুক্ত করা হবে। পাশাপাশি লবণ, জলাবদ্ধতা ও খরা সহিষ্ণু তোষা পাটের জাতও উদ্ভাবনের ব্যাপক চেষ্টা চলমান রয়েছে। পাটের সোনালী আঁশ ও রূপালী কাঠি দুইএরই রয়েছে অপার সম্ভাবনা। পাটের আঁশ বিভিন্ন পণ্য যেমন পোশাক, জিওটেক্সটাইল, বস্তা, রশি, কাগজ তৈরির পাল্প, বিভিন্ন সৌখিন জিনিসপত্র ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহার হয়ে থাকে। পাটকাঠিরও রয়েছে অনেক ব্যবহার যেমন, পাটকাঠি পুড়িয়ে তৈরিকৃত কার্বন বা চারকোল জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হয়। এই চারকোল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেমন চায়না, ব্রাজিল, তাইওয়ান ইত্যাদিতে রপ্তানি হয় এবং সেখানে এর সাথে লেবুর রস বা ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড মিশিয়ে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে কম্পিউটারের প্রিন্টারের কালি, ফটোকপিয়ারের কালি, কসমেটিক্সের উপাদান সামগ্রী তৈরি করে যা আমরা অনেক চড়া দামে আমদানি করে থাকি। যদি আমাদের দেশে এই প্রযুক্তিসমূহ ব্যবহার করা যায় তাহলে পাটকাঠির চারকোল থেকে এই মূল্যবান কালি উৎপাদনের মাধ্যমে অনেক লাভবান হওয়া সম্ভব। এ ছাড়াও, পাটকাঠি দিয়ে ঘরের বেড়া দেয়া যায়, বিদেশে বিশেষ প্রক্রিয়ায় উন্নতমানের গাড়ির ডেস্কবোর্ড তৈরি করা হয় যা একেবারে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই সম্পন্ন। তাই আসুন আমরা পরিবেশবান্ধব এই পাট ফসল চাষাবাদ করি, পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাটের সোনালি ব্যাগসহ পাট পণ্যসমূহ ব্যবহারে এগিয়ে আসি। সবুজ পরিবেশ গড়ে তুলি। জীবজগৎকে সংরক্ষণ করি।
সাইন্টিফিক অফিসার (উদ্ভিদ প্রজনন), প্রজনন বিভাগ, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, মানিকমিয়া এভিনিউ, ই-মেইল: mukulbjribreeding@gmail.com মোবাইল: ০১৫২০০৮৩০৮৮
পোলট্রি শিল্প উন্নয়নে পরিবেশবান্ধব কৌশল
ড. নাথুরাম সরকার১ ড. শাকিলা ফারুক২ ড. সাবিহা সুলতানা৩ মোঃ আতাউল গনি রাব্বানি৪ ড. মোঃ রাকিবুল হাসান৫
বাংলাদেশ একটি কৃষিনির্ভর দেশ। কৃষি বলতে ধান, পাট, ডাল, আখ, শস্য ছাড়াও প্রাণিসম্পদ এবং মৎস্যকে বোঝায়। তাই খাদ্য বলতে শুধু ধান, চাল, আটা, ময়দা আর ভুট্টাকে বুঝায় না বরং মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, শাকসবজি এসবকে বুঝায়। সুতরাং কৃষির উন্নতি করতে হলে খাদ্যের সমন্বিত উৎপাদনে উন্নতি করতে হবে। তাই সুষম পুষ্টি নিশ্চিতকরণে প্রাণিজ আমিষের ভূমিকা অপরিহার্য। বর্তমানে গ্রামে গ্রামে পোলট্রি ফার্ম, গাভী পালন, গরু মোটাতাজাকরণ কার্যক্রম বিস্তৃত হওয়ায় প্রাণিসম্পদ খাতেও প্রভূত উন্নতি সাধিত হচ্ছে। আশার কথা এই যে, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে মাংস ও ডিমে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ প্রত্যক্ষ ও ৫০ শতাংশ মানুষ পরোক্ষভাবে প্রাণিসম্পদ সেক্টরের সঙ্গে জড়িত। বর্তমান সরকারের ভিশন অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশে পরিণত এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলা আমাদের স্বপ্ন।
বাংলাদেশে জনসংখ্যা দ্রæত বৃদ্ধি ও আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রাণিজ আমিষের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে আশির দশক থেকে এ দেশে বাণিজ্যিকভাবে মুরগি পালন শুরু হয়। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে বিনিয়োগকারীদের উদ্যোগে পোলট্রি শিল্প গতি পায় এবং সস্তায় উন্নত আমিষের উৎস হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করে। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝিতে পোলট্রি শিল্প একটি সম্ভাবনাময় শিল্পের আকার ধারণ করে এবং বছরে প্রায় ১৫-২০% হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে। সম্প্রতি ২০১৯-২০ সালের হিসাব অনুযায়ী দেশে ১৬ টি পোলট্রি গ্র্যান্ড প্যারেন্ট ফার্ম, ২০৬টি লেয়ার ও ব্রয়লার ব্রিডার ফার্ম, ৮৮০০০টি লেয়ার ও ব্রয়লার খামার, ২১৭টি ফিড মিল, ১৫টি মিট প্রসেসিং প্লান্ট ও ২০১৫টি সোনালী ব্রিডার খামার এবং ৫৩৪টি প্রাণিস্বাস্থ্য সম্পর্কিত কোম্পানি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে দেশে মোট জিডিপির ১.০৩% আসছে পোলট্রি শিল্প থেকে। পোলট্রি শিল্পকে কেন্দ্র করে সারা দেশে গড়ে উঠেছে ছোট বড় আকারের খামার, হ্যাচারি, ফিডমিল ও ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। বিদেশী বিনিয়োগ ও এসেছে এই শিল্পে। বিগত কয়েক বছরে রেড মিটের বাজারমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় সস্তায় প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে পোলট্রি শিল্প অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করে আসছে।
পোলট্রি প্রজাতি বেশির ভাগ প্রোটিন হজম ও শোষণ করতে না পারায় তা নাইট্রোজেন আকারে বিষ্ঠার সাথে নিঃসৃত হয়। উক্ত নাইট্রোজেনের ৮০% ইউরিক এসিড, ১০ % অ্যামোনিয়া এবং ৫ % ইউরিয়া আকারের বিষ্ঠার সঙ্গে নির্গত হয়। মুরগির বিষ্ঠা গাজনের ফলে নাইট্রোজেন ভেঙে অ্যামোনিয়া উৎপাদন হয় এবং দুর্গন্ধ ছড়ায়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পরিবেশ নিয়ন্ত্রিত শেডে পোলট্রি পালন করা হয় এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কার্যকর উপায় বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে উন্মুক্ত শেডে পোলট্রি ফার্মিং করা হয়, ফলে দুর্গন্ধ ছড়ায়, যা মানুষ ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক। তাই পোলট্রি উৎপাদনে গন্ধ দূরীকরণ এ শিল্পের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। গত ২০১৯ সালে পোলট্রি ফার্মের গন্ধে মানুষের ভোগান্তি বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সুতরাং পোলট্রি শিল্পের বিস্তারে দুর্গন্ধ একটি বিরাট বাধা। পোলট্রি বর্জ্যের মধ্যে রয়েছে বিষ্ঠা, লিটার, খাদ্যের উচ্ছিষ্টাংশ, পালক, হ্যাচারির বর্জ্য, মৃত মুরগি ইত্যাদি। বর্তমানে বাংলাদেশে বছরে ৪.৫২ মিলিয়ন টন পোলট্রি বর্জ্য উৎপাদন হয়, তন্মধ্যে ৩.১ মিলিয়ন টন উৎপাদিত হয় বাণিজ্যিক খামার থেকে। খামারিদের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ২০% খামারি পোলট্রি লিটার ব্যবহার করে না, ৪০% খামারি বিক্রয় করে, ৩০% লিটার শস্যক্ষেতে ব্যবহার করে আর ১০% মাছ উৎপাদনে ব্যবহার হয়। সাধারণত একটি ব্রয়লার মুরগি ১ কেজি খাবার খেলে ১ কেজি ফ্রেশ লিটার পাওয়া যায়। অন্যদিকে ১টি লেয়ার মুরগি থেকে বছরে ২০ কেজি বিষ্ঠা পাওয়া যায়। কিন্তু, পোলট্রির বিষ্ঠা পুষ্টি গুণসমৃদ্ধ (টেবিল ১) হওয়ায় এর উপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
পোলট্রি লিটার হতে গন্ধ নিরসনের কার্যকর উপায় নিরূপণে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিএলআরআই) গবেষণা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কার্যকর উপায়গুলোর মধ্যেঃ
১) উৎপাদন ঠিক রেখে পোলট্রি খাদ্যে প্রোটিনের পরিমাণ কমিয়ে গন্ধ কমানো : গন্ধ কমানোর উপায় নিরূপণে ধারাবাহিক গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে। উক্ত গবেষণায় রেশনে বিভিন্ন মাত্রায় প্রোটিন ও গ্লুটামিন ব্যবহার করে উৎপাদন দক্ষতা, গ্যাস উৎপাদন, মাংসের গুণাগুণ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও লাভ ক্ষমতার অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ করা হয়। গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পোলট্রি খাদ্যে প্রোটিনের পরিমাণ ২ ভাগ কমিয়ে বিকল্প হিসেবে গ্লুটামিন অ্যামাইনো এসিড ০.২ % খাদ্যে ব্যবহার করলে উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পোলট্রি লিটারে গন্ধ উৎপাদনকারী গ্যাসের (অ্যামোনিয়া, সালফার ডাই অক্সাইড, হাইড্রোজেন সালফাইড ও মিথাইল মারক্যাপ্টেন) পরিমাণ তাৎপর্যপূর্ণভাবে কমে যায়।
২) পোলট্রির বিষ্ঠায় উৎপাদিত অ্যামোনিয়ার মাইক্রোবিয়াল ডাইজেশনের মাধ্যমে গন্ধ কমিয়ে আনা : বিকল্প উপায় হিসেবে ট্রাইকোডার্মা ব্যবহার করে কিভাবে গন্ধ কমানো যায় তা নিরূপণ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ট্রাইকোডার্মা পাউডার (প্রতি লিটার পানিতে ৪ গ্রাম) ব্যবহার করে দিনে একবার পোলট্রি লিটারের উপর স্প্রে করে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়। উক্ত ফলাফল যাচাইয়ের জন্য পোলট্রি উৎপাদন গবেষণা ফার্মের ৪টি সেডের পোলট্রি লিটারের পিটে দিনে একবার করে স্প্রে করা হয় এবং তাৎপর্যপূর্ণভাবে গন্ধ কমার তথ্য পাওয়া যায়। অতঃপর গন্ধ দূরীকরণের কার্যকর ও সহজ উপায় নিরূপণের জন্য ট্রাইকোডার্মার দুইটি প্রজাতির বিভিন্ন ডোজ (২, ৪ ও ৬ গ্রাম/লিঃ পানি) এবং ফর্মের মধ্যে (Power/Liquid) কোনটিতে সর্বোৎকৃষ্ট ফলাফল পাওয়া যায় তা নিরূপণের জন্য ৩ xধ ২ ফ্যাক্টেরিয়ালে গবেষণা ট্রিটমেন্ট সাজানো যায়।
