Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

জলবায়ু পরিবর্তন ও কৃষির ওপর প্রভাব

জলবায়ু কী?
জলবায়ু হচ্ছে কোনো এলাকা বা ভৌগোলিক অঞ্চলের ৩০-৩৫ বছরের গড় আবহাওয়া। বর্তমান বিশ্বে দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তন একটি নৈমিত্তিক ঘটনা। এই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা বৈশিক উষ্ণতা নামে অধিক পরিচিত। বৈজ্ঞানিক ভাষায় একে গ্রিন হাউস প্রভাব বলা হয়। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে নানা প্রকারের দুর্যোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে যেমনÑ অতি বৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, আকস্মিক বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি। যার ফলশ্রুতিতে জ্ঞান ও মালের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। এর কারণে প্রতি বছর নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ।


বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমগ্র বিশ্বের প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর মারাত্মক বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে। এই পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আবহাওয়ার মৌসুমি ধারাবাহিকতা বিঘিœত হচ্ছে। এ কারণে বিশ্বের যেসব দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, আর্থসামাজিক অবকাঠামো এবং প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্র্ভরশীলতাই এর মূল কারণ। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের সব খাত বিশেষ করে অবকাঠামো, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, কৃষি উৎপাদন, প্রাকৃতিক পরিবেশসহ জনকল্যানমূলক সব সেবাখাত এবং খাদ্য নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে যা ব্যাহত করবে আমাদের ধারাবাহিক আর্থসামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া ও অর্থনৈতিক কর্মকা-কে।


জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
 জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে কৃষি ক্ষেত্রে। কৃষি নির্ভর অর্থনীতির দেশগুলোতে পড়ছে বিরূপ প্রভাব। গত শতাব্দীতে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়েছে ২৩%, নাইট্রাস অক্সাইডের পরিমাণ বেড়েছে ১৯% এবং মিথেনের পরিমাণ বেড়েছে ১০০% ( ওচঈঈ চতুর্থ প্রতিবেদন ২০০৭)। বেঁচে থাকার জন্য মানুষকে নানা রকম প্রতিকূলতার সঙ্গে সংগ্রাম করতে হয়। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় প্রতিকূলতা বা হুমকি হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। এই পরিবর্তনে জনসংখ্যার যে অংশটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন, তারা হচ্ছে দরিদ্র জনগোষ্ঠী। সমুদ্র তীরবর্তী ভৌগোলিক অবস্থান, মাত্রাতিরক্ত জনসংখ্যা, অপ্রতুল প্রাকৃতিক সম্পদ এবং এর ওপর অধিক নির্ভরশীলতা ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশের বিপন্নতা খুবই ভয়াবহ। জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য ক্ষতির হাত থেকে বাংলাদেশকে রক্ষার জন্য সর্ব স্তরের জনগোষ্ঠীকে সচেতন করা একান্ত প্রয়োজন।


জলবায়ু পরিবর্তন একটি নিয়মিত প্রাকৃতিক ঘটনা। কিন্তু মানুষের কর্মকা- দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত। মানুষের বিভিন্ন কর্মকা- জলবায়ু পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করেছে। বিশ্ব উষ্ণায়িত হচ্ছে এবং বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশসমূহ বিশ্ব উষ্ণায়ন পাল্টে দিচ্ছে আবহাওয়ার ধরন এবং ঋতু বৈচিত্র্য। ওচঈঈ সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী-
বাংলাদেশের গড় বার্ষিক তাপমাত্রা গত ১৪ বছরে (১৯৮৫-১৯৯৮) মে মাসে ১ সে. এবং নভেম্বর মাসে ০.৫ সে. বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশের মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি বর্তমানে প্রায় ১০,৫০০০০ হে. (৮৩০,০০০ হেক্টর, ২০০৯-১০)
বাংলাদেশের গড় বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পেয়েছে, ভয়াবহ বন্যার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে, গত ১৯৮৮, ১৯৯৮, ২০০২, ২০০৩, ২০০৪, ২০০৭ সনে।
বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বেড়েছে (সিডর, আইলা, নার্গিস)
গ্রীষ্মকালে সমুদ্রের লোনাপানি দেশের অভ্যন্তরে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত নদীতে প্রবেশ করেছে।

