কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। আমাদের জীবন ও জীবিকার অন্যতম মাধ্যম হলো কৃষি। কৃষি আমাদের সংস্কৃতিরও অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই কৃষির উন্নয়ন মানে দেশের উন্নয়ন, জনমানুষের জীবন ও সংস্কৃতির উন্নয়ন। কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে দেশে অনেক প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া কাজ করে যাচ্ছে। প্রিন্ট মিডিয়াগুলোর মধ্যে অতি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী প্রকাশনার নাম মাসিক ‘কৃষিকথা’। ১৯৪১ সনে তৎকালীন বঙ্গীয় কৃষি বিভাগ হতে মাসিক ম্যাগাজিন হিসেবে প্রথম কৃষিকথার যাত্রা শুরু হয়। কৃষিকথায় দেশের খ্যাতনামা কৃষিবিদ, কৃষি বিজ্ঞানী, গবেষক, কৃষিকর্মী, সমাজকর্মী, কবি, সাহিত্যিকদের তথ্যবহুল ও প্রযুক্তিভিত্তিক লেখা ছাপা হয়ে থাকে। এ ম্যাগাজিনটি কৃষি মন্ত্রণালয়ের অন্যতম মুখপত্র হিসেবে ৭৪ বছর ধরে নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয়ে আসছে। কৃষিকথা কৃষি গবেষণার ফলাফল, গবেষকদের জ্ঞানলব্ধ কারিগরি তথ্য, চাষি ভাইদের অভিজ্ঞতাপ্রসূত রচনা জনগণের কাছে পৌঁছে দিয়ে সেতু বন্ধনের কাজ করছে। শুধু তাই নয়, সরেজমিন অভাব অভিযোগ ও সমস্যাদি সমাধানের ব্যাপারে কৃষিকথা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও কলাকৌশল প্রয়োগে কৃষিকর্মী ও কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা অর্থাৎ কৃষির গতিশীলতায় উৎসাহ জোগানোই কৃষিকথার প্রধান কাজ। কৃষিকথা একদিকে যেমন কৃষি সাহিত্য, অন্যদিকে তেমনি কৃষি বিজ্ঞানও বটে। সাহিত্য ও বিজ্ঞান-এ দুইয়ের সমন্বয়ের মাধ্যমেই কৃষিকথা তার ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে পেরিয়ে যাচ্ছে কালের গতিপথ- যুগ যুগ ধরে রেখে যাচ্ছে সাফল্যের স্বাক্ষর। আজকের কৃষিকথা চলমান কৃষি সাহিত্য কিংবা কৃষি বিজ্ঞান হিসেবে অল্প ব্যয়ে নব নব আবিষ্কারের তত্ত্ব, তথ্য ও প্রযুক্তি কৃষিকর্মী ও কৃষকের কাছে পৌঁছে দিয়ে কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতেও সক্ষম হয়েছে।
হাঁটিহাঁটি পা পা করে এ মাসেই কৃষিকথা ৭৫ বছরে পদার্পণ করল। দেশের কৃষি, কৃষক তথা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমানের উন্নয়নে কৃষিকথার অবদান ও গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে কৃষিকথা, বৈশাখ-১৪২২ সংখ্যাটিকে স্মরণীয় ও বরণীয় করে রাখার লক্ষ্যে বিশেষ সংখ্যা হিসেবে প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ সংখ্যাটিতে স্মৃতিচারণমূলক এমন কিছু লেখা স্থান পেয়েছে যাতে রয়েছে কৃষিকথার জন্ম ইতিহাস, কৃষি তথ্য সার্ভিস গঠনের ইতিহাস, রয়েছে লেখক, গবেষক, পাঠক তথা কৃষকের মধ্যে যোগসূত্রতার ইতিহাস। এসব লেখার মাধ্যমে কৃষিকথাকে, কৃষিকথার ইতিহাসকে, কৃষি তথ্য সার্ভিসকে নবরূপে নব আঙ্গিকে ডিজিটাল যুগের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সবার সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা আশা করি আমাদের এ প্রচেষ্টাকে সবাই সাদরে গ্রহণ করবেন, সার্থক করবেন। সংখ্যাটিতে লেখা দিয়ে যারা আমাদের উদ্দেশ্য সাধনে সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি রইল আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।