পুষ্ঠি উপাদানের নাম | ব্রয়লার বিষ্ঠা | লেয়ার বিষ্ঠা |
ড্রাই মেটার (%) | ৮৮.০ | ৮৮.০ |
ক্রুড প্রোটিন (%) | ২৪.০ | ২২.০ |
ইউরিক এসিড সিপি (%) | ৬০.০ | ৬০ |
ফ্যাট (%) | ১.৫০ | ১.৫ |
ক্রুড ফাইবার (%) | ১.৫০ | ১৫ |
অ্যাশ (%) | ১৫.০ | ২৫ |
ক্যালসিয়াম (%) | ৩.৫০ | ৮ |
ফসফরাস (%) | ১.৫০ | ২ |
কপার (%) | ০.০০৫ | ০.০০৫ |
সিলিকা (%) | ০.৫০ | ০.৫০ |
সোডিয়াম (%) | ০.৫০ | ০.৫০ |
কার্যক্রমটি বাস্তবায়নের জন্য ১০ লিটার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ১৮টি বালতি নেয়া হয়। প্রতিদিন ১ কেজি পরিমাণ পোলট্রি বিষ্ঠা প্রতিটি বালতিতে রাখা হয়। প্রতিটি বালতিতে সংরক্ষিত বিষ্ঠা ২৩ ঘণ্টা অ্যারোবিক এবং ১ ঘণ্টা অ্যানেরোবিক ফার্মেন্টেশনে করা হয়। প্রতিদিন একবার করে বিভিন্ন ডোজের ট্রাইকোডার্মা মিশ্রণ নির্ধারিত বালতিতে স্প্রে করা হয়। অতঃপর দিনে একবার করে গ্যাস পরিমাপ করা হয় এবং ৭ দিন ধারাবাহিকভাবে নিরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষা শেষে, তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায় প্রতি লিটার পানিতে ৬ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা পাউডার পানিতে দ্রবীভূত করে লিটারে স্প্রে করলে তাৎপর্যপূর্ণভাবে গ্যাস উৎপাদন কমে এবং গন্ধ নিবারণ হয়।
এ ছাড়া, আরও অনেকগুলো পন্থা অবলম্বন করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিগণ পোলট্রি শেডে গন্ধ উৎপাদনকারী গ্যাসের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ক) পোলট্রি রেশনে সালফারযুক্ত অ্যামাইনো এসিডের পরিমাণ কমিয়ে পোলট্রি লিটারে গন্ধ উৎপাদনকারী গ্যাসের (মিথাইল মারক্যাপটান, হাইড্রোজেন সালফাইড) পরিমাণ কমানো যায়। খ) পোলট্রি রেশনে ফাইটেজ এনজাইম ব্যবহারের মাধ্যমে লিটারে গন্ধ উৎপাদনকারী গ্যাসের পরিমাণ কমানো যায়। গ) মুরগির পুষ্টির প্রকৃত চাহিদা নিরূপণ করে, উচ্চ হজমযোগ্য খাদ্য উপকরণ ব্যবহার করে ও ফেজ ফিডিং (বয়স অনুসারে পুষ্টির চাহিদা নিরূপণ করে) রেশন তৈরি করলে পুষ্টি উপাদানগুলো কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হবে, এতে গন্ধ উৎপাদনকারী গ্যাসের পরিমাণ কম হবে।
ঘ) খাদ্য প্রস্তুতের বিভিন্ন আকারের (পিলেট, ক্রাম্বল, ম্যাস) মধ্যে পিলেট আকারে খাদ্য সরবরাহ করলে মুরগির হজমশক্তি বৃদ্ধি পায় ফলে বিষ্ঠার আর্দ্রতা কম হয়, তাই গন্ধ উৎপাদনকারী গ্যাসের পরিমাণ কম হবে।
ঙ) এ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পোলট্রির বিষ্ঠা হতে উৎপাদিত গ্যাসের দুর্গন্ধ দূরীকরণে সাম্প্রতিক সময়ে activated carbon, silica gel, Zeolite, Aqua ইত্যাদি ব্যবহৃত হচ্ছে। লিটারে আর্দ্রতা শোষণ করে ভোলাটাইল অরগানিক কম্পাউন্ড উৎপাদন হ্রাস করে ফলে দুর্গন্ধ কম হয়।
চ) পোলট্রি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উত্তম চর্চার মাধ্যমে কম্পোস্ট সার তৈরি, বায়োগ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে দুর্গন্ধ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
ছ) পোলট্রি শেডে বিশেষ করে লেয়ার শেডে লিটার পরিষ্কারের পর শেডের ভেতরে ও লিটার ফেলার গর্তে চুন ছিটিয়ে গন্ধ কমানো যাবে।
কাজেই এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণা সম্পন্ন হলে গন্ধ দূরীকরণের সমন্বিত মডেল উদ্ভাবন ও প্রতিকার করা যাবে, যা এই শিল্পের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে। ফলে একদিকে যেমন পোলট্রি ফার্মের গন্ধ নিবারণের পাশাপাশি উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে, অন্য দিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে।
১সাবেক মহাপরিচালক, ২-৫ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ৩-৪বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, পোলট্রি উৎপাদন গবেষণা বিভাগ, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষনা ইনস্টিটিউট, সাভার, ঢাকা-১৩৪১ ই-মেইলঃ mdrakibulhassan@gmail.com; মোবাইল ঃ ০১৭১২৫১১১৮৩
মৎস্য খাতে অর্জিত সাফল্য ও টেকসই উন্নয়ন
ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ
মাছ বাঙালি জাতির সংস্কৃতি ও কৃষ্টির অংশ। দেশের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর পুষ্টি চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্যবিমোচন ও রপ্তানি আয়ে মৎস্য খাতের অবদান আজ সর্বজনস্বীকৃত। মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে মৎস্য খাতের অবদান ৩.৫০ শতাংশ এবং কৃষিজ জিডিপিতে ২৫.৭২ শতাংশ। আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যে প্রাণিজ আমিষের প্রায় ৬০ শতাংশ আসে মাছ থেকে। দেশের প্রায় ১৪ লাখ নারীসহ মোট জনসংখ্যার ১২ শতাংশেরও বেশি অর্থাৎ প্রায় ২ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মৎস্য খাতের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করছে। দেশের মানুষ গড়ে জনপ্রতি প্রতিদিন ৬০ গ্রাম চাহিদার বিপরীতে ৬২.৫৮ গ্রাম মাছ বর্তমানে গ্রহণ করছে।
মহান স্বাধীনতা দিবস মুজিববর্ষে ৫০তম বছরে পদার্পণ করছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকালে মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সাফল্য আজ বিশ্ব পরিমণ্ডলে স্বীকৃত ও সমাদৃত। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে উৎপাদিত মোট মাছের পরিমাণ ৪৩.৮৪ লাখ মেট্রিক টন, যা ২০০৮-০৯ সালের মোট উৎপাদনের চেয়ে ৬২.৩১ শতাংশের বেশি। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য মতে, (২০২০) মিঠাপানির মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশের অবস্থান ২য়, অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে বিশ্বে ৩য় এবং বদ্ধ জলাশয়ে চাষকৃত মাছ উৎপাদনে ৫ম। ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ১ম ও তেলাপিয়া উৎপাদনে ৪র্থ। দেশ এখন মাছে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণই না, উদ্বৃত্তও বটে। এ অর্জন জাতির জন্য গৌরব এবং অহংকারের।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে গণভবন লেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মাছের পোনা অবমুক্ত করে মৎস্য চাষকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দেয়ার শুভ সূচনা করেছিলেন। তৎকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধু ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন ‘মাছ হবে এ দেশের দ্বিতীয় প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী সম্পদ।’ জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে মৎস্যবান্ধব বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের ফলে বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন আজ সফল হয়েছে। দেশ মাছে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ায় গ্রামের সাধারণ মানুষ স্বল্পমূল্যে মাছ ও পুষ্টি পাচ্ছে। গত এক দশকে মৎস্য খাতে জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৬.২৮ শতাংশ। মৎস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে বর্তমান প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ২০৪১ সালে দেশে মাছের উৎপাদন দাঁড়াবে ৯০ লাখ মেট্রিক টন।
আমাদের জলাশয়ে প্রায় ৮ শত প্রজাতির মাছ ও চিংড়ি রয়েছে। এর মধ্যে ২৬০ প্রজাতির মিঠাপানির মাছ এবং ৪৭৫ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ। আইইউসিএন (২০১৫) এর তথ্য মতে, আমাদের দেশে ২৬০ প্রজাতির মিঠাপানির মাছের মধ্যে ৬৪ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তপ্রায়। আমাদের ঐতিহ্যের অংশ মিঠাপানির এসব সুস্বাদু মাছকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষার্থে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট গবেষণা পরিচালনা করে এ যাবত ২৪টি বিপন্ন প্রজাতির মাছের পোনা উৎপাদন ও চাষাবাদ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টটিউট বর্তমানে কাকিলা, কাজলী, বাতাসী, রানী, ঢেলা ইত্যাদি আরো ১০ প্রজাতির দেশীয় মাছের প্রজনন ও চাষাবাদ নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করছে। এসব মাছও অদূর ভবিষ্যতে চাষের আওতায় আনা সম্ভব হবে। অপরদিকে দেশে প্রথমবারের মতো ময়মনসিংহস্থ বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘দেশীয় মাছের লাইভ জিন ব্যাংক।’ লাইভ জিন ব্যাংকে ইতোমধ্যে ৮৫ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় মাছ সংরক্ষণ করা হয়েছে। দেশীয় মাছ সুরক্ষা এবং গবেষণায় উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট কেআইবি কৃষি পদক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক সম্মাননা পদকসহ একুশে পদক ২০২০ অর্জন করেছে। নদ-নদী ও হাওড় বিলে দেশীয় মাছের পোনা অবমুক্তি ও অভয়াশ্রম (৪২৬টি) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেও বিপন্ন প্রজাতির মাছ সুরক্ষায় মৎস্য অধিদপ্তর কাজ করছে।
