Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

কৃষি কথা

হ্যাচারিতে চিতল মাছের রেণু উৎপাদন ও চাষ পদ্ধতি মোঃ আলতাফ হোসেন চৌধুরী

চিতল মাছ একটি সুস্বাদু এবং দেশীয় প্রজাতির এতিহ্যবাহী জনপ্রিয় মাছ। চিতল মাছের কোপ্তার কোনো জুড়ি নাই। চাহিদা এবং স্বাদের জন্য এই মাছের বাজারমূল্য অনেক বেশি। এক সময় বাংলাদেশের নদীতে, বিলে, হাওড়ে প্রচুর পরিমাণে চিতল মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু চিতল আজ বিপন্ন প্রায়। বিলুপ্তির হাত থেকে চিতলকে রক্ষার প্রধানত উপায় হলো সঠিকভাবে এর ব্রুড ব্যবস্থাপনা এবং কৃত্রিম এবং নিয়ন্ত্রিত প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন করা। চিতল একটি রাক্ষুসে। বছরে কয়েকবার পোনা উৎপাদনে সক্ষম, তেলাপিয়া মাছের সাথে চিতল মাছ চাষ করলে পুকুরে অনাকাক্সিক্ষত পোনা নিয়ন্ত্রণ করে চিতলের পাশাপাশি  তেলাপিয়ার ও  কাক্সিক্ষত উৎপাদন নিশ্চিত করে। তেলাপিয়া ছাড়াও মলা, ঢেলা, চান্দা, চিংড়ি, চাপিলার সাথে সহজেই চিতল মাছ চাষ করা যায়। চিতল মাছ রাতের বেলায় বেশি সক্রিয় থাকে এবং শিকার করে। তবে দিনে বেলায় বেশি তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকে।

রাক্ষুসে স্বভাবের হলেও চিতল চাষযোগ্য মাছ। ইহা ৭-৮ সেমি.(৩ ইঞ্চি) এর অধিক বড় আকারের মাছ শিকার করতে পারে না। অর্থাৎ বড় আকারের কোনো মাছের জন্য চিতল ক্ষতিকর নয়। ডিম পাড়ার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ এবং অবলম্বন ছাড়া চিতল মাছ ডিম দেয় না। প্রকৃতিতে সাধারণত সাবট্রেট পাওয়া দুরূহ। চিতল মাছের  একসাথে অধিক ডিম/পোনা পাওয়া কঠিন। এছাড়া প্রাকৃতিক পরিবেশে পোনার মৃত্যুহার অনেক বেশি । নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এক পর্যায়ে নিজেরাই নিজেদের পোনা খেতে শুরু করে । প্রকৃতিতে চিতল মাছকে স্বমহিমায় ফিরিয়ে আনতে হলে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে একসাথে অধিক পোনা উৎপাদনের বিকল্প নেই। উৎপাদনের বিষয় এবং বিলুপ্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষার জন্য এই মাছটির রেণু উৎপাদন এবং চাষ পদ্ধতি জানা অতীব জরুরি।
চিতল মাছ চাষের সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ
সুবিধা                        
১) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি        
২) বেশি ঘনত্বে চাষ করা যায়।
৩) কম অক্সিজেন এবং বেশি তাপমাত্রায় খাপ খাওয়াতে পারে।
৪) সর্বভুক বিধায় মাছ চাষে খরচ কম হয়।
৫) বিলে এই মাছ চাষ করা যায়।
৬) বাড়তি খাবার প্রয়োজন নেই।
অসুবিধা
১) সহজেই জালে ধরা যায় না।
২) বড় পুকুরের ক্ষেত্রে চাষ ব্যবস্থাপনা জটিল।
৩) রাক্ষুসে স্বভাবের ।
 চিতল মাছের  পরিচিতি :
বাংলাদেশে যে চিতল মাছ পাওয়া যায় তার পরিচিতি উল্লেখ করা হলো :
চিতল মাছের বৈজ্ঞানিক নাম : নোটপটেরাস চিতালা ইতঃপূর্বে চিতল মাছ শুধুমাত্র প্রাকৃতিক জলাশয়ে উৎপাদন হয়েছে কিন্তু কালের পরিক্রমায় এই মাছের বাজার মূল্য বেড়ে যাওয়া এবং বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষার জন্য হ্যাচারিতে রেণু উৎপাদনের সময় এসেছে এবং সফলভাবে দেশের কতিপয় সরকারি হ্যাচারিতে উৎপাদন হচ্ছে।
ব্রুড (উপযুক্ত বয়সের মা ও বাবা) চিতল মাছ ও পুকুরের বৈশিষ্ট্যসমুহ :
 ১) বয়স দুই বছরের বেশি হলে ভালো হয় ।
 ২) নারী পুরুষের অনুপাত (১:১)
 ৩) ব্রুড চিতল মাছ অন্য ব্রুডের পুকুরে রাখা যেতে পারে অথবা প্রাকৃতিক জলাশয় থেকেও সংগ্রহ করা যেতে পারে ।
৪) একরে ৩০-৩৫টি চিতল অন্য ব্রুড মাছের সাথে পুকুরে  রাখা যেতে পারে ।
৫) পুকুরের আয়তন ২০-৩০শতাংশ অথবা এর চেয়ে বড় আয়তনের পুকুর হলে ভালো হয় ।
৬) পুকুরের পানির গভীরতা ৪-৬ ফুট থাকা বাঞ্ছনীয়
প্রাকৃতিক প্রজনন
ব্রুডের পুকুরে চিতলের জন্য সাপোর্ট/আশ্রয় স্থাপন ও অন্যান্য কার্য সম্পাদন  করা ঃ
* শক্ত বাঁশের খুঁটি ৪-৫ ফুট অথবা কাঠের গুঁড়ি বা অন্য কোনো শক্ত ডালপালা প্রতি ২ শতাংশে ১টি করে স্থাপন করা যেতে পারে।
* চিতল মাছ সাধারণত মে-জুলাই মাসে ডিম দিয়ে থাকে।
* ডিম দেওয়ার সময় দিনে কমপক্ষে দুইবার গাছের ডালপালার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।
* চিতল একবারে ডিম দেয় না সাধারণত এই মাছ পূর্ণ ডিম দিতে এক সপ্তাহ লেগে যায়।
ডিম সংগ্রহ এবং সার্কুলার/সিসটার্ন ট্যাংকে স্থাপন ঃ
১) চিতল মাছ সাধারণত যে কোনো আশ্রয় এর ওপর ডিম দেয়।
২) যে ডিমসমূহ কাঠের গুঁড়ি বা অন্যান্য সাপোর্ট এর গায়ে লেগে থাকে সেগুলোকে আলতোভাবে উঠিয়ে সার্কুলার ট্যাংকে ১ ফুট পরিমাণ পানির নিচে ডুবিয়ে রাখতে হবে এবং অক্সিজেন সরবরাহের জন্য ওপর থেকে মৃদু আকারে ঝরনার ব্যবস্থা করতে হবে ।
 ২) এভাবে সার্কুলার/সিসটার্ন ট্যাংকে ৫-৭ পর চিতলের ডিমের রঙ হবে হালকা হলুদ রঙের এবং ডিমের মধ্যে পরিপূর্ণ ইয়কস্যাক গঠিত হবে ।
 ৩) ১০-১২দিন পর ডিমের ভেতর থেকে রেণু বের হবে এবং তখনেই সিসটার্ন/সার্কুলার থেকে সাপোর্ট/আশ্রয়সমূহ অন্যত্র সরিয়ে ফেলতে হবে ।
কৃত্রিম প্রজনন
সাধারণত মে থেকে আগস্ট মাসে পূর্ণিমা এবং অমাবস্যার পর চিতল মাছ ডিম দিয়ে থাকে। তবে চিতল মাছকে পিটুইটারি গ্রন্থি (পিজি) হরমোন দিয়ে কৃত্রিমভাবে প্রজনন করানো যায়। পোনা উৎপাদনের জন্য শুধুমাত্র স্ত্রী মাছকে প্রতি কেজি ওজনের জন্য ১১ মিলিগ্রাম হারে মাছের পার্শ¦ীয় পাখনার নিচের মাংসে ৪৫ ডিগ্রি কোনে একবার পিটুইটারি (পিজি) দ্রবণের হরমোন ইনজেকশন আকারে প্রয়োগ করা যেতে পারে। হরমোন প্রয়োগের পর স্ত্রী এবং পুরুষ মাছকে ১:৩ অনুপাতে প্রজনন পুকুরে ছেড়ে দিতে হবে। প্রজনন কালে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হলে ভালো হয়। তবে বৃষ্টিপাত কম হলে প্রতিদিন পুকুরে কমপক্ষে ২/১ ঘণ্টা নলক‚পের পানি সরবরাহ করতে হবে। হরমোন প্রয়োগের ৩-৫ দিনের মধ্যে প্রজনন ক্রিয়ার মাধ্যমে সাবস্ট্রেটের ওপর চিতল মাছ ডিম দিয়ে থাকে। মাছের পরিপক্বতা ভেদে হরমোন ইনজেকশন প্রদানের পর ডিম ছাড়তে ৬-৭ দিন ও লাগতে পারে।
চিতলের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ এবং রেণুর পরিচর্যা ঃ
চিতলের রেণু ডিম থেকে বের হওয়ার ২৪-৭২ ঘণ্টা পর পর জু-প্লাংকটন/এক দিন বয়সি কার্পজাতীয় মাছের রেণু দিনে    ২-৩ বার খাবার হিসেবে দিতে হবে ।
২) চিতল রেণুসমূহ যাতে জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত না হয় সে জন্য প্রতিদিন একবার হাফ লিটার পানিতে এক চিমটির অর্ধেক মিথিলিন বøু -মিশ্রিত পানি সার্কুলার/সিসটার্ন এ ছিটাতে হবে ।
 ৩) সার্কুলার/সিসটার্ন নিয়মিত পানি সরবরাহের ব্যবস্থা থাকতে হবে ।
 ৪) এভাবে ৩-৪ দিন সার্কুলার/সিসটার্ন এ চিতল রেণুর  যতœ নিতে হবে ।
চাষ পদ্ধতি
* চিতল এর রেণু চাষের পুকুরের আয়তন সাধারণত  ২০-৩০ শতাংশ হলে ভালো হয়।
* অন্যান্য বড় মাছের সাথে এই মাছের রেণু ১০-১৫ সেমি: পর্যন্ত বড় করার জন্য রাখা যেতে পারে।
* খাবার হিসেবে প্রতিদিন জু-প্লাংকটন/কার্পজাতীয় মাছের কম দামি রেণু সরবরাহ করা যেতে পারে।
* পরিচর্যা সঠিকভাবে করা হলে ১৫ দিনের মধ্যেই এই মাছ  ১০-১৫ সেমি. আকার ধারণ করে
অধিক বৃদ্ধির জন্য অন্য পুকুরে/বিলে স্থানান্তরঃ
চিতল মাছ সাধারণত ২.০-২.৫ কেজি সাইজের হলে বাজার মূল্য ভালো পাওয়া যায় এবং সুস্বাদু হয়। বড় মাছের পুকুরে সাধারণত প্রতি শতাংশে ২টি ১০-১৫ সেমি. আকারের চিতলের পোনা ছাড়া যেতে পারে । প্রাকৃতিক জলাশয়ে খাবারের প্রার্চুযতা বেশি বিধায় সেখানে প্রতি শতাংশে ১০-১৫ টি পোনা ছাড়া যেতে পারে । জলাশয়ে খাবারের প্রাচুর্যতা হলে সাধারণত ৬ মাস থেকে এক বছরে এই মাছ ২.০-২.৫ কেজি আকারের হলে থাকে।
আহরণ ও বাজারজাতকরণ ঃ
পুকুর সেচ দিয়ে সাধারণত এই মাছ ধরা হয় উপযুক্ত আকারের হলে বাজারজাত করা হয়।
আহরণ ও বাজারজাতকরণ ঃ
পুকুর সেচ দিয়ে সাধারণত এই মাছ ধরা হয় উপযুক্ত আকারের হলে বাজারজাত করা হয়।
    


মোঃ আলতাফ হোসেন চৌধুরী                                                                   

খামার ব্যবস্থাপক, সরকারি মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার  গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধা, মোবা : ০১৭১২২৪০৮৩৫৩,  ই-মেইল : Choudhari_33@yahoo.com

বিস্তারিত
মাঘ মাসের কৃষি (পৌষ ১৪২৬)

মাঘ মাসের কৃষি
(১৫ জানুয়ারি- ১৩ ফেব্রুয়ারি)

বাংলার শীত ক্ষণস্থায়ী হলেও মাঘ মাসের কনকনে শীতের হাওয়ার সাথে সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মাঝে মাঝে সৃষ্ট শৈতপ্রবাহ শীতের তীব্রতাকে আরো বাড়িয়ে দিয়ে যায়।  এ প্রতিক‚লতার মধ্যেও আমাদের কৃষকভাইদের মাঠে কাজ করে যেতে হয়। কেননা এ সময়টা কৃষির এক ব্যস্ততম সময়। আর তাই আসুন আমরা সংক্ষেপে জেনে নেই মাঘ মাসে কৃষিতে করণীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো :
বোরো ধান
ইউরিয়া সারের উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। ধানের চারা রোপণের ১৫-২০ দিন পর প্রথম কিস্তি, ৩০-৪০ দিন পর দ্বিতীয় কিস্তি এবং ৫০-৫৫ দিন পর শেষ কিস্তি হিসেবে ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। বোরো ধানে নিয়মিত সেচ প্রদান, আগাছা দমন, বালাই ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য পরিচর্যা করতে হবে। রোগ ও পোকা থেকে ধান গাছকে বাঁচাতে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ, আন্তঃপরিচর্যা, যান্ত্রিক দমন, উপকারী পোকা সংরক্ষণ, ক্ষেতে ডালপালা পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করা, আলোর ফাঁদ এসবের মাধ্যমে ধানক্ষেত বালাই মুক্ত করতে পারেন। এভাবে রোগ ও পোকার আক্রমণ প্রতিহত করা না গেলে শেষ উপায় হিসেবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে সঠিক বালাইনাশক, সঠিক সময়ে, সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।
গম
গমের জমিতে যেখানে ঘনচারা রয়েছে তা পাতলা করে দিতে হবে। গম গাছ থেকে যদি শিষ বেড় হয় বা গম গাছের বয়স ৫৫-৬০ দিন হয় তবে জরুরিভাবে গম ক্ষেতে একটি সেচ দিতে হবে। এতে গমের ফলন বৃদ্ধি পাবে। ভালো ফলনের জন্য দানা গঠনের সময় আরেকবার সেচ দিতে হবে। গম ক্ষেতে ইঁদুর দমনের কাজটি সকলে মিলে একসাথে করতে হবে।
ভুট্টা
ভুট্টা ক্ষেতে গাছের গোড়ার মাটি তুলে দিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং অন্যান্য কারণে এসময় ভুট্টা ফসলে আর্মিওয়ার্ম, ফল আর্মিওয়ার্ম ইত্যাদি পোকার আক্রমণ দেখা যায়। আক্রান্ত গাছ থেকে লার্ভাগুলো হাত দ্বারা সংগ্রহ করে নষ্ট করে ফেলতে হবে। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে স্পেনোসেড (ট্রেসার ৪৫এসসি@ ০.৪ মিলি./ লিটার) বা এবামেকটিন বেনজোয়েট ( প্রোক্লেম ৫ এসজি বা সাহাম ৫ এসজি @ ১ গ্রাম/ লিটার) বালাইনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
আলু
আলু ফসলে নাবি ধসা রোগ দেখা দিতে পারে। সে কারণে স্প্রেয়িং শিডিউল মেনে চলতে হবে। মড়ক রোগ দমনে দেরি না করে ২ গ্রাম এক্সট্রামিল অথবা ডায়থেন এম ৪৫ অথবা সিকিউর অথবা মেলুডি ডুও প্রতি লিটার পানির সাথে মিশিয়ে নিয়মিত স্প্রে করতে হবে। মড়ক লাগা জমিতে সেচ দেওয়া বন্ধ করতে হবে। তাছাড়া আলু ফসলে মালচিং, সেচ প্রয়োগ, আগাছা দমনের কাজগুলোও করতে হবে। আলু  গাছের বয়স ৯০ দিন হলে মাটির  সমান করে গাছ কেটে দিতে হবে এবং ১০ দিন পর আলু তুলে ফেলতে হবে। আলু তোলার পর  ভালো করে শুকিয়ে বাছাই করতে হবে এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
তুলা
তুলা সংগ্রহের কাজ এ মাস থেকেই শুরু করতে হবে। তুলা সাধারণত ৩ পর্যায়ে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। শুরুতে ৫০% বোল ফাটলে প্রথম বার, বাকি ফলের ৩০% পরিপক্ব হলে দ্বিতীয় বার এবং অবশিষ্ট ফসল পরিপক্ব হলে শেষ অংশের তুলা সংগ্রহ করতে হবে। রৌদ্রময় শুকনা দিনে বীজ তুলা উঠাতে হয়। ভালো তুলার সাথে যেন খারাপ তুলা (পোকায় খাওয়া, রোগাক্রান্ত) কখনো না মেশে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। ভালো তুলা আলাদাভাবে তুলে ৩-৪ বার রোদে শুকিয়ে বস্তায় ভরে মাচা বা দানেস এর উপর সংরক্ষণ করতে হবে। ইঁদুর নষ্ট করতে না পারে, সেদিকে খেয়াল করতে হবে।
ডাল ও তেল ফসল
মসুর, ছোলা, মটর, মাসকালাই, মুগ, তিসি এ সময় পাকে। সরিষা, তিসি বেশি পাকলে রোদের তাপে ফেটে গিয়ে বীজ পড়ে যেতে পারে, তাই এগুলো ৮০ ভাগ পাকলেই সংগ্রহের ব্যবস্থা নিতে হবে। ডাল ফসলের ক্ষেত্রে গাছ গোড়াসহ না উঠিয়ে মাটি থেকে কয়েক ইঞ্চি রেখে ফসল সংগ্রহ করতে হবে। এতে জমির উর্বরতা এবং নাইট্রোজেন সরবরাহ বাড়বে। এ সময় চর অঞ্চলে পেঁয়াজের সাথে বিলে ফসল হিসেবে বাদাম চাষ করতে পারেন।
শাকসবজি
বেশি ফলন পেতে  শীতকালীন শাকসবজি যেমন ফুলকপি,  বাঁধাকপি,
টমেটো, বেগুন, ওলকপি, শালগম, গাজর, শিম, লাউ, কুমড়া, মটরশুঁটি এসবের নিয়মিত যত্ন নিতে হবে। টমেটো ফসলের মারাত্মক পোকা হলো ফলছিদ্রকারী পোকা। সমন্বিত বালাই দমন পদ্ধতিতে এ পোকা দমন করতে হবে। এ সময় চাষিভাইরা টমেটো সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করতে পারেন। আধা পাকা টমেটোসহ টমেটো গাছ তুলে ঘরের ঠাÐা জায়গায় উপুড় করে ঝুলিয়ে টমেটোগুলোকে পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। পরবর্তীতে ৪-৫ মাস পর্যন্ত অনায়াসে টমেটো খেতে পারবেন। শীতকালে মাটিতে রস কমে যায় বলে সবজি ক্ষেতে চাহিদামাফিক সেচ দিতে হবে।
গাছপালা
শীতে গাছের গোড়ায় নিয়মিত সেচ দিতে হবে। গোড়ার মাটি আলগা করে দিতে হবে এবং আগাছামুক্ত রাখতে হবে। সাধারণত এ সময় আমগাছে মুকুল আসে। গাছে মুকুল আসার পর কিন্তু ফুল ফোটার আগে টিল্ট-২৫০ইসি প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি অথবা ১ মিলি কন্জা প্লাস অথবা ২ গ্রাম ডাইথেন এম-৪৫ প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। আমের আকার মটরদানার মতো হলে গাছে ২য় বার স্প্রে করতে হবে। এসময় প্রতিটি মুকুলে অসংখ্য হপার নিম্ফ দেখা যায়। আম গাছে মুকুল আসার ১০ দিনের মধ্যে কিন্তু ফুল ফোটার পূর্বেই একবার এবং এর একমাস পর আর একবার প্রতি লিটার পানির সাথে ১.০ মিলি সিমবুস/ফেনম/ডেসিস ২.৫ ইসি মিশিয়ে গাছের পাতা, মুকুল ও ডালপাল ভালোভাবে ভিজিয়ে স্প্রের করতে হবে।
প্রাণিসম্পদ
শীতকালে পোল্ট্রিতে অপুষ্টি, রানীক্ষেত, মাইকোপ্লাজমোসিস, ফাউল টাইফয়েড, পেটে পানি জমা এসব সমস্যা দেখা যায়। মোরগ-মুরগীর অপুষ্টিজনিত সমস্যা সমাধানে প্রাণিচিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন এ, সি, ডি, ই, কে ও ফলিক এসিড সরবরাহ করতে হবে। শীতের তীব্রতা বেশি হলে পোল্ট্রি শেডে অবশ্যই মোটা চটের পর্দা লাগাতে হবে এবং বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। পোল্ট্রি লিটারে অ্যামোনিয়া গ্যাস রোধে ১ বর্গফুট জায়গায় ১ কেজি হারে অ্যামোনিল পাউডার মিশাতে হবে। গোখামারে শীতকালে মোটা চটের ব্যবস্থা করা খুব জরুরি।  নাহলে গাভীগুলো তাড়াতাড়ি অসুস্থ হয়ে যাবে।
মৎস্যসম্পদ
পুকুরে পানি কমে দূষিত হয়ে যায় বলে শীতকালে মাছের বিশেষ যতœ নিতে হবে। কার্প ও শিং জাতীয় মাছে ড্রপসি বা উদর ফোলা রোগ দেখা দেয়। মাছের ক্ষত রোগ যাতে না হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে। আর এ রোগের প্রতিকারে প্রতি কেজি খাদ্যের সাথে ১০০ মিলিগ্রাম টেরামাইসিন বা স্ট্রেপটোমাইসিন পর পর ৭ দিন খাওয়াতে হবে। মাছ চাষ বিষয়ে যে কোন পরামর্শের জন্য কাছের উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
সুপ্রিয় পাঠক, অত্যন্ত সংক্ষেপে মাঘ মাসে কৃষিতে করণীয় কাজগুলোর উল্লেখযোগ্য দিক তুলে ধরা হলো। আপনারা আপনাদের অভিজ্ঞতা ও পরিবেশের গ্রহণযোগ্যতার সমন্বয়ে কাজ করলে সফলতা আসবেই। কৃষির যে কোনো সমস্যায় উপজেলা কৃষি অফিস, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস ও উপজেলা মৎস্য অফিসে যোগাযোগ করে অথবা কৃষি কল সেন্টারের ১৬১২৩ নম্বরে কল করে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে পারেন।


