Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

কৃষি কথা

ফল উৎপাদনে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা

ফল উৎপাদনে সমৃদ্ধ বাংলাদেশর বাণিজ্যিক সম্ভাবনা
মোঃ আসাদুল্লাহ
সমৃদ্ধ ও স্বনির্ভর উন্নত বাংলাদেশ তথা সোনার বাংলা গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ছিলেন কৃষি ও কৃষকবান্ধব একজন মানুষ। তিনি বিশ্বাস করতেন, সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য কৃষির উন্নতির কোনো বিকল্প নাই। সেই লক্ষ্যে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছিল তাঁর অন্যতম কাজ। আজ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ (পঞ্চাশ) বছর পূর্তিতে সীমিত সাধ্য নিয়ে অন্তত ১৩টি ক্ষেত্রে বিশ্বের দরবারে গৌরবোজ্জ্বল ও ঈর্ষণীয় অবস্থান তৈরি করেছে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), বাংলাদেশ ব্যাংক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (আইসিটি) থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ১০টি কৃষি খাতে বিশ্বের শীর্ষ  দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান। তন্মধ্যে কাঁঠালে দ্বিতীয়, আমে অষ্টম ও পেয়ারায় অষ্টমসহ গোটা ফল উৎপাদনে বাংলাদেশ সাফল্যের পরিচয় বহন করেছে ইতোমধ্যে। একটি পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশ আয়তনে বিশ্বের অন্যতম ছোট দেশ হলেও ফল উৎপাদনে সফলতার উদাহরণ হয়ে উঠেছে এই দেশ। এ মুহূর্তে বিশ্বে ফলের উৎপাদন বৃদ্ধির সর্বোচ্চ হারের রেকর্ড বাংলাদেশের। আর মৌসুমি ফল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ। ২০ বছর আগে আম আর কাঁঠাল ছিল এই দেশের প্রধান ফল। এখন বাংলাদেশে ৭২ প্রজাতির ফলের চাষ হচ্ছে। আগে যেখানে হতো ৫৬ প্রজাতির ফল চাষ।
বাংলাদেশের আবহাওয়া ফল উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। বাংলাদেশে ফলের ব্যাপক বৈচিত্র্য রয়েছে এবং এখানে প্রায় ৭০ রকমের ফলের প্রজাতি জন্মে যার ক্ষুদ্র একটি অংশ বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ হয়। বাংলাদেশে জমির পরিমাণ ও উৎপাদন বিবেচনায় যেসব ফল বেশি জমিতে এবং পরিমাণে বেশি জন্মে সেগুলো হলো কাঁঠাল, আম, লিচু, লেবুজাতীয় ফল, আনারস, কলা, কুল, পেঁপে, পেয়ারা এবং নারিকেল যেগুলো প্রধান ফল হিসেবে বিবেচিত। এছাড়া বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে অপ্রধান ফল জন্মে। পছন্দ মতো ফল চাষ ও নির্বাচনের সুবিধার্থে এ দেশের আবহাওয়ায় উপযোগী ভূমির অবস্থান, স্থানীয় চাহিদা, আবাদে লাভজনক এসব দিকগুলো বিবেচনায় এনে দেশি-বিদেশি সব ধরনের ফল নির্বাচন করে উন্নত জাতের ফল বাগান সৃজনের ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
 কোনো কোনো ফল গাছ রোপণের এক বছরের মধ্যেই ফুল ফল ধরা আরম্ভ করে। আবার কিছু ফল গাছ রোপণের পর ফল দিতে ৫-১০ বছর সময় লেগে যায়। রোপণের পর ফল ধরতে দীর্ঘ সময় লাগে সেগুলোর ফাঁকে ফাঁকে স্বল্পমেয়াদি ফল চাষ (কম উচ্চতা বিশিষ্ট) অথবা মৌসুমি ফসল আবাদ করে ফল ধরার অন্তর্র্বর্তীকালীন সময়ে বাড়তি ফসল প্রাপ্তি নিশ্চিত করে খরচ পুষিয়ে নেয়া যায়। অধিকন্ত এ ধরনের রিলে ফসল আবাদে পরোক্ষভাবে বাগানের যত্ন নেয়া হয়, তাতে ফল গাছ দ্রুত বাড়তে ও বেশি ফল দিতে সহায়ক হয়।
লাভজনক ফল : বেশ কিছু ফল আছে যেগুলো পরিকল্পিতভাবে উন্নত জাতের বাগান সৃষ্টি করলে এবং নিয়মিত পরিচর্যা গ্রহণ করলে সেগুলোর আবাদ অতি লাভজনক। এগুলোর মধ্যে কলা, পেঁপে তরমুজ,  আনারস, আম, কুল, পেয়ারা, কাগজিলেবু, কমলা, মালটা, লিচু, বেল, কদবেল, লটকন, শরিফা, আমড়া, মিষ্টি তেঁতুল, খাট জাতের নারিকেল অন্যতম।
দেশি ফল চাষের অবদান
যেহেতু দেশি ফল হতে আমরা নানা ধরনের পুষ্টিমূল্য পেয়ে থাকি তাই এর চাষ আমাদের জীবনের নানা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
অধিক আয় : অন্যান্য দানাদার খাদ্যশস্য অপেক্ষা দেশি ফলের গড় ফলন অনেক বেশি। সে হারে ফলের মূল্য বেশি হওয়ায় তুলনামূলকভাবে আয়ও অনেক বেশি যেমন-এক হেক্টর জমিতে ধান গম চাষে আয় হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। অথচ সমপরিমাণ জমিতে কলা ও আম চাষ করে যথাক্রমে আয় হয় ৭৫ হাজার ও ১ লাখ টাকা।
জাতীয় অর্থনীতিতে : বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে ফলভিত্তিক আয়ের আনুমানিক প্রায় ১০ শতাংশ আসে ফল  থেকে। এ থেকে বোঝা যায় জাতীয় অর্থনীতিতে তথা দারিদ্র্য বিমোচনে ফল ও ফলদ বৃক্ষের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দেশি ফল উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রপ্তানিমুখী সম্ভাবনা
বিশ্বের ফল বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবদান খুবই কম। বিদেশে টাটকা ও প্রক্রিয়াজাতকৃত ফলের প্রচুর চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে সীমিত আকারে টাটকা ফল রপ্তানি হচ্ছে। রপ্তানিকৃত উল্লেখযোগ্য ফলগুলোর মধ্যে কাঁঠাল, আম, আনারস, লেবু, কামরাঙা, বাতাবিলেবু, তেঁতুল, চালতা উল্লেখযোগ্য। টাটকা ফল ছাড়াও হিমায়িত ফল ও সবজি (সাতকরা, কাঁঠাল বীজ, কাঁচকলা, লেবু, জলপাই, আমড়া ইত্যাদি) ইতালি, জার্মানি, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান ও বাহরাইনে রপ্তানি হচ্ছে। এতে ফল রপ্তানির মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশে ফল চাষ সম্প্রসারণ
বর্তমানে একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক ফলের চাহিদা ২০০ গ্রামের বিপরীতে প্রাপ্যতা হলো মাত্র ৭৪.৪২ গ্রাম। সারা বিশ্বে ফল একটি সমাদৃত ও উপাদেয় খাদ্য। ফল বিভাগ, উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই, গাজীপুর এ পর্যন্ত উষ্ণ এবং অবউষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলে চাষোপযোগী ৩০টি বিভিন্ন প্রজাতির ফলের ৬৫টি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে যেগুলোর অধিকাংশ কৃষকপর্যায়ে সমাদৃত হয়েছে এবং দেশীয় ফলের চাষ সম্প্রসারণসহ উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এসব উন্নত জাতের আরও ব্যাপক সম্প্রসারণ হওয়া অপরিহার্য।
ফল চাষ সম্প্রসারণে সমস্যাবলি
বাংলাদেশে ফল চাষে নানা ধরনের সমস্যা দেখা যায়। সমস্যা গুলো হলো- কৃষকদের ফল চাষ সম্পর্কিত জ্ঞানের অভাব। গুণগত মানসম্পন্ন কলম-চারার অভাব। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের ফল চাষ সম্পর্কিত জ্ঞানের অপ্রতুলতা। গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ ও বিএডিসির সমন্বয়ের ঘাটতি। ব্যক্তি মালিকানাধীন নার্সারিতে ফলের উন্নত জাতের মাতৃগাছের অভাব। উন্নত জাতের গুণগত মানসম্পন্ন কলম-চারা উৎপাদন কলাকৌশল সম্পর্কে কৃষকের জ্ঞানের অভাব। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বীজ থেকে ফল গাছ হওয়ায় ফলের ফলন ও গুণগতমান উভয়ই নিম্নমানের হয়। বাংলাদেশের চাষের জমি দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। ফল পচনশীল বিধায় সংগ্রহোত্তর সঠিক পরিবহন ব্যবস্থা, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণের অভাবে কৃষক প্রায়ই ন্যায্যমূল্য পায় না বিধায় প্রায় ২৫ শতাংশ ফল সংগ্রহোত্তর নষ্ট হয়ে যায়। বছরের কিছু সময় (মে-আগস্ট) ফলের সমারোহ থাকলেও অবশিষ্ট সময়ে (সেপ্টেম্বর-এপ্রিল) দেশীয় ফলের প্রাপ্যতা থাকে খুবই কম। ফল বৃক্ষের বাগান তৈরিতে উৎসাহ কম। অনেক সময় প্রতিকূল পরিবেশ ও বৈরী আবহাওয়াগত কারণে ফলন কম হয়। প্রচলিত ফলের পাশাপাশি অপ্রচলিত ফল চাষ তেমন গুরুত্ব পায় না তাই দেশ থেকে অনেক ফল বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ি জমিতে ফল চাষ করা কষ্টকর বিধায় তা চাষের আওতায় আসছে না। ফল গাছ রোপণের পর ফল আসতে দীর্ঘ সময় লাগে বিধায় অনেকে ফল চাষে আগ্রহী হয় না।
উপরোল্লিখিত সমস্যাসমূহ সমাধান করে ফল চাষের বাণিজ্যিক সম্ভাবনাকে আরো গতিশীল করতে সরকারি পর্যায়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর প্রকল্প সহায়তা ও সরকারি প্রণোদনার মাধ্যমে কৃষকপর্যায়ে বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করে আসছে। আশা করা যায়, একদিন এই ফল চাষাবাদ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমেই ঘুচবে বাংলাদেশের বেকার সমস্যা, আর এর পাশাপাশি আমরা আয় করতে পারব বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা। তাই এখন প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ। য়
মহাপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি,  ফোন : ৫৫০২৮৩৬৯, ই- মেইল : dg@dae.gov.bd

 

বিস্তারিত
নচ ও বার্ক গ্রাফটিং : ফল গাছের আধুনিক প্রযুক্তি

নচ ও বার্ক গ্রাফটিং : ফল গাছের আধুনিক প্রযুক্তি
ড. মোঃ শামছুল আলম১, মোঃ নাজমুল হাসান মেহেদী২
গাছের সংযোজনযোগ্য অংশ (আদিজোড় ও উপজোড়) পরস্পর সংযুক্ত হয়ে যখন একটি একক গাছ হিসাবে বৃদ্ধি লাভ করে তখন তাকে গ্রাফট বলে এবং এ প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় গ্রাফটেজ। গ্রাফটেজ হলো গ্রাফটিং এর সাধারণ বা সমষ্টিগত পদ্ধতি এবং এর অন্তর্গত প্রত্যেকটি পদ্ধতিকে গ্রাফটিং বলা হয়। জীবিত কলা সম্পন্ন দুইটি উদ্ভিদাংশের পারস্পরিক জোড়া লাগাই হলো গ্রাফটেজের মূলনীতি। আমের যৌন ও অযৌন উভয় পদ্ধতিতেই বংশবিস্তার করা যায়। বীজ থেকে উৎপাদিত চারায় মাতৃগাছের গুণাগুণ অক্ষুণ্ন্ন থাকে না এবং ফল ধরতেও অনেক সময় লাগে। এ জন্য কলমের মাধ্যমেই এর বংশবিস্তার করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশে সাধারণত এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত ফল গাছের  বংশবিস্তার করা হয়ে থাকে। আমের ক্ষেত্রে অবশ্য জোড় কলমের মাধ্যমে বিশেষ করে ক্লেফট ও ভিনিয়ার কলমের মাধ্যমে বংশবিস্তার করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে  অনুন্নত গাছকে উন্নত গাছে রূপান্তর করার জন্য সাধারণত টপ ওয়ার্কিং করা হয়ে থাকে। তবে নচ ও বার্ক গ্রাফটিং এর মাধ্যমে অনুন্নত গাছকে  উন্নত জাতের গাছ ও ফলবান বৃক্ষে রূপান্তর করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে বয়স্ক এবং অনুন্নত একটি গাছে কয়েক রকমের ভালো জাত দ্বারা  নচ অথবা  বার্ক গ্রাফটিং করে উন্নত গাছে রূপান্তর করলে একই গাছ থেকে কয়েক রকমের ফল পাওয়া সম্ভব হবে। নচ ও বার্ক গ্রাফটিং অপেক্ষাকৃত সহজ ও কম ব্যয়বহুল এবং সফলতার হারও  বেশি।
গবেষণা ফলাফল
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) এর উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের আওতায় একটি গবেষণায় দেখা যায় যে, ৩টি ৫ বছর বয়সি, ৩টি ১০ বছর বয়সি, ৩টি ১৫ বছর বয়সি এবং ৩টি ২০ বছর বয়সি অনুন্নত আম গাছকে ১ মিটার উচ্চতায় কেটে তার উপর  উন্নত জাতের আম (আম্রপালি, বারি  আম-৪, বাউ আম-১৪/ব্যানানা, গোপালভোগ ও বাউ আম-৬/ পলিএম্ব্রায়নি) এর ৫টি করে নচ ও ৫টি করে বার্ক গ্রাফটিং করে সফলতার হার বিবেচনায় দেখা যায় যে ৫ বছর বয়সি গাছে ৮০% নচ গ্রাফটিং ও ৮০% বার্ক গ্রাফটিং, ১০ বছর বয়সি গাছে ৬০% নচ গ্রাফটিং ও ৮০% বার্ক গ্রাফটিং, ১৫ বছর বয়সি গাছে ৬০% নচ গ্রাফটিং ও ৭৫% বার্ক গ্রাফটিং এবং ২০ বছর বয়সি গাছে ৫০% নচ গ্রাফটিং ও ৭০% বার্ক গ্রাফটিং সফল হয়েছে। জাতের বিবেচনায়, আম্রপালি জাতে নচ ও বার্ক গ্রাফটিং এ সফলতার হার বেশি পাওয়া গেছে।
নচ গ্রাফটিং : আম, পেয়ারা, কামরাঙ্গা, আপেল, পিচ, চেরিসহ প্রায় সব ফল গাছে এ কলম করা যায়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটি ফাটল জোড়কলমের মতো গাছের পুরনো অংশ পরিবর্তন বা বয়স্ক ও অনুন্নত  গাছের উন্নতি সাধনে এবং অফলন্ত গাছকে ফলবান বৃক্ষে রূপান্তর করার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এ কলমের পদ্ধতি মোটামুটিভাবে ফাটল জোড় কলমের মতোই। তবে মূল পার্থক্য হলো এতে আদিজোড়ে কোনো ফাটল তৈরি করা হয় না। আদিজোড় ও উপজোড়ে গোঁজ তৈরি  করা হয় অথবা আদিজোড়ের মাথা করাত দ্বারা সমান করে কেটে তাতে লম্বালম্বিভাবে ক্রমে উপরের দিকে গভীর করে কাঠ তুলে ফেলা হয়।
সুবিধা : মাতৃগাছের গুণাগুণসম্পন্ন এবং কাক্সিক্ষত ফল দানে সক্ষম। গাছের পুরনো অংশ পরিবর্তন বা বয়স্ক  ও অনুন্নত  গাছের উন্নতি সাধন করা যায়। কাটিং এর মতো পানি, আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের দরকার হয় না বলে বেশি যত্ন ও পরিচর্যার প্রয়োজন পড়ে না। রোগবালাই, কীটপতঙ্গ প্রতিরোধী এবং পরিবেশ সহনশীল গাছ পাওয়া যায়। স্বল্প পরিসরে অনেক কলম এবং তুলনামূলকভাবে খরচ কম হয়। তেমন কোনো কারিগরি জ্ঞান বা দক্ষতার দরকার হয় না বলে যে কেউ এ কলম করতে পারে। তাছাড়া এ কলম হতে জন্মানো গাছে অল্প সময়ে ফুল ও ফল ধরে।
নচ ও বার্ক গ্রাফটিং/কলমের সময় : মার্চ-আগস্ট মাস তবে বাতাসের আর্দ্রতা বেশি থাকলে সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত করা যাবে। অর্থাৎ বর্ষাকাল এ কলম করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।
সায়ন বা উপজোড় নির্বাচন
সায়নের বয়স অবশ্যই পরিপূর্ণ হতে হবে। নির্বাচিত উপজোড় বা সায়ন  অবশ্যই উৎকৃষ্ট, কাক্সিক্ষত ও একটি নামকরা জাতের ফলবতী গাছ থেকে সংগ্রহ করতে হবে। শীর্ষ শাখায় সর্বদাই কার্বোহাইড্রেটের সঞ্চয় কম থাকে বিধায় এটিকে কখনো উপজোড়ের জন্য নির্বাচন করা সঙ্গত নয়, তেমনি ফুল-কুঁড়িসহ উপজোড়ও পরিহার করা উচিত। সাধারণত সুস্থ, সতেজ, সবল তেজদীপ্ত খাটো, মধ্য পর্ববিশিষ্ট ৫-৬ মাস বয়স্ক এবং চলতি মৌসুমের বর্ধনশীল শাখা উপজোড় বা সায়ন হিসেবে সর্বোত্তম। চলতি মৌসুমের ডালের পাতাগুলো যখন গাঢ় সবুজ হবে, ডালের ডগায় কুঁড়ি স্ফীত বা ফোটা ফোটা ভাব হবে এবং               রোগ বালাই ও কীটপতঙ্গের আক্রমণ মুক্ত হবে এবং একই সাথে যে গুলোর আকৃতি স্টক চারার মতো তখন ঐ ডালকে উপযুক্ত সায়ন হিসেবে বিবেচনা করা যাবে। নির্বাচিত সায়ন শাখা               কুঁড়িসহ কেটে আনতে হবে এবং অগ্রভাগের সুপ্ত কুঁড়ি বাদে অন্যসব পাতা কেটে ফেলতে হবে। সায়নের দৈর্ঘ্য ১০-১৫ সেমি. বা ৪-৬ ইঞ্চি হতে হবে। অল্পসংখ্যক কলম করতে হলে মা গাছের দক্ষিণ দিক হতে সায়ন নির্বাচন করতে হবে। অধিকসংখ্যক হলে সকল দিক থেকেই সায়ন নেয়া যাবে। অতি বৃদ্ধ বা অতি কচি সায়ন বাদ দিতে হবে।
নচ গ্রাফটিং কলম করার পদ্ধতি
এ পদ্ধতিতে প্রথমে বয়স্ক, অনুন্নত এবং অফলন্ত গাছকে গোড়া থেকে ১ মিটার বা সুবিধাজনক স্থানে কেটে ফেলা হয়। এরপর মাথা করাত দ্বারা সমান করে কেটে দেয়া হয়। এরপর কাটা অংশে কপার ফাংগিসাইড/আলকাতরা দেয়া হয় যাতে কোনো রোগের আক্রমণ না হয়। এরপর কাটা অংশ থেকে লম্বালম্বিভাবে নিচের দিকে প্রায় ২ ইঞ্চি পরিমাণ অংশে গোঁজের মতো কেটে কিছুটা কাঠসহ বাকল তুলে ফেলা হয়। অনুরূপ মাপে উপজোড়ের নিচের প্রান্তÍ গোঁজের মতো কেটে আদিজোড়ের কর্তিত অংশে সুন্দরভাবে খাপ খাইয়ে স্থাপন করা হয়। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন আদিজোড় ও উপজোড়ের বাকল ভালোভাবে মিশে যায়।
এরপর পলিথিন ফিতা দিয়ে সায়নকে আদিজোড় এর সাথে ভালোভাবে বেঁধে দেয়া হয়। আদিজোড় এর কাটা অংশের উপরে সায়নকে পলিথিন ফিতা দিয়ে ভালোভাবে বেঁধে দেয়া হয়। এরপর পলিথিন দিয়ে সায়ন ও আদিজোড়কে এমনভাবে ঢেকে দেয়া হয় যাতে কর্তিত অংশে কোনো পানি না যায়। সায়ন থেকে কুঁশি বের হলে পলিথিনের কভার খুলে দেয়া হয়।
বাকল গ্রাফটিং
পার্শ্ব পদ্ধতির এটি একটি বিশেষ রূপ। জোড় কলমের বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে এটি অধিকতর সহজ ও সফল পদ্ধতি। সাধারণত গাছের বাকল যখন কাঠ থেকে সহজে আলাদা করা যায় তখনই বাকল কলম করা হয়ে থাকে। এর জন্য উপযুক্ত সময় হলো বসন্তকাল। এ পদ্ধতিটি নচ গ্রাফটিং এর মতোই। প্রথমে আদিজোড়কে মাথা থেকে কেটে ফেলা হয় এবং কর্তিত প্রান্ত এর শীর্ষ থেকে নিচের দিকে ৫ সেমি. লম্বা ও কিছুটা চওড়া করে বাকল আলগা করা হয়। এরপর ২-৩টি কুঁড়িযুক্ত ১২-১৫ সেমি. দীর্ঘ ও ৬-১২.৫ সেমি. ব্যাসের উপজোড় সাধারণত এ ধরনের কলম করার জন্য নির্বাচিত করা হয়। এ উপজোড় এর নিচের প্রান্ত থেকে ৫ সেমি. লম্বা ও তির্যকভাবে একটি কর্তন দেয়া হয়। অতঃপর উপজোড়কে আদিজোড়ের আলগা বাকলের মাঝ স্থাপন করা  হয়। এরপর জোড়া লাগানো অংশসহ সম্পূর্ণ সায়নটি পলিথিন ফিতা দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। প্রয়োজনে সায়নকে আদিজোড়ের সাথে ভালোভাবে বাঁধার জন্য সুতলি ব্যবহার করা যেতে পারে। এ উপায়ে একটি কাণ্ডে একাধিক জাতের একাধিক  কলম করা যেতে পারে।
পরবর্তী পরিচর্যা
৩০-৪০ দিনের মধ্যে কলমকৃত শাখা থেকে কুঁশি গজাবে যা পলিথিন এর বাইরে থেকে দেখা যাবে। গজানো পাতা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়লে পলিথিন খুলে দিতে হবে। রুটস্টক ও সায়নের জোড়ার নিচে রুটস্টকে কুঁশি (অফস্যুট) বের হলে তা ভেঙে দিতে হবে। সায়নে গজানো পাতা পুষ্ট হওয়ার পরপরই রুটস্টক ও সায়নের জোড়ার পলিথিন কেটে দিতে হবে। সায়ন থেকে পাতা বের হওয়ার পর প্রধানত : পাতা কাটা উইভিল, জাব পোকা ও পাতাখেকো শুঁয়োপোকা পোকা এবং বিভিন্ন রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়। সেক্ষেত্রে কৃষি বিশেষজ্ঞ পরামর্শ অনুযায়ী সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বালাই দমন করা যেতে পারে। য়

১ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ, বিনা, ই-মেইল: mithuhort@yahoo.com, মোবাইল: ০১৭১১১২৪৭২২; ২বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ, ই-মেইল:  nazmul02348@gmail.com, মোবাইল: ০১৭৩৯৮৯৮৭২৮

 