আমাদের মাছের মোট উৎপাদনের শতকরা ১৬ ভাগ (৬.৫৯ লাখ মেট্রিক টন) সামুদ্রিক মাছের অবদান। বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী ও প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিমি.এলাকায় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় সমুদ্রে স্থায়ীত্বশীল মৎস্য আহরণের নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। অপরদিকে সামুদ্রিক মাছের অবাধ প্রজনন, সংরক্ষণ ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ২০১৫ সাল থেকে সমুদ্রে বছরে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সকল প্রকার মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফলে সমুদ্রে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ১২-১৫%। সমুদ্রের মৎস্যসম্পদের মজুদ নিরূপণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে মৎস্য অধিদপ্তরের আওতায় বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে সামগ্রিকভাবে দেশে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ সামুদ্রিক মাছের জীববৈচিত্র্যতা সুরক্ষিত হবে।
ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল। বিশ্বে ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশেই ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে; বর্তমানে ১২৫টি উপজেলার নদ-নদীতে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণালব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে ইলিশ ব্যবস্থাপনা কৌশল মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সরাসরি তত্ত্বাবধানে মৎস্য অধিদপ্তর, প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং প্রতিরক্ষা বাহিনী কর্তৃক সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করায় সাম্প্রতিককালে দেশে ইলিশের বিস্তৃতি ও উৎপাদন বেড়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০০৮-২০০৯ সালে দেশে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৯২ হাজার মেট্রিক টন, যা বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৮-১৯ সালে ৫ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ গত ১২ বছরে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৮৩ শতাংশ। গত ২০১৬ সালে ইলিশ বাংলাদেশের ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ইলিশের স্বত্ব এখন শুধুই বাংলাদেশের। এটা জাতির জন্য গৌরবের।
প্রচলিত মৎস্য প্রজাতির পাশাপাশি বাণিজ্যিক গুরুত্বসম্পন্ন অপ্রচলিত মৎস্যসম্পদ যেমন কুচিয়া, শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়া, সী-উইড, ওয়েস্টার ইত্যাদি সংরক্ষণ ও চাষাবাদ কৌশল উন্নয়নে বর্তমান সরকার বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। আমাদের খাদ্য তালিকায় এসব অপ্রচলিত প্রজাতি না থাকলেও বিদেশে এদের প্রচুর চাহিদা ও বাজারমূল্য রয়েছে। এসব পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেছেন। গবেষণায় কক্সবাজার উপক‚লে এ পর্যন্ত ১৩৮ প্রজাতির সীউইডের সন্ধান পাওয়া গেছে; এর মধ্যে ১৮ প্রজাতির সীউইড বাণিজ্যিক গুরুত্বসম্পন্ন। অতঃপর, বাণিজ্যিক গুরুত্বসম্পন্ন ৩ প্রজাতির (Sargassum oligocystum, Caularpa racemosa ও Hypnea spp.) সীউইডের চাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। উদ্ভাবিত সীউইড চাষ প্রযুক্তি সম্প্রসারণের জন্য ইতোমধ্যে মৎস্য অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সীউইড অদূর ভবিষ্যতে একটি অন্যতম রপ্তানিপণ্য হিসেবে সুনীল অর্থনীতিতে অবদান রাখবে বলে আশা করা যায়। বর্তমানে ভেটকি, চিত্রা ও দাতিনা মাছ এবং হরিণা ও চাকা চিংড়ির প্রজনন ও চাষাবাদের উপর গবেষণা পরিচালনা করা হচ্ছে। বাগদা চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশে এসপিএফ পোনা উৎপাদন জোরদার করা হয়েছে। চাষিদেরকে উত্তম চাষ ব্যবস্থাপনার আওতায় চিংড়ির ক্লাস্টার ফার্মিংয়ের ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।
দেশের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর পুষ্টি চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির বর্তমান ধারা অব্যাহত রাখতে ৩৯ লাখ হেক্টরের অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত জলাশয় যেমন নদ-নদী, প্লাবনভ‚মি, হাওড়-বাওড় ও বিলকে বিজ্ঞানভিত্তিক চাষ ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে হবে। মৎস্য অধিদপ্তরের আওতায় হাওড়ের মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে সম্প্রতি ১টি উন্নয়ন প্রকল্প একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে।
প্রকৃত মৎস্যজীবী/জেলেদের প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মৎস্য অধিদপ্তর কর্তর্ৃৃক ইতোমধ্যে ১৬ লাখ ২০ হাজার মৎস্যজীবী/জেলেদের নিবন্ধন সম্পন্ন করা হয়েছে এবং ১৪ লাখ ২০ হাজার জেলের মাঝে পরিচয়পত্র বিতরণ করা হয়েছে। জেলেদের জীবনমান উন্নয়নে সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ বছর ইলিশসহ সকল প্রকার মাছ ধরা নিষিদ্ধকালীন সময়ে ভিজিএফ সহায়তার আওতায় দেশের মোট ৩৬টি জেলার ১৫২ উপজেলার ৫ লাখ ২৮ হাজার ৩৪২টি পরিবারকে ২০ কেজি হারে মোট ১০৫৬৬.৮৪ মেট্রিক টন চাল প্রদান করা হয়েছে। তা ছাড়া করোনাকালে চাষিদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা প্রদান করা হচ্ছে।
মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং প্রতিযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকার লক্ষ্যে বাংলাদেশ বর্তমানে ৫০টি দেশে চিংড়ি ও মৎস্য পণ্য রপ্তানি করছে। বৈশ্বিক আর্থিক মন্দা থাকা সত্তে¡ও ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রায় ৭১ হাজার মেট্রিক টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করে দেশে ৩৯৮৫ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে। মানসম্মত মৎস্য ও মৎস্যপণ্য রপ্তানির জন্য মৎস্য অধিদপ্তরের আওতায় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় আন্তর্জাতিক মানের ৩টি মান নিয়ন্ত্রণ গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
দৈনন্দিন জীবনে মানুষের ব্যস্ততা বাড়ায় এবং নারী কর্মজীবীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সরাসরি খাওয়া উপযোগী কিংবা স্বল্প পরিশ্রমে খাবার উপযোগী মানসম্মত মূল্য সংযোজিত মৎস্য পণ্য উৎপাদন এখন সময়ের দাবী। অপরদিকে, চাষিরা সাম্প্রতিককালে প্রায়ই বলেন, তারা মাছের ভাল মূল্য পাচ্ছেন না। এ অবস্থা হতে উত্তরণের লক্ষ্যে ও আমাদের মাছ থেকে মূল্য সংযোজিত পণ্য (Value added product) তৈরি করতে হবে। এতে চাষিরা আর্থিকভাবে অধিক লাভবান হবেন। বর্তমানে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এ লক্ষ্যে কাজ করছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব শ ম রেজাউল করিম এমপি মৎস্য খাতে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরির নির্দেশনা প্রদান করছেন।
মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আমাদের যেমন আত্মতৃপ্তির সুযোগ আছে, ঠিক তেমনি আমাদের সামনে রয়েছে বড় কয়েকটি চ্যালেঞ্জ। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন ও মাছের আবাসস্থলের অবক্ষয়। তা ছাড়া দেশে মাছের চাষাবাদ বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের আরেকটি প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে চাষাবাদে মানসম্পন্ন উন্নত জাতের মাছের পোনা এবং স্বল্প মূল্যের মৎস্য খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করা। এ জন্য দেশের ৯ শতাধিক হ্যাচারিতে ভালো মানের পোনা উৎপাদনের জন্য উন্নত জাতের ব্রুড মাছের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বাঁচাতে হবে আমাদের হালদা নদীকে-যেখানে রুইজাতীয় মাছ প্রাকৃতিকভাবে ডিম ছাড়ে। আনন্দের বিষয় যে, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে জাতীয় উদযাপন কমিটি কর্তৃক হালদা নদীকে ‘বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ’ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে হালদা নদী জাতীয়ভাবে বিশেষ গুরুত্ব ও মর্যাদা পাবে; সুরক্ষিত হবে হালদা নদীর পরিবেশ ও নিষিক্ত ডিম।
মহাপরিচালক, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, ফোন-০৯১৬৫৮৭৪, ই- মেইল : dgbfri@gmail.com
বঙ্গবন্ধু : তোমার স্বপ্নের সোনার বাংলা
আবু হেনা ইকবাল আহমেদ
ক] বাংলার নরম পলল ভ‚মির রঙ
তোমার শরীরে মিলেমিশে একাকার