কৃষিবিদ ফেরদৌসী বেগম
সম্পাদক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা।  টেলিফোন:০২৫৫০২৮৪০৪, মেইল: editor@ais.gov.bd

বিস্তারিত
প্রতিকূল পরিবেশে উপকূলীয় অঞ্চলের টেকসই কৃষি ব্যবস্থাপনা

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে সামগ্রিকভাবে বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের কৃষি তথা সার্বিক জীবনযাত্রার ওপর। ভৌগোলিক অবস্থান, জনসংখ্যার আধিক্য, আর্থসামাজিক অবস্থার কারণে জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে বিপদাপন্ন দেশ হিসেবে বিবেচিত। আমাদের কৃষির সঙ্গেও পরিবেশ, আবহাওয়া ও জলবায়ুর সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা বাড়ছে, শীতের ব্যাপ্তি ও তীব্রতা কমছে, বৃষ্টিপাতের সময় ও পরিমাণে তারতম্য ঘটছে, যার প্রভাব কৃষিক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি। পরিবর্তিত পরিবেশে আগামী দিনগুলোতে ফসল উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় দেশের খাদ্য ও কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজনযোগ্য টেকসই কৃষি ব্যবস্থা প্রণয়ন ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ এবং বিভিন্ন ফসলের লবণাক্ততা, জলমগ্নতা ও খরাসহিষ্ণু জাত উদ্ভাবনের সূচিত ধারাকে অব্যাহত রাখতে হবে।
উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
ইন্টার গভার্মেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জের (আইপিসিসি) তথ্যানুযায়ী জলবায়ুর পরিবর্তনে ভ‚পৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা দুই-ই বাড়বে। এর ফলে উপক‚লীয় জেলাগুলোর বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে যাবে। অন্যদিকে উপক‚লীয় অঞ্চল এবং দূরবর্তী দ্বীপগুলোতে লোনাপানি প্রবেশ করার ফলে উন্মুক্ত জলাশয় ও ভ‚গর্ভস্থ পানি লবণাক্ত হয়ে পড়ছে। লবণাক্ততার কারণে এসব এলাকার বিশাল পরিমাণ জমি পতিত থাকে। শুষ্ক মৌসুমে নিয়মিত সামুদ্রিক জোয়ারের সাথে ভূ-ভাগের অনেক গভীরে মিঠাপানি অঞ্চলে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করে নদীর পানিকে আউশ ধান ও অন্যান্য আগাম খরিফ ফসলে সেচের কাজে ব্যবহারের অনুপযোগী করে তুলছে।
আইপিসিসির ৫ম সমীক্ষা অনুযায়ী, বিশ্ব গড় তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির ফলে উপক‚লীয় অঞ্চলে ফসল উৎপাদন হ্রাস, পানির প্রাপ্যতায় ঘাটতি, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস, তাপপ্রবাহ, অতিবৃষ্টি এবং উপকূলীয় জলোচ্ছসের প্রবণতা বেড়ে যাবে। এছাড়া প্রতি বছরই নদীভাঙনের ফলে অনেক উৎপাদনশীল জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সার্বিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি উৎপাদনে প্রভাব বিস্তারকারী ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে-
* মাটি ও পানির লবণাক্ততার   মাত্রার ব্যাপকতা বৃদ্ধি।
* জমির প্রকৃতি ও ধরন পরিবর্তন।
* তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বীজের অঙ্কুরোদগম, গাছের বৃদ্ধি ফুল ফল ধারণসহ সার্বিক জীবনচক্রে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে।
* বায়ুমণ্ডলে সিএফসিসহ অন্যান্য ক্ষতিকর গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
* নদীর নাব্য কমার ফলে শুষ্ক মৌসুমে ভূ-উপরিস্থ সেচের পানির প্রাপ্যতা হ্রাস পাবে।
* ভ‚-গর্ভস্থ পানির প্রাপ্যতা হ্রাস।
* শীত মৌসুমের ব্যাপ্তি হ্রাস, আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ (ঘূর্ণিঝড়, বন্যা), জোয়ারভাটাজনিত প্লাবন, নদীভাঙন ও ভ‚মিক্ষয়
উপক‚লীয় অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিযোজন কৌশল
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিক বহন করায় এসব মোকাবিলার কৌশল ও করণীয় ভিন্নতর হবে। এঅবস্থায় টেকসই কৃষির জন্য দেশের উপক‚লীয় অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিযোজন কৌশলে নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
১। লবণাক্ততাসহিষ্ণু উচ্চফলনশীল ফসলের জাত ব্যবহার
বর্ষা মৌসুমে উপক‚লীয় অঞ্চলে লবণাক্ততার মাত্রা কম থাকে। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে এর তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে কৃষি সংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো ফসলের লবণাক্ততাসহিষ্ণু জাত উদ্ভাবন করে যাচ্ছে। স্বল্প বা মধ্যম মাত্রার লবণাক্ততা প্রবণ এলাকায় আধুনিক পদ্ধতিতে এ জাতগুলো চাষাবাদ করে কৃষিকে টেকসই রূপ দেয়া সম্ভব। লবণাক্ততা সহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল জাতসমূহ হচ্ছে-
ধান : ব্রি ধান৪০ (আমন মৌসুমে), ব্রি ধান৪১ (আমন মৌসুমে), ব্রি ধান৪৭ (বোরো মৌসুমে), ব্রি ধান৫৩ (মাঝারি নিচু জমিতে রোপা আমনের আগাম জাত), ব্রি ধান৫৪ (মাঝারি নিচু জমিতে রোপা আমনের আগাম জাত), ব্রি ধান৫৫ (আউশ ও বোরো মৌসুমের উপযোগী এবং মধ্যম মাত্রার লবণাক্ততা, খরা ও ঠাÐাসহনশীল), ব্রি ধান৬১ (বোরো মৌসুমে), ব্রি ধান৬৭ (বোরো মৌসুমে),  ব্রি ধান৭৩ (আমন মৌসুমে উপযুক্ত লবণাক্তসহনশীল), ব্রি ধান৭৮ (আমন মৌসুমে উপক‚লীয় লবণাক্ত ও জোয়ারভাটাসহিষ্ণু), বিনাধান-৮ (বোরো মৌসুমে), বিনাধান-১০(বোরো মৌসুমে)
অন্যান্য ফসল : বারি গম-২৫, বারি বার্লি-৭, বারি আলু-৭২, বারি সরিষা-১৬, বারি তিল-৪, বিজেআরআই দেশী পাট-৮ (বিজেসি-২১৯৭), বিনাচিনাবাদাম -৬, বিনাচিনাবাদাম -৭, বিনাচিনাবাদাম -৮
২। আকস্মিক প্লাবন, জলাবদ্ধতা ও জোয়ারভাটাসহিষ্ণু উচ্চফলনশীল ফসলের জাত ব্যবহার  
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিপাতের ধরন পরিবর্তিত হচ্ছে। মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মোটামুটি ঠিক থাকলেও এর বিভাজন স্বল্প সময়ে এসে পৌঁছেছে। আবার কোথাও কোথাও হঠাৎ বৃষ্টিপাত জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে। এছাড়া উপক‚লীয় অঞ্চলে জোয়ার ভাটা নিত্যনৈমেত্তিক ব্যাপার। এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে জলাবদ্ধতা ও নিমজ্জনসহিষ্ণু এবং দ্রæতবর্ধনশীল লম্বা চারার উচ্চফলনশীল ফসলের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-ব্রি ধান ২৭ (আউশ মৌসুমে অলবণাক্ত জোয়ারভাটা সহনশীল), ব্রি ধান৪৪ (অলবণাক্ত জোয়ারভাটা এলাকায় আমন মৌসুমে), ব্রি ধান৫১ (আকস্মিক বন্যায় জলমগ্ন সহনশীল আমন মৌসুমে), ব্রি ধান৫২ (আকস্মিক বন্যায় জলমগ্ন সহনশীল আমন মৌসুমে), ব্রি ধান৭৬ (আমন মৌসুমে জোয়ারভাটা সহনশীল), ব্রি ধান৭৭ (আমন মৌসুমে জোয়ারভাটা সহনশীল), বিনাসরিষা-৪ (বৃষ্টিজনিত সাময়িক জলবদ্ধতা সহনশীল) এবং    বিনাসরিষা-৯ (বৃষ্টিজনিত সাময়িক জলবদ্ধতা সহনশীল)।
৩। তাপসহিষ্ণু উচ্চফলনশীল ফসলের জাত ব্যবহার
 জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা বাড়ছে, শীতের ব্যাপ্তি ও তীব্রতা কমছে। এ অবস্থায় তাপসহিষ্ণু জাতগুলো ব্যবহার করলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। তাপসহিষ্ণু উচ্চফলনশীল ফসলের জাতগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- বারি গম -২৫ (তাপসহিষ্ণু ও লবণাক্ততা সহনশীল), বারি গম -২৭, বারি গম -২৮. বারি গম -২৯. বারি গম -৩০. বারি গম -৩১. বারি গম -৩২, বারি গম -৩৩ (তাপসহিষ্ণু এবং ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী), বারি হাইব্রিড ভুট্টা -১৪, বারি হাইব্রিড ভুট্টা -১৫, বারি আলু-৭২ (তাপ ও লবণাক্ততা সহনশীল), বারি আলু-৭৩, বারি হাইব্রিড টমেটো -৮, বারি বেগুন-৯ এবং  বারি বেগুন-১০।
এছাড়া গবেষণা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক উদ্ভাবিত স্বল্প সময়ে আবাদ করা যায় এমন উচ্চফলনশীল জাতগুলো চাষাবাদ করে বৈরি পরিবেশ এড়ানো সম্ভব। পাশাপাশি জীবনচক্রে পানি কম লাগে এমন ফসল নির্বাচন করলে কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলা করা সহজতর হবে। অন্যদিকে উপকূলীয় এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে মুগ ডাল, তরমুজ, সূর্যমুখী চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক লবণাক্ত এলাকায় রেড বিট ও রেড ক্যাবেজ চাষে সফলতা পাওয়া গেছে।
লাগসই কৃষি প্রযুক্তি এবং ব্যবস্থাপনার প্রচলন
শুধু জাত উদ্ভাবন বা সম্প্রসারণ প্রতিক‚ল পরিবেশ মোকাবিলায় যথেষ্ট নয়, এর সাথে প্রয়োজন এলাকা উপযোগী প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং যথাযথ প্রয়োগ।  উপক‚লীয় এলাকার জন্য প্রযোজ্য প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনাগুলো নিম্নরূপ-
১। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব সহনশীল প্রযুক্তিগুলো: সারণি-১ দ্রষ্টব্য
২। জোয়ারভাটা ও লবণাক্তপ্রবণ এলাকায় সর্জান (কান্দিবেড়) পদ্ধতিতে চাষাবাদ : সর্জান বলতে ইন্দোনেশিয়ার একটি    প্রচলিত ফসল উৎপাদন কৌশলকে বুঝায়। এক্ষেত্রে পানিতে ডুবে থাকা বা জোয়ার প্লাবিত জমিতে উঁচু বেড তৈরি করে ফসল চাষ করা হয় যাতে পানি ফসলের ক্ষতি করতে না পারে। এতে পাশাপাশি দুই বেডের (কান্দি) মাঝে একটি নালা (বেড়) সৃষ্টি হয়। বেডে শাকসবজি, ফলগাছ, গোখাদ্য এবং নালায় মাছের চাষ করা যায়। সর্জানভিত্তিক সমন্বিত খামার পদ্ধতির মাধ্যমে বছরব্যাপী সবজি, ফল, মাছ, দুধ, গোখাদ্য উৎপাদন করা সম্ভব।
৩। ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ : জোয়ারভাটাপ্রবণ কিংবা নি¤œাঞ্চলের জলাবদ্ধ জমিতে কচুরিপানা দিয়ে বেড তৈরি করে সবজি ও মসলা ফসলের চারা তৈরি কিংবা আবাদ করাকে ভাসমান পদ্ধতিতে চাষ বলা হয়। ধাপ তৈরি করতে সাধারণত কচুরিপানা, বিভিন্ন ভাসমান জলজ উদ্ভিদ, খড়, নাড়া, আখের ছোবড়া, কাঠি, টোপাপানা, শেওলা, ফসলের অবশিষ্টাংশ, ২/৩টি বাঁশের টুকরা (৩-৪ হাত লম্বা) বা লম্বা ডাল দড়ি এসবের প্রয়োজন হয়। এ পদ্ধতিতে রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় না বললেই চলে। এটি একটি টেকসই ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি।
৪। নতুন জেগে উঠা চরে কৃষি ব্যবস্থাপনা : জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে একদিকে যেমন নদীভাঙন বেড়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে তেমনি নতুন নতুন চর জেগে উঠছে। চরগুলোর মধ্যে কিছু স্থায়ী এবং কিছু পুনরায় ভাঙনের মুখে পতিত হয় অর্থাৎ অস্থায়ী। নতুন জেগে উঠা এসব চরের মাটির ধরন, প্রকৃতি ও উর্বরতা আবাদি জমি থেকে ভিন্নতর। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে চর এলাকার জন্য ফসল  ও চাষাবাদ ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা করতে হবে। চরএলাকায় ধানের পাশাপাশি ডাল, বাদাম, তরমুজ, বাঙ্গি, সয়াবিন ভালো ফলন দেয়। তবে ফল বাগানের মতো দীর্ঘস্থায়ী বাণিজ্যিক কৃষির ক্ষেত্রে চরগুলোর স্থায়িত্বকে বিবেচনায় নিতে হবে।
এছাড়া উপক‚লীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলায় আরো কিছু অভিযোজন কৌশল রয়েছে যা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
* লবণাক্ত এলাকায় সম্পূরক সেচের জন্য মিনিপুকুর ও পাতকুয়া খনন (ডাগ ওয়েল) করে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ।
* সেচের জন্য জমি সমতল ও সেখানে আড়াআড়িভাবে ভেলি তৈরি করে রাখতে হবে।
* মাটি সবসময় অর্ধ ভিজা রাখতে হবে না হলে বাষ্পায়নের ফলে নিচের লবণ ভ‚-ত্বকে ফিরে আসবে।
* বোরো ধানে শুকনা বীজতলা তৈরির মাধ্যমে সুস্থ ও কোল্ড ইনজুরিমুক্ত চারা তৈরি।
* ভাসমান বেডে ধানের বীজতলা তৈরি।
* আকস্মিক বন্যা, লবণাক্ততা কিংবা অন্য কোনো দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন ধান চাষ।
* স্বল্প পানির চাহিদা সম্পন্ন ফসল, যেমন- গম, ভুট্টা, মুগ, মাসকলাই, ছোলা, মসুর ইত্যাদি চাষ।
* দুর্যোগপ্রবণ এলাকা উপযোগী ফসল উৎপাদন পঞ্জিকা তৈরি, বিতরণ ও অনুসরণের ব্যবস্থা করা।
* ফেরোমেন ট্রাপের মাধ্যমে শাকসবজির চাষ।
* জৈব বালাইনাশক ব্যবহার বাড়ানো।
* পানি সাশ্রয়ের জন্য এডবিøউডি পদ্ধতিতে ধানখেতে সেচ প্রদান।
* এলাকাভিত্তিক উপযোগী শস্যবিন্যাস অনুসরণ করা।
* ঘেরের পাড়ে সবজি চাষ করা।
* মাটি স্বাস্থ্য রক্ষায় ভার্মিকম্পোস্ট, কম্পোস্ট, জৈবসার, সবুজ সারের উৎপাদন ও ব্যবহার।
* ভ‚-উপরিস্থ পানির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চত করা।
* দুর্যোগের পূর্বাভাসে আগাম সতর্ক বার্তা প্রদান এবং কৃষি আবহাওয়া বার্তাকে গুরুত্ব দেয়া।
* প্রচলিত কর্ষণ পদ্ধতির পরিবর্তে এলাকা উপযোগী কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার।
* পোল্ডার/বেড়িবাঁধ/খাল ও স্লুইচ গেটের যথাযথ ব্যবস্থাপনা।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশের সব অঞ্চলে ক্ষতির ধরন ও মাত্রা একই রকম হবে না। কাজেই ফসলের কোনো একটি জাত বা প্রযুক্তি সব এলাকার জন্য কার্যকর হবে না। পাশাপাশি উপযোগী চাষাবাদ পদ্ধতি, ফসল ধারার পরিবর্তন, পানি ব্যবস্থাপনা ও প্রতিকূল পরিবশ/আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণেরও ভিন্নতর ব্যবস্থা রয়েছে। অভিযোজন কৌশলে বিষয়গুলো অগ্রাধিকার দিতে পারলে উপক‚লীয় অঞ্চলের টেকসই কৃষি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত হবে।

মো. শাহাদাত হোসেন

আঞ্চলিক কৃষি তথ্য অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, বরিশাল, মোবা : ০১৭১৮৪০১৭৩৬, barisal@ais.gov.bd

বিস্তারিত
ভুট্টা ফসলে ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ ও ব্যবস্থাপনা

ভুট্টা সারা বছর চাষযোগ্য বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী দানাজাতীয় ফসল। ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টার পুষ্টিমান বেশি। এতে প্রায় ১১% আমিষজাতীয় উপাদান রয়েছে। উন্নত পুষ্টিমান ও বহুবিধ ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশে ভুট্টার আবাদ দিন দিন বেড়ে চলেছে। ভুট্টার দানা মানুষের খাদ্য হিসেবে, গাছ ও সবুজ পাতা গোখাদ্য হিসেবে এবং হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে ২০১৬-১৭ সালে ভুট্টার আওতায় জমির পরিমাণ ৩৮৯৭০০ হেক্টর এবং উৎপাদন ৩০২৬০০০ মেট্রিক টন। ভুট্টার গড় ফলন আশানুরূপ নয়। ফলন কম হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে বিভিন্ন প্রকার ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ। এসব ক্ষতিকর পোকা ভুট্টা উৎপাদনে প্রভাব বিস্তার করে এবং এদের আক্রমণে ফসলের উল্লেখযোগ্য অংশ নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তন এবং অন্যান্য কারণে বাংলাদেশে ভুট্টা ফসলে নতুন নতুন পোকার আক্রমণ দেখা যাচ্ছে। এমতাবস্থায় ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ হতে ফসল রক্ষার জন্য এদের আক্রমণের ধরন এবং ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা অত্যন্ত জরুরি। নি¤েœ ভুট্টা ফসলের প্রধান প্রধান ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ এবং ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
কাটুই পোকা (ঈঁঃড়িৎস, অমৎড়ঃরংরঢ়ংরষড়হ)
পোকার লার্ভা মাটি সংলগ্ন চারা গাছের গোড়া কেটে দেয়। একটি লার্ভা একাধিক গাছের গোড়া কেটে দিতে পারে। লার্ভাগুলো দিনের বেলায় মাটির ফাটলে, ঢেলা ও আবর্জনায় লুকিয়ে থাকে এবং রাতের বেলায় ক্ষতিসাধন করে। অতিরিক্ত আক্রমণে জমিতে গাছের সংখ্যা কমে যায় এবং ফলন কম হয়। পূর্ণতাপ্রাপ্ত লার্ভা ৪০-৫০ মিমি লম্বা, কালচে বাদামি বা মেটে বর্ণের।
ব্যবস্থাপনা
*জমি চাষের সময় পোকার লার্ভা এবং পিউপা সংগ্রহ করে মেরে ফেলতে হবে।
*কাটা চারার নিকটে লার্ভাগুলো লুকিয়ে থাকে। এ জন্য সকাল বেলা হাত দ্বারা আশপাশের মাটি খুঁড়ে লার্ভা সংগ্রহ করে মেরে ফেলতে হবে।
*ক্ষেতে সেচ দেওয়া হলে লার্ভাগুলো বের হয়ে আসে। এ সময় কাঠি পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করতে হবে।
*অত্যাধিক আক্রমণে নিম্নলিখিত কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে-
ক্লোরপাইরিফস (ডারসবান ২০ ইসি বা পাইরিফস ২০ ইসি বা ক্লাসিক ২০ ইসি বা অন্য নামের) প্রতিলিটার পানিতে ৫ মিলি অথবা নাইট্রো ৫৫ ইসি (ঈযষড়ৎঢ়ুৎরভড়ং+ঈুঢ়বৎসবঃযৎরহ) প্রতিলিটার পানিতে ২ মিলি অথবা বীজবপনের সময় প্রতি হেক্টরে ২০ কেজি কার্বোফুরান (ফুরাডান ৫জি, ব্রিফার ৫জি বা অন্য নামের) প্রয়োগ করতে হবে।
জাব পোকা (অঢ়যরফং, জড়ঢ়ধষড়ংরঢ়যঁসসধরফরং)
পূর্ণ বয়স্ক পোকা ও নিম্ফ উভয়েই গাছের পাতা, নতুন ডগা, টাসেল ও কচি মোচার সবুজ অংশ থেকে রস চুষে খায়। এরা মধু রস নিঃসৃতকের ফলে আক্রান্ত অংশে শুটিমোল্ড জন্মায় এবং কাল রঙ ধারণ করে। টাসেলে মধু রস জন্মালে পরাগায়নে বিঘœ ঘটে ফলে মোচায় সঠিকভাবে দানা তৈরি হয় না। অতিরিক্ত আত্রমণে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং ফলন কমে যেতে পারে। এরা ভাইরাস রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে।
ব্যবস্থাপনা
*পূর্ণ বয়স্ক পোকা ও নিম্ফ প্রাথমিক অবস্থায় ডগা এবং পাতায় দলবদ্ধভাবে অবস্থান করে। এই অবস্থায় এদেরকে হাত দিয়ে পিষে মেরে ফেলতে হবে।
*বিভিন্ন বন্ধু পোকা যেমন লেডি বিটল, সিরফিডফ্লাই এবং জবফ ঝড়ষফরবৎ নববঃষব  জাবপোকা খায়। এ সমস্ত বন্ধু পোকা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
*অত্যধিক আক্রমণে ম্যালাথিয়ন (ফাইফানন ৫৭ ইসি, সাইফানন৫৭ ইসি, ম্যালাটন৫৭ ইসি, ম্যালাটাফ৫৭ ইসি, সুমাডি৫৭ ইসি বা অন্য নামের) প্রতিলিটার পানিতে ১ মিলি কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
মাজরা পোকা (ঝঃবস নড়ৎবৎ, ঈযরষড়ঢ়ধৎঃবষষঁং)
লার্ভা কচি কাÐ ছিদ্র করে ভিতরে ঢুকে এবং ডিগ পাতার গোড়া কেটে দেয়। ফলে গাছের বিবর্ণ ডগা (উবধফ যবধৎঃ) লক্ষণ প্রকাশ পায়। আক্রান্ত ডগা শুকিয়ে যায় এবং টান দিলে উঠে আসে। এরা বড় গাছে আক্রমণ করে কাÐে ছিদ্র করে ভেতরের অংশ খায় । ফলে অল্প বাতাসে বড় গাছ ভেঙে পড়ে এরা মধ্যস্থ পাতা ছিদ্র টাসেল আক্রমণ করে, টাসেল কেটে দেয়  (চিত্র-১) ফলে পরাগায়ন ব্যাহত হয়। মোচা ধরার পর এরা মোচায় আক্রমণ করে দানা নষ্ট করে ফেলে। এরা রাতের বেলায় কার্যক্ষম। পূর্ণতাপ্রাপ্ত লার্ভা ২০-২৫ মিমি লম্বা, গায়ে রঙ্গিন ডোরাসহ অনেক ফোটা যুক্ত দাগ দেখা যায়। এরা পূর্ণাঙ্গ লার্ভা হিসাবে ভুট্টার সংগ্রহ পরবর্তী গাছ, ডালপালা ও অসংগ্রহকৃত দানায় অবস্থান করে এবং পরবর্তী মৌসুমে পুনরায় আক্রমণ করে।
ব্যবস্থাপনা
*ফসল সংগ্রহের পর অবশিষ্ট অংশ নষ্ট করে ফেলতে হবে কারণ পোকার লার্ভা এদের মধ্যে অবস্থান করে।
*ডিমের গাদা সংগ্রহ করে নষ্ট করতে হবে।
*অত্যধিক আক্রান্ত এলাকায় বীজবপনের সময় হেক্টরপ্রতি ২০ কেজি কার্বোফুরান (ফুরাডান ৫জি, ব্রিফার ৫জি বা অন্য নামের) প্রয়োগ করতে হবে।
*আক্রান্ত গাছ হতে লার্ভা সংগ্রহ করে নষ্ট করে ফেলতে হবে।
*ভুট্টা গাছের উপর থেকে হেক্টরপ্রতি ২০ কেজি কার্বোফুরান (ফুরাডান ৫জি, ব্রিফার ৫জি বা অন্য নামের) এমনভাবে প্রয়োগ করতে হবে যেন কীটনাশকের দানাগুলো পাতার ভেতরে আটকে যায় (ডযড়ৎষ অঢ়ঢ়ষরপধঃরড়হ)।
*অত্যধিক আক্রমণে ডায়াজিনন (সেবিয়ন ৬০ ইসি, হেজিনন৬০ ইসি, ডায়াজল৬০ ইসি, ডায়াজন৬০ ইসি, ডায়াজিনন৬০ ইসি বা অন্য নামের) অথবা কার্বোসালফান (মার্শাল ২০ ইসি, সানসালফান ২০ ইসি, জেনারেল ২০ ইসি বা অন্য নামের) প্রতিলিটার পানিতে ২ মিলি কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে-
গোলাপীমাজরা পোকা (চরহশ নড়ৎবৎ, ঝবংধসরধরহভবৎবহং)
সদ্য জাত লার্ভা কচি কাÐ ছিদ্র করে ভেতরের নরম অংশ খায় ফলে মধ্য ডগা বা মাইজ মরে যায়। লার্ভা গোলাপী রঙের এর মাথা কালচে কমলা বর্ণের হয়। আক্রান্ত ডগা হাত দিয়ে টান দিলে উপরে উঠে আসে। এরা মধ্যস্থ পাতা ছিদ্র করে টাসেলে আক্রমণ করে, টাসেল কেটে দেয় (চিত্র-২) ফলে পরাগায়ন ব্যাহত হয়।
ব্যবস্থাপনা
*আলোর ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে।
*আক্রান্তগাছ হতে লার্ভা সংগ্রহ করে নষ্ট করে ফেলতে হবে।  
অত্যধিক আক্রান্ত এলাকায় বীজবপনের সময় হেক্টরপ্রতি ২০ কেজি কার্বোফুরান (ফুরাডান ৫জি, ব্রিফার ৫জি বা অন্য নামের) প্রয়োগ করতে হবে।
অতিরিক্ত আক্রমণে ডায়াজিনন (সেবিয়ন ৬০ ইসি, হেজিনন৬০ ইসি, ডায়াজল৬০ ইসি, ডায়াজন ৬০ ইসি, ডায়াজিনন৬০ ইসি বা অন্য নামের)   অথবা কার্বোসালফান (মার্শাল ২০ ইসি, সানসালফান ২০ ইসি, জেনারেল ২০ ইসি বা অন্য নামের) প্রতিলিটার পানিতে ২ মিলি কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
আর্মিওয়ার্ম (অৎসুড়িৎস, গুঃযরসহধংবঢ়ধঃধঃধ)
পোকার লার্ভা গাছের মধ্যস্থ ভেতরের নরম পাতায় আক্রমণ করে খায়। এরা পাতার কিনারা দিয়ে খাওয়া শুরু করে। পরবর্তীতে লার্ভাগুলো বয়স্ক পাতায় আক্রমণ করে। অতিরিক্ত আক্রমণে গাছ পাতাবিহীন হয়ে যেতে পারে। আক্রান্ত গাছে পোকার মল দেখা যায়। লার্ভাগুলো গাছের টাসেল এবং মোচায়ও আক্রমণ করে। পূর্ণতাপ্রাপ্ত লার্ভামাটির ভেতরে চেম্বার তৈরি করে পিউপা ধাপ সম্পন্ন করে।
ব্যবস্থাপনা
*আক্রান্ত গাছ থেকে লার্ভাগুলো হাত দ্বারা সংগ্রহ করে নষ্ট করে ফেলতে হবে।
*জমি চাষের সময় মাটিতে অবস্থানরত পোকার পিউপা সংগ্রহ করে নষ্ট করে ফেলতে হবে।  
অত্যাধিক আক্রমণে স্পেনোসেড (ট্রেসার ৪৫ এসসি @, ০.৪মিলি/লিটার বা সাকসেস ২.৫ এসসি@ ১.৩ মিলি/লিটার) বা এমামেকটিন বেনজোয়েট (প্রোক্লেম ৫ এসজি, সাহাম৫ এসজি, হেক্লেম৫ এসজি বা অন্য নামের) @১ গ্রাম/লিটার) কীটনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে-
ফল আর্মিওয়ার্ম (ঋধষষ অৎসুড়িৎস, ঝঢ়ড়ফড়ঢ়ঃবৎধভৎঁমরঢ়বৎফধ)
এটি ভুট্টা ফসলের একটি নতুন বিধ্বংসী পোকা। বাংলাদেশে ২০১৮ সালে সর্বপ্রথম পোকাটির আক্রমণ পরিলক্ষিত হয়। এটি একটি সর্বভুক পোকা, এরা ২৬টি পরিবারের ৮০টি ফসলে আক্রমণ করে থাকে, যার মধ্যে ভুট্টা সর্বাধিক আক্রান্ত ফসল।
এরা ভুট্টা গাছে সকল ধাপে (চারা, অঙ্গজ বৃদ্ধি, টাসেল ও মোচায় দানা তৈরি পর্যায়) আক্রমণ করে থাকে। সদ্যজাত লার্ভা পাতায় ছোট ছিদ্র করে এবং শুধুমাত্র পাতার উপরের সবুজ অংশ খায় । পরবর্তীতে এরা ব্যাপকভাবে পাতা খেয়ে ফেলে। ফলে পাতায় বড় বড় ছিদ্র দেখা যায় । লার্ভাগুলো রাতের বেলায় বেশি ক্ষতি করে। অতিরিক্ত আক্রমণে মাঠের প্রায় সম্পূর্ণ গাছ ঝাঝরা হয়ে যায়। লার্ভাগুলো গাছের খোলের (চিত্র-৩) ভেতরে অবস্থান করে কীটনাশক ও প্রাকৃতিক শত্রæ হতে নিজেদের রক্ষা করে। এরা গাছে মল ত্যাগ করে, যা পরবর্তীতে শুকিয়ে করাতের গুঁড়ার মতো দেখায়। এরা মধ্যস্থ পাতা ছিদ্র করে টাসেলে আক্রমণ করে, টাসেল কেটে দেয় ফলে পরাগায়ন ব্যাহত হয়। মোচা হওয়ার পরে এরা মোচা ও কাÐের সংযোগস্থল ছিদ্র করে মোচার ভেতরে ঢুকে এবং ভেতরের নরম দানা খেয়ে ফেলে ।
ব্যবস্থাপনা
*জমি চাষের সময় মাটিতে অবস্থানরত পোকার পিউপা সংগ্রহ করে নষ্ট করে ফেলতে হবে।  
*ডিমের গাদা এবং ডিম থেকে  সদ্য বের হওয়া লার্ভা (যা একত্রে পাতায় অবস্থান করে) হাত দিয়ে নষ্ট করে ফেলতে হবে।
*বপনের পূর্বে বীজ শোধন করে জমিতে লাগাতে হবে (ঈৎঁরংবৎ ৭০ ডঝ@৪ গ্রাম/কেজি বীজ।
*আক্রান্ত গাছ থেকে লার্ভা সংগ্রহ করে মেরে ফেলতে হবে।
*পূর্ণ বয়স্ক পুরুষ পোকা ধরার জন্য সেক্স ফেরোমন ফাঁদ অত্যন্ত কার্যকরী। ভুট্টা বীজ লাগানোর পর পরই আক্রান্ত এলাকায় ২০-২৫ মিটার দূরে দূরে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ লাগাতে হবে।
*জমিতে উপকারী পোকা ব্রাকন হেবিটর অবমুক্ত করতে হবে। এক হেক্টর জমির জন্য প্রতি সপ্তাহে ১ বাংকার ব্রাকন (৮০০-১০০০টি পোকা) অবমুক্ত করতে হবে।
*আক্রান্ত এলাকায় জৈব বালাইনাশক এসএনপিভি (ঝঘচঠ) @ ০.২ মিলি/লিটার প্রয়োগ করতে হবে।
*পোকাটি অতিদ্রæত কীটনাশক প্রতিরোদ্বিতা গড়ে তুলতে পারে। এ জন্য অধিক আক্রান্ত এলাকায় একান্ত প্রয়োজনে সঠিক নিয়মে স্পেনোসেড (ট্রেসার ৪৫ এসসি @, ০.৪মিলি/লিটার বা সাকসেস ২.৫ এসসি@ ১.৩ মিলি/লিটার) বা এমামেকটিন বেনজোয়েট (প্রোক্লেম ৫ এসজি, সাহাম৫ এসজি, হেক্লেম৫ এসজি বা অন্য নামের @১ গ্রাম/লিটার) বা ঞযরধসবঃযড়ীধস +ঈযষড়ৎধহষৎধহরষরঢ়ৎড়ষব (ভিরতাকো ৪০ ডবিøওজি@০.৬ গ্রাম/লিটার) কীটনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে।
মোচা ছিদ্রকারী পোকা (ঈড়ৎহ বধৎড়িৎস, ঐবষরপড়াবৎঢ়ধধৎসরমবৎধ)
এরা গাছের নরম পাতা ও মোচায় আক্রমণ করে। পোকার লার্ভা গাছের পাতা ছিদ্র করে খায় ফলে পাতায় গোলাকার দাগ দেখা যায়। গাছে মোচা ধরার পর এরা মোচায় আক্রমণ করে সাধারণত মোচার উপরের অংশে এদের দেখা যায়। এরা সিল্ক কেটে মোচা থেকে আলাদা করে (চিত্র-৪) ফলে পরাগায়ন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। মোচায় দানা তৈরি পর্যায়ে এরা নরম দানা খেয়ে ফেলে ফলে ভুট্টার ফলন ব্যাপকভাবে কমে যায়। ফসলের প্রকারভেদে লার্ভার গায়ের রঙ সবুজ, গোলাপী, কমলা, হালকা বাদামি বা কালচে ধূসর রঙের হতে পারে।  
ব্যবস্থাপনা
*জমি উত্তমরূপে চাষ করতে হবে এবং চাষকৃত জমি হতে পোকার পিউপা সংগ্রহ করে নষ্ট করতে হবে।
*জমিতে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ প্রয়োগ করে পুরুষ পোকা ধরার ব্যবস্থা করতে হবে।
* আক্রমণের শুরুতে জেব বালাইনাশক এইচএনপিভি (ঐঘচঠ) প্রতিলিটার পানিতে ০.২ গ্রাম হারে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
*অতিরিক্ত আক্রমণে স্পোনোসেড (ট্রেসার ৪৫ এসসি ০.৪ মিলি/লিটার বা সাকসেস ২.৫ এসসি @ ১.৩ মিলি/লিটার) অথবা ঞযরধসবঃযড়ীধস +ঈযষড়ৎধহষৎধহরষরঢ়ৎড়ষব (ভলিয়ামফ্লাক্সি ৩০০ এসসি) @ ০.৫মিলি/লিটার অথবা এমামেকটিন বেনজোয়েট (প্রোক্লেম ৫ এসজি, সাহাম৫ এসজি, হেক্লেম৫ এসজি বা অন্য নামের) @১ গ্রাম/লিটার)। কীটনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে।

ড. মোঃ জুলফিকার হায়দার প্রধান
প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (কীটতত্ত¡), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সেউজগাড়ী, বগুড়া, মোবা : ০১৭১৬০৭১৭৬৪,  ই-মেইল:  zulfikarhaider@yahoo.com

বিস্তারিত
সুস্থ জীবনের জন্য প্রয়োজন নিরাপদ খাদ্য ও পানি

মানুষের জীবনের জন্য খাদ্য ও পানি অপরিহার্য। সব পানি যেমন পানের যোগ্য নয়, তেমনি সব খাবার স্বাস্থ্যের জন্য সুখকর নয়। এক কথায় বলা যায় একমাত্র বিশুদ্ধ পানিই কেবল পানের যোগ্য। ঠিক তেমনি সব খাদ্য স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ নয়। শুধু স্বাস্থ্যসম্মত, নিরাপদ খাদ্যই জীবনকে বাঁচাতে, রোগমুক্ত রাখতে সক্ষম। তবুও বেঁচে থাকার জন্য আমাদের খাদ্য গ্রহণ করতে হয়। তবে তা অবশ্যই পুষ্টিকর, সুষম, ভেজালমুক্ত এবং নিরাপদ হওয়া প্রয়োজন। এ ধরনের খাবার ও পানি একজন মানুষকে সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখতে      সহায়তা করে। তবে প্রতিদিনের খাদ্যই যদি বিষাক্ত হয়, পানি দূষিত ও পানের অযোগ্য হয়, তাহলে আমাদের জীবনে   প্রতিমুহ‚র্তে হুমকির সম্মুখীন হতে হয়।
বাঙালির প্রধান খাদ্য ভাত। এটি সত্য, আমরা এখন চালসহ সবরকমের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু সেই খাদ্য আমাদের জীবনের জন্য কতটুকু নিরাপদ, মানসম্মত ও স্বাস্থ্যসম্মত তা নিয়ে প্রশ্ন সাপেক্ষ। আমরা প্রতিদিন যা খাচ্ছি তা পুরোপুরি অস্বাস্থ্যকর ও অনিরাপদ এটা হলফ করে বলা যাবে না। আবার সব খাদ্য ও পানি যে স্বাস্থ্যকর,নিরাপদ তাও নিশ্চিত করে বলা যাবে না। তবে বেশির ভাগ খাদ্য ও পানি ভেজাল, নিম্ন মানের। ‘২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের পানি সরবরাহ, পয়োনিষ্কাশন, স্বাস্থ্য ও দারিদ্র্যের বিশ্লে­ষণ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে বিভিন্ন উপায়ে সরবরাহ করা খাবার পানির ৪১ শতাংশ ডায়রিয়ার জীবাণু বহন করছে। পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা ৮০ শতাংশ পানিতে আছে ক্ষতিকর জীবাণু। শহরাঞ্চলে পাইপলাইনে সরবরাহ করা ট্যাপের ৮০ শতাংশ পানিতে ক্ষতিকর জীবাণু ই-কোলাই রয়েছে। প্রতিবেদন  আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, ‘পানির দূষণ ও নিম্নমান’ অনেক অর্জনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। কাজেই এই দূষিত ও মানহীন পানি ব্যবহার করে প্রস্তুত করা খাদ্য সামগ্রীকেও দূষিত করছে। আর সেই দূষিত খাবার আমরা প্রতিদিন গ্রহণ করছি।
ভেজাল, অনিরাপদ খাদ্য ও পানির পরিবর্তে বিশুদ্ধ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত ভেজালমুক্ত নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সরকারের নানামুখী তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত, জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়মিত টহল কার্যক্রম অব্যাহত রাখলেও এই কার্যক্রম প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এই কার্যক্রম শুধু রাজধানীতে নয়, বিভাগীয় পর্যায়, জেলা এমনকি উপজেলা পর্যন্ত স¤প্রসারিত হওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত মনিটরিং করা অপরিহার্য। একই সাথে মাটি, পানি ও ফসলকে বিষমুক্ত রাখার প্রযুক্তি ও পদ্ধতি উদ্ভাবন করা ও এর সঠিক প্রয়োগ প্রয়োজন।
খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন বেড়েছে। নতুন নতুন ধান আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে। অধিক ফসল উৎপাদন করতে গিয়ে জনস্বাস্থ্যকে আমরা হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছি। ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির গবেষণায় কৃষি পণ্যের মধ্যে ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম, সিসা ও আর্সেনিকের অস্তিত্ব মিলেছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম, সিসা ও আর্সেনিক মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে তা বের হতে পারে না। সব কটিই দীর্ঘমেয়াদে কিডনি, লিভার ও মস্তিষ্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এছাড়া ক্যান্সারসহ নানাধরনের ক্রণিক রোগের বড় উৎস হচ্ছে এসব রাসায়নিক। এগুলো ধীরে ধীরে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।
ইউরোপীয় কমিশনের নীতিমালা অনুসারে মানবদেহের জন্য ক্রোমিয়ামের সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রা হচ্ছে ১ পিপিএম। জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের গবেষণায় চালে ক্রোমিয়াম পাওয়া গেছে ৩.৪১৪ পিপিএম পর্যন্ত। ক্যাডমিয়ামের সহনীয় মাত্রা ০.১ পিপিএম হলেও গবেষণায় পাওয়া গেছে ৩.২৩৯৫ পিপিএম পর্যন্ত। সিসার সহনীয় মাত্রা ০.২ পিপিএম হলেও পাওয়া গেছে ১.৮৭ পিপিএম পর্যন্ত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চালে ক্যাডমিয়ামের প্রধান কারণ জমিতে নিম্নমানের টিএসপি সার প্রয়োগ এবং গার্মেন্টস শিল্প, ওষুধ কারখানা, টেক্সটাইল ও ট্যানারির অপরিশোধিত বর্জ্য। তাদের মতে, পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহারের পরিণতি কমবেশি সবাইকেই ভোগ করতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে শিশুরা। সঠিক মান ঠিক না করে এবং প্রয়োগবিধি না মেনে বিষাক্ত কীটনাশক প্রয়োগের ফলে একাধারে উৎপাদিত ফসল, মাছ, পানি ও জমি মারাত্মকভাবে বিষাক্ত হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে মানুষের শরীরে সহজেই প্রবেশ করছে এই বিষাক্ত উপাদান।
ফসল ও মাছে ভারী ধাতু প্রবেশ করছে মূলত মাটি ও পানি থেকে। মাটি ও পানি এমনভাবে রাসায়নিক দূষণের কবলে পড়েছে, যা খাদ্যচক্র হয়ে মানবদেহে ঢুকে মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে তুলছে। নানা ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।
বেঁচে থাকার জন্য আমাদের যে খাদ্য গ্রহণ করতে হয়, সে খাদ্যই যদি রোগাক্রান্ত হওয়ার কারণ হয়, তাহলে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা নেই বললেই চলে। কাজেই আমাদের খাদ্য বিষমুক্ত করার সব ব্যবস্থা এখনই নিতে হবে। বিষাক্ত কীটনাশক ও সার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। কারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়ও শৃঙ্খলা আনতে হবে। বিষমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপের কোনো বিকল্প নেই। খাদ্যে ভেজাল, অনিরাপদ খাদ্য উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও বিক্রি শতভাগ বন্ধে প্রশাসন, উৎপাদনকারী, বিক্রেতা ও মজুদকারীকে কঠোরভাবে শাস্তির আওতায় আনা জরুরি। একই সাথে পানি দূষণকারী, দূষিত পানি বিক্রি, মজুদকারী ও উৎপাদনকারীকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। নাহলে ভেজাল, অনিরাপদ খাদ্য খেয়ে, দূষিত পানি পান করে নানারকম প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে। যা বিভিন্ন সময়ে      চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন।
খাদ্যে ভেজাল রোধে সরকার অত্যন্ত কঠোর অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, র‌্যাব, বিএসটিআই, সিটি কর্পোরেশন পৃথক পৃথকভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে। পাশাপাশি ভেজাল, নকল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বাজারজাত ও বিক্রি, বন্ধে প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করছে এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে জেল জরিমানা করা হচ্ছে। এর সুফলও আসছে। তবে এসব কর্মকর্তা বছরব্যাপী এবং সারাদেশে বিস্তৃত হওয়া প্রয়োজন। তবেই সম্ভব মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য ও পানির নিশ্চয়তা। এসব নিশ্চত করা গেলে মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত হবে পাশাপাশি সাধারণ মানুষ ব্যাপক চিকিৎসা ব্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাবে।

