Wellcome to National Portal
  • 2024-12-15-10-13-de23faa6fead7deef93b5973ae193323
  • 2023-12-28-06-44-fad1b3dffb04c90c1f14863ef06978d5
  • ICT Ebook
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

দেশে-চকোলেট-তৈরির-ফল-কোকোয়া-চাষের-সম্ভাবনা

2024-05-16-04-57-e001cda3e603ac53db0707dfd458800d

দেশে চকোলেট তৈরির ফল কোকোয়া চাষের সম্ভাবনা
তাহসীন তাবাসসুম
চকলেট। শিশু থেকে প্রবীন প্রায় সবার পছন্দের একটি খাবার। খাবারটির মূল উপাদান হলো ‘কোকোয়া’ নামে এক ধরনের ফল। দক্ষিণ আমেরিকার অ্যামাজন বনভূমি এর আদিনিবাস। প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগেও কোকোয়া ফলের অস্তিত্বের তথ্য পাওয়া যায়। পরবর্তীতে অ্যামাজন থেকে পৃথিবীর নানা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে এই ফল। আফ্রিকার আইভরি কোস্ট, ঘানা, নাইজেরিয়া ও ক্যামেরুনে ব্যাপকভাবে চাষ হয় কোকোয়া। সেখান থেকে বিশ্বজুড়ে রপ্তানি করা হয়। 
অ্যামাজন অথবা আফ্রিকা- সুদূর পথ ঘুরে কোকোয়া আসে এ অঞ্চলে। ফলে দেশে চকোলেটের বড় বাজার থাকলেও দাম সবার হাতের নাগালে নেই। কারণ, দেশে কোকোয়ার বাজার পুরোপুরি আমদানি-নির্ভর। তবে আশার কথা হলো পরীক্ষামূলকভাবে ফলটির চাষ শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। মিলেছে ইতিবাচক ফলাফলও। দেশে এটির উৎপাদন বাড়লে আয়ের একটি অন্যতম বড় পথ উন্মোচন হতে পারে।
মূলত অ্যাসিডিক বা অম্লীয় মাটিতেই ফলটির ফলন ভালো হয়। ঢাকার সাভার এবং পাহাড়ি অঞ্চলের পাশাপাশি বহু অঞ্চলে রয়েছে এমন মাটি। ২০১৪ সালে গবেষণার জন্য ভিয়েতনাম থেকে আনা হয়েছিল কয়েকটি কোকোয়া চারা। সাভারের রাজালাখ এলাকায় সরকারি হর্টিকালচার সেন্টারে রোপণ করা হয় কোকোয়া চারা। এর মধ্যে দুটি গাছ বেড়ে উঠেছে। ঝোপালো ধরনের গাছ দুটিতে ৩-৪ বছর ধরে ফুল এবং পরিপক্ব অসংখ্য ফল ধরছে। ফল থেকে চারাও উৎপাদন করছে হর্টিকালচার সেন্টার।
গাছ পরিচিতি 
কোকোয়া ফলের গাছ চিরসবুজ, দেখতে ঝোপালো, ৭ থেকে ৮ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। কা- ও ডালপালার গায়ে গুচ্ছবদ্ধ গোলাপি ও হলুদ রঙের ফুল ধরে। গাছের বয়স সাধারণত ৩ থেকে ৪ বছর সময়ে ফুল ধরতে শুরু করে। ফুল থেকে পরিণত ফল হতে সময় লাগে ৬ মাস। ফলের রং বাদামি, ৩০ সেন্টিমিটার লম্বা ও ১০ সেন্টিমিটার পুরু, বাইরের আবরণ চামড়ার মতো শক্ত। কোকো গাছ এমন একটি জায়গায় লাগানো দরকার যেখানে সরাসরি সূর্যের আলো পড়বে না। সাথী ফসল হিসেবেও কোকো গাছ লাগানো যেতে পারে।
চাষপদ্ধতি 
কোকোয়া ফলের ভেতরে থাকা বীজ থেকে যেমন চারা উৎপাদন করা যায় তেমনি কলম পদ্ধতিতেও চারা করা যায়। সাধারণ মাটির বেডে এ চারা তৈরি করতে হয়। চারার বয়স একমাস হলেই নির্দিষ্ট জমিতে কোকো চারা রোপণ করা যাবে। বীজ সংগ্রহের পর নরমাল তাপমাত্রায় বেশি দিন বীজ রাখলে বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা হারিয়ে যায়।
রোপণের ৫-৬ বছর পর থেকে গাছে ফল ধরা শুরু করে। বছরে এ গাছ ৩-৪ বার ফলন দেয়। ফলে সারা বছরই কমবেশি ফল পাওয়া যায়। এ ফলের গাছে তেমন কোনো রোগ হয় না বললেই চলে। তবে দেশীয় ছাত্রাপোকা বা মিলিবাগ আক্রমণ করলে তা সহজেই প্রতিরোধ করে ফেলা সম্ভব। ফুল থেকে ফল হয়ে সেটি পাকতে সময় লাগে ৩-৪ মাস। পাকার পর কোনোটা ধূসর আবার কোনোটা হলুদ রং ধারণ করে। খোসা ছাড়িয়ে ফল বের করতে হয়। পাকা ফল খাওয়া যায়। এর স্বাদ কিছুটা টকমিষ্টি। 
কোকোয়া থেকে কোকোবিন
 প্রতিটি ফলে ২০-৪০টি বীজ থাকে। বীজগুলো প্রথমে কলাপাতায় মুড়িয়ে গাঁজানো হয়। পরে তা রোদে শুকিয়ে সেদ্ধ করে খোসা ছাড়ালেই পরিষ্কার একটি শাঁস পাওয়া যায়। এই শাঁসকে বলা হয় কোকোবিন। 
কোকোবিনের গুঁড়োই চকোলেট পণ্য তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়। উৎকৃষ্টমানের চকোলেট, মাখন, আইসক্রিম, রুটি, পুডিং, প্রসাধনী ও পানীয় তৈরিতে কোকোয়া ফল ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হয়।
অর্থনৈতিক অবস্থা
আনুষ্ঠানিকভাবে প্রায় ১০০ বছর আগে কোকো চাষ শুরু হলেও ফলটি অনেক পুরনো এবং হাজার হাজার বছর আগে থেকেই প্রকৃতিতে ছিল। মায়ানমারা মনে করত, কোকো ঈশ্বর প্রদত্ত ফল। পৃথিবীজুড়ে প্রায় ২৩ জাতের কোকো ফলের দেখা পাওয়া যায়। সবচেয়ে বেশি কোকো ফল উৎপন্ন হয় আইভরিকোস্টে। তাদের বার্ষিক গড় উৎপাদন ১,৩৩০ টন। এরপর ঘানার অবস্থান। তাদের উৎপাদন ৭৩৬ টন।
পূর্ণাঙ্গ একটি কোকো গাছ থেকে প্রতি বছর ৩৫ কেজি বীজ পাওয়া যায়, যার প্রতি কেজি কোকো চকোলেট পাউডারের দাম ৪০ ডলার। প্রতিটি কোকো গাছ থেকে বছরে ১২০০ ডলার বা ৮৪ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। প্রতি বছর ভারত ও পাকিস্তান থেকে ২ লাখ টন কোকো ফল আমদানি করা হয় যার মূল্য প্রায় ৫শ’ কোটি টাকা।
দেশের পাহাড়ি অঞ্চলে অন্তত ৫-৭ লাখ হেক্টর অনাবাদি জমি রয়েছে। যেখানে এই গাছ চাষের উপযোগী মাটি রয়েছে। এ ছাড়াও উত্তরবঙ্গসহ আরো অনেক এলাকার মাটি এ ফল চাষের উপযোগী হওয়ায় কৃষকরাও লাভবান হতে পারবেন। ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’, ‘ই’ এবং ‘কে’ সমৃদ্ধ এই ফলের চকোলেট পাউডার শতভাগ বাংলাদেশকে বিদেশ থেকে আনতে হয়। তবে বাংলাদেশে কোকো গাছ আবাদের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। কোকো গাছের চাষ করলে আমরা আন্তর্জাতিক বাজারেও অনায়াসেই একটা স্থান করে নিতে পারব। কারণ বাংলাদেশের মাটি ও জলবায়ু নিরক্ষীয় ও উপনিরক্ষীয় ফল চাষের জন্য উপযোগী। কোকো গাছের জন্য রেইনফরেস্ট সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের আধ্যাপক ড. সৈয়দ শফিউল্লাহ বেতছড়ি উপজেলায় তার নিজস্ব উদ্যোগে ১০০টি কোকো গাছ লাগিয়েছেন। 
কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে, বাংলাদেশের জলবায়ু কোকো চাষের জন্য খুবই উপযুক্ত। ছাদ বাগানেও কোকো ফল চাষ করা যায়। কোকো গাছ ছাঁটাই করে গাছকে ছোট করে রাখা যায় এবং বড় বড় ছায়াবীথির নিচে এদের শ্রীবৃদ্ধি ভালো হয়।
বর্তমানে এই ফলের চাষ বৃদ্ধিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে সাভার হর্টিকালচার সেন্টারে চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। সেগুলো নামমাত্র মূল্যে বিতরণও করা হচ্ছে। অনেকেই এটি চাষ করছেন। উৎসাহিত হচ্ছেন চাষেও। কোকোয়া বিদেশি ফল হলেও গত এক দেড় দশক ধরে আমাদের দেশেও স্বল্প পরিসরে এর চাষ শুরু হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের মাধ্যমে বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বিশেষ ভূমিকা রাখা সম্ভব।
সূত্র : সাভার, হর্টিকালচার সেন্টার এবং কৃষি তথ্য সার্ভিস

লেখক : প্রকাশনা কর্মকর্তা, প্রশিক্ষণ উইং, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা। মোবাইল : ০১৭২০২৫২৭৬৫; ই-মেইল :subhathashin@gmail.com