বিস্তারিত
অমৌসুমে তরমুজ চাষ

অমৌসুমে তরমুজ চাষ
মৃত্যুঞ্জয় রায়
তরমুজ সাধারণত এপ্রিল-মে মাসে ওঠে। এটাই তরমুজের প্রধান মৌসুম। কিন্তু সম্প্রতি এ দেশের বাজারে এ সময় ছাড়া অন্য সময়েও তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ তরমুজ বেশি পাওয়া যায়। এ তরমুজকে অনেকে নাম দিয়েছেন ‘বারোমাসি তরমুজ’। ছোট, লম্বাটে, ডিম্বাকার, কালো খোসা, ভেতরে টকটকে লাল শাঁসের তরমুজগুলো অসময়ে ওঠার কারণে বাজারে চাষিরা ভালো দাম পাচ্ছেন। কোনো স্থানে হলুদ রঙের খোসার অমৌসুমী তরমুজেরও চাষ হচ্ছে। দিন দিন অমৌসুমে তরমুজ চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। হবিগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, মৌলভীবাজার, ভোলা প্রভৃতি জেলায় কিছু কৃষক ইতোমধ্যে এই বারোমাসি তরমুজ চাষ করে বিঘাপ্রতি প্রায় দেড় লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন। এক বিঘায় এ জাতের তরমুজের ফলন হয় প্রায় ৬ থেকে ৮ টন।
জাত : ছোট আকারের বারোমাসি তরমুজের বেশ কয়েকটি জাতের বীজ এ দেশে এখন পাওয়া যাচ্ছে। এসব জাতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ব্লাক বেবী, ব্লাক প্রিন্স, ব্লাক বক্স, জেসমিন ১, জেসমিন ২, জেসমিন ৩ ইত্যাদি। এসব জাত বছরের যে কোনো সময় চাষ করা যায়।
চারা রোপণ  
মধ্য মার্চ থেকে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এ জাতের তরমুজের চারা লাগানো যায়। বিঘায় মাত্র ৫০ গ্রাম বীজ লাগে। বিঘায় ১৪০০টি চারা লাগে। জমি তৈরির আগেই পলিথিন ব্যাগে চারা তৈরি করে নিতে হবে। ঝুঁকি এড়াতে শতকরা ১০ ভাগ চারা বেশি উৎপাদন করতে হবে।
চারা তৈরি  
চারা উৎপাদনের জন্য সন্ধ্যাবেলায় ৪-৬ ঘণ্টা বীজ পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পানি ঝরিয়ে বীজ শুকিয়ে সুতি কাপড়ের মধ্যে রেখে ভাঁজ করে চটের বস্তায় তা আবার ভাঁজ করে মুড়িয়ে রাখতে হবে। বীজসহ চটের বস্তা ৩০-৪৫ ঘণ্টা রোদে জাগ দিয়ে রাখতে হবে। চটের বস্তায় পানি ছিটিয়ে মাঝে মাঝে তা ভিজিয়ে দিতে হবে। এ সময়ের মধ্যে চটের বস্তায় রাখা বীজ গজিয়ে যাবে। পলিব্যাগ বা প্লাস্টিকের কাপ-ট্রে তে চারা তৈরি করা ভালো। তবে এখন নানা সুবিধা ও কম খরচের কারণে অনেকেই প্লাস্টিকের ট্রে ব্যবহার করছেন। একটি ট্রে-তে ১০০টি চারা তৈরি করা যায়। এই ট্রের সুবিধা হলো, যে কোনো সময় যে কোনো স্থানে স্থানান্তর করা যায়, বৃষ্টি থেকে সহজে রক্ষা করা যায় ও বারবার ব্যবহার করা যায়।
গজানো বীজ পলিব্যাগে ফেলার জন্য পলিব্যাগে গোবর সার মেশানো মাটি ভরে রাখতে হবে। মাটিভরা পলিব্যাগগুলো রোদপড়া কোনো জায়গা পরিষ্কার ও সমতল করে সেখানে ১ মিটার চওড়া করে জায়গা নিয়ে চারপাশ বাঁশের চটা দিয়ে ঘিরে বীজতলার জন্য বেড তৈরি করতে হবে। চারপাশে চারটি বাঁশের ছোট খুঁটি পুঁতে ও মাঝে মাঝে আরও কয়েকটি খুঁটি পুঁতে তার সাথে আড়ার মতো বাঁশের চটা বেঁধে এই বেড তৈরি করা যায়। বেডের চারপাশে চটার উচ্চতা মাটি থেকে ৪-৬ ইঞ্চি বা      ১০-১৫ সেন্টিমিটার হতে পারে। এসব ঝামেলা না করে শুধু চারপাশে চার টুকরো বাঁশ দিয়ে ঘিরেও পলিব্যাগের ঠেকনা দেয়ার কাজ বা বেড তৈরি করা যেতে পারে।
গজানো বীজ চট থেকে বের করে একটা একটা করে এক একটি পলিব্যাগের মাটিতে অল্প গভীরে বপন করতে হবে। বপনের আগে প্রতিটি পলিব্যাগের মাঝখানে একটা কাঠি দিয়ে সামান্য গর্ত করে রাখতে হবে। পলিব্যাগে বীজ বপনের আগে গজানো বীজের সাথে সামান্য শুকনো ঝুরঝুরে মাটি মিশিয়ে নিলে বীজ বপনে সুবিধা হবে। অংকুর বের হওয়া মুখ নিচের দিকে দিয়ে মাটিতে বীজ বপন করতে হবে। তারপর তা মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। পলিব্যাগে বীজ বপন শেষ হলে ওপর থেকে হালকা করে ঝাঝরি দিয়ে পানি ছিটাতে হবে। ভারী বৃষ্টি যাতে চারার ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য বীজতলা বা বেডের ওপরে বাঁশের চটা দিয়ে নৌকার ছৈয়ের মতো করে পলিথিনের ছাউনির ব্যবস্থা করতে হবে। বৃষ্টি বা কড়া রোদ থেকে এই ছাউনি চারাকে রক্ষা করবে।
জমি ও বেড তৈরি : জমিতে চারা লাগানোর জন্য বেড তৈরি করতে হবে। চারপাশের আইল থেকে ৫০-৬০ সেন্টিমিটার চওড়া করে লম্বা বেড করতে হবে। জোড়া সারি পদ্ধতিতে বেড তৈরি করা যায়। এ পদ্ধতিতে প্রথমে ৬০ সেন্টিমিটার চওড়া একটা বেড করতে হবে, তারপর ২.৫ মিটার জায়গা খালি রাখতে হবে। এরপর আবার ৬০ সেন্টিমিটার চওড়া আর একটি বেড করতে হবে। এভাবে পাশাপাশি দুটো জোড়া বেড তৈরি হবে যার মাঝে ৬০ সেন্টিমিটার খালি থাকবে, যা সেচনালা ও পরিচর্যার চলাচলের জন্য ব্যবহৃত হবে। আড়াই মিটার ফাঁকা জায়গায় তৈরি হবে মাচা। দুই বেডের মাঝের ফাঁকা জায়গার মাটি তুলে পাশের বেডে তুলে দিয়ে বেড উঁচু করতে হবে। কেউ কেউ এখন নিচু ধানের জমিতেও বারোমাসি তরমুজের চাষ করে এখন লাভবান হচ্ছেন।
সার প্রয়োগ
বারোমাসি তরমুজ চাষের জন্য ভার্মিকম্পোস্ট বা কেঁচো সার ভালো হবে। বিঘাপ্রতি সার লাগবে- ভার্মিকম্পোস্ট ২০০ কেজি, ইউরিয়া ৪০ কেজি, টিএসপি ৪০ কেজি, এমওপি ৪০ কেজি, জিপসাম ২০ কেজি, জিংক সালফেট ১ কেজি ও বোরণ সার ১.৫ কেজি। সব সার বেড তৈরির সময় বেডের মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
পলিথিন মালচিং
বারোমাসি তরমুজ চাষের জন্য বেড ঢাকতে কালো রঙের পলিথিন শিট দিয়ে মালচিং করতে হয়। এক বিঘা জমির জন্য ১১ কেজি ওজনের একটি পলিথিন রোল দরকার হয়। পলিথিন রোল ৩ ফুট বা ১ মিটার চওড়া হলে চলে। মালচিং শিট বা পলিথিন বিছানোর জন্য বিশেষ দক্ষতার দরকার হয়। বেডের এক পাশ থেকে মালচিং শিট বিছানো শুরু করতে হবে। রোলের মাঝে একটা চিকন বাঁশ বা পাইপ ঢুকিয়ে নিলে রোল টানতে সুবিধা হয়। মালচিং শিট বিছাতে ৩-৪ জন লোক হলে ভালো হয়। দু’জন রোল টানবে, এক বা  দু’জন শিট বিছানোর পর বেডের দুইপাশ থেকে মাটি তুলে পলিথিনের পাশটা মাটিচাপা দিয়ে বেডের সাথে চেপে দেবে। মালচিং শিট যে প্রান্ত থেকে বিছানো শুরু করতে হবে সে প্রান্তে শিটের ধারটা বেড থেকে কিছুটা বাইরে বের করে মাটিচাপা দিয়ে আটকে দিতে হবে। টানার সুবিধার্থে সেই প্রান্ত দুটো বাঁশের খুঁটার সাখে বেঁধেও দেয়া যেতে পারে। মাটিচাপা দেয়া ও বেডে পলিথিন শিট বিছানোর পর খুঁটা তুলে ফেলা যেতে পারে। মালচিং শিট স্থাপনের পর জমি সেচ দিয়ে ভালো করে ভিজিয়ে দিতে হবে।
চারা রোপণ
সেচ দেয়ার ৭-৮ দিন পর জমিতে ‘জো’ অবস্থা এলে চারা রোপণের কাজ শুরু করতে হবে। চারা রোপণের আগে নির্দিষ্ট দূরত্বে বেড বা পলিথিন মালচিং শিটের মাঝখান বরাবর ১০ সেন্টিমিটার বা ৪ ইঞ্চি ব্যাসের গোলাকার ছিদ্র করতে হবে। সহজ ও কম সময়ে, কম শ্রমে এ কাজ করতে চাইলে শক্ত             ৬-৮ ইঞ্চি লম্বা এক টুকরো ৪ ইঞ্চি ডায়ার পিভিসি পাইপ দিয়ে এ কাজ করা যেতে পারে। এই পাইপের টুকরা নির্দিষ্ট স্থানে চেপে ধরে মোচড় দিলেই পলিথিন গোল করে কাটা হয়ে যাবে। কাটা ফাঁকা স্থানের মাটিতে চারা লাগানোর জন্য ছোট্ট গর্ত তৈরি করতে হবে। একটি গর্ত থেকে আর একটি গর্তের দূরত্ব হবে ৪৫ সেন্টিমিটার বা ১৮ ইঞ্চি। কাটা পলিথিনের টুকরা জমি থেকে কুড়িয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে, জমির ভেতরে রাখা যাবে না।
জমিতে ৫-৭ দিন বয়সের চারা রোপণ করতে হবে। চারা রোপণের আগে দেখতে হবে পলিব্যাগের মাটিতে রস আছে কিনা। না থাকলে মাটি চারা রোপণের কিছুক্ষণ আগে হালকা করে ভিজিয়ে দিতে হবে। ব্লেড দিয়ে পলিব্যাগ কেটে বা পলিব্যাগের নিচে টিপ দিয়ে চেপে পলিব্যাগ থেকে চারা বের করা যায়। চারা রোপণের পর চারার গোড়ায় ঝাঝরি দিয়ে হালকা সেচ দিতে হবে। বিকেলে চারা লাগানো ভালো।
মাচা তৈরি
দুই বেডের মাঝের ফাঁকা জায়গায় বাঁশ ও নাইলন রশি বা জিআই তার ব্যবহার করে মাচা তৈরি করে দিতে হবে। দোচালা ঘরের চাল বা নৌকার ছৈয়ের মতো মাচা তৈরি করা যায়। এতে দুইপাশের বেড থেকে গাছ উঠতে সুবিধা হয়। প্রথমে বাঁশের কাঠামো তৈরি করে তার ওপর ২০ সেন্টিমিটার বা ৮ ইঞ্চি দূরে দূরে তার বা রশি লম্বা করে টানিয়ে ফ্রেমগুলোর ওপর টেনে দিতে হবে। এরপর নাইলনের নেট বিছিয়ে দিতে হবে।
কুশিছাঁটা
মোট তিনবার কুশি ছাঁটতে হবে। প্রথমবার ছাঁটতে হবে মাচায় চারা তুলে দেয়ার সময়। মূল গাছের সাথে দুটি কুশি রেখে বাকিগুলো গোড়া থেকে ছেঁটে দিতে হবে। দ্বিতীয়বার ছাঁটতে হবে প্রথমবার কুশি ছাঁটার ৫-৭ দিন পর। এ সময় মাচায় নেটের নিচে ঝুলে পড়া কুশি ছেঁটে দিতে হবে। এর ৫-৭ দিন পর একইভাবে নেটের নিচে ঝুলে পড়া কুশিগুলো ছেঁটে দিতে হবে।
বালাই ব্যবস্থাপনা
তরমুজ গাছে বিভিন্ন রোগ ও পোকার আক্রমণ হয়। এর মধ্যে অ্যানথ্রাকনোজ বা শুকনো পচা, ঢলে পড়া, আঠা ঝরা ইত্যাদি প্রধান ক্ষতিকর রোগ। এ ছাড়া ফলের মাছি, লাল মাকড়, সাদা মাছি, থ্রিপস, রেড পাম্পকিন বিটিল, এপিলাকনা বিটিল বা কাঁটালে পোকা, জাবপোকা ইত্যাদি পোকামাকড় আক্রমণ করে। উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়ে এসব রোগ ও পোকা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ফলের মাছি পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করা যায়।
ফলে নেট বাঁধা
ফল বড় হওয়া শুরু হলে তা নেট দিয়ে বেঁধে না দিলে ছিঁড়ে পড়ে ক্ষতি হতে পারে। সেজন্য নেটের ব্যাগ বা নেট দিয়ে ফল বেঁধে দিতে হবে।
ফল তোলা
ফল ধারণের পর ৫৫-৬০ দিনের মধ্যে ফল তোলার উপযুক্ত হয়ে যায়। এ সময় থেকে শুরু করে ৭০ দিন পর্যন্ত ফল তোলা যায়। এর পর গাছে ফল রাখা উচিত হবে না। য়
প্রকল্প পরিচালক, ডিএই, সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা কম্পোনেন্ট (২য় পর্যায়) প্রকল্প, খামারবাড়ি, ঢাকা  মোবাইল : ০১৭১৮২০৯১০৭, ই-মেইল :  kbdmrityun@yahoo.com

বিস্তারিত
গাঁজায়িত খাদ্য : পুষ্টি গুণাগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা

গাঁজায়িত খাদ্য : পুষ্টি গুণাগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা
ড. মোঃ মনিরুল ইসলাম

ফার্মেন্টেড বা গাঁজায়িত খাদ্য হচ্ছে প্রাণীজ বা উদ্ভিজ¦ উৎসের সে সকল খাদ্য, যা ল্যাক্টোফার্মেটেশন (খধপঃড়-ভবৎসবহঃধঃরড়হ) পদ্ধতিতে উৎপাদিত হয়; যেখানে প্রাকৃতিকভাবে বিরাজমান ব্যাকটেরিয়া, চিনি ও শর্করা জাতীয় খাদ্যের উপর নির্ভর করে এবং ল্যাকটিক এসিড উৎপাদন করে; অথবা ফার্মেটেশন (ঋবৎসবহঃধঃরড়হ) বা গাঁজায়ন হচ্ছে অবাত পরিবেশে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ পদ্ধতি যা অনুজীব, ইস্ট বা ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে শর্করাকে ভেঙে এলকোহল বা জৈব এসিডে পরিণত করে।
সনাতন পদ্ধতিতে প্রায় ১০,০০০ বছর পূর্ব হতেই খাদ্য দ্রব্যের স্বাদ, বর্ণ, গন্ধ পরিবর্তনজনিত ফার্মেন্টেশন বা গাঁজন প্রক্রিয়া বিশ্বের নানা প্রান্তে প্রচলিত হয়ে আসছে; যেমন মাংস হতে কিউরড সসেজ, দুধ হতে নীল পনির এবং বাঁধাকপি হতে             কিমুচি ইত্যাদি অন্যতম। পরিবর্তনশীল বিজ্ঞানের যুগে এসব খাবারে বাইর থেকে প্রোবায়োটিক যোগ করা হয়, ফলে বর্তমানে এসব গাঁজায়িত খাবার আরও অধিকতর পুষ্টিগুণ ও এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ।
গাঁজায়িত খাদ্য যেমন- মিসো, কিমচি, কেফির, কমবুচা, টেম্পাহ্, দধি, গাঁজনকৃত মাছ, পান্তাভাত, সিদল শুঁটকি, ইডলি ইত্যাদিতে বৈচিত্র্যপূর্ণ ও প্রচুর পরিমাণে রোগ প্রতিরোধকারী ও উপকারী ব্যাকটেরিয়া ও অধিকতর অণুপুষ্টি (গরপৎড়হঁঃৎরবহঃং) পাওয়া যায়। তাছাড়া অনেক টাটকা বা তাজা খাবারে বিরাজমান অণুপুষ্টিগুলো আবদ্ধ (ইরড়-ঁহধাধরষধনষব) অবস্থায় থাকে, যা দেহ শোষণ করতে পারেনা ; কিন্তু গ্াজন প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত খাবারসমুহ এসব অণুপুষ্টি মুক্ত (ইরড়-ধাধরষধনষব) করে দেয়, ফলে মানুষের শরীরে তা সহজে শোষণ হয়। তাছাড়া গাঁজনকৃত খাবারে এন্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহরোধী বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকে। গাঁজন প্রক্রিয়া শুধু খাবার সংরক্ষণ করে না, উপকারী ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি, বি-ভিটামিনস, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড এবং বিভিন্ন প্রোবায়োটিকস উৎপন্ন করে। তাছাড়া খাদ্যের পুষ্টিমান উন্নয়ন ঘটায় ও খাদ্য হজমে সাহায্যে করে এবং এসব প্রোবায়োটিক অন্ত্রে প্রাকৃতিকভাবে উপস্থিত উপকারী ও রোগসৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার সমতার উন্নয়ন ঘটায়। উল্লেখ্য যে মানুষের সুস্থভাবে বাঁচার জন্য অন্ত্রের সুস্থতা জরুরি। বিজ্ঞানীদের ভাষায় অন্ত্র হলো মানুষের অদ্বিতীয় মস্তিষ্ক (ঝবপড়হফ ইৎধরহ); তাই অন্ত্রের সুস্থতার জন্য অন্ত্রে উপস্থিত ভাল ও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্যতা অত্যন্ত প্রয়োজন। আর এসব খারাপ ও ভাল ব্যাকেিটরিয়া ভারসাম্যতা রক্ষার্থে গাঁজায়িত খাবার বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
কালের আবর্তে আধুনিক জীবনধারায় অভ্যস্থ মানুষ স্বাস্থ্যকর এসব গাঁজায়িত খাবার প্রায় ভুলতে বসেছে। আধুনিক যুগে প্রযুক্তির উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও পরিবহণ সুবিধা বৃদ্ধি পাওয়ায় বছর জুড়েই বিভিন্ন প্রকার ফল ও সবজি পাওয়া য়ায়; এবং ক্যানিং ও ফ্রিজিং করা হয়। এতে ভিটামিন ক্ষয় বা অপচয় কম হয়। তবে পরিপাক অন্ত্রের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এসব খাবার থেকে গাঁজায়িত খাবারের চেয়ে কম উপকার পাওয়া যায়।
আগেই বলা হয়েছে, কার্বোহাইড্রেট-কে গাঁজন প্রক্রিয়ায় ল্যাকটোব্যাসিলাস ব্যাকটেরিয়া ল্যাকটিক এসিড তৈরি করে; যা রোগসৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াকে বাধা দেয়। সাধারণত: অসুস্থ, শিশু ও বয়স্ক মানুষ যাদের অন্ত্র খুবই দুর্বল; অপেক্ষাকৃত সেসব শ্রেণীর মানুষ বেশি সুবিধা পায় গাঁজায়িত খাবার থেকে।
মায়ের দুধে বিরাজমান প্রিবায়োটিক এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ; ইহা স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া তৈরিতে সহযোগিতা করে। কলাও একটি ভালো প্রিবায়োটিক, তবে কাক্সিক্ষত ফলাফল পেতে দিনে ১০টি কলা খাওয়া প্রয়োজন।
বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় কিছু উল্লেখযোগ্য গাঁজায়িত খাবার
কেফির (কবভরৎ) : প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ পানীয়, যা বহুবিধ প্রকারের ব্যাকটেরিয়া ও ইস্ট এ ভরপুর। তাছাড়া বিভিন্ন প্রকার খনিজ ও ভিটামিন বিশেষ করে বি-ভিটামিনস ও ভিটামিন-কে সমৃদ্ধ। কেফির ১০-১৫ গ্রাম কমপ্লিট প্রোটিন অর্থাৎ মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীকুলের জন্য প্রয়োজনীয় ৯টি এ্যামাইনো এসিড সরবরাহ করে। শতাব্দী হতে শতাব্দী ধরে রাশিয়া,                 দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ইউরোপ এ কেফির              প্রচলিত, বর্তমানে আমেরিকাতেও বেশ জনপ্রিয়।
সয়ারক্রাট (ঝধঁবৎশৎধঁঃ) : বাঁধাকপি হতে প্রস্তুতকৃত সহজেই ঘরে তৈরি করা যায়। এ প্রকার খাবার শতাব্দী ধরেই মানুষ ব্যবহার করে আসছে। ইহা উচ্চ আঁশ, ভিটামিন এ, সি, কে ও বিভিন্ন প্রকার বি-ভিটামিনস সমৃদ্ধ। তাছাড়া লৌহ, ম্যাংগানিজ, কপার, সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়ামের ভাল উৎস। জার্মানিতে এর উৎপত্তি। মূল উপকরণ হচ্ছে বাঁধাকপি ও লবণ এবং পরিবেশনে সংগে সালাদও ব্যবহার করা হয়।
মিসু (গরংড়) : জাপানিদের প্রচলিত গাঁজায়িত একপ্রকার  পেস্ট-জাতীয় খাবার; যা গাঁজায়িত সয়াবিন ও শস্য বা বার্লি হতে তৈরিকৃত এবং ইহা লাখ লাখ উপকারী ব্যাকটেরিয়া সমৃদ্ধ। ইহা প্রয়োজনীয় খনিজের উৎস ও বিভিন্ন বি-ভিটামিনস, ই, কে ও ফলিক এসিড সমৃদ্ধ। মিসু সুপের জন্য লবণের ভালো বিকল্প, সালাদ ড্রেসিং বা সস হিসেবে এবং মাছ, মাংস বা অন্যান্য খাবার মেরিনেটেড এর জন্য ব্যবহার করা যায়। বর্তমানে অন্যান্য দেশেও এটা জনপ্রিয় একটি গাঁজায়িত খাদ্য।
কিমচি (করসপযর) : কিমচি কোরিয়ানদের মসলাযুক্ত আচার জাতীয় একটি জনপ্রিয় গাঁজায়িত খাদ্য। অপেক্ষাকৃত ঝাল (ঝঢ়রপু), এটাও গাঁজায়িত বাঁধাকপি/মুলা হতে প্রস্তুত করা হয়। ইহা ভিটমিনস বিশেষ করে ভিটামিন-এ, বি১, বি২, ভিটামিন-সি ও খনিজ যেমন লৌহ, ক্যালসিয়াম ও সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ। ইহা সাধারণত এককভাবে, ভাত বা নুডলস্, স্যুপের সাথে এবং বার্গারের উপরিভাগে সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও ব্যবহার করা হয়। উল্লেখ্য, বর্তমানে এটি চীন ও উন্নত বিশ্বের খাবার টেবিলে ধীরে ধীরে স্থান করে নিয়েছে।
কমবুচা (কড়সনঁপযধ) : নন-অ্যালকোহলিক, সুগন্ধময় কার্বোনেটেড কালো চা। এ প্রক্রিয়ায় ইস্ট চিনিকে ভেঙে এলকোহল ও কার্বন-ডাই অক্সাইডে রূপান্তরিত করে; এবং ব্যাকটেরিয়া অর্থাৎ এসিটোব্যাক্টর এলকোহলকে এসিটিক এসিডে পরিণত করে, যা টক স্বাদ যুক্ত করে। সম্ভবত রাশিয়ায় সর্বপ্রথম কমবুচার প্রচলন হয়, পরে তা আমেরিকা, জাপান, চীনসহ ইউরোপে বিস্তৃতি লাভ করে। কমবুচায় গ্লুকারিক এসিড থাকে, যা লিভার ভাল রাখে ও ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
টেম্পাহ্ (ঞবসঢ়বয) : ইন্দোনেশিয়ার জাভা                     দ্বীপবাসীদের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় খাবার। ১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দে জাভা অঞ্চলে এর প্রথম প্রচলন শুরু এবং পরবর্তীতে ১৯৮৪-১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে ইউরোপে এর বাণিজ্যিক বাজারজাত শুরু হয়। টেম্পাহ্ বর্তমানে অনেক দেশের মানুষের পছন্দের খাবার। এটাও সয়াবিন থেকে গাঁজায়িত পদ্ধতিতে তৈরি করা হয় এবং সাশ্রয়ী খরচে তৈরি করা যায়। টেম্পাহ্ উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ, ফলে নিরামিষভোজীদের জন্য শীর্ষ পছন্দসই একটি গাঁজায়িত খাবার। যখন টুকরা করে ডুবু তেলে ভাঁজা হয় তখন সুবাস ছড়ায়, মচমচে আকার ধারণ করে ও অনেকটা মাশরুমের মতো স্বাদ বিশিষ্ট হয়।
লাচ্ছি (খধংংরং) : টক দই থেকে তৈরি করা হয়। সাধারণত আহারের আগে বা ভোজনের সময় সাধারণত এটা গ্রহণ করা হয়। দেহের প্রয়োজনীয় প্রো-বায়োটিক ব্যাকটেরিয়া জোগাতে এটা শতাব্দী থেকে শতাব্দী ধরে একটি জনপ্রিয় পানীয়। যতদূর জানা যায় পাকিস্তানের পাঞ্জাব এলাকায় এটির প্রচলন শুরু; পরে তা ভারতবর্ষ ও মধ্য প্রাচ্যজুড়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
দধি (ণড়মঁৎঃ) : এ প্রক্রিয়ায় ল্যাকটোব্যাসিলাস ব্যাকটেরিয়া দুধের ল্যাকটোজকে গ্লুকোজ ও গ্ল্যাকাটোজ এ ভেঙে ল্যাকটিক এসিডে রূপান্তরিত করে; এবং টক স্বাদ যুক্ত করে। দধিতে থাকা জীবন্ত ব্যাকটেরিয়া অন্ত্রে বিরাজমান ব্যাকটেরিয়াকে সতেজ, সবল ও কার্যকরী রাখতে বিশেষ অবদান রাখে। উল্লেখ্য, বিশ্বের ১১টি দেশ যথাক্রমে ফ্রান্স, আয়ারল্যান্ড, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ইন্ডিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার মানুষ সবচেয়ে বেশি দধি খেয়ে থাকে।
ব্রেড (ইৎবধফ) : তাছাড়া কিছু কিছু রুটি ও গাঁজন প্রক্রিয়ায় প্রস্তুত করা হয়। যেমন: সুরডাফ্ (ংড়ঁৎফড়ঁময); এ ধরণের ব্রেডের প্রচলন সর্বপ্রথমে ইউরোপে শুরু হয় এতে ল্যাকটোব্যাসিলাস ব্যাকটেরিয়া থাকে যা রুটির খামিকে                গাঁজায়িত করে ও কটুগন্ধময় হয়। এ ধরনের রুটি প্রচলিত রুটির তুলনায় সহজে হজম হয়।
পান্তাভাত : উৎকৃষ্ট গাঁজায়িত খাদ্য। ১৭০০ শতাব্দী হতে ভারতবর্ষসহ এ অঞ্চলের কৃষ্টি, সভ্যতা, সং¯ৃ‹তির সাথে পান্তাভাত জড়িত। যদিও পান্তাভাত গরিবের খাবার হিসাবে    পরিচিত। পান্তাভাতকে ‘ঠাণ্ডা খাবার’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শিশুদের জ্বর জ্বর ভাব হলে পান্তাভাত উপশম করতে সাহায্য করে। আমরা রাইস-ভাত হতে শক্তি ও পুষ্টি পাই। তবে অলিগোস্যাকারাইড থাকায় রান্না করা হলে মানবদেহ তা               পুরোপুরি হজম করতে পারে না বা হয় না। আবার ভাতে অনেক ধরনের অণুপুষ্টি ও খনিজ পদার্থ থাকে। রান্নায় তা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্তও হয়। ভাতসহ অন্যান্য দানাদার জাতীয় খাবারে   ফাইটিক এসিড থাকে যা পুষ্টি-শোষণ (অহঃর-হঁঃৎরবহঃ) বিরোধী ফ্যাক্টর হিসাবে কাজ করে। অর্থাৎ ওই ফাইটিক এসিড খাবার হতে প্রাপ্ত অণুপুষ্টিসহ (গরপৎড়হঁঃৎরবহঃং) অন্যান্য খনিজ যেমন আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এগুলোকে আবদ্ধ (ইরড়- ঁহধাধরষধনষব) অবস্থায় রাখে, অর্থাৎ শোষণে বাধা দেয়। তাছাড়া দেহের পরিপাক রসসহ পেপসিন, এমাইলেজ ও ট্রিপসিনকে বাধাগ্রস্ত করে।
ফারমেন্টেড রাইস বা পান্থা ভাত সাধারণত গড়পড়তা ৮-১২ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে ব্যবহার বা খাওয়া হয়। ফারমেন্টেড প্রক্রিয়ায় ফাইটিক এসিড, হাইড্রোলাইসিস অর্থাৎ পানির সাথে রাসায়নিক ক্রিয়ার মাধ্যমে ল্যাকটিক এসিড ব্যাকটেরিয়া তৈরি-উৎপন্ন হয়; যা ভাতের গুণগত মান পরিবর্তন/বৃদ্ধি করে; অর্থাৎ আবদ্ধকৃত (ইরড়-ঁহধাধরষধনষব) অণুপুষ্টি সমূহকে মুক্ত (ইরড়-ধাধরষধনষব) বা শোষণ সহজ করে। গবেষণা বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, ১০০ গ্রাম পান্তায় চালের প্রকারভেদে সাধারণ ভাতের চেয়ে সর্বোচ্চ ৫৫.৮৩ (ভাগ) আয়রন/লৌহ এবং ৪৯২% (ভাগ) ক্যালসিয়াম বেশি পাওয়া যায়।
তাছাড়া শুধুমাত্র তিন ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখলেই উল্লেখযোগ্য হারে মানব দেহে অণুপুষ্টি শোষণ ক্ষমতা বাড়ে বা শোষিত হয়। তবে ৪-১০ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে তৈরিকৃত প্রায় ৯০ ভাগ পান্তাভাতে ফেকাল কলিফর্ম (ঋধবপধষ ঈড়ষরভড়ৎস) পাওয়া যায়। সেজন্য পান্তাভাতে পানি ব্যবহারে নিরাপদ পানি ব্যবহার অপরিহার্য; সেজন্য ফুটন্ত গরম পানি ঠাণ্ডা করে ব্যবহারের মাধ্যমে এ সমস্যার উত্তরণ ঘটানো যায়।
এছাড়াও বিভিন্ন প্রকার অন্যান্য গাঁজায়িত খাবার যেমন- মাছের সস, চিংিড়ি পেস্ট, ভিনেগার, হরেক রকম আচার বাজারে সহজলভ্য। তাছাড়া বিয়ার ও মদ ফার্মেন্টেড শ্রেণীভুক্ত পানীয়, যা যুগ যুগ ধরে চিনিকে ফার্মেন্টেড প্রক্রিয়ায় মদ ও             কার্বন-ডাইঅক্সাইড এ রূপান্তরিত করে করা হয়।  
গাঁজায়িত খাবারের উল্লেখযোগ্য সুবিধা
গাঁজায়িত খাবার গ্রহণের মাধ্যমে স্বাস্থ্যগত নানাবিধ উপকার পাওয়া যায়। নিচে গাঁজায়িত খাদ্য গ্রহণে উল্লেখযোগ্য যেসব উপকার পাওয়া যায় তা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।
অধিকতর হজমযোগ্য    
খাবারে বিরাজমান চিনি ও স্টার্চ বিভিন্ন এনজাইমেটিক প্রক্রিয়ায় ভেঙে যায়; ফলে হজমে সহজ হয়। যেমন গাঁজন পদ্ধতিতে দুধের ল্যাকটোজ ভেঙ্গে সাধারণ চিনি-গ্লুকোজ-গ্যালাকটোজ এ পরিণত হয়। ফলে যারা ল্যাকটোজ সংবেদনশীল তাদের জন্য দধি ও পনির সহজেই হজমযোগ্য। তাছাড়া যাদের তাজা বা টাটকা ফল-সবজি হজমে সমস্যা হয়; তাদের জন্য ফার্মেন্টেড ফল-সবজি গ্রহণ উত্তম। কারণ অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া খাবারকে প্রি-ডাইজেষ্ট করে, ফলে হজমে সহজ হয়।
অধিক পুষ্টি সমৃদ্ধ
সাধারণ খাবারে উপস্থিত বিভিন্ন মিনারেলস/ভিটামিন আবদ্ধ অবস্থায় থাকে, ফলে শরীরে তা ভালভাবে শোষণ হয়না। গাজায়িত খাবারে এসব পুষ্টিকণাসমূহ বন্ধনহীন হয়ে পড়ে বিধায় সহজেই তা মানবদেহে শোষিত হয়। উপরন্তু, অন্ত্রে বাসকৃত/কলোনিক ব্যাকটেরিয়া নানা ধরনের বি-ভিটামিনস ও ফলিক এসিড উৎপন্ন করে ও ভিটামিনগুলোকে সংশ্লেষণ করে।
অধিকতর উপকারী ব্যাকটেরিয়াসমৃদ্ধ (প্রোবায়োটিকস্)
ফার্মেন্টেড খাবার ভাল ব্যাকটেরিয়ায় ভরপুর। বিশেষজ্ঞদের মতে অর্ধ কাপ/এক গাল গাঁজায়িত খাবারে প্রায় ১০ ট্রিলিয়ন উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে; যা দেহকোষের ১০ গুণ। তাই যদি আমরা বেশি আঁশযুক্ত খাবার খাই, তাহলে তা অন্ত্রের জন্য ভাল। উল্লেখ্য যে সমপরিমাণ প্রোবায়োটিক সাপ্লিমেন্ট এ থাকে মাত্র বিলিয়ন পরিমাণ।
রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ঘটায়
বেশিরভাগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (প্রায় ৮০ ভাগ) অন্ত্রের আশপাশ ঘিরে অবস্থান করে। গাঁজায়িত খাবার গ্রহণের মাধ্যমে সহজেই অন্ত্রের ঝিল্লি (গবসনৎধহব), যা প্রাকৃতিকভাবে সুরক্ষা করে; তার প্রতিরোধ কার্যকরিতার আরও উন্নয়ন ঘটানো যায়। অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার অভাব হলে তা রোগ-সৃষ্টিকারী জীবাণু সৃষ্টিতে উৎসাহ প্রদান করে। ফলে অন্ত্রের দেয়াল ফুলে যায়। মনে রাখা দরকার, এন্টিবায়োটিক গ্রহণের পরপর গাঁজায়িত খাবার গ্রহণ খুবই সাহায্যকারী।
ক্ষুধা নিবারক
অধিকতর ক্ষুধা নিবারণ করে অর্থাৎ প্রাত্যহিক খাদ্য তালিকায় গাঁজায়িত খাবার যোগ করলে খাবারের চিনির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমায়।
খাবারের স্বাদ বাড়ায়
গাঁজায়িত খাবার বাড়িতেই বানানো যায়। ইহা স্বাদ ও গন্ধ বাড়ায়। খাদ্যে প্রাকৃতিকভাবে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া খাদ্যের চিনি ও স্টার্চকে ভেঙে ল্যাকটিক এসিড উৎপন্ন করে। যা খারাপ ব্যাকটেরিয়াকে জন্মাতে বাধাগ্রস্ত করে, ফলে খাবার স্বাস্থ্যকরভাবে সংরক্ষিত হয় ও পচেনা। এ প্রক্রিয়ায় খাবার শুধু সংরক্ষণ দীর্ঘায়িত করেনা, খাবারের মানও আগের চেয়ে অধিকতর স্বাস্থ্যকর করে।
বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। পাশাপাশি দেশের সার্বিক পুষ্টি পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন ঘটলেও বিরাট জনগোষ্ঠী এখনও অপুষ্টিজনিত সমস্যার শিকার। এ সমস্যা দূরীকরণে               গাঁজায়িত খাদ্যের ব্যবহার বাড়াতে হবে। কেননা গাঁজায়িত খাবার বাজার থেকে ক্রয় না করে ঘরে বসে সহজেই প্রস্তুত করা যায়। গাঁজন প্রক্রিয়া খুবই সহজ, অধিক সময় ধরে রান্নারও প্রয়োজন হয় না। গাঁজন প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরিতে স্থানীয়ভাবে প্রাপ্য টাটকা ও অর্গানিক দ্রব্যাদি পছন্দের শীর্ষে রাখা প্রয়োজন। যে কোন প্রকার সবজি-ফল গাঁজায়িত করার জন্য ব্যবহার করা যায়, তবে কিছু কিছু সবজি-ফল গাঁজায়িত করার জন্য উত্তম, যেমন- বাঁধাকপি, শালগম, মূলা, বিটরুট, আপেল ইত্যাদি। তাছাড়া গাঁজন প্রক্রিয়ায় প্রিবায়োটিক সমৃদ্ধ খাদ্যসামগ্রী; যেমন- পেঁয়াজ, এসপ্যারাগাস, লিকস (বাচ্চা পেয়াজ কুশিসহ) এবং আর্টিচকস (অনেকটা শরীফা/আতাফলের মতো) এগুলো যোগ করা যায়। কেননা এসব উচ্চ আঁশ সমৃদ্ধ খাদ্য অন্ত্রে ভাল ব্যাকটেরিয়া তৈরিতে অত্যন্ত সহায়ক। য়
সদস্য পরিচালক, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, ফার্মগেট, মোবাইল: ০১৭৭৭৬৮৬৮৬৬, ই- মেইল: mmislam@yahoo.com

বিস্তারিত
আম সংগ্রহ ও সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা

আম সংগ্রহ ও সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা

ড. মোঃ শরফ উদ্দিন
স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ কৃষিতে প্রভূত উন্নয়ন সাধন করেছে। দানাজাতীয় শস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি ফলের উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে।  বিদেশি ফলের আমদানি নির্ভরতা অনেক কমে এসেছে এবং দেশি ফলের উৎপাদন ও সরবরাহ বেড়েছে। আম বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ও জনপ্রিয় ফল। এ দেশটি আয়তনে ক্ষুদ্র হলেও আম উৎপাদনে বিশে^ অষ্টম স্থান দখল করে আছে।  তারপরও দেশে ও বিদেশে এই সুস্বাদু মৌসুমি ফলটির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আম উৎপাদনকারী এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থা অনেকাংশেই এ আমের ওপর নির্ভরশীল যেখানে ৮০-৮৫ ভাগ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমের সাথে জড়িত থাকে। বর্তমানে যে ফলগুলো বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন হচ্ছে আম সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। অথচ এ আমের শুধুমাত্র সংগ্রহোত্তর ক্ষতি ৩০-৩১ ভাগ, যা বছর তিনেক আগেও ছিল ৪০ ভাগের উপরে। বিবিএস ২০১৯ সালের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট উৎপাদনের তিন ভাগের একভাগ (৩ লাখ টনের মতো) ভোক্তার কাছে পৌঁছানোর আগেই নষ্ট হয়ে যায়। তবে ডিএই, খামারবাড়ি, ঢাকা এর তথ্য মতে, এই ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৭ লাখ মেট্রিক টন। বিবিএস ও ডিএই সূত্র অনুযায়ী, এই ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৫০০-৩০০০ কোটি টাকার আম নষ্ট হয় প্রতি বছর। এর প্রধান কারণ হলো আমের গুণগতমান ভালো না হওয়া, আম সংগ্রহ, পরিবহণ ও বাজারজাতকরণে প্রয়োজনীয় সতর্কতা না নেয়া এবং আমের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণের জন্য কোনো ব্যবস্থা না থাকা। এই বিশাল ক্ষতি কমানোর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে আমের বৃদ্ধি পর্যায় হতে শুরু করে আম সংগ্রহ, বাছাইকরণ, পাঠানোর জন্য প্রস্তুতকরণ, পরিবহণ, বাজারজাতকরণ, সংরক্ষণ প্রতিটি ধাপে সতর্কতা ও ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আমের ক্ষতি কমানো এবং ভালোমানের আম ক্রেতার কাছে পেঁৗঁছান সম্ভব।
আমের বৃদ্ধিকালে আম বাগানের যত্ন
আমের গুটি বাধার পর পরই শুরু হয় গুটি ঝরা। এরপর বিভিন্ন রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ। তাই প্রথমে গুটি ঝরা কমানোর জন্য শুকনো মৌসুমে বাগানে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। সেচের সুবিধা না থাকলে গাছে পানি স্প্রে করা যেতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, আমের মটরদানা হতে শুরু করে মার্বেলাকৃতি সময় পর্যন্ত বোরন পাউডার অথবা বোরিক এসিড ১০ লিটার পানিতে ৬০ গ্রাম হারে মিশিয়ে ¯েপ্র করলে ফল ঝরা অনেকটা কমে যায়। আরেকটি গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, প্রতি লিটার পানিতে ২০ গ্রাম হারে              ইউরিয়া সার ভালোভাবে মিশিয়ে স্প্রে করেও আমের গুটি ঝরা কমানো যায়। এ ছাড়াও এই অবস্থায় নিয়মানুযায়ী            কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক একত্রে নির্দেশিত মাত্রায় মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। তবে মাটির অবস্থা বুঝে ২৫-৩০ দিন পরপর সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। সেক্ষেত্রে আমের বৃদ্ধি ও ফলন ভালো হবে। আমের ফল ছিদ্রকারী ও মাছি পোকা দমনের জন্য অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একটি কথা মনে রাখতে হবে, আমের গায়ে যতবেশি বৃষ্টির পানি পড়বে তত দ্রুত আমের রং নষ্ট হবে এবং সংরক্ষণকাল কমে যাবে। ফলে এ দেশের আবহাওয়ায় ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তিটি সবচেয়ে কার্যকর। আগাম ও মধ্যম জাতের ক্ষেত্রে গুটির বয়স ৪০-৫০ দিন এবং নাবী জাতের ক্ষেত্রে        ৫৫-৬০ দিন পর্যন্ত ব্যাগিং প্রযুক্তি গ্রহণ করলে বালাইনাশকের ব্যবহার প্রয়োজন হবে না। এ প্রযুক্তিটি ব্যবহারে ভালোমানের আমের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।
আম সংগ্রহ
আম সঠিক পরিপক্বতায় পৌঁছালেই তবে আমকে সংগ্রহ করা উচিত। পরিপূর্র্ণ পুষ্টতায় না পৌঁছানো পর্যন্ত গাছ থেকে আম সংগ্রহ করা উচিত নয় কারণ অপুষ্ট আম ঠিকমতো পাকে না এবং সঠিক রঙ ধারণ করে না। উপরন্ত উপরের খোসা কুঁচকে যায় ফলে বাজারমূল্যে কমে যায়। পরিপূর্ণভাবে পুষ্ট (সধঃঁৎব) হলে আমের উপরের অংশ অর্থাৎ বোঁটার নিচের ত্বক সামান্য হলুদাভ রঙ ধারণ করবে। আমের আপেক্ষিক গুরুত্ব ১.০১-১.০২ এর মধ্যে থাকবে অর্থাৎ পরিপক্ব আম পানিতে ডুবে যাবে। প্র্রাকৃতিকভাবে দু-একটা পাকা আমগাছ থেকে ঝরে পড়বে এবং পাখিতে আধাপাকা আম ঠোকরাবে। উপযুক্ত সময়ের আগে বা পরে সংগ্রহ করলে পরবর্তীতে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আম সংগ্রহ করতে হবে অত্যন্ত যত্নের সাথে। আম গাছ হতে আমকে দুইভাবে পাড়া যায়, হাত দিয়ে এবং সংগ্রাহক ব্যবহার করে। গাছের উচ্চতা কম হলে তা সহজেই হাত দ্বারা পাড়া সম্ভব কিন্তু গাছ বড় হলে বাঁশের তৈরি আম সংগ্রহক বা ঠুসি (গধহমড় যধৎাবংঃবৎ) ব্যবহার করা হয়। গাছ থেকে আম সংগ্রহ করতে হবে মেঘমুক্ত, রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে এবং সকাল বেলায়। আমকে কিছুক্ষণ উপুড় করে রাখতে হবে যাতে আঠা ঠিকমতো ঝরে পড়ে ও আমের গায়ে না লাগতে পারে। আম সংগ্রহ করার পর যত দ্রুত সম্ভব আমগুলোকে ঠাণ্ডা জায়গায় সরিয়ে নিতে হবে। বাজারজাতকরণের সুবিধার্থে দফায় দফায় আম পাড়া যেতে পারে। গাছ থেকে আম পাড়ার ১২-১৫ দিনের মধ্যে আমগাছে কীটনাশক বা ছত্রাকনাশক স্প্রে করা উচিত নয়।
বাছাইকরণ বা গ্রেডিং
সংগৃহীত আমের সুষ্ঠু বাজারজাতকরণের সুবিধার্থে বাছাইকরণ একান্ত প্রয়োজন। আঘাতপ্রাপ্ত, রোগাক্রান্ত, পোকার দ্বারা আক্রান্ত এবং গাছ পাকা আম পৃথক করে রাখতে হবে। কারণ এসব আম খুব তাড়াতাড়ি পচে যায়। দূরবর্তী বাজারে প্রেরণের জন্য স্বাভাবিক, উজ্জ্বল এবং পরিপুষ্ট আম বাছাই করে প্যাকিং করা উচিত। যে কোনো ফল প্যাকিংয়ের আগে ছোট, মাঝারি এবং বড় এই তিন ভাগে ভাগ করা উচিত যাতে প্যাকিং, পরিবহণ ও বাজারজাতকরণে সুবিধা হয়।
সংগ্রহোত্তর পচন দমন
আমগাছ থেকে পাড়ার পর আমের পচনজনিত রোগ দমন করতে হবে। আমকে রোগমুক্ত রাখা বা সংগৃহীত আমের পচন রোধ করার জন্য বালাইনাশকের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত। যেমন গরম পানিতে আম শোধন। এক্ষেত্রে গাছ থেকে ফল সংগ্রহের কিছুক্ষণ পরই ৫৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ৫-৭ মিনিট ডুবিয়ে রাখলে আমের সংগ্রহোত্তর পচন দমন করা যায়। তবে উন্নত দেশে আম সংগ্রহের পর নির্দিষ্ট মাত্রায় ছত্রাকনাশক ব্যবহার করে আমকে শোধন করা হয়।
প্যাকিং
আম সংগ্রহের পর ভোক্তার কাছে পৌঁছানোর জন্য আমের যে ব্যবস্থাপনা করা হয় তাকে প্যাকিং বলে। আম দূরবর্তী স্থানে পাঠানোর জন্য প্যাকিং একান্ত প্রয়োজন। কেননা আমের শরীর বেশ নরম এবং সামান্য আঘাতে জখম হতে পারে এবং তাতে জীবাণুর আক্রমণ ঘটতে পারে। আম প্যাকিংয়ের সময় নিম্নলিখিত নিয়ম মেনে চলা উচিত। আমাদের দেশে আম প্যাকিং এ প্রধানত বাঁশের ঝুড়ি ব্যবহার করা হয়। বাঁশের ঝুড়ির চাইতে ছিদ্রযুক্ত কাঠের বাক্সে আম পরিবহণ বেশি যুক্তিসঙ্গত। তবে সবচাইতে ভালো ব্যবস্থা হলো প্লাস্টিকের ক্রেটসে আম পরিবহণ। তবে সম্ভব হলে প্যাকেটের তলায় কিছু খড় বিছানো এবং প্রতিটি আমকে টিসু পেপার বা খবরের কাগজ দ্বারা মুড়িয়ে দেয়া ভালো। প্র্রত্যেক প্যাকেটের গায়ে ফলের নাম, জাতের নাম, প্রাপকের নাম ইত্যাদি লিখে রাখা উচিত। প্যাকিং এর আগে আমকে গরম পানিতে ট্রিটমেন্ট করলে আমের রঙ কিছুটা হলুদ হয়। বেশ কিছু দিন রোগমুক্ত থাকে এবং আমের স্বাদ বেড়ে যায়।
পরিবহণ
আমাদের দেশে আম প্রধানত সড়ক পথেই পরিবহণ করা হয় কারণ এতে সময় অল্প লাগে। তাছাড়া বাগান থেকে বাজারে আম পরিবহণের জন্য রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা, নৌকা ও গরুর গাড়ি ব্যবহার করা হয়। আম ফল পরিবহণে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। যেমন- যানবাহনে আম উঠানো, নামানো ও পরিবহণের সময় সতর্ক থাকতে হবে যেন ফলের গায়ে বা প্যাকেটে আঘাত না লাগে। পরিবহণে বেশি সময় নষ্ট না করাই ভালো, তাতে আম পচে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। পরিবহণ শেষ হলেই প্যাকেট খোলা ও আম গুদামজাত করা উচিত। গাদাগাদি করে আম পরিবহণ করলে নিচের আমে বেশি চাপ পড়ে ও আঘাত পাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
গুদামজাতকরণ
গাছ থেকে আম পাড়ার পর বিক্রয় পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে আমকে গুদামজাত বা সংরক্ষণ করার প্রয়োজন দেখা দেয়। যে কোনো ফল গাছ থেকে পাড়ার পরও তার মধ্যে বিভিন্ন জৈবিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে। তাই আম গুদামজাত করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। যেমন- যে ঘরে আম রাখা হবে তা অবশ্যই বাতাস চলাচলের উপযোগী ও শীতল হতে হবে। প্রয়োজনে ইলেকট্রিক ফ্যান ব্যবহার করা যেতে পারে।  আর্দ্র আবহাওয়ায় ও বদ্ধ ঘরে আম তাড়াতাড়ি পাকে এবং সহজে পচন ধরে যায়। তাই পাকা আম বেশি দিন গুদামে সংরক্ষণ না করে তাড়াতাড়ি বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে। ঘরের তাপমাত্রা যত কম হবে ততই উত্তম। তবে ২০-২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করলে ওজন হ্রাস কম হয়।
বাজারজাতকরণ
যে কোনো জিনিস বাজারজাতকরণ একটি সুন্দর আর্ট। দক্ষ ব্যবসায়ীগণ বিক্রয়যোগ্য দ্রব্যসামগ্রীকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলেন যাতে ক্রেতাসাধারণ অতি সহজেই আকৃষ্ট হয়। আম বাজারজাতকরণের সময় যেমন নিয়ম মেনে চলা উচিত। কিছু হলো-বেশি পাকা আম আগে বিক্রয় করতে হবে। কোনো আমে পচন দেখা মাত্রই আলাদা করে রাখতে হবে কারণ এর জীবাণু অন্যান্য সুস্থ আমকে আক্রমণ করে। ছোট, মাঝারি ও বড় তিন সাইজের ফল বাছাই করে বাজারজাত করতে হবে। বাজারজাতকৃত আমের গাদায় জাতের নাম এবং দর লিখে রাখতে হবে।
পরিশেষে, পছন্দনীয় ফলটির ক্ষতি কমানো এবং উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে। দেশের সকল ভোক্তাগণ মৌসুমি ফল আমের আসল স্বাদ পাবেন এই প্রত্যাশাই গবেষকদের। ভালোমানের আম উৎপাদন নিশ্চিত হলে দেশের মানুষের পুষ্টির চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে এবং আম রপ্তানির পরিমাণও বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। সেক্ষেত্রে আম চাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ভূমিকা রাখবে। য়

ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ফল বিভাগ, উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই, গাজীপুর, মোবাইল নং-০১৭১২১৫৭৯৮৯, ই-মেইল:sorofu@yahoo.com

 

বিস্তারিত
প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রযুক্তির মাধ্যমে কাঁঠালের বহুমুখী ব্যবহার

প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রযুক্তির মাধ্যমে কাঁঠালের বহুমুখী ব্যবহার

ড. মো: গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী১, মো: হাফিজুল হক খান২

কাঁঠাল পুষ্টিগুণে ভরপুর তাই এটি ফলের মধ্যে গুণের রাজা হিসেবে স্বীকৃত। কাঁঠালে আছে অধিক পরিমাণে আমিষ, শর্করা ও বিভিন্ন ভিটামিন যা মানবদেহের জন্য বিশেষ প্রয়োজন। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা কাঁঠালে ১.৮ গ্রাম, কাঁচা কাঁঠালে ২০৬ গ্রাম ও কাঁঠালের বীজে ৬.৬ গ্রাম আমিষ পাওয়া যায়। কাঁচা কাঁঠাল রোগব্যাধি উপশমে কার্যকর, অন্যদিকে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয় অনেকগুণ। এটি ক্যান্সারের মোকাবেলায়ও সাহায্য করে। এতে আছে বিপুল পরিমাণে খনিজ উপাদান যা হাড়ের গঠন ও হাড় শক্তিশালীকরণে এবং রক্তে শর্করা বা চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কাঁঠালে আছে শক্তিশালী এন্টি-অক্সিডেন্ট যা আমাদের দেহকে ক্ষতিকর ফ্র্রি-রেডিকেলস থেকে রক্ষা করে। এ ছাড়াও সর্দি-কাশি রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। কাঁঠালে বিদ্যমান ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস আলসার, উচ্চ রক্তচাপ এবং বার্ধক্য প্রতিরোধে সক্ষম। এ ফলে রয়েছে আয়রন, যা দেহের রক্তস্বল্পতা ও এটি আঁশালো হওয়ায় কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর করে। পাকা কাঁঠালে আয়রনের পরিমাণ ০.৫ মিগ্রা., কাঁচা কাঁঠালে ১.৭ মিগ্রা. এবং বীজে ১.৫ মিগ্রা. বিদ্যমান। কাঁঠালের অন্যতম উপযোগিতা হলো ভিটামিন ‘সি’। প্রাকৃতিকভাবে মানবদেহে ভিটামিন ‘সি’ তৈরি হয় না। ভিটামিন ‘সি’ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দাঁতের মাড়িকে শক্তিশালী করে। এতে আরও আছে ভিটামিন ‘বি৬’ যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তির জোগান কাঁঠাল থেকে পাওয়া সম্ভব। আবার অনেক খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞানী চেহারায় লাবণ্য দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য কাঁঠাল খাওয়ার পরামর্শ দেন।
দেশের প্রায় সব এলাকায় কম বেশি কাঁঠাল উৎপাদিত হয়ে থাকে। অঞ্চলগুলোর মধ্যে গাজীপুর, ময়মনসিংহ, নরসিংদী, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, যশোর, খুলনা, সুনামগঞ্জ, পার্বত্য চট্টগ্রামে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ও উৎকৃষ্টমানের কাঁঠাল উৎপন্ন হয়ে থাকে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, প্রায় প্রতি বছরই দাম খুব কম হওয়ায় হতাশাগ্রস্ত হৃদয়ে কাঁঠাল চাষি ও উদ্যোক্তাদের বিক্রয় করতে দেখা যায় বা বিক্রয় করতে একরকম বাধ্য হয়ে থাকেন। গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায় দেশে কাঁঠালের সংগ্রহোত্তর ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৫-৪৫ ভাগ বা কখনও কখনও এ অপচয়ের পরিমাণ অনেক বেশি হয়ে থাকে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) এর এক প্রতিবেদনে দেখা যায় আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় ৫০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ কাঁঠালের অপচয় হয়ে থাকে। কৃষক তার ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হচ্ছে বলে অনেক কৃষকের সাথে কথা বলে জানা যায়। লক্ষণীয় যে, কৃষক সময়মতো বিক্রয় করতে না পারা ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত না হওয়ায় অনেকে কাঁঠাল গাছ বা কাঁঠালের বাগান কেটে ফেলছেন ও এর পরিবর্তে অন্য ফসল বিশেষত উচ্চমূল্যের ফসল উৎপাদনের পরিকল্পনা করছেন।
পাকা কাঁঠাল খাওয়ার প্রবণতা আমাদের দেশে খুব বেশি।         গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলাস্থ জৈনা বাজার ও মাওনা এলাকার কৃষক, ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কাঁঠালকে শুধুমাত্র পাকা ফল হিসেবে খাওয়ার কারণে এটি যখন পাঁকতে শুরু করে তখন একসাথে বেশির ভাগ কাঁঠালই পেকে যায়। ফলে সে সময় গাছ হতে ৩০-৪০ ভাগ কাঁঠাল প্রাকৃতিক ভাবে পড়ে যায়, যা খাওয়ার উপযোগী থাকে না অর্থাৎ ব্যাপক কাঁঠাল এক্ষেত্রে নষ্ট হয়ে থাকে। সে সময় অনেকের মতে গরু বা পশু পাখিও পাকা কাঁঠাল খায় না। কিন্তু কাঁঠালকে বাণিজ্যিকীকরণের যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে এবং পরিচর্যা ও প্রক্রিয়াজাতকৃত খাদ্যসামগ্রী তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করা হলে এ ফলটিকে সারা বছর খাওয়ার টেবিলে আমরা পেতে পারি।
কাঁঠালের বহুমুখী ব্যবহার বাড়াতে এবং অপচয় কমাতে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কেজিএফ এর অর্থায়নে পোস্টহারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগ ও নিউভিশন সলিউশন লিমিটেড যৌথভাবে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যই হলোÑ কাঁঠালের উৎপাদন, সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণন বিষয়কে সম্প্রসারিত করার মাধ্যমে অপচয় রোধ করা। কাঁঠালকে সঠিকভাবে কাঁচা থেকে ব্যবহার করা গেলে বহুমুখী ব্যবহারের মাধ্যমে বহলাংশে অপচয় কমে আসবে এবং আমাদের দেশেই থাইল্যান্ডের বা ভিয়েতনামের তৈরি কাঁঠালের চিপস্, ভেজিটেবল মিট, ফ্র্রেশ-কাট, ফ্রোজেন, অসমোটিক ডিহাইড্রেটেড প্রডাক্ট, রেডি-টু-কুক, ভিনেগার, কাঁঠালসত্ত্ব, জ্যাম, আচারসহ বহুবিধ উৎকৃষ্টমানের ও মুখরোচক খাদ্য দ্রব্য অনায়াসে তৈরি করা সম্ভব হবে। প্রকল্পের বাস্তবায়নের মাধ্যমে কৃষকদের নিয়ে বিভিন্ন গ্রুপ গঠন করা হবে এবং তাদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করে প্রক্রিয়াজাতকৃত খাদ্যসামগ্রী তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করা হবে এবং বিভিন্ন প্রচারণামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে কাঁঠালকে জনপ্রিয় করার বিবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এর তথ্য মোতাবেক বিশ্বে বছরে প্রায় ৩৭ লাখ টন কাঁঠাল উৎপাদিত হয় যার অধিকাংশই উৎপাদিত হয় ভারতে (১৮ লাখ টন) এর পরের অবস্থান বাংলাদেশ (১০ লাখ টন)। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড। পুষ্টি বিবেচনায় চীন, জাপান, মালয়েশিয়াসহ পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশই কাঁঠালকে প্রক্রিয়াজাতকরণ কাজে ব্যবহার করায় উৎপাদন চলমান রাখতে বিভিন্ন দেশ হতে কাঁঠাল আমদানিও করছে। এ ক্ষেত্রে             উৎকৃষ্টমানের ও সুনির্দিষ্ট জাত উদ্ভাবন এবং সঠিক পরিপক্বতা নির্বাচনের মাধ্যমে বিদেশে রপ্তানির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে যা দেশের কৃষক ও উদ্যোক্তাকে উৎসাহিত ও উদ্বুদ্ধ করবে। কাঁঠালকে জনপ্রিয় ও যথাযথ ব্যবহার বৃদ্ধি করার প্রয়াসে                বিএআরআই-এর উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র এ পর্যন্ত ৩টি জাত (বারি কাঁঠাল-১, বারি কাঁঠাল-২ ও বারি কাঁঠাল-৩) উদ্ভাবন করেছে, যা বছরব্যাপী ভোক্তাদের নিকট সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
কাঁঠালের বহুবিধ খাবারের মধ্যে কাঁঠালের বীচি খুবই           পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাবার, যা দিয়ে ভর্তা, সবজি, ফ্রাইড প্রডাক্ট, কেক, হালুয়াসহ রকমারি খাদ্যসামগ্রী সহজেই তৈরি করা যায়। প্রবাসীদের কাছে এর বীচির কদর খুব বেশি। আমেরিকা, ইউরোপ, কানাডা, অস্টেলিয়াসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই দক্ষিণ এশিয়ার সুপার-শপগুলোতে ফ্রোজেন অবস্থায় কেজি প্রতি   ৮০০-১০০০ টাকা দরে কাঁঠালের বীচি বিক্রয় করতে দেখা যায়। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, চীন, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়াতে কাঁঠালের তৈরি বিভিন্ন খাদ্য বিশেষ করে চিপস, অসমোটিক ড্রাইড, আচার, জেমসহ হরেক রকমের খাদ্য পণ্য ব্যাপক হারে চোখে পড়ে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের কেরালায় কাঁচা কাঁঠাল খুবই জনপ্রিয়। সেখানে ভেজিটেবল মিট সহ বিভিন্ন উপকরণে ১০০ প্রকার খাবার কাঁচা কাঁঠাল দিয়ে তৈরি করে খাওয়ার প্রচলন আছে। কাঁঠালের বহুমুখী ব্যবহার খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। এসডিজি এর লক্ষ্য পূরণেও সহায়ক হবে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। সেক্ষেত্রে কাঁঠালকে প্রথমেই সবজি হিসেবে খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে, যা বিএআরআই এর পোস্টহারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগের গবেষণায় ৫৫ দিন হতে ৬৫ দিনের অপরিপক্ব কাঁঠালকে ‘ভেজিটেবল মিট’ হিসেবে উপযোগী বলে        প্রতীয়মান হয়েছে। এ কাঁঠালকে এন্টিমাইক্রোবিয়াল ও সংগ্রহোত্তর পরিচর্যার মাধ্যমে ডিপফ্রিজে ৬-৮ মাস গুণগতমান অক্ষুণ্ন রেখে সহজেই সংরক্ষণ করা যায়।
দেশে উৎপাদিত কাঁঠালের খুব অল্প পরিমাণে বিদেশে রপ্তানি হয় এবং এর ক্রেতা অধিকাংশই প্রবাসী বাংলাদেশি।  আমাদের দেশের কাঁঠাল ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইংল্যান্ড, আমেরিকা ও মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে কাতার, ওমান, বাহরাইন, সৌদি আরব, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। উত্তম কৃষি চর্চা, উন্নত প্যাকেজিং প্রযুক্তি, সঠিক পরিপক্বতা নির্ধারণ, সুনির্দিষ্ট জাত নির্বাচন, প্যাকিং হাউজ সুবিধাসহ যথাযথ প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রযুক্তি প্রয়োগ করার মাধ্যমে জাতীয় ফল কাঁঠালকে দেশের গন্ডী পেরিয়ে বিদেশে রপ্তানি বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হবে, যা কৃষকের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি যেমন নিশ্চিত করবে তেমনি অধিক পুষ্টিসমৃদ্ধ ফল কাঁঠালের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। সর্বোপরি খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বিধানসহ দেশের অর্থনীতিকে বেগবান করবে। য়

১খাদ্য প্রযুক্তি বিষয়ক গবেষক ও ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ২মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, পোস্টহারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই), গাজীপুর, মোবাইল: ০১৭১২২৭১১৬৩, ই-মেইল: ferdous613@gmail.com

 

বিস্তারিত
জনপ্রিয় সুগন্ধি ধানের চাষ ও বাহারি ব্যবহার

জনপ্রিয় সুগন্ধি ধানের চাষ ও বাহারি ব্যবহার
কৃষিবিদ ড. মুহ: রেজাউল ইসলাম

সুগন্ধি চাল তৈরি হয় বিশেষ জাতের ধান থেকে যা স্বাদে ও গন্ধে ভরপুর। এদেশে এলাকাভিত্তিক প্রচুর সুগন্ধি ধান আবাদের প্রচলন আছে। দেশি জাতগুলোর চাল আকারে ছোট ও অনেকটা গোলাকার হয়। সুগন্ধি ধানের জাতগুলোর বেশির ভাগই আলোক সংবেদনশীল, দিনের দৈর্ঘ্য কমে গেলে হেমন্তকালে ফুল ও দানা গঠন হয়। আর এ কারণে প্রধানত আমন মৌসুমে (খরিফ-২ তে) সুগন্ধি ধানের চাষ করা হয়। এ মৌসুমে প্রায় ১০% জমিতে সুগন্ধি ধানের আবাদ করা হয়। তবে বাংলাদেশের আবহাওয়া ও পরিবেশে আমন ও বোরো দুই মৌসুমে এ সুগন্ধি ধান চাষ করা সম্ভব। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মধ্যে উত্তরাঞ্চলে সুগন্ধি ধানের চাষ সবচেয়ে বেশি হয়। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে দিনাজপুর জেলা। এছাড়া ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, রংপুর, নওগাঁ এবং রাজশাহী জেলায় সুগন্ধি ধান চাষ হয়। উল্লেখ্য এ চাল বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
উত্তরাঞ্চলে উপযোগী সুগন্ধি ধানের জাতগুলো
আমাদের দেশে আমন মৌসুমে সুগন্ধি ধানের উচ্চফলনশীল জাতের মধ্যে বিআর৫, ব্রি ধান৩৪, ব্রি ধান৩৭, ব্রি ধান৩৮, ব্রি ধান৭০, ব্রি ধান৮০, বিনা ধান-৯ ও বিনাধান-১৩ এবং স্থানীয় জাতের মধ্যে কাটারিভোগ, কালিজিরা, চল্লিশাজিরা, চিনিগুঁড়া (জিরাকাটারী), ফিলিপাইন কাটারী, জটাকাটারী, চিনিকাটারী, চিনি আতপ, বাদশাভোগ, খাসকানী, বেগুনবিচি, দুলাভোগ, উকনী, কৃষ্ণভোগ, তুলসীমালা উল্লেখযোগ্য। ব্রি ধান৩৪ স্থানীয় সুগন্ধি জাতের ধান চিনিগুড়া বা কালিজিরার মতোই অথচ ফলন প্রায় দ্বিগুণ। কৃষকেরা এ ধানের আবাদ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। ব্রিধান৭০ ও ব্রিধান ৮০ আমন মৌসুমে ব্রি কর্তৃক সর্বশেষ উচ্চফলনশীল সুগন্ধি ধান এবং আলোক অসংবেদনশীল। গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ৪.৫-৫.০ মেট্রিক টন, যা কাটারিভোগ ধানের চেয়ে দ্বিগুণ। ব্রি ধান৭০ ধানের চাল দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী কাটারি ভোগের চাইতে আরও বেশি লম্বা। আর ব্রি ধান৮০ থাইল্যান্ডের জনপ্রিয় জেসমিন ধানের মতো, সুগন্ধিযুক্ত এবং খেতেও সুস্বাদু। অপরদিকে বোরো মৌসুমে সুগন্ধিযুক্ত আধুনিক জাত হচ্ছে ব্র্রিধান৫০ (বাংলা মতি)। এ জাতের চালের মান বাসমতির মতোই। হেক্টর প্রতিফলন ৬ মেট্রিক টন। তবে চাল তৈরির ক্ষেত্রে বিশেষ পদ্ধতি এবং সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।
মাটি ও আবহাওয়া
সব ধরনের মাটিই সুগন্ধি ধানের উপযোগী, তবে দো-আঁশ ও পলি দো-আঁশ মাটি উত্তম। ফুল আসার সময় থেকে পরিপক্বতা পর্যন্ত বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এসময় প্রয়োজন সামান্য আর্দ্রতা, মৃদু বাতাস, শীতল রাত্রি (২০-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এবং রৌদ্রজ্জ¦ল আলোকিত দিন (২৫-৩২ডিগ্রি সেলসিয়াস)।
চাষাবাদ পদ্ধতি
রোপা আমন মৌসুমে ৫-২৫ জুলাই (২১ আষাঢ়-১০ শ্রাবণ) পর্যন্ত বীজতলায় বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। ২৫-৩০ দিনের চারা প্রতি গুছিতে ২-৩টি করে ২০ সেন্টিমিটারী১৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে রোপণ করা হয়।
সার ব্যবস্থাপনা : সুগন্ধি ধানের জমিতে আমন মৌসুমে প্রতি বিঘা বা ৩৩ শতকে ইউরিয়া ১৮-২০ কেজি, টিএসপি ১০-১২ কেজি, এমওপি ১৩ কেজি, জিপসাম ৯ কেজি, দস্তা ১.৩ কেজি হারে প্রয়োগ করতে হয়। ইউরিয়া সার সমান ৩ কিস্তিতে জমি তৈরির শেষ পর্যায়ে, রোপণের ২০-২৫ এবং ৪৫ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে যে, স্থানীয় সুগন্ধি ধানের জাতে ইউরিয়ার পরিমাণ সাধারণত কম লাগে। তবে এলসিসিভিত্তিক ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা উত্তম। শুধু রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে উফশী জাতে স্থানীয় জাতের ধানের মতো
সুগন্ধিযুক্ত হয় না। তাই জৈবসার ব্যবহারের মাধ্যমে চাষাবাদ করা হলে সুগন্ধ তুলনামূলকভাবে বেশি হয়।
রোপণের পর ৩০-৪০ দিন জমি আগাছা মুক্ত রাখা আবশ্যক। চাল শক্ত হওয়া পর্যন্ত প্রয়োজনে সম্পূরক সেচ দিতে হবে। সুগন্ধি ধানের জাতগুলো সাধারণত ব্লাস্ট রোগের প্রতি সংবেদনশীল হয়ে থাকে। সেজন্য আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। সুগন্ধি শীষ বের হওয়ার আগে ট্রাইসাইক্লাজল/স্ট্রবিন গ্রুপের অনুমোদিত ছত্রাকনাশক অনুমোদিত মাত্রায় ১০ লিটার পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে শেষ বিকালে ৫-৭ দিন অন্তর দুইবার প্রয়োগ করতে হবে। রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা দিলে সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করতে হবে।
ফসল কর্তন ও ফলন
ফসল কর্তনের উপযুক্ত সময় ০১-১৫ অগ্রহায়ণ (১৫-৩০ নভেম্বর)। অধিকাংশ ধানের ছড়ায় শতকরা ৮০ ভাগ ধান পাকা অবস্থাতেই ধান কাটা হয়ে থাকে। সংরক্ষণের জন্য আর্দ্রতা ১২ ভাগের নিচে রাখতে হবে। জাত ও পরিচর্যা ভেদে হেক্টরপ্রতি ২.০-৫.৫ টন ধান উৎপাদন করা সম্ভব।
সুগন্ধি চালের বাহারি ব্যবহার
কাটারি ভোগ ধানের আতপ চালের পোলাও জনপ্রিয়তার শীর্ষে। কাটারিভোগ ধানের চিড়া হয় হালকা ধবধবে সাদা ও মিষ্টিসুগন্ধ। আদিকাল থেকে সুগন্ধি চাল অভিজাত শ্রেণির আচার অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আজও দিনাজপুরের কাটারিভোগ সুগন্ধি চাল দেশি-বিদেশি অতিথি আপ্যায়নে সুনাম বজায় রেখেছে। সুগন্ধি চালের পোলাও ছাড়া পিঠা-পুলি, বিরিয়ানি, কাচ্চি, জর্দা, ভুনা-খিচুড়ি, পায়েশ ও ফিরনিসহ বেশ চমৎকার ও সুস্বাদু-যা জিভে জল আনে। বিয়ে, পূজা-পার্বণ, সেমিনার, ওয়ার্কশপসহ সব ধরনের অনুষ্ঠানে সুগন্ধি চালের ব্যবহার অতি জনপ্রিয়। অনেক সচ্ছল পরিবারে, বনেদি ঘরে সাধারণ চালের পরিবর্তে সুগন্ধি (কাটারিভোগ, বাংলামতি) সিদ্ধ চালের ভাত খাওয়ার রেওয়াজ অহরহ দেখা যায়। দিন দিন এ চালের যেমন ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি উৎপাদনও বাড়ছে। চাইনিজ, ইটালিয়ান, ইন্ডিয়ান হোটেল/রেস্টুরেন্ট, পাঁচ তারকা হোটেল/মোটেল পর্যটন কেন্দ্রে প্রধানত সুগন্ধি চালের ভাত, পোলাও নানা পদের খাবার পরিবেশনে সুগন্ধি চাল ব্যবহার করা হয়।
সুগন্ধি চালের বাহারি ব্যবহার সম্প্রসারণে করণীয়
সুগন্ধি চালের বাহারি ব্যবহার সম্প্রসারণ কোন একক প্রতিষ্ঠানের সম্ভব নয়। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তর/প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে নতুন নতুন কর্মসূচির নিয়ে সম্প্রসারণ করা যেতে পারে। যেমন-সুগন্ধিচালে ইনস্ট্যান্ট ফাস্ট ফুড তৈরি করা যেতে পারে। আজকাল দেশ-বিদেশে নানা পদের আধাসিদ্ধ চালের সঙ্গে কিছু পরিমাণ ডাল, সবজি ও প্রক্রিয়াজাত মাংশ একত্রে মিশিয়ে ম্যালামাইন জাতীয় গ্যাস বা মগে সংরক্ষণ করে তা সিল করে বিপণন করা হয়। ফাস্ট ফুড দোকান থেকে তা কিনে উপরের মোড়ক সরিয়ে তাতে পরিমাণ মতো গরম পানি মেশানো হলে তা উপাদেয় পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। উঠতি বয়সের যুবক-যুবতী বিশেষ করে স্কুল কলেজ পড়ুয়া            ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে এ খাবার অতি জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। সুগন্ধি চাল দিয়ে এ ধরনের ইনস্ট্যান্ট ফাস্ট ফুড তৈরি ও বিপণনে কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব নিলে সুগন্ধিচাল জনপ্রিয়করণে গুরুত্বপূর্ণ এক নতুন মাত্রা যোগ হতে পারে। সেসাথে ফাস্ট ফুড তৈরির রেসিপি তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করে তা উৎপাদনে সংশ্লিষ্ট শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বাজারজাতকরণে অনুপ্রাণিত করা যেতে পারে।
সুগন্ধি চালের ব্যবহারে উদ্বুদ্ধকরণ ব্যবস্থাকে বেগবান করতে হলে এলাকাভিত্তিক দিনব্যাপী কিছু সংখ্যক খাদ্য মেলার আয়োজন করা যেতে পারে। সেখানে বিদেশি মিশনসহ বিভিন্ন তালিকাভুক্ত হোটেল, রেস্তোরাঁ ও মোটেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাওয়াতপত্র বা ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ ব্যবস্থায়            অংশগ্রহণকারীরা খাদ্য তৈরির প্রক্রিয়া ও দেশি সুগন্ধি চালের নানা গুণাগুণ সরেজমিন দেখে উদ্বুদ্ধ ও আকর্ষিত করা সম্ভব। দেশি সুগন্ধিচাল সংশ্লিষ্ট হরেক রকম খাবারের তৈরি রেসিপি ভিডিও তৈরি করে প্রচার উপযোগি দিকগুলো তা হোটেল              কর্তৃপক্ষের কাছে সরবরাহ করে তাদের এ খাবার পরিবেশনে আকৃষ্ট করার ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। দেশি সুগন্ধি চালের উপকারী ও আকর্ষণীয় দিকগুলো সুন্দরভাবে ভিডিও ডকুমেন্টারি মাধ্যমে প্রচারের সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যেতে পারে।
 রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে সুগন্ধি চালের তৈরি দেশি সুগন্ধিচালের তৈরি নানা পদের আকর্ষণীয় খাদ্য পরিবেশিত হয়। সে বিষয়ে উদ্বুদ্ধকরণের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও যেন একই পন্থা অবলম্বন করতে সক্রিয় হয় তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বিভিন্ন গণমাধ্যম, সরকারি/বেসরকারি রেডিও, টেলিভিশনে কৃষি বিষয়ক সংশ্লিষ্ট সব অনুষ্ঠানে এমনকি টকশোতে দেশি সুগন্ধিচাল ও তা থেকে তৈরি খাদ্যের গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরে ব্যাপক প্রচার ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। আঞ্চলিক ও কেন্দ্রীয়ভাবে সেমিনার/ওয়ার্কশপ আয়োজনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে যেখানে অংশগ্রহণকারী হিসেবে থাকবে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানী, সম্প্রসারণবিদ, বিভিন্ন হোটেলের বাবুর্চি, ম্যানেজার, উৎপাদনকারী ও বিভিন্ন মিডিয়া ব্যক্তিবর্গ।   আলোচনায় উঠে আসা সুপারিশমালার ভিত্তিতে উৎপাদনকারীরা প্যাকিং, গ্রেডিং, লেবেলিং এর মান উন্নয়ন এবং তা থেকে নিত্য নতুন সুস্বাদু খাবার তৈরি ও পরিবেশন জনপ্রিয়করণে সংশ্লিষ্ট কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হবে।
বর্তমানে সুগন্ধি চালের উৎপাদন বাড়ছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে এ দেশি অতি উন্নতমানের সুগন্ধি চালের জাতগুলোর পরিবর্তে বিদেশি বাসমতি জাতের চাল ব্যবহার প্রচলন দেখা যায়। অথচ নিজ দেশের উৎপাদিত সুগন্ধি চাল ব্যবহার করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়াসহ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব। য়

১আঞ্চলিক বেতার কৃষি অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, রংপুর; ২কৃষিবিদ মো. রাকিবুল হাসান, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ব্রি, রংপুর।

 

বিস্তারিত
নিরাপদ ফলমূল উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ

নিরাপদ ফলমূল উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ
কৃষিবিদ মো. রাজু আহমেদ

কৃষি প্রধান এদেশের জাতীয় আয় বৃদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচন ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে ফলমূলের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুষ্টিমানের বিচারে আমাদের দৈনিক খাদ্যের তালিকায় ফলমূলের উপস্থিতি অত্যন্ত জরুরি। ফলমূলে আছে বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ লবণ যা রোগের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করতে পারে। ফল আমাদের দেশে একটি জনপ্রিয় উদ্যানতাত্ত্বিক ফসল। রং, গন্ধ, স্বাদ ও পুষ্টির বিবেচনায় বাংলাদেশের ফল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও বৈচিত্র্যময়। ফল রান্না ছাড়া সরাসরি খাওয়া হয় বিধায় এতে বিদ্যমান সবটুকু পুষ্টি গ্রহণ করা যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন ফলে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধকারী উপাদান এন্থোসায়ানিন ও লাইকোপেন। বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে ফলমূল উৎপাদিত হলেও নিরাপদ ফল উৎপাদনে বেশ ঘাটতি যেমন রয়েছে তেমনি বাজারজাতকরণেও আছে নানা সমস্যা। উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফল উৎপাদনে  প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত অনুসরণ করে নিজেদের পুষ্টি চাহিদা পূরণ, আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ উদ্বৃত্ত নিরাপদ ফলমূল বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
নিরাপদ ফলমূল উৎপাদনে উত্তম কৃষি চর্চা (এঅচ)
উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনা উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলার মধ্যে ফলমূল উৎপাদনের কাজে নিয়োজিত মাঠকর্মী, কৃষক-কৃষানি এবং ভোক্তাগণের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। পরিবেশ, মাটি ও পানিকে দূষণ থেকে রক্ষা করে। রাসায়নিক উপাদানের পরিমিত ব্যবহার নিশ্চিত করে। স্বাস্থ্যকর, দূষণহীন এবং উচ্চ মানসম্পন্ন নিরাপদ ফলমূল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টিমান বৃদ্ধি করে। কৃষি পরিবারের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করে। জীব বৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষা করে।
উত্তম কৃষি পদ্ধতির এই মূলনীতিগুলো অবশ্যই জমি নির্বাচন, জমি তৈরি, ফসল উৎপাদনের সময়, ফসল সংগ্রহ এবং ফসল সংগ্রহোত্তর সময় অনুসরণ করতে হবে।  
১। পরিষ্কার মাটি/মাঠ : পরিষ্কার মাঠ বা মাটি, মাটির মধ্যে দূষণকারী অণুজীবসমূহের উপস্থিতির সম্ভাবনা কমিয়ে দেয় যা মূলত বিভিন্ন জৈব সার ও অন্যান্য পশু-পাখির মলমূত্র থেকে হতে পারে। উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি এই জৈব সারগুলোর সঠিকভাবে পচানো, ব্যবহার এবং সংরক্ষণ নিশ্চিত করে । এছাড়াও গৃহপালিত পশু-পাখি ফসলের মাঠ থেকে দূরে রাখার মাধ্যমে মাটিতে দূষণকারী অণুজীবের উপস্থিতি কমায়।
২। পরিষ্কার পানি : ফলমূল ধৌত করা, ঠাণ্ডা করা এবং অন্যান্য কাজে যে পানি ব্যবহার করা হয় তা অবশ্যই খাওয়ার উপযোগী পানি। প্যাকিং এর সময় যে বরফ ব্যবহার করা হয় তাও অবশ্যই খাওয়ার উপযোগী পানি দিয়ে করতে হবে। পুকুর বা নালার পানি হলে তা অবশ্যই পশু-পাখি দ্বারা দূষণ এবং অন্য কোন মাধ্যমের নোংরা পানি থেকে মুক্ত হতে হবে। সেচের জন্য এবং স্প্রে করার কাজে যে পানি ব্যবহৃত হবে তা অবশ্যই মনুষ্য বাহিত রোগ জীবাণু থেকে মুক্ত থাকতে হবে।
৩। পরিষ্কার হাত : সকল প্রকার কাজ যেমন: মাঠ পরিচর্যা, ফসল সংগ্রহ, ফসল বাছাইকরণ, ফসল প্যাকিং ইত্যাদি সকল কাজের আগে মাঠকর্মীদের অবশ্যই ভালো করে হাত ধৌত করতে হবে এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করতে হবে। ক্রেতারা যারা ফলমূল কিনতে আসবে তাদের জন্য ও হাত বা শরীরের অন্যান্য অংশ পরিষ্কার করার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৪। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাজের জায়গা: প্যাকিং করার বাক্স, প্যাকিং এর কাজে ব্যবহৃত জায়গা/টেবিল/মেঝে, সংরক্ষণাগার, পরিবহণকারী ট্রাক/গাড়ি ইত্যাদি অবশ্যই নিয়মিত ভালোভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছণ্নতা এবং জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে। ফসলের মাঠে, প্যাকিং হাউজে, পরিবহণ ইত্যাদিতে ব্যবহৃত সকল প্রকার যন্ত্রাংশ কাজের আগে এবং পরে অবশ্যই প্রতিদিন পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
উত্তম কৃষি চর্চা (এঅচ) বাস্তবায়ন পদ্ধতি
উত্তম কৃষি পদ্ধতি অনুযায়ী যে সকল ধাপসমূহ অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে তা নিম্নে বর্ণনা করা হলো-
১. কৃষক/মাঠ কর্মীদের উন্নত কাজের পরিবেশ ২. চাষাবাদের জন্য সঠিক স্থান নির্বাচন ৩. সঠিক উপায়ে মাটি প্রস্তুত ৪. চাষাবাদের পরিবেশ, চাষ পদ্ধতি এবং ফসল উৎপাদন ৫. পানির গুণাগুণ ও তার যথোপযুক্ত ব্যবহার ৬. সঠিক উপায়ে কীটনাশক/বালাইনাশক এর ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা ৭. সঠিক উপায়ে রাসায়নিক সারের ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা ৮. উত্তম উপায়ে জৈবসার প্রস্তুত, ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা ৯. বিভিন্ন প্রকার পশু-পাখির যত্ন ১০. ফসল সংগ্রহকালীন সঠিক ব্যবস্থাপনা             ১১. ফসল সংগ্রহোত্তর সঠিক ব্যবস্থাপনা ১২. উৎপাদনের সকল পর্যায়ের বিভিন্ন তথ্য সংরক্ষণ।
উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করার মাধ্যমে উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যন্ত  প্রতিটি পর্যায়ে প্রায় শতভাগ ফসল নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করা যায়।
ফলমূল বাজারজাতকরণ
কৃষি নির্ভর এদেশের গ্রামীণ অর্থনীতির প্রধান ধারক হলো           কৃষিপণ্যের বাজারজাতকরণ ব্যবস্থা। বাংলাদেশে কৃষি পণ্যের বাজারজাতকরণ ব্যবস্থা অতি সনতনী এবং বহুলাংশে অনুৎপাদনশীল। বাংলাদেশে প্রধানত তিন ধরনের কৃষি বাজার দেখা যায়। ১। প্রাথমিক বাজার হলো একেবারে গ্রাম্য বাজার। যেখানে সাধারণত কৃষকগণ অল্প বিস্তর জিনিস সংগ্রহ করে খুচরা কেনাবেচা করে থাকেন। ২। মাধ্যমিক বাজারসমূহ পাইকারি বাজারের সমন্বয়ে গঠিত। এগুলো উৎপাদন এলাকায় সংগ্রহকরণ বাজার হিসেবে এবং ভোগ্য এলাকায় বণ্টন বাজার হিসেবে কাজ করে। ৩। প্রান্তিক বাজারগুলো অভ্যন্তরীণ ও রপ্তানি বাণিজ্য সংক্রান্ত কতিপয় কার্যাবলী সম্পাদন করে।
কৃষিপণ্য সহজে বাজারজাতকরণ করতে হলে উন্নতমানের পণ্য উৎপাদন করতে হবে; পণ্য মান, আকার, বর্ণনা ও নমুনার ভিত্তিতে বাছাই করতে হবে; পাইকারি বাজারে সরবরাহ করতে হবে; বাজার চাহিদার দিকে নজর রাখতে হবে; বাজার দরসহ বাজার তথ্য সংগ্রহ করতে হবে; ফসল অপেক্ষাকৃত সহনীয়ভাবে প্যাকিং করতে হবে; ভালোভাবে পরিবহণ করতে হবে, যাতে পণ্যের গুণগতমান ও রং ক্ষতিগ্রস্ত না হয়; বাজারে অযাচিত হয়রানি/ঝুঁকি হ্রাস করতে হবে; বিপণন ব্যয় কম রাখা, অর্থাৎ কৃষক বান্ধব পরিবেশ থাকতে হবে; উন্নত ওজন মাপ পদ্ধতি অনুসরণ করা; পণ্য সংরক্ষণের ভালো ব্যবস্থা থাকা। বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল প্লাটফরম (ঋড়ড়ফ ঋড়ৎ ঘধঃরড়হ) যঃঃঢ়ং://ভড়ড়ফভড়ৎহধঃরড়হ. মড়া.নফ/ যেখানে ফলমূল বাজারজাতকরণে প্রয়োজনে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
এছাড়াও ফলের ফলমূলের ভাল দাম পাবার জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া দরকার।
বাজারে সঠিক ক্রেতা চিহ্নিতকরণ, তাদের চাহিদা ও পছন্দ জানা, বাজারমুখী উৎপাদন পরিকল্পনা, পছন্দ অনুযায়ী সঠিক  পণ্য (মান ও ধরন), সঠিক সময়ে, সঠিক স্থানে, সঠিক মাত্রায় সঠিক মূল্যেপৌঁছানো, সরবরাহ পূর্ণমাত্রায় নিয়ন্ত্রণ করা, পণ্য সম্পর্কীয় তথ্য প্রচারের ব্যবস্থা করা, প্রাতিষ্ঠানিক ক্রেতা /প্রক্রিয়াজাতকারী/ ব্যবসায়ীদের সাথে আগাম চুক্তি করা যেতে পারে।
বর্তমানে চালু বিপণন চ্যানেলগুলো আরো উন্নত করার জন্য নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ জানতে হবে-
সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা, সংশোধনের ব্যবস্থা নেওয়া, বিপণন কার্যাবলী বিজ্ঞান ভিত্তিকভাবে সম্পূর্ণকরণ, প্রশিক্ষণ, মোটিভেশন, ভ্যালু চেইন এ্যপ্রোচ, গ্রুপ বিপণন ব্যবস্থাপনা।
সর্বোপরি উত্তম কৃষি চর্চা (এঅচ) সম্পর্কিত নীতিমালা বাস্তবায়নের পর যে সকল কৃষক/কৃষানি কমিউনিটি অথবা কৃষি প্রতিষ্ঠান নীতিমালা অনুযায়ী চাষ করতে আগ্রহী তাদের এঅচ সম্পর্কিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। ইতোমধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় এর অধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ‘ঢাকা, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ জেলায় উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফল এবং সবজি উৎপাদন, বাজারজাতকরণ কর্মসূচি’ এর আওতায় কৃষক প্রশিক্ষণ চলমান রেখেছে। যে সকল আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এঅচ নিয়ে কাজ করে (যেমন- ঋঅঙ) তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে। বিদেশে ফলমূল রপ্তানিতে নিরাপত্তা ও গুণগত মান অক্ষুণ্ন রাখার লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর অধীন ঢাকার শ্যামপুরে একটি সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউজ নির্মাণ করেছে যার মাধ্যমে বিদেশে ফলমূল রপ্তানি চলমান আছে। ফলমূল রপ্তানিতে বাংলাদেশের এঅচ নীতিমালা দ্রুত বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তাদের চাহিদা অনুযায়ী ফলমূল রপ্তানি আরও ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
কর্মসূচি পরিচালক, ঢাকা, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ জেলায় উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফল ও সবজি উৎপাদন বাজারজাতকরণ কর্মসূচি, খামারবাড়ি, মোবাইল : ০১৭১৬৩৭৯৪৯৮, ই-মেইল : mdhmd62@gmail.com

 

বিস্তারিত
ছাদ কৃষি

ছাদ কৃষি
মো. শামীম সেখ
ছাদ বাগান কোনো নতুন ধারণা নয়। অতি প্রাচীন সভ্যতায়ও ছাদ বাগানের ইতিহাস চোখে পড়ে। বিশ্বব্যাপী নগরায়ন বৃদ্ধি পাচ্ছে আর নগরায়নের প্রভাবে নগর কৃষি দিনে দিনে জনপ্রিয়তা লাভ করছে। পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণে পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে কৃষির এ খাত গুরত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ছাদ বাগান স্থাপনের গুরুত্বপূর্ণ ধাপ রয়েছে। যেমন-ছাদ বাগান পরিকল্পনা; উপকরণ সংগ্রহ; মাটি প্রস্তুতি; টবে মাটি ভরাট; উদ্ভিদ নির্বাচন।
ছাদ বাগান পরিকল্পনা
ছাদ বাগান করার জন্য দৃঢ় মানসিক প্রস্তুতি দরকার এবং ছাদ বাগানের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি ও ভালো উৎপাদনের জন্য সঠিক পরিকল্পনার কোন বিকল্প নেই। ছাদ বাগান স্থাপনের আগে অবশ্যই ভেবে দেখতে হবে যে, ছাদ বাগান করার উপযোগী কি না? অর্থাৎ ছাদ গাছপালার ওজন বহন করার মতো যথেষ্ট মজবুত কি না? পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো কি না? পরিকল্পনা ও নকশা নিজে করা ভালো। তবে ল্যান্ডস্কেপ হর্টিকালচারিস্ট দ্বারাও ডিজাইন করানো যেতে পারে।
পারিবারিক ছাদ বাগানের পরিকল্পনা ও নকশা করার ক্ষেত্রে ছাদের আকার ও আয়তন অনুযায়ী পেন্সিল দিয়ে একটি নকশা একে নিতে হবে। নকশায় ছাদের চারপাশের সীমানা ও মাপ নির্ধারণ করতে হবে। চলাচলের সুবিধার জন্য খানিকটা খোলা জায়গা রাখতে হবে। ছাদের আয়তন বেশি হলে ছাদকে কয়েকটা অংশে ভাগ করে প্রতি অংশের মাঝে প্রায় ১ থেকে ১.৫ মিটার চওড়া করে চলাচলের পথ রাখতে হবে। এবার ছাদের যে কোন এক কিনারা থেকে পরিকল্পনা ও নকশা আঁকা শুরু করতে হবে। ছাদের যে কোন এক কোণে বা চিলে কোঠার সাথে লোহার পাইপ বা কাঠের খুঁটি লাগিয়ে যাতে একটি মাচা করা যায় সেটা নকশায় রাখতে হবে। ভেতরের এক এক অংশে এক এক ধরণের গাছ রাখা বা লাগানোর জন্য কাঠামো তৈরি বা টবের জায়গা চিহ্নিত করতে হবে। অবশ্যই পানির উৎস নকশায় রাখতে হবে। ছাদে বাগান করতে হলে কিছু জিনিসপত্র রাখার জায়গাও দরকার হয়। তাই নকশায় কোঠাঘরের জায়গা রাখতে হবে। বাগানের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য ছাদে মাঝের দিকে ফল গাছ লাগালে ভালো হয়। ছাদের কিনারায় যদি কিছু লতানো গাছ লতিয়ে দেয়ার কথা ভাবেন, তবে ছাদের রেলিংয়ের উপরে অনুচ্চ গ্রীল বা রেলিংয়ের ভেতরে বা বাইরের দিকে লোহার কিছু ক্ল্যাম্প বা হুক লাগিয়ে রাখা ভালো। যে কোনো গাছের বেঁচে থাকার জন্য সূর্যালোক একটি অপরিহার্য বিষয়। তাই বাগানের নকশা তৈরি করার সময় ছাদের কোন দিক থেকে রোদ আসে এবং ঋতুভেদে রোদ কোনদিকে সরে যায় ইত্যাদি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের জন্য সঠিক পরিকল্পনা থাকতে হবে। ছাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য খোলা জায়গায় লন তৈরি এবং একটি বসার শেড ও তৈরি করা যেতে পারে তবে শেডের আকার ছাদের সাথে       মানানসই হতে হবে।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
ছাদ বাগানের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রাদি কোদাল, গার্ডেন ফর্ক, বাডিং নাইফ, সিকেচার, প্রুনিং শেয়ার, করাত, ব্যালেন্স, ডিবলার, ওয়াটারিং ক্যান ইত্যাদি সংগ্রহে রাখতে হবে। পাত্রসমূহের মধ্যে ট্রে, সীডপ্যান, পট, প্লাস্টিক পট, গ্রোইংব্যাগ, বালতি, পলিব্যাগ, ড্রাম, হাফ ড্রাম, মাটির বোল ইত্যাদি।
মাটি প্রস্তুত
টবে/ পটের গাছ বৃদ্ধির সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে মাটির মিক্সার তৈরি করার উপর। মাটি গুঁড়া করে, মাটি থেকে              অনাকাক্সিক্ষত বস্তু অপসারণ করতে হবে। প্রয়োজনীয় পরিমাণ মাটি নিয়ে, প্রতি কেজি মাটির জন্য ০.৫ গ্রাম (মাটির ঢ়ঐ ৫ থেকে বেশি হলে)/১ গ্রাম হারে (মাটির ঢ়ঐ ৫ এর কম হলে) করে ডলোচুন মিশিয়ে, ৮- ১০ দিন পলিথিনে মুড়িয়ে রাখতে হবে। শোধনকৃত মাটিতে পরিমাণমতো গোবর ও কোকোপিট মিশিয়ে প্রতি কেজি মিশ্রণের জন্য ১ গ্রাম হারে ইউরিয়া, টিএসপি এবং ০.৫ গ্রাম হারে এমওপি যোগ করতে হবে। পটে/টবে মাটি: গোবর: কোকোপিট মিশ্রণের অনুপাত হবে ২:১:১।
টবে মাটি ভরাট
টব থেকে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের জন্যে টবের নিচে তিন থেকে চারটি ছিদ্র রাখতে হবে। টবের তলায় ২/৩ সেমি. পুরু করে ইটের খোয়া সাজাতে হবে এটা যদি সম্ভব না হয় তবে ছিদ্রের উপরিভাগে ভাঙ্গা টবের ৩ অথবা ৪টি অংশ কিংবা ইটের টুকরা এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে ছিদ্রগুলো মাটিদ্বারা বন্ধ না হয়ে যায়। টবে মাটি ভরার সময় টবের উপরিভাগে ০.৫ থেকে ১ ইঞ্চি পরিমাণ এবং হাফ ড্রামের ক্ষেত্রে ১.০ থেকে ১.৫ ইঞ্চি ঠিকমতো সার ও পানি দেয়ার জন্য খালি রাখতে হবে। সার মিশ্রিত মাটি দিয়ে নির্দিষ্ট উচ্চতা পর্যন্ত টব/পট ভরাট করতে হবে। ভরাটকৃত পট ১২-১৫ দিন ফেলে রাখার পর চারা রোপণ/বীজ বপন করতে হবে।
উদ্ভিদ নির্বাচন
ছাদ বাগানের জন্য এমন গাছ নির্বাচন করতে হবে যার জাত খর্বাকার, মূলের গভীরতা কম এবং সারা বছর ফল দেয়। ছাদ বাগানের জন্য উপযোগী ফলের জাত হচ্ছে, বারি আম-৩ (আম্রপালি), বাউ আম-২ (সিন্দুরী), থাই কাঁচা মিঠা, ব্যানানা ম্যাঙ্গো, বারি আম-১১, কাটিমন, সূর্য ডিম, পুনাই, বারি পেয়ারা-২, ইপসা পেয়ারা-১, থাই পেয়ারা, বাউ কুল-১, ইপসা কুল-১ (আপেল কুল), থাই কুল-২, বারি লেবু-২, বারি লেবু-৩, বাউ কাগজি লেবু-১। বারি আমড়া-১, বাউ আমড়া-১, থাই আমড়া,  থাই মিষ্টি করমচা। গনেশ, পাকিস্তানি  ড্রাগন ফল, বারি কমলা-১, বারি মাল্টা ১, বারি মাল্টা-৪। বাউ জামরুল-১ (নাসপাতি জামরুল), বাউ জামরুল-২ (আপেল জামরুল) ইত্যাদি। নানা ধরনের শাকসবজি লাগানো যায়। যেমন- লালশাক, পালংশাক, মুলাশাক, ডাঁটাশাক, কলমীশাক, পুইঁশাক, চুকুর, ক্যাপসিকাম, লেটুস, বেগুন,টমেটো, ঢেড়স, শিম, বরবটি, করলা, লাউ, ধুন্দল ইত্যাদি। সৌন্দর্য্য ও মনের প্রশান্তির জন্য বিভিন্ন ফুল যেমনÑ গাধা, গোলাপ, বেলী, টগর, জুঁই, গন্ধরাজ, জবা, টিকোমা, জারবেরা, শিউলি, এলামন্ডা ইত্যাদি। মসলা ও ঔষধিগুণসম্পন্ন মরিচ, ধনেপাতা, বিলাতি ধনিয়া, পুদিনা, কারিপাতা, পেঁয়াজ, রসুন, অ্যালোভেরা, তুলসী, থানকুনি, ইত্যাদি লাগানো যেতে পারে।
সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা
ছাদ বাগানে সবচেয়ে গুরুত্ত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ সেচ ব্যবস্থাপনা। নিয়মিত পরিমিত সেচের উপর ছাদ বাগান স্থাপনের সফলতা নির্ভর করে। পানি কম দেয়া যেমন ক্ষতিকর তেমনই অতিরিক্ত পানি দেয়াও গাছের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত পানি দেয়ার ফলে টবের/ পটের গাছে বিভিন্ন রোগ দেখা এমনকি গাছ/চারা মারাও যায়। এজন্য কেবলমাত্র গাছের গোড়া শুকালেই পানি দেয়া যাবে, গোড়া ভেজা থাকলে কোনো মতেই পানি দেয়া যাবে না। বর্ষাকালে খেয়াল রাখতে হবে শিম, মরিচ, বেগুন ইত্যাদি গাছের গোড়ায় পানি জমে থাকেলে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে অন্যথায় ঢলে পরা রোগে আক্রান্ত হবে। ছাদের গাছ একবার ঢলেপড়া রোগে আক্রান্ত হলে তা থেকে আর ভালো ফলন আশা করা যায় না। বর্ষার সময় ব্যতীত ছাদ বাগানে সকাল বিকেল পানি দেয়া উত্তম তবে গরমে অবশ্যই সকাল বিকালে পানি দিতে হবে। গরমের সময় পানি দেওয়ার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে পাইপের পানি যেন গরম না থাকে। প্রখর রোধে অবশ্যই পানি দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। গাছে ফুল আসার সময় পানির পরিমাণ কম দিতে হবে তবে নিয়মিত গোড়ায় অল্প পরিমাণ পানি দিতে হবে না হলে পানির অভাবে ছাদ বাগানের গাছের ফুল ঝরে যাবে। কুমড়াজাতীয় গাছে অবশ্যই ঠিকমতো সেচ দিতে হবে না হলে কাক্সিক্ষত বৃদ্ধি তথা ফলন পাওয়া যাবে না। ছাদ বাগানের জন্য ড্রিপ বা বিন্দু সেচ খুবই উপযোগী একটি পদ্ধতি ড্রিপ সেচ হচ্ছে এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে গাছের শিকরে সঠিক এবং সুষম হারে পানি প্রয়োগ করা যায়। এ ছাড়া পানিতে দ্রবণীয় সার সঠিক মাত্রায় গাছে প্রয়োগ করা যায়। ড্রিপ সেচ একটি অত্যন্ত সময়োপযোগী ও প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি। এই পদ্ধতিতে ছিদ্রযুক্ত নলের সাহায্যে গাছের গোড়ায় ফোঁটায় ফোঁটায় সেচ দেয়া হয় এতে পানির কোন অপচয় হয় না। যেখানে সেচের জন্য পানি অপ্রতুল সেখানে এই পদ্ধতি খুবই কার্যকর।
সার ব্যবস্থাপনা
ছাদ বাগানে সার প্রয়োগের ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। দুই (২) সপ্তাহ পরপর অল্প পরিমাণ সার স্প্রে করতে হবে। প্রথম পর্যায়ে ১ লিটার পানিতে ৫ গ্রাম ইউরিয়া, ৫ গ্রাম টিএসপি, ১-২ গ্রাম বোরণ সার ভাল করে গুলে নিতে হবে ( সেক্ষেত্রে টিএসপি সার ৩/৪ ঘণ্টা আগে ভিজিয়ে রাখা ভাল)। ২য় পর্যায়ে ১ লিটার পানিতে (১ম বারের ২ সপ্তাহ পর) ৫ গ্রাম ইউরিয়া, ৫ গ্রাম জিংক গুলিয়ে নিতে হবে। ৩য় পর্যায়ে ১ লিটার পানিতে (২য় বারের ২ সপ্তাহ পর) ৫ গ্রাম ইউরিয়া, ২-৩ গ্রাম এমওপি সার গুলিয়ে, চারা/ছোট গাছের ক্ষেত্রে ৪/৫টি গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করা যেতে পারে, বড় গাছের ক্ষেত্রে (বড় টবে হলে) ২টি গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করা যেতে পারে, আবার হাফ ড্রামে হলে ১টি গাছের গেড়ায় প্রয়োগ করা যেতে পারে। এভাবে অল্প অল্প সার আবর্তকভাবে প্রয়োগ করলে ছাদ বাগানে ভালো ফলন পাওয়া যাবে। সার মিশ্রিত পানি পড়ন্ত বিকেলে প্রয়োগ করা ভাল তবে গাছের গোড়ার মাটিতে ঐ পরিমাণ সার মিশ্রিত পানি প্রয়োগ করতে হবে যাতে গোড়ার মাটি পরের দিন শুকিয়ে যায় । বর্ষার সময় গাছের গোড়ায় অতিরিক্ত পানি না জমে সেভাবে সেচ দিতে হবে। ছাদ বাগানে জৈবসার ব্যবহার সব থেকে উত্তম।
অন্যান্য সাধারণ ব্যবস্থাপনা
কিউকারবিটস জাতীয় ফসলের পরাগায়ণজনিত সমস্যা রোধে হস্তপরাগায়ন করা প্রয়োজন। সাদা মাছি পোকা, জাবপোকা, ফলের মাছি পোকা, ডগা ও কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা, লিফমাইনর ইত্যাদি ছাদ বাগানে খুব বেশি দেখা যায়। এগুলো দমন করার জন্য সঠিক নিয়মে ফেরোমন ট্রাপ ব্যবহার করতে হবে পাশাপাশি পরিমিত পরিমাণ তামাক পানি অথবা নিমতৈল অথবা সাবান পানি বা অন্যান্য জৈব বালাইনাশক স্প্রে করতে হবে। ছাদ বাগান সম্পার্কিত যে কোন প্রয়োজনে স্থানীয় মেট্রোপলিটন কৃষি অফিসে যোগাযোগ করতে হবে। য়
মনিটরিং অফিসার, নগর কৃষি উৎপাদন সহায়ক (পাইলট) প্রকল্প, মোবাইল নং: ০১৭১৭০৩৩৯৩২, ইমেইল: kbdshamimshaikh@gmail.com

বিস্তারিত
লিচুগাছের পরিচর্যা ও সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা

লিচুগাছের পরিচর্যা ও সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা
মোঃ মাজেদুল ইসলাম (মিন্টু)

লিচু একটি  পুষ্টিকর, সুস্বাদু, আকর্ষণীয় ও লোভনীয় ফল। রঙে স্বাদে গুণে এ ফলের তুলনা হয় না। লিচুর মধ্যে জলীয় অংশ ছাড়াও আমিষ, চর্বি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন সি, এ, বি১, বি২ ইত্যাদি আছে যা আমাদের  শরীরে পুষ্টি জোগায়। পাকা লিচু সবাই মিলে খুব মজা করে খাওয়া যায় বলে এর পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ন থাকে, তা ছাড়া প্রক্রিয়াজাত খাদ্যদ্রব্য খুবই জনপ্রিয়। কৃষকদের অপরিকল্পিত বাগান, মানসম্পন্ন চারা/কলমের অভাব, বালাইব্যবস্থাপনা ও পরিচর্যার অভাব, আবহাওয়াগত সমস্যা, সর্বোপরি কৃষকের দক্ষতার অভাবে কাক্সিক্ষত ফলন পেতে ব্যর্থ হয়।
অধিক ফলন পেতে হলে বছরব্যাপী লিচুগাছের পরিচর্যা করতে হবে। লিচু সংগ্রহের পর থেকেই পরিচর্যা শুরু করতে হয়।
জুন মাস (জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ়) : এসময় লিচুর কলম    রোপণের উত্তম সময়। সেচের সুবিধা থাকলে আগস্ট-সেপ্টেম্বর  বা সারা বছরই লিচুর কলম রোপণ করা যায়। লিচুগাছের কাণ্ড থেকে শিকড় গজায় এজন্য গোড়া একটু মাটির নিচে দিতে হয়। পুরাতন বাগানের কিছু মাটি গর্তে মিশিয়ে দিলে গাছ সহজে মরে না। এ সময় বয়স্ক গাছে ফল সংগ্রহের পর পরই প্রুনিং বা অঙ্গছাঁটাই করতে হবে। গাছপ্রতি ৬০-৭০ কেজি জৈবসার, ১ কেজি           ইউরিয়া, ১.৫ কেজি ডিএপি, ৫০০-৬০০ গ্রাম এমওপি সার রিং পদ্ধতিতে প্রয়োগ করতে হবে।
জুলাই (আষাঢ়-শ্রাবণ) : এসময়ে গাছে নতুন কুঁশিপাতা গজাবে। পাতামোড়ানো পোকা ও লিফ মাইনর আক্রমণ করলে সাইপারমেথ্রিন এবং মাইটস নিয়ন্ত্রণের জন্য ভারটিমেক/ওমাইট/ক্যালথেন সুনির্দিষ্ট মাত্রায় স্প্রে করতে হবে।
আগস্ট (শ্রাবণ-ভাদ্র) : বাগানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে নিষ্কাশন করতে হবে। কাণ্ড ছিদ্রকারী বা বাকল খেকো পোকা আক্রমণ করলে শক্ত কাঠি/স্পোক দিয়ে গর্ত পরিষ্কার করতে হবে। পেট্রোলে তুলা ভিজিয়ে গর্তে ঢুকিয়ে কাদামাটি দিয়ে গর্ত বন্ধ করতে হবে। অথবা সিরিঞ্জ দিয়ে কীটনাশক গর্তে প্রবেশ করাতে হবে ।
সেপ্টেম্বর (ভাদ্র-আশ্বিন) : হালকা চাষ দিয়ে বাগানের আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। রোগাক্রান্ত/মরাডাল, পরগাছা, গাছের ভেতরের অপ্রয়োজনীয় ডালপালা ছাঁটাই করতে হবে। শেষ বৃষ্টির পর বাগান পরিষ্কার করে চুন ১ কেজি : তুতে                 ১ কেজি : পানি ১০ লি. একত্রে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় ১-১.২ মি: উচ্চতা পর্যন্ত রঙ করতে হবে।
অক্টোবর (আশ্বিন-কার্তিক) : হালকা চাষ দিয়ে মাটি আলগা করতে হবে। মাইটসের আক্রমণ হলে আক্রান্ত অংশ ভেঙে পুড়িয়ে/১ ফুট মাটির গভীরে পুঁতে ফেলতে হবে। মাকড়নাশক ও ছত্রাকনাশক ১৫ দিন পরপর ২ বার স্প্রে করতে হবে ।
নভেম্বর (কার্তিক-অগ্রহায়ণ): কাণ্ড হতে গজানো নতুন কুঁশি অপসারণ করতে হবে। এসময় মুকুল আসার আগ পর্যন্ত সেচ প্রদান বন্ধ রাখতে হবে। এখনই গাছের ১০-১২ ইঞ্চি পরিধির সব ডালে ২/৩ ইঞ্চি দূরত্বে ধারালো চাকু দিয়ে রিং পদ্ধতিতে বাকল কেটে গার্ডেলিং করার উপযুক্ত সময়। বেশি সবুজ গাছে গার্ডেলিং করায় নাইট্রোজেন ও কার্বনের সমতা বজায় রাখে বিধায় মুকুল বেশি আসে ।
ডিসেম্বর (অগ্রহায়ণ-পৌষ) : লিচুগাছে খয়েরি বর্ণের কুঁশিপাতা থাকলে সিকেচার দিয়ে কেটে বা ভেঙে ফেলতে হবে। এভাবে পিঞ্চিং করলে অধিক মুকুল আসে। স্ত্রী ফুলের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য ফ্লোরা ৩মিলি/১লি. পানিতে ও চিলেটেড জিংক ২ গ্রাম /১লি. পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন পরপর ২ বার স্প্রে করতে হবে।
জানুয়ারি (পৌষ-মাঘ) : মাইটস আক্রান্ত ডালপালা অপসারণ ও মাকড়নাশক স্প্রে করতে হবে। ফল ছিদ্রকারী পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য ফেরোমন ফাঁদ ৫০-৫৫টি/হেক্টর গাছের মাঝামাঝি বেঁধে দেয়া, ট্রাইকোগামা ৫০০০টি ডিম/হেক্টর ব্যবহার করতে হবে।
ফেব্রুয়ারি (মাঘ-ফাল্গুন) : কার্যকর পরাগায়নের জন্য মুকুলে ১০% ফুল ফোটার পর মৌবক্স ১০-১২টি/হেক্টর বসাতে হবে। কলমের গাছের বয়স ৪ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত মুকুল ভেঙে দিতে হবে।
মার্চ (ফাল্গুন-চৈত্র) : আগাম ফল ঝরে পড়া রোধ করার জন্য প্লানোফিলক্স, ফ্লোরা, সলুবোর বোরণ ইত্যাদি স্প্রে করতে হবে। গাছপ্রতি ৪৫০-৫০০ গ্রাম ইউরিয়া, ২৫০-৩০০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করে সেচ দিতে হবে। ফল মটরদানার মতো আকার হলে ফল ছিদ্রকারী পোকা দমনের জন্য নিমবিসিডিন স্প্রে করতে হবে ।
এপ্রিল (চৈত্র-বৈশাখ) : এসময় প্রচণ্ড তাপমাত্রা ও হঠাৎ বৃষ্টির জন্য ফল ফেটে যায়। সলুবর বোরন ১ গ্রাম/লি. পানিতে মিশিয়ে ৫-৭ দিন পরপর ২ বার স্প্রে করতে হবে। ফলের রঙ পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত নিমবিসিডিন ৭ দিন পরপর স্প্রে করতে হবে। বৃষ্টি না হলে পানি সেচ দিতে হবে। লিচুর গুচ্ছ ব্যাগিং করলে ফলের মান ভালো হয়।
মে (বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ) : এ সময় পর্যাপ্ত সেচ দিতে হবে। সাধারণত মে মাসের ৩য় সপ্তাহে ফল পাকে। একটু ডালসহ ভোর ৪টা থেকে সকাল ৮টার মধ্যে লিচুর থোকা সংগ্রহ করা উত্তম।
ফল সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা : ফল সংগ্রহের পর সকল প্রকার শারীরতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া চলমান থাকে বিধায় সংগ্রহ পরবর্তী সেলফ লাইফ একেবারে কম অর্থাৎ সঠিক পদ্ধতিতে সংগ্রহ ও সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনার অভাবে ফল দ্রুত পচে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আমাদের দেশে উৎপাদিত ফলের সঠিক পরিচর্যা গ্রহণ করা হয় না তাই, প্রায় ২৫-৩০ ভাগ ফল বিনষ্ট হয়ে যায়। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এ ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।
লিচু সংগ্রহ : ফলের খোসার কাঁটা চ্যাপ্টা হয়ে যখন মসৃণ হয় এবং ফলের রঙ লালচে হয় তখন গাছে উঠে অথবা মই নিয়ে জালের তৈরি ঝুড়িতে করে লিচু সংগ্রহ করতে হয়।
প্রি-কুলিং : সংগ্রহের পর ফলের গুণাগুণ ঠিক রাখার জন্য তাপমাত্রা একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। ফলের সতেজতা ধরে রাখতে নিম্ন তাপমাত্রা বজায় রাখা প্রয়োজন। প্রি কুলিং গাছের তাপ দূরীকরণে মূখ্য ভূমিকা পালন করে। ঠাণ্ডা ও ছায়াযুক্ত স্থানে পলিথিন বা মাদুর বিছিয়ে যত্নসহকারে রেখে লিচু পাতা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। নইলে লিচু শুকে উজ্জ¦লতা নষ্ট হয়ে যায়।
বাছাইকরণ : লিচুর গাদার চারপাশে বসে লিচু বাছাই করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যে, রোগাক্রান্ত, পোকাক্রান্ত,              আঘাতপ্রাপ্ত, নষ্ট, ফেটে যাওয়া এবং অস্বাভাবিক আকৃতির ফল বাছাই করে ফেলতে হবে।
ক্লিনিং/পরিষ্কারকরণ : ফলের সাথে লেগে থাকা মাটি, ময়লা ও অন্যান্য অনাকাক্সিক্ষত উপাদান (রাসায়নিক ও বালাইনাশক) থাকলে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
গ্রেডিং পদ্ধতি :  ফলের আকার আকৃতি, পরিপক্বতার পর্যায়, ফলের রঙ, ফলের ওজন অনুযায়ী (এ,বি,সি) বিভিন্ন গ্রেডে বিভক্ত করা হয়। মিশ্রিত অবস্থায় লিচুর থোকা বাঁধলে বাজার মূল্য কম হয়। গ্রেডিং করে থোকা  বাঁধলে আকর্ষণীয় হয় বলে বাজার মূল্য বৃদ্ধি পায়। স্বল্পপরিমাণ খারাপ লিচু সমস্ত  ফলকে নিম্নমান করে ফেলে এজন্য গ্রেডিং পদ্ধতি লিচু চাষিদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্যাকেজিং : ফলের সতেজতা ধরে রাখা, আঘাতজনিত ক্ষতি হতে রক্ষা ও নিরাপদ পরিবহণের জন্য প্রয়োজন ভালো প্যাকেজিং পদ্ধতি। বাংলাদেশে প্রচলিত প্যাকেজিং পদ্ধতি  মূলত বাঁশের টুকরী, চটের বস্তা ও পুরাতন  কার্টুন (যে গুলোতে  কোনো বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকে না ও কোন দৃঢ়তা নাই)। এ কারণে ফলের অপচয় ৪০ ভাগ পর্যন্ত হতে পারে। ক্রেট্স বা ফাইবার বোর্ড কার্টুন ব্যবহার করা উত্তম।
বাজারজাতকরণ : লিচুর বাজার ব্যবস্থা একটু ভিন্ন রকম, কয়েক ধাপে লিচু বিক্রয় হয়। যেমন- ১. তিন থেকে পাঁচ বছর মেয়াদে লিচুর বাগান বিক্রয় হয়ে থাকে। ২. লিচু সংগ্রহ করার পর বাগান বিক্রয় হয়। ৩. লিচুর মুকুল আসার আগে পাতা দেখে গাছ/বাগান বিক্রয় হয়। ৪. মুকুল দেখে লিচু বাগান বিক্রয় হয়। ৫. লিচুর গুটি হতে পরিপক্ব পর্যন্ত ২-৩ বার বিক্রয় হয়। ৬. সর্বোপরি লিচু পাকার পর বিভিন্ন স্থানে লিচু ক্রয়-বিক্রয় হয়ে ভোক্তার কাছে পৌঁছে। এভাবে মধ্যস্বত্ব¡ভোগীরা প্রত্যেকেই লাভের জন্য হাত বদল করে বিক্রয় করে।
সংরক্ষণ : লিচু প্রক্রিয়াজাত করে  জ্যাম, জেলি, জুস, পুডিং, শরবত ও বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবার তৈরি করা যায়। এ ছাড়া লিচুর থোকা ডিপ ফ্রিজে রেখেও কয়েক মাস সংরক্ষণ করা যায়।
ফলন : লিচুর গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ১২.৪ মে. টন, তবে উত্তম পরিচর্যায় লিচুর ফলন ২২ মে. টন পর্যন্ত হতে পারে, যা পাবনা সদর উপজেলায় দাপুনিয়া ইউনিয়নের চর সাহাদিয়ার গ্রামের ২৫ জন কৃষক-কৃষানির মাঝে জরিপ করে পাওয়া যায়।
পরিশেষে বলা যায়, বছরব্যাপী উল্লেখিত কার্যক্রমগুলো যথাসময়ে সঠিকভাবে সম্পন্ন করলে মানসম্মত লিচুর উৎপাদন ও বাজারমূল্য বৃদ্ধি করা সম্ভব। য়
উপসহকারী কৃষি অফিসার , উপজেলা কৃষি অফিস, পাবনা সদর, পাবনা। মোবাইল নং-০১৭১৭৪৬৬৯৯৮, ইমেইল-mazedul321@gmail.com

বিস্তারিত
অতিমারি সময়ে ডিম একটি প্রোটিন ক্যাপসুল

অতিমারি সময়ে ডিম একটি প্রোটিন ক্যাপসুল
কৃষিবিদ মোঃ ফজলুল করিম

করোনাকালে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ডিম রাখার প্রয়োজনীয়তা বেড়ে গেছে বহুগুণ। মূলত করোনা প্রতিরোধ, করোনা মোকাবিলা ও চিকিৎসা এবং করোনা-পরবর্তী যত্নের নিরিখেই ডিমের চাহিদা সারা বিশ্বে বর্তমান প্রেক্ষাপটে জ্যামিতিক হারে বেড়ে চলেছে। পোলট্রি শিল্পের মালিক ও শ্রমিকদের এ ক্ষেত্রে সাধুবাদ  দেয়া উচিত। কারণ, সব প্রতিকূলতা, সংক্রমণ ও লকডাউনের মধ্যে তাঁরা দুনিয়াজুড়ে এই ডিমের চাহিদা পূরণ করে চলেছেন। মূলত প্রোটিন জাতীয় খাদ্য ডিমের চাহিদা ও ব্যবহার এ রকম আশাতীতভাবে বাড়ার কারণগুলোর দিকে এবার একটু চোখ বোলানো যাক।
সারা বিশ্বে বছরে প্রায় ৮০ মিলিয়ন মেট্রিক টন ডিম উৎপাদিত হয়। ডিম খাওয়ার ব্যাপারে জাপানিরা সবচেয়ে এগিয়ে আছে। তারা প্রত্যেকে গড়ে প্রতি বছর ৩২০টি ডিম খেয়ে থাকে। আমাদের দেশে এই সংখ্যা সে তুলনায় অনেক কম, প্রায় ১০৩টি। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে অন্য যেকোনো প্রাণিজ আমিষের চেয়ে ডিমের আধিপত্য বেশি ঘরে ঘরে। দামে কম, বেশি পুষ্টিকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই মহামারির সময়ে প্রোটিন বুস্ট পাওয়ার প্রধান উপায়ই হচ্ছে ডিম খাওয়া।
যুগে যুগে মানুষের আমিষ জাতীয় খাদ্যের প্রধান উৎসগুলোর একটি হয়ে আছে ডিম। মানবজাতির ইতিহাসে প্রথম কীভাবে মানুষের মনে মা পাখির রক্তচক্ষু এড়িয়ে পাখির বাসা থেকে এই প্রায় গোলাকৃতি বস্তু ফাটিয়ে ভেতরের উপাদেয় অংশ খাবার কথা মাথায় এলো, তা সত্যি নৃতাত্তিক গবেষণার ব্যাপার। তবে এই ব্যাপারে কোনোই সন্দেহ নেই যে ছেলে-বুড়ো সবার জন্য সহজলভ্য ও সহজপাচ্য এই  প্রোটিন জাতীয় খাদ্যের জুড়ি মেলা ভার। তাই বলি-খেতে সোজা রাঁধতে ভালো, ডিম ছাড়া আর কি বলো?
পুষ্টিগুণ
পুষ্টিগুণের দিক থেকে অত্যন্ত উন্নতমানের প্রোটিন সরবরাহ করে ডিম। লকডাউন এবং উৎপাদন বা পরিবহণ-সংকটের সময় কাঁচা মাছ মাংসের তুলনায় ডিম সহজে পাওয়া যায়। কম              পচনশীল বলে এর পরিবহণ অপেক্ষাকৃত সহজ। পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে না। অন্য যেকোনো প্রাণিজ প্রোটিন জাতীয় খাদ্যের চেয়ে ডিম দামে সস্তা। অথচ পুষ্টিগুণের দিক থেকে অত্যন্ত উন্নতমানের প্রোটিন সরবরাহ করে আমাদের  দৈনিক চাহিদার পুরোটাই ডিম পূরণ করতে পারে। প্রোটিনের রাসায়নিক রূপ, অ্যামাইনো অ্যাসিডের প্রায় সব ক’টিই এই এক ডিমের ভেতরেই আছে। প্রোটিন ছাড়াও অন্যান্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদানের ভালো উৎস ডিম। এতে আছে মানবদেহের জন্য অতি প্রয়োজনীয় ভিটামিন এ, বি ফাইভ, বি টুয়েলভ, ফসফরাস, সেলেনিয়ামসহ আরো অনেক খাদ্য উপাদান। এ জন্যই  ডিমকে আদর্শ খাদ্য বলা হয়। ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই ও ভিটামিন কে যে গুটিকয়েক খাদ্যের মধ্যে উপস্থিত, ডিম তাদের মধ্যে অন্যতম। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, রক্তের ভালো কোলেস্টেরল এই ডিমে উপস্থিত থাকে। ডিমের    উপকারী চর্বি মস্তিষ্কের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চালাতে সাহায্য করে, ফ্যাট সলিউবল ভিটামিনকে মানবদেহে শোষিত হতে সাহায্য করে। ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি দুই-ই থাকায় ডিম হাড় ও দাঁতের বৃদ্ধি এবং গঠনের জন্য খুবই উপকারী।
সর্বজনীন পুষ্টির উৎস
ছেলে-বুড়ো সবার জন্যই ডিম জরুরি প্রোটিন উৎস হিসেবে বিবেচিত। তাই করোনার এই দিনে পরিবারের সবার  প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগাতে ডিমের জুড়ি মেলা ভার। খেতে  সুবিধাজনক ও সুস্বাদু বলে শিশুদের কাছে ডিম খুব পছন্দের। জন্মের পর শিশু যখন প্রথম শক্ত খাবার খেতে শুরু করে, তখন প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে মাছ বা মাংসের আগে তাকে ডিমই দেয়া হয়। ডিম দিয়ে তৈরি করা যায় অসংখ্য উপাদেয়, বৈচিত্র্যময় খাবার। মিষ্টি, ঝাল অথবা নোনতা, চুলায় অথবা ওভেনে ডিম দিয়ে বানানো যায় হাজারো মজাদার খাবার। ডিমের সাদা অংশে বেশির ভাগ প্রোটিন থাকলেও হৃদরোগ বা খুব উচ্চ কোলেস্টেরলের সমস্যা না থাকলে সব সময় সেলেনিয়ামসমৃদ্ধ কুসুম বাদ দেয়া উচিত নয়। সব বয়সের মানুষের জন্য ডিম জরুরি প্রোটিন উৎস হিসেবে বিবেচিত।
বিশ্বের খ্যাতনামা চিকিৎসকেরা করোনায় আক্রান্ত রোগীদের               চিকিৎসার সময় তাদের দিনে একাধিক ডিম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। দেহের ক্ষয়পূরণ, নতুন কোষ গঠন, দুর্বল শরীরে শক্তির সঞ্চার প্রভৃতি সব ধরনের ক্ষতিপূরণ করতে ডিম খাওয়া খুবই প্রয়োজন। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো রাখার কোনো বিকল্প নেই এই মহামারির সময়ে। ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভালো থাকলে করোনা ভাইরাসসহ যেকোনো সংক্রমণের ভয়াবহতা কম হয় শরীরে। প্রমাণ মিলেছে, ইমিউন সিস্টেমের প্রধান উপাদান দেহের অ্যান্টিবডি। এই অ্যান্টিবডির প্রধান উপাদান প্রোটিন। এ জন্য প্রতিদিন ডিম খেলে করোনা প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভালো থাকে শরীরে। পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্টই দেখা যায়, বিশ্বের সব দেশেই ডিমের উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার গত বছর হু হু করে বেড়েছে আকাশচুম্বী হারে। করোনাকালে নিশ্চিত পুষ্টি আর বাজেটে স্বস্তি দিয়েছে প্রোটিন প্যাকস্বরূপ ডিম। লকডাউনের দুর্দিনে বাড়িতে অন্য কিছু না থাকলেও খিচুড়ি বা ভাত-ডালের সঙ্গে ডিম-আলু হলেই চলে গেছে। এখন লকডাউনের কড়াকড়ি না থাকলেও করোনা মোকাবিলা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে আমাদের জীবনে ডিমের গুরুত্ব এতটুকুও কমেনি।
ডিমের খোসার গুরুত্ব
ডিমের খোসায় রয়েছে বৈচিত্র্যময় উপযোগিতা আর বহুমুখী ব্যবহার। ডিমের খোসা ক্যালসিয়ামের অফুরন্ত খনি। আমাদের দেশে ছোট-বড় সবার প্রায়ই ক্যালসিয়ামের অভাবজনিত বিভিন্ন রোগব্যাধি হয়। বিশেষত গিঁটেবাত, হাড়ের ক্ষয়, হাড় ফাঁপা হয়ে যাওয়া, বিভিন্ন ব্যথা-বেদনা, ভঙ্গুর দাঁত ও নখ ইত্যাদি রোগে দেশের শিশু ও বয়স্ক জনগণের একটি বিরাট অংশ ভুগে থাকে। অথচ অত্যন্ত কম খরচে ডিমের খোসা থেকে তৈরি ক্যালসিয়াম পাউডার আমাদের দৈনিক ক্যালসিয়ামের চাহিদা সম্পূর্ণভাবে মেটাতে পারে। গবেষণায় দেখা যায়, সঠিকভাবে প্রস্তুতকৃত এক চা-চামচ ডিমের খোসার চূর্ণতে আছে ৮০০-১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। আর একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের দিনে ৫০০ থেকে ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম অবশ্যই গ্রহণ করা উচিত। গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়ের জন্য এই প্রয়োজনের পরিমাণ আরও বেশি। অথচ ক্যালসিয়ামের প্রধান উৎস হিসেবে জনপ্রিয় দুধে এই উপাদান থাকে প্রতি এক কাপে মাত্র ৩০০-৪০০মিলিগ্রাম। বর্তমানে এই বিষয়ে গবেষণা চলমান রয়েছে। তাছাড়াও ডিমের খোসা জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। য়
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার, সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা। মোবাইল : ০১৭২৪-১৪১৬৬২, ই-মেইল : fazlurahi@gmail.com

বিস্তারিত
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে রূপালী মৎস্য রেণু চাষে করণীয়

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে রূপালী মৎস্য রেণু চাষে করণীয়

কৃষিবিদ মোঃ আলতাফ হোসেন চৌধুরী

১৯৭২ সালের জুলাই মাসে কুমিল্লার এক জনসভায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেছিলেন মাছ হবে ২য় প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী সম্পদ। এরই অংশ হিসেবে ১৯৭৩ সালে গণভবনের লেকে বঙ্গবন্ধু মাছের পোনা অবমুক্তকরণের মাধ্যমে মাছ উৎপাদনের সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেন। দীর্ঘদিন পরে হলেও বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতা বাস্তবে রূপ লাভ করেছে। বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ বছরে পদার্পণ করেছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশ মাছ চাষে সয়ংসম্পূর্ণ। দেশে বর্তমানে মাছে উৎপাদন ৪৪ লক্ষ মেট্রিক টন। এর মধ্যে রুই, মৃগেল, কাতলা মাছের উৎপাদন ২০ শতাংশ, ইলিশের উৎপাদন ১২ শতাংশ, পাঙ্গাসের উৎপাদন ১১.৫ শতাংশ, বিদেশি কার্পের উৎপাদন ১১ শতাংশ, তেলাপিয়ার উৎপাদন ৯ শতাংশ, চিংড়ির উৎপাদন ৫.৫ শতাংশ এবং অন্যান্য মাছের উৎপাদন ৩১ শতাংশ। দেশে বর্তমানে ২৬৪টি সাধু পানির মাছের প্রজাতি, ৭৪০টি সামুদ্রিক মাছের প্রজাতি ও ৫৬৯টি অন্যান্য মাছের প্রজাতি পাওয়া যাচ্ছে (তথ্য সূত্র: শের-এ- বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা এবং জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি)। সাধু পানির মাছ উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশ তৃতীয়। মাছের প্রজাতির বৈচিত্র্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল পেছনে। প্রজাতি বৈচিত্র্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২২১টি দেশের মধ্যে ১০০তম।
প্রজাতি সংরক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউ সি এনের বৈশ্বিক তথ্য ভাণ্ডার ২০২০ অনুযায়ী ৭৪০টি প্রজাতির মধ্যে ৫০টি প্রজাতির মাছ বিপন্ন, ১০টি মহাবিপন্ন, ১৪ প্রজাতি সংকটাপন্ন ও ২৬টি প্রজাতি ঝুঁকিপূর্ণ।
এমতাবস্থায়, মাছের প্রজাতি টিকিয়ে রাখার জন্য হ্যাচারির রেণুর উৎপাদন ছাড়া বর্তমানে মৎস্য উৎপাদন সামনের এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। দেশে বর্তমানে সরকারি বেসরকারি হ্যাচারি ও নার্সারি মোট ১০৭৮টি। সরকারি মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের সংখ্যা (১০২টি হ্যাচারি সুবিধাসহ) মোট ১৪৩টি, বেসরকারি মৎস্য হ্যাচারির সংখ্যা ৯৩৫টি। হ্যাচারির রেণু উৎপাদন ৬৬৪০২০ কেজি, সরকারি হ্যাচারিতে রেণু উৎপাদন (২০১৯) ১৩৪৮৫ কেজি, বেসরকারি রেণু উৎপাদন (২০১৯) ৬৫০৫৩৫ কেজি। গলদা হ্যাচারি (সরকারি ২৭টিসহ) ৩৫টি, বাগদা হ্যাচারি ৪২টি, গলদা হ্যাচারিতে পিএল উৎপাদন (সরকারিসহ) ১.৫৮ কোটি, বাগদা হ্যাচারি পিএল উৎপাদন ৯৭৯.৩৭ কোটি, প্রাকৃতিক উৎস হতে রেণু উৎপাদন ২৪৯৬ কেজি। উল্লেখ্য যে প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে রেণু প্রাপ্তি দিন দিন কমে যাচ্ছে তাই ইনডিউস ব্রিডিং এর মাধ্যমে মৎস্য রেণু উৎপাদনের উপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে চাষিদের নির্ভর করতে হচ্ছে ।
সুবর্ণজয়ন্তীতে মৎস্য প্রোটিন সরবরাহের সফলতা
ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে ব্যাপকভাবে প্রাণিজ (মৎস্য) প্রোটিনের উপর যেমন জাতিকে নির্ভর করতে হয় তেমনি দেশের প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার ৬০% প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ হচ্ছে মৎস্য থেকে। জনপ্রতি বার্ষিক মাছ গ্রহণ ২৩.০০ কেজি। মাছের বার্ষিক চাহিদা ৪৩.৪১ লক্ষ মে.টন উৎপাদন (উৎপাদন হচ্ছে ৪৪ লক্ষ মে.টন)। জনপ্রতি মাছের বার্ষিক চাহিদা ২১.৯০ কেজি, জনপ্রতি মাছের দৈনিক চাহিদা ৬০ গ্রাম, আর প্রানিজ আমিষ সরবরাহে মাছের অবদান ৬০ শতাংশ। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে জাতির জন্য এক বিশাল অর্জন।
রূপালী মৎস্য রেণু উৎপাদন ব্যবস্থাপনা
রূপালী মৎস্য রেণু উৎপাদন তিনটি বিষয়ের উপর ওতপ্রোতভাবে জড়িত, বিষয়গুলো হলোঃ (১) ফিড, (২) রেণু (পোনা), (৩) ব্যবস্থাপনা। বিষয়গুলোর একটির ঘাটতি হলে রেণু উৎপাদন ব্যাহত হবে। গুণগত মান সম্পূর্ণ রেণু উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন (১) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পূর্ণ ব্রুড মাছ (মা, বাবা মাছ) (২) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পূর্ণ পুকুরের পরিবেশ। (৩) যে পুকুরে ব্রুড থাকবে সে পুকুরে রোগ জীবাণু উচ্ছেদ করণের ব্যবস্থা। (৪) বাহিরের রোগ জীবাণু প্রবেশ বন্ধ।
পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা ও পরিচর্যা: পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা ও পরিচর্যার মাধ্যমে ব্রুড মাছের উপর শারীরিক চাপ পরিহার করা যায়। ১.সঠিক উপায়ে পুকুর প্রস্তুতকরণ (পুকুর শুকানো, তলদেশের পচা কাদা অপসারণ, বার বার চাষ দিয়ে শুকানো এবং চুন প্রয়োগ)। ২. পানির উন্নত গুণাবলী বজায় রাখা (পিএইচ, অক্সিজেন, এ্যামোনিয়া ইত্যাদি)। ৩.মাছকে সকল প্রকার পরিবেশগত চাপ/পীড়ন থেকে মুক্ত রাখা। যেমন- অতিরিক্ত মাছ মজুদ না করা। পরিমিত মাত্রায় সুষম খাদ্য প্রয়োগ। অতিরিক্ত জাল টানা বানড়া চড়ানা করা, যা মাছের শরীরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্ষতের সৃষ্টি করে। কত ঘনত্বে মসৃণ পাত্রে ব্রুড মাছ পরিবহন করা। একই আকারের মাছ মজুদ করা। পানিতে নিয়মিত অক্সিজেন ঘাটতি, গ্যাসের আধিক্য বা দূষণ হলে পানি পরিবর্তন করা। ৪.শীতকালই ক্ষতরোগ সংক্রমণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। তাই এসময়ে ব্রুড মাছ ও তার পরিবেশ ও ঝুঁকিপূর্ণ সকল বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা। ৫. শীতের শুরুতে শতাংশে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করা (তবে এটা পানির ক্ষারত্বের উপর নির্ভর করে পরিবর্তনশীল)। ৬.অন্যান্য রোগ ও পরজীবীর ব্যাপারে সতর্ক থাকা। ৭.আক্রান্ত এলাকায় রোগ সহিষ্ণু প্রজাতির ব্রুড মাছ মজুদ করা। ৮. ব্রুড মাছ ও খামারের নিয়মিত পরিচর্যা।
ব্রুড মাছ ও খামারের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
মাছের আচরণের দিক দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। মাঝে মাঝে জালটেনে ব্রুড মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা যেতে পারে। ব্রুড মাছ রোগাক্রান্ত হলে তার চিকিৎসা ততসহজ নয়। রোগের শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা পদ্ধতি জটিল, ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল। তাই রোগ প্রতিরোধে পানির গুণাবলি উন্নয়ন ও উন্নত ব্যবস্থাপনা অধিক গ্রহণযোগ্য। সকল মৃত ও অর্ধমৃত ব্রুড মাছ অপসারণ করা ও মাটির নিচে পুঁতে ফেলা। দূষিত পানি পরিবর্তনে চুন প্রয়োগ (কলিচুন)। ১ কেজি/শতক (পিএইচ ও ক্ষারত্বের উপর ভিত্তি করে)। জিওলাইট শতাংশের ১৫০-২০০ গ্রাম ব্যবহার করে পানির এ্যামোনিয়াজনিত বিষক্রিয়া কমানো যায়। এককোষী/বহুকোষী পরজীবী সংক্রমণ হলে ৫০ পিপিএম ফরমালিনে (৩৭%) ২৮ ঘণ্টা গোসল করাতে হবে। আরগুলাস (উকুন) সংক্রমণে ০.২৫ থেকে ০.৫০ পিপিএমডি পটারেক্স আক্রান্ত পুকুরে ১০/১৫ দিন অন্তর অন্তর ২/৩ বার প্রয়োগ করতে হবে। ব্যাকটেরিয়াজনিত ক্ষত বা পচন হলে ৫০ মিগ্রা. টেট্রাসাইক্লিন/কেজি মাছকে প্রতিদিন খাবারের সাথে মিশিয়ে    ৫-৭ দিন খাওয়াতে হবে। ছত্রাক সংক্রমণ করলে ২০০ পিপিএম লবণ জলে আক্রান্ত মাছকে ১ ঘণ্টা গোসল (সপ্তাহে ১ বার) অথবা আক্রান্ত পুকুরে ০.৫ পিপিএম মিথাইলিন ব্লু প্রয়োগ করতে হবে।
ব্রুড মাছের কৌলিতাত্ত্বিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে করণীয়
ভালো মানের ব্রুডের উপরেই হ্যাচারীর সফলতা নির্ভর করে অর্থাৎ হ্যাচারীর মূল হাতিয়ার হলো ব্রুড মাছ(পরিপক্ক পুরুষ ও স্ত্রী মাছ)। সেই নেপোলিয়ান বোনাপার্ট কথার অবতারনা করা যায় আমাকে একজন শিক্ষত মা দাও আমি তোমাদের শিক্ষিত জাতি উপহার দিব।অনুরুপ অন্যান্য পারিপাশির্^ক ফ্যাক্টর ভালো থাকলে হ্যাচারিতে উন্নত রেণু উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্রুড মাছ শিক্ষিত মা বাবার ভুমিকাই পালন করে ।
জেনেটিক ভেরিয়েশন দুইভাগে ভাগ করা যায়। ১)অন্তঃপপুলেশন ভেরিয়েশন। ২) আন্তঃপপুলেশন ভেরিয়েশন।
অন্তঃপপুলেশন ভেরিয়েশন লক্ষণীয় : অন্তঃপপুলেশন ভেরিয়েশন লক্ষণীয় বিষয়গুলো হচ্ছে- ক) লিঙ্গ অনুপাত মা ঃ বাবা = ১ ঃ ১; হতে হবে। (খ) প্রজেনি বণ্টন উন্নত রেণু উৎপাদনের ক্ষেত্রে বড় নিয়ামক; (গ) পপুলেশনের আকারের উঠানামা পপুলেশন বৃদ্ধিতে বড়ফ্যাক্টর হিসাবে কাজ করে; (ঘ) আকস্মিক জেনেটিক সংকোচন বিষয়টি জিন পপুলেশন এর ক্ষেত্রে মাথায় রেখে হ্যাচারী অপারেশনে যেতে হবে অন্যথায় রেণু উৎপাদনে হোচট ক্ষেতে হবে; (ঙ) জেনেটিক ড্রিফ্ট বিষয়টি বেসরকারি হ্যাচারিসমূহে কোনভাবেই মেনে চলা হচ্ছেনা। যা হ্যাচারীর ভবিষ্যৎ এর জন্য কঠিন বাধা; (চ) নিকটতম ভাই ও বোন থেকে যখন মাছের প্রজনন ঘটিয়ে রেণু উৎপাদন করা হয় তাই অন্তঃপ্রজনন যা বাংলাদেশের বেসরকারি হ্যাচারিসমুহে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার এবং রেণুর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কালো অধ্যায়।
রূপালী মৎস্য রেণু চাষে সুপারিশ
রূপালী মৎস্য রেণু চাষে করণীয়সমুহ মেনে চললে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মাছের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে। যেমন- ১) মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন গুণগতমানসম্পন্ন উন্নত কৌলিতাত্বিক গুণসম্পন্ন রেণু প্রয়োজন। ২) ব্রুড ব্যাংক প্রকল্পের আওতায় (সিলভার কার্প, বিগহেড কার্প ও গ্রাসকার্প) ইত্যাদি প্রজাতির অরিজিনাল ব্রুড সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সরবরাহ করতে হবে এবং যথাযথ মনিটরিং এর মাধ্যমে উন্নত ব্রুড ব্যাংক গড়ে তুলতে হবে। ৩) বদ্ধ জলাশয়ে মৎস্য রেণু চাষ সম্প্রসারণ ও আধুনিকরণ করতে হবে। ৪) পরিবেশবান্ধব চিংড়ির পি.এল (পোস্ট লার্ভি) এর চাষ সম্প্রসারণ করতে হবে। ৫) মাছের প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র সংরক্ষণ করতে হবে (হালদাসহ অন্যান্য ক্ষেত্র)। ৬) যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে (কোভিড-১৯) রেণুর উৎপাদন, সরবরাহ, সেবা জরুরীখাত হসিাবে চালু রাখতে হবে। ৭) রেণু সরবরাহ, উৎপাদন, পরিবহণের সাথে জড়িত মানবসম্পদ এর উন্নয়নে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে (মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের)। ৮) ইনোভেশন ও ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রমকে জোরদার করতে হবে। ৯) রেণু উৎপাদনে ব্যবহৃত উপাদান যেমন- পিটুইটারি গ্রান্ড (পি.জি), এইচসিজি এবং অন্যান্য উপাদানসমুহ গুনগতমানসম্পন্ন হতে হবে। ১০) হ্যাচারি আইন সমুহ সঠিকভাবে মেনে চলার ব্যবস্থা করতে হবে।
অধিক রেণু উৎপাদনের চেয়ে গুণগতমান সম্পন্ন কম রেণু উৎপাদন অধিক শ্রেয়। ব্রুড মাছ চাষের ক্ষেত্রে এই প্রবাদটির গুরুত্ব অপরিসীম। ব্রুড মাছ একটি জলজ প্রাণী। পানির সঠিক ভৌত রাসায়নিক গুণাবলি অর্থাৎ সুস্থ জলজ পরিবেশের উপরই এদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকা ও বৃদ্ধি পাওয়া নির্ভর করে। অতএব, উন্নত জলজ পরিবেশ ও খামার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ব্রুড মাছকে সুস্থ রাখা অধিকতর সহজসাধ্য, কম ব্যয়বহুল, কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং পরিবেশ বান্ধব। যাই হোক ”মাছ উৎপাদন বৃদ্ধি করি, সুখী সমৃদ্ধ দেশ গড়ি”এই প্রতিপাদ্যকে বাস্তবায়ন করাই আমাদের সবার অঙ্গীকার। য়
খামার ব্যবস্থাপক, মৎস্যবীজ উৎপাদন খামার, গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধা, মোবাইল : ০১৭১২৪০৮৩৫৩, ই-মেইল : chowdhari_33@yahoo.com

বিস্তারিত
কবিতা ১৪২৮

বৃক্ষের কথোপকথন
কৃষিবিদ সাবরিনা আফরোজ
শিশু বৃক্ষরে ডাকি প্রৌঢ়ে কয়
দেখ আমি মহীরূহ করি বিশ্বজয়।
প্রকৃতির শোভা আমি অনন্ত যৌবন
দিয়ে গেছি কায়া ছায়া করে সমর্পণ।

এই যে দেখ হিজল তমাল আর কেয়ার বন
এর তলেতেই ক্লান্ত পথিক জুড়ায় দেহ মন।
শোন খোকা, বলে রখি তোমায় দামি কথা
বৃক্ষ তুমি, অনেক দামি, ফলবে হেথা হোথা।

পাকা আম, পাকা জাম আর পাকা পেঁপে
রূপগুণে ষোল আনা বলি যেতে যেতে।
তরমুজে আছে লোহা, পেয়ারায় ‘সি’
নারিকেলে ফসফরাস, খাবে বেশি বেশি।

ডুমুরে কিডনি ভালো, কদবেলে যকৃত
জলপাই রুচি আনে, কমলা  অমৃত।
হিজল, তমাল, ধুপ, আগর, হরগোজা
কুর্চি কেয়াও আছে চাই শুধু খোঁজা।

সেগুন, আকাশমণি, গর্জন, চাপালিশ
বৃক্ষভারে প্রকৃতি কভু করবে না নালিশ।
বৈশাখ আষাঢ় আর ভাদ্র আশ্বিন
ফল চাষে ধনী কৃষক খেটে রাত দিন।

আষাঢ়ের বরষায় সরসিত মাটি
এ সময়ের লাগানো গাছ সোনার চেয়ে খাঁটি।
উঁচু জমি ভালোবাসে নারিকেল কুল
দো-আঁশ মাটিতে হবে বাগান বিপুল।

ত্রিকোণী, ষড়ভুজী, কন্টুর পদ্ধতি
বেছে নাও, যেটা চাই, লাভ হবে অতি।
জলের শূন্যতা আর বসুধার খরা
না লাগলে বৃক্ষ সব হয়ে যাবে জরা।

লাগালে বৃক্ষ তার নেই কোনো হার
বৃক্ষরোপণে পাবে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার।

স্মারক বৃক্ষ হবে এক কোটি গাছ
মুজিববর্ষে পাবে নির্মল শ্বাস।
বৃক্ষ তুমি অতি দামি পুনরায় বলি
দিয়ে যাবে মন প্রাণ কুসুমিত কলি।


পুষ্টিবিধান
কৃষিবিদ মোঃ রাকিবুল ইসলাম
সেকেন্দার মিয়ার ছোট্ট কুটির
ছোট্ট পরিবার,
হাসি-আনন্দে উচ্ছলতায়
কেটে যায় দিন সবার।

এমনটি ছিল না যে,
এইতো কদিন আগে।
কৃষি অফিসের পরামর্শে তার
নতুন স্বপ্ন জাগে।

স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে
বিশ^ দরবারে
কৃষি উদ্যোক্তা নব ধারণায়
আসছে হাজারে হাজারে।

তাইতো মোরা বিশে^র বুকে
কাঁঠাল উৎপাদনে দ্বিতীয়,
আম আর পেয়ারায় অষ্টম।
পাট, সবজিতে দ্বিতীয়, তৃতীয়
আলু উৎপাদনে ষষ্ঠ।

বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা বলেÑ
সুস্থ যদি থাকতে চাও,
জনপ্রতি দৈনিক খাও,
৪০০ গ্রাম সবজি ও ফল
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসহ বাড়বে ভীষণ বল।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাÑ
‘এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে’
ফল-সবজির পুষ্টিগুণে উঠান ভরিয়ে রাখে।

করোনা মহামারিতে আজ জীবন বিপর্যস্ত
বাঁচতে হলে নিতে হবে নিজেই নিজের যত্ন।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে খেতে হবে বাহারি ফল,
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে, জীবন হবে ঝলমল।

আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু
আরো আছে কত কিছু!
জায়গা বুঝে লাগাতে হবে বেল, পেয়ারা
অনেকের আবার খুব প্রিয় নারিকেল, জাম্বুরা।

বসতবাড়ির আঙিনায়, টবে, ছাদে
বাড়ছে ফলের চাষ
পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণে
সচেষ্ট সবাই আজ।

থাকবে না আর অপুষ্টিজনিত সমস্যা,
পুষ্টির অভাব
শতাধিক প্রজাতির ফল চাষে তাই
দেশ ও দশের লাভ। য়

১আঞ্চলিক কৃষি তথ্য অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, ঢাকা অঞ্চল। মোবাইল : ০১৭১৭৫২৬৮৪০, ই-মেইল :sab.afr.777@gmail.com
২কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ, মোবাইল : ০১৭১৯-১৭২৯৫৫, ই-মেইল : aeotungipara.gov@gmail.com

বিস্তারিত
প্রশ্নোত্তর ১৪২৮

প্রশ্নোত্তর
কৃষিবিদ মো. তৌফিক আরেফীন

কৃষিবিষয়ক
নিরাপদ ফসল উৎপাদনের জন্য আপনার ফসলের ক্ষতিকারক পোকা ও রোগ দমনে সমন্বিত বালাইব্যবস্থাপনা অনুসরণ করুন।
মো. ফজলুর বেপারি, গ্রাম: সরফরাজপুর, উপজেলা: চৌগাছা, জেলা: যশোর
প্রশ্ন: কচু গাছের পাতা বাদামি হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে কী করব?
উত্তর: জমিতে এ ধরনের রোগ দেখা দিলে           ফেনামিডন ও মেনকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন-সিকিউর ৬০০ ডব্লিউজি অথবা মেটালেক্সিল ও মেনকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন-রিডোমিল গোল্ড প্রতিলিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে গাছের পাতার উপরে ও নিচে ভিজিয়ে ৭ থেকে ১০ দিন পর পর ৩ থেকে ৪ বার স্প্রে করতে হবে। আশা করি উপকার পাবেন।
মোঃ রবিউল ইসলাম, গ্রাম: পাটগা মুন্সিপাড়া, উপজেলা:          রানীশংকৈল, জেলা: ঠাকুরগাঁও
প্রশ্ন: ঢেঁড়সের পাতায় বাদামি রঙের দাগ পড়ে পাতা মুচড়ে ঝলছে যাচ্ছে। কী করব?
উত্তর: ঢেঁড়সের পাতায় এ ধরনের দাগ দেখা দেয়ার সাথে সাথে ইপ্রোডিয়ন গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন-রোভরাল ৫০ ডব্লিউপি প্রতিলিটার পানিতে ২ গ্রাম অথবা ডাইফেনো কোনাজল ও অ্যাজোক্সিস্ট্রবিন গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন-এমিস্টার টপ ৩২৫ এসসি প্রতিলিটার পানিতে ১ মিলি হারে মিশিয়ে ৭ থেকে ১০ দিন পর পর ২ থেকে ৩ বার গাছে স্প্রে করতে হবে। এসব ব্যবস্থা নিলে আপনি উপকার পাবেন।
মো. ফখরুল আলম,  গ্রাম: রানীগঞ্জ, উপজেলা: দিনাজপুর সদর, জেলা: দিনাজপুর
প্রশ্ন:  শসা গাছের পাতা কুঁকড়িয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় কী করণীয়?
উত্তর: শসা গাছে এ ধরনের রোগ হলে প্রাথমিকভাবে রোগাক্রান্ত গাছ তুলে ফেলতে হবে। আর অন্য গাছে যাতে করে এ রোগ ছড়াতে না পারে সেজন্য বাহক পোকা যেমন- সাদা মাছি পোকা, জাব পোকা, লিফ মাইনর প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এজন্য এসিফেট ১ গ্রাম প্রতিলিটার পানিতে মিশিয়ে শেষ বিকেলে সঠিক নিয়মে স্প্রে করতে হবে। আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে যে একই জমিতে বার বার শসা চাষ করা যাবে না। আধুনিক জাতের শসা চাষ করতে হবে এবং শস্যপর্যায় অবলম্বন করতে হবে। এসব ব্যবস্থা নিলে আপনি অবশ্যই উপকার পাবেন।
মো. ইমাম হোসেন, গ্রাম: সাকোয়া, উপজেলা: বোদা, জেলা: পঞ্চগড়
প্রশ্ন:  জলপাই গাছের পাতায়, ফলে ও কাণ্ডে কালো ময়লা জমে। কেন এমন হয় এবং প্রতিকার কী?
উত্তর: জলপাইয়ে এ ধরনের সমস্যাকে শুটিমোল্ড বলে। মিলিবাগ বা সাদামাছি আক্রমণ করলে এ ধরনের সমস্যা হয়। এ সমস্যারোধে আক্রান্ত ডাল পালা ছাঁটাই করে ফেলতে হয়। এ ছাড়া মিলিবাগ বা সাদামাছি পোকা দমনের জন্য এডমায়ার ১ মিলি প্রতিলিটার পানিতে মিশিয়ে সঠিক নিয়মে স্প্রে করলে উপকার পাবেন।
মো: ওয়াহিদ আলম,  গ্রাম: ফিংড়ি, উপজেলা: সাতক্ষীরা সদর, জেলা: সাতক্ষীরা
প্রশ্ন: অর্কিডের পাতা আগা থেকে মরে যাচ্ছে। পাতা শুকিয়ে যায় এবং ফুলেও দাগ দেখা যায়। এ সমস্যায় করণীয় কী?  
উত্তর:  অর্কিডের এ ধরনের সমস্যা অ্যানথ্রাকনোজ রোগের কারণে হয়ে থাকে। এ রোগের প্রতিকার হলো আক্রান্ত পাতা অপসারণ করা এবং মেনকোজেব গ্রুপের যে কোনো ছত্রাকনাশক ২ গ্রাম প্রতিলিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা। পাশাপাশি পানি সেচ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
মোঃ করিম মৃধা, গ্রাম: সনগাঁও, উপজেলা: বালিয়াডাঙ্গি, জেলা: ঠাকুরগাঁও
প্রশ্ন: নারিকেলের ছোট ফলগুলো ঝরে পড়ছে। ঝরা ফলগুলোর মুখ কালো। কী করব?
উত্তর: নারিকেল গাছের ফল ঝরে পড়ে যায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এমওপি বা পটাশ সারের অভাবে। সে কারণে নারিকেল গাছের বয়স জেনে সুষম মাত্রার সার প্রয়োগ করতে হয়। সেক্ষেত্রে ১-৪ বছর বয়সী গাছের জন্য গোবর ১০ কেজি, ইউরিয়া ২০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, এমওপি ৪০০ গ্রাম, জিপসাম ১০০ গ্রাম, জিংক সালফেট ৪০ গ্রাম, বরিক এসিড ১০ গ্রাম গাছের গোড়া থেকে চারদিকে ৩ ফুট বাদ দিয়ে মাটি কুপিয়ে ৮-১২ ইঞ্চি মাটির গভীরে সারগুলো প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগ করতে হয় দুই কিস্তিতে। প্রথম কিস্তিতে অর্ধেক সার মধ্য  বৈশাখ থেকে মধ্য  জ্যৈষ্ঠ (মে) এবং দ্বিতীয় কিস্তিতে বাকি অর্ধেক সার মধ্য ভাদ্র থেকে মধ্য আশ্বিন (সেপ্টেম্বর) মাসে। নারিকেল গাছের বয়স ৫-৭ বছর ও ৮-১০ বছর বয়স হলে ১-৪ বছর বয়সী নারিকেল গাছের সারের মাত্রাকে ২ ও ৩ গুণ করে নিয়মমাফিক প্রয়োগ করলেই কাক্সিক্ষত ফলন পাবেন। নারিকেল গাছের ঝরা ফলগুলো কালো হয় মাকড় বা মাইটের কারণে। সেজন্য ভালো হয় এবামেকটিন গ্রুপের যেকোনো ভালো মানের মাকড়নাশক আক্রান্ত নারিকেল গাছে সঠিক নিয়মে প্রয়োগ করা।
মৎস্য বিষয়ক
মোঃ সাইদুল ইসলাম, গ্রাম: তাম্বুলখানা, উপজেলা: ফরিদপুর সদর, জেলা: ফরিদপুর
প্রশ্ন: মাছের কসটিয়া নেকট্রিক্স রোগ দেখা যাচ্ছে কি করব?
উত্তর: এ রোগে মাছের শরীরে নীলাভ বা ধূসর রঙের আবরণ পড়ে এবং মাছের চর্মে প্রদাহ সৃষ্টি হয় ও বহুল পরিমাণে পিচ্ছিল ক্লেদ নির্গত হয়। এ সমস্যা রোধে ২০০ ভাগ পানিতে ১ ভাগ ফরমালিন মিশিয়ে মাছকে ১০ মিনিট গোসল করালে অরোগ্য হয়।
মোঃ খাইরুল আলম, গ্রাম: ধল্লাপাড়া, উপজেলা: ঘাটাইল, জেলা: টাঙ্গাইল
প্রশ্ন: মাছের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার জন্য কী করব?
উত্তর: আক্রান্ত মাছ বড় হলে কেজি প্রতি দেহ ওজনের জন্য ১৫ মিলিগ্রাম হারে জেনটামাইসিন মাছের দেহে ইনজেকশন করে দিতে হবে। মাছ ছোট আকারের হলে প্রতি কেজি খাদ্যের সঙ্গে ৪০ থেকে ৫০ মিলিগ্রাম একই এন্টিবায়োটিক মিশিয়ে কমপক্ষে ১০ দিন খাওয়াতে হবে। পোনা মাছ হলে ১ পিপিএম তুঁত দ্রবণে সপ্তাহে  ২ দিন ডুবিয়ে জীবাণুমুক্ত করে পরিষ্কার পানিতে ছেড়ে দিতে হবে। অথবা আক্রান্ত মাছকে ০.১৫ পিপিএম ম্যালাকাইট গ্রিন অথবা ০.৫ পিপিএম তুঁত অথবা ০.১ পিপিএম মিথিলিনব্লু অথবা ২.৫ শতাংশ সাধারণ লবণ দ্রবণে ডুবিয়ে পরিষ্কার পানিতে ছেড়ে দিতে হবে। একাজ সপ্তাহে ১ বার করে মোট ৩ বার করতে হবে।  
প্রাণিসম্পদ বিষয়ক
মোঃ সাখাওয়াত হোসেন, গ্রাম: সাকোয়া, উপজেলা:  বোদা, জেলা: পঞ্চগড়
প্রশ্ন: গরুকে           ইউরিয়া মোলাসেস স্ট্র খাওয়াতে চাই। খাবারটির তৈরির পদ্ধতি কী?
উত্তর: ইউরিয়া মোলাসেস স্ট্র তৈরি করতে খড় ৪২%, মোলাসেস ১৫% এবং ইউরিয়া ৩% দরকার হয়। উদাহরণ হিসেবে খড় ১০ কেজি, পানি ৫ লিটার, মোলাসেস ২.৫ কেজি এবং ইউরিয়া ৩০০ গ্রাম নিতে হবে। প্রথমে প্রত্যেকটি উপকরণ আলাদাভাবে মেপে নিতে হবে। তারপর পর্যাপ্ত পরিমাণ পানির সাথে ইউরিয়া মেশাতে হবে এবং এরপর মোলাসেস মেশাতে হবে। সবশেষে পলিব্যাগে খড় রেখে এর সাথে ইউরিয়া ও মোলাসেস মিশ্রণ ভালোভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে।  এভাবেই ইউরিয়া মোলাসেস স্ট্র তৈরি করা হয়।
সেলিনা বেগম, গ্রাম: বন্দুলি তলা, উপজেলা:  চৌগাছা, জেলা: যশোর।
প্রশ্ন: মুরগির বাচ্চার চোখ দিয়ে পানি পড়ে। কী করব ?
উত্তর: মুরগির বাচ্চার চোখ দিয়ে পানি পড়া অপথ্যালমিয়ার লক্ষণ। এক্ষেত্রে আই ড্রপ ব্যবহার করতে হবে যেমন সেভোডেক্স ভেট আই ড্রপ। এই আই ড্রপটি দিনে ২ বার করে ৩ থেকে ৫ দিন ব্যবহার করলে উপকার পাবেন। য়
(মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ক প্রশ্ন কৃষি কল সেন্টার হতে প্রাপ্ত)

উপপ্রধান তথ্য অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫,  ফোন : ০২-৫৫০২৮৪০০, ই মেইল :taufiquedae25@gmail.com

বিস্তারিত
শ্রাবণ মাসের কৃষি (১৬ জুলাই-১৫ আগস্ট)

শ্রাবণ মাসের কৃষি
(১৬ জুলাই-১৫ আগস্ট)

কৃষিবিদ ফেরদৌসী বেগম

শ্রাবণ মাস। অথৈ পানিতে খালবিল, নদীনাল, পুকুর ডোবা ভরে যায়, ভাসিয়ে দেয় মাঠ-ঘাট, প্রান্তর এমনকি আমাদের বসত বাড়ির আঙ্গিনা। প্রকৃতি সদয় থাকলে ভাটির টানে এ পানির বেশিরভাগ চলে যায় সমুদ্রে। কৃষি কাজে ফিরে আসে ব্যস্ততা। আর এ প্রসঙ্গে জেনে নেবো কৃষির বৃহত্তর ভুবনে কোন কোন কাজগুলো করতে হবে আমাদের।
আউশ  
এসময় আউশ ধান পাকে। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে পাকা আউশ ধান কেটে মাড়াই-ঝাড়াই করে শুকিয়ে বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে।
বীজ ধান হিসেবে সংরক্ষণ করতে হলে লাগসই প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার করলে ভবিষ্যতে ভালো বীজ পাওয়া যাবে।
আমন ধান
শ্রাবণ মাস আমন ধানের চারা রোপণের ভরা মৌসুম। চারার বয়স ৩০-৪০ দিন হলে জমিতে রোপণ করতে হবে।
রোপা আমনের অনুকূল পরিবেশ উপযোগী উন্নত জাত, যেমন বিআর১০, ব্রি ধান৩০, ব্রি ধান৩২, ব্রি ধান৩৩, ব্রি ধান৩৪, ব্রি ধান৩৮, ব্রি ধান৩৯, ব্রি ধান৬২, ব্রি ধান৭১, ব্রি ধান৭২, ব্রি ধান৭৫, ব্রি ধান৭৯, ব্রি ধান৮০, ব্রি ধান৮৭, ব্রি ধান৯০, ব্রি ধান৯১, ব্রি ধান৯৩, ব্রি ধান৯৪, ব্রি ধান৯৫, ব্রি হাইব্রিড ধান৪, ব্রি হাইব্রিড ধান৬, বিনা ধান৭, বিনা ধান১১, বিনা ধান১৬, বিনা ধান১৭, বিনা ধান২২, বিনা ধান২৩ প্রতিকূল পরিবেশ উপযোগী উন্নত জাত চাষ করতে পারেন; খরাপ্রবণ এলাকাতে নাবি রোপার পরিবর্তে যথাসম্ভব আগাম রোপা আমনের (ব্রি ধান৩৩, ব্রি ধান৩৯, ব্রি ধান৫৬, ব্রি ধান৫৭, ব্রি ধান৬৬, ব্রি ধান৭১ এসব), লবণাক্ত ও লবণাক্ত জোয়ারভাটা অঞ্চলে ব্রি ধান৭৩, ব্রি ধান৭৮, অলবণাক্ত            জোয়ারভাটা অঞ্চলে ব্রি ধান৭৬, ব্রি ধান৭৭ এবং জলাবদ্ধতা সহনশীল জাত ব্রি ধান৭৯ চাষ করা যেতে পারে;
চারা রোপণের ১২-১৫ দিন পর প্রথমবার ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। এর ১৫-২০ দিন পর দ্বিতীয়বার এবং তার ১৫-২০ দিন পর তৃতীয়বার ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে।
গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করলে চারা লাগানোর ১০ দিনের মধ্যে প্রতি চার গুছির মাঝে ১.৮ গ্রামের ১টি গুটি ব্যবহার করতে হবে।
পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য ধানের ক্ষেতে বাঁশের কঞ্চি বা ডাল পুঁতে দিতে পারেন যাতে পাখি বসতে পারে এবং এসব পাখি পোকা ধরে খেতে পারে।
পাট
ক্ষেতের অর্ধেকের বেশি পাট গাছে ফুল আসলে পাট কাটতে হবে। এতে আঁশের মান ভালো হয় এবং ফলনও ভালো পাওয়া যায়।
পাট পচানোর জন্য আঁটি বেঁধে পাতা ঝরানোর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং জাগ দিতে হবে। ইতোমধ্যে পাট পচে গেলে আঁশ ছাড়ানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
পাটের আঁশ ছাড়িয়ে ভালো করে ধোয়ার পর ৪০ লিটার পানিতে এক কেজি তেঁতুল গুলে তাতে আঁশ ৫-১০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে, এতে উজ্জ্বল বর্ণের পাট পাওয়া যায়। যেখানে জাগ দেয়ার পানির অভাব সেখানে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট পচাতে পারেন। এতে আঁশের মান ভালো হয় এবং পচন সময় কমে যায়।
বন্যার কারণে অনেক সময় সরাসরি পাট গাছ থেকে বীজ উৎপাদন সম্ভব হয় না। তাই পাটের ডগা বা কাণ্ড কেটে উঁচু জায়গায় লাগিয়ে তা থেকে খুব সহজেই বীজ উৎপাদন করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
পাটের ভাল বীজ পেতে হলে দেশী পাট বীজ এ মাসে বপন করতে হবে। সারিতে বপন করলে প্রতি শতাংশ জমিতে ১৬ গ্রাম তোষা এবং ২০ গ্রাম দেশী বীজ বপন করতে হবে। আর ছিটিয়ে বপন করলে শতাংশে ২০ গ্রাম তোষ এবং ২৪ গ্রাম দেশী পাটের বীজ বপন করতে হবে।
তুলা
রংপুর, দিনাজপুর অঞ্চলে আগাম শীত আসে, সে জন্য এসব অঞ্চলে এ মাসের মধ্যে তুলার বীজ বপন করতে হবে।
শাকসবজি
বর্ষাকালে শুকনো জায়গার অভাব হলে টব, মাটির চাড়ি, কাঠের বাক্স এমনকি পলিথিন ব্যাগে সবজির চারা উৎপাদনের ব্যবস্থা নিতে হবে। এ মাসে সবজি বাগানে করণীয় কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে মাদায় মাটি দেয়া, আগাছা পরিষ্কার, গাছের গোড়ায় পানি জমতে না দেয়া, মরা বা হলুদ পাতা কেটে ফেলা, প্রয়োজনে সারের উপরিপ্রয়োগ করা।
লতাজাতীয় গাছের বৃদ্ধি বেশি হলে ১৫-২০ শতাংশ পাতা ও লতা কেটে দিলে তাড়াতাড়ি ফুল ও ফল ধরবে। কুমড়াজাতীয় সব সবজিতে হাত পরাগায়ন বা কৃত্রিম পরাগায়ন অধিক ফলনে দারুণভাবে সহায়তা করবে। গাছে ফুল ধরা শুরু হলে প্রতিদিন ভোর বেলা হাত পরাগায়ন নিশ্চিত করলে ফলন অনেক বেড়ে যাবে। গত মাসে শিম ও লাউয়ের চারা রোপণের ব্যবস্থা না নিয়ে থাকলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। শিম ও লাউয়ের বীজ পচা কচুরিপানার স্তূপে বপন করে অতপর মূল মাদায় স্থানান্তর করতে পারেন। মাদার দূরত্ব হবে ৩ ফুট, ১ ফুট চওড়া ও ১ ফুট গভীর করে মাদা তৈরি করতে হবে। সবজি ক্ষেতে বালাই আক্রমণ দেখা দিলে জৈব বালাই ব্যবস্থাপনা যেমনÑ ফেরোমন ট্রাপ ব্যবহার করা যেতে পারে। পাতায় দাগপড়া রোগ দেখা দিলে অনুমোদিত মাত্রায় ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। বর্ষাকালীন সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতকালীন শাকসবজি চাষের প্রস্তুতি নিতে হবে।
গ্রীষ্মকালীন টমেটো ফসল মাঠে থাকলে গাছ বেঁধে দিতে হবে। এ মাসে নাবী পাট বীজ ফসলের সাথে সাথী ফসল হিসাবে সবজি চাষ করা যেতে পারে।
গাছপালা
এখন সারা দেশে গাছ রোপণের কাজ চলছে। ফলদ, বনজ এবং ঔষধি বৃক্ষজাতীয় গাছের চারা বা কলম রোপণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করে একহাত চওড়া এবং একহাত গভীর গর্ত করে অর্ধেক মাটি এবং অর্ধেক জৈবসারের সাথে ১০০ গ্রাম টিএসপি এবং ১০০ গ্রাম এমওপি ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। সার ও মাটির এ মিশ্রণ গর্ত ভরাট করে রেখে দিতে হবে। দশ দিন পরে গর্তে চারা বা কলম রোপণ করতে হবে। ভালো জাতের মানসম্পন্ন চারা রোপণ করতে হবে। চারা রোপণের পর গোড়ার মাটি তুলে দিতে হবে এবং খুঁটির সাথে সোজা করে বেঁধে দিতে হবে। গরু ছাগলের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য রোপণ করা চারার চারপাশে খাঁড়া বা বেড়া দিতে হবে।
প্রাণিসম্পদ
আর্দ্র আবহাওয়ায় পোলট্রির রোগবালাই বেড়ে যায়। তাই খামার জীবাণুমুক্তকরণ, ভ্যাকসিন প্রয়োগ, বায়োসিকিউরিটি এসব কাজগুলো সঠিকভাবে করতে হবে।
আর্দ্র আবহাওয়ায় পোলট্রি ফিডগুলো অনেক সময়ই জমাট বেঁধে যায়। সেজন্য পোলট্রি ফিডগুলো মাঝে মাঝে রোদে দিতে হবে।
বর্ষাকালে হাঁস মুরগিতে আফলাটক্সিন এর প্রকোপ বাড়ে। এতে হাঁস মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এজন্য খাবারের সাথে সূর্যমুখীর খৈল, সয়াবিন মিল, মেইজ গ্লুটেন মিল, সরিষার খৈল, চালের কুঁড়া এসব ব্যবহার করা ভালো।
গবাদি পশুকে পানি খাওয়ানোর ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ দূষিত পানি খাওয়ালে নানা রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। গো খাদ্যের জন্য রাস্তার পাশে, পুকুর পাড়ে বা পতিত জায়গায় ডালজাতীয় শস্যের আবাদ করতে হবে। গরু, মহিষ ও ছাগল ভেড়াকে যতটা সম্ভব উঁচু জায়গায় রাখতে হবে।
মৎস্যসম্পদ
চারা পুকুরের মাছ ৫-৭ সেন্টিমিটার পরিমাণ বড় হলে মজুদ পুকুরে ছাড়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। সাথে সাথে গত বছর মজুদ পুকুরে ছাড়া মাছ বিক্রি করে দিতে হবে। পানি বৃদ্ধির কারণে পুকুর থেকে মাছ যাতে বেরিয়ে না যেতে পারে এজন্য পুকুরের পাড় বেঁধে উঁচু করে দিতে হবে অথবা জাল দিয়ে মাছ আটকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। পানি বেড়ে গেলে মাছের খাদ্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ সময় পুকুরে প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে।
সুপ্রিয় কৃষিজীবী ভাইবোন, কৃষিক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের জন্য আধুনিক কৃষির কৌশলগুলো যেমন অবলম্বন করতে হবে তেমনি সকল কাজ করতে হবে সম্মিলিতভাবে। খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য বাড়ির আশপাশে, রাস্তার পাড়ে, পতিত জমিতে যত বেশি সম্ভব ফলদ বৃক্ষের চারা রোপণ করতে হবে। আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা কৃষিকে নিয়ে যাবে উন্নতির শিখরে। আর কৃষির যে কোন সমস্যা সমাধানের জন্য আপনার নিকটস্থ উপজেলা কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়া কৃষি তথ্য সার্ভিসের কৃষি কল সেন্টারের ১৬১২৩ এ নম্বরে যে কোন মোবাইল অপারেটর থেকে কল করে নিতে পারেন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ। য়
সম্পাদক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা, টেলিফোন : ০২৫৫০২৮৪০৪; ই-মেইল : editor@ais.gov.bd

 

বিস্তারিত