বিশাল নদীর বহমান স্রোত এবং
সুউচ্চ পাহাড়ে গড়া রক্ত মাংস হাড়।
টেকনাফ থেকে উত্তরের তেঁতুলিয়া
তোমার কথায় জন্ম দেয় অগ্নিগিরি
ফুটন্ত হৃদয়ে ফুঁসে দুরন্ত দরিয়া
শেষতক রচে স্বদেশে ওঠার সিঁড়ি।
তোমার স্বপ্নের সোনার বাংলার কৃষক
কানপেতে শুনে প্রাণখোলা কণ্ঠস্বর
ঘাটতির দেশ করে তোলে স্বনির্ভর।
তুমি বলেছিলে দেশটাকে ভালোবাসি
আমাদের কাঁধে আজ সে দেশ গড়ার
যে স্বপ্ন লালিত বুকে আজন্ম তোমার ।
খ] সোনার বাংলায় কৃষান স্বীয় প্রান্তরে
পরম আদরে বুনে শস্যে কারুকাজ
তার মাঝে তুমি জাগাও মুখের ভাঁজ
দুরন্ত বাতাসে দোল খাও প্রাণভরে।
নীলাকাশ ছুঁয়ে বয়ে চলা নদী জলে
সারি সারি নাও ঢেউ তুলে নেচে যায়
মেঘ রোদ জোৎস্না সেই সাথে দোল খায়
যার ব্যথা দেখে চোখ করো ছলছলে।
বাংলার উর্বরা সোঁদামাটি বনস্থলে
পাহাড়ি ঝর্ণার মোহনীয় কলতানে
আউল বাউল পাখিদের গানে গানে
জারুল পলাশে ভাসমান মেঘদলে-
তোমার স্বপ্নের বাংলাদেশে দেখা দাও
ওতে প্রেরণার মন্ত্র পাই আমরাও।
পাটে বাংলাদেশ
ড. খান মো: মনিরুজ্জামান
সোনালি আঁশের দেশ আমাদের বাংলাদেশ,
চাষির স্বপ্নধরার জাদু পাট পরিপাট অশেষ।
আমাদের ভ‚স্বর্গে মাটি চিরে ফলে সোনাপাট,
বাংলার চাষি মুখে হাসি দেশ প্রেমিক বিরাট।
সোনালি আঁশের সোনারঙে চাষির হাসাহাসি,
পাটগুণে পরিপাট বিরাট এ ভালোবাসাবাসি।
স্বপ্ন সুখের উল্লাসে পাট বিলাসী জীবন সুখ,
এই আঁশের গর্বেই ভরে ওঠে আমাদের বুক।
রঙতুলির স্বপ্নাচোড়ে সোনালি আঁশের স্বপন,
জীবনের পরতে বসন্ত শরতে বাসনা গোপন।
এই ঐতিহ্য পাটে একদিন মোদের চলা বলা,
পাট আমাদের বিজ্ঞান, আমাদের শিল্প কলা।
এই সোনা আঁশে বিভোর মোদের জীবন সার,
আমরা বাঙালি, সোনাপাট মোদের অহংকার।
সোনালি আঁশে মিশে সংসারের মিতালী মঞ্চে,
জীবন সোহাগী সরোজ সরোবর ফুল মালঞ্চে।
বিশ^ পাট দিবসে পাটপ্রিয় সবার অঙ্গিকার,
বাড়াতে হবে পাটের দেশি ও বিদেশি বাজার।
পাট শিল্পকলার বহুমুখী চয়নে সিদ্ধ মঞ্চায়ন,
বিকল্পের বিকল্প সৃজনে করবো মনোনিবেশন।
¯িœগ্ধ স্বচ্ছ সকাল অংকে ফিরে পাট পরিমল,
শোভা সুন্দরে মুজিব বর্ষে ফুটে উঠুক শতদল।
সোনালী আঁশের সোনা রঙের হোক ছড়াছড়ি,
সেদিন শুধব ঋণ করে পাট পণ্যের গড়াগড়ি।
এক পশলা বৃষ্টি তারপর এক টুকরো রোদ্দুর,
পাটখ্যাত তাই ঢাকা, মোমেনশাহী, ফরিদপুর।
রোঁমা রোলা জ্ঞানে শিয়ালের বিয়ের পরিবেশ,
পাট উৎপাদনে সবিশেষ মোদের বাংলাদেশ।
স্বর্ণসূত্রের সোনালি যুগের নতুনত্ব সৃষ্টি জ্ঞানে,
পাটের জীনম রহস্যেই জীবনের নিগূঢ় মানে।
যুগের বিশ্বায়নে বাংলাদেশের পাট পারিজাত,
পাটে বাঙালি, বাঙালির পাটে বিশ্ব বাজিমাত।
১কৃষিবিদ পরিচালক (অব.), বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সী, কৃষি মন্ত্রণালয়। মোবা : ০১৬১৪৪৪৬১১১, ই- মেইল : ahiqbal.ahmed@yahoo.com ঠিকানা: কলমিলতা # ৪, এলেনবাড়ি গভ. অফিসারর্স কোয়ার্টার্স, তেজগাঁ, ঢাকা-১২১৫। ২জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার, ডিএই, ঝিনাইদহ, মোবা: ০১৭১২৮২২৭৪৯
প্রশ্নোত্তর
কৃষিবিদ মো. তৌফিক আরেফীন
কৃষি বিষয়ক
নিরাপদ ফসল উৎপাদনের জন্য আপনার ফসলের ক্ষতিকারক পোকা ও রোগ দমনে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করুন।
মোঃ নেছার উদ্দীন, গ্রাম: লক্ষীরপাড়, উপজেলা: বিশ্বম্বপুর, জেলা : সুনামগঞ্জ
প্রশ্ন: আমের পাতা কালো রঙ হয় এবং ফুল শুকিয়ে যায়। কেন এমনটি হয়। এ বিষয়ে পরামর্শ দিবেন।
উত্তর : আম গাছে হপার পোকার আক্রমণ হলে এ সমস্যাটি হয়ে থাকে। হপার পোকা আমের কচি অংশ, মুকুল থেকে রস চুষে খায়। মুকুলের রস চুষে খাওয়ার ফলে এ পোকা প্রচুর পরিমাণে মধুরস ছাড়ে ফলে শুঁটি মোল্ড ছত্রাক আক্রমণ করে আম পাতা কালো বর্ণ করে থাকে। এজন্য বাগান পরিষ্কার রাখা। আম বাগানে ছায়া বেশি হলে ঘন গাছসমূহ ছাটাই করে রোদ ঢুকানোর ব্যবস্থা করা দরকার। আমের মুকুল এসেছে কিন্তু ফোটার আগেই এবং আম মটর দানা হলে সে সময়ে সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের রিপকর্ড বা সিমবুশ বা ফেনম ১ মিলি ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে সঠিক নিয়মে স্প্রে করা। এসব ব্যবস্থা নিলে আপনি উপকার পাবেন।
মোঃ রহমত আলী, গ্রাম : নারায়ণপুর, উপজেলা : কেশবপুর, জেলা : যশোর
প্রশ্ন : ধান গাছের বাকানী রোগ দমন সর্ম্পকে জানাবেন।
উত্তর : ধান গাছের এ রোগটি ছত্রাকজনিত। এ রোগ হলে ধান গাছ আশেপাশের ধানগাছের তুলনায় প্রায় ২ থেকে ৩ গুণ বেশি লম্বা, দুর্বল ও চিকন হয়। অনেক সময় কাণ্ডের গিঁট থেকে অস্থানিক শিকড় বের হয়। আক্রান্ত গাছে কোন ফলন হয় না। আউশ মৌসুমে এ রোগটি বেশি হয়। এ সমস্যা সমাধানে ব্রি ধান৪৩, ব্রি ধান৪৪, ব্রি ধান৪৫ চাষ করা দরকার। এছাড়া বীজ শোধন আরেকটি উপায়। এ জন্য ছত্রাকনাশক ব্যাভিস্টিন বা নেটিভো ৩ গ্রাম হারে ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে একরাত ভিজিয়ে বীজ শোধন করে ব্যবহার করা। তাছাড়া আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলা। বারবার একই জাতের ধানের চাষ না করা অথবা অন্য ফসলের চাষ করা। সুষম মাত্রার সার ব্যবহার করাও প্রয়োজন। এসব ব্যবস্থা নিলে আশা করি উপকার পাবেন।
মোঃ আক্কাছ আলী, গ্রাম: কেরাদারি, উপজেলা : রাজারহাট, জেলা : কুড়িগ্রাম
প্রশ্ন : সুপারির পাতায় বাদামি দাগ পড়ে। পরবর্তীতে পাতা বাদামি রঙ ধারণ করে মারা যায়। এ রোগের প্রতিকার কী ?
উত্তর : এ রোগটি ছত্রাকের আক্রমণে হয়ে থাকে এবং রোগের নাম সুপারি পাতার ব্লাইট। রোগ প্রতিরোধে গাছ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি সুষম সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন। এ ছাড়া রোগ যাতে না হয় সেজন্য কপার অক্সিক্লোরাইড গ্রুপের যেমন বিøটক্স ৪ গ্রাম বা কার্বেনডাজিম গ্রুপের এমকোজিম ১ গ্রাম বা প্রপিকোনাজল গ্রুপের টিল্ট ০.৫ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে সঠিক নিয়মে স্প্রে করা। আর যদি কোনো কারণে সুপারি পাতা রোগাক্রান্ত হয়ে যায় তবে উল্লেখিত ছত্রাকনাশক ১২ থেকে ১৫ দিন অন্তর অন্তর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে। আশা করি উপকার পাবেন।
মোঃ ইছাহাক আলী, গ্রাম : সাকোয়া উপজেলা : বোদা, জেলা: পঞ্চগড়
প্রশ্ন : আখের বীজ পচে যায়। কী করব ?
উত্তর : আখের বীজ পচা একটি মারাত্মক রোগ। বীজ পচা রোগটি ছত্রাক দ্বারা হয়ে থাকে। এ রোগের কারণে আখের বীজ পচে যায় এতে করে বীজ গজানোর হার কমে যায়। এ কারণে গাছের সংখ্যা ও আখের সংখ্যা কম হয়। ফলনও মারাত্মকভাবে কমে যায়। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে রোগমুক্ত আখ ক্ষেতের বীজ ব্যবহার করা দরকার। রোগ প্রতিরোধী জাতের আখ চাষ করা। আখ রোপণের আগে বীজ খন্ড কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশকের দ্রবণে (১ঃ১০০০) ৩০ মিনিট ডুবিয়ে শোধন করে নেয়া। অধিক ভিজা ও অধিক শুকনা মাটিতে ও ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় আখ রোপণ করা যাবে না। যে সকল এলাকায় এ রোগ খুব বেশি দেখা যায় সেখানে বীজতলায় চারা তৈরি করে রোপা পদ্ধতিতে চাষ করা প্রয়োজন। আশা করি এসব ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আপনি উপকৃত হবেন।
মৎস্য বিষয়ক
মোঃ আব্দুল্লাহেল কাফি, গ্রাম : বন্দুলিতলা, উপজেলা : চেীগাছা, জেলা : যশোর
প্রশ্ন : চিংড়ির গায়ে শেওলা সমস্যা কী করবো ?
উত্তর : পানি পরিবর্তন ও পানির গভীরতা বাড়াতে হবে। চিংড়ির মজুদ হার কমাতে হবে। সার ও খাদ্য প্রয়োগের মাত্রা সীমিত রাখতে হবে। প্রতি শতাংশে ১ থেকে ১.৫ কেজি হারে ডলোমাইট চুন প্রয়োগ করতে হবে এবং ০.৫ থেকে ১০ পিপিএম হারে ব্লিচিং পাউডার প্রয়োগ করতে হবে।
মোঃ সোহাগ আহমেদ, গ্রাম : রঙসিন্দপুর, উপজেলা : কমলাকান্দা, জেলা : নেত্রকোনা
প্রশ্ন : পুকুরের পানি ঘোলা এ অবস্থায় কি ব্যবহার করবো ?
উত্তর : শতাংশে ৫০০ গ্রাম পোড়াচুন ব্যবহার করতে হবে অথবা শতাংশে ১ থেকে ১.৫ কেজি জিপসাম সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। ধানের শুকনো খড় ছোট ছোট আঁটি বেঁধে শতাংশে ১ থেকে ১.৫ কেজি প্রয়োগ করতে হবে এবং ২ থেকে ৩ দিন পর তুলে ফেলতে হবে অথবা শতাংশে ২৫০ গ্রাম ফিটকিরি ব্যবহার করা যেতে পারে। এসব ব্যবস্থা নিলে আপনি উপকার পাবেন।
প্রাণিসম্পদ বিষয়ক
মোঃ রাজু আহমেদ, গ্রাম : ফটুপুর, উপজেলা : আতওয়ারী, জেলা : পঞ্চগড়
প্রশ্ন : আমার গরুর পেট ফুলে গিয়েছে। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। জাবরকাটা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কী করবো ?
উত্তর : এ জাতীয় সমস্যা সমাধানে নো ব্লেট বা বেøাট স্টপ বা এন্টি ব্লোট এ জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন। আশা করি উপকার পাবেন।
মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ, গ্রাম : পূর্বভীষণদই, উপজেলা : হাতিবান্ধা, জেলা : লালমনিরহাট
প্রশ্ন : আমার মুরগির বয়স ৮ মাস। ডিম পাড়ছে না। কী করবো ?
