নদীমাতৃক কৃষি প্রধান বাংলাদেশের মোট আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার যার মধ্যে শতকরা ২০ ভাগ উপকূলীয় এলাকা এবং শতকরা ৩০ ভাগ নিট আবাদি এলাকা। ২.৮৫ মিলিয়ন হেক্টর উপকূলীয় এলাকার মধ্যে প্রায় ০.৮৩ মিলিয়ন হেক্টর আবাদি জমি রয়েছে। দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় উপকূলীয় জনসংখ্যার ঘনত্ব (৭৫০ জন/কিলোমিটার) কম। দেশে মাথাপিছু জমির পরিমাণ ০.৩১ হেক্টর হলেও উপকূলে মাথাপিছু জমির পরিমাণ ০.২৯ হেক্টর (বিবিএস, ২০১০)। এছাড়া বসতবাড়িতে জায়গার পরিমাণও জাতীয় পর্যায়ের (০.০৩২ হেক্টর) চেয়ে উপকূলে (০.০২৮ হেক্টর) কম। উপকূলের জীবনযাত্রা প্রধানত কৃষি নির্ভর। বর্তমানে বাংলাদেশে ফসলের নিবিড়তা ১৯১ শতাংশ সে তুলনায় উপকূলে ফসলের নিবিড়তা ১৩৩ শতাংশ যা তুলনামূলকভাবে কম। তবে উপকূলীয় অঞ্চলে যথাযথ পরিকল্পনা ও উপযোগী কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ফসলের নিবিড়তা বাড়ানো সম্ভব।
বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অন্যান্য ঝুঁকিতে থাকা সত্ত্বেও কৃষিক্ষেত্রে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় অঞ্চল। বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় জেলাগুলো কৃষি পরিবেশ অঞ্চল ১৩, ১৮, ২৩ এর আওতাভুক্ত প্রধানত লবণাক্তপ্রবণ এলাকা। এ এলাকার প্রায় ১০.৫৬ লাখ হেক্টর জমি কম বেশি লবণাক্ততা আক্রান্ত। দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, উজানে পানি প্রত্যাহার, উচ্চ তাপমাত্রা, ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাসের কারণে ক্রমাগতভাবে লবণাক্ততা বাড়ছে। উপকূলীয় এলাকায় বার্ষিক গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫-৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০-১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বৃষ্টিপাতের বেশিরভাগই মে-সেপ্টেম্বর মাসে আমন মৌসুমে হয়ে থাকে, নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি মাসে তেমন বৃষ্টিপাত হয় না ফলে মাটির লবণাক্ততা বাড়ে এবং শুকনো মৌসুমে মিষ্টি পানির অভাবে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়। এসআরডিআইয়ের তথ্য অনুযায়ী নদীর পানির লবণের মাত্রা ০.১৬ থেকে ৩৬ ডেসিসিমেন-মিটার, মাটির লবণাক্ততা ডিসেম্বর-মে মাস ২-৯ ডেসিসিমেন-মিটার, জুন-ডিসেম্বর ২ বা তারও কম থাকে। শীতকাল সংক্ষিপ্ত হওয়ায় রবি শস্যের ফলনও কম হয়। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি উৎপাদন এবং জনজীবনে নেমে আসছে বিপর্যয়। এ থেকে রক্ষা পেতে হলে বাড়াতে হবে মানুষের সচেতনতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় অভিযোজিত কৃষি প্রযুক্তিগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
প্রধান প্রধান সমস্যা
বর্তমানে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের কৃষি চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ অঞ্চলের কৃষি ও কৃষিজীবী মানুষের জীবন জীবিকার ওপর প্রভাব ফেলছে। মাটি ও পানির লবণাক্ততা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততা বৃদ্ধি, দুর্বল পোল্ডার ব্যবস্থাপনা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষ, ঘন ঘন প্রলয়ংকারী প্রাকৃতিক দুর্যোগ সিডর, রেশমী, নার্গিস, আইলা, মহাসেন, কোমেন, রোয়ানু, উচ্চ জোয়ারের প্রভাবে বেড়িবাঁধ ভেঙে কৃষি জমিতে লবণাক্ত পানির প্রবেশ, কৃষি পণ্যের বাজারজাত করার অসুবিধা, সেচ ও নিষ্কাশনের অপ্রতুলতা মানসম্মত কৃষি উপকরণের অভাব, কৃষি শ্রমিকের অভাব, অপরিকল্পিতভাবে খাল দখল, খাল পুনঃখনন-সংস্কার, নদী ভরাট সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যা দূরীকরণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে কৃষির উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে কৃষকের আয় ও জীবনযাত্রার মান উন্নত করা সম্ভব। শুকনো মৌসুমে মাটি ও পানির লবণাক্ততার কারণে বেশিরভাগ জমি পতিত থাকে। দেরিতে আমন ধান কাটা ও মাটি এঁটেল প্রকৃতির হওয়ায় জো আসতে দেরি হওয়া, আমন রোপণের সময় পানির গভীরতা বেশি থাকার কারণে কৃষক স্থানীয় জাতের রোপা আমন চাষ করেন। ফলে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারির ১ম সপ্তাহ পর্যন্ত কৃষক আমন ধান কাটেন। শীতকালের স্থায়িত্ব কম হওয়ার জন্য গম, মসুর, সরিষার মতো রবি ফসল বপনের উপযুক্ত সময় থাকে না, সেচের পানির অভাবে কৃষক জমি পতিত রাখে। উপযুক্ত পরিকল্পনার অভাবে এ অঞ্চলের পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংসের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা, স্বাস্থ্য ও সার্বিক আর্থসামাজিক অবস্থায় ব্যাপক অবনতি হচ্ছে। এ অঞ্চলের জন্য টেকসই কৃষিপ্রযুক্তির পাশাপাশি বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সম্ভাবনাময় গবেষণার ফলাফল, আবহাওয়া, মাটি পানির লবণাক্ততা, লবণ সহনশীল ফসল-জাত ব্যবহার সমন্বয় করে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর অভিযোজন কৌশলগুলো সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন।
প্রধান প্রধান সম্ভাবনা
চুক্তিবদ্ধ চাষিদের মাধ্যমে লবণাক্ত সহনশীল ফসলের জাতগুলোর বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণের কার্যক্রম গ্রহণ, ঘেরের আইলে ও বসতবাড়ির আঙিনায় ফল ও সবজি চাষ সম্প্রসারণ, স্বল্প পানির চাহিদা সম্পন্ন ফসলের আবাদ বাড়ানো, এলাকা উপযোগী খাটো জাতের নারিকেল, পেয়ারা, সফেদা, আমড়া, কুল, ডেউয়া, শরিফা পরিকল্পিত বাগান প্রতিষ্ঠা এবং উচ্চ মূল্যের ফসলের চাষাবাদ সম্প্রসারণ, স্থানীয় ফসলের জাতগুলোর উন্নত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফলন বৃদ্ধি করা, মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় প্রায়োগিক কার্যক্রম গ্রহণ করা, সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বাজার ব্যবস্থার উন্নয়ন, পতিত জমির সুষ্ঠু ব্যবহার ও ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি, আউশ ধানের আবাদ বৃদ্ধি, ডাল ও তেল, মসলা ফসলের আবাদ সম্প্রসারণ উপকূলীয় এলাকার কৃষি ব্যবস্থায় উন্নয়নের সম্ভাব্য সুযোগ রয়েছে। যার ফলে পতিত জমির সুষ্ঠু ব্যবহারসহ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় অভিযোজিত কৃষি প্রযুক্তিগুলো সুষ্ঠু বাস্তবায়নের মাধ্যমে ফসলের নিবিড়তা বাড়ানো সম্ভব।
প্রধান প্রধান শস্যবিন্যাস
প্রধান প্রধান শস্যবিন্যাসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বোরো-পতিত-রোপাআমন, পতিত-পতিত-রোপাআমন, পতিত-রোপাআউশ-রোপাআমন, বোরো-পতিত-পতিত, পতিত-মিশ্র বোনাআউশ + বোনাআমন, রিলে ফেলন/মুগ-রোপাআউশ-রোপাআমন, পতিত-ডিবলিংআউশ-রোপাআমন, রিলেখেসারি/মুগ/ফেলন/মরিচ/গম/-ডিবলিংআউশ রোপাআমন, রিলেখেসারি/মুগ/মরিচ/গম/মিষ্টি আলু/আলুু/মসুর/ছোলা/ভুট্টা-/মরিচ/পালংশাক/ ডাঁটা/মিষ্টিকুমড়া/ঢেঁড়শ/বেগুন/বাঁধাকপি/ ফুলকপি/তরমুজ/-পতিত-রোপাআমন।
উপকূলীয় অঞ্চল উপযোগী ফসল ও জাত
বোরো ধানের উপযোগী জাতগুলো-উফশী জাত : ব্রি ধান৪১, ব্রি ধান৪৫, ব্রি ধান৪৭, ব্রি ধান৫৫ ব্রি ধান৬১, বিনাধান-৮, বিনাধান-১০; স্থানীয় জাত : ভোজন, কাজলা, চৈতা, কালি বোরো, সলই, খাট ভোজন চাষ করতে হবে। আউশ মৌসুমে উফশী ধান বিআর-২৬, ব্রিধান-২৭, ব্রি ধান৫৫; স্থানীয় জাতের ক্ষেত্রে ভোজন, সলই, কালিবোরো, সাইট্যা, ধলিসাইট্যা, রাতুল, গরিসাইট্যা, হাসিকলমি, কালোসাইট্যা আবাদ করা যায়। আবার আমন মৌসুমে উফশী জাত বিআর-২৩, ব্রি ধান৪০, ব্রিধান৪১, ব্রিধান৪৪ (অলবণাক্ত জোয়ার-ভাটা), ব্রি ধান৪৭, ব্রি ধান৫৩, ব্রি ধান৫৪, ব্রি ধান৬১, ব্রি ধান৬৭ এবং স্থানীয় জাতের লাল মোটা, সাদা মোটা, কালা মোটা, দুধ মোটা, শাইল গিরমি, রাজাশাইল, লালচিকন, সাদাচিকন, দুধকলম, জয়না, ডিংগা মানিক, কার্তিক বালাম, চাষ করা; লবণাক্ততাসহিষ্ণু বারি গম-২৫; চীনা, কাউন, জোয়ার, যব- বারি বার্লি-১, বারি বার্লি-২, সরগম চাষ সম্প্রসারণ করা যায়। তেল ফসলের ক্ষেত্রে সরিষা, সয়াবিন, বাদাম- বারি চিনাবাদাম-৮, বিনা চিনাবাদাম-৪, বিনা চিনাবাদাম-৫, সূর্যমুখী, তিল, তিসি; ডাল ফসল মুগ-বারিমুগ-৫, বারিমুগ-৬, ফেলন, খেসারি, মাসকালাই; মসলা জাতীয় মরিচ, রসুন, হলুদ; সবজি হিসেবে করলা, লাউ, বেগুন, টমেটো, শসা, মটরশুঁটি, ঢেঁড়শ, মিষ্টিকুমড়া, সজিনার চাষ; ফল চাষ সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে খাটো জাতের নারিকেল, মাল্টা, আমড়া, স্বরূপকাঠি পেয়ারা, কাউফল, ডেউয়া, তাল, কুল, সফেদা, খেজুর, আমলকী, আম, কদবেল, জাম, বাতাবিলেবু, তরমুজ, বাঙ্গি লাগানো যায়। তাছাড়া অন্যান্য ফসল চুই ঝাল, গাছ আলু, দুধ মান কচুর চাষ বেশ উপযোগী। বন্যা ও জলাবদ্ধপ্রবণ এলাকার জন্য ধাপে সবজি চাষ; পুকুর ও ঘেরের উঁচু ও চওড়া আইলে শাকসবজি চাষ করে একদিকে যেমন বাড়তি আয় হবে অন্যদিকে ভূমিক্ষয় রোধ হবে। এক্ষেত্রে শিম, বরবটি, করলা, কলমিশাক, টমেটো, বেগুন, পুঁইশাক, ওলকপি, সজিনা, লাউ, শশা, চালকুমড়া, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, বাঁধাকপি, পালংশাক, ফুলকপি ডিবলিং পদ্ধতিতে রোপণ করা। জোয়ার-ভাটা এলাকার জন্য সর্জান পদ্ধতিতে ঢেঁড়শ, করলা, ঝিঙা, ডাটা, গিমাকলমি, লালশাক সবজির চাষ করা যায়।
উপযোগী প্রযুক্তি
এ এলাকার জন্য উপযোগী প্রযুক্তিগুলো হচ্ছে বস্তা পদ্ধতিতে ফল ও সবজি চাষ, সর্জান পদ্ধতিতে সবজি ও ফল চাষ, বসতবাড়িতে সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা, জলাবদ্ধ এলাকার জন্য ভাসমান সবজি চাষ, শুষ্ক মৌসুমে সেচের পানির জন্য মিনি পুকুর, মালচিং এর মাধ্যমে ফসল চাষ, বিনাচাষে ফসল উৎপাদন, আন্তঃফসল হিসেবে হলুদ, আদার চাষ; আমন ধানের সাথে খেসারি রিলে শস্য চাষ, ভার্মিকম্পোস্ট, সবুজ সার, খামারজাত সার, সেক্স ফেরোমেন ট্র্যাপ, বারিড পাইপ ও ফিতা পাইপ পদ্ধতিতে সেচ, স্প্রিংকলার পদ্ধতিতে সেচ প্রদান এসব।
উপযোগী কৃষি যন্ত্রপাতি
এলাকা উপযোগী কৃষি যন্ত্রপাতির মধ্যে রয়েছে পাওয়ার টিলার, রিপার, রেইজড বেড প্লান্টার, পাওয়ার থ্রেসার, প্যাডেল থ্রেসার, ফুট পাম্প, স্প্রেয়ার। তাছাড়া লবণাক্ততার পরিমাপের জন্য ইসি মিটার, আবহাওয়াগত তথ্য প্রপ্তির জন্য আবহাওয়া ডিসপ্লেবোর্ড, আপেক্ষিক আর্দ্রতামাপক যন্ত্র, বীজ সংরক্ষণের জন্য ড্রামের ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন।
পতিত জমির ব্যবহার
ডিসেম্বরের মধ্যে পানি সরে যায় এমন জমিতে উপযোগী জাতের রোপা আমনের আবাদ করে জমির জো অবস্থার আগে আমন ফসল কর্তন করে বিভিন্ন রবি ফসল আলু, গম, চিনাবাদাম, মরিচ, বেগুন, শাকসবজি আবাদ করা সম্ভব। উচ্চফলনশীল এবং লবণাক্ততা সহনশীল বোরো ধানের জাত ব্রি ধান৪৭, ব্রি ধান৫৩, ব্রি ধান৫৪ এবং বিনাধান-৮, বিনাধান-১০ এর আবাদ সম্প্রসারণ করা যায়। রোপা আমনের সাথে রিলে সরিষা (বারি সরিষা-১১, ১৪, ১৫) অথবা রিলে খেসারি (স্থানীয়) চাষের মাধ্যমে আবাদ ও ফলন বাড়ানো সম্ভব। বেড তৈরি (মিষ্টিকুমড়া ও তরমুজ) ও মালচ (আলু) ব্যবহার করে লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আবাদ বাড়ানো সম্ভব। সর্জান পদ্ধতিতে সবজি চাষ সম্প্রসারণ করা সম্ভব, ঘেরের বেড়িবাঁধে বছরব্যাপী সবজি আবাদ করা যায়। রোপা আউশ ধানের রোপণের সময় সম্পূরক সেচের ব্যবস্থা ও উন্নতমানের বীজ সঠিক সময়ে কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারলে খরিফ-১ মৌসুমে আবাদি জমির পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব। সর্জান পদ্ধতিতে বেডের ওপরের অংশে বছরব্যাপী শাকসবজি যেমন- লালশাক, পালংশাক, মুলা, ওলকপি, বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, বেগুন : দুই বেডের মধ্যবর্তী স্থানে মাচানে করলা, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, শসা, শিম, বরবটি এবং ঢালের নিচু অংশে পানি কচুর চাষ করা যায়।
লবণসহনশীল জাতের ধান চাষ : আমন মৌসুমে বিআর-২৩, ব্রি ধান৪০, ব্রি ধান৪১, এর মতো লবণাক্ততাসহিষ্ণু জাত চাষ করা। বোরো মৌসুমে ব্রি ধান৪৭, ব্রি ধান৫৫, ব্রি ধান৬১, বিনাধান-৮ ও বিনাধান-১০ লবণাক্ততা সহনশীল জাতের চাষ করা।
লবণসহনশীল অন্যান্য ফসল চাষ : বারি গম ২৫, তরমুজ, বারিমুগ-৬, তিল, সরিষা (বিনা সরিষা-৫ ও বিনা সরিষা-৬), সূর্যমুখী, সয়াবিন, তরমুজ চাষ করা; বিভিন্ন লবণাক্ততার পরিমাণের ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন সবজি বাঁধাকপি, ফুলকপি, লাউ, শিম, মুলা, গাজর, পেঁয়াজ; পুঁইশাক, শালগম, টমেটো, বাঁটিশাক, পালংশাক, বিট চাষ করা; বিনা চাষে-কচুরিপানা দিয়ে মালচিং পদ্ধতিতে আলু চাষ, ধানের সাথে মাছের চাষ, সাথী ফসল হিসেবে খেসারি ও মিষ্টিকুমড়ার চাষ করা।
উচ্চমূল্যের ফসলের চাষ : উচ্চমূল্যের ফসল সারা বছর চাষ করা যায় এবং বছরব্যাপী কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। এটি ফসল জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং দারিদ্রতা দূর করে। লবণাক্তপ্রবণ এলাকায় উচ্চমূল্যের ফসল হিসেবে গ্রীষ্মকালীন টমেটো, দেশি শিম, গ্রীষ্মকালীন শিম, মরিচ, কলা, কুল, পেয়ারা, পেঁপে, নারিকেল, ভুট্টার সাথে আলু বা মুগের চাষ, মাশরুম চাষ করা যায়।
মিনি পুকুরে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ : উপকূলীয় এলাকায় ফসল উৎপাদনে প্রধান সমস্যা সেচের পানি। ধানের জমির এক কোণে ১২ী১২ী৩ ঘন মিটার আকারের পুকুর স্থাপন করা গেলে সেচকার্যের সুবিধা, সাথে সাথে আইলে সবজি চাষ এবং পুকুরে মাছ চাষ করা যাবে। এ রকম একটি পুকুরের পানি দিয়ে প্রায় ১ হেক্টর জমির শীতকালীন ফসলে সেচ দেয়া সম্ভব।
ঘেরের আইলে বছরব্যাপী সবজি চাষ : একটি সুনির্দিষ্ট জলাশয়ের চারিদিকে ১-১.৫ মিটার চওড়া আইলে (স্থানীয়ভাবে ভেড়ি বলে) সবজি চাষ এবং ঘেরে মাছ চাষ করা যায়। উপকূলীয় অঞ্চলে ঘেরের আইল বিভিন্ন সবজি ফসল উৎপাদনের সম্ভাবনাময় উৎস। বিশেষ করে খরিফ-২ এবং রবি মৌসুমে প্রচুর সবজি উৎপাদন করা যায়।
ঘেরের আইলে আপেলকুল ও নারিকেল চাষ : লবণাক্ততাপ্রবণ এলাকায় আপেল কুল ও নারিকেল চাষ করা যায়। তাছাড়া ঘেরে ধান ও মাছ চাষের পাশাপাশি অন্যান্য মৌসুমি সবজি ফসল উৎপাদন করা যায়।
সর্জান পদ্ধতিতে সবজি ও ফল চাষ : সাধারণত যে জমি জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয় বা বছরের বেশির ভাগ সময় পানি জমে থাকে সে জমিতে সর্জান পদ্ধতিতে সবজি ও ফলের চাষ করা যায়। পাশাপাশি ২টি বেডের মাঝের মাটি কেটে উঁচু বেড তৈরি করে ফসল চাষ করাই সর্জান পদ্ধতি। মাঘ-ফাল্গুন (মধ্য জানুয়ারি থেকে মধ্য মার্চ) মাসে সর্জান বেড তৈরি করা হয়। প্রায় ২৮ মিটার লম্বা এবং ১১ মিটার চওড়া একখ- জমিতে ১০ী২ বর্গমিটার আকারের ৫টি বেড তৈরি করা যায়। বেডের উচ্চতা কমপক্ষে ১ মিটার হলে ভালো হয়।
কৃষি উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য কর্মসূচিভিত্তিক সুপারিশ : লবণাক্ততা সহনশীল বিভিন্ন ফসলের (ধান, গম, মুগ, তিল, সরিষা) বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ;
* ঘেরের আইলে ও বসতবাড়িতে ফল ও সবজি চাষ সম্প্রসারণ;
* অপ্রচলিত ফলের (কাউফল, ডেউয়া, লটকন, বাতাবিলেবু, শরিফা) আবাদ সম্প্রসারণ;
* খাটো জাতের নারিকেল, আমড়া, পেয়ারা, মাল্টা, সফেদার বাগান সৃজন;
* উচ্চমূল্যের ফসলের (গ্রীষ্মকালীন টমেটো ও শিম, কুল, কলা, পেপে, সয়াবিন, নারিকেল, সূর্যমুখী) আবাদ সম্প্রসারণ;
* সর্জান পদ্ধতির মাধ্যমে সবজি ও ফল উৎপাদন;
* বিনা চাষ, মাদা ও মালচিং পদ্ধতির মাধ্যমে ফসল উৎপাদন প্রযুক্তি সম্প্রসারণ;
* রাস্তার দুই ধারে তাল, খেজুর, সজিনা বাগান সৃজন;
* আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ভাসমান বেডে সবজির চারা উৎপাদন;
* বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য ওয়াটার রিজার্ভার/খাস পুকুরসহ অন্যান্য জলাশয় পুনঃখননের মাধ্যমে আপদকালীন সেচের চাহিদা মেটানো;
* সোলার সেচ পাম্প স্থাপনের মাধ্যমে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি;
* AWD, SRI, Raised bed প্রদর্শনী স্থাপন;
* Burried Pipe স্থাপনের মাধ্যমে সেচের পানির অপচয় রোধ ও সেচ খরচ কমানো;
* ফল বাগানে Drip Irrigation প্রদর্শনী স্থাপন;
* কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের জন্য রাইস ট্রান্সপ্লান্টার, রিপার, পাওয়ার থ্রেসার কৃষকের ভর্তুকি মূল্যে বিতরণ কর্মসূচি;
* ফসল/ফল/সবজি সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা ও বাজারজাতকরণ সহায়ক কার্যক্রম এবং উৎপাদিত পণ্যের বাজার সংযোগ সৃষ্টিকরণ;
* মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় প্রায়োগিক কার্যক্রম গ্রহণ করা;
* উপকূলীয় এলাকায় পতিত জমির সুষ্ঠু ব্যবহার এবং ফসলের নিবিড়তা বাড়ানো;
* উপকরণ সরবরাহ ও ঋণ প্রাপ্তি সহজলভ্যকরণ;
* সেচের জন্য ভূউপরিস্থ পানির ব্যবহার এসব।
ড. আবু ওয়ালী রাগিব হাসান*
ড. মো. রফিকুল ইসলাম**
*প্রকল্প পরিচালক, আইএফএমসি প্রকল্প, ডিএই; **অতিরিক্ত পরিচালক, এনএটিপি-২ প্রকল্প, ডিএই
বাংলাদেশের শস্যগোলা ধরা হয় উত্তরবঙ্গকে। কিন্তু উত্তরবঙ্গ এখন জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে বিপর্যস্ত। পানি সংকটে সেখানে এখন শস্য উৎপাদন সংকটাপন্ন। খরা ও শৈত্যপ্রবাহ এখন শস্যহানির এক অনিবার্য নিয়ামক হয়ে দাঁড়িয়েছে। উত্তম ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এরই মধ্যে এ উত্তরাঞ্চলের অনেক জমি উৎপাদনের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে গেছে। অথচ উপকূলীয় অঞ্চলে অনেক ফসলের ফলন এখনও নি¤œ পর্যায়ে রয়েছে। সেখানেও আছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। তথাপি সে অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির এক চমৎকার সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে উপকূলীয় অঞ্চলের জেলাগুলোতে এরই মধ্যে এ অঞ্চলে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির এসব সম্ভাবনাকে বিবেচনা করে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির এক মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। সে মহাপরিকল্পনাতেও দক্ষিণাঞ্চলে উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনা ও বিশেষ কিছু কৌশল গ্রহণের মাধ্যমে বিভিন্ন ফসলের ফলন পার্থক্য কমিয়ে বর্তমান উৎপাদনকে বৃদ্ধি করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যদি উপকূলের এ কৃষি সম্ভাবনাকে যথাযথভাবে ব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে কৃষি পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে তা দেশের সামগ্রিক কৃষি উৎপাদনের চিত্রকে বদলে দেবে।
উত্তরাঞ্চলে পানির যেখানে সংকট, সেখানে এত পানি ব্যবহার করে ধান বা সেচবিলাসী ফসল চাষের দরকার কি? বরং পানি যেখানে সস্তা ও সুলভ সেখানে পানি ব্যবহার করে ধান উৎপাদনে জোর দেয়া উচিত। দক্ষিণাঞ্চলের মতো এত সস্তায় আবাদ দেশের আর কোথাও সম্ভব না। সেচের পানি এখানে ফ্রি। লবণাক্ততা আছে, কিন্তু তা একটি নির্দ্দিষ্ট সময়ের জন্য এবং তা সব জায়গায় নয়। এখনও উপকূলের বিপুল পরিমাণ জমি লবণাক্ততামুক্ত বা স্বল্প লবণাক্ততাযুক্ত। সেসব জমিতে অনেক রকমের ফসলের আবাদ হতে পারে। লবণাক্তপ্রবণ জমির জন্য বিশেষ ফসল ও ফসলের লবণসহিষ্ণু জাত উদ্ভাবন ও ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া যায়।
দেশের পাঁচ ভাগের একভাগ মানুষ বাস করে উপকূলীয় ১৪টি জেলায়। এ অঞ্চলের মানুষ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় দারিদ্র্য, খাদ্য নিরাপত্তা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিবেচনায় কিছুটা সুবিধাবঞ্চিত। বাংলাদেশের মোট আবাদি জমির প্রায় ৩০ শতাংশ জমি রয়েছে এ অঞ্চলে যার পরিমাণ প্রায় ১০ লাখ হেক্টর। তাই উপকূলীয় অঞ্চলে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে বর্তমান সরকার বিশেষ জোর দিচ্ছে। এ অঞ্চলে ফসলের নিবিড়তা বাংলাদেশের গড় শস্য নিবিড়তার চেয়ে বেশ কম। এ পরিপ্রেক্ষিতে উপকূলীয় লবণাক্ত অঞ্চলে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি ও শস্য নিবিড়তা বাড়ানোর জন্য প্রথম লক্ষ্য হওয়া উচিত উপকূলীয় অঞ্চলের উপযোগী বিভিন্ন ফসল ও ফসলের জাত সম্প্রসারণ। পরে লক্ষ্য হওয়া উচিত উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এসব ফসলের ফলন পার্থক্য কমিয়ে আনা। শুধু এটুকু কাজ করতে পারলেই উপকূলীয় অঞ্চলে বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন প্রায় দেড় থেকে দ্বিগুণ করা সম্ভব। উপকূলীয় অঞ্চলের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে শুধু ফসল নয়, কৃষির বৈচিত্র্যকরণ করে মাঠ ফসল, উদ্যান ফসল, অর্থকরী ফসল, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ প্রভৃতির উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা উন্নয়ন করে একটি সুসমন্বিত ও সুসংহত টেকসই কৃষি উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়া যায়। মোট কথা হলো, উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষকের যার যত ধরনের কৃষি সম্পদ আছে তার প্রত্যেকটি সম্পদের সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা বিবেচনা করে বর্তমান উৎপাদনকে বৃদ্ধি করতে যা যা করা দরকার তা করতে হবে। উপকূলীয় অঞ্চলে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে যেসব পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে তা হলো।
ধান চাষ
উপকূলীয় অঞ্চলের প্রধান ফসল আমন ধান। এ অঞ্চলে আমন ধানের চালের বর্তমান গড় ফলন প্রায় ২.৩ মেট্রিক টন/হেক্টর। হেক্টরপ্রতি এ ফলনকে ২ মেট্রিক টন পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। অনুরূপভাবে আউশ ও বোরো ধানের বর্তমান গড় ফলনকেও হেক্টরপ্রতি প্রায় ১.৮-২.৮ মেট্রিক টন পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। এটা সম্ভব করতে হলে স্থানীয় পরিবেশ ও অবস্থার সাথে খাপ খায় এ রকম কিছু উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন করতে হবে, এরই মধ্য উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল ও হাইব্রিড জাত সম্প্রসারণ করতে হবে, সার ও পানি ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য ব্যবস্থাপনা উত্তমভাবে করতে হবে। এ অঞ্চলে আমন মৌসুমে পানির কোনো অভাব নেই, লবণাক্ততাও থাকে না। বোরো মৌসুমের শেষ দিকে কিছুটা লবণাক্ততার প্রভাব পড়ে। আউশ মৌসুমে লবণাক্ততার প্রভাব বেশি দেখা যায়। তাই এ অঞ্চলে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধিতে রোপা আমন ধান চাষের ওপর বেশি জোর দিতে হবে। সুলভ পানি, অনেক এলাকায় লবণাক্ততার সীমা ফসলের ক্ষতি সীমার অনেক নিচে থাকে। এসব এলাকায় পরিকল্পিতভাবে ভূউপরিস্থ পানি দিয়ে সেচের এলাকা বাড়িয়ে ধানের চাষ এলাকা বাড়ানোর সুযোগ আছে। এক জরিপে দেখা গেছে, এ অঞ্চলে এভাবে প্রায় ৭ লাখ হেক্টর জমি ভূউপরিস্থ পানি দিয়ে সেচের আওতায় আনা সম্ভব। মহাপরিকল্পনাতে এ অঞ্চলে ধানের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য যেসব সুপারিশ করা হয়েছে সেগুলো হলো-
জোয়ার-ভাটা বিধৌত ও জোয়ারবিহীন এলাকায় রোপা আমন ধান চাষ সম্প্রসারণে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ; বিশেষত আধুনিক উচ্চফলনশীল জাত সম্প্রসারণের মাধ্যমে।
রোপা আউশ ধানের চাষ বৃদ্ধি করতে স্বল্প জীবনকাল বিশিষ্ট জাত (৮৫-৯০ দিন) উদ্ভাবন; এ ধরনের জাতের জন্য ভিয়েতনামে খুঁজে দেখা যেতে পারে।
বোরো ধান চাষের এলাকা সম্প্রসারণ; বিশেষ করে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারের মাধ্যমে।
ডাল, তেলবীজ ও নতুন কোনো ফসলের চাষ
উপকূলীয় অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের মাধ্যমে উচ্চ মূল্যের কিছু ফসল, ডাল ও তেলবীজ ফসল চাষেরও সুযোগ আছে। তবে তা সব এলাকায় নয়। বিশেষ করে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর ও ফেনী জেলার বেশ কিছু জমিতে এ প্রচেষ্টা করা যেতে পারে। এসব এলাকায় ডাল ফসল হিসেবে মুগ, খেসারি, ছোলা, ফেলন চাষ সম্প্রসারণ করা যায়। তেলবীজ ফসল হিসেবে তিল, সূর্যমুখী, চিনাবাদামের চাষ করা যায়। নতুন ফসল হিসেবে ভুট্টা, সুগার বিট, মরিচ, সয়াবিন, পাট, আখ ও মাশরুম চাষ করা যায়। এরই মধ্যে সাতক্ষীরাতে পাটের পরীক্ষামূলক চাষ করে সফলতা পাওয়া গেছে। তবে এ অঞ্চলে চাষের জন্য বিশেষ জাত উদ্ভাবন করা দরকার। তুলা লবণাক্ততা সইতে পারে, তবে জলাবদ্ধতা সইতে পারে না। সুনিষ্কাশিত উঁচু জমি থাকলে সেখানে তুলা চাষ করা যায়। গম চাষের চেষ্টা করা যায়। এসব ফসলের উৎপাদন বাড়াতে হলে অধিক ফলনশীল জাত উদ্ভাবন ও তার চাষ সম্প্রসারণ, উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদের ওপর জোর দিতে হবে।
শাকসবজি চাষ
উপকূলীয় অঞ্চল সম্পর্কে এতদিন অনেকেরই ধারণা ছিল ওইখানে ভালো শাকসবজি হয় না। কিন্তু বর্তমানে এ ধারণা অনেকটাই বদলে গেছে। খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটে অনেক জমির পাশে এখন ট্রাকে করে শাকসবজি দেশের অন্যত্র যাচ্ছে। গ্রীষ্মকালটাই এখানে শাকসবজি চাষের সম্ভাবনাময় মৌসুম। এ মৌসুমে সেখানে কুমড়াগোত্রীয় সবজিই বেশি চাষ করা হয়। এর মধ্যে চালকুমড়া, মিষ্টিকুমড়া, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, শসা, করলা, ঢেঁড়শ, বরবটি, অমৌসুমের লাউ, পুঁইশাক অন্যতম। বর্তমানে উপকূলীয় অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে প্রায় ২৫,৩০০ হেক্টর জমিতে ৩,২১৮৫০ মেট্রিক টন শাকসবজি উৎপাদিত হচ্ছে। নানা কৌশলে এ চাষ এলাকা ৮৬,৫০০ হেক্টরে বাড়ানো যায়। আর তা করতে পারলে ওখান থেকে গ্রীষ্মকালেই প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন শাকসবজি উৎপাদিত হবে। তবে এই অঞ্চল শীতকালে শাকসবজি উৎপাদনের জন্য খুব উপযুক্ত না। সেচ সংকট ও লবণাক্ততাসহ নানা প্রতিকূলতা রয়েছে এ মৌসুমে। তথাপি বর্তমানে এ অঞ্চলে শীতকালে প্রায় ২৬,০০০ হেক্টর জমিতে ৫ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন শাকসবজি উৎপাদিত হচ্ছে। শীতকালেও সবজি চাষের জমি ৮০,০০০ হেক্টরে উন্নীত করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে উপযুক্ত সবজি নির্বাচন, লবণাক্ততা সহনশীল জাত উদ্ভাবন, বেশি করে জৈব সারের ব্যবহার, সেচ ব্যস্থাপনার উন্নয়ন, কৃষক প্রশিক্ষণ, মানসম্মত হাইব্রিড বীজের প্রাপ্যতা বৃদ্ধি, ভ্যালু চেইন ও বাজারজাতকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এসব করতে পারলে শীতকালেও এ অঞ্চলে প্রায় ২৫ লাখ মেট্রিক টন শাকসবজি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এ অঞ্চলে বর্তমানে ব্যাপকভাবে হাইব্রিড জাতের সবজি বীজের ব্যবহার বেড়েছে সত্য। তবে চাষ ব্যবস্থাপনায় এখনও ততটা পরিবর্তন আসেনি। এ কারণে এ অঞ্চলের শাকসবজি উৎপাদনে বেশ ফলন পার্থক্য দেখা যায়। যেমন- শসা ও করলার হেক্টরপ্রতি ফলন পার্থক্য যথাক্রমে ৯.৬৬ মেট্রিক টন ও ১০.১৩ মেট্রিক টন। সবচেয়ে বেশি ফলন পার্থক্য রয়েছে পুঁইশাকের বেলায়। বর্তমানে এ অঞ্চলে পুঁইশাকের গড় ফলন ১৫.৯৪ মেট্রিক টন, সেখানে এ ফলন উত্তম ব্যবস্থাপনায় হতে পারে ৪০-৫০ মেট্রিক টন। বেগুনের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। বর্তমানে এ অঞ্চলে বাঁধাকপি ও ফুলকপিও ভালো হচ্ছে। তবে ওলকপি এগুলোর চেয়ে বেশি হয়। এ অঞ্চলে শাকসবজির উৎপাদনবৃদ্ধির জন্য যেসব কাজগুলো করা যেতে পারে-
* এলাকার উপযোগী এমনকি লবণাক্ততা সহনশীল জাতের সবজি উদ্ভাবন;
* হাইব্রিড জাতের বীজ সহলভ্যকরণ;
* সবজি চাষিদের বাস্তবসম্মত প্রশিক্ষণ;
* সারাবছর যাতে শাকসবজি উৎপাদন করা যায় সেভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ;
* জমির আইল, ঘেরের পাড়, বসতবাড়ির বিভিন্ন স্থানে ব্যাপকভাবে শাকসবজির চাষ সম্প্রসারণ;
* চরে মিষ্টিআলু ও মিষ্টিকুমড়ার চাষ সম্প্রসারণ;
* নিচু ও জলাভূমিতে ভাসমান ধাপে ও সর্জান পদ্ধতিতে শাকসবজি চাষ সম্প্রসারণ।
ফল চাষ
উপকূলীয় অঞ্চলে অনেক ফল হয় না, আবার এমন কিছু ফল এত ভালো হয় যে সেগুলো আবার দেশের অন্য কোথাও তেমন ভালো হয় না। উপকূলীয় অঞ্চল বলতেই আমরা নারিকেলের রাজ্য বুঝি। দেশে উৎপাদিত পেয়ারা ও আমড়ার প্রায় ৮০ শতাংশ উৎপাদিত হয় উপকূলীয় অঞ্চলে। কিছু অপ্রচলিত ফল রয়েছে যেগুলো এ অঞ্চলে চমৎকার ফলন দেয়। এর মধ্যে সফেদা ও তেঁতুল উল্লেখযোগ্য। আরও রয়েছে কুল, কদবেল, চালতা, খেজুর, ডেউয়া, আমলকী, তাল, বিলাতি গাব, বাতাবিলেবু। কিন্তু মুশকিলটা ওই এক জায়গাতেই। এসব ফলের ফলন যা পাওয়া উচিত, সেখানে তা হচ্ছে না। ফলন পার্থক্য রয়েই যাচ্ছে। ফলন বিচারে উপকূলীয় অঞ্চলে বিভিন্ন ফলের মোট উৎপাদন কাক্সিক্ষত উৎপাদনের চেয়ে প্রায় ১৩২ শতাংশ কম হচ্ছে।
তালিকা ১- উপকূলীয় অঞ্চলে ফলের ফলন পার্থক্য (মেট্রিক টন/হেক্টর)
সুতরাং উপকূলীয় অঞ্চলে ফলের ফলন ও উৎপাদন বৃদ্ধি অনিবার্য। সে সুযোগ রয়েছে, শুধু তাকে কাজে লাগাতে হবে। এজন্য যেসব কৌশলগুলো নেয়া যেতে পারে-
প্রথমত যে ফল এ অঞ্চলে যেসব ফল ভালো ফলন দেয় সেসব ফল চাষে জোর দিতে হবে। তালিকা-১ দেখা যাচ্ছে, নারিকেল, কলা ও আমড়ার ফলন পার্থক্য অনেক কম, পক্ষান্তরে লিচুর ফলন পার্থক্য অনেক বেশি। তাহলে কোনটা আমরা চাষের জন্য সুপারিশ করব? বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে;
কুল, তেঁতুল, তাল ফলগাছ অধিক লবণাক্ততা সইতে পারে। মধ্যম লবণাক্ততা সইতে পারে আমলকী, ফলসা, ডালিম, ডেউয়া, জাম, সফেদা। কম লবণাক্ততা সইতে পারে আম, পেয়ারা, কদবেল। লবণাক্ততা মোটেই সইতে পারে না কলা, পেঁপে, কাঁঠাল। চরে তরমুজ ভালো হয়। তাই এসব বিষয়গুলো বিবেচনা করে লবণাক্ত এলাকার জমিতে চাষের জন্য ফলগাছ নির্বাচন করতে হবে;
নতুন ফল হিসেবে মাল্টা ও খাটো জাতের নারিকেলের চাষ সম্প্রসারণ করা যায়;
সর্জান ও স্তূপ পদ্ধতিতে মটি উঁচু করে সেখানে ফলবাগান করা যায়;
প্রতিটি ফলগাছের উত্তম ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে;
স্থানীয়ভাবে ফলের মানসম্মত চারা-কলম উৎপাদনে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে।
মৃত্যুঞ্জয় রায়*
*উপ প্রকল্প পরিচালক, আইএফএমসি প্রকল্প, ডিএই, খামারবাড়ি, ঢাকা ও গ্রন্থকার ‘উপকূলীয় কৃষি’
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) একটি বিশেষায়িত কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। পরমাণু ও জীবপ্রযুক্তিসহ অন্যান্য আধুনিক কৌশল ব্যবহার করে প্রতিকূল পরিবেশ উপযোগী ফসলের উন্নত জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি নিশ্চিতকরণ এবং আর্থসামাজিক উন্নয়ন বিনার উদ্দেশ্য। বর্তমানে ১১টি বিভাগ, ১৩টি উপকেন্দ্র এবং পাঁচটি গবেষণা ক্ষেত্রের মাধ্যমে এ ইনস্টিটিউটের গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ যাবৎ এ প্রতিষ্ঠান থেকে ১৩টি ফসলের মোট ৯০টি উন্নত জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকার ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, লবণাক্ততাসহ প্রতিকূল পরিবেশে চাষ উপযোগী বিনা থেকে উদ্ভাবিত বিভিন্ন ফসল জাতের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হলো-
বিনাধান-৭ : আমন মৌসুমে চাষাবাদের জন্য ২০০৭ সালে জাতটি অবমুক্ত করা হয়। এটি স্বল্প জীবনকালীন ও উচ্চফলনশীল। জীবনকাল ১১৫-১২০ দিন, প্রতি হেক্টরে গড় ফলন ৪.৮ মেট্রিক টন, দেশের প্রায় সব রোপা আমন অঞ্চলে এ জাতটি চাষ করা যায়। আষাঢ় মাসের প্রথম থেকে তৃতীয় সপ্তাহ (মধ্য জুন থেকে জুলাই মাসের ১ম সপ্তাহ) সময়ে বীজ বপন করে ২০-২৫ দিন বয়সের চারা রোপণ করতে হবে। ৩০ দিনের বেশি বয়সের চারা লাগালে অতি দ্রুত ধানের শীষ বের হয়ে ফলন কমে যায়। হেক্টরপ্রতি ইউরিয়া, টিএসপি এবং এমওপি, জিপসাম ও দস্তার মাত্রা যথাক্রমে ১৭৩, ১১১, ৬১, ৪৯, ৪.০ কেজি। শেষ চাষের সময় ইউরিয়া বাদে অন্যান্য সার মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া সার সমান দুই ভাগে ভাগ করে চারা রোপণের ৭-১০ দিন পর প্রথম কিস্তি এবং ২৫-৩০ দির পর দ্বিতীয় কিস্তি প্রয়োগ করতে হবে। আগাছা দমন, আন্তঃপরিচর্যা ও পোকামাকড় দমন প্রয়োজন অনুযায়ী করতে হবে।
বিনাধান-৮ : বোরো মৌসুমে চাষাবাদের জন্য ২০১০ সালে লবণসহিষ্ণু উন্নত জাত হিসেবে অবমুক্ত করা হয়। এটি কুশি অবস্থা থেকে পরিপক্বতা পর্যন্ত ৮-১০ ডেসিসিমেন মিটার মাত্রার লবণাক্ততা সহনশীল। জীবনকাল ১৩০-১৩৫ দিন, ফলন ক্ষমতা প্রতি হেক্টরে ৫.০-৫.৫ মে. টন, দেশের লবণাক্ত এলাকায় বেলে দোআঁশ ও এঁটেল দোআঁশ মাটিতে জাতটি চাষের উপযোগী। বিনাধান-৮ এর চাষাবাদ অন্যান্য বোরো ধানের মতো। ২৫-৩০ অগ্রহায়ণ (ডিসেম্বর মাসের ২য় সপ্তাহ) বীজতলা করে ৩৫-৪০ দিনের চারা রোপণ করতে হবে। এ জাতে হেক্টরপ্রতি ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম ও জিংক সালফেটের মাত্রা যথাক্রমে ২২২, ১১১, ৬৯, ৪৪, ৬৫.০ কেজি। জাতটির চাষাবাদ পদ্ধতি বিনাধান-৭ ধানের মতো।
বিনাধান-১০ : বোরো মৌসুমে চাষাবাদের জন্য ২০১২ সালে লবণসহিষ্ণু উন্নত জাত হিসেবে অবমুক্ত করা হয়। এটি কুশি অবস্থা থেকে পরিপক্বতা পর্যন্ত ১০-১২ ডিএস-মিটার মাত্রার লবণাক্ততা সহনশীল। জীবনকাল ১২৫-১৩০ দিন, ফলন ক্ষমতা প্রতি হেক্টরে ৫.৫-৬.০ মে. টন, দেশের লবণাক্ত এলাকায় বেলে দোআঁশ ও এঁটেল দোআঁশ মাটিতে চাষের উপযোগী। জাতটির চাষাবাদ পদ্ধতি বিনাধান-৭ ধানের মতো।
বিনাধান-১৭ : আমন মৌসুমে চাষাবাদের জন্য ২০১৫ সালে জাতটি অবমুক্ত করা হয়। এটি আগাম পাকে বলে উৎপাদন খরচ কম এবং সহজেই রবি ফসল চাষ করা যায়। জীবনকাল ১১০-১১৫ দিন, প্রতি হেক্টরে গড় ফলন ৭.০ মে. টন। বিনাধান-১৭ এর চাষাবাদ বিনাধান-৭ ধানের মত তবে পানি ও ইউরিয়া সার ২০-৩০ ভাগ কম লাগে।
বিনাগম-১ : ২০১৬ সালে জাতটি অবমুক্ত করা হয়। এটি অঙ্গজ বৃদ্ধি পর্যায় থেকে পরিপক্ব হওয়া পর্যন্ত ১২ ডিএস-মিটার পর্যন্ত লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে, জীবনকাল ১০৫-১১০ দিন, গড় ফলন প্রতি হেক্টরে লবণাক্ত মাটিতে ২.৯ মে. টন এবং অলবণাক্ত মাটিতে ৩.৮ মে. টন। দানা ছোট ও বাদামি রঙের, ১০০০ দানার ওজন ৩৬.৬ গ্রাম। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত এলাকা পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও খুলনায় এ জাত চাষাবাদের উপযোগী। নভেম্বর মাসের ১৫ থেকে ডিসেম্বরের ৭ তারিখ পর্যন্ত বীজ বপন করা যায়। হেক্টরপ্রতি ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম ও দস্তার মাত্রা যথাক্রমে ২৪৭, ১৪৮, ১২৩, ৮৬, ৬.০ কেজি। শেষ চাষের সময় অর্ধেক ইউরিয়া ও অন্যান্য সম্পূর্ণ সার প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া বপনের ২০-২৫ দিন পর ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। আগাছা দমন, আন্তঃপরিচর্যা ও পোকামাকড় দমন প্রয়োজন অনুযায়ী করতে হবে।
বিনাচিনাবাদাম-৫ ও বিনাচিনাবাদাম-৬ : জাত দুটি ২০১১ সালে অবমুক্ত করা হয়, ফুল ফোঁটা থেকে পরিপক্ব হওয়া সময়ে ৮ ডিএস-মিটার লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে, জীবনকাল ১৪০-১৫০ দিন, প্রতি হেক্টরে গড় ফলন ২.৪ মে. টন। পটুয়াখালী ও খুলনা অঞ্চলে জাত দুটি ভালো ফলন দেয়। ডিসেম্বরের ১৫ থেকে জানুয়ারির ৩০ তারিখ পর্যন্ত (পৌষের ১ম থেকে মাঘ মাসের ৩য় সপ্তাহ) হেক্টরপ্রতি ১৪৮ কেজি বীজ সারিতে বপন করতে হবে। সারি থেকে সারির দূরত্ব ১৫ সেন্টিমিটার এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ২.৫-৪ সেন্টিমিটার হতে হবে। হেক্টরপ্রতি ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম, বোরন এবং দস্তার মাত্রা যথাক্রমে ৪৯, ১৬৩, ১৪৮, ১১৮, ৭ ও ৪.৫ কেজি। শেষ চাষের সময় সব সার প্রয়োগ করতে হবে। দানা পুষ্ট হওয়ার জন্য বোরন ও জিপসাম সার পরিমাণ মতো দিতে হবে। আগাছা দমন, আন্তঃপরিচর্যা, রোগ ও পোকামাকড় দমন প্রয়োজন অনুযায়ী করতে হবে।
বিনাচিনাবাদাম-৭, ৮ ও ৯ : জাত তিনটি ২০১৪ সালে অবমুক্ত করা হয়, ফুল ফোঁটা থেকে পরিপক্বতা পর্যন্ত ৮ ডিএস/মিটার লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে, জীবনকাল ১৪০-১৫০ দিন, জাত ৩টির প্রতি হেক্টরে গড় ফলন যথাক্রমে ২.৫২, ২.৫৬ ও ২.৯ মেট্রিক টন (হেক্টরপ্রতি গড় ফলন লবণাক্ত অবস্থায় ১.৯ মেট্রিক টন)। জাতগুলোর চাষাবাদ পদ্ধতি বিনাচিনাবাদাম-৫ ও বিনাচিনাবাদাম-৬ এর অনুরূপ।
বিনাতিল-২ : খরিফ-১ মৌসুমে চাষাবাদের জন্য জাতটি ২০১১ সালে অবমুক্ত করা হয়, জীবনকাল ৯১-৯৮ দিন, প্রতি হেক্টরে গড় ফলন ১.৪ মেট্রিক টন, বীজে তেলের পরিমাণ শতকরা ৪৪ ভাগ। ফেব্রুয়ারি মাসের ৩য় থেকে মার্চ মাসের ২য় সপ্তাহ (ফাল্গুন মাস) সময়ে হেক্টরপ্রতি ৭ কেজি বীজ সারিতে বপন করতে হবে। হেক্টরপ্রতি ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম, জিংক সালফেট এবং বরিক এসিড/সলুবলের মাত্রা যথাক্রমে- ১২৩, ১৩৫, ৬১, ৩.৭ এবং ৭.৪ কেজি। শেষ চাষের সময় অর্ধেক ইউরিয়া ও অন্যান্য সম্পূর্ণ সার মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া বীজ বপনের ২৫-৩০ দিন পর ফুল আসার সময় জমিতে হালকা সেচ দিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। দানা পুষ্ট হওয়ার জন্য বোরন ও জিপসাম সার পরিমাণ মতো দিতে হবে। ক্ষেতে যাতে পানি জমে না থাকে সে জন্য উপযুক্ত নালার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
বিনাসয়াবিন-২ : জাতটি ২০১১ সালে অবমুক্ত করা হয়, জীবনকাল রবি মৌসুমে ১০৮-১১২ দিন এবং খরিফ-২ মৌসুমে ১১৫-১২০ দিন, প্রতি হেক্টরে গড় ফলন রবি ও খরিফ-২ মৌসুমে যথাক্রমে ২.৪ ও ২.৭ মেট্রিক টন। ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহ এবং খরিফ-২ মৌসুমে জুলাই মাসের ১ম থেকে আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত হেক্টরপ্রতি ৫৪ কেজি বীজ সারিতে বপন করতে হবে। সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩৫ সে.মি. এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৫-৭ সে.মি.। হেক্টরপ্রতি ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি ও জিপসাম সারের মাত্রা যথাক্রমে ৬১, ১৭৩, ৯৮ ও ১১১ কেজি। শেষ চাষের সময় সব সার মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। আগাছা দমন, আন্তঃপরিচর্যা ও পোকামাকড় দমন প্রয়োজন অনুযায়ী করতে হবে।
বিনাসয়াবিন-৩ : জাতটি ২০১৩ সালে অবমুক্ত করা হয়, জীবনকাল রবি মৌসুমে ১০৯-১১৬ দিন এবং খরিফ-২ মৌসুমে ১০৫-১১৫ দিন, প্রতি হেক্টরে গড় ফলন রবি ও খরিফ-২ মৌসুমে যথাক্রমে ২.৩ ও ২.৪ মেট্রিক টন। জাতটির চাষাবাদ পদ্ধতি বিনাসয়াবিন-২ এর অনুরূপ।
বিনামুগ-৮ : জাতটি ২০১০ সালে খরিফ-১ মৌসুমে চাষাবাদের জন্য অবমুক্ত করা হয়, জীবনকাল ৬৪-৬৭ দিন, প্রতি হেক্টরে গড় ফলন ১.৮ মেট্রিক টন। জানুয়ারি মাসের ২য় থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের ২য় সপ্তাহ (ফাল্গুন থেকে চৈত্র মাসের মাঝামাঝি) সময়ে হেক্টরপ্রতি ১০-১২ কেজি বীজ বপন করতে হবে। ২৪-২৯ হেক্টরপ্রতি ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি সার এর মাত্রা যথাক্রমে ১২, ২৮ ও ১৪ কেজি। সব সার শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। আগাছা দমন, আন্তঃপরিচর্যা ও পোকামাকড় দমন প্রয়োজন অনুযায়ী করতে হবে।
বিনা থেকে উদ্ভাবিত উন্নত জাতের ধান, চিনাবাদাম, তিল, সয়াবিন ও মুগের জাত এবং উন্নত শস্য বিন্যাস কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও চাষিদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখতে সক্ষম হবে। বিশেষ করে স্বল্প জীবনকাল বিশিষ্ট এবং উচ্চফলনশীল আমন জাত বিনাধান-১৭ (হেক্টরপ্রতি গড় ফলন প্রতি ৭ মেট্রিক টন) ব্যাপক সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশে অতিরিক্ত ২০ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এছাড়া এ জাতের জীবনকাল (১১৫-১২০ দিন) কম হওয়ায় দুই ফসলের স্থলে সহজেই তিন ফসল চাষ করা যাবে। বিনা উদ্ভাবিত উন্নত ফসল চাষাবাদের মাধ্যমে দানাদার ফসলের পাশাপাশি ডাল ও তেল ফসলেও সহজেই দেশ স¦য়ংসম্পূর্ণ হতে পারবে। সরকার ঘোষিত রূপকল্প ২০২১ বাস্তÍবায়নে বিনা যোগ্য অংশীদার হতে পারবে।
ড. এম রইসুল হায়দার*
*মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং গবেষণা সমন্বয়ক, বিনা, মংয়মনসিংহ; ০১৭১৫৩৭২৭৪০
আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত চরম বাস্তবতা এখন। যতই দিন যাচ্ছে মানুষ ততই বুঝতে পারছে আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু, জীবনযাত্রাসহ সবকিছুর ওপরই প্রভাব ফেলছে এর প্রচ- থাবা। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে নোনাজল এসে ঢুকে যাচ্ছে ফসলের জমিতে। নদীর নাব্য কমে যাওয়ায় বাড়ছে খরা, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস। কোথাও বা শুকিয়ে যাচ্ছে নদী, বাড়ছে চরের বালি। তাই যত দ্রুত সম্ভব এর সাথে খাপ খাওয়ানোটাই আজকের বড় চ্যালেঞ্জ। আশার কথা, সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাধ্যানুসারে সবাই এগিয়ে আসছেন। এসেছেন কৃষি বিজ্ঞানীরাও। খুঁজে বের করছেন পরিবর্তিত আবহাওয়ার উপযোগী ফসল বিন্যাস কিংবা প্রয়োজনে নতুন ফসলের প্রবর্তন। বাংলাদেশেও এর প্রভাব মোকাবিলায় কৃষি বিজ্ঞানীরা রয়েছেন অগ্রগামী। কৃষি বিজ্ঞানের সব শাখা থেকে যে যার মতো প্রস্তুত করছেন তাদের প্রযুক্তি। অগ্রযাত্রার এ ধারায় থেমে নেই সুগারক্রপের প্রযুক্তিও।
সুগারক্রপের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফসল আখ বা কুশার। প্রকৃতি প্রদত্ত ক্ষমতাতেই আখ সবচেয়ে বেশি সহিষ্ণু ফসল। যেখানে লবণাক্ততার কারণে অন্য কোনো ফসল উৎপাদন করা যায় না সেখানেও আখ ফসল তার স্বকীয় বৈশিষ্ট্য নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে। আরও নির্দিষ্ট করে বলা যায় আখের উচ্চমাত্রার লবণাক্ততা সহ্য করার মতো প্রচলিত ফসলধারায় অন্য কোনো ফসল নেই। সম্প্রতি অবমুক্ত কেবল দুটি ধানের জাত বিনা ধান ১০ প্রতি মিটারে ১২ ডিএস এবং ব্রি ধান ৬৭ প্রতি মিটারে ৮ ডিএস মাত্রার লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। কিন্তু আখ ফসল তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়েই প্রতি মিটারে ১৫ ডিএস মাত্রার লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। তাই লবণাক্ত এলাকার সবচেয়ে উপযোগী এবং লাভজনক ফসল আখ। গুড়ের আখের পাশাপাশি চিবিয়ে খাওয়া আখেরও এ এলাকায় যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। নতুন উদ্ভাবিত বিএসআরআই আখ ৪২ এক্ষেত্রে বিশাল এক পরিবর্তন এনে দিয়েছে। এজাত ব্যবহার করে এখন অনেক চাষিই লবণাক্ত এলাকায়ও প্রতি বিঘায় এক লাখ টাকা নিট লাভ করছে।
আখের পাশাপাশি দেশে এসেছে নতুন সুগারক্রপ-সুগারবিট। এ ফসলেও একই কথা প্রযোজ্য। সুগারবিট ফসল হিসেবেই লবণাক্ততা সহিষ্ণু। ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যেসব এলাকায় জমিতে লবণাক্ততার সমস্যা রয়েছে সেখানে অনায়াসে সুগারবিটের চাষ প্রবর্তন করা যায়। যদিও সুগারবিট শীতপ্রধান দেশের ফসল তবে বর্তমানে ট্রপিক্যাল সুগারবিটের জাত উদ্ভাবনের কারণে এ ফসলটি এখন বাংলাদেশেও যথেষ্ট ভালো হচ্ছে। যেসব জাত এদেশে এরই মধ্যে পরীক্ষা করা হয়েছে তার মধ্যে ‘শুভ্র’ এবং ‘কাবেরি’ জাত দুটিই সবচেয়ে ভালো। এগুলো ছাড়াও ঐও ০০৪৪, ঐও ০৪৭৩, ঝত ৩৫, চঅঈ ৬০০০৮, ঝঠ ৮৮৭, ঝঠ ৮৮৯, ঝঠ ৮৯১, ঝঠ ৮৯২, ঝঠ ৮৯৩, ঝঠ ৮৯৪, ২ক৩১০, অৎধহশধ, ঝবৎবহধফধ, ঘধঃঁৎধ, এবং ইবষষবুধ জাতগুলো কয়েক বছর ধরে পরীক্ষা করে ভালো ফলন পাওয়া গেছে। এ বছরও সুগারবিটের এসব জাত বিএসআরআইয়ের সমন্বিত গবেষণা কার্যক্রম জোরদারকরণ প্রকল্পের তত্ত্বাবধানে দেশের ১২টি চিনিকলের গবেষণা খামারে এবং চিনিকল বহির্ভূত এলাকা বিশেষত লবণাক্ত এলাকায় যেমন- সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর এমনকি বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকায়ও কৃষকের জমিতে লাগানো হয়েছে।
যেহেতু সুগারবিটের প্রধান ব্যবহার হলো চিনিকলের মাধ্যমে চিনি উৎপাদন করা। আর দেশে এখনও সুগারবিট থেকে চিনি উৎপাদন করার মতো কোনো চিনিকল স্থাপিত হয়নি, তাই এসব এলাকায় সুগারবিটের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। তবে এ ক্ষেত্রে বলা যায় এখন সুগারবিট করতে হবে শুধু পারিবারিক ব্যবহারের প্রয়োজনে। অর্থাৎ প্রত্যেকেই তার অল্প কিছু জমিতে সুগারবিট করবে এবং তা থেকে উৎপাদিত বিট দিয়ে গুড় কিংবা সিরাপ তৈরি করে তার নিজের পরিবারের চাহিদা মেটাবে। এতে সাময়িকভাবে কিছুটা জ্বালানির সমস্যা দেখা দিতে পারে। এটা বিভিন্নভাবে সমাধান করা যেতে পারে। যেমন খেজুরের গুড় জ্বালাতেও আমরা বিভিন্নভাবে জ্বালানির জোগান দিয়ে থাকি তবে ভবিষ্যতের জন্য দেশের সবগুলো চিনিকলেই সুগারবিট থেকে চিনি উৎপাদনের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, নিকট ভবিষ্যতে বিশ্বের সর্বত্রই সুগারবিটই চিনির বাজার দখল করে নেবে। কারণ ক্রমবর্ধমান গবেষণার ফলে দ্রুতগতিতে যেভাবে সুগারবিটের উন্নয়ন হচ্ছে তাতে ভবিষতে আখ কেন্দ্রিক চিনিকলের চেয়ে সুগারবিট কেন্দ্রিক চিনিকলেই বেশি লাভ হবে। সে কারণেই এসব চিনিকলের একটা বড় অংশ সুগারবিটে রূপান্তরিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ পরিবর্তনের সাথে তাল মিলাতে না পারলে বাংলাদেশের জরাজীর্ণ চিনিশিল্প আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সে কারণেই দক্ষিণাঞ্চলের চিনিকলগুলো দ্রুত সুগারবিট থেকে চিনি উৎপাদনের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। দক্ষিণাঞ্চলের চিনিকলগুলোর মধ্যে দর্শনাতে রয়েছে কেরু এন্ড কোং, ঝিনাইদহে রয়েছে মোবারকগঞ্জ চিনিকল আর ফরিদপুরে রয়েছে ফরিদপুর চিনিকল। সবচেয়ে বেশি লবণাক্ত এলাকা সাতক্ষীরা। ওইখান থেকে দর্শনার দূরত্ব ১২৩ কিলোমিটার, সাতক্ষীরা থেকে ফরিদপুর ১৫৮ কিলোমিটার এবং সাতক্ষীরা থেকে ঝিনাইদহ ১১৫ কিলোমিটার। অতএব মোবারকগঞ্জ কিংবা কেরু কোম্পানিতে সাতক্ষীরা থেকে সুগারবিট এনে তা থেকে চিনি তৈরি করা যাবে। বেলজিয়ামের চিনিকল ইসকল (ওঝঈঅখ) ১৫০ কিলোমিটার দূর থেকে সুগারবিট এনে চিনি তৈরি করেও যথেষ্ট লাভ করে। জার্মানির চিনিকল চভবরভবৎ ্ খধহমবহ ১০০ কিলোমিটার দূর থেকেও সুগারবিট এনে চিনি তৈরি করে লাভ করে। ইউরোপের তো আর আমাদের মতো আবাদি জমির অভাব নেই। তারপরও তারা যদি সে দূরত্ব থেকে কাঁচামাল এনে চিনি তৈরি করে এবং লাভ করে তাহলে আমরা কেন পারব না। তাই আমাদেরও উচিত দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত জমিগুলোকে সুগারবিট উৎপাদনের মাধ্যমে সফল ব্যবহার করে একদিকে এ এলাকার কৃষকের আয় বৃদ্ধিতে সাহায্য করা, অন্যদিকে এ এলাকায় উৎপাদিত সুগারবিট দিয়ে দুটি চিনিকলের উৎপাদন বাড়িয়ে সেগুলোকে লাভজনক চিনিকলে পরিণত করা। আমাদের জানা দরকার কেবল আখের অভাবে আমাদের সবগুলো চিনিকলই বছরে এক মাসের বেশি চলতে পারে না। এর কারণ সবগুলো চিনিকলই আখ নির্ভর। আর আখ চাষ করতে সময় লাগে ১২ মাস। ফলে চাষিরা এখন আখের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। অন্যদিকে পটুয়াখালী, বরগুনা সদর এবং পাথরঘাটার বিশাল একটি অংশ লবণাক্ত এলাকা। যদিও এসব এলাকা থেকে এসব চিনিকলের দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার। তবুও এসব এলাকা থেকেও সুগারবিট আনা যেতে পারে। কারণ আমন ধান করার পর এসব এলাকার জমি লবণাক্ততার কারণে ফাঁকা পড়ে থাকে। এ সময়ই সে জমিতে সুগারবিট আবাদ করে তা মাত্র ৫ মাসেই তুলে আনা যেতে পারে।
দক্ষিণাঞ্চলের জন্য সুগারক্রপের আরও তিনটি ফসল তাল, খেজুর এবং গোলপাতা। এ ফসলগুলোর চাষ সম্প্রসারণেরও যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এ ফসলগুলোর জন্য তেমন কোনো জায়গা লাগে না অথচ প্রতিটি গাছ থেকে বছরে প্রায় ২৫ কেজি গুড় পাওয়া যায়। তাছাড়া সিডর-আইলা ও মহাসেন-এর মতো যে কোনো দুর্যোগে তাল এবং খেজুরগাছই সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে। তাছাড়া তালগাছ সবচেয়ে বেশি কার্বন গ্রহণ করে। ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে তাল গাছই সবচেয়ে বেশি সহায়তা প্রদান করতে পারে। আর গোলপাতা হয় সবচেয়ে বেশি লবণাক্ত জমিতে বা নদীর পাড়ে, যেখানে জোয়ার-ভাটার কারণে লবণাক্ত পানি আসা-যাওয়া করে। ফলে এখানে চাষ করার মতো অন্য কোনো ফসল নেই কিংবা খুব শিগগির কোনো ফসল পাওয়ার আশাও নেই। ফলে এ ফসলটি পতিত জমিই ব্যবহার করে। অথচ এ ফসলেরও রয়েছে অর্থনৈতিক অপার সম্ভাবনা। কারণ গোলগুড় স্বাদেও অনন্য, মানেও সেরা। আশার কথা, বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে গোলপাতা গাছের গুড় উৎপাদনের বিষয়েও পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
ড. সমজিৎ কুমার পাল*
*মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালক, বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঈশ্বরদী পাবনা, বাংলাদেশ
পরিবর্তিত জলবায়ুগত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সবচেয়ে ঝুঁকিপ্রবণ অবস্থানে আছে যার মধ্যে কৃষি খাত অন্যতম। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান প্রভাবগুলো হলো- মাটি ও পানিতে লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ, বন্যা, জলমগ্নতা, উপকূলীয় বন্যা, খরা, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন- সাইক্লোন, সিডর, আইলা, মহাসেন, জলোচ্ছ্বাস। উপকূলীয় জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড় ফসল, ভৌত-অবকাঠামো, গাছপালা, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি ধ্বংস করে এমনকি মানুষের জীবনহানী ঘটায়। পরিবর্তিত জলবায়ুর প্রভাব দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় তুলনামূলকভাবে বেশি। বাংলাদেশের প্রায় ৩০ শতাংশ নিট চাষযোগ্য ভূমি উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত। কিন্তু এ এলাকার সব ভূমি মূলত মাটির লবণাক্ততা ও জোয়ারের কারণে ফসল উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত করা সম্ভব হয় না। সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ০.৮৪ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে বিভিন্ন মাত্রার লবণাক্ততা রয়েছে। গত চার দশকে (১৯৭৩-২০০৯) দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ২৭ শতাংশ এলাকা এবং অন্যদিকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে প্রায় ৬৯.৫২ শতাংশ নতুন এলাকায় বিভিন্ন মাত্রার লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ ঘটেছে (ঝজউও, ২০১০)। এতে ফসল উৎপাদন মারাত্মভাবে ব্যাহত হয় যা দেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনে বড় বাধা। এছাড়াও দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ১.৮২ লাখ হেক্টর চরাঞ্চল আছে যা সাধারণত রবি ও খরিফ-১ মৌসুমে চাষের অনুপযোগী থাকে। কারণ রবি মৌসুমে মাটিতে যথেষ্ট রসের অভাব থাকে এবং খরিফ ১ মৌসুমে আগাম জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়।
নিচু এবং অতি নিচু এলাকাগুলো উপকূলীয় বন্যা ও অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে জুন থেকে ডিসেম্বর এমনকি সারা বছর জমি জলমগ্ন-পতিত থাকে। উপকূলীয় বন্যা ও লবণাক্ততার কারণে পানি নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পোল্ডারের ভেতরের ফসল রক্ষা পেলেও এর বাহিরে চাষকৃত ফসলগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়। আবার অসময়ে বৃষ্টিপাত বা জোয়ারের পানি নামতে দেরি হলেও রোপা আমন ধান কাটার পর শীতকালীন ফসল সময়মতো বপন-রোপণ করা যায় না। অন্যদিকে শীতের দীর্ঘতা কম থাকায় সাধারণত শীতকালীন ফসল গম, আলু, শীতকালীন শাকসবজি, সরিষার উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায় বা অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হয় না। এতে অনেক কৃষক শীতকালীন ফসল উৎপাদন করা থেকে বিরত থাকে ফলে জমি পতিত থাকে। পরিবর্তিত জলবায়ুর ফলে পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ ও ফসলভিত্তিক ক্ষতির তীব্রতা দেখা যায়। এতে ফসলের উৎপাদনশীলতা কমে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় জেলাগুলো লবণাক্ততা, বন্যা, জলমগ্নতা, খরার কারণে গড়ে প্রায় ৩১.০০ শতাংশ (২৯.৪৫ শতাংশ রবি, ৫৫.১০ শতাংশ খরিফ-১ এবং ৮.৪৫ শতাংশ খরিফ-২ মৌসুমে) জমি পতিত থাকে। এ কারণে দেশের দক্ষিণাঞ্চল, যা এক সময় বাংলার শস্যভা-ার হিসেবে বিবেচনা করা হতো তা বর্তমানে স্বল্প কৃষি উৎপাদন অঞ্চলে রূপান্তরিত হয়েছে। এর আগে পরিচালিত গবেষণা অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাবের ফলে ভবিষ্যতে এ অবস্থার আরও অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ অবস্থায় পরিবর্তীত জলবায়ুগত পরিস্থিতিতে অভিযোজনের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তার উন্নতির জন্য গবেষণার মাধ্যমে স্থানভিত্তিক লাগসই কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ করা আবশ্যক।
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলার মাধ্যমে ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইঅজও বিজ্ঞানীরা নিরলসভাবে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। পরিচালিত গবেষণার মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকার অভিযোজনের উপযোগী দানাজাতীয়, ডাল, তেলবীজ, কন্দাল, শাকসবজি, ফল, মসলা ফসলের আধুনিক লাগসই কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীল ফসলের আধুনিক জাতগুলো হলোÑ বারি গম-২৫ বারিগম ২৫, ২৯, ৩০ বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৯, ১২, ১৩; বারি বার্লি-৫,৬; বারি কাউন-২, ৩; বারি সয়াবিন-৫, ৬; বারি সরিষা-১১, ১৬; বারি চিনাবাদাম- ৮, ৯; বারি তিল-৪; বারি সূর্যমুখী-২; বারি মুগ-৬, ৭, ৮; বারি খেসারি-২, ৩; বারি ফেলন-১, ২; বারি আলু-১২; ৭২,৭৩; বারি মিষ্টিআলু-৬, ৭, ৮, ৯; বারি পানিকচু- ২, ৩; বারি টমেটো-১৪, ১৫; বারি বিটি বেগুন-২; বারি মাল্টা-১; বারি পেয়ারা-২; বারি আমড়া-১, ২;বারি নারিকেল-১, ২; বারি সুপারি-১, ২।
হাইস্পিড রোটারি টিলার : বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে আমন ধান কাটার পর রবিশস্য চাষ করতে কৃষকের প্রায় ডিসেম্বর মাস এমনকি জানুয়ারি লেগে যায়। হাইস্পিড রোটারি টিলার দিয়ে ১-২টি চাষ দিয়ে কম সময়ে জমি তৈরি করে জমিতে ফসল আবাদ করা যায়। এ যন্ত্রের দ্বারা প্রচলিত টিলারের তুলনায় ৫০ শতাংশ সময় ও আর্থিক সাশ্রয় হয়। হাইস্পিড রোটারি টিলারের সাহায্যে শীতকালীন ফসলগুলো সময়মতো বপন করা সম্ভব। যার দ্বারা আমন ধান ও রবি শস্য আবাদের মধ্যকার ব্যবধান কমানো যায়। এতে রবি শস্যে লবণাক্ততা এবং খরা থেকে অনেকটা রক্ষা পাবে।
বেড প্লান্টার : বেড প্লান্টার দিয়ে ১-২টি চাষে বেড তৈরি, সার প্রয়োগ ও বীজ বপনের কাজ একই সাথে করা যায়। এর মাধ্যমে স্থায়ী বেডে বীজ বপন করা যায়। বেডে ফসল করলে সেচ খরচ ও সময় ২৫ শতাংশ কমে, যন্ত্রটি প্রতি ঘণ্টায় ০.১১ হেক্টর জমিতে বেড তৈরি করতে পারে। বেড প্লান্টার দিয়ে গম, ভুট্টা, আলু, মুগ ও তিলসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি বীজ বপন করা যায়। স্থায়ী বেডের ক্ষেত্রে দুই ফসলের মাঝের সময় কমিয়ে সময়মতো বীজ বপন সম্ভব হয়। বেড পদ্ধতিতে ফসল ফলালে উৎপাদন খরচ কমে, মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
ফার্টিগেশন পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন : কেবল পানিতে দ্রবণীয় ইউরিয়া, পটাশ সার এ পদ্ধতিতে তরমুজ, টমেটো, মিষ্টিকুমড়া ফসলে ব্যবহার করা যায়। ফলে সেচ ও সার প্রয়োগ একই সাথে হয়। লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণ করার কাজে ফার্টিগেশন পদ্ধতি খুবই উপকারী। প্রচলিত পদ্ধতি অপেক্ষা ৪০-৪৫ শতাংশ সার এবং ৪৫-৫০ শতাংশ পানি কম লাগে। প্রচলিত পদ্ধতি অপেক্ষা এ পদ্ধতিতে বিভিন্ন সবজি ফসলের ব্যাকটেরিয়াজনিত নুয়ে পড়া রোগের বিস্তার কম হয়। প্রচলিত পদ্ধতি অপেক্ষা ২৮-৩০ শতাংশ ফলন বেশি হয়। লবণাক্ত এলাকা যেখানে সেচের পানির অভাব, সেখানে এ পদ্ধতি খুবই উপযোগী। প্রচলিত পদ্ধতি অপেক্ষা এ পদ্ধতিতে সবজি চাষে ২-২.৫ গুণ বেশি মুনাফা পাওয়া যায়।
এগ্রোফিশারি মিনি পুকুর : এগ্রোফিশারি মিনি পুকুরের আকার হবে ১২ মিটার ঢ ১০ মিটার (বকচরসহ), তবে জলাশয় হবে ১০ মিটার ঢ ৮ মিটার এবং মোট জমির পরিমাণ ২০ মিটার ঢ ১৮ মিটার (৯ শতক)। পুকুরের পাড় হবে ৩ মিটার প্রশস্ত এবং উচ্চতা জমির প্রকৃতির ওপর নির্ভর করবে। তবে জুলাই-আগস্ট মাসে স্বাভাবিক জোয়ারের প্লাবন থেকে কমপক্ষে এক থেকে দেড় ফুট উঁচু রাখতে হবে। বরিশাল-পটুয়াখালী অঞ্চলে যেখানে জোয়ারের প্লাবনের কারণে সময়মতো সবজি চাষ করা যায় না সেখানে বসতবাড়ির পুকুরের পাড় ব্যবহার করে সহজেই সবজি চাষ করা সম্ভব।
কুয়া খনন : লবণাক্ত এলাকায় কুয়া খননের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করে রবি ফসল ও সবজি উৎপাদন বেশ সফলতা দেখিয়েছে। ফসলি জমির কাছে ২.৫ মি. (৮ ফুট) লম্বা, ২.৫ মি. (৮ ফুট) চওড়া এবং ১.৮ মি. (৬ ফুট) গভীর কুয়া খনন করে সেচের জন্য মিষ্টিপানি পাওয়া যায় যা দ্বারা এক একর জমির সবজি ফসলের মাদায় সেচ দেয়া যায়। যেহেতু প্রাকৃতিকভাবে মাটির নিচ থেকে মিষ্টি পানি উঠে আসে তাই অন্য কোনো উৎস থেকে পানি লিফটিংয়ের প্রয়োজন হয় না। কুয়ার গভীরতা তেমন বেশি না হওয়ায় পানি তোলার জন্য পাওয়ার পাম্প ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। দেশীয় পদ্ধতিতে অর্থাৎ কলসি, বালতি ব্যবহার করে কুয়ার পানি দ্বারা সহজেই ফসলের মাদায় সেচ দেয়া যায়। উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততার মাত্রা কমিয়ে সহজেই ফসল উৎপাদন করা যায়।
ভাসমান বেড ও মাচা পদ্ধতিতে (ঋষড়ধঃরহম ইবফ পঁস ঞৎবষষরং: ঋইঞ) শাকসবজি চাষ : সবজি ফসলের বৃদ্ধির ধরন অনুযায়ী কচুরিপানা দিয়ে তৈরি পাশাপাশি দুইটি ভাসমান বেডের মাঝে ৩.০-৬.০ মি. (১০-২০ ফুট) ট্রেলি বা মাচা তৈরির জন্য ফাঁকা রাখা হয়। সবজির চারা ভাসমান বেডে রোপণ করা হয় তবে গাছের শাখা-প্রশাখা ভাসমান বেডের পরিবর্তে মাচায় বেড়ে উঠার যথেষ্ট সুবিধা থাকায় ফলন বেশি হয়। আবার মাচার নিচে ফাঁকা থাকায় ছোট নৌকার মাধ্যমে ফসলের আন্তঃপরিচর্যার কাজও সহজে করা যায়। উদ্ভাবিত ঋইঞ পদ্ধতিতে প্রাথমিক অবস্থায় ভাসমান বেডে স্বল্পমেয়াদি শাকজাতীয় ফসলগুলো উৎপাদন করা যায়। এতে প্রচলিত ভাসমান পদ্ধতির চেয়ে ঋইঞ পদ্ধতিতে শাকসবজির উৎপাদন ও ফসলের নিবিড়তা বাড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, ভাসমান বেড তৈরিতে প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে ঋইঞ পদ্ধতিতে অর্ধেক কচুরিপানা কম লাগে। ঋইঞ পদ্ধতিতে সহজেই কুমড়াজাতীয় সবজি ও বিভিন্ন শাকজাতীয় লালশাক, বাটিশাক, ধনেপাতা, মুলাশাক, পালংশাক আবাদ করা যায়। ভাসমান বেড ও মাচা পদ্ধতিতে কুমড়া বা লতা জাতীয় উপকূলীয় এলাকায় ¯্রােতবিহীন জলাশয়ে আবাদে উপযোগী।
মাটির লবণাক্ততা প্রশমনে পটাশিয়াম সার : লবণাক্ত মাটিতে পটাশিয়াম প্রয়োগ মাটিতে বিদ্যমান সোডিয়াম আহরনে বাধা দেয়। মাটি পরীক্ষার ভিত্তিতে নির্ধারিত মাত্রা অপেক্ষা ২৫-৩০ শতাংশ বেশি পটাশিয়াম প্রয়োগ গাছের জন্য গ্রহণ উপযোগী পটাশিয়ামের প্রাপ্যতা বাড়ায়। পরীক্ষায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত ২৫-৩০ শতাংশ পটাশিয়াম ব্যবহার করলে ভুট্টা গাছের ফলন ২০-২৫ শতাংশ বাড়ে। উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা প্রশমনের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন করা যায়।
লবণাক্ত এলাকায় মালচ প্রয়োগের মাধ্যমে সবজি চাষ : মালচ মৃত্তিকার আর্দ্রতা সংরক্ষণে সাহায্য করে গাছের মূলাঞ্চল সবসময় ভিজা রাখে। গাছের মূলাঞ্চল থেকে মাটির রসের বাষ্পীভবন কমে। লবণাক্ত মাটির লবণাক্ততা বাড়তে বাধা দেয় এবং গাছের মূলাঞ্চলের লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণে রাখে। গাছে ঘন ঘন সেচ দিতে হয় না ফলে সেচ খরচ কম হয়। অন্যদিকে মাটির জৈব পদার্থ বৃদ্ধির মাধ্যমে মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা ও উন্নয়ন করে। মালচ ব্যবহার করে মৃত্তিকার আর্দ্রতা সংরক্ষণের মাধ্যমে লবণাক্ততা প্রশমন করে বিভিন্ন ফসল আলু, মরিচ, টমেটো, বেগুন, তরমুজ, মিষ্টিকুমড়া চাষ করা যায়।
বিনা চাষে আলু চাষ : বর্ষা বা জোয়ারের পানি নেমে যাওয়ার পর পরই বিনাচাষে আলু চাষ করা যায়। এতে রবি মৌসুমে সময়মতো আলু চাষ করা সম্ভব হয়। মালচিংয়ের জন্য ধানের খড় বা শুকনা কচুরিপানা ব্যবহার করা হয়। জোয়ার-প্লাবন এলাকায় সময়মতো আলু চাষ করা যায় ফলে ফসলের ফলন বাড়ে।
সেক্স ফেরোমোন ফাঁদ : পুরুষ পোকাকে আকৃষ্ট করার জন্য স্ত্রী পোকা এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নির্গত করে যা সেক্স ফেরোমন নামে পরিচিত। ফাঁদ প্রতি ১ মিলি ফেরোমন একখ- তুলার টুকরায় ভিজিয়ে পানি ফাঁদের প্লাস্টিক পাত্রের মুখ হতে ৩-৪ সেন্টিমিটার নিচে একটি সরু তারের মাধ্যমে স্থাপন করতে হয়। প্রতি বিঘা জমির জন্য ১৫টি ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে। চারা লাগানোর ২-৩ সপ্তাহের মধ্যেই জমিতে ফেরোমন ফাঁদ পাততে হবে। তবে সেক্স ফেরোমন পোকার ধরন অনুযায়ী ভিন্ন হয়ে থাকে। কোনো প্রকার পরিবেশ দূষণ ছাড়াই বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মরিচ ও কুমড়াজাতীয় সবজি জমিতে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে পুরুষ মথকে ধরে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
বিষটোপ ও রঙিন আঠালো ফাঁদ : বিষটোপ ফাঁদ ব্যবহার হলো ১০০ গ্রাম পাকা মিষ্টিকুমড়া কুচি কুচি করে কেটে তা থেতলিয়ে ০.২৫ গ্রাম মিপসিন ৭৫ পাউডার অথবা সেভিন ৮৫ পাউডার এবং ১০০ মিলিলিটার পানি মিশিয়ে ছোট একটি মাটির পাত্রে রেখে তিনটি খুঁটির সাহায্যে এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যাতে বিষটোপের পাত্রটি মাটি থেকে ০.৫ মিটার উঁচুতে থাকে। সেক্স ফেরোমন ও বিষটোপ ফাঁদ কুমড়াজাতীয় ফসলের জমিতে ক্রমানুসারে ১২ মিটার দূরে দূরে স্থাপন করতে হবে। এছাড়া হলুদ, সাদা রঙের আঠালো ফাঁদ ব্যবহার করা যায়। সেক্স ফেরোমন-বিষটোপ-রঙিন আঠালো ফাঁদ যৌথভাবে ব্যবহার করে অত্যন্ত কার্যকরীভাবে সবজির মাছি, মুগডালের থ্রিপস ও অন্যান্য পোকা দমন করা সম্ভব। তবে সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সর্বোচ্চ ফল লাভের জন্য কুমড়াজাতীয় সবজি চাষকৃত সব কৃষককে একত্রে ওই পদ্ধতিগুলো প্রয়োগ করতে হবে।
পরিবর্তিত জলবায়ুতে অভিযোজনের জন্য বারি উদ্ভাবিত আধুনিক লাগসই কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় ফসলের উৎপাদনশীলতা বাড়ার পাশাপাশি দরিদ্র জনগণের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা এবং তাদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে।
ড. মো. আলিমুর রহমান*
ড. দিলোয়ার আহমদ চৌধুরী**
*ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, আরএআরএস, রহমতপুর, বরিশাল; **প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বিএআরআই, গাজীপুর; বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০১
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর জেলাগুলো তুলা চাষের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময় অঞ্চল। বাংলাদেশের মোট আয়তনের ২০ ভাগ অর্থাৎ ২.৮৫ মিলিয়ন হেক্টর উপকূলীয় এলাকার মধ্যে প্রায় ০.৮৩ মিলিয়ন হেক্টর আবাদি জমি রয়েছে। দেশের গড় ফসল ১৯১ শতাংশ হলেও উপকূলে ফসলের নিবিড়তা ১৩৩ শতাংশ মাত্র। জমিতে লবণাক্ততার কারণেই এসব জেলায় ফসলের নিবিড়তা কম। বাংলাদেশের প্রধান প্রধান ফসলগুলো লবণাক্ততা সংবেদনশীল হওয়ার কারণে অধিকাংশ জমিই রবি মৌসুমে পতিত থাকে। তুলা লবণাক্ত অঞ্চলে জন্মানোর একটি উপযোগী ফসল। তবে খরিফ মৌসুমে তুলা বপনকালীন জলাবদ্ধতার কারণে ওই অঞ্চলে সমতল ভূমির অন্যান্য অঞ্চলের মতো খরিফ-২ মৌসুমে তুলা আবাদের উপযোগিতা কম। এ অঞ্চলে তুলা চাষের উপযোগী সময় হলো রবি মৌসুম। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে রবি মৌসুমে আমন ধান কাটার পরে তুলার চাষ করা হয়। বিগত কয়েক বছর ধরে তুলা উন্নয়ন বোর্ড আমন ধান কাটার পর রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে তুলার উপযোগিতা যাচাইয়ের জন্য এডাপ্টিভ ট্রায়াল স্থাপন করেছে। ওই এডাপ্টিভ ট্রায়ালগুলো ফলাফল থেকে দেখা যায়, দক্ষিণাঞ্চলে আমন ধান কাটার পর তুলাবীজ বপন করা হলে বিঘাপ্রতি ২৬১.০-২৯৮ কেজি তুলার ফলন পাওয়া যায়। তবে বৈশাখ মাসের বৃষ্টিতে তুলার ফুটন্ত বোল যেন নষ্ট না হয় সে লক্ষ্যে যথাসময়ে বীজ বপন ও আগাম বীজতুলা সংগ্রহের জন্য ফসল ব্যবস্থাপনা করতে হয়। আমন ধান কাটার পর বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ব্যাপক এলাকা পতিত থাকে। উল্লিখিত পতিত জমিতে তুলা চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে চলতি ২০১৬-২০১৭ মৌসুমে তুলা উন্নয়ন বোর্ড দক্ষিণাঞ্চলের ঝালকাঠি, রাজাপুর, বাবুগঞ্জ, তালা, আমতলী, কলাপাড়া, দশমিনা, গলাচিপা উপজেলাগুলো ১০০টি প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করেছে। এসব জেলাগুলো তুলা চাষ সম্প্রসারণ করে ফসলের নিবিড়তা বাড়িয়ে উপকূলীয় চাষিদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের পাশাপাশি টেক্সটাইল মিলের প্রধান কাঁচামাল আশতুলার সরবরাহ করা যাবে।
বপন সময় : ১৫ কার্তিক থেকে শুরু করে ৩০ কার্তিক পর্যন্ত তুলা বীজ বপন করতে হবে। এ সময় আমন ধান কাটা হয়ে গেলে ও জমিতে জো থাকলে জমি তৈরি করে সরাসরি জমিতে বীজ বপন করতে হবে। এ সময় জমি বীজ বপনের উপযুক্ত না থাকলে বীজতলা তৈরি করে বীজ বপন করতে হবে।
বীজ হার : বিঘাপ্রতি ১.০ কেজি উফশি কিংবা ৫০০-৬০০ গ্রাম হাইব্রিড বীজের প্রয়োজন হয়। বীজ বপনরে আগে তুলাবীজ ৩-৪ ঘণ্টা পানেিত ভিজিয়ে শুকনো মাটি বা ছাই দিয়ে ঘষে নেয়া উত্তম।
জমি তৈরি : রোপা আমন কাটার পর বিঘাপ্রতি ১.০-১.৫ মেট্রিক টন গোবর-কম্পোস্ট সার জমিতে ছটিেিয় দিয়ে ৩-৪টি চাষ ও মই দিয়ে জমি সমতল ও ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।
বীজ বপন : তুলা বীজ সারেিত বপন করতে হয়। সব জাতের ক্ষেত্রেই সারি থেেক সারি ৯০ সেন্টিমিটার (৩ ফুট বা ২ হাত) এবং গাছ থেকে গাছরে দূরত্ব ৪৫ সেন্টিমিটার (১.৫ ফুট বা ১ হাত) বজায় রেেখ বীজ বপন করতে হবে।
তুলার চারা রোপণ : আমন ধান কাটার পর জমি ভিজা, স্যাঁতস্যাঁতে ও বপন উপযোগী না থাকলে, বসতবাড়ির আশপাশে শুকনো জমিতে বীজতলা তৈরি করে তুলার বীজ বপন করতে হবে। বীজতলার মাটি চাষ দিয়ে ঝুরঝুরে করে গোবর, ছাই ও সামান্য পরিমাণে পটাশ সার মিশিয়ে সারিতে গর্তে বীজ বপন করে পলিথিন দিয়ে মাটি ঢেকে দিতে হবে। পরে উপযুক্ত সময়ে জমি তৈরি করে ১০-২০ দিন বয়ষ্ক চারা বীজতলা থেকে মাঠে রোপণ করতে হবে।
সার প্রয়োগ : ভালো ফলন পেতে হলে তুলা ক্ষেতে উপযুক্ত সার সঠিক পরিমাণ ও নিয়মমাফিক ব্যবহার করতে হয়। মাটিতে জৈব ও রাসায়নিক উভয় প্রকার সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন। জৈব সার ব্যবহারে মাটির জৈব পদার্থ বাড়ে ফলে মাটির পানি ধারণক্ষমতা বাড়ে, অনুজীবের কার্যকারিতা বাড়ে এবং অনুখাদ্যের পরিমাণ বাড়ে বিঘাপ্রতি সারের মাত্রা হলো ইউরয়িা ২৫-৩০ কেজি; টিএসপি ৩০-৩৫ কেজি; এমওপি ৩৫-৪০ কেজি; জিপসাম ১৪-১৬ কেজি; সলুবর বোরন ২.৫-৩ কেজি; জিংক ২.৫-৩; ম্যাগ. সালফটে ২.৫-৩। প্রাথমিক সার বীজ বপনের জন্য তৈরি নালায় অথবা পৃথক নালা কেটে প্রয়োগ করতে হবে। পার্শ্ব প্রয়োগের ক্ষেত্রে সারি থেকে ৫-৬ সেন্টিমিটার দূরে নালা কেটে সার প্রয়োগ করে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে৷ একবার সারির যে দিকে পার্শ্বপ্রয়োগ করা হবে পরবর্তিতে তার বিপরীত দিকে পার্শ্বপ্রয়োগ করতে হবে৷ আগাম ফসল ব্যবস্থাপনার জন্য ৯০ দিন পর ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা যাবে না।
মাটি দিয়ে গোড়া বেঁধে দেয়া : বীজ বপনের ৪০ দিন পর ইউরিযা সার পার্শ্বপ্রয়োগ করে ১ম বার এবং আবার বীজ বপনরে ৬০ দিন পর পুনরায় ইউরিযা সার পার্শ্বপ্রয়োগ করে ২য় বার গাছের গোড়া মাটি দিয়ে ভালো করে বেঁধে দিতে হবে।
তুলার ক্ষতিকারক পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা ক্ষতির ধরন অনুসারে তুলা ফসলের অনিষ্টকারী পোকামাকড়কে প্রধানত দুই শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যথা- শোষক ও চর্বনকারী পোকা।
শোষক পোকা : যেসব পোকামাকড় গাছের কচিপাতা, ডগা, কুঁড়ি, ফুল অংশ থেকে রস শোষণ করে গাছেরসমূহ ক্ষতি করে থাকে তাদের শোষক পোকা বলা হয়। তুলার প্রধান প্রধান শোষক পোকা হলোÑ জ্যাসিড; জাব পোকা; লাল গান্ধি পোকা; সাদা মাছি; থ্রিপস; লাল মাকড়।
চর্বনকারী পোকা : এ পোকাগুলো গাছের পাতা, ফুল, কুঁড়ি চর্বন করে এবং ডগা বা বোল ছিদ্র করে ভেতরে প্রবেশ করে ক্ষতি করে। এ পোকা সাধারণত শুককীট অবস্থায় গাছের ক্ষতি করে থাকে। এ ধরনের ক্ষতিকারক পোকাগুলো হলোÑ গুটি পোকা; আঁচা পোকা; পাতা মোড়ানো পোকা; ঘোড়া পোকা। আমাদের দেশে ক্ষতিকারক পোকার মধ্যে সাদা মাছি, জ্যাসিড, জাবপোকা, স্পটেড বোলওয়ার্ম, আমেরিকান বোলওয়ার্ম ও আঁচা পোকার নামই সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য। এ পোকা দিয়ে তুলা ফসল আক্রান্ত হলে এবং সময়মতো ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে তুলার ফলন আশংকাজনকভাবে কমে যায়। কীটনাশক প্রয়োগ করে ক্ষতিকারক পোকামাকড়কে দমন করা যায়। তবে মাঠে কীটনাশক প্রয়োগের আগে স্কাউটিং করে জমিতে ক্ষতিকারক পোকামাকড়ের সঠিক অবস্থা নির্নয় করা আবশ্যক।
বীজতুলা সংগ্রহ : তুলা গাছের বৃদ্ধি ইনডিটারমিনেট টাইপ হওয়াতে বীজতুলা একবারে সংগ্রহ করা যায় না। ৩-৪ বারে সংগ্রহ করার প্রয়োজন হয়। বপনের পর জাত ভেদে ১১০-১২০ দিনের মধ্যেই তুলার বোল ফাটতে শুরু করে। প্রথম বার তুলা সংগ্রহ এর সময় ৪০-৫০ ভাগ বোল ফাটার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া দরকার। দ্বিতীয় সংগ্রহ এ ২৫-৩০ ভাগ তুলা সংগ্রহ করা যেতে পারে। অবশিষ্ট ২০ ভাগ তুলা তৃতীয় বা শেষ বারে সংগ্রহ করা যেতে পারে। এভাবে বীজতুলার সংগ্রহ স¤পন্ন করতে প্রায় ৪০-৫০ দিন সময় দরকার হয়।
তুলার চাষ বিভিন্নভাবে চাষিদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তুলার বীজ বপন থেকে শুরু করে বীজ তুলা প্রক্রিয়াজাতকরণ পর্যন্ত মহিলা শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। উৎপাদিত বীজতুলা থেকে ৪০ শতাংশ আঁশ ও ৬০ শতাংশ বীজ পাওয়া যায়। বীজ থেকে পুনরায় ১৫ শতাংশ ভোজ্যতেল ও ৮৫ শতাংশ খৈল পাওয়া যায়। তুলার খৈল মাছ ও পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অপরদিকে শুকনো তুলা গাছ জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আমন ধান কাটার পর দক্ষিণাঞ্চলের ব্যাপক অনাবাদি জমিতে তুলার আবাদ করে বস্ত্রশিল্পের প্রধান কাঁচামাল তুলার আঁশ জোগানোর পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে তুলা উন্নয়ন বোর্ড আগ্রহী তুলা চাষিদের সব প্রকার সহযোগিতা প্রদান করে থাকে।
ড. মো. ফরিদ উদ্দিন*
*নির্বাহী পরিচালক, তুলা উন্নয়ন বোর্ড, খামারবাড়ি, ঢাকা
বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী পাহাড়, গড়, নদীবাহিত পললভূমি বেষ্টিত ১,৪৭,৬১০ বর্গকিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট এ দেশ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সুজলা, সুফলা সোনার বাংলাদেশ। এ দেশে ১৫টি ভূপ্রকৃতি ও ৩০টি কৃষি পরিবেশ অঞ্চল রয়েছে। ৪১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকা, যা আয়তনে ২৮,৬০০ বর্গকিলোমিটার, বাংলাদেশের প্রায় ২০ ভাগ এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। সমুদ্র বিজয়ের পর বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার দৈর্ঘ্য বেড়ে ৭১০ কিলোমিটার হয়েছে যা দেশের প্রায় ৩০ শতাংশের বেশি। দক্ষিণাঞ্চলে গংগার পললভূমি, গঙ্গার জোয়ার ভাটার পললভূমি, মেঘনা মোহনার পললভূমি, চট্টগ্রামের সমুদ্র উপকূলবর্তী জোয়ার ভাটার পলল ভূমি ও পিট বেসিন নামক ৫টি ভূপ্রকৃতি অঞ্চল রয়েছে। এ অঞ্চলে বর্ষা মৌসুমে প্রধানত স্থানীয় উন্নত জাতের ধানের আবাদ বেশি হয়ে থাকে। শুষ্ক মৌসুমে অধিকাংশ জমি মৌসুমি পতিত থাকে; কারণ শুষ্ক মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ এলাকা বিভিন্ন মাত্রায় লবণাক্ততা দ্বারা মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়। তখন সেচের জন্য উপযোগী পানির অভাব দেখা দেয়। শুষ্ক রবি মৌসুমে ব্যাপক এলাকা বিপন্নভাবে পতিত থাকে।
বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তনের কারণে দক্ষিণাঞ্চলের ইকো-সিস্টেমের এবং কৃষি পরিবেশের ওপর ঋণাত্মক প্রভাব দেখা যায়। বাংলাদেশের উপকূলবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা কার্বন নির্গমনের ফলে ওজন স্তর হালকা হওয়া, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া, বরফ বেশি গলার ফলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়া পরিবেশগত ক্ষতি ও হুমকির দ্বারা বিপন্ন অঞ্চল। ধারণা করা হচ্ছে, আবহাওয়ার মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাবের ফলে পৃথিবীর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার অন্তর্গত বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি (শস্য), মৎস্য ও জনবসতি জানমাল সর্বাধিক হুমকির সম্মুখীন; মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যা অত্যন্ত সফলভাবে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছেন।
বাংলাদেশের আবাদি জমির শতকরা ১০ ভাগের বেশি দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলবর্তী এলাকা। এ দেশের ২৮.৬০ লাখ হেক্টর উপকূলবর্তী এলাকার মধ্যে ১০.৫৬ লাখ হেক্টর আবাদি জমি বিভিন্ন মাত্রার লবণাক্ততা দ্বারা আক্রান্ত। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট ১৯৭৩ সাল থেকেই উপকূলীয় এলাকার পানি ও মৃত্তিকার লবণাক্ততা পরিবীক্ষণ কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পরিচালনা করে আসছে।
নির্দিষ্ট সময়ে ও নির্দিষ্ট স্থানে নিয়মিতভাবে পানির উপরিস্তর (নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর, সমুদ্র), নি¤œস্তর (অগভীর, গভীর, হ্যান্ড টিউবওয়েল) এবং মৃত্তিকা পরীবিক্ষণ করে মানচিত্রসহ প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে। লবণাক্ততা মাত্রা চিহ্নিত করে নিয়মিত উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে মৃত্তিকা পানি লবণাক্ততা মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে এবং হালনাগাদ করা হচ্ছে।
মৃত্তিকা লবণাক্ততা
মৃত্তিকা দ্রবণীয় অবস্থায় লবণ ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান ধারণ করে। উদ্ভিদ দ্রবণীয় অবস্থায় তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান মৃত্তিকা থেকে গ্রহণ করে। অতিরিক্ত দ্রবণীয় লবণ মৃত্তিকাস্থ দ্রবণে থাকলে তাকে মৃত্তিকা লবণাক্ততা বলে। বেশি দ্রবীভূত লবণ দ্রবণে থাকলে উদ্ভিদের মূল দ্রবীভূত পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করতে পারে না। ফলে উদ্ভিদের বৃদ্ধি বা ফলন মারাত্মকভাবে ব্যাহত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
লবণ মৃত্তিকাতে আয়ন হিসেবে অবস্থান করে। এসব আয়ন খনিজবস্তু অবক্ষয়ের মাধ্যমে অবমুক্ত হয়। সমুদ্র পানির মাধ্যমে এসব লবণের আয়ন মৃত্তিকাতে দ্রবীভূত হয়। এসব দ্রবীভূত লবণযুক্ত পানি সেচ হিসেবে ব্যবহার করলে গাছের শিকড় মাটির দ্রবণ থেকে পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করতে পারে না। ফলে এলাকা উদ্ভিদ শূন্য হয়ে পড়ে। ক্রমশ উদ্ভিদ ও পশুপাখি শূন্য হয়ে প্রকৃতি এক বিরান ভূমিতে পরিণত হয়। পানির লবণাক্ততা থেকেই মৃত্তিকার লবণাক্ততা সৃষ্টি হয়। মন্দ নিষ্কাশন-লবণযুক্ত সেচের পানি মাটির লবণাক্ততার জন্য প্রধান কারণ হতে পারে। যেহেতু উদ্ভিদ মৃত্তিকাস্থ পানি গ্রহণ করে ও মৃত্তিকাস্থ পানি বাষ্পীভূত হয়, তাই লবণ মৃত্তিকাতে জমা থাকে বা পড়ে থাকে। এ কারণে গাছের পানির ঘনত্ব মাটিতে দ্রবণের ঘনত্ব থেকে অনেক কম হয়। লবণাক্ত পানি দ্বারা অপরিকল্পিতভাবে সেচ ব্যবস্থাপনার ফলে মৃত্তিকা লবণাক্ততা মাত্রাতিরিক্তভাবে বাড়ে।
মৃত্তিকা লবণাক্ততা দূরীভূত বা প্রতিকার করার জন্য বা মৃত্তিকাতে যেন লবণাক্ততা গঠিত হতে না পারে সেজন্য প্রচুর অলবণাক্ত পানি উদ্ভিদের মূল অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত করতে হয় যাতে লবণ দ্রবীভূত হয়ে চুয়ে যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, কিছু কিছু লবণের আয়ন গাছের জন্য অপরিহার্য।
বাংলাদেশে লবণাক্ততার বর্তমান অবস্থা
মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের গবেষণা ও জরিপ লব্দ তথ্য থেকে জানা যায়, ১৯৭৩ সালে লবণাক্ততা আক্রান্ত এলাকা ছিল ৮.৩৩ হেক্টর। পরবর্তিতে উপকূলবর্তী এলাকায় লবণাক্ততার তীব্রতা দিন দিন বাড়তে থাকে। বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের এ তীব্রতা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। দেখা যাচ্ছে, সাতক্ষীরা, যশোর, নড়াইল ও গোপালগঞ্জে লবণাক্ততা উত্তর দিকে ধেয়ে এসেছে। কোথাও কোথাও ১০-১২ কিলোমিটার উত্তর পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়েছে। এর কারণ হলো উজান থেকে মিষ্টি পানির প্রবাহ কমে যাওয়া এবং সমুদ্র পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়া। গবেষণায় আরও জানা যায়, ২০০০ সালে আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ১৪.৫৯ লাখ হেক্টর এর মধ্যে ১০.২০ লাখ হেক্টর জমি বিভিন্ন মাত্রায় লবণ দ্বারা আক্রান্ত। ২০০৯ সালে আবাদি জমির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১৬.৮৯ লাখ হেক্টর এর মধ্যে লবণাক্ত আক্রান্ত এলাকার আয়তন দাড়ায় ১০.৫৬ লাখ হেক্টর। এতে প্রতীয়মান হয়, ২০০০ থেকে ২০০৯ সালে ৯ বছরে লবণাক্ত জমি ৩৬ হাজার হেক্টর বৃদ্ধি পেয়েছে অর্থাৎ প্রতি বছর নতুন করে ৪০০০ হেক্টর জমি লবণ দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে।
দক্ষিণাঞ্চলে মৃত্তিকা ও পানির লবণাক্ততা ব্যবস্থাপনা
লবণাক্ততা এলাকায় মৃত্তিকা ও পানির লবণাক্ততা নিয়মিত পরীক্ষণকরণ ও চিহ্নিতকরণ;
কলসি সেচ প্রযুক্তি;
দ্বিস্তর বিশিষ্ট আচ্ছাদন;
ছোট ছোট খামার পুকুর তৈরির প্রযুক্তি;
রিজ ও ফারো পদ্ধতিতে চাষাবাদ;
প্রদর্শনীর মাধ্যমে বিভিন্ন মাত্রায় বিভিন্ন জাতের লবণসহিষ্ণুতা যাচাইকরণ;
শাকসবজি ও ফসলের বেড উঁচু তৈরি করা;
বিভিন্ন প্রকার জৈব সার ব্যবহার করা;
জমিকে চাষ দিয়ে ঝুরঝুরে ও আর্দ্র অবস্থায় রাখা;
স্থানভিত্তিক লবণাক্ততা মাত্রা জেনে উপযোগী ও সহনশীল ফসলের জাত নির্বাচন করে চাষাবাদ করুন।
কলসি সেচ প্রযুক্তি
কলসিতে ৩-৪ ছোট ছিদ্র রাখুন;
৪-৫ ফুট লম্বা পাটের রশি প্রতি ছিদ্র দিয়ে ঝুঁলিয়ে দিন;
কলসিটিকে মাটিতে এমনভাবে স্থাপন করুন যাতে রশিগুলো ফসলে চার মূলের চার দিকে ছড়িয়ে থাকে।
কর্ষণ স্তরের ১০-১৫ সে. মি. (৪-৬ ইঞ্চি) নিচে ১০-১৫ সে.মি. (৪-৬ ইঞ্চি) মতো উঁচু করে ধানের খড় বিছিয়ে দিন;
খড়ের ওপরের মাটিতে সুষম সার মাত্রা অনুসারে জৈব ও রাসায়নিক সার মিশিয়ে দিন;
সুষম সার মিশ্রিত মাটিতে চারা রোপণ বা বীজ বপন করা হয়;
মাটির উপরে আবার ধানের খড় বিছিয়ে দিন;
নিচের খড়ের স্তর মাটির নিচ থেকে লবণ উপরে উঠতে বাধা দেবে। ওপরের শক্ত মাটিতে রস ধারণ করতে সহায়তা করবে;
ফলে মাটির লবণাক্ততা কমতে থাকবে।
ছোট ছোট খামার পুকুর প্রযুক্তি
বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য ২.২৫ মিটার গভীর ছোট ছোট পুকুর জমির ১/৫ অংশে খনন করুন।
১ থেকে ১.৫ মিটার উঁচু আইল তৈরি করতে হবে। যাতে ৩ মিটার পর্যন্ত উচ্চতায় পানি থাকতে পারে।
১/৫ অংশের উত্তোলিত মাটি অবশিষ্ট ৪/৫ অংশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে নিতে হবে।
প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
আটকানো পানি উদ্যান ফসল ও শাকসবজি চাষে ব্যবহার করা যাবে ।
পুকুরের পানির উচ্চতা মাপার গজ থাকতে হবে।
স্বল্প পরিসরে শুষ্ক জমির ফসল (আপল্যান্ড ক্রপ) আবাদ করা যাবে।
মো. দেলোয়ার হোসেন মোল্লা*
*মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, ঢাকা
বাংলাদেশ পৃথিবীর দুর্যোগ প্রবণ এলাকার মধ্যে অন্যতম একটি দেশ। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে গত ৩০ বছরে বাংলাদেশে ছোট বড় প্রায় ২০০টি দুর্যোগ সংঘটিত হয়েছে। এসব দুর্যোগে লক্ষাধিক মানুষের প্রাণহানিসহ গবাদিপ্রাণী, হাঁস-মুরগি, বাড়িঘর এবং পশুখাদ্যের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। যার আর্থিক মূল্যমান প্রায় ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এদের অধিকাংশই প্রায় দক্ষিণাঞ্চলে সংগঠিত হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো সাধারণত যেসব দুর্যোগ সংঘটিত হয়ে থাকে তার মধ্যে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত, বন্যা, সাইক্লোন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিজনিত কারণে জলোচ্ছ্বাস, লোনা পানি প্রবেশ, নদীভাঙন, রোগব্যাধির আক্রমণ, খাবার পানিসহ নিত্য ব্যবহার্য প্রয়োজনীয় পানির অভাব, কর্মসংস্থানের অভাব ফলে দেশ ত্যাগ।
বাংলাদেশের বিপদাপন্ন গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা মেটাতে এবং আয় রোজকার বাড়াতে গবাদিপ্রাণী ও হাঁস-মুরগি প্রতিপালনের গুরুত্ব অপরিসীম। সম্প্রতি ঘন ঘন এবং অসময়ে বন্যার প্রাদুর্ভাব গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির প্রতিপালনে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। পরিবর্তিত বন্যাকালীন পরিস্থিতি ক্রমাগতভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে গবাদিপ্রাণী ও পাখির বাসস্থানের ঝুঁকি, গো-খাদ্যের দু®প্রাপ্যতা এবং নানা ধরনের রোগ ব্যাধির আশংকা। এসব ঝুঁকির অন্যতম কারণগুলো হচ্ছে নিচু স্থানে গবাদিপ্রাণী ও পাখির আবাসস্থল তৈরি, নিরাপদ উঁচু স্থানের অভাব, চারণভূমি প্লাবিত হওয়া, স্থানীয়ভাবে চিকিৎসক ও ওষুধপত্রের অভাব এবং প্রস্তুতি ও ঝুঁকি কমাতে জনগোষ্ঠীর যথাযথ পদক্ষেপের অভাব ও অসচেতনতা।
উপকূলীয় অঞ্চলের অধিকাংশ জেলাগুলোর পানিতে আশঙ্কাজনকভাবে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় শুধু মানুষই নয়, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির জীবনধারণও মারাত্মক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। লবণাক্ত পানি পান করার ফলে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি নানা ধরনের রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় গোখাদ্যের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে উপকূল অঞ্চলে দেখা দিয়েছে গোখাদ্যের চরম অভাব। একই সাথে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের মাত্রা এবং তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির বাসস্থান ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে জনগোষ্ঠীকে নানা বিপাকে পড়তে হচ্ছে। দুর্যোগ পরিস্থিতিতে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। এসব রোগব্যাধির মধ্যে ক্ষুরা, বাদলা, তড়কা রোগ, কৃমি, রানীক্ষেত ইত্যাদি। কখনও কখনও এসব রোগ মহামারী আকার ধারণ করে এবং বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠীর জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবার অভাব এবং গবাদিপ্রাণী ও হাঁস-মুরগি পালনে জনগোষ্ঠীর যথাযথ প্রস্তুতি, ঝুঁকি হ্রাস পদক্ষেপের অভাব ঝুঁকির মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
গত দুই দশক ধরে সমুদ্রের লোনা পানি নদী, খাল, নালা, বিলে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এছাড়া চিংড়ি চাষি কর্তৃক সমুদ্রের লোনা পানি উপকূলের ভেতরে প্রবেশ করানোর ফলে কৃষি, মৎস্য, গোখাদ্য, গাছপালা ও বনাঞ্চলের গাছপালার জীবন ধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে প্রাণিসম্পদ রক্ষায় অভিযোজন প্রযুক্তি হতে পারে অন্যতম উপযুক্ত কৌশল।
অভিযোজন (অফধঢ়ঃধঃরড়হ) : অভিযোজন হচ্ছে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়ানো। জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়, সে পরিস্থিতি উত্তরণে গৃহীত কৌশলকে জলবায়ু ঝুঁকি অভিযোজন বলা হয়।
প্রাণিসম্পদের অভিযোজন কৌশল (খরাবংঃড়পশ অফধঢ়ঃধঃরড়হ ঞবপযহড়ষড়মু ঃড় ঈষরসধঃব ঈযধহমব) : আমাদের জাতীয় উন্নয়ন ও নিজেদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে জলবায়ু পবির্তনের ঝুঁকি ও অভিঘাত মোকাবিলায় সবার সর্বস্তরে খাপ খাওয়ানো, অভিযোজন করণীয় ও দায়িত্ব রয়েছে। প্রাণিসম্পদের অভিযোজনের সুযোগ ও কৌশল হলো প্রাণিসম্পদের অভিযোজনে যেসব খাতকে প্রাধান্য দিয়ে কৌশল নির্ধারণ করা যায়; সেগুলো হলো-
পানি : বৃষ্টির পানি ধারণ, পানি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ কৌশল রপ্ত করা, ব্যবহৃত পানি পুনরায় ব্যবহার, লবণাক্ততা দূরীকরণ, গবাদিপ্রাণী ও পাখির জন্য পানি ব্যবহার।
প্রাণিসম্পদ ও কৃষি : অঞ্চলভিত্তিক দুর্যোগ সহনশীল জাতের গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি পালন সফল করা। কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে দুর্যোগ সহনশীল জাতের প্রাণী উৎপাদন করা। যেহেতু প্রাণী উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল। প্রাণী ব্যবস্থাপনায় যেসব শস্য সরাসরিযুক্ত সেসব শস্যের চাষকে উৎসাহিত করা, ফডার বৃক্ষ ও ফলমূলের চারা রোপণ, দুর্যোগসহনশীল ঘাসের প্রচলন, অঞ্চলভিত্তিক ঘাস উৎপাদনের প্রযুক্তিগুলো জনসাধারণের মাঝে বিতরণ করা, কৃষি ব্যবস্থাপনার উন্নতি করা, ভূমি ক্ষয় নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে বৃক্ষরোপণ।
হাইব্রিড নেপিয়ার
নেপিয়ার একটি উন্নত জাতের এবং বহুবর্ষজীবী দ্রতবর্ধনশীল ঘাস। সহজে চাষ করা যায় এবং একবার চাষ করলে ৩-৪ বছর পর্যন্ত ঘাস পাওয়া যায়। জলাবদ্ধ স্থান ছাড়া বাংলাদেশের সব ধরনের মাটিতে এমনকি পাহাড়ের ঢালে ও সমুদ্র তীরবর্তী লবণাক্ত জমিতেও জন্মে। উত্তমরূপে চাষ করে জমি তৈরি করতে হয়। কাদামাটিতেও লাগানো যেতে পারে। বছরের যে কোনো সময় এ ঘাস চাষ করা যায় তবে উত্তম সময় হচ্ছে ফাল্গুন চৈত্র মাস। চাষের জন্য শতাংশ প্রতি ১০০ কাটিং বা মোথা প্রয়োজন হয়। রোপণের ক্ষেত্রে লাইন থেকে লাইন ৫ মি. (১.৫ ফুট) বা এক হাত এবং মোতা থেকে মোথার দূরত্ব ৫ মি. (১.৫ ফুট) বজায় রাখতে হয়। জমি তৈরিতে শতাংশ প্রতি গোবর-জৈব সার ৬০-৭০ কেজি, ইউরিয়া-টিএসপি-এমওপি ২০০ঃ২৮০ঃ১২০ গ্রাম এবং ঘাস লাগানোর এক মাস পর ইউরিয়া ২০০-৩০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয়। এছাড়া প্রতিবার ঘাস কাটার পর ইউরিয়া ২০০-৩০০ গ্রাম প্রতি শতকে প্রয়োগ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। খরা মৌসুমে ১৫-২০ দিন পর পর, গ্রীষ্মকালে ৩০-৪৫ দিন পর পর এবং শীতকালে ৫০-৬০ দিন পর পর সেচ দিতে হয়। ১ম বছর ৫-৬ বার, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ বছর ৭-৯ বার ঘাস কাটা যায়। অন্যান্য ঘাসের চেয়ে এর পুষ্টিমান অনেক বেশি, এ জন্য নেপিয়ার ঘাস গরুকে খাওয়ালে দুধ উৎপাদন বাড়ে, দ্রুত ওজন বাড়ে, পুষ্টির ঘাটতি কমানো যায় এবং গরুর খাদ্য খরচ কম হয়। বছরে শতাংশ প্রতি ৭০০-৯০০ কেজি ঘাস পাওয়া যায়। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস, ব্যক্তিমালিকানাধীন খামার এবং বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সাভার, ঢাকায় এ ঘাসের ভিজ চারা পাওয়া যাবে।
অবকাঠামো : পুনর্বাসন, ঘূর্ণিঝড় প্রতিরোধক্ষম বাসস্থান ও বসতি স্থাপন, খানা পর্যায়ে এবং এলাকা ভিত্তিক মজবুত এবং স্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র/মাটির কিল্লা স্থাপন, বৃষ্টির পানি ধরে রাখাসহ প্রতিকূল সময়ে ব্যবহারের জন্য জলাধার স্থাপন। প্রাণিসম্পদের সেবা ও সম্প্রসারণের জন্য লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এলাকাভিত্তিক অবকাঠামো স্থাপন জরুরি।
প্রাণী স্বাস্থ্যসেবা-জনস্বাস্থ্য : ভোগ্যপণ্য হিসেবে ব্যবহৃত প্রাণী এবং প্রাণীজ পণ্য দূষণমুক্ত, জীবাণু মুক্ত এবং জনস্বাস্থের সহায়কভাবে উৎপাদন করা। জলবায়ুজনিত রোগ নির্ণয়, রোগের চিকিৎসা ও প্রতিরোধ, বিশুদ্ধ পানির ব্যবহার, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ, স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক রোগগুলো মোকাবিলায় সক্ষমতা তৈরি করা। প্রাণী রোগ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে নিবিড় টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন। প্রাণিসম্পদের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ভেটেরিনারি সার্ভিসের পরিধি গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত করা, সার্ভিসের মান বৃদ্ধি করা এবং জনবল তৈরি করা।
যোগাযোগ : পুনর্বিন্যাস ও পুনর্বাসন, প্রাণীর উৎপাদন, সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ, ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থাপনার কোনো বিকল্প নেই। চাহিদা মাফিক রাস্তা নির্মাণ, মেরামত এবং অবকাঠামো স্থাপন করা। দ্রুত তথ্য আদান-প্রদান এবং যোগাযোগের জন্য আইসিটি ব্যবস্থার উন্নয়ন ও ব্যবহার করা।
শক্তি : গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়া মোকাবিলায় প্রাণিসম্পদ খাত থেকে সম্ভাব্য গ্রীন হাউস গ্যাসকে রিসাইক্লিংকরে পুনঃব্যবহারের প্রচলন করা। প্রাকৃতিক নির্ভরতাকে কমিয়ে এনে সৌরবিদ্যুৎ বা রিসাইক্লিং প্রক্রিয়ায় শক্তি উৎপাদন করা। উৎপাদিত শক্তিকে রান্নাসহ পারিবারিক সব কাজে ব্যবহার করে জাতীয় গ্রিডের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো।
বিভিন্ন ধরনের অভিযোজন (উরভভবৎবহঃ ঞুঢ়বং ড়ভ অফধঢ়ঃধঃরড়হ) : কাঠামোগত অভিযোজন (ঝঃৎঁপঃঁৎধষ অফধঢ়ঃধঃরড়হ) : এ প্রক্রিয়ায় বর্তমানে প্রচলিত প্রযুক্তিগুলোর কিছুটা উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে অভিযোজিত হওয়া যায়। যেমন- বন্যার জন্য গবাদিপ্রাণী ও পাখির ঘর উঁচু করা, মজবুত কাঠামো দিয়ে ঘর তৈরি করা। অ-কাঠামোগত অভিযোজন (ঘড়হ-ংঃৎঁপঃঁৎধষ অফধঢ়ঃধঃরড়হ) : অনেক ক্ষেত্রে জীবন চর্চা ও ব্যবহারে পরিবর্তনের মাধ্যমেই খাপ খাওয়ানো বা অভিযোজিত হওয়া সম্ভব। ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে নিরাপদ স্থানে গিয়ে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি পালন। নিবৃত্তিমূলক অভিযোজন (অহঃরপরঢ়ধঃড়ৎু অফধঢ়ঃধঃরড়হ): জলবায়ু পরিবর্তনে প্রতিকূল প্রভাব পরিলক্ষিত হওয়ার আগেই অভিযোজন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। যেমন- বন্যার আগেই খাদ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা, টিকা প্রদান করা, জরুরি ওষুধপত্র মজুদ রাখা। প্রতিক্রিয়ামূলক অভিযোজন (জবধপঃরাব অফধঢ়ঃধঃরড়হ): জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবগুলো দেখার পর যে অভিযোজন প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয় তাকে প্রতিক্রিয়ামূলক অভিযোজন বলা হয়। লোনা এলাকায় লোনা সহনশীল ঘাষের প্রচলন করা। আকষ্মিক বন্যা এলাকায় হাঁস চাষের প্রচলন করা। হাঁস পালন, ভেড়া পালন,ছাগল পালন এসব করতে হয়।
পরিবর্তিত জলবায়ু মোকাবিলায় দুর্যোগ প্রস্তুতি, ঝুঁকি কমানোর জন্য যেসব পদক্ষেপ করা যায়-
০১. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তনে প্রাণিসম্পদ বিষয়ে গবেষণা, দক্ষতা ব্যবস্থাপনা গ্রহণ;
০২. স্থানীয় জনসাধারণকে পূর্বপ্রস্তুতি সম্পর্কে ধারণা প্রদান, আশ্রয়কেন্দ্র ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা প্রদান। আশ্রয়কেন্দ্রে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খাবার ও পানির ব্যবস্থাকরণ;
০৩. পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যেখানে দুর্যোগ ও অভিযোজন বিষয়ে নীতিমালা গ্রহণ করেছে সেগুলো অনুসরণ করা;
০৪. সাইক্লোন রেজিলিয়েন্ট গৃহ নির্মাণ করা;
০৫. দীর্ঘমেয়াদি দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মাধ্যমে প্রাণিসম্পদ অভিযোজন বিষয়ে পুস্তিকা প্রণয়ন;
০৬. জনসাধারণকে দুর্যোগ প্রতিরোধে নেতৃত্ব প্রদান ও সহযোগিতা করা, স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা ও সিবিওদের কাজে সম্পৃক্তকরণ;
০৭. দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং মোকাবিলা করার জন্য ভলান্টিয়ার্স গ্রুপ তৈরি করা এবং তাদের সাপোর্ট প্রদানের ব্যবস্থা করা।
০৮. বিকল্প জীবিকায়নের ব্যবস্থা করা যাতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
ডা. মো. রফিকুল ইসলাম*
*ফোকাল পয়েন্ট (দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তন) ও ইউএলও, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, ফার্মগেট ঢাকা
বাংলাদেশর আর্থসামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে মৎস্য সেক্টর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে তথা জিডিপিতে মৎস্য সেক্টরের অবদান, যা কৃষি খাতে উৎপাদিত মোট মূল্য উল্লেখযোগ্য। আমাদের দৈনন্দিন প্রাণিজ আমিষের শতকরা ৬০ ভাগ জোগান দিচ্ছে মাছ। এ সেক্টরের সাথে সার্বক্ষণিকভাবে ১২ লাখ এবং খ-কালীনভাবে ১ কোটি ২০ লাখ জনগোষ্ঠী সম্পৃক্ত থেকে তাদের জীবিকা নির্বাহ করার পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর প্রাণিজ আমিষের চাহিদাপূরণ, দেশের জন্য মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, পরিবেশের উৎকর্ষতা বৃদ্ধিসহ দারিদ্র্যবিমোচন কর্মকা- হচ্ছে। মাছের বার্ষিক চাহিদা ৩৭.৬৫ লাখ মেট্রিক টন; জনপ্রতি মাছের বার্ষিক চাহিদা ২১.৯০ কেজি; জনপ্রতি বার্ষিক মাছ গ্রহণ ১৯.৭১; জনপ্রতি দৈনিক মাছের দৈনিক চাহিদা ৬০ গ্রাম। বাংলাদেশে মৎস্য উৎপাদন ও আহরণের উৎস হচ্ছে অভ্যন্তরীণ জলাশয় এবং সামুদ্রিক এলাকা। অভ্যন্তরীণ জলাশয়ের পরিমাণ প্রায় ৪৩.৩৭ লাখ হেক্টর। এর মধ্যে প্লাবনভূমিসহ মুক্ত জলাশয় ৪০.৪৭ লাখ হেক্টর এবং উপকূলীয় চিংড়ি খামারসহ বদ্ধ জলাশয় ২.৯০ লাখ হেক্টর। দেশের ৭১০ কিলোমিটার তটরেখার কাছাকাছি বেইসলাইন থেকে সাগরে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বিস্তৃৃত এলাকা আমাদের আওতাধীন জলসীমা। এর ফলে প্রায় ১,১৮,৮১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা দেশের সামুদ্রিক জলসীমা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত যা দেশের মূল ভূখ-ের আয়তনের চেয়েও বড়। এ জলসীমায় আহরণযোগ্য প্রচুর চিংড়ি ও মৎস্য প্রজাতির ছাড়াও রয়েছে অনাহরিত বিপুল মৎস্য সম্পদ।
উপকূলীয় অঞ্চলে মৎস্য সম্পদ
বাংলাদেশে উপকূলীয় অঞ্চল অত্যন্ত সমৃদ্ধ এবং সমুদ্র তটরেখার উপকূলীয় অঞ্চলে বিস্তৃতি প্রায় ৭১০ কিলোমিটার। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে মাছ চাষের তেমন বিস্তৃৃতি না থাকলেও অপরিকল্পিতভাবে চিংড়ি চাষের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। উপকূলীয় অঞ্চলে ৬৪,২৪৬ হেক্টর চিংড়ি খামারের স্থলে বেড়ে তা বর্তমানে ২,৭৫,৫৮৩ হেক্টরে উন্নীত হয়েছে। এদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বর্তমানে হেক্টরপ্রতি চিংড়ি উৎপাদনের হার ৩০০-৩৫০ কেজি। পৃথিবীর চিংড়ি উৎপাদনকারী দেশগুলোর তুলনায় এ উৎপাদন অনেক কম। তবে এসব চিংড়ি খামারের ওপর প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৮ লাখের ওপরে তারা সহজে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে। উপকূলীয় অঞ্চলে চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধি ও বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ, বৃদ্ধির যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। মোহনা অঞ্চল, সুন্দরবনে সংরক্ষিত জলাভূমি, বেসলাইন জলভূমি ও আন্তঃদেশীয় অঞ্চলের জলাশয় আছে। প্রাকৃতিক উৎসে ব্রুড থেকে পোনা উৎপাদিত হয়। এরা উৎপাদন চক্রের বিভিন্ন অবস্থায় বিভিন্ন অবস্থানে থাকে। আতুড়ে অবস্থায় পোনা উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ বা প্যারাবনে আসে একটু বড় হওয়ার পর এরা আবার গভীর সমুদ্রে ফিরে যায়। ধীরে ধীরে বাণিজ্যিকভাবে আহরণ উপযোগী এবং পরে ব্রুডে রূপান্তরিত হয়। বাংলাদেশের মৎস্য উৎপাদনের ২২-২৫ ভাগই আহরিত হয় সমুদ্র থেকে।
সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ
আমাদের সামুদ্রিক মৎস্য ও মৎস্যজাতীয় সম্পদের মধ্যে রয়েছে ৪৭৫ প্রজাতির মাছ, ২৫ প্রজাতির চিংড়ি, ৫ প্রজাতির লবস্টার, ১৫ প্রজাতির কাঁকড়া, ১২ প্রজাতির শিরোপদি, ৬ প্রজাতির কস্তুরা, ৩০১ প্রজাতির ঝিনুক-শামুক, ৩৩ প্রজাতির সাগর কুসুম, ১১ প্রজাতির তিমি-ডলফিন, ২ প্রজাতির তারা মাছ, ৩ প্রজাতির স্পঞ্জ, ৪ প্রজাতির কচ্ছপ, ৫৬ প্রজাতির শৈবাল, ১৩ প্রজাতির প্রবাল এবং সাগরশসা, সজারু, কুমির এসব। দেশের সামুদ্রিক জলসীমায় আহরিত মৎস্য প্রজাতির মধ্যে অধিকাংশই তলদেশীয় মাছ। প্রধান আহরিত তলদেশীয় মৎস্য প্রজাতি হচ্ছে, ফলি চান্দা, রূপচান্দা, সাদা দাতিনা, রাঙ্গা চইক্ক্যা, লাউখ্যা, ছুরি, লাল পোয়া, কামিলা এবং কোরাল এসব। আর সামুদ্রিক উপরিস্তরের মাছের ওপর এখনও কোনো ব্যাপক জরিপ পরিচালিত হয়নি। তবে বিভিন্ন সময়ে তলদেশীয় মাছ ও চিংড়ি সম্পদ জরিপকালে এবং বাণিজ্যিক ট্রলারের জালে বাইক্যাচ হিসেবে যেসব উপরিস্তরের সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায়, সেগুলো হচ্ছে চ্যাপা কড়ি, মাইট্র্যো ও চম্পা, টুনা মাছ, সারডিন, ক্লপিডস, হাঙর ও ক্যারাঞ্জিড। আর অপ্রচলিত সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের মধ্যে অনেক প্রজাতির মৎস্য রয়েছে। লবস্টার, শিরোপদি, কাঁকড়া, কস্তুরা, ঝিনুক, সামুদ্রিক শসা, শৈবাল এসব।
সাদা সোনা চিংড়ি
প্রাপ্তবয়স্ক সামুদ্রিক চিংড়ি সাগরে ট্রলার জাল দিয়ে এবং পোনা ও অপ্রাপ্ত চিংড়ি উপকূলীয় ও মোহনা অঞ্চলে বিভিন্ন সনাতনী জাল দিয়ে ধরা হয়। এসব চিংড়ি প্রজাতি হচ্ছে বাগদা, বাধাতারা, ডোরাকাটা, চাগা, বাঘ চামা, হরিণা, ললিয়া এবং রুড়া। উল্লিখিত চিংড়ি প্রজাতির মধ্যে বাগদা চিংড়ির মূল্য স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে বেশি থাকায় এর বাণিজ্যিক আহরণ বেশি। তবে মোট চিংড়ি উৎপাদনের সর্বাধিক অবদান রাখে হরিণা চিংড়ি। ১৯৫০ সালের সর্বপ্রথম সাতক্ষীরা জেলায় চিংড়ি চাষ শুরু হয়। ষাটের দশক থেকে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে জোয়ারের পানি বাঁধ দিয়ে আটকিয়ে রেখে পানির সাথে আগত চিংড়ি ও মাছের পোনাকে ৩-৪ মাস লালনপালন করে তা আহরণ করা হয়। পরবর্তীকালে বিশ্ব বাজারে চিংড়ির চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে দেশে চিংড়ি চাষের বিস্তৃতি ঘটতে থাকে। বর্তমানে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাংশে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট ও কক্সবাজার জেলার ২ লাখ ৭৫ হাজার ৫৮৩ হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ হচ্ছে। যার মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ জমি বৃহত্তর খুলনা জেলায় অবস্থিত। এছাড়াও দেশের ১৬টি জেলায় প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমি গলদা চাষের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। বিভিন্ন বাঁধ কোট, নদী-খালের লবণ পানি ঢুকিয়ে জমিতে ছোট বড় বেড়িবাঁধ দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে চিংড়ি চাষ করা হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে একে চিংড়ি ঘের বলা হয়। ধানের চেয়ে চিংড়ি উৎপাদনের প্রায় ১০ গুণ বেশি আয় হয় ফলে দিন দিন একদিকে যেমন ধান চাষের জমির পরিমাণ কমছে অন্যদিকে চিংড়ি চাষের আওতায় আনা জমির পরিমাণ বাড়ছে। যেসব জমিতে ধান ও চিংড়ি দুটো ফসল সেখানে ধানের উৎপাদন ও মান ক্রমান্বয়ে কমছে।
চিংড়ি চাষের জন্য পরিবেশ
চিংড়ি চাষের কারণে পরিবেশ দূষণ, ইকোলজিক্যাল ভারসাম্যহীনতা, পরিকল্পনাহীনতা ও অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষের ফলে পরিবেশ ও প্রতিবেশের নানা বিপর্যয় বিশেষত উপকূলীয় বাস্তবায়ন সংস্থান ধ্বংস হচ্ছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় প্রায় ৬,৮৭,০০০ হেক্টর ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল বা প্যারাবন রয়েছে। প্যারাবন উপকূলীয় অঞ্চলের মাটি ও পানির পুষ্টি চক্র সমাধান করে পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করে। উপকূলীয় জোয়ার-ভাটার, স্বাদু ও লবণ পানির মিশ্রণ স্থলে প্যারাবন বিশেষ বাস্তুসংস্থানগত ভারসাম্যতায় সামুদ্রিক জীবদের আঁতুড় অবস্থায় খাদ্য আহরণ ও বেঁচে থাকার পরিবেশ সৃষ্টি করে। প্যারাবন নির্মূলের ফলে উপকূলীয় ভূমিক্ষয় বাড়ে সামুদ্রিক তলানি পদ্ধতিতে পরিবর্তন হয়, তটরেখার দীর্ঘস্থায়িত্ব হুমকির সম্মুখীন হয় এবং সর্বোপরি উপকূল ভাগ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় সম্পূর্ণ অরক্ষিত থাকে। একসময় আমাদের দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে অনেক প্যারাবন ছিল। কক্সবাজার অঞ্চলের অধিকাংশ প্যারাবন চিংড়ি চাষের আগে পরে অবলুপ্ত হয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধিজনিত কারণে প্রাথমিকভাবে উপকূলীয় প্যারাবন পরিষ্কার করে চাষাবাদ শুরু হয় এবং পরে এর অংশ বিশেষ চিংড়ি খামারে পরিণত হয়। ধারণা করা হয়, ম্যানগ্রোভ অঞ্চল ধ্বংসের কারণে কক্সবাজার অঞ্চলের এ অংশে উপকূলীয় প্রাকৃতিক দুর্যোগের ব্যাপকতা বেড়েছে।
উপকূলীয় চিংড়ি চাষ, যা মূলত বৈদেশিক বাণিজ্যমুখী এবং এর বিকাশ ঘটেছে অত্যন্তু দ্রুত; কিন্তু তা হচ্ছে অপরিকল্পিত, অনিয়ন্ত্রিত এবং সমন্বয় ছাড়া। উপকূলীয় চিংড়ি চাষের প্রসারের সাথে পরিবেশগত, বাস্তুসংস্থানগত এবং জীববৈচিত্র্যের ওপর এর কী কী প্রভাব পড়ে এ সম্পর্কে সুনিবিড় সমীক্ষা হয়নি। বিচ্ছিন্নভাবে যেসব কাজ হয়েছে তার ফল এবং সম্ভাব্য প্রভাবের সাথে প্রত্যক্ষ যোগসূত্র নির্ণয় করা সম্ভব নয়। প্রাকৃতিক উৎস থেকে বাগদা চিংড়ি পোনা আহরণ কালে ১০০-১০৫টি প্রজাতির মাছ ও অন্য প্রজাতির চিংড়ি পোনা মারা যায় এবং বহু অদেখা ক্ষুদ্র জলজ প্রাণীর রেণু ও পোনা নষ্ট হয়ে বঙ্গোপসাগর মৎস্য কমে যাচ্ছে। সংরক্ষিত সুন্দরবনের নদীখাল থেকে চিংড়ির পোনা ধরতে গিয়ে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা চরের বিপর্যয় হওয়া ছাড়াও বন্যপ্রাণীর জীবনচক্র বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, চিংড়ির পোনা সংগ্রহকালে নির্বিচারে নিধন হচ্ছে অসংখ্য ছোট ছোট গাছপালা। এভাবে চিংড়ি চাষের ফলে উপকূলীয় এলাকায় পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
দূষণের শিকার উপকূলীয় মৎস্য সম্পদ
উপকূলীয় অঞ্চল মাছের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু প্রতি বছরই নদনদীতে লবণাক্ততার পরিমাণ ও স্থায়িত্ব বাড়ছে। আগে সামান্য বৃষ্টি ও হিমালয়ের বরফ গলা পানির স্পর্শ পেলেই লবণ দূরীভূত হয়ে যেত। কিন্তু বর্তমানে প্রবল বর্ষণেও লবণ দূর হয় না। লবণ পানির প্রভাবে মাটি ও ভূগর্ভে লবণাক্ততার পরিমাণ কেবল বাড়ছেই।
বঙ্গোপসাগরে ব্যাপক দূষণের ফলে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে মাছের মজুদ দ্রুত কমে যাচ্ছে। দূষণ যদি এ মাত্রায় চলতে থাকে তবে এ মজুদ আরও কমে যাবে। এর ফলে ডানাওয়ালা ও খোলসমুক্ত মাছের প্রজাতিগুলো একেবারেই হারিয়ে যেতে পারে। যেসব কারণে উপকূলীয় অঞ্চলের জলীয় পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে সেগুলো হলো শিল্পের বিষাক্ত আবর্জনা, নৌযান থেকে চুইয়ে পড়া তেল, অপ্রয়োজনীয় মাছ সমুদ্রে ফেলে দেয়া, বেআইনি ও বেশি পরিমাণে মাছ শিকার, পলি জমা হওয়া এবং দীর্ঘসময় বন্যার পানি জমে থাকা, উজান থেকে বেশি পরিমাণে আবর্জনা বয়ে আসা, কৃত্রিম হ্যাচারি, বঙ্গোপসাগরে মাছের মজুদ সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং মৎস্য খাতের নানা অব্যবস্থাপনা। মাছ থেকে শুঁটকি তৈরির সময় যে কীটনাশক ও রাসায়নিক উপাদান মেশানো হয় সেগুলো চুইয়ে পানিতে মিশে। এ বিষ উপকূলীয় অঞ্চলের উদ্ভিদ ও প্রাণীর সহাবস্থানে থাকা প্রতিবেশ ধ্বংস করে দিতে পারে। ফলে মাছের খাদ্য জুপ্লাংকটন এবং ফাইটো প্লাংকটনের মতো গুরুত্ব¡পূর্ণ উপাদানের ক্ষতি হতে পারে ও হুমকির সম্মুখীন হতে পারে উপকূলীয় জীব বৈচিত্র্যতা। শিল্পের বর্জ্যরে সাথে সাথে চিংড়ি ঘের, ভবিষ্যতে মাছের বংশবিস্তারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। কৃষিতে যেসব রাসয়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহৃত হয় সেগুলোও উপকূলীয় মাটি ও পানি দূষণের জন্য দায়ী। এসব কারণে বঙ্গোপসাগরের দূষণ চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে এ অঞ্চল, মাছের বসবাসের অনুপোযোগী হয়ে পড়বে, বিনষ্ট হবে অর্থনৈতিক অবস্থা, জীবনযাত্রা এবং জীববৈচিত্র্য।
এ কারণে উপকূলীয় এলাকার মাটি, খাল,পুকুরে লবণাক্ততা বেড়ে যাবে; চারণভূমির পরিমাণ কমে যাওয়ায় গোখাদ্যের অভাব, গৃহপালিত পশুপাখির সংখ্যা কমে যাবে; ফসলের নিবিড়তা ও ফসল চক্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে; চিংড়ি ঘেরে লবণ পানি আটকে রাখার ফলে মাটিতে ও ভূগর্ভস্থ স্তরে ক্রমাগত লবণ পুঞ্জীভূত হবে; সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় অসংখ্য ঘের গড়ে তোলায় লবণ পানির প্রবাহ ক্রমশ উত্তরমুখী হয়ে দ্রুত ধাবিত হবে; লবণাক্ততার বৃদ্ধির কারণে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের বিলুপ্তি প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করছে।
সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা ও উন্নয়ন
উপকূলীয় জলাশয়গুলোতে বাগদা পোনা আহরণকালে পোনার সাথে বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ি, জুপ্ল্যাংকটন ও সাদা মাছের লার্ভা প্রচুর পরিমাণে ধরা পড়ে, যেগুলো একে অন্যের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। খাদ্য পিরামিডের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় পিরামিডে বড় প্রাণীদের তুলনায় ছোট প্রাণীরা সবচেয়ে বড় স্থান দখল করে আছে। বড় প্রাণীগুলো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ছোট প্রাণীদের ওপর নির্ভরশীল। প্রতিদিন বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য লার্ভা বিনষ্ট হওয়ায় প্রাণিকূল থেকে এক বিরাট অংশ হারিয়ে যাচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে তাদের প্রজনন ও ডিম দেয়ার ক্ষমতা। উন্নয়নমূলক কাজের জন্য অন্যদিকে বিনষ্ট হচ্ছে জলজ প্রাণীদের বিচরণ ভূমি।
উপকূলীয় অঞ্চলে প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য...
উপকূলীয় ভূমি ব্যবহার নীতিমালা প্রণয়ন ও ভূমির শ্রেণিবিন্যাস করে স্থানীয় সুযোগ-সুবিধা ও পরিবেশ সহনীয় লাগসই প্রযুক্তিভিত্তিক চিংড়ি চাষ জোন নির্ধারণ ও চিংড়ি চাষের আলাদা নীতিমালা প্রণয়ন;
পরিবেশ অনুকূল সম্ভাব্য স্থানে ক্রমান্বয়ে আধা নিবিড় ও নিবিড় চাষ সম্প্রসারণ;
চিংড়ির পর মাছ বা চিংড়ির পর কৃষি ফসলের উৎপাদন আবর্তন বজায় রেখে রোগ প্রতিরোধ এবং পরিবেশ অনুকূল চিংড়ি চাষ প্রবর্তন;
চিংড়ি খামারের পানি সরববাহ ও নিষ্কাশন, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ বা সহজ শর্তে ঋণ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা ;
চিংড়ির প্রাকৃৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র ও নার্সারি এলাকা সংরক্ষণ এবং এর প্রজনন মৌসুমে ট্রলিং এর মাধ্যমে চিংড়ি আহরণ নিষিদ্ধ করণ।
ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল ধ্বংস বন্ধ এবং খামার-ঘের ও নদী তীরের মাঝে যে ভূমি রয়েছে তাতে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সৃষ্টি।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব¡ সম্পন্ন মাছ চাষ সম্প্রসারণ;
চিংড়ি-মাছ চাষ সহায়ক সব সরঞ্জামাদি ও উপকরণাদি সহজলভ্য করা ও প্রয়োজনে আমদানি করা।
কৃষিবিদ হুমায়ুন কবীর চৌধুরী*
*বারইয়ার হাট, মিরেরসরাই, চট্টগ্রাম
কৃষির সম্ভাবনায় দক্ষিণ বাংলা
কৃষিবিদ ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম*
ধান নদী খাল এ তিনে বরিশাল
জলসীমায় উড়ায় তারা ডিঙি নৌকার রঙিন পাল
জলাবায়ুর পরিবর্তনে কৃষির ক্ষতি হয়
এসব ক্ষতি কাটিয়ে উঠা সহজ কথা নয়
চেষ্টা চালাচ্ছেন গবেষক বিজ্ঞানী কৃষি পরিবার
বাধা পেরিয়ে সফল হতে আন্তরিক কারবার
সর্জান হলো বিশেষ প্রযুক্তি এ অঞ্চলের জন্য
অনাবাদি জমি আবাদ করে কৃষি হলো ধন্য
নিচু জমি নালা গর্ত করে পাশে মাটি ভরে
বছরব্যাপী শত ফসল উঁচু ঢিবি গড়ে
ভাসমান কার্যক্রম এ এলাকার রীতি
প্রচার প্রচারণায় রচিছে তারা বিশ্বমানের কীর্তি
শত বছরের ইতিহাস প্রমাণ আছে সব
আধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে জাগাচ্ছে কলরব
কলসি পদ্ধতিতে কুমড়া চাষ নতুন উদ্ভাবিত প্রযুক্তি
লবণাক্ত জমিতে সহজ চাষ দেবে কৃষির নতুন শক্তি
দক্ষিণাঞ্চলের নার্সারি কার্যক্রম পুরো দেশের সেরা
বনায়নে উজ্জিবিত অতনু সবুজ শ্যামলে ঘেরা
নদী মাতৃক দেশ আমাদের উপকূল তার প্রমাণ
ইজ্জত সম্মানে মাথা উঁচু করে সমৃদ্ধ কৃষির সম্মান
দেশের জমির কুড়িভাগ উপকূলীয় জমি
সে তুলনায় ফসলের নিবিড়তা নেইতো সেটা জানি
মুগডাল তরমুজ এলাকার আশাজাগানিয়া শস্য
সূর্যমুখী আপেলকুল লবণাক্তসহনশীল কর্ষ
চিনাবাদাম মিষ্টিআলু আরও আছে কত
স্বাদে গন্ধে অতুলনীয় ফলছে শত শত
সবজি মশলা ফলফলাদি সব কিছুই ফলে
ভালো জাত সার ব্যবস্থাপনা পানি আছে বলে
মিনি পুকুর মালচিং প্রযুক্তি বিনা চাষে ফসল
সাথী ফসল আন্তঃফসলএকটুও হয় না কিছুই বিফল
লবণসহনশীল ফসলের জাত বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার
উচ্চ মূল্যের ফসল দিছে তাদের করি নমষ্কার
নারিকেল হলো প্রধান ফল ফসল সাথে বিলাতিগাব
বাতাবিলেবু কদবেল, চালতা, আমলকী আরও আছে গাব
কুল, তেঁতুল, তাল খেজুর পেয়ারা, কদবেল জাম
আমলকী, আমড়া, ডালিম, ডেউয়া, সাথে আছে আম
এসব ফল ভালো হয় দুর্যোগ লবণাক্ততার পর
নিত্য নতুন গবেষণা চলছে ভরতে গোলাঘর
স্বরূপকাঠির স্বরূপের পেয়ারা এলাকার কীর্তি
ভাসমান কৃষি বাজার চলছে শুভ সুন্দর দিবারাত্রি
দুধ মাছ শাকসবজি আরও আছে ফল
ফলিয়ে খেয়ে সুস্থ থাকে দেহে আনে বল
রাস্তার ধারে সবুজ বনায়ন আর অড়হরের চাষ
নিত্য দিনের ফলন আসবে সুখে বারো মাস
লবণাক্ততায় ভয় নেই আসছে নতুন জাত
এসব ফলিয়ে করবে কৃষি জগৎ বাজিমাত
গোলাভরা ফসল থাকবে পুকুর ভরা মাছ
গোয়াল ভরা গবাদিপশু পরিবেশবান্ধব গাছ
বাজারে বেচে নিজেরা খেলে শরীরে আসছে বল
সমৃদ্ধ হবে অর্থনীতি এসবই প্ররিশ্রমের ফল
শস্য গোলা উত্তরবঙ্গ এ বিশ্বাস প্রচলিত আছে
জলবায়ুর পরিবর্তনে অভিঘাতে বিপর্যস্ত হয়ে গেছে
পানি সংকটে হাহাকার ফসল ফলে কম
এসব অসহনীয় পরিবেশ অনেক কঠিন ফসল আবাদের জম
দক্ষিণাঞ্চলে কৃষি উৎপাদনে মহাপরিকল্পনা আছে
উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনা কৌশলে ফলন পার্থক্য কমছে
সেচের পানির নেইতো অভাব আছে অবাধ অঢেল
পরিকল্পিত চাষাবাদে ফলবে ফসল গড়ব রোল মডেল
আমন ধান প্রধান ফসল ফলন আসে কম
দুর্যোগ দুর্বিপাক ফলাবে লবণাক্ত সহনশীল গম
ফলন পার্থক্য কমানোর কাজে আছে কত প্রযুক্তি
সব কৌশল কাজে লাগিয়ে পাবে কৃষির মুক্তি
ধান চাষে বেশি পানি এটাই ধান চাষের নিয়ম
তিন মৌসুমে ধান চাষে গুরুত্ব পাবে তখন
দক্ষিণাঞ্চলে মিষ্টি ক্ষির আরও আছে দই
বর্ষাকালে নাইর যাবে সাজিয়ে ডিঙি ছই
নদী খাল যানবাহনের মূল চলার পথ
শাকসবজি ফল বেচে কিনবে বধূর নথ
আইপিএম আইসিএম সবই কাজে আসে
এলসিসি এডব্লিউডি নিয়ে কৃষি বিভাগ পাশে
সবার সাথে হাতে মিলিয়ে ফলাব সোনার খনি
ফলবে ফলন বাড়বে আয় এ সত্য আমরা মানি
গবেষণা সম্প্রসারণ উন্নয়ন সমান তালে বয়
ভালো ফসল ফলাতে তাদের নেইতো কোনো ভয়
মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে একদিন দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি
সফলতা সমৃদ্ধি নিশ্চিত আসবে সুখে দিবানিশি।
*উপপরিচালক (গণযোগযোগ), কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫ Subornoml @gmail.com
শ্যামলী মণ্ডল, গ্রাম : ঝুটিহারা, থানা : দাকোপ, জেলা : খুলনা
প্রশ্ন : বেগুন গাছে পোকা ফল ছিদ্র করে নষ্ট করছে। প্রতিকার কী?
উত্তর : বেগুন গাছের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা সাধারণত চারা রোপণের ৪/৫ সপ্তাহের মধ্যেই আক্রমণ শুরু করে। পোকার কীড়া কচি ডগায়, ফুলে এবং ফলে আক্রমণ করে এবং এর ভেতরে খেতে থাকে। আক্রমণ হলে সপ্তাহে অন্তত একবার পোকা আক্রান্ত ডগা ও ফল বাছাই করে বিনষ্ট করতে হবে। চারা রোপণের ২/৩ সপ্তাহের মধ্যেই প্রতি শতাংশ জমিতে ১টি ফেরোমন ফাঁদ পাততে হবে। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে কারটাপ গ্রুপের কীটনাশক যেমন- সানটাপ ২.৪ গ্রাম/ লিটার হারে বা সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক যেমন- রিপকর্ড বা ফেনকর্ড ০.৫ মিলি./লি হারে বা এ পোকার জন্য অন্যান্য অনুমোদিত রাসায়নিক কীটনাশক ১০-১২ দিন পর পর ৪-৫ বার স্প্রের করতে হবে। স্প্রে করার ১৫ দিনের মধ্যে সেই সবজি খাওয়া বা বিক্রি করা ঠিক নয়। আগাম বীজ বপন, সুষম সার ব্যবহার ও সঠিক দূরত্বে চারা রোপণ করে পোকার আক্রমণ কমানো যায়।
অমিত দত্ত, গ্রাম : মুন্সেফপুর, থানা : যশোর সদর, জেলা : যশোর
প্রশ্ন : পান পাতা পচে যাচ্ছে। কী করব?
উত্তর : পানের পাতা পচা রোগ ফসলের বৃদ্ধির যে কোনো পর্যায়ে হতে পারে। প্রথমে মাটির কাছাকাছি পাতাগুলোতে পাতার প্রান্তের দিকে পানি ভেজা দাগ দেখা দেয়। পরে তা বেড়ে গিয়ে পাতার অধিকাংশ জায়গা বা পুরো পাতাতেই ছড়িয়ে যায় এবং পাতা পচে যায়। এ রোগ দেখা দেয়ার সাথে সাথে আক্রান্ত লতা তুলে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। আক্রমণ বেশি হলে ম্যানকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক ২ গ্রাম/লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে ¯েপ্র করতে হবে। রোগ প্রতিরোধের জন্য রোগমুক্ত লতা বীজ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। বরজ ও এর আশপাশের জায়গা পরিষ্কার রাখতে হবে। বর্ষাকালে বৃষ্টির অতিরিক্ত পানি জমিতে যেন জমে না থাকে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
শামসুল আলম, গ্রাম : বলরামপুর, উপাজেলা : হরিনাকুণ্ডু, জেলা : ঝিনাইদহ
প্রশ্ন : আমার ৬ মাস বয়সী ছাগলের জ্বর হয়েছে কী চিকিৎসা করব?
উত্তর : ছাগলকে একটি ফাস্ট ভেট অথবা পাইরোভেট বোলাস চারভাগ করে দিনে তিনবার তিন ভাগ খাওয়াতে হবে। এভাবে দুইদিনে দুটি বোলাস ব্যবহার করতে হবে। সাথে একটি ডিলারজেন বোলাস চার ভাগ করে একভাগ দিনে একবার করে তিন দিনে একটি বোলাস খাওয়াতে হবে অথবা এস্টাভেট ইনজেকশন ১ মিলিলিটার করে প্রতিদিন একবার মাংসে ইনজেকশন দিতে হবে। এভাবে ওই ইনজেকশন তিন দিন ব্যবহার করতে হবে।
জোবায়ের উদ্দিন, গ্রাম : পূর্ব ফিরুজ শাহ কলোনি, উপাজেলা : আকবর শাহ, জেলা : চট্টগ্রাম
প্রশ্ন : আমার বেশ কিছু দেশি মুরগি আছে, এগুলো কম ডিম দিচ্ছে, মুরগিগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। আমি কী করব?
উত্তর : মুরগিকে বাড়ির খাবারের পাশাপাশি লেয়ার ফিড, সাথে ঝিনুক ভাঙা, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিনের মিশ্রণ খাওয়াতে হবে। প্রতি ২ লিটার পানির সাথে ১ মিলি ক্যালপ্লেক্স লিকুইড অথবা রেনাক্যাল পি লিকুইড মিশিয়ে ৭ দিন খাওয়াতে হবে। প্রতি ৪ লিটার পানির সাথে ১ মিলি এস্কাভিট এডিই সল্যুশন প্রতিদিন খাওয়াতে হবে।
মো. পারভেজ, গ্রাম : বারইখালি, উপজেলা : মাগুরা, জেলা : মাগুরা
প্রশ্ন : মাছ বড় হচ্ছে না কী করা যায়?
উত্তর : হ্যাচারি বা যে কোনো উৎস থেকে অপরিপক্ব বা পুষ্টিহীন বা খারাপ মানের পোনা আনলে বা পুকুরে মাছের পোনা বেশি ঘনত্বে ছাড়লে এ সমস্যা হতে পারে। তাই পোনা সংগ্রহের আগে পোনার গুণগত মান সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে বিশ্বস্ত কোন হ্যাচারি থেকে সংগ্রহ করতে হয়। তবে দৈনিক সম্পূরক খাদ্য অর্থাৎ মানস¤পন্ন খাবার দিলে, সার প্রয়োগ করলে এবং পানি ব্যবস্থাপনা ঠিকমতো করতে পারলে এ সমস্যার নিরসন হয়। মাছের ঘনত্ব বেশি থাকলে কমিয়ে দিতে হবে। শতকপ্রতি ৪০-৫০টি মাছ (মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে সিলভারকার্প, কাতল/বিগহেড শতকপ্রতি ২০টি; রুই ১২টি; মৃগেল/মিররকার্প/কার্পিও ১০টি; গ্রাসকার্প ২টি, সরপুঁটি ৬টি) থাকা ভালো। পুকুরে মাছের মোট ওজনের ৩-৫ শতাংশ হারে সম্পূরক সুষম খাদ্য প্রতিদিন প্রয়োগ করতে হবে। পুকুরের পানি ঘোলা হলে শতকপ্রতি চুন ০.৫ কেজি এবং ইউরিয়া সার শতকপ্রতি ১০০ গ্রাম হারে দিতে হবে।
মো. ফারাবি, গ্রাম : উত্তর চরটিটিইয়া, উপজেলা : বোরহানুদ্দিন, জেলা : ভোলা
প্রশ্ন : পুকুরে পাঙ্গাস মাছ হঠাৎ মারা যাচ্ছে, কী করব?
উত্তর : সাধারণত গ্যাস ও ব্যাক্টেরিয়াজনিত কারণে মাছ মারা যায়। পুকুরে মাছের ঘনত্ব কমিয়ে দিতে হবে কারণ অনেক সময় ঘনত্ব বেশি হলে অক্সিজেনের স¦ল্পতার কারণেও মাছ মারা যায়। হররা টেনে দিতে হবে। সম্ভব হলে পানি প্রবেশ করাতে হবে। জিওলাইট ২৫০ গ্রাম-শতক হারে দিতে হবে। অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ১০ মিলিগ্রাম এক কেজি খাবারের সাথে মিশিয়ে ৭ দিন পর পর ৩ বার দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। পুকুরের পাড়ে যদি বড় গাছ থাকে তাহলে গাছের ডাল ছেঁটে দিতে হবে যাতে পাতা পুকুরে না পড়ে। তাছাড়া পুকুরের চারপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। পুকুরে যাতে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পৌঁছাতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
শাহাদাত হোসেন, গ্রাম : পলাশবাড়ি, উপজেলা : কুড়িগ্রাম সদর, জেলা : কুড়িগ্রাম
প্রশ্ন : ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ করতে চাই। কেমন করে করব?
উত্তর : দেশের জলাবদ্ধ ও নি¤œাঞ্চলে কচুরিপানা ব্যবহার করে ভাসমান সবজি উৎপাদন একটি অত্যন্ত কার্যকর পদ্ধতি। ভাসমান বেড কোথাও কোথাও ধাপ নামেও পরিচিত। ধাপ পদ্ধতিতে সাধারণত বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি ও মসলা জাতীয় ফসলের চাষ করা যায়। এর মাধ্যমে প্রতিকূল পরিবেশে অব্যবহৃত জমিতে ফসল উৎপাদন করা যায়। সাধারণত আষাঢ়-শ্রাবণ (জুন-জুলাই) মাসে ভাসমান বেড তৈরি করা হয়। এলাকা ভেদে জ্যৈষ্ঠ-কার্তিক (জুন-নভেম্বর) মাস পর্যন্ত বেড তৈরি করা হয়। সাধারণত আয়তাকার ধাপ ১০-২০ মিটার দৈর্ঘ্য, ২ মিটার প্রস্থ এবং ১ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট এবং বর্গাকার ধাপ ৫-১০ মিটার দৈর্ঘ্য-প্রস্থ এবং ১ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট হয়ে থাকে। ধাপ তৈরির জন্য নির্ধারিত জায়গার ওপর ২-৩ টি বাঁশের খ- বা লম্বা ডাল ফেলতে হবে। প্রখমে নিচের দিকে বড় আকারের কচুরিপানা এবং ওপরের দিকে ছোট আকারের কচুরিপানা জড়ো করে স্তূপ তৈরি করতে হবে। প্রাথমিকভাবে ১ বর্গমিটারের একটি ছোট ধাপ তৈরি করতে হবে। পরে চারপাশ থেকে আরও কচুরিপানা টেনে টেনে এ স্তূপের ওপর এবং পাশে ফেলতে হবে। ধাপ তৈরির শেষের দিকে কচুরিপানাগুলোর শিকড় ওপরের দিকে এবং কা-গুলো নিচের দিকে করে আস্তে আস্তে প্রস্থ থেকে দৈর্ঘ্য বরাবর সাজাতে হবে এবং লক্ষ্য রাখতে হবে এর ভেতরে যেন কোনো কলমি, মালঞ্চ ও দুর্বা না থাকে। ধাপের উপরিভাগ হাত বা কাঠি দিয়ে সমতল করে নিতে হবে। ভাসমান বেড বা ধাপ তৈরি করার পর আবাদ উপযোগী থেকে ১৫-২০ দিন সময় লাগে। এর মধ্যে পর্যাপ্ত জৈব সার থাকে। ভাসমান পদ্ধতিতে লালশাক, ধনেপাতা, ফুলকপি, পুঁইশাক, বরবটি, করলা, শসা, পানিকচু, বাধাকপি, গাজর, মুলা, ঢেঁড়শ, পালংশাক, মরিচ, হলুদ, পেঁয়াজ, রসুন এসব চাষ করা যায়।
সুপ্রিয় পাঠক বৃহত্তর কৃষির যে কোনো প্রশ্নের উত্তর বা সমাধান পেতে বাংলাদেশের যে কোনো জায়গা থেকে যে কোনো মোবাইল থেকে কল করতে পারেন আমাদের কল সেন্টার এর ১৬১২৩ এ নাম্বারে। শুক্রবার ও সরকারি ছুটির ব্যতিত যে কোনো দিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এ সময়ের মধ্যে। তাছাড়া কৃষিকথার গ্রাহক হতে বার্ষিক ডাক মাশুলসহ ৫০ টাকা মানি অর্ডারের মাধ্যমে পরিচালক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৬ এ ঠিকানায় পাঠিয়ে ১ বছরের জন্য গ্রাহক হতে পারেন। প্রতি বাংলা মাসের প্রথম দিকে কৃষিকথা পৌঁছে যাবে আপনার ঠিকানায়।
কৃষিবিদ ঊর্মি আহসান*
*উপজেলা কৃষি অফিসার (এলআর), সংযুক্ত কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫
৭৬তম বর্ষ : বৈশাখ-চৈত্র
বিষয় লেখক মাস পৃষ্ঠা
* দানাজাতীয় ফসল : ধান/চাল
০ সুগন্ধি চাল : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ কৃষিবিদ এম এনামুল হক বৈশাখ ৩
০ বোরো ধানে চিটা হওয়ার কারণ ও প্রতিকার কৃষিবিদ মোহাইমিনুর রশিদ মাঘ ১৩
০ বিনা ধান১৮ : বোরো ধানের নতুন জাত ড. এম. মনজুরুল আলম ম-ল মাঘ ১৫
* দানাজাতীয় ফসল : গম
০ লবণাক্ততা সহিষ্ণু গমের জাত বিনাগম-১ ড. মো. আবুল কালাম আজাদ পৌষ ৩
মো. কামরুজ্জামান পৌষ
০ গমের ব্লাস্ট রোগ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা ড. পরিতোষ কুমার মালাকার পৌষ ৫
ড. নরেশ চন্দ্র দেব বর্মা
* দানাজাতীয় ফসল : ভুট্টা
০ ভুট্টা উৎপাদন কৌশল কৃষিবিদ ঊর্মী আহসান পৌষ ১১
* সবজি ফসল
০ ব্রোকলি একটি পুুষ্টি সমৃদ্ধ শীতকালীন সবজি নাছমিন আরা অগ্রহায়ণ ৮
০ পুদিনার চাষ কৌশল ও ভেষজ গুণাগুণ কৃষিবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম পৌষ ২২
০ টমেটোর রোগ ও তার প্রতিকার কৃষিবিদ ড. কে এম খালেকুজ্জামান ফাল্গুন ১৬
* মসলা ফসল
০ আদার রোগ ও তার প্রতিকার ড. কে এম খালেকুজ্জামান বৈশাখ ১৯ ০ হলুদ : রোগ নিরাময়ে প্রয়োগ ও ব্যবহার কৃষিবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম জ্যৈষ্ঠ ১৯
* অর্থকরী ফসল
০ পাট ফসলে আগাম ফুল : কারণ ও প্রতিকার কৃষিবিদ ড. মো. মাহবুবুল ইসলাম বৈশাখ ৭
০ তোষা বা বগী বা গুটি পাটের আবাদ কৃষিবিদ ড. মো. মাহবুবুল ইসলাম ফাল্গুন ৩
০ সুগারক্রপের জন্য সম্ভাবনাময় এলাকা : দক্ষিণাঞ্চল ড. সমজিৎ কুমার পাল চৈত্র ১৪
০ দক্ষিণাঞ্চলের উপযোগী তুলাচাষ প্রযুক্তি ড. মো. ফরিদ উদ্দিন চৈত্র ১৯
০ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে সম্ভাবনাময় পাটচাষ প্রযুক্তি কৃষিবিদ ড. মো. মাহবুবুল ইসলাম চৈত্র ২১
* ফল
০ ফল প্রক্রিয়াজাতকরণ কৃষিবিদ ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম বৈশাখ ১২
০ গ্রীষ্মের ফল মৃত্যুঞ্জয় রায় বৈশাখ ১৫
০ আঁশফলের বাণিজ্যিক চাষ পদ্ধতি ড. মো. মসিউর রহমান জ্যৈষ্ঠ ৩
০ লেবু জাতীয় ফলের বাম্পার ফলন পেতে করণীয় কৃষিবিদ ড. এম এ মজিদ জ্যৈষ্ঠ ৭
০ ফল প্রক্রিয়াজাতকরণ কৃষিবিদ ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম জ্যৈষ্ঠ ৯
০ মধুবৃক্ষ খেজুর গাছ ড. এস এম আতিকুল্লাহ জ্যৈষ্ঠ ১২
০ অর্থ পুষ্টি স্বাস্থ্য চান-দেশি ফল বেশি খান কৃষিবিদ মো. হামিদুর রহমান আষাঢ় ৯
০ ফল উৎপাদন পরিস্থিতি এবং আবাদ বৃদ্ধিতে করণীয় এম. এনামুল হক আষাঢ় ১১
০ দেশি ফলের পুষ্টি ও জনস্বাস্থ্য মো. মোশারফ হোসেন আষাঢ় ১৪
০ ফল সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ড. মো. মিয়ারুদ্দীন আষাঢ় ১৬
০ বাংলাদেশে ফল উন্নয়ন গবেষণা ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া আষাঢ় ১৯
০ দেশি ফলের জাত উন্নয়ন ও সংরক্ষণ প্রফেসর ড. এম এ রহিম আষাঢ় ২২
ড. মো. শামছুল আলম মিঠু আষাঢ় ২২
০ অধিক ফল উৎপাদনে লাগসই তথ্যপ্রযুক্তি কৃষিবিদ ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম আষাঢ় ২৫
০ মানসম্পন্ন ফল রপ্তানি এবং আমাদের করণীয় ড. মো. শরফ উদ্দিন আষাঢ় ২৯
০ বারো মাস ফল উৎপাদন মৃত্যুঞ্জয় রায় আষাঢ় ৩৩
০ পেয়ারা গাছে অসময়ে ফল ধারণের কলাকৌশল কৃষিবিদ মোহাইমিনুর রশিদ ভাদ্র ৬
০ বাংলার ফলের সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা কৃষিবিদ ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম ভাদ্র ১৭
০ ফল ও ফলের জাত উন্নয়ন শাব্বির আহমদ ভাদ্র ২২
০ দেশি ফল চাষের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সাদিয়া সাইয়ারা ভাদ্র ৩১
০ নারিকেলের মাকড় সমস্যা ও ব্যবস্থাপনা কৃষিবিদ ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম অগ্রহায়ণ ৩
০ সর্জান পদ্ধতিতে খাটো জাতের নারিকেল ও ফল-সবজি চাষ এম এনামুল হক অগ্রহায়ণ ৬
০ স্ট্রবেরির আধুনিক উৎপাদন কলাকৌশল ড. মো. মসিউর রহমান অগ্রহায়ণ ১০
০ কন্ট্রাক্ট ফার্মিং পদ্ধতিতে আমের উৎপাদন বাজারজাতকরণ ড. মো. শরফ উদ্দিন অগ্রহায়ণ ১৮
এবং আম রপ্তানির ভবিষ্যৎ
০ পানিফল : দেশি ফলের নতুন সেনসেশন কৃষিবিদ ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম পৌষ ৮
* মৎস্য সম্পদ
০ জ্যৈষ্ঠ আষাঢ় মাসে মাছের পরিচর্যা আফতাব চৌধুরী বৈশাখ ২৪
০ গুড অ্যাকোয়াকালচার প্র্যাকটিস : নিরাপদ মৎস্য দলিল উদ্দিন আহমদ জ্যৈষ্ঠ ২৩
ও চিংড়ি উৎপাদন
০ কুঁচিয়া মাছের নিয়ন্ত্রিত প্রজনন ও পোনা উৎপাদন কৌশল ড. ডুরিন আখতার জাহান ভাদ্র ৮
০ আয় বাড়াতে কাঁকড়া চাষ বিমল চন্দ্র সরকার আশ্বিন ২৩
০ পরিবর্তিত জলবায়ুতে আমাদের মৎস্য সম্পদ ড. আলী মহম্মদ ওমর ফারুক কার্তিক ২১
০ মাছ চাষ সমস্যা ও সমাধান আফতাব চৌধুরী অগ্রহায়ণ ২০
০ মাছ চাষ ব্যবস্থাপত্র ভূঁইয়া জাবেদ মো. কবীর পৌষ ১৩
০ কার্প জাতীয় মাছের মিশ্রচাষ মো. রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া মাঘ ২২
০ মাছ চাষে করণীয় ভূঁইয়া মো. মাহবুব আলম ফাল্গুন ২১
০ উপকূলে মাছ চাষ ও করণীয় কৃষিবিদ হুমায়ুন কবির চৌধুরী চৈত্র ২৯
* প্রাণিসম্পদ
০ গাভীর মিল্ক ফিভার : কারণ ও প্রতিকার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বৈশাখ ২১
০ দুর্যোগকালে পশুপাখির জন্য করণীয় কৃষিবিদ ডা. মনোজিৎ কুমার সরকার জ্যৈষ্ঠ ২৫
০ গবাদিপশুর বাদলা রোগ মো. মোস্তাফিজুর রহমান ভাদ্র ১২
০ ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালন কৃষিবিদ ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম আশ্বিন ২০
০ পরিবর্তিত জলবায়ুতে প্রাণিসম্পদ অভিযোজনের প্রযুক্তি ডা. মো. রফিকুল ইসলাম কার্তিক ২৫
০ পোলট্রি শিল্পে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত : টার্কি গাজী মাজহারুল ইসলাম অপু অগ্রহায়ণ ২২
০ ডিম দেয়া মুরগি চেনা ও লিটার পদ্ধতিতে লালন নাহিদ বিন রফিক পৌষ ১৬
০ গবাদিপশুর রক্তপ্রস্রাব : কারণ ও প্রতিকার কৃষিবিদ মো. আকতার হোসেন মাঘ ২৬
০ পোলট্রি পালনে জীব নিরাপত্তা ও রোগ দমন ডা. এম এ সবুর ফাল্গুন ২৪
০ পরিবর্তিত জলবায়ু মোকাবিলায় দক্ষিণাঞ্চলের উপযোগী প্রাণিসম্পদ প্রযুক্তি ডা. মো. রফিকুল ইসলাম চৈত্র ২৬
* খাদ্য পুষ্টি
০ টমেটো জুস তৈরি, পুষ্টিমান ও ব্যবহার মো. সাইফুল ইসলাম বৈশাখ ১৮
০ খাদ্যে পুষ্টি আমাদের কাক্সিক্ষত তুষ্টি কৃষিবিদ ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম ফাল্গুন ২৪
* সার ও মাটি
০ গুটি ইউরিয়া ব্যবহার ও উপকারিতা কৃষিবিদ মাহমুদ হোসেন বৈশাখ ১০
০ ডলোচুনের ব্যবহারÑঅধিক ফলনের সমাহার কৃষিবিদ মোহাইমিনুর রশিদ জ্যৈষ্ঠ ২১
০ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের প্রযুক্তি মো. দেলোয়ার হোসেন মোল্লা চৈত্র ২৪
* সেচনিকাশ
০ পাতাকুয়া : বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচ ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্ত কৃষিবিদ মো. আব্দুল্লা -হিল-কাফি মাঘ ৩
০ সেচ সাশ্রয়ী পরিবেশবান্ধব লাভজনক ফসলবিন্যাস কৃবিবিদ ড. মো. মশিউর রহমান মাঘ ১০ কৃষিবিদ মোজাহার হোসেন আহম্মদ
* বিবিধ
০ উদ্ভিজ্জ অ্যান্থোসায়ানিন : উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ড. মো. আব্দুর রহিম জ্যৈষ্ঠ ৫
০ বর্তমান সরকারের কৃষিতে সাত বছরের সাফল্য (ডিএই) সংকলিত জ্যৈষ্ঠ ১৬
০ When Farmers are Partner : Experience of kenya Exposure Visit Benoist Veillerette শ্রাবণ ৩
০ যখন কৃষকরা অংশীদার : কেনিয়া সফরের অভিজ্ঞতা বেনোয়া ভিলেরিত্তে শ্রাবণ ৬
০ কৃষক সংগঠন কি? কেন সংগঠিত হওয়া প্রয়োজন মাহমুদ হোসেন শ্রাবণ ৮
ড. ইমানুন নবী খান শ্রাবণ
০ কৃষক সংগঠন : সাফল্যের মূল বিষয়সমূহ মাহমুদ হোসেন শ্রাবণ ১৪
ড. ইমানুন নবী খান শ্রাবণ
০ তিন ধরনের সাংগঠনিক সম্পর্ক : টেকসই কৃষক
সংগঠন গড়ে তোলার মূল পরিচালিকা শক্তি মাহমুদ হোসেন শ্রাবণ ১৬
ড. ইমানুন নবী খান শ্রাবণ
০ কৃষক সংগঠন গড়তে প্রেরণা জোগানো : বহি ঃ প্রেরণা বনাম অন্তঃ প্রেরণা মাহমুদ হোসেন শ্রাবণ ২২
ড. ইমানুন নবী খান শ্রাবণ
০ সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য স্থির করা : দূরদর্শীতার অনুশীলন ড. ইমানুন নবী খান শ্রাবণ ২৪
মাহমুদ হোসেন শ্রাবণ
০ টেকসই ও গতিশীল কৃষক সংগঠন গড়তে মাঠ সম্প্রসারণকর্মীদের ভূমিকা ড. ইমানুন নবী খান শ্রাবণ ২৯
মাহমুদ হোসেন শ্রাবণ
০ বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষি কৃষিবিদ মো. আব্দুল্লাহ-হিল কাফি ভাদ্র ৩
০ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চরের কৃষি আশু করণীয় প্রফেসর ড. এম আব্দুল করিম ভাদ্র ১৪
০ বর্তমান সরকারের কৃষিতে সাত বছরের সাফল্য সংকলিত ভাদ্র ২৪
০ ইঁদুর দমন ব্যবস্থাপনা ড. সন্তোষ কুমার সরকার আশ্বিন ৩
০ ইঁদুর নিধন অভিযান ২০১৬ এ জেড এম ছাব্বির ইব্নে জাহান আশ্বিন ৭
০ ইঁদুর দমনের কলাকৌশল মো. রেজাউল ইসলাম আশ্বিন ৯ ০ ইঁদুরের ব্যবস্থাপনায় পেঁচা : পরিবেশসম্মত প্রাকৃতিক উপায় ড. মো. মোফাজ্জল হোসেন আশ্বিন ১২
ড. শেখ শামিউল হক আশ্বিন
মীর মনিরুজ্জামান কবির আশ্বিন
০ মুরগির খামারে ইঁদুরের সমস্যা ও ব্যবস্থাপনা ড. মো. শাহ আলম আশ্বিন ১৫
০ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (সাত বছরের সাফল্য) ড. গোবিন্দ চন্দ্র বিশ্বাস সংকলিত ২৫
০ জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাদ্য ও কৃষিও বদলাবে কৃষিবিদ মো. হামিদুর রহমান কার্তিক ৩
০ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ধান গবেষণা ও করণীয় ড. মো. আনছার আলী কার্তিক ৭
ড. মো. শাহজাহান কবির কার্তিক
ড. ভাগ্য রানী বণিক কার্তিক
এম আব্দুল মোমিন কার্তিক
মো. আবুল কাসেম কার্তিক
০ জলবায়ু পরিবর্তনে পাট উৎপাদনকে কাক্সিক্ষত মাত্রায় পৌঁছাতে করণীয় ড. মো. মাহবুবুল ইসলাম কার্তিক ১১
ড. রহিমা খাতুন কার্তিক মো. আসাদুজ্জামান কার্তিক
ড. মো. কামাল উদ্দিন
০ পরিবর্তিত জলবায়ুতে কৃষি ও খাদ্য কৃষিবিদ ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম কার্তিক ১৪
০ পরিবর্তিত জলবায়ুতে ইক্ষু চাষভিত্তিক কার্যক্রম ড. মু. খলিলুর রহমান কার্তিক ১৮
ড. মো. আমজাদ হোসেন কার্তিক
০ খাদ্যে ভেজাল ও এর ক্ষতিকারক প্রভাব ড. মো. দেলোয়ার হোসেন মজুমদার অগ্রহায়ণ ১৪
০ বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (সাত বছরের সাফল্য) সংকলিত অগ্রহায়ণ ২৪
০ আজম খানের স্বদেশ বিদেশ মো. জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া অগ্রহায়ণ ২৬
০ উত্তরবঙ্গের কৃষি কৃষিবিদ নিখিল চন্দ্র শীল পৌষ ১৮ ০ মাটির কান্না ড. মো. আমীরুল ইসলাম পৌষ ২০ ০ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (সাত বছরের সাফল্য) সংকলিত পৌষ ২৪
০ আমাদের সমৃদ্ধ সম্পদের প্রতিশ্রুত হাতছানি কৃষিবিদ ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম মাঘ ৬
০ কৃষি উন্নয়নে ই-কৃষি : কিছু সরকারি উদ্যোগ কৃষিবিদ মোহাম্মদ জাকির হাসনাৎ মাঘ ১৭
০ বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (সাত বছরের সাফল্য) সংকলিত মাঘ ২০
০ খাবার ও জীবনাচরণে স্বাস্থ্যঝুঁকি কৃষিবিদ এ এইচ ইকবাল আহমেদ ফাল্গুন ১২
০ সামুদ্রিক শৈবালের চাষ এবং রফতানি আশরাফুল আলম কুতুবী ফাল্গুন ১৯
০ বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট (সাত বছরের সাফল্য) সংকলিত ফাল্গুন ২৬
০ দক্ষিণাঞ্চলে অভিযোজিত টেকসই কৃষি প্রযুক্তি ড. আবু ওয়ালী রাগিব হাসান চৈত্র ৩
ড. মো. রফিকুল ইসলাম
০ উপকূলীয় অঞ্চলে কৃষির অপার সম্ভাবনা মৃত্যুঞ্জয় চৈত্র ৭
০ দক্ষিণাঞ্চলের উপযোগী ব্রি প্রযুক্তি ড. মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল চৈত্র ১০
ড. মো. আনসার আলী
ড. মো. শাহজাহান কবীর
ড. ভাগ্য রানী বণিক
০ দক্ষিণাঞ্চলের উপযোগী বিনা উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ড. এস রইসুল হায়দার চৈত্র ১২
০ দক্ষিণাঞ্চলের উপযোগী বিএআরআই প্রযুক্তি ড. মো. আলিমুর রহমান চৈত্র ১৬
ড. দিলোয়ার আহমদ চৌধুরী
* কবিতা
০ কৃষিকথার ৭৫ বছর পূর্তির পদাবলি কৃষিবিদ এ এইচ ইকবাল আহমেদ বৈশাখ ২৬
০ কৃষি বিপ্লব ড. মো. আলতাফ হোসেন জ্যৈষ্ঠ ২৭
০ পুষ্টি কৃষিবিদ ড. মো. শাহ কামাল খান জ্যৈষ্ঠ ২৭
০ বৃক্ষের অবদান কৃষিবিদ মো. ফরহাদ হোসেন ভাদ্র ২৬
০ বাঁচতে হলে মো. সাজ্জাদ হোসেন ভাদ্র ২৬
০ ঋতুর ফসল সুশান্ত কুমার ঘোষাল ভাদ্র ২৬
০ ইঁদুর মো. দুলা মিঞা আশ্বিন ২৮
০ দাওয়াতি মেহমান ইঁদুর মো. আনোয়ার উদ্দিন আশ্বিন ২৮
০ ইঁদুর দমন বিজয় কুমার দেব আশ্বিন ২৮
০ পরিবেশ বাঁচান অ্যাডভোকেট আলেয়া রাহাত কার্তিক ২৮
০ খাদ্য ও পুষ্টি কৃষিবিদ ড. মো. শাহ কামাল খান কার্তিক ২৮
০ সামনে আগাই কৃষিবিদ এ এইচ ইকবাল আহমেদ অগ্রহায়ণ ২৮
০ ধানক্ষেত খোন্দকার মো. মেসবাহুল ইসলাম অগ্রহায়ণ ২৮
০ নবান্ন মোহাম্মদ নূর আলম গন্ধী অগ্রহায়ণ ২৮
০ শীতের কৃষি গাজী মাজহারুল ইসলাম অপু পৌষ ২৮
০ কৃষিতে স্বাধীনতা মো. জুন্নুন আলী প্রামাণিক পৌষ ২৮
০ স্ট্রবেরি মো. আবদুস সবুর ম-ল মাঘ ২৮
০ আধুনিক কৃষি শোয়াইব আলম ফাল্গুন ২৮
০ বহুরূপী জলবায়ু মো. জুন্নুন আলী প্রামাণিক ফাল্গুন ২৮
০ কৃষির সম্ভাবনায় দক্ষিণ বাংলা কৃষিবিদ ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম চৈত্র ৩২
* গল্প
* প্রশ্নোত্তর
০ প্রশ্নোত্তর কৃষিবিদ মোহাম্মদ মারুফ বৈশাখ ২৭
০ প্রশ্নোত্তর কৃষিবিদ মোহাম্মদ মারুফ জ্যৈষ্ঠ ২৯
০ প্রশ্নোত্তর কৃষিবিদ মোহাম্মদ মারুফ আষাঢ় ৩৭
০ প্রশ্নোত্তর কৃষিবিদ মোহাম্মদ মারুফ ভাদ্র ২৭
০ প্রশ্নোত্তর কৃষিবিদ মোহাম্মদ মারুফ আশ্বিন ২৯
০ প্রশ্নোত্তর কৃষিবিদ মোহাম্মদ মারুফ কার্তিক ২৯
০ প্রশ্নোত্তর কৃষিবিদ মোহাম্মদ মারুফ অগ্রহায়ণ ২৯
০ প্রশ্নোত্তর কৃষিবিদ মোহাম্মদ মারুফ পৌষ ২৯
০ প্রশ্নোত্তর কৃষিবিদ মোহাম্মদ মারুফ মাঘ ২৯
০ প্রশ্নোত্তর কৃষিবিদ উর্মী আহসান ফাল্গুন ২৯
০ প্রশ্নোত্তর কৃষিবিদ উর্মী আহসান চৈত্র ৩৩
* বারো মাসের কৃষি
০ জ্যৈষ্ঠ মাসের কৃষি কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন বৈশাখ ২৯
০ আষাঢ় মাসের কৃষি কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন জ্যৈষ্ঠ ৩১
০ শ্রাবণ মাসের কৃষি কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন আষাঢ় ৩৯
০ ভাদ্র মাসের কৃষি কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন শ্রাবণ ২৬
০ আশ্বিন মাসের কৃষি কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন ভাদ্র ২৯
০ কার্তিক মাসের কৃষি কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন আশ্বিন ৩১
০ অগ্রহায়ণ মাসের কৃষি কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন কার্তিক ৩১
০ পৌষ মাসের কৃষি কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন অগ্রহায়ণ ৩১
০ মাঘ মাসের কৃষি কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন পৌষ ৩১
০ ফাল্গুন মাসের কৃষি কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন মাঘ ৩১
০ চৈত্র মাসের কৃষি কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন ফাল্গুন ৩১
০ বৈশাখ মাসের কৃষি কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন চৈত্র ৩৫
* মুখোমুখি
০ পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে আকবর আলীর সাফল্য তুষার কুমার সাহা বৈশাখ ৩১
০ ফল ও সবজি চাষে আবদুল লতিফের সাফল্য এটিএম ফজলুল করিম জ্যৈষ্ঠ ২৮
* বই পরিচিতি
০ কৃষিবিদ ফরহাদের চারটি বই মো. আমিনুল ইসলাম দুলাল অগ্রহায়ণ ২৭
* বর্ষসূচি
০ বর্ষসূচি ১৪২৩ মো. মতিয়ার রহমান চৈত্র ৩৭
মো. মতিয়ার রহমান*
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল ১৪টি উপকূলীয় জেলা নিয়ে গঠিত। বাংলাদেশের ৭.৯ মিলিয়ন হেক্টর নিট ফসলি জমির মধ্যে ১.৬৭ মিলিয়ন হেক্টরই দক্ষিণাঞ্চলে। এ এলাকার জীবন যাত্রা প্রধানত কৃষি ও মৎস্য নির্ভর। নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগ; বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, অতিবৃষ্টি, জলাবদ্ধতা, জলোচ্ছ্বাসের পাশাপাশি মাটি ও পানির লবণাক্ততা এ অঞ্চলের কৃষি ও কৃষিজীবী মানুষের জীবন যাত্রা প্রতিনিয়ত ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। এ অঞ্চলটি তিনটি কৃষি পরিবেশ অঞ্চল (AEZ) ১৩, ১৮ ও ২৩ এর অন্তর্ভুক্ত। বিস্তীর্ণ এলাকার প্রধান শস্য বিন্যাস পতিত-রোপা আমন-পতিত (৩৯ শতাংশ)। জোয়ার-ভাটার ভিত্তিতে সাধারণভাবে এলাকার ভূমিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়; জোয়ার-ভাটাকবলিত অলবণাক্ত ও পোল্ডার বেষ্টিত লবণাক্ত এলাকা। ভূমির বন্ধুরতার ভিত্তিতে দক্ষিণাঞ্চলের মোট আবাদি জমির ৭৬ শতাংশ মাঝারি উঁচু জমি যেখানে এলাকাভিত্তিক লাগসই কৃষি প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বাড়ানো সম্ভব। তদুপরি পোল্ডার বেষ্টিত এলাকায় বর্ষা মৌসুমে ধান-মাছের মিশ্রচাষ, জলাবদ্ধ এলাকায় হাঁস পালন-মাছ-বোরো ধান কৃষিকে একধাপ এগিয়ে নিয়েছে। ব্রি উদ্ভাবিত প্রযুক্তি সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো।
প্রযুক্তি ১ : দক্ষিণাঞ্চলের জন্য ব্রি ধানের জাত
অলবণাক্ত পরিবেশে জোয়ার-ভাটাসহনশীল জাত ব্রি ধান৭৬ এবং ব্রি ধান৭৭ এর চারা লম্বা স্থানীয় জাত সাদা মোটা ও দুধ কলমের মতো কিন্তু ফলন হেক্টরপ্রতি ১-১.৫ মে. টন বেশি। এছাড়াও ব্রি ধান৫২ এ এলাকার মাঝারি উঁচু জমিতে চাষোপযোগী জাত হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। আমন ধানের জাত বিআর২৩, ব্রি ধান৪০, ব্রি ধান৪১, ব্রি ধান৫৩, ব্রি ধান৫৪, ব্রি ধান৭৩ এবং ব্রিধান৭৮ লবণাক্ততাসহনশীল হিসেবে এ এলাকায় চাষাবাদ হচ্ছে। এদের মধ্যে ব্রি ধান৭৩ স্বল্পমেয়াদি হওয়ায় এটি চাষ করে সহজেই রবি শস্য আবাদ করা যায়। ব্রি ধান৪৭, ব্রি ধান৬১, ব্রি ধান৬৭ বোরো মৌসুমের লবণাক্ততা সহনশীল জাত। অলবণাক্ত পরিবেশে উঁচু জমিতে খরা সহনশীল জাত ব্রি ধান৫৬, ব্রি ধান৬৬ এবং ব্রি ধান৭১ চাষাবাদের সুযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে ব্রি ধান৭১ মোটা ও উচ্চফলনশীল হওয়ায় সে এলাকার জন্য বেশ উপযোগী। নি¤œাঞ্চল এবং অস্বাভাবিক জোয়ার-ভাটাকবলিত এলাকার জন্য নাবি জাত বিআর২২, বিআর২৩ এবং ব্রি ধান৪৬ চাষ করা যায়।
প্রযুক্তি ২ : ধান চাষে গুটি ইউরিয়া-এনপিকে ব্রিকেট প্রয়োগ
উচ্চফলনশীল ধানের চারা লাগানোর ৭-১০ দিনের মধ্যে যখন ভাটা হবে তখন প্রতি চার গোছার মাঝখানে ৭.৫-১০ সেন্টিমিটার কাদার গভীরে গুটি পুঁতে দিতে হবে। আউশ ও আমন ধানের জন্য ০.৯০ গ্রাম এর দুটি বা ১.৮ গ্রাম এর একটি গুটি প্রয়োগ করা। তবে বোরো ধানের জন্য ০.৯০ গ্রাম এর তিনটি বা ২.৭ গ্রাম এর একটি গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করা। এ প্রযুক্তি ব্যবহারে ২৫-৩০ শতাংশ নাইট্রোজেন সাশ্রয়ের পাশাপাশি ১৫-২০ শতাংশ ফলন বেশি পাওয়া যায়।
প্রযুক্তি ৩ : লবণাক্ত জমিতে পটাশিয়াম সার ব্যবস্থাপনা
মাটি পরীক্ষাভিত্তিক রাসায়নিক সারের মাত্রার সাথে অতিরিক্ত হিসেবে হেক্টরপ্রতি ৫ টন ছাই শেষ চাষের সময় ব্যবহার করলে পটাশিয়ামের প্রাপ্যতা বাড়ে, মাটির ফাটল বন্ধ হওয়ার কারণে ক্যাপিলারি ছিদ্র দিয়ে লবণ ভূপৃষ্ঠে আসতে পারে না ফলে ধানের ফলনও বাড়ে। ছাই প্রয়োগ সম্ভব না হলে হেক্টর প্রতি অতিরিক্ত ৪০ কেজি এমওপি সার ধানের সর্বোচ্চ কুশি পর্যায়ে উপরিপ্রয়োগ করতে হবে।
প্রযুক্তি ৪ : সমন্বিত সার ব্যবস্থাপনায় ধানের খড় ব্যবহার
ধান কাটার সময় জমিতে ২০ সেন্টিমিটার খড় রেখে চাষ দিয়ে জমিতে মিশিয়ে দেয়ার পর ধানের চারা লাগানো। ধান কাটার সময় খড় জমিতে না রাখলে জমি তৈরির সময় খড় দিয়ে তা ভালোভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়ার ৫-৭ দিন পর চারা লাগানো যায়। হেক্টরপ্রতি জমিতে ৪.৫ টন ধানের শুকনো খড় ব্যবহার করলে ৫০ কেজি ইউরিয়া, ১৮ কেজি টিএসপি, ১৪৪ কেজি এমওপি এবং ২৫ কেজি জিপসাম সার সাশ্রয়, ধানের ফলন বৃদ্ধি, মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং মাটির ঊর্বরতাও বাড়ে।
প্রযুক্তি ৫ : রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসেবে মুরগির বিষ্ঠা ব্যবহার
আমন ও বোরো মৌসুমে যথাক্রমে প্রতি হেক্টর জমিতে শুকনো ৩ এবং ৫ মেট্রিক টন মুরগির বিষ্ঠা জমি তৈরির শেষ চাষে প্রয়োগের পর মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া এবং ৩-৪ দিন পর চারা রোপণ করা। চারা রোপণের প্রায় ১৪ দিন পর্যন্ত জমিতে ৫-১০ সেন্টিমিটার পানি ধরে রাখা। বিষ্ঠা প্রয়োগে টিএসপি, এমওপি ও গন্ধক সারের সাশ্রয় হয় এবং ফলন বাড়ে।
প্রযুক্তি ৬ : বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, ধানের সম্পূরক সেচ ও শীতকালীন শাকসবজি চাষ
লবণাক্ত এলাকায় একটি জমির এক-পঞ্চমাংশে ২.২৫ মিটার গর্ত করে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা এবং আমন ধানে থোড় আসা অবস্থায় সম্পূরক সেচ দেয়া। এতে খরা ও লবণাক্ততার কারণে ধানের ফলনের ঘাটতির ১৫-২০ শতাংশ কমানো সম্ভব। আমন ধানে সম্পূরক সেচ প্রদানের পর অবশিষ্ট পানি দিয়ে রবিশস্য; টমেটো, মরিচ, লালশাক চাষ করা সম্ভব। এতে ফসলের নিবিড়তা ও শস্য বৈচিত্র্যতা বাড়বে।
প্রযুক্তি ৭ : ডিবলিং পদ্ধতিতে আউশ ধান চাষ
লবণাক্ত চর অঞ্চলে ডিবলিং পদ্ধতিতে আউশ ধান বপন এবং বীজ গজানোর ২৫-৩০ দিনের মধ্যে ১ম বা ২য় বৃষ্টির সময় ডিবলিং পদ্ধতির অর্ধেক চারা তুলে সমপরিমাণ অন্য জমিতে রোপণ করলে ফলনে কোন তারতম্য হয় না, বরং এতে কৃষকের খরচ সাশ্রয় হয়, আবাদি জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ফসলের এলাকা বাড়ে।
প্রযুক্তি ৮ : হলুদ মাজরা পোকা দমনে ফেরোমোন ট্র্যাপ
জোয়ারভাটা অঞ্চলে হলুদ মাজরা পোকার প্রাদুর্ভাব অত্যন্ত বেশি এবং মাজরা দমনে ফেরোমোন ট্র্যাপ খুবই কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়াও ব্রি কর্তৃক উদ্ভাবিত পার্চিং, আলোকফাঁদ, হাতজাল ও ডিমের গাদা সংগ্রহ করে পোকার আক্রমণ কমিয়ে আনা সম্ভব।
প্রযুক্তি ৯: পামরি পোকা দমনে পরজীবী বোলতার ব্যবহার
কৃত্রিম উপায়ে প্রতিপালিত পরজীবী বোলতা, পামরি পোকা আক্রান্ত ধান ক্ষেতে ছেড়ে দিলে ৮৭ শতাংশ পর্যন্ত পামরি পোকার ডিম নষ্ট করতে পারে এবং পামরি পোকার আক্রমণজনিত ক্ষতি রোধ করে। রশিতে কেরোসিন মাখিয়ে আক্রান্ত ধান ক্ষেতের ওপর দিয়ে টেনে দিলে পূর্ণ বয়স্ক পোকা এবং পাতার আগা কেটে পামরি পোকার গ্রাব দমন করা যায়। সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসেবে ম্যালাথিয়ন গ্রুপের কীটনাশক প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
প্রযুক্তি ১০ : ডাবল নজল প্রেয়ার ব্যবহারে বাদামি গাছফড়িং ব্যবস্থাপনা
সারি পদ্ধতিতে রোপণকৃত জমিতে দুই নজলযুক্ত স্প্রেয়ার ব্যবহারে বাদামি ও সাদাপিঠ গাছফড়িং দমন অত্যন্ত ফলপ্রসূ যাতে ধানের ফলন ২.৯৫-১৪.৭৬ শতাংশ বাড়ে। দুই নজলযুক্ত স্প্রেয়ারটি এক নজলের তুলনায় কৌশলগতভাবে উন্নত, সহজে ব্যবহারযোগ্য এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক।
প্রযুক্তি ১১ : লাভজনক শস্যবিন্যাস
জোয়ার-ভাটা কবলিত মিষ্টি পানির জন্য-রোপা আউশ (ব্রি ধান২৭/মালা)-নাবি রোপা আমন (বিআর২২/বিআর২৩)
অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে রোপা আউশ (ব্রি ধান২৭/মালা)-রোপা আমন (ব্রি ধান৪৪)-রিলে খেসারি
প্রযুক্তি ১২ : মোডিফাইড সর্জান একটি লাভজনক প্রযুক্তি
নালাতে দেশি শিং ও মাগুর, মাচায় শসা, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া এবং বেডে বছরব্যাপী সবজি চাষ করে বছরে ৫০ শতাংশ জমি থেকে ২ লাখ টাকার মতো নিট মুনাফা পাওয়া যায়।
প্রযুক্তি ১৩ : অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকায় রোপা আমন-মুগডাল প্রযুক্তি
রোপা আমনে ব্রি ধান৪৪ এবং রবি মৌসুমে বারি মুগ৬ বা বিনা মুগ৭ ব্যবহারে ফসলের এলাকা বৃদ্ধিসহ ফসলের নিবিড়তা বাড়বে।
প্রযুক্তি ১৪ : জোয়ার-ভাটা কবলিত লবণাক্ত পানির জন্য রোপা আমন ও সূর্যমুখী প্রযুক্তি
অপেক্ষাকৃত মাঝারি উঁচু এলাকায় রোপা আমন মৌসুমে বিআর১০/বিআর২৩/ব্রি ধান৪১/ব্রি ধান৫৩/ব্রি ধান৫৪/ব্রি ধান৭৩ এবং রবি মৌসুমে সূর্যমুখী (হাইসান৩৩)/তরমু /ফুটি/ঢেঁড়শ চাষ করে অধিক লাভবান হওয়া যায়।
ড. মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল*, ড. মো. আনছার আলী**
ড. মো. শাহজাহান কবীর*** ড. ভাগ্য রানী বনিক****
* সিএসও, ** পরিচালক, *** পরিচালক ****মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট maalibrri@yahoo.com, dr@brri.gov.bd