Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

ফসলের-মাঠে,-গুদামে-ও-মানব-স্বাস্থ্যে-ইঁদুরের-ক্ষতিকর-প্রভাব

ফসলের মাঠে, গুদামে ও মানব স্বাস্থ্যে 
ইঁদুরের ক্ষতিকর প্রভাব
কৃষিবিদ ড. মোঃ শাহ আলম ১  কৃষিবিদ ড. এ,টি,এম হাসানুজ্জামান ২ 
স্তন্যপায়ী শ্রেণীর মধ্যে রোডেনশিয়া বর্গের অন্তর্ভুক্ত ইঁদুর জাতীয় প্রাণী হলো একটি বিশেষ ধরনের প্রাণী এবং তাদের বিশেষত্ব এই যে, স্তন্যপায়ী শ্রেণীর ৫৪১৯টি প্রজাতির মধ্যে ২২৭৭টি প্রজাতিই এই বর্গের অন্তর্ভুক্ত। সারা বিশ্বে ইঁদুর জাতীয় প্রাণীর বর্গে ৩৪টি পরিবার ও ৩৮৯টি প্রজাতি আছে। এর মধ্যে মাত্র ২০-২৫টি প্রজাতি আপদ বালাই বা অনিষ্টকারী হিসেবে চিহ্নিত। গঁৎরফধব পরিবারের অন্তর্ভুক্ত অনিষ্টকারী মেরুদ-ী প্রাণীর মধ্যে ইঁদুর জাতীয় প্রাণী হলো সবচেয়ে গুরুত¦পূর্ণ ও ক্ষতিকারক প্রাণী যা ফসল বপন থেকে শুরু  করে ফসল কাটা ও সংগ্রহ পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে ক্ষতি করে থাকে। এরা সাধারণত গর্তে বাস করে, তবে কোনো কোনো প্রজাতির ইঁদুর ঘরে বা গাছে বাসা তৈরি করে বাস করে। ইঁদুর যে কোনো পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে খুব দ্রুত বংশবিস্তার করতে সক্ষম। তাছাড়া ইঁদুর জাতীয় প্রাণী বিভিন্ন রোগের বাহক/সংরক্ষক হিসাবেও কাজ করে। ইঁদুর স্তন্যপায়ী, সর্বভুক ও নিশাচর প্রাণী। কৃষি প্রধান বাংলাদেশে ফসলের জন্য ক্ষতিকর স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে ইঁদুর মানুষের প্রধান শক্র। ইঁদুর মানুষের উপকারে আসে এমন ঘটনা বিরল। মানুষের আশেপাশে থেকেই এরা মাঠে গুদামে বাসাবাড়িতে অফিস আদালতে প্রতিনিয়ত ক্ষতি করে চলেছে। পৃথিবীর এমন কোনো দেশ নেই যেখানে ইঁদুরের সমস্যা নেই। এদের উপদ্রবে পৃথিবীর বহুদেশে চরম দুর্যোগ নেমে এসেছে। মানবজীবনে ইঁদুরের ক্ষতিকর ভূমিকা অপরিসীম।
ইঁদুর মানুষ এবং গৃহপালিত পশুপাখির মূলত চারভাবে ক্ষতি করে থাকে। প্রথমত মাঠের কৃষিশস্য খেয়ে; দ্বিতীয়ত গুদামজাত খাদ্যশস্য খেয়ে ও নষ্ট করে; তৃতীয়ত অবকাঠামোর ক্ষতি করে ও চতুর্থত মানুষ ও পশুপাখির রোগজীবাণু বহন করে।
মাঠের কৃষিশস্যের ক্ষতি
ইঁদুর প্রতিদিন তার শরীরের তুলনায় দশ ভাগের এক অংশ খাবার খেয়ে থাকে এবং ইঁদুরের খাবারের পরিমাণ তাদের আকার প্রজাতি ও পারিপার্শিক আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে। ইঁদুর ধান, গম, ভুট্টা, আখ, আলুসহ বিভিন্ন ফল ও সবজির ব্যাপক ক্ষতি করে থাকে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বহুদেশে 
এদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণীত হয়েছে। ইঁদুর প্রতি বছর মাঠ ফসলের প্রায় ২০% ক্ষতি করে থাকে। বাংলাদেশে ১৯১৪-১৫ সালের হিসেব অনুযায়ী ইঁদুরের আক্রমণে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৭৪৪ মেট্রিক টন ধানের ক্ষতি হয়েছে। যার বর্তমান বাজারদর ৪৩৯ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা। চালের ক্ষতির পরিমাণ ৬২ হাজার ৭৬৪ মেট্রিক টন। যার বাজারদর ২০০ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা। গমের ক্ষতির পরিমাণ ২৯ হাজার ৬৬০ মেট্রিক টন। যার বাজারদর ৮৩ কোটি ৫ লক্ষ টাকা। সব মিলে ইঁদুর দ্বারা প্রায় ৭২৪ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে (প্রথম আলো, ২১ জুন ২০১৫)। আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জরিপে ২০১৩ সালের হিসাব অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী ইঁদুর দ্বারা ক্ষতি করা নিয়ে গবেষণায় বলা হয়েছে এশিয়ায় ইঁদুর বছরে ১৮ কোটি মানুষের ১২ মাসের খাবার নষ্ট করে। বাংলাদেশে প্রায় ৫০-৫৪ লক্ষ লোকের এক বছরের খাবার ইঁদুর কারণে নষ্ট হয়। ইঁদুর বছরে আমন ধানের শতকরা ৫-৭ ভাগ, গমের শতকরা ৪-১২ ভাগ, গোলআলুর শতকরা ৫-৭ ভাগ, আনারসের শতকরা ৬-৯ ভাগ নষ্ট করে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে, ইঁদুর প্রতি বছর বিশ্বের ৩ কোটি ৩৩ লক্ষ টন খাবার নষ্ট করে।  বিশ্বে প্রতি বছর ইঁদুর যে পরিমাণ খাবার নষ্ট করে, সে খাবার খেয়ে অনায়াসেই ২৫-৩০টি দরিদ্র দেশের মানুষ এক বছর বাঁচতে পারে।
সংগ্রহোত্তর ক্ষতি
খাদ্য সংক্রমিত/নোংরা করে : প্রাণীর জন্য সরবরাহকৃত খাদ্য ও সংরক্ষিত শস্য গ্রহণ এবং দূষিত করার জন্য ইঁদুর কুখ্যাত। প্রচুর পরিমাণ খাদ্যশস্য গুদামে সংরক্ষণ করা হয় যেখানে ইঁদুরের ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি পরিলক্ষিত হয়। উষ্ণ ও অবউষ্ণ অঞ্চলে ইঁদুর দ্বারা ক্ষতির পরিমাণ প্রায়      ২-১৫%। বিশ্বস¦াস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী এক বছরে ভারতের মুম্বাইয়ে পর্যাপ্ত ইঁদুর দমন করে ৯০,০০০ লোকের খাবার সঞ্চয় করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন রিপোর্টে দেখা গিয়েছে ইঁদুর দ্বারা সংগ্রহোত্তর ক্ষতির পরিমাণ ২.৫-৩০ শতাংশ। ছোট কালো ইঁদুর, গেছো ইঁদুর এবং নেংটি ইঁদুর প্রধানত গুদামে, গবেষণাগারে, অফিসে, বাসাবাড়ীতে, ক্ষতি করে থাকে। গুদামে বিভিন্ন শস্যের  যেমন ধান, চাল, গম, ডাল, আলু ইত্যাদির বস্তা কেটে, শস্য খেয়ে ও ইঁদুরের পশম, প্রস্রাব পায়খানা মিশে ব্যাপক ক্ষতি করে থাকে। একটি ইঁদুর বছরে খাবার খায় ৮-১০ কেজি, প্রস্রাব করে ৬ লিটারের মতো, পায়খানা করে ১৫,০০০ বার এর মতো যার ওজন প্রায় ২ কেজি ও গায়ের পশম ঝরে পড়ে ৫ লাখের মতো। একটি ধেড়ে ইঁদুর বছরে ২৫,০০০ এবং নেংটি ইঁদুর ১৭,০০০ মল তৈরি করতে পারে। ইঁদুর খেয়ে যতটা না নষ্ট করে তার থেকে ৫-১০ গুণ বেশি নষ্ট করে গর্তে নিয়ে, মাটিতে মিশিয়ে, পশম, প্রস্রাব, পায়খানা ইত্যাদি দিয়ে। এভাবে ইঁদুর আমাদের খাদ্যশস্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি নষ্ট করে আমাদের অর্থনীতিতে উল্লেখ্যযোগ্য পরিমাণ ক্ষতি সাধন করছে। একটি ইঁদুর প্রতি পরিবারে গুদামে বছরে ৪০-৫০ কেজি দানাশস্য ক্ষতি করে থাকে এবং এ ক্ষতির পরিমাণ ৭৫,০০০-১,০০,০০০ মেট্রিক টন। ইঁদুর প্রতি বছর বিশ্বের ৩৩ মিলিয়ন টন গুদামজাত খাবার নষ্ট করে।  
অবকাঠামোর ক্ষতি
ইঁদুর টেলিফোনের তার কেটে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ও বৈদ্যুতিক তার কেটে যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল ও ভয়াবহ অগ্নিকা- ঘটায়। ল্যাবরেটরিতে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, ইলেকট্রিক তার, আসবাবপত্র ইত্যাদি কেটে ক্ষতি করে। নেংটি ইঁদুর বাসাবাড়ি ও ল্যাবরেটরিতে লেপতোষক, বই পুস্তক, কাগজ, ফাইল ইত্যাদি কেটে ব্যাপক ক্ষতি করে থাকে। রাস্তাঘাট, সড়ক, রেলপথ, ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ধ্বংস হওয়ার জন্য প্রধানত ইঁদুরই দায়ী। 
ইঁদুরবাহিত রোগজীবাণু
মাঠে ও সংগ্রহোত্তর ক্ষতি ছাড়াও ইঁদুর প্লেগসহ প্রায় ৪০ থেকে ৬০ প্রকার রোগ ছড়ায়। মানুষ ও পশুপাখির নানা প্রকার মারাত্মক রোগজীবাণু বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবাদিপশু ও পোল্ট্রিতে ইঁঁদুর কমপক্ষে ৪৫টি রোগের বাহক হিসেবে স্বীকৃত, যেমন-সালমোনেলোসিস, পাস্চুরেলোসিস, লেপটোস্পাইরোসিস, সোয়াইন ডিসেন্ট্রি, ট্রাইচিনোসিস, টক্রোপ্লাজমোসিস এবং জলাতঙ্ক। এরা রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুকে সাধারণত এদের পায়ের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। ইঁদুরবাহিত কিছু রোগ ও তাদের লক্ষণ নি¤েœ দেয়া হলো-
হানট্যান ভাইরাস (রক্তক্ষরা জ্বর) 
পৃথিবীর অনেক অংশের শহরের ইঁদুরের শরীরে হানট্যান বাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। এ ভাইরাস পোষক হতে পোষকে আক্রান্ত লালা, মূত্র এবং মলের মাধ্যমে বিস্তার ঘটে থাকে। কিছু স্ট্রেইনের মানুষের ওপর অল্প প্রভাব রয়েছে। অন্যগুলো নানা রকম লক্ষণসহ প্রধান অসুস্থতার কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। 
টিক টাইফাস 
কুকুর এ রোগের জন্য প্রধান ভা-ার, কিন্তু ইঁদুরও গুরুত্বপূর্ণ ভা-ার বা আধার। এ রোগে আক্রান্ত টিকে (এক প্রকার কীট) কামড়ানোর ফলে মানুষে এ রোগের সংক্রমণ ঘটে। সমস্ত এশিয়াতে টিক এ রোগের বিস্তারের সহিত জড়িত।  
স্ক্রাব টাইফাস 
সমস্ত এশিয়া জুড়ে নানা রকম ইঁদুর জাতীয় প্রাণীরা (রোডেন্ট) এ রোগের প্রধান ভান্ডার বা আধার।  গণভুক্ত বিভিন্ন প্রকার মাকড়ের শূককীট যা ‘চিগার’ (পযরমমবৎং) নামে পরিচিত, তাদের কামড়ে মানুষের মধ্যে রোগ সংক্রমিত হয়। মানুষের মৃত্যুর হার কম হবে যদি প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা করা হয়। 
মিউরিন টাইফাস 
সমস্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে এর প্রদুর্ভাবের রিপোর্ট রয়েছে। এ রোগের বিস্তার ঘটে ফ্লির (ঋষবধ) কামড়ে অথবা আক্রান্ত মলের অথবা দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া ফ্লির মাধ্যমে। এ রোগের কারণ মানুষের মধ্যে বৃহৎ পরিসরে রোগের লক্ষণ দেখা যায় কিন্তু মৃত্যুর হার অনেক কম হয়। 
লেপটোস্পাইরোসিস 
খবঢ়ঃড়ংঢ়রৎধ গণভুক্ত নানা রকম স্পাইরোকিটস (ংঢ়রৎড়পযধবঃবং) জুনোটিক রোগের জীবাণু মাঠের কালো ইঁদুর বহন ও বিস্তার করে। প্রায় সকল ইঁদুর জাতীয় প্রাণীর (রোডেন্ট) প্রজাতিরা পোষক হিসেবে কাজ করে। মানুষে সংক্রমণ ঘটে যখন একটি খোলা ক্ষতস্থান ইঁদুরের প্রসাব দ্বারা দূষিত পানি, আর্দ্র মাটি অথবা উদ্ভিদের সংস্পর্শে আসে। যারা রোপণকৃত গাছপালা অথবা মাঠে কাজ করে তাদের এ রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। 
ইঁদুরের ইউরিন (প্রস্রাব) বাহিত লেপ্টেস্পাইরা নামক এক ধরনের রোগের প্রকোপ বাড়ছে বাংলাদেশে। সাধারণ জ্বর, সর্দি-কাশি, জন্ডিস ও গায়ে লালচে রেশ উঠা এ রোগের উপসর্গ হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোগটি সঠিকভাবে শনাক্তে ব্যর্থ হচ্ছেন চিকিৎসকরা। মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইসিডিডিআর, বি) পরিচালিত ২০ মাস মেয়াদি খাদ্যবাহিত রোগ নিরীক্ষণ প্রতিবেদনে এ রোগে প্রায় দেড়শ রোগী আক্রান্ত হওয়ার নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া গেছে। রাজধানীর বেসরকারি উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সর্বোচ্চ ২৫ রোগীর এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য প্রমাণ রয়েছে। আইসিডিডিআর,বি এর ল্যাবরেটরিতে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এ রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত করা হয়। জানা যায়, এ রোগে (লেপ্টেস্পাইরা) আক্রান্ত হয়ে নরসিংদীর একটি পরিবারের চার জনের মধ্যে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। (জাগোনিইজ ২৪.কম, ৩১ জানুয়ারি ২০১৬)
ইঁদুর কামড়ানো জ্বর 
ইঁদুর কামড়ানো জ্বর (ঝঢ়রৎরষষঁস সরহড়ৎ) স্পাইরোকিটস (ংঢ়রৎড়পযধবঃব) এর কারণে এ রোগ হয়। ইঁদুর জাতীয় প্রাণীদের  (রোডেন্ট) কামড়ানো দ্বারা এ রোগের বিস্তার ঘটে থাকে। পৃথিবীর সর্বত্র এ রোগ দেয়া যায়। অনেক সপ্তাহ পর্যন্ত এ রোগ সুপ্তবস্থায় থাকে এবং উপসর্গ সাধারণত ক্ষত সেরে ওঠার/শুকানোর পর দেখা যায়। 
প্লেগ 
ইহা একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ। যদি এ রোগ প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা যায় তবে এন্টিবায়োটিক দ্বারা চিকিৎসা করা যায়। এ রোগের জীবনচক্র হল-স্তন্যপায়ী প্রাণী থেকে ফ্লি থেকে স্তন্যপায়ী প্রাণী। ইঁদুর জাতীয় প্রাণীরা এ রোগের প্রাথমিক পোষক। ইতিহাস হতে জানা যায় যে, চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি ঘটার পরও প্লেগ পৃথিবীব্যাপী পূর্বের অনুরূপ আবার সমস্যা ঘটাতে পারে। যদিও পৃথিবীর অনেকাংশে এটি স্বাস্থ্যের জন্য একটি বিরাট সমস্যা হিসাবে বর্তমানে বিদ্যমান রয়েছে। এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়াতে ২০ শতাব্দীর প্রথমার্ধে সর্বশেষ এ রোগ মহামারী আকারে অবতীর্ণ হয়েছিল। 
সালমোনেলোসিস 
পৃথিবী ব্যাপী সালমোনিলা (ঝধষসড়হবষষধ) ব্যাকটেরিয়া দ্বারা মানুষের সংক্রমিত হয়। সাধারণত এ রোগে আক্রান্ত ইঁদুর জাতীয় প্রাণীর (ৎধঃং ধহফ সরপব) মলের মাধ্যমে দূষিত পানি অথবা খাদ্য গলাধঃকরণের মাধ্যমে হয়ে থাকে। কিন্তু সঠিকভাবে প্রস্তুত নহে এরূপ খাদ্য খেলেও এ রোগ হতে পারে। অনেক প্রজাতির বিভিন্ন রকমের মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে।
টক্সোপ্লাজমোসিস 
এ রোগের কারণ পড়পপরফরধহ বর্গের ঃড়ীড়ঢ়ষধংসধ মড়হফরর প্রজাতি। এ রোগের প্রাথমকি পোষক গৃহপালিত বিড়াল। ইঁদুর এবং মাইস (সরপব) সহ অনেক স্তন্যপায়ী প্রাণী এ রোগের মধ্যবর্তী পোষক। 
লাসা জ্বর 
লাসা জ্বর (খধংংধ ভবাবৎ/খধংংধ যবসড়ৎৎযধমরপ ভবাবৎ) সর্বপ্রথম আবিষ্কার হয় ১৯৬৯ সালে  নামে ইজেরিয়ার বোর্নো প্রদেশের লাসা শহরে। লাসা ভাইরাস নামের এক ধরনের জীবাণুর সংক্রমণে রোগটি হয়। লাসা জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গের মধ্যে রয়েছে- জ্বর, মুখম-ল ফুলে যাওয়া, মাংসপেশী ঢিলে হয়ে যাওয়া, বমিভাব, রক্তবমি, ডায়রিয়া (রক্তসহ), পেটব্যথা, কোষ্ঠবদ্ধতা, কাশি। নাইজেরিয়ায় প্রাণঘাতী লাসা জ্বরে এখন পর্যন্ত ৯০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে দেশটির সরকারি সংস্থা  নাইজেরিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (এনসিডিসি)। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ৫৬ দিনে এই প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দিন দিন লাসা জ্বরে মৃত্যুর সংখ্যা খুব দ্রুত বাড়ছে (মার্চ ৩, ২০১৮ বাংলাদেশ প্রতিদিন)।
ইঁদুর মানব জীবনে কি পরিমাণ ক্ষতি করে তা উপরোক্ত আলোচনা থেকে অনুধাবন করা যায়। ইঁদরের উপদ্রব বেশি হলে সব রকম দমন ব্যবস্থা গ্রহণ করেই ইঁদুর দমন করা উচিত। ইঁদুর দমনের জন্য কোন একক পদ্ধতি খুব বেশি কার্যকর নয়, এক্ষেত্রে একাদিক বা সমন্বিত দমন পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। ইঁদুর  দমনের  সফলতা নির্ভর  করে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও সম্মিলিত  প্রচেষ্টার  উপর। অতএব, সম্মিলিতভাবে ইঁদুর দমন করলেই ইঁদুরের উপদ্রব কমিয়ে ইঁদুরের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

লেখক : ১প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বিভাগীয় প্রধান, ২ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, অনিষ্টকারী মেরুদন্ডী প্রাণী বিভাগ, বাংলাদেশ  কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর, মোবাইল-০১৯১১৮৫৭৫৮৬।