উত্তর : মুরগিকে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ই ও সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে। ক্যালসিয়াম জাতীয় ওষুধ হিসাবে ক্যাল পি বা ইক্যাল পি বা ক্যালফস প্লাস এ জাতীয় ওষুধ প্রতি লিটারে ১ গ্রাম করে ব্যবহার করতে পারেন। তাছাড়া আপনি ই সেল বা ওবেই ভেট এ ওষুধগুলো প্রতি লিটারে ১ মিলি করে মিশিয়ে খাওয়াবেন ৩ থেকে ৫ দিন।
(মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ক প্রশ্ন কৃষি কল সেন্টার হতে প্রাপ্ত)
উপপ্রধান তথ্য অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫, ফোন নং: ০২-৫৫০২৮৪০০, ই মেইল : taufiquedae25@gmail.com
বৈশাখ মাসের কৃষি (১৪ এপ্রিল- ১৩ মে)
কৃষিবিদ ফেরদৌসী বেগম
বৈশাখ মাস। নতুন বছরের সূচনা। এ মাসে চলতে থাকে আমাদের ঐতিহ্যবাহী মেলা, পার্বণ, উৎসব, আদর, আপ্যায়ন। পুরনো বছরের ব্যর্থতাগুলো ঝেড়ে ফেলে নতুন দিনের প্রত্যাশায় কৃষক ফিরে তাকায় দিগন্তের মাঠে। নতুন বছরের সবাইকে শুভেচ্ছা। সেই সাথে আসুন এক পলকে জেনে নেই বৈশাখে কৃষির করণীয় দিকগুলো।
বোরো ধান
ইউরিয়া সারের শেষ কিস্তি উপরি প্রয়োগ করতে হবে। নাবি বোরো ধানের থোড় আসার সময় পানির অভাব না হয় তাই আগে থেকেই সম্পূরক সেচের জন্য মাঠের এক কোণে মিনি পুকুর তৈরি করতে হবে। ধানের দানা শক্ত হলে জমি থেকে পানি বের করে দিতে হবে। এ মাসে বোরো ধানে মাজরা পোকা, বাদামি গাছফড়িং, সবুজ পাতাফড়িং, গান্ধিপোকা, লেদাপোকা, ছাতরাপোকা, পাতা মোড়ানো পোকার এবং এ সময় ধানক্ষেতে উফরা, বাদামি দাগ রোগ, ব্লাস্ট, পাতাপোড়া ও টুংরো রোগের আক্রমণ হতে পারে। বালাই দমনের জন্য নিয়মিত ক্ষেত পরিদর্শণ করতে হবে এবং সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে হবে। বালাই আক্রমণ প্রতিহত করা না গেলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে সঠিক বালাইনাশক, সঠিক সময়ে, সঠিক মাত্রায়, সঠিক নিয়মে প্রয়োগ করতে হবে। এ মাসে শিলাবৃষ্টি হতে পারে, বোরো ধানের ৮০% পাকলে তাড়াতাড়ি কেটে ফেলতে হবে।
আউশ ধান
আউশ ধানের জমি তৈরি ও বীজ বপনের সময় এখন। বোনা আউশ উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি এবং রোপা আউশ বন্যামুক্ত আংশিক সেচনির্ভর মাঝারি উঁচু ও মাঝারি নিম্ন জমি আবাদের জন্য নির্বাচন করতে হবে। জমি তৈরির শেষ চাষের সময় শতাংশপ্রতি ৬০০ গ্রাম ইউরিয়া, ২০০ গ্রাম টিএসপি ও ৩০০ গ্রাম এমপি সার প্রয়োগ করতে হবে। বৃষ্টিনির্ভর বোনা আউশ এলাকায় ইউরিয়া দুই কিস্তিতে প্রয়োগ করত হবে। প্রথম কিস্তি শেষ চাষের সময় এবং দ্বিতীয় কিস্তি ধান বপনের ৩০-৪০ দিন পর। জমিতে গন্ধক এবং দস্তার অভাব থাকলে শতাংশ প্রতি ১৩৫ গ্রাম জিপসাম ও ২০ গ্রাম জিঙ্ক সালফেট প্রয়োগ করতে হবে। আউশের উন্নত জাত হিসাবে বিআর২০, বিআর২১, বিআর২৪, ব্রি ধান৪২, ব্রি ধান৪৩ ও ব্রি ধান৮৩ এবং রোপা হিসেবে বিআর২৬, ব্রি ধান২৭, ব্রি ধান৪৮, ব্রি ধান৮২, ব্রি ধান৮৫, ব্রি ধান৯৮ ও ব্রি হাইব্রিড ধান৭ । এ ছাড়াও খরাপ্রবণ বরেন্দ্র এলাকাসহ, পাহাড়ি এলাকার জমিতে বিনা ধান-১৯ চাষ করতে পারেন তবে বীজ প্রাপ্তির জন্য উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করতে হবে।
ভুট্টা (খরিফ)
খরিফ ভুট্টার বয়স ২০-২৫ দিন হলে ইউরিয়া সারের উপরি প্রয়োগ করতে হবে। মাটিতে রসের ঘাটতি থাকলে হালকা সেচ দিতে হবে। জমিতে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে এবং একই সাথে গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হবে।
পাট
বৈশাখ মাস তোষা পাটের বীজ বোনার উপযুক্ত সময়। বিজেআরআই তোষা-৭, ও-৩৮২০, ও-৭৯৫ ভালো জাত।
দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটিতে তোষা পাট ভালো হয়।
বীজ বপনের আগে প্রতি কেজি বীজ ৪ গ্রাম ভিটাভেক্স বা ১৫০ গ্রাম রসুন পিষে বীজের সাথে মিশিয়ে শুকিয়ে নিয়ে জমিতে সারিতে বা ছিটিয়ে বুনতে হবে। সারিতে বুনলে প্রতি শতাংশে ২৫-৩০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়। তবে ছিটিয়ে বুনলে ৩৫-৪০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়। ভালো ফলনের জন্য শতাংশপ্রতি ৮০০ গ্রাম ইউরিয়া, ২০০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম এমওপি সার শেষ চাষের সময় মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। জমিতে সালফার ও জিংকের অভাব থাকলে জমিতে সার দেয়ার সময় শতাংশপ্রতি ৪০০ গ্রাম জিপসাম ও ৫০ কেজি দস্তাসার দিতে হবে। শতাংশপ্রতি ২০ কেজি গোবর সার ব্যবহার করলে রাসায়নিক সারের পরিমাণ অনেক কম লাগে।
শাকসবজি
বসতবাড়ির বাগানে জমি তৈরি করে ডাঁটা, কলমিশাক, পুঁইশাক, করলা, ঢেঁড়স, বেগুন, পটোল চাষের উদ্যোগ নিতে হবে। মাদা তৈরি করে চিচিঙ্গা, ঝিঙা, ধুন্দুল, শসা, মিষ্টিকুমড়া, চাল কুমড়ার বীজ বুনে দিতে পারেন। আগের তৈরি করা চারা থাকলে ৩০/৩৫ দিনের সুস্থ সবল চারাও রোপণ করতে পারেন। লতানো সবজির জন্য মাচা তৈরি করে নিতে হবে। দৈহিক বৃদ্ধি যত বেশি হবে তার ফুল ও ফল ধারণক্ষমতা তত কমে যায়। সেজন্য গাছের বাড়বাড়তি বেশি হলে ১৫-২০ শতাংশ পাতা লতা কেটে দিতে হবে।
কুমড়াজাতীয় সব সবজিতে হাত পরাগায়ন বা কৃত্রিম পরাগায়ন অধিক ফলনে দারুণভাবে সহায়তা করে। গাছে ফুল ধরা শুরু হলে প্রতিদিন ভোরবেলা সদ্য ফোটা পুরুষ ফুল সংগ্রহ করে পাপড়িগুলো ফেলে দিয়ে পরাগমুন্ডটি স্ত্রী ফুলের গর্ভমুণ্ডের ঘষে হাতপরাগায়ন নিশ্চিত করলে ফলন অনেক বেড়ে যাবে। কুমড়াজাতীয় ফসলে মাছি পোকা দমনে জমিতে খুঁটি বসিয়ে খুঁটির মাথায় বিষটোপ ফাঁদ দিলে বেশ উপকার হয়। এছাড়া সেক্স ফেরোমন ব্যবহার করেও এ পোকার আক্রমণ রোধ করা যায়।
গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করতে চাইলে বারি টমেটো ৪, বারি টমেটো ৫, বারি টমেটো ৬, বারি টমেটো ১০, বারি হাইব্রিড টমেটো ৪, বারি হাইব্রিড টমেটো ৮ বা বিনা টমেটো ৩, বিনা টমেটো ৪-এর চাষ করতে পারেন। গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করতে হলে পলিথিনের ছাওনির ব্যবস্থা করতে হবে সে সাথে এ ফসলটি সফলভাবে চাষের জন্য টমেটোটোন নামক হরমোন প্রয়োগ করতে হবে। স্প্রেয়ারের সাহায্যে প্রতি লিটার পানিতে ২০ মিলি টমেটোটোন মিশিয়ে ফুল আসার পর ফুলের গায়ে ৫-৭ দিন পরপর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
গাছপালা
এ মাসে আমের মাছি পোকাসহ অন্যান্য পোকার জন্য সতর্ক থাকতে হবে। মাছি পোকা দমনের জন্য সবজি খেতে যে রকম বিষটোপ ব্যবহার করা হয় সে ধরনের বিষটোপ বেশ কার্যকর। ডিপটরেক্স, ডারসবান, ডেনকাভেপন সামান্য পরিমাণ দিলে উপকার পাওয়া যায়। এ সময় কাঁঠালের নরম পচা রোগ দেখা দেয়। এলাকায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব থাকলে ফলে রোগ দেখা দেয়ার আগেই ফলিকুর ০.০৫% হারে বা ইন্ডোফিল এম-৪৫ বা রিডোমিল এম জেড-৭৫ প্রতি লিটার পানিতে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৩ বার স্প্রে করতে হবে। বাড়ির আঙিনায় সুস্থ সবল, নারিকেল চারা উন্নত ও খাটো জাতের নারিকেল চারা এবং গ্রামের রাস্তার পাশে পরিকল্পিতভাবে খেজুর ও তালের চারা এখন লাগাতে পারেন। যত্ন, পরিচর্যা নিশ্চিত করতে পারলে ৩-৪ বছরেই গাছগুলো অনেক বড় হয়ে যাবে। বৃষ্টি হয়ে গেলে পুরানো বাঁশ ঝাড় পরিষ্কার করে মাটি ও কম্পোস্ট সার দিতে হবে এবং এখনই নতুন বাঁশ ঝাড় তৈরি করার কাজ হাতে নিতে হবে। যারা সামনের মৌসুমে গাছ লাগাতে চান তাদের এখনই জমি নির্বাচন, বাগানের নকশা প্রস্তুত এবং অন্যান্য প্রাথমিক কাজগুলো সেরে রাখতে হবে।
প্রাণিসম্পদ
ব্রুডার হাউজের শেডে মুরগির বাচ্চা তোলার সাথে সাথে পরিমাণ মতো ভিটামিন সি ও গøুকোজ খাওয়াতে হবে। অতিরিক্ত গরমে লেয়ার হাউসে শেডের চাল বা ছাদে তাপ বিকিরণ করতে পারে এমন সাদা, অ্যালুমিনিয়িাম রঙ এবং প্রয়োজনে পাইপ বা ঝর্ণার মাধ্যমে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। হাঁস-মুরগির রোগ প্রতিরোধে নিয়মিত ভ্যাকসিন বা টিকা দেওয়া জরুরি। সেজন্য পোলট্রি বিশেষজ্ঞের পরামর্শে উপযুক্ত টিকা প্রদানের পাশাপাশি পুষ্টি ও বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনার দিকে অধিকতর নজর দিতে হবে।
গোখাদ্যের জন্য নেপিয়ার, বাজরা, প্যারা, ভুট্টা, ইপিল ইপিলের চাষ করার ভালো সময় এখন। বাড়ির আশপাশে, পুকুর পাড়ে, রাস্তার ধারে, পতিত জায়গায় গোখাদ্যের চাষ করে লাভবান হওয়া যায়। গাভীকে ক্রিমির ওষুধ খাওয়ানো না হয়ে থাকলে প্রতি দুই মাস অন্তর পানি বা খাদ্যের সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। এ সময়ে গবাদি পশুর ক্ষুরারোগ ও ভাইরাস রোগ দমনে ভেটেরনারি চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত টিকা প্রদান করতে হবে।
মৎস্যসম্পদ
বৈশাখ মাস পুকুরে মাছ ছাড়ার উপযুক্ত সময়। ভালোভাবে পুকুর তৈরি অর্থাৎ কাদা সরিয়ে, চুন প্রয়োগ করে, আগাছা পরিষ্কার, পানি দেয়া, পানি পরীক্ষা, পরিমাণ মতো সার দেয়া, পুকুর পাড়ে নিত্য পাতা ঝরা গাছ ছাঁটাই বা কেটে ফেলাসহ অন্যান্য কাজগুলো করতে হবে। এরপর প্রতি শতকে মিশ্রচাষের জন্য ৩০-৪০টি ৪-৫ ইঞ্চি বড় সুস্থ সবল পোনা ছাড়তে হবে। পানির ৩ স্তরের কথা বিবেচনা করে তেলাপিয়া, সরপুঁটি, নাইলোটিকা, কার্পজাতীয় মাছ, রুই, কাতল, মৃগেল, কালো বাউস এবং সম্ভব হলে চিংড়ি পোনাও ছাড়া যাবে। পোনা সংগ্রহের সময় বিশ্বস্ত উৎস থেকে পোনা সংগ্রহ করতে হবে।
প্রিয় পাঠক, বৈশাখ আসে আমাদের জন্য নতুন আবাহনের সৌরভ নিয়ে। সাথে আঁচলে বেঁধে নিয়ে আসে কালবৈশাখীকে। কালবৈশাখীর থাবা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে কৃষিতে আগাম বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সুবিবেচিত লাগসই কৌশল আর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সব বাধা ডিঙিয়ে আমরা কৃষিকে নিয়ে যেতে পারব সমৃদ্ধির ভুবনে। আবারও কথা হবে আগামী মাসের কৃষিকথায়। আপনাদের সবার জন্য নতুন বছরের শুভ কামনা। য়
সম্পাদক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা, টেলিফোন : ০২৫৫০২৮৪০৪, ই-মেইল : editor@ais.gov.bd
বর্ষসূচি (বৈশাখ-চৈত্র)/১৪২৭ বঙ্গাব্দ
আয়েশা সুলতানা
বর্ষসূচি (বৈশাখ-চৈত্র)/১৪২৭ বঙ্গাব্দ
আয়েশা সুলতানা
বিষয় লেখক মাস পৃষ্ঠা
১. দানাদার (ধান/গম/ভুট্টা)
ফল আর্মিওয়ার্ম পোকা দমন ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি প্রফেসর ড. মু. আবুল কাসেম বৈশাখ-১৪২৭ ১৪
প্রফেসর ড. মো. ফারুক হাসান
কৃষিবিদ মো. আবু সায়েম
ধান উৎপাদনে সার সাশ্রয়ী প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া নূর উদ্দীন মাহমুদ জ্যৈষ্ঠ-১৪২৭ ০৮
প্রযুক্তি দিপালী রানী গুপ্তা
মোঃ তোফাজ্জল ইসলাম
আউশ ধানের আধুনিক জাত ও চাষাবাদ পদ্ধতি ড. এম. মনজুরুল আলম মন্ডল জ্যৈষ্ঠ-১৪২৭ ১০
রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের ব্যবহার উপযোগী চারা উৎপাদনের শারমিন ইসলাম জ্যৈষ্ঠ-১৪২৭ ১৬
কলাকৌশল ড. মো: দুররুল হুদা ড. মো: আনোয়ার হোসেন
ড. মো: গোলাম কিবরিয়া ভ‚ঞা
ড. মুহাম্মদ আব্দুর রহমান
আমন ধানের উৎপাদন বৃদ্ধিতে করণীয় ড. মো. শাহজাহান কবীর শ্রাবণ-১৪২৭ ০৩
বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় ফল আর্মিওয়ার্ম দমনে আধুনিক প্রযুক্তি ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান শাহ ভাদ্র-১৪২৭ ০৬
মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি জোগানে ভুট্টার উপযোগিতা ড. মোঃ এছরাইল হোসেন অগ্রহায়ণ-১৪২৭ ১৯
ড. মো: মুজাহিদ-ই-রহমান
বাঙালির নবান্ন উৎসবে সুগন্ধি চাল কৃষিবিদ ড. মো.আখতারুজ্জামান অগ্রহায়ণ-১৪২৭ ২১
লবণাক্ত এলাকায় ভুট্টা চাষ : ডিবলিং ও চারা রোপণ প্রযুক্তি কৃষিবিদ শচীন্দ্রনাথ বিশ^াস পৗষ-১৪২৭ ১৬
কৃষিবিদ অমরেন্দ্র নাথ বিশ^াস
ধান উৎপাদনে বোরো আবাদে করণীয় ড. মো. শাহজাহান কবীর মাঘ-১৪২৭ ০৩
কৃষিবিদ এম আব্দুল মোমিন
খাদ্য নিরাপত্তায় চার ফসলি শস্যবিন্যাস কৃষিবিদ মোঃ আব্দুল্লাহ-হিল-কাফি ফাল্গুন-১৪২৭ ১২
মুজিব শতবর্ষের উপহার উচ্চমাত্রার জিংকসমৃদ্ধ জাত ব্রি ধান১০০ কৃষিবিদ এম আব্দুল মোমিন চৈত্র-১৪২৭ ১৬
২. অর্থকরী ফসল
উফশী পাট রবি-১ এর উৎপাদন প্রযুক্তি মু. দেলোয়ার হোসেন সরকার বৈশাখ-১৪২৭ ১৬
আখ, চিনি ও গুড় শিল্পে বঙ্গবন্ধুর অবদান ড. মো. আমজাদ হোসেন ভাদ্র-১৪২৭ ০৫
ড. সমজিৎ কুমার পাল
কৃষিই সমৃদ্ধি : পাটবীজ সংরক্ষণ প্রযুক্তি কৃষিবিদ জান্নাতুল ফেরদৌস আশি^ন-১৪২৭ ২১
খাদ্য নিরাপত্তায় তুলা চাষের অবতরণিকা মোঃ মাহমুদুল হাসান কার্তিক -১৪২৭ ১৮
ড. মোঃ ফরিদ উদ্দিন
বাংলাদেশে কফি চাষের সম্ভাবনা ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব কৃষিবিদ কবির হোসেন অগ্রহায়ণ-১৪২৭ ১২
কৃষিবিদ সাবিনা ইয়াসমিন
নতুন রপ্তানি সম্ভাবনার ফসল কাজুবাদাম কৃষিবিদ ড. শামীম আহমেদ চৈত্র-১৪২৭ ২৪
সোনালী আঁশের সোনার দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ কৃষিবিদ মো: মুকুল মিয়া চৈত্র-১৪২৭ ২৬
৩. ডাল ও তেল ফসল
কাজু বাদাম সমৃদ্ধির হাতছানি কৃষিবিদ ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম শ্রাবণ-১৪২৭ ০৭
চীনাবাদামের আধুনিক উচ্চফলনশীল জাত ও প্রযুক্তি ড. এম. মনজুরুল আলম মন্ডল আশি^ন-১৪২৭ ১৯
মুজিববর্ষে সরিষার উৎপাদন বৃদ্ধির নতুন সম্ভাবনা : ড. মো. আব্দুল মালেক কার্তিক -১৪২৭ ২৬ শূন্য চাষ পদ্ধতি ড. মো. আজিজুল হক
৪.মসলা
বছরব্যাপী পিয়াজ সরবরাহে বারি পাতা পিয়াজ-১ ড. মো: আলাউদ্দিন খান পৌষ-১৪২৭ ১২
মো: মুশফিকুর রহমান
পেঁয়াজের সংরক্ষণ ক্ষমতা বৃদ্ধির কৌশল ড. মো: আলাউদ্দিন খান ফাল্গুন-১৪২৭ ০৮ মো: মুশফিকুর রহমান
৫. ফল
মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে আমের ফলন প্রাক্কলন ড. মো. সেলিম উদ্দীন জ্যৈষ্ঠ-১৪২৭ ০৬
ড. মো. শরফ উদ্দিন
শামীম আরা বেগম
বিষয় লেখক মাস পৃষ্ঠা
করোনা পরিস্থিতিতে ফলদ বৃক্ষ রোপণ ও নিরাপদ মৌসুমি ফল ড. মোঃ আবদুল মুঈদ আষাঢ়-১৪২৭(ফল) ০৩
বাংলাদেশে বছরব্যাপী ফল উৎপাদন কৌশল ড. মোঃ মেহেদী মাসুদ আষাঢ়-১৪২৭(ফল) ০৭
আম গাছের রিজুভেনাইজেশন বা উজ্জ্বীবিতকরণ প্রফেসর ড. এম. এ. রহিম আষাঢ়-১৪২৭(ফল) ০৯ ড. মো. শামছুল আলম
পুষ্টিকর ফল বৃক্ষ তালগাছ ড. মো. আমজাদ হোসেন আষাঢ়-১৪২৭(ফল) ১১
ড. সমজিৎকুমার পাল
কাভিড-১৯ : নগর কৃষির গুরুত্ব ও ফল চাষ অধ্যাপক এ এইচ. এম. সোলায়মান আষাঢ়-১৪২৭(ফল) ১৩
উন্নত জাতের ফলের চারা তৈরি ও ফল গ্রহণ কৃষিবিদ মো. কবির হোসেন
কৃষিবিদ সাবিনা ইয়াসমিন আষাঢ়-১৪২৭(ফল) ১৫
হাইড্রোপনিক্স পদ্ধতিতে নেটেড মেলন চাষাবাদ প্রযুক্তি ড. মো. আসাদুজ্জামান আষাঢ়-১৪২৭(ফল) ২১
কাঁচা আমের সংগ্রহোত্তর বহুমুখী ব্যবহার ড. মো: গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী আষাঢ়-১৪২৭(ফল) ২৩
ড. মো: মিয়ারুদ্দীন
সেকালের ঢাকা মনিপুরি ফার্ম : আনইসহ অপরিচিত সৈয়দ মোহাম্মদ সালেহ উদ্দিন শ্রাবণ-১৪২৭ ২২
কিছু ফলের কথা
মুজিববর্ষে ফলের নানাবিধ ব্যবহার, কৃষিবিদ মো. আবু সায়েম ভাদ্র-১৪২৭ ১৮
চালের মজুদ বাড়বে দেড় মাস
দেশি খেজুর গাছের চাষ ও রস প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রযুক্তি কৃষিবিদ ড. মোঃ আবুল কালাম আল আজাদ পৌষ-১৪২৭ ০৭
পেয়ারার ন্যাচারাল জেলি তৈরি প্রযুক্তি ড. মোহাম্মদ মাইনউদ্দিন মোল্লা মাঘ-১৪২৭ ১৭
অতি ঘন পদ্ধতির আম বাগানে ফলন বৃদ্ধির প্রযুক্তি ড. মো. শরফ উদ্দিন ফাল্গুন-১৪২৭ ১৮
৬. শাকসবজি
স্বাভাবিক তাপমাত্রায় টমেটো পাল্প সংরক্ষণ মো. হাফিজুল হক খান বৈশাখ-১৪২৭ ১৮
আশফাক আহমেদ সবুজ
অহিমায়িত ঘরে আলু সংরক্ষণ নাহিদ বিন রফিক বৈশাখ-১৪২৭ ২১
টমেটোর হাইব্রিড বীজ উৎপাদন কৌশল ড. এম. এ. গোফফার শ্রাবণ-১৪২৭ ১৬
বন্যাপরবর্তী সবজি চাষে কৃষানিদের করণীয় কৃষিবিদ মোঃ আব্দুল্লাহ-হিল-কাফি আশি^ন-১৪২৭ ২৩
নিরাপদ ও রপ্তানিযোগ্য ফুল ও সবজি উৎপাদনে করণীয় মোঃ জিয়াউল হক কার্তিক-১৪২৭ ২৮
নিরাপদ সবজির চারা উৎপাদন প্রযুক্তি
ড. বাহাউদ্দিন আহমেদ মাঘ-১৪২৭ ০৬
কৃষকের বাজার ও নিরাপদ সবজি তৌহিদ মো: রাশেদ খান মাঘ-১৪২৭ ১১
খাদ্য নিরাপত্তায় কালিকাপুর মডেলে সবজি চাষ কৃষিবিদ কামাল ইসলাম মাঘ-১৪২৭ ১৫
ঘেরের পাড়ে শসা চাষ : পাল্টে দিচ্ছে রূপসার গ্রামের চিত্র মো: আবদুর রহমান মাঘ-১৪২৭ ২১
৭. ফসলের বালাইব্যবস্থাপনা
ফল চাষে নিরাপদ বালাইব্যবস্থাপনা ড. মো: জুলফিকার হায়দারপ্রধান আষাঢ়-১৪২৭ (ফল) ১৭
উদ্ভিদ সংগনিরোধ : কৃষি পণ্য বহিঃদেশীয় বালাই নিয়ন্ত্রণে ড. জগৎ চাঁদ মালাকার আশি^ন-১৪২৭ ১৪
টমেটো ও বেগুনের রোগ দমনে জোড়কলম প্রযুক্তি ড. বাহাউদ্দিন আহমেদ অগ্রহায়ন-১৪২৭ ২৩
শিম ফসলের বালাই ব্যবস্থাপনার আধুনিক প্রযুক্তি ড. মোঃ জুলফিকার হায়দার প্রধান পৌষ-১৪২৭ ১৮
ফল আর্মিওয়ার্মের সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনা কৃষিবিদ মোহাম্মদ মারুফ ফাল্গুন-১৪২৭ ১৬
৮. সেচ, সার ও মাটি
পুষ্টি নিরাপত্তা ও মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জিংক সার ড. নির্মল চন্দ্র শীল অগ্রহায়ণ-১৪২৭ ১৭
ড. মোঃ আশরাফ হোসেন
বঙ্গবন্ধুর সেচ ভাবনা মো : জিয়াউল হক চৈত্র-১৪২৭ ২২
৯. খাদ্য ও পুষ্টি
পান্তা ভাতের পুষ্টিগুণ ড. মো. দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বৈশাখ-১৪২৭ ১৯
ড. মুহম্মদ শরীফুল ইসলাম
রংধনু খাবার ড. সালমা লাইজু আষাঢ়-১৪২৭(ফল) ১৯
কোভিড-১৯ পরবর্তী খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি ভাবনায় করণীয় ড. মোঃ মনিরুল ইসলাম আষাঢ়-১৪২৭(ফল) ০৫
কোভিড-১৯ পরবর্তী খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি ভাবনায় করণীয় ড. মোঃ মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ-১৪২৭ ১৩
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলায় পুষ্টি উন্নয়নে সয়াবিন ড. মো. আব্দুল মালেক ভাদ্র-১৪২৭ ১০
বঙ্গবন্ধুর দূরদৃষ্টিতে অপুষ্টি নিরসনে পুষ্টিকর ধান কৃষিবিদ এম আব্দুল মোমিন ভাদ্র-১৪২৭ ১৬
টেকসই খাদ্য- পুষ্টি নিরাপত্তায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার কার্তিক -১৪২৭ ১১
ড. সুস্মিতা দাস
বিষয় লেখক মাস পৃষ্ঠা
ঝউঈ অর্জন : খাদ্য পুষ্টি ও প্রবৃদ্ধি ড. মো. শাহজাহান কবীর কার্তিক -১৪২৭ ১৩ টেকসই হোক একসাথে কৃষিবিদ মো. আব্দুল মোমিন
গুড় খান, সুস্থ থাকুন, বিকশিত হোন ড. মো. আমজাদ হোসেন কার্তিক -১৪২৭ ১৭
ড. সমজিৎকুমার পাল
রসনা বিলাস ও পুষ্টির হিসাব নিকাশ কাজী আবুল কালাম কার্তিক -১৪২৭ ২০
মুজিব শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে পারিবারিক পুষ্টি বাগান কৃষিবিদ মোঃ আসাদুল্লাহ কার্তিক -১৪২৭ ২২
মোঃ মিজানুর রহমান
খাদ্যের পুষ্টি ও নিরাপদতা প্রফেসর ড. মোঃ আব্দুল আলীম কার্তিক -১৪২৭ ২৪
পরিবেশবান্ধব ও পুষ্টি সমৃদ্ধিতে পাট কৃষিবিদ মোঃ মুকুল মিয়া কার্তিক -১৪২৭ ৩০
উদ্ভিজ্জ প্রোটিন সমৃদ্ধিতে গম ও ভুট্টা ড. মোহাম্মদ রেজাউল কবীর কার্তিক -১৪২৭ ৩২
ড. মো. আশরাফুল আলম
ড. মুহ. রেজাউল ইসলাম
শীতের ঐতিহ্য খেজুরের রস কৃষিবিদ এম. আব্দুল মোমিন অগ্রহায়ণ-১৪২৭ ২৫
বাংলাদেশের পুষ্টি নিরাপত্তায় মিষ্টিআলু ড. হরিদাস চন্দ্র মোহন্ত পৌষ-১৪২৭ ০৩
মাইক্রোগ্রিন- নিরাপদ এক পুষ্টির আধার মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন মাঘ-১৪২৭ ১৩
পুষ্টি নিরাপত্তায় পারিবারিক খাদ্য সংরক্ষণ ড. সালমা লাইজু ফাল্গুন-১৪২৭ ২০
ও প্রক্রিয়াজাতকরণ
১০. প্রাণিসম্পদ
অতি গরমে পোলট্রির পীড়ন/ধকল ও তার প্রতিকার কৃষিবিদ মোঃ ফজলুল করিম জ্যৈষ্ঠ-১৪২৭ ২৩
গবাদিপশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও চামড়া শিল্প মো: জাহিদুর রহমান আষাঢ়-১৪২৭(ফল) ২৪
উন্নয়নে আধুনিক প্রযুক্তি
পোলট্রির স্বাস্থ্য রক্ষায় নিরাপদ পানি ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান শ্রাবণ-১৪২৭ ২৪
প্রাণিসম্পদে বঙ্গবন্ধুর ভাবনা : আর্থিক নিরাপত্তা ও ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান ভাদ্র-১৪২৭ ২২
আমিষের নিশ্চয়তা
পোলট্রি খামারে ইঁদুরের প্রভাব ও দমন ব্যবস্থাপনা মোঃ ফজলুল করিম আশি^ন-১৪২৭ ২৫
প্রাণী ও পোলট্রিসম্পদঃ পুষ্টি উন্নয়নের সম্ভাবনা ড. নাথুরাম সরকার কার্তিক -১৪২৭ ৩৪
গবাদি প্রাণীর সদ্যজাত বাছুরের যতœ ও পরিচর্যা মোঃ শাহজাহান মিয়া অগ্রহায়ণ-১৪২৭ ৩২
দেশীয় আবহাওয়া উপযোগী মাংস উৎপাদনকারী মো. কাওছারুল ইসলাম সিকদার পৌষ-১৪২৭ ২৭
মুরগির জাত
গবাদি প্রাণীর সদ্যজাত বাছুরের যতœ ও পরিচর্যা ড. নাথুরাম সরকার পৌষ-১৪২৭ ২৩
জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিরাপদ প্রাণিজ আমিষ ব্যবস্থাপনা কৃষিবিদ মোঃ ফজলুল করিম মাঘ-১৪২৭ ২৩
প্রাণিসম্পদের সম্মিলিত প্রয়াস: সুস্থতা ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ ডা. মো. আব্দুল্লাহ ফাল্গুন-১৪২৭ ২৪
পোলট্রি শিল্প উন্নয়নে পরিবেশবান্ধব কৌশল ড. নাথুরাম সরকার চৈত্র-১৪২৭ ২৮
ড. শাকিলা ফারুক
ড. সাবিহা সুলতানা
মোঃ আতাউল গনি রাব্বানী
ড. মোঃ রাকিবুল হাসান
১১. মৎস্য
মাছ চাষের জন্য পুুকুর প্রস্তুতির বিভিন্ন ধাপ কমর-উন-নাহার জ্যৈষ্ঠ-১৪২৭ ২৫
মৎস্য চাষ ব্যবস্থাপনায় যান্ত্রিকীকরণ কমর-উন-নাহার আষাঢ়-১৪২৭ ২৬
মৎস্য সম্পদের করোনা (কোভিড-১৯) পরিস্থিতিতে করণীয় কৃষিবিদ মোঃ আলতাফ হোসেন চৌধুরী শ্রাবণ-১৪২৭ ২৬
বঙ্গবন্ধুর মৎস্যখাত উন্নয়ন দর্শন : বর্তমান প্রেক্ষিত কৃষিবিদ মো. আলতাফ হোসেন চৌধুরী ভাদ্র-১৪২৭ ২৪
ইঁদুরের উপদ্রব : মৎস্যচাষে ড. এস এম আতিকুল্লাহ আশি^ন-১৪২৭ ২৭
মৎস্য খাত : আমাদের কর্মই আমাদের ভবিষ্যৎ কাজী শামস আফরোজ কার্তিক -১৪২৭ ৩৬
বিলুপ্ত প্রায় মাছ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ অগ্রহায়ণ-১৪২৭ ৩৪
শীতে মাছ চাষে সমস্যা ও প্রতিকার কৃষিবিদ ফরহাদ আহাম্মেদ পৌষ-১৪২৭ ২৬
ভোক্তাপর্যায়ে উত্তম মৎস সরবরাহে সচেতনতা কৃষিবিদ মো. আলতাফ হোসেন চৌধুরী মাঘ-১৪২৭ ২৬
মাছের খাদ্য কৃষিবিদ ফরহাদ আহাম্মেদ ফাল্গুন-১৪২৭ ২৬
মৎস্য খাতে অর্জিত সাফল্য ও টেকসই উন্নয়ন ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ চৈত্র-১৪২৭ ৩০
১২. বিবিধ
করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ৩১ দফা নির্দেশনা বৈশাখ-১৪২৭ ০৩
করোনা উদ্ভ‚ত পরিস্থিতিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বৈশাখ-১৪২৭ ০৫
কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ
বাংলাদেশের কৃষির উপর করোনা পরিস্থিতির প্রভাব মোকাবিলায় কৃষিবিদ মো. হামিদুর রহমান বৈশাখ-১৪২৭ ০৭
গৃহীত পদক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ করণীয়সমূহ
বিষয় লেখক মাস পৃষ্ঠা
বরেন্দ্র ভ‚মির চ্যালেঞ্জ ও করণীয় ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী বৈশাখ-১৪২৭ ১১
এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে ডঃ মনসুর আলম খান জ্যৈষ্ঠ-১৪২৭ ০৩
খাদ্য সংকট মোকাবেলায় লড়াই করছে কৃষি বিভাগ কৃষিবিদ মোঃ মতিয়র রহমান জ্যৈষ্ঠ-১৪২৭ ১২
বর্তমান প্রেক্ষাপটে করোনা ও খাদ্য নির্বাচন খালেদা খাতুন জ্যৈষ্ঠ-১৪২৭ ১৪
মুজিববর্ষে কৃষিতে আঞ্চলিক সমন্বয়ে প্রাসঙ্গিক ভাবনা ড. এস.এম. আতিকুল্লাহ জ্যৈষ্ঠ-১৪২৭ ১৮
কৃষি পণ্য উৎপাদন ও লাভজনক করার কৌশল কৃষিবিদ ড. মোঃ ওমর আলী জ্যৈষ্ঠ-১৪২৭ ২১
কম্বাইন হারভেস্টার যন্ত্রের ব্যবহার ও গুরুত্ব ড. মো. দুররুল হুদা শ্রাবণ-১৪২৭ ১০
বিধান চন্দ্র নাথ
ড. মো. গোলাম কিবরিয়া ভ‚ঞা
সুব্রত পাল এবং
শারমিন ইসলাম
সকলের হোক অঙ্গীকার বসতবাড়ির প্রতি ইঞ্চির সঠিক ব্যবহার কৃষিবিদ মোঃ আব্দুল্লাহ-হিল-কাফি শ্রাবণ-১৪২৭ ২০
বঙ্গবন্ধুর কৃষি ভাবনায় আজকের কৃষি ড. মো. আবদুল মুঈদ ভাদ্র-১৪২৭ ০৩
বঙ্গবন্ধুর কৃষি উন্নয়ন দর্শনে কৃষিবান্ধব বর্তমান সরকার কৃষিবিদ ড. মো.আখতারুজ্জামান ভাদ্র-১৪২৭ ০৮
কৃষি বিপ্লব ও খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর কৃষি মো. সজীব আল মারুফ ভাদ্র-১৪২৭ ১৪
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কৃষি ও কৃষকের আলোর দিশারী মোতাহার হোসেন ভাদ্র-১৪২৭ ২০
জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযান ২০২০ কৃষিবিদ এ জেড এম ছাব্বির ইবনে জাহান আশি^ন-১৪২৭ ০৩
খাদ্য নিরাপদতায় প্রয়োজন সকল অংশীজনের অংশগ্রহণ মো. কাওছারুল ইসলাম সিকদার মাঘ-১৪২৭ ০৯
সেডেন্টারি লাইফ স্টাইল: সাস্থ্য ঝুঁকি এবং নিয়ন্ত্রণ মোরসালীন জেবিন তুরিন মাঘ-১৪২৭ ১৯
খাদ্য নিরাপত্তায় সমন্বিত ইঁদুর দমন ব্যবস্থাপনা মো: মোসাদ্দেক হোসেন আশি^ন-১৪২৭ ০৫
ড. শেখ শামিউল হক
ড. মো: মোফাজ্জল হোসেন
ইঁদুর নিধনের মাধ্যমে বাঁধ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ ড. সন্তোষ কুমার সরকার আশি^ন-১৪২৭ ০৯
ভাসমান বেডে ফসল চাষে অন্তরায় ও উত্তরণের প্রযুক্তি ড. মোঃ শাহ আলম আশি^ন-১৪২৭ ১১
ইঁদুরের বংশবিস্তার ও জনস্বাস্থ্যে সচেতনতা কৃষিবিদ সাবিহা সুলতানা আশি^ন-১৪২৭ ১৬
সবাইকে নিয়ে এক সাথে বিকশিত হোন, শরীরের যতœ নিন, মোঃ নাসিরুজ্জামান কার্তিক -১৪২৭ ০৭
সুস্থ থাকুন। আমাদের কর্মই আমাদের ভবিষ্যৎ
কৃষিতেই হবে সমৃদ্ধ আগামীর বাংলাদেশ কৃষিবিদ ড. মোঃ আবদুল মুঈদ কার্তিক -১৪২৭ ০৯
আমাদের কর্মই আমাদের ভবিষ্যৎ ড. মোঃ নাজিরুল ইসলাম কার্তিক -১৪২৭ ১৫
ড. মোঃ ওমর আলী
মাটিকে সজীব রাখুন, মাটির জীববৈচিত্র্য রক্ষা করুন বিধান কুমার ভান্ডার অগ্রহায়ণ-১৪২৭ ০৭
প্রতি ইঞ্চি জায়গা ব্যবহার করে বসতবাড়িতে সমন্বিত খামার মৃত্যুঞ্জয় রায় অগ্রহায়ণ-১৪২৭ ০৯
সময়ের প্রাসঙ্গিকতা ও বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ মো. মুকসুদ আলম খান (মুকুট) অগ্রহায়ণ-১৪২৭ ১৪
স্বাধীনতা-উত্তর গ্রামীণ অর্থনীতি ও সমাজব্যবস্থা মো. কাওছারুল ইসলাম সিকদার অগ্রহায়ণ-১৪২৭ ২৭
বঙ্গবন্ধু, কৃষি ও কৃষি তথ্য সার্ভিস কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী পৌষ-১৪২৭ ০৫
কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কৃষিবিদ সুবোধ চন্দ্র পৌষ-১৪২৭ ০৯
বিশ^ খাদ্য কর্মসূচির নোবেল জয় ও খাদ্য নিরাপত্তা ড. মনসুর আলম খান পৌষ-১৪২৭ ১৪
বামিস (ইঅগওঝ) পোর্টাল : স্মার্ট কৃষির নব ডাইমেনশন কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম পৌষ-১৪২৭ ২১
বঙ্গবন্ধু ও কৃষিবিদ দিবস ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, এমপি ফাল্গুন-১৪২৭ ০৩
মৌচাষ ড. ফ. ম. মাহবুবুর রহমান ফাল্গুন-১৪২৭ ০৬
কৃষিতে আধুনিক পূর্বাভাসের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়ন ড. মোঃ শাহ কামাল খান ফাল্গুন-১৪২৭ ১৪
সবুজশক্তি বায়োডাইজেস্টার শুভাশিষ ভৌমিক ফাল্গুন-১৪২৭ ২২
স্বাধীনতা পরবর্তী কৃষির উন্নয়ন মোঃ মেসবাহুল ইসলাম চৈত্র-১৪২৭ ০৯
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ : নিরাপদ ফসল উৎপাদনে মো. আসাদুল্লাহ চৈত্র-১৪২৭ ১২
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর
মুজিববর্ষে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও কৃষির অগ্রযাত্রা ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার চৈত্র-১৪২৭ ১৪
ড. সুস্মিতা দাস
মুজিববর্ষের অঙ্গীকার কৃষি হবে দুর্বার : ড. আখতারুজ্জামান চৈত্র-১৪২৭ ২০ সবার সম্মিলিত প্রয়াস
বিষয় লেখক মাস পৃষ্ঠা
১৩. কবিতা
করোনা জয়ের কৃষি কৃষিবিদ মোঃ হামিদুর রহমান জ্যৈষ্ঠ-১৪২৭ ২৭
কৃষকের পাশে কৃষিবিদ ড. সমজিৎ পাল জ্যৈষ্ঠ-১৪২৭ ২৭
ফল গাছ বুনি ড. সমজিৎ পাল আষাঢ়-১৪২৭ ২৮
সবুজ পৃথিবী মো: জুন্নুন আলী প্রামাণিক আষাঢ়-১৪২৭ ২৮
জলবায়ু পরিবর্তন ও কৃষিতে করণীয় ড. মোঃ আলতাফ হোসেন শ্রাবণ-১৪২৭ ২৮
ফল ড. খান মো. মনিরুজ্জামান শ্রাবণ-১৪২৭ ২৮
অক্ষয় শোণিতের গান কৃষিবিদ হামিদুর রহমান ভাদ্র-১৪২৭ ২৬
বঙ্গবন্ধুর অবদান ড. সমজিৎ পাল ভাদ্র-১৪২৭ ২৬
বঙ্গবন্ধু ও তাঁর বাংলাদেশ ড. খান মোঃ মনিরুজ্জামান ভাদ্র-১৪২৭ ২৭
ইঁদুর নিধন অভিযান হাবিবুর রহমান ভাবুক আশি^ন-১৪২৭ ২৮
ইঁদুর নিপাত পরিমল কুমার সাহা আশি^ন-১৪২৭ ২৮
সুস্থতার জন্য নিবেদিত পঙক্তিমালা আবু হেনা ইকবাল আহমেদ কার্তিক -১৪২৭ ৩৮
আমাদের কর্মই আমাদের ভবিষ্যৎ ড. খান মোঃ মনিরুজ্জামান কার্তিক -১৪২৭ ৩৮
ভাসমান কৃষি কৌশল ড. মোঃ আলতাফ হোসেন অগ্রহায়ণ-১৪২৭ ৩৬
হেমন্তের নবান্ন পর্ব মো: জন্নুন আলী প্রামাণিক অগ্রহায়ণ-১৪২৭ ৩৬
বঙ্গবন্ধুর অবদান ও কৃষি উন্নয়ন ড. মোঃ আলতাফ হোসেন পৌষ-১৪২৭ ২৮
লাল সবুজ পতাকা যেন : দেশ আবু হেনা ইকবাল আহমেদ পৌষ-১৪২৭ ২৮
নিরাপদ সবজি ড. খান মোঃ মনিরুজ্জামান মাঘ-১৪২৭ ২৮
গমের বøাস্ট রোগের কথা কৃষিবিদ মো: মুজাহিদ-ই-রহমান মাঘ-১