Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সুস্বাস্থ্যে-পুষ্টিকর-ও-নিরাপদ-খাদ্য

সুস্বাস্থ্যে পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাদ্য
তাসনীমা মাহজাবীন
বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ। খাদ্যশস্য ও প্রাণিজ খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে কিন্তু পুষ্টির সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়নে পুষ্টিবিষয়ক কাযর্ক্রম আরও জোরদার করতে হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের তথ্য অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪১৮ মেট্রিক টন চাল উৎপন্ন হয়েছে, ২২৫ লক্ষ মেট্রিক টন শাকসবজি, ৩৬ লক্ষ মেট্রিক টন ফল, ৮ লক্ষ মেট্রিক টন ডাল ও ১৬ লক্ষ মেট্রিক টন তেলবীজ উৎপাদিত হয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ৮৭.১০ লক্ষ মেট্রিক টন মাংস, ২৩৩৭.৬৩ কোটি ডিম ও ১৪০.৬৮ লক্ষ মেট্রিক টন দুধ উৎপাদিত হয়েছে। সবজি, মাছ, মাংস প্রভৃতি খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও মানুষের সামর্থ ও সচেতনতার অভাবে পুষ্টি উন্নয়নবিষয়ক বিভিন্ন সূচকের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। 
স্বাস্থ্য ও পুষ্টি ওতোপ্রতোভাবে জড়িত, সুস্বাস্থ্য ও সুস্থ মনের জন্য পুষ্টিকর খাবার অবশ্য প্রয়োজনীয়। খানার আয় ব্যয় ও জরিপ (ঐওঊঝ) ২০২২ অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশের একজন মানুষের দৈনিক গড় ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ ২৩৯৩ কিলোক্যালরি, তারমধ্যে দেখা যায় গ্রামের মানুষ ২৪২৪ কিলোক্যালরি গ্রহণ করে আর শহরের মানুষ গ্রহণ করে ২৩৯৩ কিলোক্যালরি।
আমাদের দেশে দৈনিক মাথাপিছু দানাদার খাদ্য যেমন চাল ও গম গ্রহণের পরিমাণ যথাক্রমে ৩২৮ গ্রাম এবং ২২.৯ গ্রাম, মাছ গ্রহণের পরিমাণ ৬৭.৮ গ্রাম এবং মাংস গ্রহণ করা হয় ৪০ গ্রাম। এছাড়া এবং গড়ে প্রতিদিন একজন মানুষ ১২.৭ গ্রাম ডিম ও ৩৪.১ গ্রাম দুধ গ্রহণ করে থাকে। শাকসবজি গ্রহণের পরিমাণ বিগত বছরের তুলনায় বেড়েছে তবে জাতীয় খাদ্য গ্রহণ নির্দেশিকা অনুযায়ী দৈনিক অন্তত ১০০ গ্রাম বা ১ আঁটি শাক এবং ২০০ গ্রাম বা ২ কাপ সবজি এবং ১০০ গ্রাম ফল (একটি টক ও একটি মিষ্টি) গ্রহণ করার বিষয়ে নির্দেশনা থাকলেও বর্তমানে দৈনিক গড় শাকসবজি ও ফল গ্রহণের পরিমাণ যথাক্রমে ২০১.৯ গ্রাম ও ৯৫.৪ গ্রাম।
বাংলাদেশের পারিবারিক খাদ্যভাস এর কারণে প্রতিদিনের খাবারে অনুপুষ্টি উপাদান কম থাকে, কিংবা থাকলেও ঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত না করার কারণে এবং খাবারের বৈচিত্র্যতা কম থাকায় মানবদেহে আয়োডিন, জিংক, ভিটামিন-এ এবং আয়রনের অভাব ব্যাপক প্রতিফলিত হচ্ছে বিশেষ করে গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েরা এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ লবণের অভাবে ভুগছেন। এ জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকাতে বিভিন্ন রঙিন শাকসবজি ও ফলমূল রাখতে হবে। 
জাতীয় খাদ্য গ্রহণ নির্দেশিকা ২০২০ অনুযায়ী বাংলাদেশের একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের গড়ে দৈনিক ২৪৩০ কিলোক্যালরি খাদ্য গ্রহণ করা উচিত এবং উক্ত ক্যালরীর উপরভিত্তি করে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ খাবার এর সমন্বয়ে প্রতিদিনের খাদ্য খাবারের প্লেট সাজানো যেতে পারে যেমন : খাবরের প্লেটে অর্ধেকটা ভাত,মিক্সড সব্জি, ডাল ,মাছ/মাংস/ডিম এবং শাক সাথে কাঁচামরিচ বা লেবু যোগ করা যেতে পারে। এছাড়া খাবার পরে একটা টক বা মিষ্টি জাতীয় ফল খাওয়া যেতে পারে। 
একটি দেশের পুষ্টি পরিস্থিতি নির্ণয়ের অন্যতম নিয়ামক হলো পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশুদের স্বাস্থ্যগত অবস্থা। ২০২২ এর বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ (ইউঐঝ)১ এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুর উচ্চমাত্রায় অপুষ্টির চিত্র হলো খর্বতা ২৪%, কৃশতা ১১%, কম ওজন ২২%। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা লক্ষ্য-২ এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ এর পুষ্টি পরিস্থিতি উন্নয়নে ২০৩০ সালের মধ্যে খর্বতা ১৫%, কৃশতা ৮%, কম ওজন ১০% নামিয়ে আনতে হবে। এর জন্য পুষ্টি প্রত্যক্ষ এবং পুষ্টি পরোক্ষ উভয় ধরনের কার্যক্রমের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। খাদ্য পুষ্টিকর এবং নিরাপদ হতে হবে, খাদ্য উৎপাদনের শুরু থেকে খাবারের থালা পর্যন্ত খাদ্যের নিরাপদতা নিশ্চিত করতে হবে। খাদ্য ও পানি নিরাপদ না হওয়ার কারণে বিভিন্ন রোগজীবাণুর আক্রমণ হয়, সংক্রামক রোগ দেখা দেয় সেই সাথে পুষ্টি প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। পারিবারিক পর্যায়ে খাদ্য নিরাপদ রাখার বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা ৫টি চাবিকাঠি সুপারিশ করেছে সেগুলো হলো-
 পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে যেমন : পরিচ্ছন্নতার খাবারের আগে ও পরে, টয়লেট থেকে ফিরে সাবান দিয়ে হাত ধৌতকরণ; তৈজসপত্র ও থালা-বাসন ভালোভাবে পরিচ্ছন্ন, রাখা ইত্যাদি। 
 কাঁচা ও রান্না করা খাবার আলাদা রাখতে হবে (কাঁচা মাছ/মাংস, ফলমূল বা শাকসবজি আলাদা রাখতে হবে; যাতে এক খাবারের জীবাণু অন্য খাবারে না যেতে পারে)।
 সঠিক তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট সময় ধরে খাবার রান্না করতে হবে (সঠিক তাপে ভালভাবে সিদ্ধ করে খাবার রান্না করতে হবে, খাবার ঢাকনা দিয়ে রান্না করতে হবে)।  
 নিরাপদ তাপমাত্রায় খাদ্য সংরক্ষণ করতে হবে যেমন রান্না করা খাবার ৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এর নিচে সংরক্ষণ করা উচিত এবং সংরক্ষণ করা খাবার পরিবেশনের আগে ভালভাবে গরম করা উচিত)। 
 নিরাপদ পানি ও খাদ্য উপকরণ ব্যবহার করতে হবে (রান্না ও খাবারে অবশ্যই নিরাপদ পানি ব্যবহার করতে হবে, ফলমূল ও শাকসবজি নিরাপদ পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে)
সুস্বাস্থ্য ও পুষ্টির জন্য আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকাতে পুষ্টি 
সমৃদ্ধ বৈচিত্র্যপূর্ণ বিভিন্ন খাদ্য সন্নিবেশ করতে হবে। খাদ্য নির্বাচন, প্রস্তুতকরণ, খাদ্য গ্রহণ এবং খাদ্য সংরক্ষণ ইত্যাদি সব বিষয়ে ফলিতপুষ্টি বিষয়ক জ্ঞানকে প্রধান্য দিতে হবে। এতে পারিবারিক খাদ্যাভ্যাস উন্নত হওয়ার পাশাপাশি জাতীয় পুষ্টি পরিস্থিতি উন্নয়নেও সাহায্য করবে।
 
লেখক : প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ফলিতপুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারটান), মোবাইল : ০১৭৮১৮৮৭৮৮৫