ফারিহা হোসেন

ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, কলাম, মোবা : ০১৮৫৯৮১২৭১৩, ই-মেইল : fariha12345prova@gmail.com

বিস্তারিত
প্রশ্নোত্তর (পৌষ ১৪২৬)

কৃষি বিষয়ক
নিরাপদ ফসল উৎপাদনের জন্য আপনার ফসলের ক্ষতিকারক পোকা ও রোগ দমনে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করুন।
মোছাঃ পারভীন সুলতানা, গ্রাম : পায়রাবন্দ, উপজেলা : মিঠাপুকুর, জেলা : রংপুর
প্রশ্ন : সরিষার কাণ্ড পচা রোগ দমনে কী করণীয়?
উত্তর :  সরিষার কাণ্ড পচা রোগ বীজ ও মাটিবাহিত রোগ। বাড়ন্ত গাছে বিশেষ করে ফুল ধরার সময় এ রোগ দেখা যায়। আর এ রোগে আক্রান্ত স্থানে সাদা তুলোর মতো মাইসেলিয়াম দেখা যায়। এতে করে গাছ পচে মারা যায়। আক্রান্ত গাছের কাণ্ড চিরলে কালো রঙের স্কেলোরেশিয়া দেখতে পাওয়া যায়। সেজন্য বীজ বপনের আগে কার্বেনডাজিম গ্রুপের প্রোভেক্স ২.৫ গ্রাম প্রতি কেজি বীজে মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে। আর যদি রোগ দেখা যায় তবে রোভরাল প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম মিশিয়ে ৩ বার অর্থাৎ গাছের বৃদ্ধি পর্যায়ে, ফুল ও পড ধরার পর্যায়ে প্রয়োগ করলে রোগ দমন করা সহজ হয়।
মো. আবদুল্লাহ, গ্রাম : নকিপুর, উপজেলা : শ্যামনগর, জেলা:  সাতক্ষীরা
প্রশ্ন : সয়াবিন গাছের পাতা মোড়ানো পোকার আক্রমণ রোধে কী করণীয়? জানাবেন।
উত্তর :  সয়াবিন গাছের পাতা মোড়ানো পোকা গাছের বাড় বাড়তি ও ফল ধারণ বাধাগ্রস্ত করে। আর এতে করে ফলন কমে যায়। সে কারণে এ পোকার কীড়া দেখা গেলেই হাতবাছাই করে মেরে ফেলতে হবে। এছাড়া প্রতি বিঘা সয়াবিন জমিতে ৮ থেকে ১০টি কাঠি পুঁতে দিলে পোকাভোজী পাখি এসে এ পোকার কীড়া খেয়ে ফেলার মাধ্যমে এ পোকা দমন করা যায়। তারপরও যদি পোকার আক্রমণ বেশি দেখা যায় তবে সেভিন ২০ ইসি ২ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে সঠিক নিয়মে স্প্রে করলে সুফল পাওয়া যায়।  
মো: নুরুজ্জামান শেখ গ্রাম : খাটুরিয়া, উপজেলা : গোবিন্দগঞ্জ, জেলা : গাইবান্ধা
প্রশ্ন : আলু গাছের শাখায় কালো রঙের দাগ ও ক্ষত এবং অনেক ক্ষেত্রেই গাছের ডাল বেশি দেখা যায়। পাতা ভাইরাসের ন্যায় হালকা মোড়ানো হয়ে যায় ও আলুতেও কালো দাগ পড়ে। এ সমস্যার সমাধান জানাবেন।  
উত্তর : এ ধরনের রোগকে আলুর স্কার্ফ রোগ বলা হয়। এটি আলুর ক্ষতিকারক রোগ। কারণ এ রোগাক্রান্ত আলু বীজ হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। এ সমস্যা রোধে প্রত্যায়িত ও রোগমুক্ত ভালো মানের আলুবীজ ব্যবহার করা দরকার। একই জমিতে বার বার আলু ফসল চাষ না করে শস্যপর্যায় অবলম্বন করা। আর বীজ আলু মাটির বেশি গভীরে রোপণ করা যাবে না। এছাড়া আলুবীজ শোধন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রতি লিটার পানিতে ২.৫ গ্রাম প্রোভেক্স  অথবা ব্যাভিস্টিন প্রতি লিটার পানিতে ৩ গ্রাম মিশিয়ে আলুবীজ শোধন করে বপন করা যায়। আর রোগের আক্রমণ বেশি হলে ব্যাভিস্টিন প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে গাছের গোড়া ভিজিয়ে সঠিকভাবে স্প্রে করতে হবে। আর জমিতে অতিরিক্ত পানি দেওয়া যাবে না। এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করলে আপনি উপকৃত হবেন।    
মো. আবদুর রহমান, গ্রাম: দৌলতপুর, উপজেলা : নড়াইল সদর, জেলা : নড়াইল
প্রশ্ন : ফুলকপির চারা জমিতে কাটা অবস্থায় পড়ে আছে। এ অবস্থায় কি করণীয়।
উত্তর :  ফুলকপির কাটুই পোকার আক্রমণে এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। চারার আশপাশে মাটি খুঁড়লে এ পোকা পাওয়া যায়। ফুলকপির কাটুই পোকা দমনের জন্য ক্ষেতে ডাল পুঁতে দেওয়া যায়। এতে পোকার আক্রমণ রোধ করা যায়। এছাড়া ক্লোরপাইরিফস গ্রæপের কীটনাশক যেমন ডারসবান ৫ মিলি বা সেতারা ২ মিলি হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে বিকেল বেলা গাছের গোড়ায় স্প্রে করতে হয়। এসব ব্যবস্থা নিলে এ  পোকা সহজেই দমন করতে পারবেন।  
মো: বারেক হোসেন, গ্রাম : বামইন, উপজেলা : নিয়ামতপুর, জেলা : নওগাঁ
প্রশ্ন :  ঢেঁড়স গাছের পাতা হলুদ এবং পাতার শিরাগুলো স্পষ্ট ও স্বচ্ছ হয়ে যায়। এ অবস্থায় কী করব?
উত্তর : এ ধরনের রোগাক্রান্ত গাছ দেখামাত্রই তুলে মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে। এ রোগটি ভাইরাসের আক্রমণে হয়ে থাকে। আর ভাইরাসটি বাহক পোকার মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। সে কারণে বাহক পোকা দমনের জন্য ডায়মেথয়েট গ্রুপের রগর, টাফগর, পারফেকথিয়ন ১ মিলি প্রতি লিটার পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে করলে এ সমস্যার সমাধান হবে।  
মোছা: জান্নাতুল ফেরদৌস, গ্রাম : সনগাঁও, উপজেলা : বালিয়াডাঙ্গি, জেলা : ঠাকুরগাঁও
প্রশ্ন : রসুন গাছের পাতা ঝলসে যায় এবং পরবর্তীতে পাতা শুকিয়ে যায়। পাতার উপর ছোট ছোট গোল দাগ পড়ে। প্রতিকার জানাবেন।
উত্তর :  আপনার উল্লিখিত এ সমস্যাটি রসুনের পাতা ঝলসানো রোগ বলে। এ রোগের কারণে পাতা প্রথমে হলুদ পরে বাদামি রঙ ধারণ করে। এ রোগ দমনের জন্য বর্দোমিক্সার (১০ গ্রাম চুন, ১০ গ্রাম তুঁত এর সাথে ১ লিটার পানি) বা ডায়থেন বা রোভরাল ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করলে এ রোগ দমন করতে পারবেন।   
মৎস্য বিষয়ক
মো: সুবির আলী, গ্রাম : মাছহাড়ি, উপজেলা : কাউনিয়া, জেলা: রংপুর
প্রশ্ন : মাছের সম্পূরক খাবার তৈরির নিয়ম ও প্রয়োগ পদ্ধতি সম্পর্কে জানাবেন।
উত্তর : সম্পূরক খাদ্য তৈরির নিয়ম হলো-ফিশমিল ১০%, চালের কুঁড়া ৫৩%, সরিষার খৈল ৩০.৫০%, ভিটামিন ও খনিজ মিশ্রণ ০.৫% ও চিটাগুড় ৬% মেপে নিতে হয়। এগুলো গুঁড়া করে মিশাতে হবে। এরপর পানি দিয়ে মণ্ড তৈরি করে পিলেট মেশিনে দিয়ে ছোট ছোট বড়ি তৈরি করতে হবে। এগুলো শুকিয়ে মাছকে খেতে দেয়া যাবে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট স্থানে, নির্দিষ্ট সময়ে সম্পূরক খাদ্য দিতে হয়। খাদ্যগুলো পুকুরে পানির নিচে নির্দিষ্ট গভীরতায় দিতে হয়। ভাসমান খাদ্য দিলে খাদ্যের অপচয় কম হয়। সম্পূরক খাদ্য দিলে মাছের খাদ্যের অভাব নিশ্চিত দূর হয়। মাছ দ্রত বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও টোপাপানা, ক্ষুদিপানা, কলাপাতা, নেপিয়ার বা প্যারা জাতীয় নরম ঘাস, পাতা ইত্যাদি প্রতিদিন লবণ-পানিতে ধুয়ে সকাল-বিকাল পুকুরে আয়তাকার বেষ্টনীর মধ্যে সরবরাহ করা যেতে পারে।
মো. আক্কাস আলী, গ্রাম : খাটুরিয়া, উপজেলা : ডোমার, জেলা: নীলফামারী
প্রশ্ন : চিংড়ি মাছের নরম ও স্পঞ্জের মতো দেহের কারণ ও এ সমস্যার প্রতিকার বিষয়ে জানতে চাই।   
উত্তর : পানিতে ক্যালসিয়াম কমে গেলে, অ্যামোনিয়া ও তাপমাত্রা বেড়ে গেলে, পুষ্টিকর খাদ্য কমে গেলে এবং পানির গুণাগুণ নষ্ট হয়ে গেলে এ সমস্যা দেখা দেয়। আর এ রোগে চিংড়ির খোলস নরম হয়ে যায়। উপর থেকে চাপ দিলে নিচে ডেবে যায়। খোলস ও মাংসের মধ্যে ফাঁক সৃষ্টি হয়। এ সমস্যার সমাধানে মজুদ ঘনত্ব কমিয়ে পুকুরে অন্তত ৫০% পানি বদল করা। পুকুরে ২ থেকে ৩ মাস অন্তর চুন প্রয়োগ এবং পুকুরে সার ও খাদ্য প্রয়োগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এসব ব্যবস্থা নিলে আপনি উপকার পাবেন।
প্রাণিসম্পদ বিষয়ক
মার্জানা আক্তার, গ্রাম : মৌনগর, উপজেলা : কানাইঘাট, জেলা: সিলেট
প্রশ্ন : আমার ভেড়ার বয়স খাবার খেতে চায় না।  রক্ত শূন্যতা দেখা যাচ্ছে। দুর্বল ও ওজন কমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় কি করণীয়?  
উত্তর : আক্রান্ত ভেড়াকে এনডেক্স বা রেনাডেক্স ১৫০০ মিলিগ্রাম (৭০ কেজির জন্য ১টি ট্যাবলেট) খাওয়াতে হবে। ভেড়াকে বছরে অন্তত দুবার অর্থাৎ বর্ষার শুরুতে এবং বর্ষার শেষে কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে।
শুভচন্দ্র, গ্রাম : মূলগ্রাম, উপজেলা : কালাই, জেলা : জয়পুরহাট
প্রশ্ন : আমার টার্কির বয়স ১ মাস। টার্কির গায়ে অতিরিক্ত জ্বর। সব টার্কি একসাথে জমা হয়ে থাকছে। সাদাটে চুনের মতো ডায়রিয়া হচ্ছে। কি করব?
উত্তর : এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ যার নির্দিষ্ট কোন  চিকিৎসা নেই।  তবে এই রোগ হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং অন্যান্য রোগের সংক্রমণ খুব সহজেই হয়। সেজন্য নিমেক্তো ব্যবস্থপনা গ্রহণ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
সিপ্রোফ্লক্সাসিন ১ মিলি ১ লিটার খাবার পানেিত ভিটামিন সি ১ গ্রাম ৩ লিটার খাবার পানিতে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে ৩ থেকে ৫দিন। য়  
(মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ক প্রশ্ন কৃষি কল সেন্টার হতে প্রাপ্ত)


কৃষিবিদ মো. তৌফিক আরেফীন

উপপ্রধান তথ্য অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫, মোবাইল নং ০১৭১১১১৬০৩২, iquedae25@gmail.com

 

বিস্তারিত
পোলট্রির বিপাকীয় রোগ গাউট ম্যানেজমেন্ট

পোলট্রির মেটাবলিক রোগসমূহের মধ্যে অন্যতম রোগ হলো গাউট। বর্তমানে পোলট্রির নানা ধরনের জেনেটিক পরিবর্তন এবং গবেষণা করে অল্প পরিশ্রমে সুস্থ ও উৎপাদন নিশ্চিত করতে হয়। মেটাবলিক রোগ হল পোলট্রির শরীরের মধ্যে বিপাকক্রিয়াজনিত সমস্যা। শরীরের প্রধান প্রধান অংগসমূহের যেমন, কিডনি, লিভার, হার্ট এবং ফুসফুসের অস্বাভাবিক কার্যকারিতার মধ্যে কোন ধরনের রাসায়নিক পরিবর্তন সাধিত হলেই সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
গাউটের প্রকারভেদ :
পোলট্রির রেচন পক্রিয়ার প্রোটিন এবং পিউরিন মেটাবলিজম হয়ে শেষ প্রডাক্ট উৎপন্ন হয় ইউরিক এসিড। এই ইউরিক এসিড লিভারে তৈরি হয় এবং কিডনির মাধ্যমে তা শরীর থেকে বের হয়ে যায়। মুরগি ইউরোকোটেলিক, ইউরিয়েজ এনজাইমের ঘাটতি হলে এবং পানি গ্রহণের পরিমাণ কমে গেলে ইউরিক এসিড অনেকটা সেমি সলিড হিসাবে মলমূত্রের সাথে বেরিয়ে পড়ে।
এই পরিপাক তন্ত্রের কোন গোলযোগ সৃষ্টি হলে তা ইউরিক এসিড সঠিকভাবে বের হতে না পারলেই তা পর্যায়ক্রমে গাউটে পরিণত হয়। তাই পোলট্রিতে গাউট হতে পারে কিডনি দ্বারা নির্গত বা বের হওয়ার চেয়ে বেশি মাত্রায় ইউরিক এসিড উৎপন্ন হলে অথবা পরিমাণমতো ইউরিক এসিড উৎপন্ন হওয়ার পরেও তা যদি কিডনি কাজ করতে ব্যর্থ হলেও। লিটার গাউট হওয়ার খুব স্বাভাবিক বিষয় হিসাবে কাজ করে। ইউরিক এসিড কম পরিমাণে বের হলে তা মুরগীর রক্ত এবং শরীরের ফ্লুইডে জমা হয়। যা পরবর্তীতে বিভিন্ন ট্যিসুতে জমা হয়।
উৎপাদন ব্যাহতসহ মৃত্যুর হার বাড়তে পারে কারণ রক্তে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেড়ে গেলে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কার্যক্ষমতা কমে যায়। মেকানিক্যাল ক্ষতি হয়ে রক্তের নানা সমস্যা সৃষ্টি করে মুরগি মারা যায়। বিভিন্ন অঙ্গে ইউরিক এসিড জমা হওয়ার উপর ভিত্তি করে গাউটকে বেশ কয়েকটি ভাবে ভাগ করা যায়- তা নিম্নে দেয়া হলো-
ভিসেরাল গাউট : ইউরিক এসিডের ক্রিসটাল অভ্যন্তরীণ অঙ্গ যেমন, কিডনি, লিভার, হার্ট, এবং অন্ত্রে। পোলট্রিতে এই সমস্যা খুবই মারাত্বক এবং সচারচর ঘটে। এই সমস্যায় আক্রান্ত ফ্লকের মৃত্যুর হার শতকরা ১৫-৩৫% পর্যন্ত হতে পারে। যা অল্প বয়স্ক পোলট্রিতে বেশি দেখা যায়।
আর্টিকুলার গাউট : জয়েন্ট, টেনডন এবং লিগামেন্ট সিটে জমা হলে তাকে আর্টিকুলার গাউট বলে। এটি গাউটের ক্রনিক ফর্ম যার সাথে জেনেটিক সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে। খুবই কম দেখা যায় এই ধরনের সমস্যাটি। এই উভয় প্রকারের গাউটেই সাদা চকের মত নিডিল সেপ স্ক্রিটটাল যা সাধারণত টফি নামে  পরিচিত। গাউটে আক্রান্ত মুরগির রক্তে ইউরিক এসিডের পরিমাণ ৪৪ মিলিগ্রাম/১০০ মিলি যেখানে স্বাভাবিকভাবে থাকে ৫-৭ মিলিগ্রাম/১০০ মিলি।
গাউটের লক্ষণ : সাধারণ এবং অনির্দিষ্ট লক্ষণ যেমন, বিষণœ, খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ কমে যাওয়া, শুষ্ক (রাফেড) ফিদার, ইমাসিয়েসন, লেমনেস, মইস্ট ভেন্ট (ভেজা পায়ুপথ) এবং ইন্টারাইটিস প্রভৃতি প্রকাশ পায় যা গাউটের সম্ভাব্যতা নির্দেশ করে। তবে নিশ্চিত হওয়ার একমাত্র উপায় হলো পোস্টমর্টেম। পোস্টমর্টেম করা হলে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে সাদা চকের মতো লক্ষণ প্রকাশ পায়। কিডনি ফুলে যায় এবং আকার অতিরিক্তভাবে বেড়ে যায়।
গাউটের কারণ (পধঁংবং ড়ভ এড়ঁঃ):
বিস্তারিত আলোচনা নিম্নে দেয়া হলো :
১. নিউট্রিশনাল/পুষ্টিগত কারণ
* ক্যালসিয়াম : খাদ্যে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম এবং কম মাত্রায় ফসফরাস থাকলে ক্যালসিয়াম- সোডিয়াম- ইউরেট ক্রিস্টাল তৈরি হয়। ফসফরাস ইউরিনের এসিডিফাইয়ার হিসাবে কাজ করে এবং কম ফসফরাস ইউরেট ক্রিস্টাল গঠনে সহায়তা করে।
* সোডিয়াম : সোডিয়ামের বিষক্রিয়া কিডনিতে অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করে। খাদ্যে অতিরিক্ত সোডিয়াম বাইকার্বোনেট ব্যবহার করলে ইউরিনের ক্ষারীয়তা বৃদ্ধি করে। যা কিডনিতে পাথর সৃষ্টির সম্ভাব্যতা বাড়ায়। পানিতে অতিরিক্ত মাত্রায় লবণও কিডনিতে প্রভাব ফেলতে পারে।
* সালফেট : সালফেটের অসামঞ্জস্যতা সৃষ্টি হলে ক্যালসিয়ামের পুনঃ শোষণ কমিয়ে দেয় ফলে মুত্রের মাধ্যমে অতিরিক্ত যা গাউটের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে।
ভিটামিন : অতিরিক্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি৩ অন্ত্রের ক্যালসিয়াম শোষণ বাড়িয়ে দেয় যা গাউটের পক্ষে কাজ করে এবং পরবর্তীতে ইউরেট ক্রিস্টাল প্রস্তুতে সহায়তা করে। দীর্ঘ সময় ভিটামিন এ এর ঘাটতি থাকলে অন্ত্রের টিবিউলার কোষগুলো সঠিকভাবে বৃদ্ধি পায় না যার ফলে কিডনিতে ইউরেটস জমা হয়।
প্রোটিন : কিডনি সুস্থ থাকলে প্রোটিন একটু বেশি থাকলেও সমস্যা হয় না। কিন্তু কোন কারণে যদি কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত থাকে তাহলে তা ফিডে ৩০ শতাংশের বেশি ক্রুড প্রোটিন হলে তা খুব ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। প্রোটিন উপাদানে যদি কোন ভেজাল থাকে তাহলে তা ইউরিয়া বিভাজিত হয়ে নাইট্রোজেনাস উপকরণসমূহ বাড়িয়ে দেয় যার ইউরিক এসিডের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। এই অবস্থা কিডনির কার্যকরিতা কমিয়ে গাউটের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
২. ছোঁয়াচে বা ইনফেকশিয়াস কারণ
ভাইরাল : বেশ কিছু ভাইরাল রোগের বিভিন্ন অবস্থা গাউটের সমস্যা বাড়িয়ে দেয়।
ইনফেকশিয়াস ব্রঙ্কাইটিস ভাইরাস : আইবিভি ভাইরাসের নেফ্রোপ্যাথোজনিক স্ট্রেইন কিডনিকে বিরূপ প্রভাব ফেলে। যা নেফ্রাইটিস এবং মৃত্যুর হার বাড়ায়। পিতামাতার মাধ্যমে এই রোগ ছড়ালে তা অল্প বয়স্ক পোলট্রি বাচ্চার মধ্যে গাউটের সমস্যা সৃষ্টি করে।
এভিয়ান এস্ট্রভাইরাস : এই ভাইরাসের দুইটি প্রজাতি উভয়ই কিডনির কার্যক্ষমতা ব্যহত করে ফলে ইউরিক এসিড শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে জমা হয়। মারাত্মক নেফ্রাইটিস এবং কিডনি ড্যামেজ অল্প বয়স্ক মুরগিতে বেশি দেখা যায়। ইনফেকশিয়াস ব্রঙ্কাইটিস ডিজিজের মতোই এটিও জেনেটিক্যালি পিতামাতা থেকে বাচ্চার মধ্যে স্থানান্তরিত হতে পারে।
ইনফেকশিয়াস বার্সাল ডিজিজ : যদিও গাউটের উপর এই রোগের খুব বেশি প্রভাব নেই তবুও গাউটের সম্ভাব্য কারণের মধ্যে রয়েছে।
মেটাবলিক কারণ : হাইপোক্সিক বা অক্সিজেনের ঘাটতি হলে ইউরিক এসিড উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। প্রথম দিকে এসসাইটিস হলে তা পরবর্তীকে গাউটের প্রভাব বাড়ায়।
মাইকোটক্সিন : অর্কাটক্সিন, সাইট্রিনিন এবং অনান্য পেস্টিসাইড বা ইনসেকটিসাইডের ক্ষতিকর উপাদানের রেসিডিউ কিডনি টিস্যুর উপর প্রভাব পড়ে যার ফলে কিডনির টিবিউলস এবং ইউরেটার ফুলে যায়।
৩. ব্যবস্থাপনা বা ম্যানেজমেন্ট কারণ
পানির ঘাটতি :
* ব্রæডিং এর খুব কম বা বেশি তাপমাত্রায় বাচ্চা খুব ঠাÐা বা গরমে শুষ্ক হয়ে যায় যার ফলে পানির গ্রহণের পরিমাণ কমে যায় এবং পরবর্তীতে তা গাউটের কারণ হতে পারে।
* অপর্যাপ্ত পানির পাত্রের বা নিপলের সংখ্যা।
* পানির পাত্রের উচ্চতায় সমস্যার কারণে পানি গ্রহণের সমস্যা। ফলে পানির অভাবে গাউট হতে পারে।
* ভ্যাকসিন প্রদানের সময় বেশিক্ষণ পানি ছাড়া রাখলে।
* পানির অ¤øতা কম হলে এপিথেলিয়াল লেয়ারের ইরিটেশনের কারণে পানি গ্রহণ কমে যাওয়া।
অস্বাভাবিক হ্যাচারি ম্যানেজমেন্ট ঃ
* ডিম সংরক্ষণ জনিত যে কোন সমস্যা।
* অপর্যাপ্ত ইনকুবেশন অবস্থা।
* বাচ্চা রাখার ঘরের উপযুক্ত পরিবেশের ঘাটতি হওয়া।
* বাচ্চাকে হ্যাচারিতে বেশিক্ষণ রাখা বা পরিবহনের সময় দীর্ঘ সময় পানি ছাড়া রাখা।
* অনান্য ব্যবস্থাপনা কৌশলের মধ্যে শেডের উপযুক্ত তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এবং ভেন্টিলেশনের সমস্যার কারণে খাবার ও পানি গ্রহণে সমস্যা।
৪. অনান্য সমস্যাসমূহ
ওষুধ এবং কেমিক্যালস :
* কিছু এন্টিবায়োটিকস কিডনির মাধ্যমে বেরিয়ে যায় এ ক্ষেত্রে এসব এন্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ডোজ কিডনিতে ব্যাপক প্রভাবে ফেলে।
* ফেনল এবং ক্রিসল প্রজাতির কেমিক্যালসম‚হ অস্বাভাবিক ব্যবহারের ফলে অনেক সময় এর উপদ্রব্য মারাত্মকভাবে কিডনিতে প্রভাব ফেলে।
* পানিতে বেশি মাত্রায় কপার সালফেট বা তুঁতে দেয়ায় পানি গ্রহণ কমে গাউটের সম্ভাবনা বাড়ায়।
* মুরগির ইউরেটরে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা থাকলে তা গাউটের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে।
গাউটের প্রতিকার :
গাউটের সমস্যা সমাধান করতে হয় উপরের উল্লে­খিত কারণসমূহ বিবেচনা করে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এই ক্ষেত্রে ব্রিডার থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক ফার্মে সঠিকভাবে অনুসরণ করতে হয়। নিম্ন বর্ণিত বিষয়সমূহ প্র্যাকটিস করা যেতে পারে।
রোগ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা  
* কমার্শিয়াল ফার্ম এবং ব্রিডারের ইনফেকশিয়াস    ব্রংকাইটিস রোগের টিকার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যেখানে আই বি এর প্রভাব বেশি থাকে সেসব স্থানে হ্যাচারি পর্যায়ে মুরগীতে স্প্রে করাতে বেশ কার্যকরী। চার দিন বয়সে আইবি এর নেফ্রট্রপিক স্ট্রেইন ভ্যাকসিন দিলে বেশ ভালো উপকার পাওয়া যায়।
* ব্রিডারের ভ্যাকসিনেশন তালিকায় এএনভি এবং সিএ এসটিভি সমৃদ্ধ এভিয়ান এস্ট্রোভাইরাস ভ্যাকসিন দিলে বাচ্চার মধ্যে এই রোগের বিস্তার রোধ করা সম্ভব।
* মাইকোটক্সিন ব্যবস্থাপনা যথাযথ রেখে গাউটের বৃদ্ধি রোধ নিশ্চিতের চেষ্টা করতে হবে। মাইকোটক্সিনের কাঁচামাল সঠিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে উপযুক্ত মাননিশ্চিত করতে হবে। ফিডের সাথে ভালো মানের টক্সিন বাইন্ডার এবং এসিডিফাইয়ার যোগ করতে হবে। এতে করে মাইকোটক্সিন এবং অনুজীবের লোড থাকবে স্বাভাবিক।
* নীতি মেনে এন্টিবায়োটিক, ডিসইনফেকটেন্ট, কেমিক্যাল, এন্টি কক্সিডিয়াল প্রভৃতি ব্যবহার করলে কিডনির উপর বিরূপ প্রভাব কমবে।
হ্যাচারি ও ফার্মের ব্যবস্থাপনা কৌশল
* পর্যাপ্ত ইনকুবেশন অবস্থা নিশ্চিত করা- প্রয়োজন মত উপযুক্ত তাপমাত্রা এবং হিউমিডিটি রাখতে হবে।
* উপযুক্ত ডিম সংরক্ষণ এবং হ্যান্ডলিং অবস্থা ঠিক রাখতে হবে।
* প্রথমবার বাচ্চা উঠার পর দীর্ঘসময় বাচ্চা যেন পানির অভাবে না থাকে সে বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। বেশি দূরত্বে বাচ্চা গেলে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
*    ব্রæডিং এর উপযুক্ত তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
* ফার্মের মধ্যে পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন নিশ্চিত করতে হবে।
ফিড এবং ওয়াটার ব্যবস্থাপনা
* ফিডে সঠিক মাত্রায় ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস নিশ্চিত করতে হবে।
* যথাযথ ইলেকট্রোলাইট সরবরাহ করতে হবে। এটাতে অভ্যস্থ থাকতে হবে। সোডিয়াম এর পরিমাণ যখন প্রয়োজন তখন দিতে হবে এবং কোনোভাবেই ৫% এর বেশি সোডিয়াম রাখা যাবে না। সোডিয়ামের জন্য পানির উৎস ও স্বাভাবিক  ভালো হতে হবে। গাউটের সমস্যা দৃশ্যমান হলে সোডিয়াম বাইকার্বোনেট থেকে সোডিয়াম প্রক্রিয়াজাত করার পরিমাণ কমাতে হবে। গাউট হলে অতিরিক্ত কিছু ইলেকট্রোলাইট ইউরিক এসিডের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। ফলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মর্টিলিটি কমানো সম্ভব। চিনির শরবত এক্ষেত্রে ভালো কাজ করে।
* যে এলাকায় গাউট হওয়ার প্রমাণ আছে সেসব ক্ষেত্রে প্রোটিনের পরিমাণ ব্রিডের মানের চেয়ে বেশি দেওয়া যাবে না। কাঁচামাল অবশ্যই ভালোভাবে দেখতে হবে যেন কোনোভাবে তা ইউরিয়া দ্বারা সংক্রমিত না থাকে। কারণ ইউরিয়া বেশি হলে তা ইউরিক এসিড উৎপন্ন করে থাকে। গাউটের সময় ফিড ডাইলেশন অনুশীলন করতে হবে। তা গ্রেইন উৎসের সাথে ডাইলুটেড করে অথবা বিকল্প কোন উপাদান যোগ করে তা ৫-৭ দিন প্রয়োগ করতে হবে। যা কিডনির উপর কিছুটা প্রভাব কমাতে সহায়তা করে।
* পর্যাপ্ত পরিমাণে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন খাবার পানির পাত্র সরবরাহ করার মাধ্যমে পানি গ্রহণের পরিমাণ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি পানির পাত্রের সঠিক উচ্চতা নিশ্চিত করতে হবে যেন মুরগি খুব সহজে আরামেই পানি গ্রহণ করতে পারে।
* পানিতে ব্যবহার উপযোগী অ¤øকারক উপাদানসমূহ যেমন, ভিনেগার, পটাশিয়াম ক্লোরাইড, এমোনিয়াম ক্লোরাইড এবং এমোনিয়াম সালফেট এর ব্যহার এবং কার্যকরিতা নজরদারিতে রাখতে হবে।
* কিডনি রিভিটালাইজার ব্যবহারের মাধ্যমে কিডনির কার্যকারিতা সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়।
* মিথাইল ডাইহাইড্রোক্সি এনালগ, ডাই ইউরেটিকস এবং ডাবের পানি প্রভৃতি ব্যবহার গাউট নিয়ন্ত্রণে উপকারী কার্যকারিতা পাওয়া যায়
গাউট বাংলাদেশে বেশ কিছু খামারে মারাত্মক মর্টালিটি, আক্রান্ত হয়ে খামারীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রোগের প্রাদুর্ভাব লক্ষণীয় হলে দ্রæত উপযুক্ত উপকরণসহ ব্যবস্থাপনা ও যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।

 

ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান

ডেপুটি ম্যানেজার টেকনিক্যাল, রাশিক জিপি হ্যাচারী লিমিটেড, মোবাইল : ০১৭২৩৭৮৬৮৭৭, ই-মেইল : mustakahammad@gmail.com

 

 

বিস্তারিত
বিনাসয়াবিন-৬ চাষাবাদ পদ্ধতি

বারিসয়াবিন-৫ জাতের বীজে বিভিন্ন মাত্রায় গামারশ্মি (১৫০, ২০০, ২৫০, ৩০০ এবং ৩৫০ গ্রে) প্রয়োগ করে পরবর্তী প্রজন্মে একক গাছ নির্বাচন পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে ৩০০ গ্রে মাত্রা হতে উন্নত মিউট্যান্ট লাইন এসবিএম-২২ নির্বাচন করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক লাইনটিকে দেশের সয়াবিন   চাষাধীন এলাকায় চাষাবাদের জন্য বিনাসয়াবিন-৬ নামে নিবন্ধন দেয়া হয়।  
শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য
গাছ উচ্চতায় মাঝারি, পাতা অন্যান্য জাতের তুলনায় গাঢ় সবুজ এবং বীজের রঙ হালকা হলুদ ও অন্যান্য জাতের বীজের তুলনায় উজ্জ্বল। জাতটি ভাইরাসজনিত হলুদ মোজাইক রোগ সহনশীল এবং পোকার আক্রমণ কম। তাছাড়া জাতটি মাঝারি মাত্রার লবণাক্ততা সহিষ্ণু।
অন্যান্য বৈশিষ্ট্য
গাছের উচ্চতা ৫৫-৬৩ সে.মি.; প্রাথমিক শাখার সংখ্যা ২-৪টি; প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা    ৪৬-৬০টি; প্রতি ফলে বীজের সংখ্যা  ২-৩টি; ১০০ বীজের ওজন ১১.০-১৩.৫ গ্রাম; জীবনকাল ১০৫-১১৫ দিন; গড় ফলন ২.৬০ টন/হে.; সর্বোচ্চ ফলন ৩.২০ টন/হে.।
জমি নির্বাচন
এ দেশের মাটি এবং আবহাওয়ায় রবি ও খরিফ উভয় মৌসুমেই সয়াবিন চাষ করা যায়। বেলে দো-আঁশ হতে     দো-আঁশ মাটি সয়াবিন চাষের জন্য বেশি উপযোগী। খরিফ বা বর্ষা মৌসুমে চাষের জন্য নির্বাচিত জমি অবশ্যই উঁচু ও পানি নিষ্কাশনযোগ্য হতে হবে। রবি মৌসুমে মাঝারি থেকে নিচু জমিতে চাষ করা যায়। নোয়াখালী, ল²ীপুর, চাঁদপুর, ভোলা, যশোর, রংপুর এবং ময়মনসিংহ অঞ্চল জাতগুলো চাষের জন্য উপযোগী।
জমি তৈরি
মাটির প্রকারভেদে ৩-৪টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে এবং আগাছামুক্ত করে বীজ বপন করতে হবে। মই দিয়ে জমি সমান করার পর সুবিধামতো আকারে প্লট তৈরি করে নিলে পরবর্তীতে সেচ প্রয়োগ, পানি নিষ্কাশন ও অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা করতে সুবিধা হয়।
বপনের সময়
বাংলাদেশে রবি ও খরিফ-২ উভয় মৌসুমেই সয়াবিন চাষ করা যায়। রবি মৌসুমে পৌষের প্রথম থেকে মাঘ মাসের মাঝামাঝি (ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারির শেষ) পর্যন্ত এবং খরিফ-২ মৌসুমে মধ্য আষাঢ় থেকে মধ্য ভাদ্র (জুলাইয়ের প্রথম থেকে আগস্টের শেষ) পর্যন্ত বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।
বীজ হার
সারিতে বপনের ক্ষেত্রে হেক্টরপ্রতি ৫৫ কেজি (একরে ২২ কেজি) এবং ছিটিয়ে বপনের ক্ষেত্রে হেক্টরপ্রতি ৭০ কেজি (একরে ২৮ কেজি) বীজ প্রয়োজন।  
বপন পদ্ধতি
সয়াবিন বীজ সারিতে বপন করা উত্তম, তবে ছিটিয়েও বপন করা যায়। সারিতে বপন করলে সারি থেকে সারির দূরত্ব রবি মৌসুমে ৩০ সেমি. বা ১২ ইঞ্চি দিতে হবে। সারিতে ১.০ - ২.০ ইঞ্চি গভীরে বীজ বপন করতে হয়। রবি মৌসুমে ছিটিয়ে বপন করলে চাষের পর বীজ ছিটিয়ে মই দিয়ে ভালোভাবে ঢেকে দিতে হবে। খরিফ-২ মৌসুমে মাটি কাদাযুক্ত হলে বীজ অল্প গভীরতায় দিলেই গজাবে।
সারের মাত্রা ও প্রয়োগ
বাংলাদেশে কৃষি পরিবেশ অঞ্চলভেদে সারের মাত্রা বিভিন্ন রকম হয়। (ছকে সয়াবিন চাষের জন্য সাধারণভাবে অনুমোদিত সারের মাত্রা উল্লেখ করা হলো)। শেষ চাষের আগে সব রাসায়নিক সার ছিটিয়ে মই দিয়ে মাটি সমান করতে হবে। রাসায়নিক সারগুলোর সাথে পচা গোবর অথবা কম্পোস্ট সার প্রয়োগ করলে রাসায়নিক সার কম লাগবে। রাসায়নিক সার শেষ চাষের আগে জমিতে ছিটিয়ে দিয়ে পরে মই দিয়ে মাটি সমান করতে হবে।  
জীবাণুসার প্রয়োগ
সয়াবিন গাছ রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে বাতাস থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে গাছের শিকড়ে জমা করতে পারে। বপনের আগে বীজে জীবাণুসার মিশিয়ে বপন করলে গাছের শিকড়ে নডিউল বা গুটি সহজে সৃষ্টি হয়। শিকড়ে সৃষ্ট এ গুটি থেকে গাছ নাইট্রোজেন পায়। উল্লেখ্য, জীবাণুসার প্রয়োগ করা হলে সাধারণত ইউরিয়া সার প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না।
জীবাণুসার ব্যবহার পদ্ধতি
একটি পাত্রে এক কেজি পরিমাণ বীজ নিয়ে পরিষ্কার পানিতে হাত ভিজিয়ে ভিজা হাতে সয়াবিন বীজ নাড়াচাড়া করতে হবে যাতে সকল বীজের উপরিভাগ ভিজে যায়। এক কেজি সয়াবিন বীজে ২০-৩০ গ্রাম চিটাগুড় বা ভাতের ঠাÐা মাড় ভালোভাবে মেশানোর পর ২০-৩০ গ্রাম জীবাণুসার মিশিয়ে ভালোভাবে নাড়াচাড়া করতে হবে যাতে চিটাগুড় মিশ্রিত আঠালো বীজের গায়ে জীবাণুসার সমভাবে লেগে যায়। জীবাণুসার মেশানোর পর বীজ তাড়াতাড়ি বপন করতে হবে, কারণ জীবাণুসার  পাউডার মেশানোর পর বীজ অনেকক্ষণ ফেলে রাখলে        জীবাণুসারের গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়।
আন্তঃপরিচর্যা
চারা গজানোর ১৫-২০ দিনের মধ্যে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। গাছ খুব ঘন হলে পাতলা করে দিতে হবে এবং সারিতে গাছ হতে গাছের দূরত্ব রাখতে হবে ২.০-৩.০ ইঞ্চি। চারার বয়স ৩০-৩৫ দিন হওয়ার মধ্যেই নিড়ানি অথবা কোদাল দিয়ে কুপিয়ে আগাছা দমন বা গাছ খুব ঘন হলে পাতলা করে দিতে হবে। রবি মৌসুমে গাছে ফুল ধরা এবং ফল বা শুঁটি ধরার সময় সম্পূরক সেচের প্রয়োজন হতে পারে। বৃষ্টি না হলে প্রথম সেচ বীজ গজানোর ২০ থেকে ৩০ দিন পর এবং দ্বিতীয় সেচ বীজ গজানোর ৫০-৫৫ দিন পর দিতে হবে। খরিফ মৌসুমে সাধারণত এ ফসলের জন্য কোনো সেচের প্রয়োজন হয় না, বরং জমিতে পানি জমে গেলে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
রোগবালাই দমন
বিছাপোকা
ডিম থেকে ফোটার পর ছোট অবস্থায় বিছাপোকার কীড়াগুলো একস্থানে দলবদ্ধভাবে থাকে এবং পরবর্তীতে আক্রান্ত গাছের পাতা খেয়ে জালের মতো পাতা ঝাঁঝরা করে ফেলে। এ পোকা দমনের জন্য আক্রান্ত পাতা পোকাসহ তুলে মেরে ফেলতে হবে। পাতা মোড়ানো পোকার কীড়া পাতা ভাঁজ করে ভিতরে অবস্থান করে এবং পাতার সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। উভয় পোকার আক্রমণ বেশি হলে সেভিন ৮৫ এসপি ৩৪ গ্রাম   পাউডার প্রতি ১০ লিটার পানিতে অথবা এডভান্টেজ ২০ এসসি ৩০ মিলি. প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত গাছে  ¯েপ্র করতে হবে।
কাÐের মাছি পোকা
এ পোকার কীড়া কাÐ ছিদ্র করে ভিতরের নরম অংশ খেয়ে ফেলে, ফলে আক্রান্ত গাছ দ্রæত মরে যায়। এ পোকা দমনের জন্য ডায়াজিনন ৬০ ইসি ২৫-৩০ মিলি. প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত জমিতে স্প্রে করতে হবে।
কাÐ পচা রোগ
মাটিতে অবস্থানকারী ছত্রাকের কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। আক্রান্ত গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায় এবং কাÐ ও মূলে কালো দাগ দেখা যায়। আক্রান্ত চারা বা গাছ ধীরে ধীরে শুকিয়ে মরে যায়। গভীর চাষ এবং জমি হতে ফসলের পরিত্যক্ত অংশ, আগাছা ও আবর্জনা পরিষ্কার করে ফেলে এ রোগের উৎস নষ্ট করা যায়।
হলুদ মোজাইক  
সয়াবিনের সবুজ পত্রফলকের উপরিভাগে উজ্জ্বল সোনালী বা হলুদ রঙের চক্রাকার দাগের উপস্থিতি এ রোগের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। সুস্থ এবং রোগমুক্ত বীজ বপনের মাধ্যমে এ রোগের আক্রমণ অনেকটা কমানো যায়। উল্লেখ্য যে, বিনাসয়াবিন-৬ হলুদ মোজাইক রোগ সহনশীল। তবে সুস্থ এবং রোগমুক্ত বীজ বপনের মাধ্যমে এ রোগের আক্রমণ অনেকটা কমানো যায়।
ফসল সংগ্রহ ও বীজ সংরক্ষণ
বিনাসয়াবিন-৬ বপন থেকে ফসল কাটা পর্যন্ত মৌসুমভেদে ১০২ থেকে ১১৫ দিন সময় লাগে। পরিপক্ব অবস্থায় সয়াবিন গাছ শুঁটিসহ হলুদ হয়ে এলে এবং পাতা ঝরে গেলে মাটির উপর হতে কেটে সংগ্রহ করতে হবে। শুঁটিসহ সয়াবিন গাছ রোদে ৩-৪ দিন শুকিয়ে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে বীজ আলাদা করতে হবে। বীজ রোদে ভালো করে শুকিয়ে ঠাÐা করে গুদামজাত করতে হবে। উল্লেখ্য যে, সয়াবিনের অংকুরোদগম ক্ষমতা সাধারণ অবস্থায় বেশি দিন বজায় থাকে না। তাই সংরক্ষণের ২-৩ মাস পরই বীজের অংকুরোদগম ক্ষমতা কমতে শুরু করে। তাই পরবর্তী মৌসুমে ব্যবহারের জন্য বীজ সংরক্ষণ করতে হলে নিম্নলিখিত পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে:
১. মাড়াই করার পর বীজ বিশেষ যতœসহকারে শুকাতে হবে। যদি রোদের উত্তাপ খুব প্রখর হয় তবে বীজ একটানা তিন থেকে চার ঘন্টার বেশি রোদে শুকানো ঠিক নয়। কারণ কড়া রোদে অনেকক্ষণ ধরে বীজ শুকালে অংকুরোদগম ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। তাই প্রতিদিন অল্প সময় করে অর্থাৎ দুই থেকে তিন ঘন্টা করে কয়েক দিন শুকাতে হবে। শীতকালে যখন রোদের তাপ কম থাকে তখন একটানা চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা ধরে শুকালেও কোনো ক্ষতি হয় না। সয়াবিন বীজ সরাসরি সিমেন্টের তৈরি পাকা খোলায় না শুকিয়ে ত্রিপল বা চাটাইয়ের উপর শুকাতে হবে। বীজ এমনভাবে শুকাতে হবে যাতে বীজের আর্দ্রতা ৯% এর বেশি না থাকে। শুকানো বীজ দাঁত দিয়ে কামড় দিলে ‘কট’ শব্দ করে বীজ ভেঙে গেলে বুঝতে হবে যে বীজ ভালোভাবে শুকিয়েছে।
২. শুকানোর পর বীজ ভালোভাবে ঝেড়ে পরিষ্কার করতে হবে এবং রোগাক্রান্ত পচা বীজ বেছে ফেলে দিতে হবে।
৩. বীজ সংরক্ষণের পূর্বে এর অংকুরোদগম ক্ষমতা পরীক্ষা করে নিতে হবে।
৪. বীজ রাখার জন্য পলিথিনের ব্যাগ, প্লাস্টিক বা টিনের ড্রাম, আলকাতরা মাখা মাটির মটকা বা কলসি, বিস্কুটের টিন ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে মোটা পলিথিনের ব্যাগে বীজ রেখে মুখ শক্ত করে বেঁধে নিয়ে তা আবার একটি চটের বস্তায় ভরে রাখলে ভালো হয়। পলিথিনের ব্যাগ, প্লাস্টিক বা ধাতব পাত্র যাই হোক না কেন প্রত্যেক ক্ষেত্রেই এর মুখ ভালোভাবে আটকিয়ে রাখতে হবে যেন কোনোভাবেই ভিতরে বাতাস ঢুকতে না পারে। উল্লেখ্য, বীজ শুকানোর পর গরম অবস্থায় সংরক্ষণ না করে ঠাÐা হলে সংরক্ষণ করতে হবে।

ড. মো. আব্দুল মালেক
মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ, বিনা, ময়মনসিংহ, মোবা : ০১৭১২১০৬৬২০, ই-মেইল : lekbina@gmail.com

 

বিস্তারিত
কবিতা (পৌষ ১৪২৬)

কীটনাশক প্রয়োগ কৌশল
ড. মোঃ আলতাফ হোসেন১

কীটনাশক নিয়ে আছে অনেক বিতর্ক
এর প্রয়োগ নিয়ে তাই থাকতে হবে সতর্ক।
চিনতে হবে পোকা, জানতে হবে ক্ষতির ধরন
আবার ক্ষতির ব্যাপকতার মাত্রাটাও রাখতে হবে স্মরণ।
করতে হবে সঠিক কীটনাশক নির্বাচন
নইলে পন্ড হয়ে যাবে সময় ও শ্রম।
সঠিক সময়ে, সঠিক মাত্রায় করলে কীটনাশক প্রয়োগ
কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে করবে সেটা নতুন মাত্রা যোগ।
ছোট অবস্থায় পোকার কীড়া থাকে বেশ দুর্বল
সে সময়ে কীটনাশক প্রয়োগে দমন হয় সফল।
কীড়া বা নিম্ফ বড় হয়ে গেলে প্রতিরোধী হয়
কীটনাশককে তখন সে ‘ডোন্ট কেয়ার’ কয়।
অনুমোদিত মাত্রায় স্প্রে করবেন ভাল মেশিনে
কখনোই ছিটাবেন না কীটনাশক ঝাড়– বা বারুনে।
স্প্রে করবেন মিষ্টি রোদে- সকালে বা বিকেলে
অবশ্যই করবেন না স্প্রে “খাড়া দুপুরে”।
স্প্রে করা যাবে না- বৃষ্টি বা অধিক বাতাসে
কখনোই করবেন না স্প্রে শিশির ভেজা পাতাতে।
মাটিতে গাছের পানি স্বল্পাবস্থায় করবেন না স্প্রে
আবার প্রচুর ফুটন্ত ফুলে স্প্রে দিবেন ভেবে চিন্তে।
স্প্রে করবেন বাতাশের অনুক‚লে, প্রতিক‚লে নয়
প্রতিক‚লে করলে স্প্রে শরীর ও স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়।
নাক, মুখ, চোখ ও শরীর ঢেকে করতে হবে স্প্রে
পুকুর, ডোবা ও নালাতে ব্যবহৃত মেশিন ধুবেন না যে!
কীটনাশক মাত্রই বিষ- মনে রাখবেন ভাই
যথেচ্ছা এর প্রয়োগ থেকে বিরত থাকা চাই।
কীটনাশকের সঠিক ও পরিমিত ব্যবহার
আরও সমৃদ্ধ করবে আমাদের খাদ্য ভাণ্ডার।

 

কুমড়ো ফুল

মোঃ মাজেদুল ইসলাম (মিন্টু)২

কুমড়ো ফুল কুমড়ো ফুল,
গাছের ডগায় করে দোদুল।
পুরুষ-স্ত্রী পাশাপাশি,
করছে তারা হাসাহাসি।
স্ত্রী ফুল চিনতে হলে,
ফুলের নিচে চোখটি মেলে।
দেখ, সেথায় আছে কি?
ছোট্ট জালী কুমড়োটি।

কুমড়ো ফুল কুমড়ো ফুল,
ভোর বেলা ফোটে ফুল।
পরাগায়ন হয় সকালে,
নইলে মরে অকালে।
লতায় লতায় ফোটে ফুল,
মৌমাছিরা হয় ব্যাকুল।
মধু খেয়ে নাচ্ছে,
পরাগায়ন তাই হচ্ছে।

কুমড়ো ফুল কুমড়ো ফুল,
রঙ ঢঙে করে আকুল।
হস্ত পরাগায়ন করে দিলে,
অধিক হারে ফলন মিলে।

১প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ডাল গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই, ঈশ্বরদী, পাবনা, মোবাইল : ০১৭২৫-০৩৪৫৯৫, ২উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, উপজেলা কৃষি অফিস, পাবনা সদর,পাবনা। মোবাইল নং:- ০১৭১৭৪৬৬৯৯৮

বিস্তারিত
চরাঞ্চলে মিষ্টিকুমড়া উৎপাদনে স্যান্ডবার প্রযুক্তি

মিষ্টিকুমড়া সকলের প্রিয় একটি সবজি। এটিকে গরিবের পুষ্টি বলা হয়। বাংলাদেশে প্রায় সকল বসতবাড়ির আঙিনায় ২/১টি মিষ্টিকুমড়ার গাছ দেখা যায়। তাছাড়া বাণিজ্যিকভাবেও এর ব্যাপক চাষ হচ্ছে। কচি মিষ্টিকুমড়া সবজি হিসেবে এবং পাকা ফল দীর্ঘদিন রেখে সবজি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। পরিপক্ব ফল শুষ্ক ঘরে সাধারণ তাপমাত্রায় প্রায় ৪-৬ মাস সংরক্ষণ করা যায়। পরিপক্ব  ফলের বিটা-ক্যারোটিন রাতকানা রোগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। মিষ্টিকুমড়া ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। পরিপক্ব ফলের প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য অংশে প্রোটিন ১.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১০০ মিগ্রা., ফসফরাস ৩০.০ মিগ্রা., বিটা ক্যারোটিন ৫০ মাইক্রো গ্রাম এবং ভিটামিন-সি ২.০ গ্রাম। এর কচি ডগা, পাতা এবং ফুল সবজি হিসেবে খুবই মুখোরোচক।
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ জমি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে এবং অপরদিকে নদীতে চর জেগে উঠছে। চরের লোকদের দরিদ্রতার অনেক কারণ রয়েছে তার মধ্যে নদীভাঙন, মাটির অনুর্বরতা এবং স্থানীয় জাতের ব্যবহার অন্যতম। অধিকাংশ চরের জমিগুলো রবি মৌসুমে চাষের উপযোগী থাকে, কারণ এই সময় নদীর পানি নিচে নেমে যায় এবং চরগুলো জেগে উঠে। কিছু কিছু চর এলাকা বড় দ্বীপের মতোও হয়। এগুলো কখনও ডুবে যায় না। লোকজন সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করে। সেই সব চরে বিভিন্ন ধরনের     শাকসবজির চাষাবাদ হয়, তার মধ্যে মিষ্টিকুমড়া অন্যতম। চরাঞ্চলের পলি মাটিতে মিষ্টিকুমড়ার ফলন খুব ভালো হয়। একটি গবেষণায় দেখা যায় যে, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের ১০টি জেলায় প্রায় ১,২০,০০০ দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিভিন্ন ধরনের সবজি আবাদের মাধ্যমে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও অপুষ্টি দূর করতে সক্ষম হয়েছে।
জাত পরিচিতি : বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির বীজ বিক্রি হয় তাছাড়া বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) হতে এ পর্যন্ত ৫টি জাত অবমুক্ত করা হয়েছে যার মধ্যে ৩টি হাইব্রিড ও ২ টি মুক্তপরাগায়িত জাত রয়েছে। জাতগুলো হলো-
ক) বারি মিষ্টিকুমড়া - ১ (মাঝারি আকারের) খ) বারি        মিষ্টিকুমড়া- ২ (ছোট আকারের)
গ) বারি হাইব্রিড মিষ্টিকুমড়া - ১ (মাঝারি আকারের)
ঘ) বারি হাইব্রিড মিষ্টিকুমড়া - ২ (মাঝারি আকারের)
ঙ) বারি হাইব্রিড মিষ্টিকুমড়া - ৩ (মাঝারি আকারের)
উক্ত মিষ্টিকুমড়ার জাতগুলোর মধ্যে বারি হাইব্রিড মিষ্টিকুমড়া-১ রংপুর, বগুড়া ও গাইবান্ধা জেলার দুর্গম চরে ব্যাপকভাবে চাষাবাদ হচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা হতে উদ্ভাবিত জাতগুলো ফলের আকার, আকৃতি, শাঁস এর রঙ, শাঁসের মিষ্টতা, গাছ প্রতি ফলের সংখ্যা ইত্যাদির দিক থেকে অন্য যে কোন জাতের চেয়ে উৎকৃষ্ট। উক্ত জাতগুলো নিশ্চিতভাবে চরাঞ্চলে কৃষকের কাছে অধিক জনপ্রিয়তা পাবে। বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট একটি প্রকল্পের মাধ্যমে উক্ত চরাঞ্চলসমূহে বারি উদ্ভাবিত সবজি জাতসমূহ প্রসারে ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
চাষাবাদ পদ্ধতি : চরাঞ্চলে সবজি চাষাবাদ প্রক্রিয়া অন্য যে কোনো স্থানে চাষাবাদ পদ্ধতি হতে ভিন্ন, চরাঞ্চলে মিষ্টিকুমড়া চাষাবাদের ক্ষেত্রে এক বিশেষ ধরনের চাষাবাদ কৌশলে অবলম্বন করতে হয় যাকে স্যান্ডবার (ঝধহফনধৎ) পদ্ধতি বলে। স্যান্ডবার  হলো নদীর পলি ও বালি দ্বারা প্লাবিত বড় অস্থায়ী ও উন্মুক্ত একটি স্থান যা বন্যার পর পরেই পানি নেমে যেয়ে তৈরি হয়। সাধারণত নভেম্বর মাসের মাঝামাঝিতে যখন নদীর পানি আস্তে আস্তে কমতে শুরু করে তখন স্যন্ডবার দৃশ্যমান হতে থাকে এবং স্যান্ডবার পদ্ধতিতে মিষ্টিকুমড়ার আবাদ শুরু করা যায়। স্যান্ডবার চাষাবাদ পদ্ধতি হলো অনেকটা মাদাতে সবজি চাষের মতোই। এক্ষেত্রে ৭-৮ ফুট দূরে দূরে সারি করে ৩ ফুট গভীর ও ৩ ফুট চওড়া করে গর্ত তৈরি করতে হয়। উক্ত গর্তে ৫-৬ কেজি পচা গোবর/অন্য যে কোনো জৈব সার, টিএসপি ৭০ গ্রাম, এমপি ৩০ গ্রাম, জিপসাম ৪০ গ্রাম, জিংক সালফেট ৪ গ্রাম, বোরিক এসিড ৪ গ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ৫ গ্রাম, পিটের মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে    ১০-১৫ দিন রেখে দিতে হয়। মিষ্টিকুমড়া দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে এবং অনেক লম্বা সময়ব্যাপী ফল দিয়ে থাকে কাজেই এসব ফসলের সফল চাষ করতে হলে গাছের জন্য পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করতে হয়। উক্ত পিটে ৪-৫টি বীজ বপন করতে হয় অথবা পলি ব্যাগে চারা করেও পিটে লাগানো যায় এবং প্রয়োজনীয় পানি দিতে হবে। চারা গজানোর পর ২টি চারা রেখে বাকি চারাগুলো তুলে ফেলে দিতে হবে। মাটির আর্দ্রতা সংরক্ষণের জন্য পিটকে খড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে এবং সপ্তাহে ২-৩ বার পানি দিতে হবে। চারা গাছের বয়স যখন ২৫ দিন হবে তখন প্রতি পিটে ৩৫ গ্রাম ইউরিয়া ও ২০ গ্রাম এমপি সার প্রয়োগ করতে হবে। এই ভাবে ৩৫ গ্রাম ইউরিয়া ৪০ দিন, ৬০ দিন ও ৭৫ দিন বয়সে পিটে প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবারেই সার দেওয়ার পর পর পিট পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে। মিষ্টিকুমড়া পানির প্রতি খুবই সংবেদনশীল। বিশেষ করে ফল ধরার সময় প্রয়োজনীয় পানির অভাব হলে, ফল শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ পর্যন্ত ঝরে যেতে পারে। শুষ্ক মৌসুমে প্রতি ৫-৭ দিন পরপর সেচ দেওয়া প্রয়োজন। মিষ্টিকুমড়া গাছকে মাটিতে বাইতে দিতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে কচি ফল প্রথম থেকেই খড় বা শুকনো কচুরিপানার ওপর রাখার ব্যবস্থা করতে হবে, এতে করে প্রচÐ গরমে বালি উত্তপ্ত হয়ে গেলেও ফল নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
বিশেষ পরিচর্যা  
শোষক শাখা অপসারণ ঃ গাছের গোড়ার দিকে ছোট ছোট শাখা হয়। সেগুলোকে শোষক শাখা বলা হয়। এগুলো গাছের ফলনে এবং যথাযথ শারীরিক বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটায়। কাজেই গাছের গোড়ার দিকে ৪০-৪৫ সেমি পর্যন্ত শাখাগুলো ধারালো বেøড দিয়ে কেটে অপসারণ করতে হবে।
ফলধারণ বৃদ্ধিতে কৃত্রিম পরাগায়ন : মিষ্টিকুমড়ার পরাগায়ন প্রাকৃতিকভাবে প্রধানত মৌমাছির দ্বারা সম্পন্ন হয়। বর্তমানে প্রকৃতিতে মৌমাছির পরিমাণ পর্যাপ্ত নয়। কৃত্রিম পরাগায়নের মাধ্যমে মিষ্টিকুমড়ার ফলন শতকরা ২৫-৩০ ভাগ বাড়ানো যায়। মিষ্টিকুমড়ার ফুল খুব সকালে ফোটে। ফুল ফোটার পর যত তাড়াতাড়ি পরাগায়ন করা যায় ততই ভালো ফল পাওয়া যাবে। মিষ্টিকুমড়ায় কৃত্রিম পরাগায়ন সকাল ৯ ঘটিকার মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। কৃত্রিম পরাগায়নের নিয়ম হলো ফুল ফোটার পর পুরুষ ফুল ছিঁড়ে নিয়ে ফুলের পাপড়ি অপসারণ করা হয় এবং ফুলের পরাগধানী (যার মধ্যে পরাগরেণু থাকে) আস্তে করে স্ত্রী ফুলের গর্ভমুÐে (যেটি গর্ভাশয়ের পেছনে    পাপড়ির মাঝখানে থাকে) ঘষে দেয়া হয়।  
ফল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ : ফলের বোঁটা যখন খড়ের রং ধারণ করে তখনই মিষ্টিকুমড়া সংগ্রহ করা উচিত। এর পূর্বে সংগ্রহ করলে মিষ্টিকুমড়ার মান ভালো থাকে না এবং বেশি দিন সংরক্ষণ করে রাখা যায় না। পাকা ফল সংগ্রহের পূর্বে সেচ দেওয়া কমিয়ে ফেলতে হবে। ফল সংগ্রহের ২/৩ সপ্তাহ পূর্বে সেচ দেওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে হবে। এতে ফলের সংরক্ষণকাল বৃদ্ধি পাবে।
ফলন : বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট হতে উদ্ভাবিত জাতসমূহ যথাযথভাবে চাষ করলে হেক্টরপ্রতি ৩০-৫০ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যেতে পারে।
পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন ব্যবস্থাপনা : ফলের মাছি পোকা মিষ্টিকুমড়ার জন্য একটি মারাত্মক পোকা। স্ত্রী মাছি কচি ফলে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে কীড়াগুলো ফলের শাস খায়, ফল পচে যায় এবং অকালে ঝরে পড়ে এক্ষেত্রে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ আক্রান্ত ও পচা ফল জমিতে না ফেলে তা মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। সেক্স ফেরোমন ও বিষটোপ ফাঁদ যৌথভাবে জমিতে ব্যবহার করতে হবে। বর্তমানে বিভিন্ন কীটনাশক এর দোকানে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ সহজেই পাওয়া যায়। বিষটোপের জন্য থেঁতলানো ১০০ গ্রাম পাকা/আদা পাকা মিষ্টিকুমড়ার সাথে সেভিন পাউডার ০.২৫ গ্রাম এবং ১০০ মিলি পানি মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। বিষটোপ ৩/৪ দিন পরপর পরিবর্তন করতে হবে।
পামকিন বিটল নামক আরেকটি পোকা মিষ্টিকুমড়ার চারা গাছের খুব ক্ষতি করে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে এই পোকার কীড়া গাছের গোড়ায় বাস করে এবং শিকড়ের ক্ষতি করে বড় গাছ মেরে ফেলতে পারে। সেক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ পোকা হাত দিয়ে ধরে মেরে ফেলতে হবে। যদি তাতে কাজ না হয় তবে ২ গ্রাম সেভিন প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে চারা গাছে স্প্রে করতে হবে। কীড়া দমনের জন্য প্রতি গাছের গোড়ায় ২-৫ গ্রাম বাসুডিন/সানফুরান মাটিতে দিয়ে সেচ দিতে হবে।
মিষ্টিকুমড়াতে সবচেয়ে যে রোগটি বেশী দেখা যায় তা হলো সাদা গুড়া রোগ বা পাউডারী মিলডিউ। এক্ষেত্রে পাতার উভয় পাশে প্রথমে সাদা সাদা পাউডার বা গুঁড়া দেখা যায়,  ধীরে ধীরে এ দাগগুলো বড় ও বাদামি হয়ে পাতা শুকিয়ে যায় এবং ফল ঝরে যেতে পারে । এ রোগ আক্রান্ত পাতা ও গাছ সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলে এবং প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম থিওভিট বা সালফোলাক্স/ কুমুলাস অথবা ১০ গ্রাম ক্যালিক্সিন ১৫ দিন পর পর ২ বার ¯েপ্র করে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে ।
বর্তমানে মিষ্টিকুমড়াতে আরো একটি বড় সমস্যা দেখা যাচ্ছে তা হলো ভাইরাস রোগ। এই রোগে আক্রান্ত পাতা সবুজ ও হলুদের ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায় এবং কচি পাতা আস্তে আস্তে কুঁকড়িয়ে যেতে থাকে। এই ভাইরাস রোগ কোন প্রকার ওষুধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। সেক্ষেত্রে একমাত্র পথ হলো ভাইরাস আক্রান্ত গাছ জমিতে দেখা মাত্রই তা জমি থেকে তুলে ফেলে দিতে হবে এবং ভাইরাস মুক্ত গাছ হতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। তবেই কেবল মাত্র এ রোগ হতে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
চরাঞ্চলে কৃষক ভাইয়েরা উপরোক্ত নিয়ম মেনে মিষ্টিকুমড়া আবাদ করলে আর্থিক ভাবে অনেক লাভবান হতে পারেন।  তবে এক্ষেত্রে একটি বিশেষ দিক খেয়াল রাখতে হবে তা হলো হাইব্রিড জাতসমূহ ব্যবহার করলে কোনো অবস্থাতেই তার বীজ পরবর্তী বছর ব্যবহারের জন্য সংরক্ষন করা যাবে না। প্রতি বছর নতুনভাবে বীজ সংগ্রহ করে তা লাগাতে হবে, তবেই কেবল মাত্র ফলন ঠিক থাকবে। য়  

 

ড. বাহাউদ্দীন আহমেদ

ঊধ্বর্তন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, সবজি বিভাগ, উদ্যানতত্ত¡ গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, মোবা : ০১৫৫৬৩৬৩৯০১
ই-মেইল :bahauddinmed57@yahoo.com

 

বিস্তারিত
বাংলাদেশে মাশরুম বিপণন

বাংলাদেশে মাশরুম অমিত সম্ভাবনাময় একটি ফসল। জনসংখ্যার আধিক্যপূর্ণ এদেশের উর্বর জমি ব্যবহার না করে শুধুমাত্র ফেলনা কৃষিজ বা বনজ বর্জ্য যেমন ধানের খড়, কাঠের গুঁড়া, গমের ভুসি ইত্যাদি ব্যবহার করে উৎপাদন করা যায় পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ঔষধিগুণ সম্পন্ন একটি সবজি, মাশরুম। এ ফসলটি চাষ করার জন্য কোনো  বালাইনাশক, এমনকি কোনো রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় না; তাই মাশরুম চাষ একটি পবিবেশবান্ধব কাজ। তাছাড়াও মাশরুম চাষ একটি শ্রমঘন (খধনড়ঁৎ রহঃবহংরাব) কাজ এবং এতে অল্প জায়গায় অধিক সংখ্যক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ করা যায় এবং মৌলিক পরিবর্তনের মাধ্যমে ফেলনা বর্জ্যকে মূল্যবান খাবারে পরিবর্তন করা যায়। এ প্রেক্ষিতেই অল্প সময়ের ব্যবধানে দেশে মাশরুমের চাষ বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বৃদ্ধির হার আরও বেগবান করার জন্য মাশরুমের ব্যবহার আরও বাড়ানো প্রয়োজন। মাশরুম উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়ন। সাম্প্রতিক দেশে মাশরুম বিপণনের চ্যানেল গড়ে উঠেছে, যা প্রাথমিক পর্যায়ের। বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য সাধারণ উৎপাদক থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা যাতে মাশরুম বিপণন করতে পারে সে লক্ষ্যেই এ লেখা।  
যেকোন পণ্য বাজারজাত করতে হলে দেশে তার চাহিদা থাকতে হয়। সাধারণভাবে বলতে গেলে বাংলাদেশে মাশরুমের চাহিদাই নেই। কেননা দেশের কোনো বাজারে এক কেজি মাশরুম পাওয়া না গেলেও রাজধানীসহ কোথাও কোনো মিছিল হবে না। তাহলে কেন আমরা মাশরুম নিয়ে কথা বলব? কেনইবা মাশরুমের চাষ ও বিপণন কাজে নিয়োজিত হতে মানুষদেরকে পরামর্শ দেব? প্রশ্নটির উত্তর হলো মাশরুম যে একটি পুুষ্টিকর, সুস্বাদু ঔষধি গুণসম্পন্ন সবজি তা সাধারণ মানুষ এখনো জানেন না। যদি জানতে পারেন এবং হাতের কাছে পান তাহলে অবশ্যই তারা মাশরুম খাবেন। এদেশে ১৬ কোটি মানুষ প্রতিদিন মাত্র ২৫ গ্রাম করে মাশরুম খেলেও বছরে ১৪৬০০০০ মে. টন মাশরুমের প্রয়োজন হবে। আর ১০% মানুষও যদি মাশরুম খান তাহলে প্রতিদিন ৪০০ মে. টন মাশরুম প্রয়োজন হবে। বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে, মাশরুম টিউমার নিরাময় করে, উচ্চ রক্তচাপ কমায় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। শুধুমাত্র এসব রোগীরাই যদি নিয়মিত ৫০ গ্রাম করে মাশরুম খান তাহলেও বিপুল পরিমাণ মাশরুম প্রয়োজন হবে। সেই মাশরুমের জোগান দেয়ার  মতো উৎপাদন আমাদের দেশে নেই। তাহলে দেখা যাচ্ছে মাশরুমের চাহিদা থাকা সত্তে¡ও মাশরুম বিপণন একটি সমস্যা হিসেবেই চাষিদের কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে। এ সমস্যার সমাধানে কতিপয় পরামর্শ এখানে সন্নিবেশিত হলো।
মাশরুম গুণাগুণ প্রচার করা  : যিনিই মাশরুম ব্যবসায়ী হবেন তিনি অবশ্যই মাশরুমের গুণাগুণ প্রচার করবেন। এজন্য অবশ্যই তার মাশরুমের গুণাগুণ সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকতে হবে। মাশরুমের গুণাগুণ প্রচারের জন্য ব্যবসায়ীকে গুণাগুণ সংবলিত লিফলেট বা প্রচারপত্র প্রকাশ করতে হবে অথবা সরকারিভাবে প্রকাশিত প্রচারপত্র মানুষের গোচরে আনতে হবে।
মাশরুমের মান ভালো করা : যেকোনো ভালো পণ্য নিজেই নিজের বিজ্ঞাপন। মাশরুমের মান ভালো হলে ভোক্তারা প্রথমত দেখেই আকৃষ্ট হবেন। তারপর খাওয়ার সময় যখন ভালো লাগবে এবং যখন তিনি উপকৃত হবেন তখন তিনি পরবর্তীতে অবশ্যই মাশরুম খোঁজ করবেন ও মাশরুম খাবেন।
মাশরুমের উপস্থিতি নিশ্চিত করা : মাশরুমকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে হবে। অনেক মানুষ আছেন যিনি মাশরুম সম্পর্কে জানেন এবং খেতে চান কিন্তু হাতের কাছে না পাওয়ার কারণে কিনতে পারেন না। সেক্ষেত্রে সর্বত্র মাশরুমের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
মাশরুম দিয়ে মুখরোচক খাবার তৈরি করা : শুধুমাত্র মাশরুম উৎপাদন ও বিপণন করলেই হবে না। মাশরুমকে ভ্যালু এডেড প্রডাক্টে রূপান্তর করতে হবে। কারণ মাশরুম একটি দ্রæত    পচনশীল পণ্য। কোনো কারণে যদি তাজা মাশরুম বিক্রি না হয় তবে তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আর যদি ভ্যালু এডেড প্রডাক্টে রূপান্তর করা যায় তাহলে মাশরুম একদিকে নষ্টের হাত থেকে রক্ষা পাবে, অন্যদিকে মানুষ বিকল্প খাবার পাবে। মাশরুমের তৈরি জ্যাম, আচার, বিস্কুট, কাটলেট, চপ, ফ্রাই ইত্যাদি খুবই সুস্বাদু খাবার। এগুলো  তৈরি করে বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে। বিকল্প খাবার পাওয়াতে পণ্যের কাটতিও বেড়ে যাবে।
মানুষের দৃষ্টিগোচরে আনা : মাশরুমের উপস্থিতি জানান দেয়ার জন্য ‘এখানে মাশরুম পাওয়া যায়’ লেখা ছোট  প্ল্যাকার্ড  তৈরি এবং দুটো  প্ল্যাকার্ড একত্র করে লেমিনেটিং করে ঝুলিয়ে দিলে উভয় দিক থেকে দেখা যাবে এবং মানুষ বুঝতে পারবে যে এখানে মাশরুম পাওয়া যাবে। তবে সাবধান, যে দোকান বা স্থানে এ প্ল্যাকার্ড ঝোলানো থাকবে সেখানে অবশ্যই মাশরুমের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। অল্প পরিমাণে হলেও সেখানে প্রতিদিন মাশরুম পৌঁছাতে হবে যাতে কেউ মাশরুম চাইলে মাশরুম পেতে পারেন অন্যথায় পরের দিন মাশরুম  পাওয়ার জন্য অর্ডার দিতে পারেন।
দোকান ভিজিট : সাধারণত দুপুরবেলা দোকানগুলোতে ক্রেতার ভিড় কম থাকে। এ সময়ে দোকানিরা অনেকটা অলস সময় কাটান অথচ দোকান ছেড়ে যেতেও পারেন না। এ সময়ে যদি কোনো মাশরুম ও মাশরুমজাত পণ্য বিক্রেতা দোকান ভিজিট করেন এবং দোকানিদের কাছে মাশরুমের গুণাগুণ সংবলিত কাগজপত্রসহ মাশরুম উপস্থাপন করেন তাহলে ওইসব দোকানি নিজেদের খাবারের জন্য মাশরুম কিনবেন এমনকি তাদের দোকানে বিক্রির জন্যও মাশরুম রাখবেন।
প্রাতঃভ্রমণকারীদের নিকট মাশরুম বিক্রি : স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ নিয়মিত প্রাতঃভ্রমণ করেন। তাছাড়া দেশের একটি বিরাট সংখ্যক মানুষ ডায়াবেটিস আক্রান্ত; তারাও প্রাতঃভ্রমণ করেন। এ মানুষদের কাছে মাশরুম পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করলে     মাশরুম বিক্রি বেড়ে যাবে।
ফ্রাইশপে মাশরুম বিক্রি :  ফ্রাইশপ বর্তমান সময়ের একটি পরিচিত নাম ও সাধারণ মানুষের হালকা খাবার গ্রহণের একটি উত্তম জায়গা। মাশরুম যে একটি সুস্বাদু সবজি একথা বোঝানোর জন্য ফ্রাইশপের চেয়ে ভালো জায়গা আর নেই। তাই ফ্রাইশপগুলোতে নিয়মিত মাশরুম সরবরাহ করলে এবং এ শপগুলোকে মাশরুমের গুণাগুণ সংবলিত পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে সাজিয়ে দিলে মাশরুম বিক্রি বেড়ে যাবে।
ছোট রেস্তোরাঁয় মাশরুম বিক্রি : ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় মাশরুমের গুণাগুণ প্রচারিত হওয়ায় সাধারণ মানুষ মাশরুম খেতে চাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে ছোট রেস্তোরাঁগুলোতে মাশরুমের খাবার তৈরি করলে তা অবশ্যই বিক্রি হবে। তবে এজন্য  রেস্তোরাঁ মালিক এবং বাবুর্চিকে মাশরুম সম্পর্কে একটি সম্যক ধারণা দিতে হবে এবং রেস্তোরাঁটি মাশরুমের গুণাগুণ সংবলিত পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে সাজিয়ে দিতে হবে।
প্রতিবেশীর কাছে মাশরুম বিক্রি : মাশরুম একটি অনন্য সবজি-কথাটি প্রতিবেশীর কাছে বলতে হবে। প্রতিবেশীদের মধ্যে কেউ রোগী হলে তার রোগ নিরাময়ে কোন মাশরুম ভ‚মিকা রাখতে পারে তা বিস্তারিত জেনে তাকে সাহায্য করতে হবে। ওই প্রতিবেশী যদি উপকৃত হন তবে তিনি মাশরুম খাবেন এবং অন্যদেরও মাশরুম খেতে পরামর্শ দেবেন। এতে মাশরুমের বাজার বেড়ে যাবে।
বাসস্ট্যান্ড ও গলির মুখে মাশরুম বিক্রি : ঢাকা শহরের একটি বড় সংখ্যক মানুষকে বড় রাস্তার বাস, টেক্সি বা ম্যাক্সি থেকে নেমে হেঁটে নিজ বাসস্থানে পৌঁছাতে হয়। এ মানুষদের অনেকেই বড় যান থেকে নেমে বাসস্ট্যান্ডের বা গলির মুখের দোকান থেকে কেনাকাটা করেন। এসব স্থানের যেসব দোকানে ফ্রিজ আছে তাদেরকে বলে যদি মাশরুম বিক্রি করানো যায় তবে অবশ্যই মাশরুম বিক্রি বৃদ্ধি পাবে। এসব দোকানে ‘এখানে মাশরুম পাওয়া যায়’ প্ল্যাকার্ড  ঝুলিয়ে রাখতে হবে।
কাঁচাবাজারে মাশরুম বিক্রি : কাঁচাবাজারে শাকসবজির সাথে মাশরুম রাখলে বিক্রি হবে। এসব দোকানে প্রথম দিকে অল্প পরিমাণে মাশরুম সরবরাহ করতে হবে এবং পরবর্তীতে চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে সরবরাহ বৃদ্ধি করতে হবে।  


সর্বোপরি কথা, উদ্যোগ নিয়ে মাশরুম চাষ ও বিপণন শুরু করতে হবে। যেহেতু এ সবজিটির কোনো অপকার নেই বরং রয়েছে অনন্য পুষ্টি ঔষধিগুণ। তাই এ সবজির উৎপাদন ও বিপণন অবশ্যই বৃদ্ধি পাবে এবং মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে ভ‚মিকা রাখবে।

 

ড. নিরদ চন্দ্র সরকার

উপপরিচালক, মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, ডিএই, সাভার, ঢাকা, মোবা: ০১৫৫২৪০৮১৫২, ই-মেইল : nirod_chandra@yahoo.com

বিস্তারিত
বীজ আর্দ্রতার সাতকাহন

শীতকালে অনেকের চামড়া বা ঠোঁট ফেটে যায়। এঁটেল ও পলিমাটিতেও তা ঘটে। এর অন্যতম কারণ শরীর বা মাটির উপরিভাগের জলীয়কণা বা আর্দ্রতা শুকিয়ে যাওয়া। আর্দ্রতা বা জলীয় ভাগ ইংরেজি ময়েশ্চার নামে অভিহিত। পানি দেহ কোষ গঠনে দরকারি। বেশি পানি কোষের কাঠামো নষ্ট করে। পানির কণা এর নির্দিষ্ট পরিমাণ কোষের আঠালোভাব ধরে রাখায় সহায়ক। তাই শীতকালে তেল বা এজাতীয় কিছু মেখে বা কিছু দিয়ে ঢেকে চামড়া বা মাটির ছিদ্রপথে বন্ধ করে কিংবা মাটির আর্দ্রতা চলাচলের  ভারসাম্য রক্ষা করে। আদিকাল থেকে জমিতে পরিমিত পানি বা সেচ দিয়ে মাটির আর্দ্রতা বাড়িয়ে ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে। আবার প্রয়োজনে জমির অতিরিক্ত পানি শুকিয়ে নেওয়া বা নিষ্কাশন করা হয়। বিভিন্ন ফসল শুকিয়ে তার আর্দ্রতা কমিয়ে অনেক দিন সংরক্ষণ করে রাখা কৃষকের আদিম ঐতিহ্য। আর্দ্রতার প্রভাব কৃষি কাজে বেশ ব্যাপক অংশ জুড়ে বিদ্যামান। আমাদের শরীরর মতো ধান ও অন্যান্য ফসলের বীজে জলীয় ভাগের ভিন্নতার পরিমাণ এর মানউন্নয়নে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে। বীজমান নিশ্চিত করতে না পারলে সে বীজ ভালো হয় না। তাই মান নিশ্চিতকরণ বীজ প্রযুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। বীজের মান নিশ্চিতকরণের জন্য বীজ ফসলের মাঠমান এবং বীজ সংরক্ষণাগারে বীজমান বজায় রাখায় আর্দ্রতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানসম্পন্ন বীজ ব্যবহার করে ১৫% থেকে ২০% উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।
চাষের জন্য ব্যবহৃত গাছের যে কোনো অঙ্গকে কৃষিকাজে বীজ বলা হয়। যেমন ধান বা গমের দানা বা বিচি বা প্রকৃত বীজ, গোল আলু, আদা, রসুন, কচুর প্রভৃতির কন্দ। দেশের বীজ আইনে বলা আছে: ‘বীজ’ অর্থ মাদকদ্রব্য বা চেতনানাশক হিসেবে ব্যবহার ব্যতীত, পুনরায় উৎপাদন এবং চারা তৈরিতে সক্ষম যে কোনো জীবিত ভ্রƒণ বা বংশ বিস্তারের একক (প্রপাগিউল), যেমন- খাদ্যশস্য, ডাল ও তেলবীজ, ফলমূল এবং শাকসবজির বীজ, আঁশজাতীয় ফসলের বীজ, চারা, কন্দ, বাল্ব, রাইজোম, মূল ও কাÐের কাটিংসহ সব ধরনের কলম এবং অন্যান্য অঙ্গজ বংশ বিস্তারের একক।
বীজের জলীয়ভাগ ৪০% এর কাছাকাছি বা তার বেশি হলে এবং উপযুক্ত পরিবেশ পেলে, সম্ভাব্য ফলাফল হিসেবে বীজ অঙ্কুরিত হতে পারে। কিন্তু বীজের জলীয় ভাগ ১৮% - ২০% হলে, বীজ এবং বীজে উপস্থিত ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে বীজ গরম হয়ে যেতে পরে, গজাবে না। বীজের  জলীয়ভাগ ১২%-১৪% হলে, বীজের উপরিভাগ ও অভ্যন্তরে ছত্রাক জন্মাতে পারে, গজাবে না। তবে ধান, গম প্রভৃতি বীজের আর্দ্রতা কমানো গেলে চমৎকার ফলাফল পাওয়া যায়। উল্লেখ্য, বীজ সংরক্ষণের ওপর প্রবাদতুল্য দুটি মতবাদ ব্যক্ত করেছেন হ্যারিংটন-১৯৭০ সালে। প্রথমত, সংরক্ষণাগারে বীজের তাপমাত্রা প্রতি ৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড কমানোর ফলে বীজের সংরক্ষণকাল দ্বিগুণ হবে। এ নিয়ম ৫০ ডিগ্রি থেকে শূন্য ডিগ্রি  সেলসিয়াস সীমার মধ্যে প্রযোজ্য। দ্বিতীয়ত, সংরক্ষণাগারে বীজের জলীয় ভাগ (আর্দ্রতা) ১% কমানোর ফলে বীজের সংরক্ষণকাল দ্বিগুণ হবে। এ নিয়ম বীজের ১৪ - ৪% জলীয় ভাগ সীমার মধ্যে প্রযোজ্য ।  কথা দাঁড়ায়, ১১% আর্দ্রতায়, ধান, গম প্রভৃতি বীজ অন্তত ২৪ মাস বা ২ বছর সংরক্ষণাগারে রাখা যাবে। আর ১২%, ১৩% ও ১৪% আর্দ্রতায় যথাক্রমে অন্তত ১২, ৬ ও  ৩ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে। ধান ও গম যখন কাটা হয় সাধারণত তাতে ২০-২২% এর বেশি আর্দ্রতা থাকে না। বৃষ্টি পেলে বা বর্ষার ভিজে আবহাওয়ায় এর পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। পুষ্ট তবে অধিক ভেজা শস্য উপযুক্ত পরিবেশ পেলে, প্রথমে তা ফোলে এবং পড়ে তার মধ্যে জৈবিক প্রক্রিয়ায় গজানোর কাজ শুরু করে। এ তথ্য মাথায় রেখেই ধান, গম, ডাল প্রভৃতি শস্য কাটা ও মাড়াইয়ের পর পরই রোদে বা কৃত্রিম উপায়ে শুকিয়ে আর্দ্রতা কমিয়ে আনা হয়। তাই আর না ভিজলে এবং ১৪% আর্দ্রতায়  তা প্রায় ৩ মাস সংরক্ষণ করা যায়। পরে জৈবিক, জীবাণু ও তাপমাত্রার আধিক্যের কারণে পচে যেতে পারে কিন্তু গজাবে না। আর যদি ১৪% আর্দ্রতা কিছু দিনের মাঝে আরো কমিয়ে নেয়া যায় তা হলে তো হ্যারিংটন এর-১৯৭০ সালের সে মতবাদ অনুসারে প্রতি ১% আর্দ্রতা কমানোর জন্য সংরক্ষণ কাল দ্বিগুণ বেড়ে যাবে। আবার বীজের আর্দ্রতা নির্ধারিত হারের চেয়ে কমে গেলে বীজাবরণ ফেটে আর্দ্রতার অভাবে গজানো ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। একবার বীজের মান নষ্ট হলে তা ফিরিয়ে আনা যায় না।
প্রায়শ: দায়ে পড়ে জেনেশুনে কোনো কোনো দরিদ্র কৃষক ধান কাটা-মাড়াইয়ের পর পরই ২০-২২% আর্দ্রতার ধান বিক্রয় করে ফেলে, সে ওজনের হারে বেশি পরিমাণ ধান কড়ায়-গÐায় ফাও হিসেবে ফড়িয়ারা নিয়ে নেয়। পরে তা শুকিয়েই বিপণন করে। আর্দ্রতার দায় বিক্রেতার ঘাড়ে বর্তায় বটে, পরে তা শুকায়ে সুদাসলে মুনাফা উসুল করে মধ্যস্বত্বভোগী। কেউ কেউ বলে থাকেন, কৃষক ময়েশ্চার কী তা জানে না।  সে কারণে ভিজাধান কৃষকদের কাছ থেকে খাদ্য অধিদফতর কিনতে  অনাগ্রহী। অনেক কৃষক ময়েশ্চার এ ইংরেজি শব্দটির অর্থ জানতে না পারলেও এর মর্মার্থ ও কার্যকারিতা সম্পর্কে সম্যক অবহিত।
কৃষকসমাজের অনেকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অক্ষরজ্ঞানহীন বা অর্ধাক্ষর হতে পারেন, কিন্তু  তারা স্ব-শিক্ষায় ও অভিজ্ঞতায় বিপুলভাবে সমৃদ্ধ। তাদের প্রকৃতিলব্ধ লোকজ জ্ঞানকে ছোট করে দেখা একদিকে একপেশে অপরদিকে দুঃখজনকও। কবি সুনির্মল বসুর কথায় ‘বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর,/সবার আমি ছাত্র,/নানানভাবে নতুন জিনিস/শিখছি দিবারাত্র ...।’ প্রকৃতি থেকে শেখা এমনি আমাদের তৃণমূলের খনা, লালন, হাসনেরা। এখনো অনেক গবেষক কৃষকদের থেকে লোকজ জ্ঞান নিয়ে সমৃদ্ধ হন।  
প্রাচীনকাল থেকে অদ্যাবধি জমি থেকে শস্য তোলার পর এর বিশাল অংশ সংরক্ষণ করার আগে বেশ কয়েক দিন ধরে রোদে শুকিয়ে নেয়া কৃষাণীদের স্বাভাবিক কর্ম। উল্লেখ্য, এখনো গ্রামাঞ্চলে বছরের একটা সময়ে ঐতিহ্যবাহী মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে শস্য ও বীজসম্পদ সংগ্রহের অন্যতম উৎস হিসেবে। আর প্রতিটি কৃষকের বাড়িই এক একটা শস্য ও বীজ ব্যাংক। শস্য ও বীজ ছাড়া কৃষকের বাড়ি অচিন্তনীয়। ছাই, শুকনা বালু, গাছ-গাছালির পাতা শুকিয়ে বা মরিচের গুঁড়া প্রভৃতি রকমারি বীজ বা শস্যের সাথে মিশিয়ে থাকেন। যেসব বাঁশ অথবা বেতের ঝুড়ি বা ডোলে বীজ বা শস্য সংরক্ষণ করা হয়, সেসব ঝুড়ি বা ডোলের গায়ে আঠালো কাদার সাথে ধানের তুষ মিশিয়ে ঝুড়ির গায়ে লেপে ভালো করে রোদে শুকিয়ে নেয়া হয়। যার প্রধান উদ্দেশ্য, পাত্রকে আলো এবং বাতাস তথা আর্দ্রতা রোধকরণ। যদিও এখন অনেকে গোলা হিসেবে প্লাস্টিক বা ধাতব পাত্রাদি ব্যবহার করে।
অভিজ্ঞজন ধান, গম, ডাল, পাটবীজ, তেলবীজ প্রভৃতি শস্যস্ত‚পের মাঝে হাতের তালু ঢুকিয়ে বা মুঠোয় শস্য নিয়ে ওপর থেকে বীজস্ত‚পে ফেলে এর প্রতিধ্বনি শুনে বুঝতে পারেন; তা কেমন শুকনো। ধান, গম প্রভৃতি শস্য দাঁত দিয়ে চাপ দিলে, যদি তা কট শব্দ করে ভেঙে যায়, তবে বর্তমানে নিশ্চিত হয় যে তা সংরক্ষণের উপযুক্ত। আর্দ্রতামাপক যন্ত্রে শস্যের শুকানো মান আর অভিজ্ঞ চাষির ধারণা মানের মধ্যে অধিকাংশই সাযুজ্য পাওয়া যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপজেলা ও প্রকল্পভ‚ক্ত মাঠ এলাকায়, বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সীর মাঠ অফিস, বেসরকারি বীজ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান, বিএডিসির বীজ ক্রয় কেন্দ্র, খাদ্য অধিদপ্তরের খাদ্য ক্রয় কেন্দ্র প্রভৃতি স্থানে আর্দ্রতা মাপার যন্ত্র সহজলভ্য। এ যন্ত্র ধান, গম বীজ প্রক্রিয়াজাত ও কেনা বেচা  ব্যবসায়ীদের হাতের নাগালেও পাওয়া যায়।
পরিশেষে, একথা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, কৃষকের উৎপাদনের ওপর দাঁড়িয়ে আছে আমাদের সুখে থাকা, তাই তাদের উৎপাদন ব্যবস্থায় আমাদের এখনো অনেক করণীয় আছে। আর্দ্রতার মারপ্যাঁচে ফসল বিপণনের ক্ষতির দায়ভাগ আমাদেরও বহন করতে হবে, যার যার অবস্থান থেকে। তা ধান, পাট, আলু বা যে কোনো কৃষিপণ্যই হোক। বাংলার কাদা মাটিতে মিশে থাকা বঙ্গবন্ধুর উক্তি: ‘যদি পারি দেশের জনগণের জন্য কিছু করব....য়

 কৃষিবিদ এ এইচ ইকবাল আহমেদ

পরিচালক (অব.), বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সী, বাসা কলমিলতা #৪, এলেনবাড়ি সরকারি অফিসার্স কলোনি, তেজগাঁও, ঢাকা-১২১৫,  
সেল: ০১৬১৪৪৪৬১১১, ahiqbal.ahmed@yahoo.com 

বিস্তারিত
উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী নাপাশাক

বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে বিশেষ করে রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলে নাপা একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় শাক। এলাকা ও ভাষা ভেদে এই শাক নাপাশাক, নাফাশাক, লাফাশাক প্রভৃতি নামে পরিচিত। রংপুর, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম প্রভৃতি জেলায় নাপাশাকের চাষ করা হয়। তবে সবচেয়ে বেশি নাপাশাকের চাষ হয় রংপুরের তারাগঞ্জ ও নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলায়। তারাগঞ্জে এ বছর প্রায় ৩৫ হেক্টর জমিতে নাপাশাকের আবাদ হয়েছে। বর্তমানে নাটোর জেলাতেও নাপা শাকের চাষ সম্প্রসারিত হয়েছে। নাটোর সদর উপজেলার হাজরা নাটোর গ্রামে দুই বছর ধরে নাপাশাকের চাষ হচ্ছে। রংপুরের স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে নাপাশাক নিয়ে অনেক প্রবাদ চালু আছে। অনেকের ধারণা নাপাশাকের ঝোল দিয়ে ভাত বেশি টানে। অর্থাৎ এ অঞ্চলে অন্য যে কোনো শাকের চেয়ে নাপাশাকের কদর বেশি। এ শাক যেমন অন্য শাকের চেয়ে মোলায়েম, তেমনি হালকা ঘ্রাণযুক্ত ও সুস্বাদু। ইংরেজিতে এই শাককে ঈযরহবংব গধষষড়ি বা ঈষঁংঃবৎ গধষষড়ি বলে। এর উদ্ভিদতাত্তি¡ক নাম গধষাধ াবৎঃরপরষষধঃধ ও পরিবার গধষাধপবধব অর্থাৎ এটি একটি ঢেঁড়স জাতীয় গাছ। এখন বাণিজ্যিকভাবেও নাপাশাকের চাষ করা হচ্ছে।
উৎপত্তি ও বিস্তার
নাপাশাকের উৎপত্তি পূর্ব এশিয়ায়, সম্ভবত চীনে। চীনে এ ফসলটি আবাদীকরণের পর প্রায় ২৫০০ বছর ধরে চাষ হয়ে আসছে। চীনে এ ফসলটি বেশ ভালোভাবেই জন্মে। চীনে  প্রাক-হান শাসনামলে প্রধান পাঁচটি পাতা বা হার্বের একটি ছিল নাপাশাকের পাতা। অন্য চারটি ছিল রসুনপাতা, পেঁয়াজ, পাতা পেঁয়াজ ও মটর পাতা। আদিতে নাপাশাক এশিয়া ও দক্ষিণ ইউরোপের দেশগুলোতে চাষ করা হতো। পরে ধীরে ধীরে পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, পাকিস্তান, চীন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার, কোরিয়া, ইথিওপিয়াসহ অনেক দেশেই নাপাশাকের চাষ হচ্ছে।  
জলবায়ু ও মাটি
নাপাশাক শীতকালের ফসল। ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়। এ গাছ বেশি পানি ও জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। রোদ যুক্ত ও আধো ছায়া জায়গায় নাপাশাকের চাষ করা যায়। অম্লীয়, নিরপেক্ষ, ক্ষারীয় যে কোনো মাটিতে এই শাক জন্মে। এঁটেল ও এঁটেল দোআঁশ মাটিতেও চাষ করা যায়। অর্থাৎ যে কোনো সাধারণ মাটিতে নাপা জন্মে। এমনকি অনুর্বর মাটিতেও চাষ করা যায়। তবে উঁচু জমি যেখানে পানি জমে না এমন বেলে ও বেলে দো-আঁশ মাটি নাপাশাক চাষের জন্য ভালো।
গাছের বর্ণনা
নাপাশাক একটি দ্রুতবর্ধনশীল গুল্ম প্রকৃতির গাছ। গাছ ১ থেকে ১.৭ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। গাছের কাণ্ড ও পাতা বেশ নরম। পাতার আকৃতি অনেকটা তুলা বা ঢেঁড়স পাতার মতো, করতলাকার, তিন থেকে পাঁচটি গভীর খাঁজযুক্ত, উপরের চেয়ে নিচের পিঠ অপেক্ষাকৃত বেশি রোমশ। কাণ্ড গোলাকার ও মসৃণ। কাণ্ড থেকে বিপরীতমুখীভাবে পাতা গজায়। ফুল ছোট, মাইকের চোঙের মতো, সাদা বা হালকা বেগুনি রঙের। পাতার কক্ষে গুচ্ছাকারে ফুল ফোটে। বীজ দ্বারা বংশবিস্তার ঘটে। গাছ এক বর্ষজীবী। তবে জমিতে রেখে দিলে পরের বছরও মুড়ি গাছের গোড়া থেকে নতুন গাছ জন্মে।
ব্যবহার
খাদ্য হিসেবে : আমাদের দেশে নাপা শুধু শাক হিসেবেই খাওয়া হয়। কিন্তু কিছু কিছু দেশ আছে যেখানে এর পাতা দিয়ে চা বানিয়ে খাওয়া হয়। নাপাশাকের পাতা ও বীজ কাঁচা এবং রান্না করে খাওয়া যায়। কাঁচা পাতা কুচি কুচি করে কেটে সালাদের সাথে যোগ করা যায়। বীজ থেকে বাদামের মতো ঘ্রাণ পাওয়া যায়। বীজ ভেজেও কেউ কেউ খায়। তবে আমাদের দেশে নাপাশাকের কচি কাÐ ও পাতাশাক হিসেবে খাওয়া হয়। শাক ভাজি বা ঝোল রেঁধে খাওয়া হয়। নাপাশাক দিয়ে উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী প্যালকা বা শোলকা রান্না করা হয়। নাপাশাকের সাথে খাবার সোডা দিয়ে প্যালকা রান্না করা হয়। এতে শাকের পাতা ও ডাঁটা গলে খুব নরম হয়ে ঝোলের সাথে মিশে যায়।
প্যালকা রাঁধার নিয়ম হলো, নাপাশাকের কচি ডাঁটাসহ পাতা তুলে ধুয়ে বড় টুকরো করে কাটা হয়। পরে কড়াইতে বা হাঁড়িতে তেল, পেঁয়াজ, মরিচ ভেজে নিয়ে তার মধ্যে শাকের কাটা টুকরো ছেড়ে দেয়া হয়। কিছুক্ষণ নাড়া চাড়া করতে হয়। এর মধ্যে অল্প (আধা থেকে এক চামচ) পরিমাণে খাবার সোডা ও পরিমাণ মতো লবণ দেয়া হয়। কিছুক্ষণ পর উনুন থেকে নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করা হয়। প্যালকা রান্নার সময় তাতে কোনো পানি দেয়া যায় না। অনেকের অভিমত, রাতে নাপাশাক বা প্যালকা খেলে ঠাÐা লাগে। সেজন্য দিনে বা দুপুরে ভাত খাওয়ার সময় প্যালকা দিয়ে ভাত খাওয়া হয়।  রংপুরে এই শাক এতটাই জনপ্রিয় যে, শীতকালে রোজই অনেক বাড়িতে নাপাশাক রান্না করা হয়। পালং শাকের চেয়ে অনেক বেশি জনপ্রিয় এই শাক।
ভেষজ হিসেবে : প্রাচীন গ্রিস ও রোমে নাপাশাক খাদ্য ও ভেষজ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। তখন ত্বকের ব্যথা-ফোলা কমাতে, শ্বাসজনিত রোগ ও পেটের পীড়া নিরাময়ে নাপাশাক ব্যবহার করা হতো। সেকালে এর পাতা দিয়ে চা বানিয়ে খাওয়া হতো শুষ্ক কাশি নিরাময়ের জন্য। এর পাতায় ঢেঁড়সের পাতার মতো এক ধরনের পিচ্ছিল পদার্থ আছে। ত্বকের বিভিন্ন অসুখে এর পাতা বেটে মাখা হতো। ত্বকের কমনীয়তা রক্ষার জন্যও সে আমলে এর ব্যবহার ছিল। পায়ুতন্ত্রের যে কোনো গড়বড়, ডায়রিয়া ও ঘন ঘন তেষ্টা পাওয়া দূর করতে নাপাশাকে খাওয়া হতো। হুপিং কাশির জন্য এর শিকড়ের রস খাওয়ানো হতো। এর পাতা ও কাÐের হজমকারক শক্তি আছে। যেসব নারীরা বেশি বয়সে সন্তান নেয়, গর্ভাবস্থায় তাদের জন্য পরিমাণ মতো নাপাশাক খাওয়া উপকারী। এসবই ছিল সেকালের লোকদের নাপাশাকের সনাতন ব্যবহার।
তবে বর্তমানে স্বাস্থ্য বিভাগের একাধিক গবেষণায় নাপাশাকের অনেক ভেষজ গুণের কথা জানা গেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, নাপার বীজে আছে পলিস্যাকারাইড, যা রক্তের শ্বেতকণিকা গঠনকে উদ্দীপিত করে। এমনকি ক্যানসার কোষ গঠন প্রতিহত করতেও নাপাশাক ও বীজর বিভিন্ন উপাদান ভ‚মিকা রাখতে পারে। তবে নাপাশাকের একটি পার্শ¦ প্রতিক্রিয়ার কথাও জানা গেছে। যদি নাইট্রোজেন জাতীয় সার যেমন ইউরিয়া সার প্রয়োগ করে নাপাশাক চাষ করা হয় তাহলে পাতায় নাইট্রেট জমা হয় ও নাইট্রেটের পরিমাণ বেড়ে যায়। এই পাতা শাক হিসেবে খেলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। তবে শুধু জৈবসার দিয়ে চাষ করা নাপাশাকের গুণাগুণের কোনো তুলনা নেই, সেক্ষেত্রে এরূপ কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ভয় থাকে না। নাপার গাছ ও বীজ থেকে হলুদ, সবুজ ও ঘিয়া রঙ তৈরি করা যায়।
জাত
নাপাশাকের কোনো অনুমোদিত জাত নেই। যা চাষ হয় তার সবই স্থানীয় জাত। প্রধানত দুই জাতের নাপাশাক দেখা যায়- নাফা ও হাফাশাক। তুলনামূলকভাবে নাফা জাতের গাছ খাটো, গাছ ৫০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, পাতা ছোট, পাতার বোঁটা ও শিরা সবুজ, কাণ্ড সবুজ ও সরু, কাÐের বেড় প্রায় ২.৫ থেকে ৩ সেন্টিমিটার, বীজ ছোট। পক্ষান্তরে হাফাশাকের গাছ বেশ লম্বা হয়। গাছ উচ্চতায় প্রায় ১ থেকে ১.৭ মিটার পর্যন্ত হয়। হাফার পাতা বড় ও কিছুটা রোমশ, খসখসে, পাতার শিরা ও ডাঁটার রঙ লালচে। কাণ্ডের নাফার চেয়ে মোটা ও রঙ লালচে। নাফাশাক ভাজি, ঝোল ও প্যালকা রেঁধে খাওয়া হয়। কিন্তু হাফাশাক শুধু প্যালকা রাঁধতে ব্যবহার করা হয়।
বীজ বোনা
শীতকালে নাপাশাক চাষ করা হয়। নভেম্বর মাস বীজ বোনার সবচেয়ে ভালো সময়। তবে আগাম ও নাবী চাষের জন্য নভেম্বরের আগে ও পরেও বীজ বোনা যায়। আগাম চাষের জন্য অক্টোবর মাসে বীজ বোনা যায়। এর আগে বীজ বোনা হয় না। নাবী চাষের জন্য ডিসেম্বরে বীজ বোনা হয়। কেউ কেউ জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত বীজ বোনেন। এরপর আর বীজ বুনলে ভালো হয় না। অন্যান্য শাক চাষের মতো নাপাশাকের জন্য জমি সমান করা হয়। চাষের সময় জমিতে ১০০ থেকে ২০০ কেজি গোবর সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিলে ভালো হয়। যারা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করবেন তারা শেষ চাষের সময় কিছু টিএসপি এবং এমওপি সারও দিতে পারেন। জমি ভালোভাবে আগাছামুক্ত করে চাষ দিয়ে সে জমিতে নাপাশাকের বীজ ছিটিয়ে দেয়া হয়। কেউ কেউ একই জমিতে পাশাপাশি কয়েকটি খÐে কয়েক দফায় এক সপ্তাহ ব্যবধানে বীজ বোনেন। এতে কয়েক দফায় শাক তোলা যায়। সারি করেও বীজ বোনা যায়।  সেক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৫০ থেকে ৭০ সেন্টিমিটার ও প্রতি সারিতে গাছ থেকে গাছের দূরত্ব হবে ৪০ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার। বোনার পর বীজ গজাতে ১ থেকে ২ সপ্তাহ সময় লাগে।
সার প্রয়োগ
বসতবাড়িতে ও অল্প জমিতে যারা নিজের খাওয়ার জন্য নাপাশাকের চাষ করেন তারা সাধারণত জমিতে শুধু গোবর সার ছাড়া আর কোনো সার দেন না। বাণিজ্যিকভাবে যারা চাষ করেন, তারা চারা গজানোর দুই সপ্তাহ পর অথবা গাছ প্রায় ১০ সেন্টিমিটার লম্বা হলে ক্ষেতে ইউরিয়া সার ছিটিয়ে সেচ দেন। এতে গাছের বৃদ্ধি দ্রæত হয়, পাতা বেশি সবুজ হয়। শতকপ্রতি মাত্র ২৫০ থেকে ৪০০ গ্রাম ইউরিয়া ছিটানো হয়।
পরিচর্যা
নাপাশাক এক রকম বিনা যতেœই ভালো জন্মে। দু-একবার শুধু আগাছা পরিষ্কার করে জমিতে হালকা সেচ দিতে হয়। নাপাশাকের জমিতে আন্তঃফসল হিসেবে মরিচ ও রসুনের চাষ করা হয়।
বালাই ব্যবস্থাপনা
নাপাশাকের কোনো বালাইয়ের আক্রমণ নেই বললেই চলে। কোনো পোকা দ্বারা ক্ষতি হতে দেখা যায় না। তবু কৃষকরা কেউ কেউ চারা অবস্থায় ক্ষেতে শুকনো ছাই ছিটান। মাটিতে রস বেশি হলে বা বৃষ্টি হলে মাঝে মধ্যে গোড়া পচা রোগ দেখা যায়। অনেক সময় ছত্রাকজনিত পাতায় দাগ ও পাতায় মরিচা রোগ দেখা যায়। আক্রান্ত গাছ ও পাতা হাতে তুলে পরিষ্কার ও ধ্বংস করাই এসব রোগ নিয়ন্ত্রণের উত্তম ব্যবস্থা। তবে রোগ ও পোকার চেয়ে খরগোশ নাপাশাকের অন্যতম প্রধান শত্রæ। এসব প্রাণীর নাপাশাক খুব প্রিয়। তাই নাপাশাকের কচি পাতা এরা সুযোগ পেলেই খেয়ে নষ্ট করে।
ফসল সংগ্রহ
বীজ বপনের প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ দিন পর থেকে নাপাশাক তোলা শুরু করা যায়। গাছ ছোট অবস্থায় কচি ডগাসহ পাতা তোলা হয়। গাছ একটু বড় হলে শুধু পাতা তোলা হয় বা ছোট ছোট ডাল কেটে শাক সংগ্রহ করা হয়। এতে গোড়া থেকে আবার নতুন পাতা বের হয় ও পরে সেসব পাতাও শাক হিসেবে খাওয়া যায়। এভাবে ৩ থেকে ৪ দফায় এক মৌসুমে শাক তোলা যায়। হাফাশাক গাছের গোড়া রেখে সম্পূর্ণ গাছ কেটে ডালপালাসহ শাক সংগ্রহ করলেও তার গোড়া থেকে আবার নতুন ডালপালা বের হয়। মার্চ মাস পর্যন্ত শাক তোলা চলতে থাকে। ফেব্রæয়ারি-মার্চ মাসে নাপাশাকের গাছে ফুল আসে ও এপ্রিলে ফল পাকে। নাপাশাকের ফুল স্ব-পরাগী তবে পোকা দ্বারাও এর পরাগায়ন ঘটে। মার্চ-এপ্রিলে বীজ শুকিয়ে এলে তা সংগ্রহ করা হয়। একটি ফলে প্রায় ১০ থেকে ১৫টি বীজদানা পাওয়া যায়। সেসব বীজ ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে কাচের বোতলে বা বয়মে মুখ ভালোভাবে আটকে রেখে দিলে বীজ ভালো থাকে। পরের মৌসুমে সেসব বীজ দিয়ে আবার চাষ করা যায়।  ফুল আসার পর শাকের স্বাদ কমে আসে ও তোলার অনুপযুক্ত হতে থাকে।
ফলন
ফলন ভালো হলে প্রতি শতকে প্রায় ৪০ কেজি শাক পাওয়া যায়। এ হিসাবে প্রতি হেক্টর জমি থেকে প্রায় ১০ টন শাক পাওয়া যায়। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী রংপুর অঞ্চলে প্রতি কেজি শাক বিক্রি হয় ১০ থেকে ১৫ টাকা। নাপাশাক চাষে খরচ তেমন নেই বললেই চলে। এজন্য রংপুরে নাপাশাককে বলা হয় গরিবের ফসল।

মৃত্যুঞ্জয় রায়

প্রকল্প পরিচালক, সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা কম্পোনেন্ট-২, খামারবাড়ি, ঢাকা, মোবা : ০১৭১৮২০৯১০৭, ই-মেইল :  Kbdmrityun@yahoo.com

বিস্তারিত

COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon