চীনাবাদামের গুরুত্ব ও খরিফ-২
মৌসুমে চাষাবাদ পদ্ধতি
ড. এম. মনজুরুল আলম ম-ল
বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুষ্টি স্বল্পতা দূর করতে, মাটির হারানো উর্বরাশক্তি ফিরে পেতে, মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে এবং দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে চীনাবাদাম চাষের গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষের খাদ্য তালিকায় আমিষের উৎস হিসেবে চীনাবাদাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চীনাবাদাম ভোজ্যতেল, প্রোটিন ও ভিটামিন ও মিনারেল এর ভালো উৎস। চিনাবাদাম হল ভোজ্যতেল এবং খাদ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস কারণ কার্নেল তেল (৪৮-৫০%) এবং প্রোটিন (২৫-২৮%) সমৃদ্ধ এবং বিভিন্ন ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎস। ফাইবার সমৃদ্ধ চীনাবাদাম খেলে হজমশক্তিও উন্নত হয়। এছাড়া ওজন নিয়ন্ত্রণে এবং রক্তে শর্করাকে কম রাখতে সাহায্য করে এই বাদাম। চীনাবাদামে নিয়াসিন (ভিটামিন বি৩), ফোলেট (ভিটামিন বি৯) এবং ভিটামিন ই, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস এবং পটাশিয়ামের মতো খনিজ পদার্থ রয়েছে। বাদাম খাওয়া শরীরের জন্য জরুরি।
এর তেল প্রসাধনীর উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। চীনাবাদাম থেকে পাওয়া তেল ভোজ্য ও লুব্রিকেন্ট হিসেবে, তেলের কেক পশুখাদ্য এবং জৈবসার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। চীনাবাদামের খোসা সক্রিয় কার্বন তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। চীনাবাদাম চাষে জমিতে নাইট্রোজেন বাড়ে হেক্টর প্রতি প্রতি ৪০-৫০ কেজি। সুতরাং শস্যপর্যায়ে চীনাবাদাম চাষ জমির উর্বরতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তেল জাতীয় ফসলের মধ্যে একমাত্র চীনাবাদাম বালুময় চর এলাকায় সবচেয়ে ভাল ফলন দেয়। চীনাবাদাম চাষাবাদে খরচ অন্যান্য তেল ফসলের চেয়ে অনেক কম। দেশের নদী তীরবর্তী অঞ্চল এবং সমুদ্রতীরবর্তী এলাকার চরসমূহের ২ লাখ ৭০ হাজার হেক্টর জমি ৪-৫ মাস অনাবাদি থাকে। চীনাবাদাম খরা সহিষ্ণু ফসল বিধায় চীনাবাদাম ফসল চাষাবাদে সাধারণত সেচের প্রয়োজন হয় না। এবং সহজেই এ সকল পতিত জমিতে চীনাবাদাম চাষাবাদ করে কৃষক অর্থনৈতিক লাভবান হবে। এছাড়া পাট কাটার পর অধিকাংশ জমি রবি ফসল চাষ পর্যন্ত পতিত থাকে। এবং এ সমস্ত পতিত জমিতে সহজেই চীনাবাদাম চাষ করা সম্ভব। এছাড়া চীনাবাদামের বাজারমূল্য অন্যান্য যে কোন তেল ফসরের চেয়ে বাজার মূল্য বেশি (১৩০-১৫০ টাকা/কেজি), ফলে কৃষক চীনাবাদামের চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে বেশি লাভবান হবেন। এছাড়া চীনাবাদাম খেলে হজমেও সমস্যা হয় না।
চীনাবাদামের উন্নত জাতসমূহ
বর্তমানে বাংলাদেশে যা চীনাবাদাম উৎপাদিত হয় তা চাহিদার এক তৃতীয়াংশ মাত্র। এ চাহিদাকে সামনে রেখে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বেশ কিছু উচ্চফলনশীল বাদামের জাত উদ্ভাবন করেছেন যা প্রচলিত জাত থেকে ফলন বেশি এবং জীবনকাল প্রচলিত জাতের চেয়ে কম। এ যাবত বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট ১১টি ও বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট ১১টি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে। তন্মধ্যে বারিচীনাবাদাম-৮ এবং বিনাচীনাবাদাম-৪ ও ৮ সবচেয়ে জনপ্রিয় জাত। তবে জাত দুইটি অনেক পুরাতন জাত, ফলে পোকা ও রোগ বালাইয়ের আক্রমণ বেশি হচ্ছে বিধায় কৃষিবিদগণ অধুনা উদ্ভাবিত স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন উচ্চফলনশীন জাত বারিচীনাবাদাম-১০ ও ১১ এবং বিনাচীনাবাদাম-১০ ও ১১ চাষ করার পরামর্শ দিচ্ছেন। নি¤েœ উচ্চফলনশীল বাদামের জাতগুলোর বৈশিষ্ট্য উলে¬খ করা হলো যাতে কৃষক ও মাঠপর্যায়ের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মী অঞ্চলভেদে সঠিক বাদামের জাতটি বেছে নিতে পারে।
বারি চীনাবাদাম-৫ : মাঝারি উঁচু গাছ (উচ্চতা ৩৫-৪০ সেমি.)। গাছ খাড়া এবং গুচ্ছাকার, পাতার রং হালকা সবুজ। ১০০ বীজের ওজন ৪৮-৫০ গ্রাম। বীজে তেলের পরিমাণ ৫১% এবং আমিষের পরিমাণ ২৬%। খরিফ-২ মৌসুমে জীবনকাল ১১৫-১২৫ দিন এবং ফলন ২.২৫ টন/হেক্টর।
বারি চীনাবাদাম-৮ : মাঝারি উঁচু গাছ (উচ্চতা ৩৫-৪২ সেমি.)। গাছ খাঁড়া এবং গুচ্ছাকার, পাতার রং হালকা সবুজ। ১০০ বীজের ওজন ৫৫-৬০ গ্রাম। বাদামের খোসা মসৃণ ও কিছুটা সাদাটে। বীজে তেলের পরিমাণ ৫০% এবং আমিষের পরিমাণ ২৬%। খরিফ-২ মৌসুমে জীবনকাল ১২৫-১৪০ দিন এবং ফলন ২.২০ টন/হেক্টর।
বারি চীনাবাদাম-১০ : গাছের উচ্চতা মাঝারি (৪০-৪৫ সে.মি.)। এ জাতটি চরাঞ্চলে চাষাবাদের জন্য খুবই উপযোগী। প্রতি ১০০ বাদামের ওজন ৪০-৪৫ গ্রাম। জাতটি স্বল্প মাত্রায় খরা ও রোগ সহনশীল এবং জীবনকাল: খরিফ মৌসুমে ১২০-১৩০ দিন। ফলন: খরিফ মৌসুমে ১.৮০-২.০০ টন/হেক্টর।
বারি চীনাবাদাম-১১ : প্রায় প্রতিটি বাদামে ৩-৪ টি বীজ থাকে এবং বীজের রং লালচে। বাদামের আকার বড় এবং ১০০ বাদামের (খোসা ছাড়া) ওজন ৫০-৫৫ গ্রাম। জীবনকাল খরিপ-২ মৌসুমে ১০৮-১১২ দিন। বাদামের খোসা মসৃণ এবং সাদাটে ও লম্বা। গাছের উচ্চতা খরিপ-২ মৌসুমে ১০২-১১০ সেমি.। পাতার রং গাঢ় সবুজ এবং কা-ের রং গাঢ় লালচে। প্রতি গাছে বাদামের সংখ্যা ১৭-২০ টি। শতকরা সেলিং হার ৭০-৭২ ভাগ। বাদামগুলো থোকায় থোকায় জন্মে। ফলন: খরিফ মৌসুমে ২.০০-২.২০ টন/হেক্টর।
বিনা চীনাবাদাম-৪ : প্রায় সব বাদামগুলো গাছের গোড়ায় একসাথে গুচ্ছাকারে থাকে। দানা মাঝারি। বীজে তেলের পরিমাণ ৪৯% এবং আমিষের পরিমাণ ২৭.৫%। খরিফ-২ মৌসুমে জীবনকাল ১১০-১২০ দিন এবং ফলন ২.৪০ টন/হেক্টর।
বিনা চীনাবাদাম-৮ : লবণ সহিষ্ণু (৮ ডিএস/মি.)। বীজের আকার বড়। দানা মধ্যম আকারের (১০০ দানার ওজন ২৯-৩০ গ্রাম), পডে দানার হার ৭৫-৭৭ %। বীজে আমিষ ও তেলের পরিমাণ যথাক্রমে ২৮.১ ও ৪৬.৯%। খরিফ-২ জীবনকাল ১২০-১৩০ দিন। কলার রট ও মরিচা রোগ রোগ সহ্য ক্ষমতাসম্পন্ন ও জ্যাসিড, পাতা মোড়ানো ও বিছা পোকার আক্রমণ সহ্য ক্ষমতা বেশি। ফলন খরিফ-২ মৌসুমে ১.৯০-২.১০ টন/হেক্টর।
বিনা চীনাবাদাম-১০ : গাছ একটু লম্বাটে (৬৫-৭৬ সেমি.) এবং পাতার রং ফ্যাকাশে সবুজ রঙের। প্রায় সব বাদামগুলো গাছের গোড়ায় একসাথে গুচ্ছাকারে থাকে। দানা মাঝারি এবং তামাটে লাল রঙের। ফলে দানার পরিমাণ ৮০%। বীজে তেলের পরিমাণ ৫০.৫% এবং আমিষের পরিমাণ ২৮%। খরিফ-২ মৌসুমে জীবনকাল ১১০-১২০ দিন এবং ফলন ২.২০ টন/হেক্টর।
বিনা চীনাবাদাম-১১ : লবণ সহিষ্ণু (৮ ডিএস/মি.)। পাহাড়ি এলাকায় চাষ উপযোগী। দানা মাঝারি এবং গাঢ় লাল রঙের। গাছ খাট (৫৫-৬০ সেমি.)। প্রায় সব বাদামগুলো গাছের গোড়ায় একসাথে গুচ্ছাকারে থাকে। দানা মাঝারি বড় এবং তামাটে লাল রঙের। ফলে দানার পরিমাণ ৮০%। আমিষের পরিমাণ ২৭.৫%। খরিফ-২ মৌসুমে জীবনকাল ১১০-১১৫ দিন এবং ফলন ২.৩০ টন/হেক্টর।
বপন সময় : খরিফ-২ মৌসুমে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত (আষাঢ়-আশ্বিন) পর্যন্ত বীজ বপন করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়।
চাষ উপযোগী জমি : বেলে, বেলে, দো-আঁশ ও এটেল দো-আঁশ মাটিতে অধিক ফলন পাওয়া যায়। শুষ্ক জমি বাদাম চাষের জন্য বেশ উপযোগী।
জমি তৈরি, বপন পদ্ধতি ও বীজের পরিমাণ : তিন-চারটি চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করে বীজ বপন করতে হয়। শেষ চাষের সময় নির্ধারিত পরিমাণ সার দিয়ে চাষ ও মই দিতে হবে। বীজ সারিতে বপন করতে হবে। সারি থেকে সারির দূরত্ব ১২ ইঞ্চি (৩০ সেমি.) এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৬ ইঞ্চি (১৫ সেমি.) রাখতে হবে। বীজগুলো ১.০-১.৫ ইঞ্চি মাটির নিচে পুতে দিতে হবে। হেক্টর প্রতি ১০০-১২০ কেজি (বিঘা প্রতি ১৫-১৭ কেজি) বীজের (খোসাসহ) প্রয়োজন হয়। বর্ষাকালে যাতে জমিতে পানি আটকে না থাকে, সেজন্য জমিতে ৪-৫ মিটার পরপর নালা করতে হবে।
বীজ শোধন : বীজ শোধন করে নিয়ে বপন করলে ভাল হয়। প্রতি কেজি বীজের জন্য ২.৫ গ্রাম প্রোভেক্স/ অটোস্টিন/নোয়িন নামক বীজ শোধনকারী ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে। শোধনকারী বীজ জমিতে বপন করলে চারা গজানোর হার বেড়ে যায়।
সার প্রয়োগ : জমির উর্বরতার উপর নির্ভর করে সারের মাত্রার তারতম্য হতে পারে। তবে সাধারণভাবে হেক্টরপ্রতি ৪০-৫০ কেজি ইউরিয়া (একরপ্রতি ১৭-১৮ কেজি), ১০০-১৩০ কেজি টিএসপি, এমওপি ও জিপসাম (একর প্রতি ৩৫-৪০ কেজি) এবং ৩-৪ কেজি (একরপ্রতি ১.২-২.৫ গ্রাম) দস্তা সার প্রয়োগ করতে হয়। তবে বেলে মাটির ক্ষেত্রে বোরন ও মলিবডেনাম ১-১.৫ কেজি প্রতি হেক্টরে প্রয়োগ করা প্রয়োজন। জমি উর্বর হলে ইউরিয়া অর্ধেক প্রয়োগ করতে হবে এবং দস্তা সার প্রয়োগের প্রয়োজন নেই। সকল প্রকার সার শেষ চাষের পূর্বে জমিতে ছিটেয়ে প্রয়োগ করতে হবে। অন্যদিকে জীবাণূসার ব্যবহার করলে ইউরিয়া প্রয়োগের প্রয়োজন নাই (জীবাণুসার একর প্রতি ৩০০ গ্রাম)।
জীবাণুসার ব্যবহারের নিয়মাবলী : সুস্থ সতেজ ও শুকনা বীজে পরিমাণমত চিটাগুড় মিশিয়ে নিতে হবে। যাতে বীজগুলো আঠালো মনে হয় (চিটগুড়ের অভাবে ঠা-া ভাতের মাড় বা পানি ব্যবহার করা); আঠালো বীজগুলোর সংগে জীবাণুসার ভালভাবে মিশিয়ে নিবেন। যাতে প্রতিটি বীজে কালো প্রলেপ পড়ে যায়; কালো প্রলেপযুক্ত বীজ ছায়ায় সামান্য শুকিয়ে নিলে বীজগুলো গায়ে গায়ে লেগে থাকবে না; জীবাণুসার মিশ্রিত বীজ রৌদ্রহীন বা খুবই অল্প রৌদ্রে বপন করে বীজগুলো মাটি দিয়ে তাড়াতাড়ি ঢেকে দিতে হবে; ঠা-া, শুষ্ক, রোদমুক্ত জায়গায় জীবাণুসার এবং জীবাণুসার মিশ্রিত বীজ রাখতে হবে। জীবাণুসার উৎপাদনের ১৮০ দিনের মধ্যেই ব্যবহার করা উত্তম।
আগাছা দমন : চারা গজানোর ২৫-৩০ দিন পর নিড়ানী দিয়ে সতর্কতার সাথে হালকাভাবে আগাছা উঠিয়া ফেলতে হবে। শিকড়ে যেন কোন প্রকার আঘাত না লাগে সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার।
পানি সেচ : খরিফ-২ মৌসুমে চীনাবাদাম চাষে সেচ দেয়ার প্রয়োজন হয় না। তবে বৃষ্টির পানি যাতে জমিতে জমে না থাকে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
পোকামাকড় দমন : জমিতে বাদাম লাগানোর পরপর পিপিঁলিকা আক্রমণ করে রোপিত বাদামের দানা খেয়ে ফেলতে পারে। এজন্য বাদাম লাগানো শেষ হলেই ক্ষেতের চারিদিকে সেভিন ডাস্ট ৬০ ডব্লিউপি ছিটিয়ি দিতে হবে। এছাড়া ক্ষেতের চারিদিকে লাইন টেনে কেরোসিন তেল দিয়েও পিপীলিকা দমন করা য়ায়। অনুরুপভাবে, উইপোকা চীনাবাদাম গাছের এবং বাদামের যথেষ্ট ক্ষতি করে থাকে। এরা বাদাম গাছের প্রধান শিকড় কেটে দেয় অথবা শিকড়ের ভিতর গর্ত তৈরি করে। ফলে গাছ মারা যায়। উইপোকা মাটির নিচের বাদামের খোসা ছিদ্র করে বীজ খায়। পানির সাথে কেরোসিন মিশিয়ে সেচ দিলে উইপোকা জমি ত্যাগ করে। অথবা উইপোকা দমনের জন্য ডায়াজিনন-১০ জি/বাসুডিন-১০ জি/ডারসবান-১০ জি যথাক্রমে হেক্টরপ্রতি ১৫, ১৪ ও ৭.৫ কেজি হারে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। বিছাপোকার আক্রমণের প্রথম অবস্থায় পাতার নিচে দলবদ্ধ বিছাগুলোকে হাত দিয়ে সংগ্রহ করে কোন কিছু দিয়ে পিষে মেরে ফেলতে হবে।
রোগ দমন : চীনাবাদামের পাতার দাগ এবং মরিচা রোগ বেশি হলে ২ গ্রাম ব্যাভিস্টিন-৫০ ডবি¬উপি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে জমিতে বিকালে স্প্রে করতে হবে। বপনের পূর্বে প্রতি কেজি বীজের জন্য ২.৫ গ্রাম প্রোভেক্স/অটোস্টিন/নোয়িন দ্বারা প্রতি কেজি বীজ শোধন করলে রোগের আত্রমণ কম হবে। মরিচা রোগ দেখা দিলে ফলিকুলার নামক ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানির সাথে ১ মিলি হারে মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে।
ফসল সংগ্রহ, মাড়াই ও সংরক্ষণ : ভালো বীজ বা গুণগতমানের বীজ পেতে হলে ফসল যথাসময়ে উঠাতে হবে। ফসল সঠিক সময় তোলার জন্য ফসলের পরিপক্বতা সম্পর্কে যথাযথ ধারণা থাকা আবশ্যক। চীনাবাদাম বীজ খুবই স্পর্শকাতর বা সংবেদনশীল। যখন গাছের শতকরা ৮০-৯০ ভাগ বাদাম পরিপক্ব হবে তখনই চীনাবাদাম তোলার উপযুক্ত সময়। পরিপক্ব হলে বাদামের খোসার শিরা-উপশিরাগুলো স্পষ্টভাবে দেখা যায় এবং গাছের পাতাগুলো হলুদ রং ধারণ করে নিচের পাতা ঝড়ে পড়তে থাকে। বাদামের খোসা ভাঙ্গার পর খোসার ভিতরে সাদা কালচে রং ধারণ করলেই বুঝতে হবে ফসল উঠানোর উপযুক্ত সময় হয়েছে। পরিপক্ব হবার আগে বাদাম উঠালে তা ফল ও তেল কম হবে। আবার দেরীতে উঠালে বীজের সুপ্ততা না থাকার দরুন জমিতেই অংকুরিত হয়ে নষ্ট হয়ে যাবে।
ক্ষেত থেকে তোলার পর বাদামের গায়ে লেগে থাকা মাটি বা বালু পরিষ্কার করতে হবে। তারপর আটিগুলো উপুর করে অর্থাৎ বাদামগুলো উপরের দিকে রেখে গাছের মাথা শুকনো মাটিতে বসিয়ে রৌদ্রে শুকাতে হবে। এতে করে বাদামের গায়ে লেগে থাকা পানি ঝড়ে যাবে। পরে গাছ থেকে বাদাম ছাড়িয়ে উজ্জ্বল রোদে দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা করে ৫-৬ দিন শুকাতে হবে। এ অবস্থায় বীজের আর্দ্রতা ৮-১০% হয়ে থাকে। এভাবে শুকানোর পর খোসাসহ বাদাম ঠা-া করে পলিথিন আচ্ছাদিত চটের বস্তায় মাচার উপর সংরক্ষণ করতে হবে।
সতর্কতা : এলাকায় উপযোগী জাত বাছাই করা, বপনের আগেই বীজের গজানোর হার পরীক্ষা করা, একই জমিতে বার বার চীনাবাদাম চাষ না করা। প্রয়োজনে এ বিষয়ে পরামর্শের জন্য স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা।
লেখক : চিফ সায়েন্টিফিক অফিসার, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, ময়মনসিংহ, মোবাইল: ০১৭১৬৭৪৯৪২৯, ই-মেইল :mmamondal@gmail.com