 

বাংলাদেশের জলবায়ুর পরিবর্তন ইতোমধ্যেই শুরু করেছে। ২০০০ সনে প্রকাশিত এক গবেষণা রিপোর্টে কক্সবাজার উপকূলে বছরে ৭.৮ মিমি. হারে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি লক্ষ করা গেছে। গত চার দশকে ভোলা দ্বীপের প্রায় তিন হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা সমুদ্রের পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বিভিন্ন গবেষণা রিপোর্ট পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ২১০০ সন নাগাদ সাগর পৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মি. উঁচু হতে পারে, যার ফলে বাংলাদেশের মোট আয়তনের ১৮.৩ অংশ নিমজ্জিত হতে পারে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সূত্র মতে রাজশাহীর উচ্চ বরেন্দ্র এলাকায় ১৯৯১ সনে পানির স্তর ছিল ৪৮ ফুট, ২০০০ সনে তা নেমে ৬২ ফুট এবং ২০০৭ সনে তা নেমে যায় ৯৩.৩৪ ফুটে। স্বাভাবিক বন্যায় দেশের মোট আয়তনের প্রায় ২০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়। বর্তমানে বন্যার সংখ্যা ও তীব্রতা দুটোই বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৭ সনের ১৫ নভেম্বর প্রলয়ঙ্করী সাইক্লোন সিডর আক্রমণ করার মাত্র দুই বছরের মধ্যে শক্তিশালী সাইক্লোন নার্গিস ও আইলা এবং ২০১৩ সনে মে মাসে মহাসেন (আংশিক) আঘাত হেনে কৃষিকে বিপর্যস্ত করে তোলে।


জলবায়ুর এ বিরূপ পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য বিশেষ করে বিভিন্ন অভিযোজন কলাকৌশল রপ্ত করতে হবে, যাতে করে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে কৃষিকে মুক্ত রাখা বা ঝুঁকি কমানো যায়। এছাড়া দুর্যোগমুক্ত সময়ে শস্য বহুমুখীকরণ ও ফসলের নিবিড়তা বাড়িয়ে দুর্যোগের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যায়।
 জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ
প্রাকৃতিক কারণসমূহ
ক. মহাদেশীয় ড্রিফট খ. আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত গ. পৃথিবীর গতি পরিবর্তন ঘ. সামুদ্রিক স্রোত ঙ. ঘূর্ণিঝড়
মনুষ্য সৃষ্ট কারণসমূহ
ক. কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি /কার্বন নিঃসরণ খ. খনিজ জ্বালানি ব্যবহার গ. বাতাসে নাইট্রাস অক্সাইড বৃদ্ধি ঘ. পাহাড় নিধন ঙ. বন্যভূমি উজাড়
 কৃষিতে বন্যার প্রভাব
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রায় ৪ হাজার বর্গকিলোমিটার ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১ হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা এ ধরনের আকস্মিক বন্যার শিকার। মৌসুমি বন্যা উপকূলীয় এলাকায় সমস্যার সৃষ্টি করে না। কিন্তু বন্যাপ্রবণ এলাকায় এর প্রভাব খুব বেশি। ফসল ছাড়াও জানমালের ব্যাপক ক্ষতি করে। জোয়ারজনিত বন্যা উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি করে। জমিতে লবণাক্ত পানির জলাদ্ধতার সৃষ্টি করে, যা ফসল চাষের জন্য অনুপযোগী। সুনামগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোনা, নীলফামারী ইত্যাদি জেলা আকস্মিক বন্যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দ-ায়মান পরিপক্ব ফসল কর্তনের আগেই প্রতি বছর হাজার হাজার একর পাকা বোরো ধান আকস্মিক বন্যায় আক্রান্ত হয় ফলে চাষি হয় ক্ষতিগ্রস্ত। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রায় ৪ হাজার বর্গকিলোমিটার ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১ হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা এ ধরনের আকস্মিক বন্যার শিকার। বাংলাদেশে পানিসম্পদে সমৃদ্ধ হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অতিবৃষ্টি, বন্যা ও জলাবদ্ধতার প্রকোপ ক্রমাগত বাড়ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ১.৫ মিলিয়ন হেক্টর জমি প্রতি বছর বন্যাকবলিত হয়। বাংলাদেশের গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২৩০০ মিমি এবং অঞ্চল ভেদে তা ১২০০ মিমি (দক্ষিণ-পশ্চিম) থেকে ৫০০০ মিমি (উত্তর-পূর্বাঞ্চল) পর্যন্ত হয়ে থাকে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়ছে এবং ২০৩০ সনে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১০-১৫ শতাংশ এবং ২০৭৫ সনে প্রায় ২৭ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কৃষিতে খরার প্রভাব
কোন এলাকায় বৃষ্টিপাতের তুলনায় বাষ্পীকরণের মাত্রা বেশি হলে সেখানে খরা দেখা দেয়। কৃষি খরা বলতে আবহাওয়ার নিয়ামকগুলো যেমনÑ বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, বাতাসের আর্দ্রতা, বাষ্পীভবন ইত্যাদির হ্রাস বৃদ্ধিজনিত কারণে ফসলের জীবন চক্রের যে কোনো অবস্থায় পানির অভাবে জৈবিক কর্মকা- ব্যাহত হওয়াকে বোঝায়। এপ্রিল থেকে মধ্য নভেম্বরের মধ্যে পর পর ১৫ দিন বৃষ্টি না হলে খরার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।
কৃষিতে খরা একটি বহুল প্রচলিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রতি বছর ৩০ থেকে ৪০ লাখ হেক্টর জমি বিভিন্ন মাত্রার খরায় আক্রান্ত হয়। গাছের বৃদ্ধি পর্যায়ে গড় বৃষ্টিপাতের অভাবে মাটিতে পানিশূন্যতা সৃষ্টি হয়, যা গাছের ক্ষতি করে। দেশে বিভিন্ন মাত্রার খরায় আক্রান্ত ৮৩ লাখ হেক্টর চাষযোগ্য জমির শতকরা ৬০ ভাগ জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়। এ ছাড়াও খরা আউশ ও বোরো ধান, পাট, ডাল ও তেল ফসল, আলু,  শীতকালীন সবজি এবং আখ চাষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। মার্চ-এপ্রিলের খরা চাষের জন্য জমি প্রস্তুতিতে অসুবিধার সৃষ্টি করে ফলে বোনা আমন, আউশ এবং পাট চাষ যথাসময়ে করা যায় না।
মে-জুন মাসের খরা মাঠে দ-ায়মান বোনা আমন, আউশ ও বোরো ধান, পাট, ডাল ও তেল ফসল, আলু, শীতকালীলন সবজি এবং আখ চাষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। মার্চ-এপ্রিলের খরা চাষের জন্য জমি প্রস্তুতিতে অসুবিধার সৃষ্টি করেÑ ফলে বোনা আমন, আউশ এবং পাট চাষ যথাসময়ে করা যায় না। মে-জুন মাসের খরা মাঠে দ-ায়মান বোনা আমন, আউশ এবং পাট ফসলের ক্ষতি করে। আগস্ট মাসের অপরিমিত বৃষ্টি রোপা আমন চাষকে বাধাগ্রস্ত করে। সেপ্টেম্বর- অক্টোবর মাসের কম বৃষ্টিপাত বোনা ও রোপা আমন ধানের উৎপাদন কমিয়ে দেয় এবং ডাল ও আলু ফসলের চাষকে দেরি করিয়ে দেয়। কাঁঠাল, লিচু, কলা ইত্যাদি ফলের গাছ অতিরিক্ত খরায় মারা যায়। এছাড়াও শুষ্ক মৌসুমে নদী-নালার নাব্য হ্রাস এবং গাছের প্রস্বেদনের হার বেড়ে যাওয়ায় সুপেয় পানির অভাব দেখা দিচ্ছে।
 কৃষিতে তাপমাত্রার ক্ষতিকর প্রভাব
তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে উফশী ধানের ফলন কমে যাবে এবং গমের রোগের আক্রমণ বাড়বে। বাংলাদেশে বর্তমানের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে গম চাষ সম্ভব হবে না। ধান গাছের কচি থেকে ফুল ফোটার সময় তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার চেয়ে বেশি হলে এবং অতি নিম্ন তাপে (২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে) শিষে ধানের সংখ্যা কমে যেতে পারে। ফুল ফোটা বা পরাগায়নের সময় যদি অতি উষ্ণ তাপ থাকে তাহলে চিটার সংখ্যা থোড় অবস্থার চেয়ে বেশি হবে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ার কারণে ধান গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, ধান গাছ হলুদ বর্ণ ধারণ করে, ধানের চারা দুর্বল হয় এবং ফসলের জীবনকাল বেড়ে যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পোকামাকড় এবং বিভিন্ন উদ্ভিদ রোগের আক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে। দানা শস্যেসহ বিভিন্ন ফসলে মিলিবাগ, এফিড (শোষক পোকা) ও ব্যাকটেরিয়া (জীবাণু গঠিত রোগ) ও ছত্রাকজনিত রোগ এর আক্রমণ বেশি বেশি দেখা যাচ্ছে।
অতিরিক্ত তাপ এবং আর্দ্রতা গাছের ছত্রাক রোগ বাড়ানোয় সহায়ক ভূমিকা পালন করে এবং একইভাবে পোকামাকড় ও বিভিন্ন রোগের বাহক পোকার সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়। বোরো মৌসুমে যদি রাতে ঠা-া ও কুয়াশা পড়ে ও ধানের পাতায় পানি জমে থাকে এবং দিনে গরম পড়ে অর্থাৎ তাপমাত্রা বেড়ে যায় তবে ব্লাইট রোগের আক্রমণ বেড়ে যায়। অধিক আর্দ্রতা ও তাপমাত্রার কারণে শীথ ব্লাইট রোগের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
কৃষিতে উষ্ণতা বৃদ্ধি, উষ্ণ ও শৈত্যপ্রবাহের ক্ষতিকর প্রভাব
বিগত ২৫ বছরের আবহাওয়ার উপাত্ত থেকে দেখা যায় যে, বাংলাদেশের গড় উষ্ণতা তেমন বাড়েনি। তবে আশঙ্কা করা হয় যে, ২০৩০ সন নাগাদ গড় তাপমাত্রা ১.০ ডিগ্রি, ২০৫০ সনে ১.৪ ডিগ্রি এবং ২১০০ সনে ২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যেতে পারে। সাম্প্রতিককালে তাপমাত্রা না বাড়লেও উষ্ণ ও শৈত্যপ্রবাহের মাত্রা বেড়েছে। বাংলাদেশে ক্রমান্বয়ে শীতকালের ব্যাপ্তি ও শীতের তীব্রতা দুইই কমে আসছে।
বেশির ভাগ রবি ফসলেরই স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়ে ফলনের ওপর তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে। এ ছাড়া শীত মৌসুমে উষ্ণ প্রবাহ দেখা দিলে বেশি সংবেদনশীল ফসল যেমন গমের ফলন খুব কমে যায় এবং গম উৎপাদন অলাভজনক হয়। হঠাৎ তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হলে সরিষা, মসুর, ছোলা ইত্যাদি ফসলের ওপর তার বিরূপ প্রভাব পড়ে এবং এসব ফসলের পরাগায়ন ব্যাহত হয়ে ফলন খুব কমে যায়। শৈত্যপ্রবাহের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কুয়াশাচ্ছন্ন থাকলে অনেক ফসল বিশেষ করে গমের পরাগায়ন (পলিনেশন) ও গর্ভধারণ (ফার্টিলাইজেশন) না হওয়ায় আংশিক বা সম্পূর্ণ ফসল চিটা হয়ে যায় এবং পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়ে যায়। উষ্ণতা বাড়ার ফলে গাছের প্রস্বেদন বা পানি বের হওয়া বেড়ে যায়। ফলে সেচের পানির অভাব হয়। শৈত্যপ্রবাহের ফলে আমের মুকুল নষ্ট হয় ও নারিকেলের ফলধারণ ব্যাহত হয়। বদ্ধ জলাশয়ে কৃত্রিম প্রজনন সমস্যা হতে পারে ফলে সময়মতো পুকুরে ছাড়ার জন্য পোনা মাছ পাওয়া যাবে না। তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়ামের ওপরে হলে কিশোর চিংড়ির মৃত্যু হার বাড়বে। উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছের প্রজাতি মাইগ্রেট করতে পারে। প্রজনন ও মাইগ্রেশনের সময় পরিবর্তন হতে পারে। এ বছর (এপ্রিল ২০১৫) হালদা নদীতে যথাসময়ে মাছ ডিম ছাড়েনি, প্রজাতি বৈচিত্র্য কমতে পারে, প্রজননে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। ফিশিং গ্রাউন্ডের পরিবর্তন হতে পারে, সার্বিকভাবে মাছের উৎপাদন কমতে পারে। সামুদ্রিক জলাশয়ে মাছ ও চিংড়ির প্রজাতি বৈচিত্র্য ও পরিমাণে পরিবর্তন হতে পারে। মাছ ও চিংড়ি প্রজননে ব্যাঘাত ঘটতে পারে বা মাইগ্রেশন ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
কৃষিতে লোনা পানির অনুপ্রবেশ ও লবণাক্ততা বৃদ্ধিও ক্ষতিকর প্রভাব
লোনা পানির অনুপ্রবেশ বাংলাদেশের একটি মারাত্মক সমস্যা। ১৯৭৩ সনে ১৫ লাখ হেক্টর জমি মৃদু লবণাক্ততায় আক্রান্ত হয়, যা ১৯৯৭ সনে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ হেক্টেরে। বর্তমানে এর পরিমাণ প্রায় ৩০ লাখ হেক্টর। উজান থেকে পানিপ্রবাহ বাধা ও কম বৃষ্টিপাতের কারণে উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ত জমির পরিমাণ বাড়ছে, যা ভবিষ্যতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং পরিমিত বৃষ্টিপাতের অভাবে আরও বেশি সমস্যার সৃষ্টি করবে। বাংলাদেশের মোট উপকূলীয় এলাকা প্রায় ২৫ লাখ হেক্টর, যার মধ্যে বর্তমানে প্রায় ১০.৫০ লাখ হেক্টর জমি বিভিন্ন মাত্রার লবণাক্ততায় আক্রান্ত।
কৃষিতে নদীভাঙন ও ভূমিক্ষয়ের ক্ষতিকর প্রভাব
বাংলাদেশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জরিপে এ পর্যন্ত ১,২০০ কিমি. নদীতীর ভেঙে গেছে এবং আরও ৫০০ কিমি. ভাঙনের সম্মুখীন। স্যাটেলাইট চিত্র থেকে দেখা যায়, ১৯৮২ থেকে ১৯৯২ সন পর্যন্ত ১,০৬,৩০০ হেক্টর নদী তীরের ভাঙনের বিপরীতে মাত্র ১৯,০০ হেক্টর নতুন ভূমি গঠন হয়েছে। জলবায়ুর পরিবর্তন অব্যাহত থাকলে ভাঙা গড়ার এ ভারসাম্য আরও প্রকট হবে।

 

ড. মো. দেলোয়ার হোসেন মজুমদার*
*উপপরিচালক (কৃষি সম্প্র: ও গ্রামীণ অর্থনীতি), জাতীয় প্রশিক্ষণ একাডেমি, গাজীপুর

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon